Wednesday, March 11, 2020

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের সারা জীবনের কর্ম যজ্ঞের ভিতর দিয়ে কিঞ্চত তুলে ধরার চেষ্টা করছি



গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মঃ- ১৮৪৬ সালের ১৩ই মার্চ;
জন্মস্থানঃ- বর্তমান বাংলাদেশের ওড়াকান্দী গ্রাম, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ।
পিতাঃ- হরিচাঁদ ঠাকুর
মাতাঃ- শান্তি মাতা।
ঠাকুরদাঃ- যশোমন্ত ঠাকুর।

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের সারা জীবনের কর্ম যজ্ঞের ভিতর দিয়ে কিঞ্চত তুলে ধরার চেষ্টা করছি-
১৮৭২ সালে সার্বিক শিক্ষার দাবিতে বাংলায় গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে মতুয়াদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ হয়। সেইজন্য ইংরেজ সরকার নবপ্রবর্তিত ইংরেজী শিক্ষা সরবস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।১৮৮০ (১২৮৭ বাংলা) সালে নভেম্বর মাসে চৌধুরী বাড়িতে পাঠশালা তৈরী করা হয়।
১৮৮১ সালে খুলনা জেলার দত্তডাঙায় ঈশ্বর গাইনের বাড়িতে শ্রদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে এক বিশাল জাগরণী সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় গুরুচাঁদ ঠাকুর সভাপতিত্ব করেন।
১৮৮১ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে খুলনা শহরে Namasudra Welfare Association গঠিত হয়। উক্ত সংগঠনের তৎকালীন ২২টি জেলার প্রতিনিধি যোগদান করেন।১৯০৭ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে “নমঃশূদ্র সুহৃদ” নামে পত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়।১৯০৮ সালে ওড়াকান্দীতে একটি নারী শিক্ষা ট্রেনিং স্কুলও স্থাপন করা হয়। এই সময় প্রসূতি মা ও শিশু সেবার জন্য মাতৃমঙ্গল প্রতিষ্টান করা হয়।১৯১০ সালে তৎকালীন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার স্যামুয়েল ন্যাথান ওড়াকান্দী পরিদর্শনে আসেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর তাঁর কাছে শিক্ষা, ছাত্রাবাস ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য দাবী জানান।
১৯১০ সালে মার্চ মাস নাগাদ (বাংলা ১৩১৬ সাল), বারুনীর সময় অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন পালনের মাসে (১৩ই মার্চ) গুরুচাঁদ ঠাকুর পতিত জাতির মধ্যে বিধবা বিবাহ প্রচলন করেন। আর বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।
১৯১২ সালে পঞ্চম জর্জ গুরুচাঁদ ঠাকুরকে সমাজ সেবার জন্য “দরবার মেডেল” উপহার দেন।

১৯১১ সালে চন্ডাল গালি মোচন, পরিবর্তে নমঃশূদ্র নাম সরকারী নথীতে অন্তর্ভুক্ত করান গুরুচাঁদ ঠাকুর। লোকগণনায় বাংলায় চন্ডালদের নমঃশূদ্র সম্প্রদায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের হাজার বছরের চন্ডাল গালি মোচন করা হয়।
১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার ঘোষণা অনুসায়ী পূর্ববঙ্গের তপশিলীভুক্ত জাতি সমূহের ছাত্রদের পড়াশুনার সুবিধার্থে কিছু সরকারী হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়।
১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পূর্ব্ব বাংলার পিরোজপুর, বরিশাল এবং ঢাকায় সরকারী অফিসে অনুন্নত শ্রেণীর মানুষের জন্য জনসংরক্ষণ ব্যবস্থা পুরপুরি চালু হয়ে যায়।
১৯১৮ সালে কলকাতায় অনুরূপ একটি হোস্টেল খোলা হয় এবং তার পরিচালন ভার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ন্যাস্ত হয়।
১৯১৯ সালে মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে অনুন্নত শ্রেণীর এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রেসিডেন্সী বা প্রদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এইভাবে যুগনায়ক গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে মতুয়া আন্দোলনের ফলে সমগ্র ভারতবর্ষের শিক্ষা, চাকরি ও আইন সভায় সংরক্ষণ সৃষ্টি হয়।
১৯২১ সালেগান্ধীজীর নির্দেশে চিত্তরঞ্জন দাস গুরুচাঁদ ঠাকুরকে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর এর যোগ্য জবাব দেন ঐ আন্দোলনে যোগ না দেবার জন্য।
১৯২৩ সালে খুলনা জেলায় অনুন্নুত মানুষের উন্নয়নের জন্য যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গুরুচাঁদ ঠাকুর সেই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ও দীর্ঘ ভাষণ দেন।
১৯২৬ সালে “The Bengal Depressed Classes Association” গঠিত হয় খুলনা শহরের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।
১৯৩১ সাল নাগাদ ঢাকা ডিভিশনে মূলত; নমঃশূদ্র ছেলে-মেয়েদের পঠন পাঠনের নিমিত্ত গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে ১০৬৭টি বিশেষ বিদ্যালয় গড়া সম্ভব হয়েছিল।
১৯৩১ সাল নাগাদ পিছিয়ে রাখা সমাজের সন্তানদের শিক্ষার জন্য প্রেসিডেন্সি ডিভিশনে ৫৬৯টি, সাঁওতাল বা আদিবাসী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য বর্ধমান ডিভিশনে ২৪৬টি এবং নমঃশূদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য ঢাকা ডিভিশনে ১০৬৭টি স্কুল স্থাপন করেন। তো দেখা যায় সর্বমোট ১৮৮২টি স্কুল স্থাপন করেন।
১৯৩২ সালে ওড়াকান্দীতে ‘হরি-গুরুচাঁদ মিশন’ প্রতিষ্ঠা করে সেই মিশনের সহায়তায় ওড়াকান্দীর তালতলায় নারী শিক্ষার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৮১ সালে দত্তডাঙ্গা গুরুচাঁদ ঠাকুর জাতির জন্য যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তার পর থেকে পিছিয়ে রাখা শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষা আন্দোলনের যে জোয়ার বইতে শুরু করে, আর দিকে দিকে যে পাঠশালা তৈরী হতে থাকে সেই সব পাঠশালার মধ্যে বহু পাঠশালা ১৮৯০ সালের মধ্যে ইংরাজী ও উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে পরিনত হয়। আর এই সব বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১৯৩৭ সালে ৯১ বছর বয়সে ২৭ শে মার্চ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মহাপরিনির্বাণ হয়।
১৯৩৭ সালে ২৭শে মার্চ শিক্ষা আন্দোলনের এর অগ্রদূতের মহাপরিনির্বাণের পরে কোলকাতার এলবার্ট হলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের স্মৃতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যনার্জী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
জয় গুরুচাঁদ।

No comments: