Sunday, March 8, 2020

ভারতবর্ষে হিন্দু গণহত্যা - ৯



শহরের সমস্ত বৈরাগী কাটা পড়ল, কিন্তু প্রভু গােকুলনাথের মন্দির ও বিগ্রহ রক্ষা পেল।60) 
এইভাবে হিন্দুর রক্তে মাটি পিছল করতে করতে আবদালি আগ্রা পৌঁছল এবং আগ্রাও তার বর্বরতার শিকার হল। ফেরার পথে আবদালি শিখদের সর্বপ্রধান তীর্থস্থান অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির ধ্বংস করে। ১০০ গরু কেটে সেই গরুর রক্তে মন্দিরের পবিত্র জলাশয়কে অপবিত্র করে।(60) | আজকাল আমাদের মার্কসবাদী ও সেকুলার ঐতিহাসিকরা টিপু সুলতানকে মহিমান্বিত করতে ব্যস্ত। কারণ মুসলমান তােষণকারী মেকি সেকুলার রাজনীতির কাছে ওই সব মেরুদণ্ডহীন ঐতিহাসিকরা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে। তাই তাদের ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্য হল, মুসলমানদের ভােট পাবার জন্য তাদের খুশী করা। তাই তাদের সিদ্ধ! হল, (১) ইসলাম শব্দের অর্থ বলতে হবে শান্তি। (২) ইসলাম যে একটি অমানবিক ও চূড়ান্ত এক ঘৃণার তত্ত্ব তা বলা যাবে না। বরং তাকে দেখাতে হবে উদার ও সহিষ্ণু এক মহান ধর্ম হিসাবে। এবং (৩) কোরাণকে দেখাতে হবে মহান সাম্যবাদী, জাতপাতের বিরােধী এবং বিশ্বভ্রাতৃত্বের ভাবে পরিপূর্ণ এক মহান গ্রন্থ হিসাবে। সেই একই নিয়মে টিপু সুলতানকে দেখাতে হবে এক মহান ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও বৃটিশের সঙ্গে সংগ্রামকারী এক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে। 
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে টিপু সুলতান ছিল অন্যান্য মুসলমান শাসকের মতই কোরাণের জিহাদের তত্ত দ্বারা উদ্বদ্ধ এক দানব বিশেষ। মালাবার ও কর্গ অঞ্চলের হিন্দুদের ওপর বীভৎস অত্যাচার চালিয়ে টিপু বলপূর্বক তাদের মুসলমান হতে বাধ্য করে। আজকের কর্ণাটক ও কেরালার মুসলমানেরা প্রায় সকলেই সেই সময় টিপুর দ্বারা বলপূর্বক ধর্মান্তরিত হয়েছিল। লণ্ডন স্থিত ‘ইণ্ডিয়া অফিস লাইব্রেরী”-তে ঐতিহাসিক কে এম পানিকর টিপুর লেখা কিছু চিঠিপত্র আবিষ্কার করেন যা থেকে টিপুর চরিত্র অনুমান করা চলে। ১৭৮৮ সালের ২২শে মার্চ টিপু তার সেনাপতি আব্দুল কাদের কে যে চিঠি লিখেছিল তার মর্মার্থ হল-“১২,০০০ এর বেশি হিন্দুকে মুসলমান করা হয়েছে। তার মধ্যে অনেক নাম্বুদ্রি ব্রাহ্মণ আছে। এই সাফল্যের খবর হিন্দুদের 

60.J.D. Sen, Jihad in India, 5. 

মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার। স্থানীয় হিন্দুদের মুসলমান করার জন্য তােমার কাছে তাদের ধরে নিয়ে এসাে। একজন নামুদ্রিও যেন বাদ না 
যায়।”(61) 
১৭৮৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তার এক উচ্চ কর্মকর্তাকে টিপু লিখছে, “আমি দুজন বিশ্বস্ত লােককে হুসেন আলির সঙ্গে পাঠাচ্ছি। এদের সাহায্যে সমস্ত হিন্দুদের ধরবে আর হত্যা করবে। যাদের বয়স ২০ বছরের কম তাদের জেলে ঢােকাবে এবং এই সংখ্যা ৫০০০ এর বেশি হলে বাকিদের গাছের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে। এটা আমার আদেশ।”61) 
| ১৭৯০ সালে ১৯শে জানুয়ারী কর্মকর্তা বস সামান খাঁকে টিপু লিখছে, “তুমি কি জান না যে সম্প্রতি মালাবারে আমি এক বিশাল সাফল্য অর্জন করেছি এবং ৪ লক্ষের ও বেশি হিন্দুকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছি। আমি খুব শীঘ্রই অভিশপ্ত “রমণ নায়ার”-দের বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছি। এই সব প্রজাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করাটা সর্বাপেক্ষা জরুরী, তাই আমি বর্তমানে শ্রীরঙ্গপত্তম ফিরে যাবার পরিকল্পনা আনন্দের সঙ্গে স্থগিত রেখেছি।”(62) 
আর একটি চিঠিতে টিপু তার সেনাপতিদের আদেশ দিয়ে লিখছে, “প্রত্যেক জেলার প্রত্যেক হিন্দুকে মুসলমান করতে হবে। গোেপন জায়গা থেকে তাদের খুজে বের করতে হবে এবং সত্য, মিথ্যা, তরবারি ও ছলনার আশ্রয় নিয়ে তাদের সদলে ধর্মান্তরিত করে মুসলমান বানাতে হবে,”(62) ১৭৯৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী (৭ই সাবান, ১২১১ হিজরি)-তে আফগানিস্তানের শাসক আহম্মদ শা আবদালির সেনাপতি জামান শাহ কে লেখা একটি চিঠিতে টিপু আবদালিতে ভারত আক্রমণ করতে অনুরােধ জানিয়ে লিখছে, “আল্লার ইচ্ছা ও আল্লার রসুলের আদেশ অনুসারে আমাদের উচিত মিলিতভাবে ভারতের এই কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করা।...প্রত্যেক শুক্রবার আমার রাজ্যের মুসলমানরা জুমআর নামাজের পর খুত্ব দিচ্ছে (প্রার্থনা করছে), “হে আল্লা, আপনি ওই ঘৃণ্য কাফেরদের মস্তক ছিন্ন করে দিন। তাদের পাপের বোেঝ তাদের মাথায় পতিত হােক। আমি বিশ্বাস করি সর্বশক্তিমান আল্লা আমাদের 
61.J.D, Sen, ibid,53. 
62.J.D. Sen, ibid,54. 

প্রার্থনাকে কার্যকর করবেন এবং এই পবিত্র কাজে হাত মিলিয়ে অগ্রসর হলে আমরা নিশ্চয়ই সফল কাম হব।”(63)। এই ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, টিপু শুধু নিজের রাজ্য রক্ষা করার জন্যই বৃটিশের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। ভারতবর্ষকে বৃটিশ পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার কোন উদ্দেশ্য তার ছিল না। ভারতের স্বাধীনতা তার কাম্য হলে সে জামান শাহকে ভারত আক্রমণ করার আহ্বান করতে পারত না। 
বহু খ্যাত “সাের্ড অফ টিপু সুলতান” নামক টিপুর একটি শিলালিপিতে ফার্সীভাষায় লেখা আছে, আমার জয় গৌরবের তরােয়াল এই দেশের কাফেরদের ধ্বংস করার জন্য বিদ্যুতের মত ঝলকাচ্ছে। হে আল্লা, আপনি আমাদের প্রভু, কাফেরদের নির্মূল করতে আপনি আমাদের সাহায্য করুন। হে আল্লা, আমরা যারা মহম্মদের সত্যধর্মকে প্রসারিত করতে চাই, তাদের আপনি জয়যুক্ত করুন। আর যারা মহম্মদের সত্যধর্মের বিরােধিতা করে তাদের পরাজিত ও বিহুল করুন। তাদের বিরুদ্ধে বিশাল বিজয় হাসিল করতে, হে আল্লা, আপনি আমাদের সাহায্য করুন।”(64) টিপুর লেখা এরকম আরও অনেক শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়েছে, এবং ওই সব সমস্ত শিলালিপিতেই আল্লার কাছে কাফেরদের সমূলে ধ্বংস ও মুসলমানদের মহান বিজয় প্রার্থনা করা হয়েছে। 
63.J.D. Sen, ibid,55. 
64.C.H.Rao, History of Mysore, lit, 1973.

No comments: