Thursday, March 5, 2020

পৃথিবীতে রাজশক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি

মতুয়াদের প্রতি-
আপনি এটা জানেন কি ? এটা ভাবেন কি ? এটা করেন কি ? তবে ?
 পড়ুন এই লেখাটি।
হরিচাঁদ ত্তত্ত্বামৃত-ডাঃ মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস  (পৃষ্ঠা নং V to XX)
শ্রীযুক্ত হরিবর সরকার মহাশয়ের তৎপরতা এবং শ্রীযুক্ত গোপালচন্দ্র হাওলাদার মহাশয়ের অর্থানুকূল্যে মহামতি তারক সরকার বিরচিত 'শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত' গ্রন্থখানি সর্ব প্রথম মুদ্রিত হইয়া   পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় কলকাতার দর্জিপাড়া পাঁচনং ছিদাম মুদি লেনের 'শাস্ত্র প্রচার প্রেস' হইতে ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে(১৩২৩ বঙ্গাব্দ)। সেখান হইতে ২৭ বৎসর পরে ১৯৪৩ খৃষ্টাব্দে (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয় মহানন্দ হালদার মহাশয় প্রণীত 'শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিত' কাব্যগ্রন্থখানি । ------  মূলতঃ  শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত এবং শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিত এই দুইখানি গ্রন্থকে  মতুয়া ধর্মের  আকরিক গ্রন্থ হিসাবে ধরা হয়।   
N0. (1) (মতুয়া লেখকদের প্রতি হরি-গুরুচাঁদের প্রত্যাশা-)
১৯৪৩ খৃষ্টাব্দে গুরুচাঁদ চরিত প্রকাশিত হইবার পুর্ব পর্যন্ত তারক সরকার, হরিবর সরকার এবং অশ্বিনী গোঁসাই (বৈরাগী) সহ অন্যান্য বেশ কিছু ভাবুক কবি  এবং গীতিকার মতুয়া সাহিত্যের পত্তন করিলেও গুরুচাঁদ চরিত প্রকাশিত হইবার পর হইতে মতুয়া সাহিত্যের কলেবর বিশষভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকে ততদিনেহরি-গুরুচাঁদের আপনার জনেরা সাবলীল হাতে কলম ধরিতে শিখিয়াছেন । তাই বহু লিপিকার মতুয়া সাহিত্যের উপরে তাঁহাদের কলম চালাইতে শুরু করেন তাঁহারা কলম চালাইতে শিখিলেন ঠিকই, কিতু হায় ! গবেষণামূলক দৃষ্টিলাভ করিতে না পারায়  তাঁহারা কেবল মাত্র বৈদিক সংস্কারাচ্ছন্ন সাধারণ দৃষ্টিতে যাহা দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা লইয়াই পুস্তকাদি প্রণোয়ন করিতে শুরু করিলেন । 'হরিলীলামৃত' প্রন্থকারের ইঙ্গিতপূর্ণ লিপিগুলির মর্মার্থ  উদ্ধার করিতে কেহই আত্মনিয়োগ  করিলেন না । তাঁহারা সকলেই বৈদিক ভাবনার বশবর্তী হইয়া হরি-গুরুচাঁদকে লইয়া কেবলই অলৌকিক কাহিনী লিখিতে যত্নবান হইলেন । কিন্দু কেহই তাহার  অন্তর্নিহিত যুক্তি -বিজ্ঞানেরর সূক্ষ্ম মৌলিক সত্যটিকে উদ্ঘাটন করিয়া পাঠকদের সম্মুখে তুলিয়া ধরিতে সচেষ্ট হইলেন না । ইহা আমাদের জাতির পক্ষে সব চাইতে দুর্ভাগ্যজনক চেষ্টাহীনতা । তাই মহা চিন্তাবিদ হরি-গুরুচাঁদের কর্মকুশলতা, জাতীয়া মুক্তির সঠিক তৎপরতা, সমাজ ও ধর্মচিন্তার সার্বননীন সত্যতা প্রচারের আলোকে আজিও সম্যক মূল্যায়ন হইল না। যে শাশ্বত সত্যকে ঘিরিয়াই ছিল হরি-গুরুচাঁদের ধর্ম আন্দোলন, এই আন্দোলন শুধু মাত্র পতিতদের মাঝেও পরিপূর্ণ মাত্রা লাভ করিলে হরি-গুরুচাঁদের প্রত্যাশার অনেকটাই পূরণ হইতে পারিত । আজ পর্যন্ত পতিত সমাজের সমস্ত লিপিকারেরাই চরম দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই মুক্তির জায়গাটিকে অবহেলা ও তাচ্ছিল্য করিয়া  এড়াইয়া যাইতেছেন । যে বৈদিক ধর্ম এবং  তাহার অবিজ্ঞানী মানবতা বিরোধী নয়ম কানুন আমাদের পাতিত্যে নিমজ্জিত করিয়াছে, যে ধর্ম আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মান-মর্যাদার স্বর্ণ সিংহাসন হইতে অজ্ঞানতা এবং অমানবিক দাসত্বের বিষ্ঠামিশ্রিত ধুলায় নামাইয়াছে  এবং তথা হইতে উত্তরণের সমস্ত পথ রুদ্ধ করিয়া রাখিতে সর্বদা সচেষ্ট রহিয়াছে, তাঁহারা যেন তাহারই কাছে দায়বদ্ধ হইয়া হাতে কলম তুলিয়া লইয়াছেন, এবং আমাদের কাছে চরম ঘৃণিত ও বিভীষিকাময় সেই বৈদিক ধর্মকেই আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল, মুক্তির দিশারী ‘মতুয়াধর্মের’ মাঝে   অভিনব ভাবে প্রতিষ্ঠার দায়বদ্ধাতায় জীবন পণ করিয়া নামিয়াছেন ।  হায়রে দুর্ভাগা জাতি,  স্বর্ণথলি প্রাপ্তির সন্নিকটে আসিয়া চক্ষু বন্ধ করিয়া হাটিতে শুরু করিলে ! যে হরি-গুরুচাঁদ তোমাদের পাতিত্যে নিমজ্জিত হইবার একমাত্র কারণ হিসাবে বৈদিক ধর্মকেই শনাক্ত এবং দায়ী করিলেন, তোমরা সেই হরি-গুরুচাঁদকে তাহাদের কাছে ঘৃণ্য সেই বৈদিক ধর্মের ধারক এবং বাহক হিসাবেই প্রতিষ্ঠা করিতে উঠিতে পড়িয়া লাগিয়াছ ! যাঁহাদের উদ্দেশ্য এবং প্রচেষ্টা ছিল পতিতদের বৈদিক ভাবনা হইতে মুক্ত করিয়া অবৈদিক পথে হাঁটিতে শিখাইবেন এবং প্রত্যাশা ছিল তাঁহাদের আপনার জনেরা তাঁহাদেরই নির্দেশিত অবৈদিক পথ ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে একদা  বেদাতীত ভারতে পৌঁছাইয়া যাইবে এবং মতুয়াধর্মকে আশ্রয় করিয়া বেদাতীত ভারতবর্ষের মূল ঐতিহ্য সত্য, প্রেম, পবিত্রতা ও সৌভ্রাতৃত্বের পুনর্জাগরণ ঘটাইবে, তাঁহাদেরই তোমরা বৈদিক অবতার বলিয়া রঙ মাখাইয়া পালাগান করিতে শুরু করিলে ! যাঁহাদের ঐকান্তিক স্বপ্ন ছিল সমস্ত ভারতবাসীকে ‘মতুয়াধর্মে’র আঙিনায় দাঁড় করাইয়া জাতপাত এবং শ্রেনী বৈষম্যহীন সেই বেদাতীত ভারতবর্ষকে  নবরূপে গড়িয়া তোলা, তাঁহাদেরই কিনা জাতে তুলিবার জন্য তোমরা কত রকম ধূর্তামী ও ফন্দি ফিকির করিয়া চলিয়াছ !
     যে অলৌকিক ভাবনাময় বৈদিক দর্শন- যাহা মানুষকে সর্বদা অজ্ঞানতার পঙ্কিলতায়  নিমজ্জিত করিয়া রাখিতে চায়, যাহারা সেই বৈদিক দর্শনকে নস্যাৎ করিয়া বেদাতীত ভারতের  প্রাচীনতম অবৈদিক দর্শনকে উন্মোচন করিয়া নব কলেবর দান করিলেন, তাঁহাদের সম্মুখে রাখিয়া তোমরা তাঁহাদের সৃষ্ট অবৈদিক মতুয়াধর্মের মধ্যে অলৌকিক বৈদিক দর্শন প্রতিষ্ঠা করিতে চাও !  হায়রে লিপিকারের দল ! তোমরা আজিও হীনমন্যতা কাটাইয়া  উন্মুক্ত আকাশের নীচে দাঁড়াইবার মত সাহস অর্জন করিতে পারিলে না ! সত্যকে সত্য বলিয়া মানিয়া লইতে মেঘমুক্ত আকাশের মত  নির্মল হৃদয়ের অধিকারী হইতে পারিলে না !তাই তো আজিও হরি-গুরুচাঁদের প্রত্যাশার একাংশও পূর্ণ হইল না। তাঁহাদের সংগঠিত ধর্ম আন্দোলন আজিও শুধু মাত্র বৈদিক কারাগারের মধ্যেই হস্ত- পদ ছুঁড়িতেছে- কারাগারের বন্দিদশা হইতে অবৈদিক মাটিতে পা ফেলিবার মত শক্তি সে আজিও অর্জন করিতে পারিল না । তাই গুরুচাঁদ যে জাতিকে উপলক্ষ্য করিয়া ‘জাতি ধর্ম, জাতি মান’ এই মহান বাক্যটি ঘোষণা করিয়াছিলেন, যাহাদের পাতিত্য মোচন করিয়া মান-মর্যাদার জায়গায় প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য হরিচাঁদ ঠাকুর সত্য, প্রেম, পবিত্রতার ধর্ম-অবৈদিক ’মতুয়া’ ধর্মের সৃষ্টি করিয়াছিলেন, যাহাদের সমস্ত রকম সামাজিক এবং ধর্মীয় শোষণ ও দাসত্ব হইতে মুক্ত করিবার জন্য এই সুমহান ধর্ম একান্ত নিজস্ব করিয়া হাতে তুলিয়া দিয়াছিলেন, যাহাদের হরিচাঁদ ধর্মীয় ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করিয়া এক ঐক্যবদ্ধ বলিষ্ঠ জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে তাহাদের মুখে একাত্মভূত হইবার মহামন্ত্র এই ‘হরিবোল’ ধ্বনি তুলিয়া দিয়াছিলেন, যাহাদের হাতে কলম তুলিয়া দিয়া গুরুচাঁদ চুপিসারে বুঝাইয়াছিলেন ‘বিদ্যা চাই, ধন চাই, রাজকার্য চাই, প্রকাশ্য সমাবেশে দাঁড়াইয়া চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্জনের লোভে উৎসাহিত করিবার জন্য যাহাদের উদ্দেশে নির্ভীক কন্ঠে জানাইয়াছিলেন
N0. (2)  “পৃথিবীতে রাজশক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি

No comments: