Sunday, March 8, 2020

ভারতবর্ষে হিন্দু গণহত্যা-৩ Hindu genocide in India


১১৯২ খ্রীস্টাব্দে মহম্মদ ঘােরী দিল্লী দখল করে এবং ১১৯৪ সালে সে ক্রীতদাস কুতুবুদ্দিনকে সঙ্গে করে রাজা জয়াদের বিরুদ্ধে বেনারস অভিযান করে। পথে জুন মাসে তারা কোল নামক স্থানে লুটপাট চালায় এবং সেই বর্বরতা বর্ণনা করতে হাসান নিজামি তার তাজ-উল-মাসির গ্রন্থে লিখছে, “তার তরবারির ধার সমস্ত হিন্দুকে নরকের আগুনে নিক্ষেপ করল। তাদের কাটা মুণ্ড দিয়ে আকাশ সমান উঁচু তিনখানা বুরুজ নির্মাণ করা হল এবং কবন্ধগুলাে বন্য পশুর খাদ্যে পরিণত হল।”16)। 

সেখান থেকে কুতুবুদ্দিন কাশীর দিকে অগ্রসর হয় এবং অসনি দুর্গ দখল করে লুটপাট চালায়। মিনহাজ-উস-সিরাজ তার তাবাক-ই-নাসিরি গ্রন্থে লিখছে, “সেখানে এত লুটের মাল পাওয়া গেল যে, তা দেখতে দর্শনকারীর চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ল।” এরপর জয়চাদের সঙ্গে কুতুবুদ্দিনের যুদ্ধ হয়। জয়াদ হাতির পিঠে চড়ে যুদ্ধ করছিলেন। হঠাৎ একটা তীর এসে তাকে মারাত্মক ভাবে জখম করে এবং তিনি হাতির পিঠ থেকে পড়ে যান। ফলে হিন্দু বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং মুসলমানরা কাশী নগরী দখল করে নেয়। সেখানকার ধ্বংসাত্মক কাজ বর্ণনা করতে মিনহাজ লিখছে, “তারা প্রায় ১০০০ মন্দির ধ্বংস করল” (17) | ১১৯৬ সালে কুতুবুদ্দিন গােয়ালিয়র দুর্গ আক্রমণ করে এবং মিনহাজ লিখছে, “কোরাণ বর্ণিত পবিত্র জিহাদের বাণী অনুসরণ করে তারা তাদের রক্তপিপাসু ইসলামের তরবারি খাপ থেকে বার করে ধর্মের শত্রুদের (অর্থাৎ হিন্দুদের) সামনে তুলে ধরল” (18) ....“ইসলামের সেনারা সম্পূর্ণভাবে বিজয়ী হল এবং ১,০০,০০০ কাফের হিন্দুকে তৎক্ষণাৎ নরকের আগুনে পাঠিয়ে দেওয়া হল।...সমস্ত মন্দির ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করা হল।”(19) | এর পরের বছর কুতুবুদ্দিন গুজরাট অভিযান করে। মাউন্ট আবুর এক গিরিপথে রাজা করণ সিং-এর সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ হয়। মিনহাজ লিখছে, 

“প্রায় ৫০,০০০ বিধর্মী কাফেরকে তরবারির সাহায্যে নরকের আগুনে চালান করা হল এবং তাদের শবদেহের স্তুপ পাহাড়ের সমান উঁচু হয়ে গেল।.... বিশ হাজারেরও বেশি ক্রীতদাস, ২০টি হাতি সহ এত লুটের মাল মুসলমানদের হাতে এল, যা কেউ কল্পনাও করেনি।”(20) এরপর ১২০২ সালে কুতুবুদ্দিন কালিঞ্জর দুর্গ আক্রমণ করে এবং রাজা অজদেও-এর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। কুতুবুদ্দিন দুর্গ অবরােধ করে। দুর্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তখন হিন্দুরা বাইরে এসে মরণপণ যুদ্ধ করে। মিনহাজ লিখছে, “সমস্ত মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হল, ৫০,০০০ নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস হিসাবে পাওয়া গেল এবং হিন্দু সৈন্যদের রক্তে মাটি পিচের মত কালাে হয়ে গেল।”(21) 

উত্তর ভারতে যখন এই বর্বরতা চলছে, তখন আর এক মুসলমান জানােয়ার বক্তিয়ার খিলজি বিহারে ইসলামী জিহাদের বর্বরতার অনুষ্ঠান করতে লাগল। ১২০৪ সালে সেই দানব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করে। সেই বর্বরতা বর্ণনা করতে মিনহাজ লিখতে, “Bakhtiyar with great vigour and au dacity, rushed to the gate and gained possession of the place. Great plunder fell into the hands of the victors. Most of the inhab itants were Brahmins with shaved heads. They were put to death. ...It was discovered that the whole place was (not a fort but a) place of study. It was then set on fire.'—অর্থাৎ বক্তিয়ার খিলজি এগিয়ে সেই (দুর্গের) দরজায় পৌঁছালাে এবং তা দখল করে নিল। সেখানকার বেশিরভাগ লােক ছিল মুণ্ডিত মস্তক ব্রাহ্মণ (আসলে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী)। তাদের সবাইকে হত্যা করা হল। পরে দেখা গেল পুরাে জায়গাটা ছিল একটি বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র। অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল।”(22) | ১২৯৬ থেকে ১৩১৬ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লীর সুলতান ছিল আর এক নরদানব আলাউদ্দিন খিলজী। সােমনাথের মন্দির ধ্বংস করা এই দানবের মহান অপকীর্তিগুলাের মধ্যে অন্যতম। এই বর্বরতা বর্ণনা করতে জিয়াউদ্দিন বারনি তার তারিখ-ই-ফিরােজশাহীতে লিখছে, “সমস্ত গুজরাট প্রাদেশটাই 

আলাউদ্দিনের শিকারে পরিণত হল। গজনীর মামুদ সােমনাথের মন্দির ভেঙে দেবার পর হিন্দুরা সেই মন্দির পুনর্নির্মাণ করেছিল ও নতুন বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই মন্দির আবার ভাঙা হল। শিব লিঙ্গ দিল্লীতে নিয়ে গিয়ে তা মসজিদের সামনে রাখা হল যাতে নামাজিরা তাকে পায়ে মাড়িয়ে আল্লার ধর্মকে রােশন করতে পারে।”(23) গুজরটে আল্লাউদ্দিনের নরহত্যার বিভীষিকা বর্ণনা করতে আর এক মুসলমান ঐতিহাসিক আবদুল্লা ওয়াসফ লিখছে, “কাম্বায়ং নামক জায়গাটা মুসলমানরা রাতের অন্ধকারে ঘিরে ফেলল এবং কাফেরদের ঘুম থেকে ডেকে তুলল। ইতিমধ্যে মুসলমানরা ডাইনে, বায়ে, সামনে, পিছনে, সবদিকে কাফেরদের কোতল করতে শুরু করল। নদীর স্রোতের মত মানুষের রক্ত বয়ে যেতে লাগল।”(24) 

ওই সব মুসলমান জানােয়ারদের আয়ের একটা অন্যতম উৎস ছিল যুদ্ধবন্দীদের এবং লুট করে আনা হিন্দু নারী ও শিশুদের ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রী করা। দানব আলাউদ্দিন খিলজি গরু, ঘােড়া, ধান ইত্যাদির সাথে ক্রীতদাসদেরও দাম বেঁধে দিয়েছিল। বালকদের দাম ছিল ২০ থেকে ৩০টাকা। দেখার সৌন্দৰ্য্য ও কাজ করার দৈহিক ক্ষমতা অনুসারে এই দাম নির্ধারিত হত। সাধারণ একজন বালিকার দাম ছিল ৫ থেকে ১২ টাকা এবং ২০ থেকে ৪০ টাকায় একটি সুন্দরী বালিকা পাওয়া যেত। উচ্চ বংশের সুন্দরী মহিলাদের ক্ষেত্রে দাম উঠে যেত ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা।(25) 

আজকের সেকুলারবাদী ও মার্কসবাদী ঐতিহাসিকদের বিচারে মহম্মদ বিন-তুঘলক ছিল একজন খামখেয়ালী উদ্ভাবক এবং তারা এই সব দিকে পাঠকের দৃষ্টি সরিয়ে ওই দানবের কুকর্মকে আড়াল করে চলেছে। সেই সময় ইবন-বতুতা নামে উত্তর আফ্রিকার এক পর্যটক ভারতে আসেন এবং তার বর্ণনার মধ্য দিয়ে মহম্মদ-বিন-তুঘলকের প্রকৃত চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। এ ছাড়া আল উমরি নামে একজন ঐতিহাসিকের রচনা মাসালিক-ই-অবসর থেকেও ওই দানবের কার্যকলাপের পরিচয় পাওয়া যায়। 

Reference:
16. H. M. Elliot J. Dowson, ibid, II, 298. 
17.H. M. Elliot & J.Dowson, ibid, II,223. 
18.H.M. Elliot J. Dowson, ibid II, 227. 
19. H. M. Elliot & J.Dowson, ibid, Il, 215, 
20. H. M. Elliot & J. Dowson, ibid, II, 230. 
21.H.M. Elliot & J.Dowson, ibid, II, 231, 
22. H. M. Elliot & J. Dowson, ibid, II, 306.
23. H. M. Elliot & J. Dowson, ibid, II,4243. 
24. K. S. Lal, History of the Khaljis, 313-15. 
25. H.M. Eliot & J. Dowson, ibid, III,586.

https://www.facebook.com/groups/590050411814603/

No comments: