Thursday, March 5, 2020

মতুয়া দর্শনে সংগীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । সংগীত ভিন্ন মতুয়া দর্শন বোঝা ভার

নাম ময় এ ব্রহ্মাণ্ড , নামে কর রতি
ভক্তি , মুক্তি শক্তি করে নামেতে বসতি”
মতুয়া দর্শনে সংগীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । সংগীত ভিন্ন মতুয়া দর্শন বোঝা ভার । মহা ভাবরসে নিয়ত ভক্ত চকোর ঘুরিছে তাকে পাবার আঁশে । শ্রী অশ্বিনী এমনই এক মহাভাবের মানুষ , শ্রী হরি চাঁদ কখনো তার বন্ধু-সখা , কখনো জগত পিতা , কখনো আবার ফাইফরমাশ খাঁটা নফর । ঠাকুরকে এমনি করে পেয়েছিলেন , ভেবেছিলেন , জেনেছিলেন এই অশ্বিনী ।
ত্যাগের প্রতিমূর্তি শ্রী অশ্বিনী , ভক্তি ও প্রেমের প্রতিচ্ছবি শ্রী অশ্বিনী শ্রী শ্রী হরি সংগীতের রচয়িতা । এই মহান পুরুষের কথা বলে শেষ করা ভার । সুধিজন , আজ আপনাদের সাথে এমন একজন মহান পুরুষের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যার ত্যাগ , ভক্তি ও প্রেমের দৃষ্টান্ত এই জগতে বিরল । দারিদ্র পীড়িত , নিরক্ষর এই ভক্তের দ্বারা রচয়িত শ্রী শ্রী হরি সংগীত আধ্যাত্ব- দার্শনিক তত্তের অমুল্য রত্ন ভাণ্ডার যা এখনো শুধুমাত্র মতুয়া ভক্তদের চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ব । শ্রী অশ্বিনীর প্রতিটি লিখনিতে ভক্ত প্রানের আকুল ক্রন্দন যেন ভেসে আসে । এই মহান ভক্তের জীবনি লেখার যোগ্য আমি নই , তবুও ঠাকুরকে স্মরন করে লিখছি , বিবেকের তাড়নায় , আমরা যদি সঠিক ইতিহাস জগত বাসীকে না জানাই তবে অনেক অজানা তথ্য অজানাই থেকে যাবে । আশা করি আপনারাও এগিয়ে আসবেন । 
গঙ্গাচন্না গ্রামে পোদ্দার বংশে রাজ চন্দ্র নামে এক ভক্ত-সুজনের আবাস । তিনটি পুত্র তাঁর । জ্যেষ্ঠ শ্রী কার্ত্তিক , মধ্যম শ্রী গনেশ এবং কনিষ্ঠ পুত্রের নাম শ্রীদাম । কার্ত্তিকের স্বভাব ছিল সহজ-সরল , ঈশ্বরগত প্রান । তাঁর ঈশ্বরে-লীন হবার আকুতি দেখে গ্রামের সবাই তাকে বৈরাগী উপাধি দেয় । প্রতি মাসে বৈষ্ণব ভোজন করাতেন , কত ভক্ত সজ্জন তাঁর বাড়িতে আসতো তা নিরীক্ষণ করা ভার । আরও আসতো শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মতুয়ার দল । জয় ডঙ্কা , হাতে বিজয় নিশান উড়িয়ে হরি প্রেমে মাতোয়ারা মতুয়ার দল যখন তাঁর বাড়িতে আসতো কার্ত্তিক তখন মতুয়া দলের সাথে এক সাথে হরি বলে মাতোয়ারা হয়ে যেত । 
এক দিনের কথা , শ্রী গোলোক পাগল মতুয়া দল সাথে নিয়া কার্ত্তিক বৈরাগীর বাড়িতে হরি নাম করতে আসেন । গোলোক পাগলের ভাব দেখে কার্ত্তিক পাগলের পদে পড়ে তাঁর অনুগত হল । মহাভাব সমাধিতে নিমগ্ন শ্রী গোলোক পাগলকে গুরু পদে মন প্রান সপে দিল কার্ত্তিক । গঙ্গাচন্না গ্রামবাসীও পাগলের সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হল । সেই হতে গোলোক পাগল কার্ত্তিক বৈরাগীর বাড়িতে আসা যাওয়া করতে থাকেন । এই ভাবে নয় বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেল । 
সদা হরি নামে মত্ত কার্তিকের মনে একটা দুঃখ ছিল । অনেক দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও তাঁর কোন সন্তান-সন্ততি ছিল না । অম্বিকা নামে তাঁর স্ত্রী সদা হরি-প্রেমে মগ্ন থাকতেন একটি সন্তানের আশায় । গোলোক পাগল তাঁদের সব দুঃখ বুঝতেন , কিন্তু তিনিও নিরব । একদিন হল কি , মতুয়াগন সবে মিলে কার্ত্তিকের বাটীতে হরি নাম করতে থাকে । মহাভাব তরঙ্গে সকলে যেন ভাস্তে লাগলো , কি এক আকর্ষণে অবিরত হরিনামে এক দিব্য জ্যোতি তাঁদের সকলের প্রানে শিহরন জাগিয়ে তুলল । ভক্তি-প্রেমরসে বাহ্যজ্ঞান হারা হয়ে পরল অনেকেই । এমনিই এক ঐশ্বরিক মুহূর্তে কার্ত্তিকের স্ত্রী অম্বিকা পাগলের চরন ধরে অস্রু জলে ভাসতে থাকে । হা রে ভক্ত...... পাগল আর স্থির থাকতে পারলনা , বলল 
“ মাগো তোর কোলে ভুবন আলো করা এক পুত্র সন্তান আসবে , নাম রাখিস অশ্বিনী , সে হবে মহান হরি ভক্ত ” 
অবর্ণনীয় এক লীলা ভক্তের দ্বারা করলেন দয়াল শ্রী হরি । সাল টি তখন ১২৮৪ , কার্ত্তিক মাসের বুধবার ব্রক্ষমুহূর্তের কালে পূর্ণিমা তিথিতে ভক্ত চুড়ামনি শ্রী শ্রী অশ্বিনী গোঁসাই জন্মগ্রহন করেন । গোলোক চাঁদের বরে রত্ন জনমিল । পুত্র সন্তান পেয়ে পিতা-মাতার হৃদয় আনন্দ ভরে উঠলো । মাতৃ স্নেহে অশ্বিনী বড় হতে থাকেন । কিন্তু বিধির বিধান , অশ্বিনীর বয়স যখন দুই বৎসর ছয় মাস তখন তাঁর মাতা অম্বিকা ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোকে গমন করেন । 
হায় রে অশ্বিনী , যার ভক্তি-গীতি শুনে মতুয়াগন পাগল পারা হয়ে যেত মাতৃ হারা সেই শিশু অশ্বিনীর করুণ ক্রন্দনে , ভক্ত গনের বুকটা ফেটে যেত । এই অবস্থায় অশ্বিণীর পিশিমাতা এগিয়ে আসেন তাঁর লালন পালনে। অশ্বিনীকে প্রতি-পালনের জন্য কার্ত্তিক বিবাহ করেন । অশ্বিনীর বিমাতার নাম ছিল স্বরুপিনী , তিনি প্রান দিয়ে অশ্বিনীকে ভালবাসতেন । মা – মা বলে অশ্বিনী যখন তাঁর কাছে আসতে চাইতো , মাতা স্বরুপিনী হাতের কাজ ছেড়ে ছুটে এসে কোলে তুলে নিত । বাৎসল্যেতে তাঁর হৃদয়টা ভরপুর ছিল , তাই দেখে পাড়া-প্রতিবেশী বিস্মিত হতো । 
------------------এই হল প্রেমিক কবি শ্রী অশ্বিনী কুমার সরকার –এর জন্ম ও বাল্য কথন । পরিপূর্ণ বয়সে আরও অনেক লীলা করেছেন তিনি । শ্রীশ্রী ঠাকুরের কৃপায় অক্ষর জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন অমুল্য রত্নের ভাণ্ডার “শ্রী শ্রী হরি সংগীত” । শ্রী শ্রী হরি-গুরু চাঁদ মতুয়া মিশন (কেন্দ্রীয়) , শ্রী ধাম ওড়াকান্দি থেকে ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত হয়ে প্রচারিত হচ্ছিল এতকাল ধরে । অনেক দিনের মনের বাসনা এই রত্নের ভাণ্ডারকে শুধু মতুয়াদের কাছে গচ্ছিত রাখলে চলবে না , পৌঁছে দিতে হবে সকল সুধী সমাজের কাছে । 
------ ভক্ত সুজন ,
আশা করি আপনাদের কাছে সমাদর পাবে । 
জয় হরিবোল 
অসীম কুমার রায়
সহ-সাধারন সম্পাদক
শ্রী শ্রী হরি-গুরু চাঁদ মতুয়া মিশন
সিলেট জেলা শাখা , বাংলাদেশ । 

No comments: