Friday, May 20, 2022

কাপড় খুলে শরীরে দুবাটি লঙ্কাবাঁটা ঢোকানো হয়েছিল, না না নেহেরু -গান্ধী মোটেই নয়, ওনারা তো ব্রিটিশ পরিবারের অনুগত।ইনি ননীবালা দেবী।।

একজন ননীবালা দেবী ছিলেন আমাদের বাংলায়। পুরোটা পড়বেন। এই ইতিহাস আমাদের প্রজন্মের জানা উচিত। 

কাপড় খুলে শরীরে দুবাটি লঙ্কাবাঁটা ঢোকানো হয়েছিল, না না নেহেরু -গান্ধী মোটেই নয়, ওনারা তো ব্রিটিশ পরিবারের অনুগত।ইনি ননীবালা দেবী।।        

                                                           বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮৮ সালে হাওড়া জেলার বালিতে। বাবা সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মা গিরিবালা দেবী। সেই সময়ের সামাজিক রীতি মেনে ১৮৯৯ সালে মাত্র এগার বছর বয়সে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। তাঁর বয়স তখন মাত্র ষোল। এরপর তিনি তাঁর বাবার কাছেই ফিরে আসেন।

১৯১৪ সালে বেধেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেই সময় ভারতে যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা জার্মানির কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতব্যাপী একটা বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে, স্বাধীনতা আনবার রাস্তা পরিষ্কার করতে চেষ্টা করেছিলেন। বাঘা যতীন ও রাসবিহারী বসুর মিলিত চেষ্টায় দ্বিতীয় সিপাহি বিদ্রোহের (২১ফেব্রুয়ারি, ১৯১৫) পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, রাসবিহারী বসু ভারত ত্যাগ করেন। ইংরেজ সরকার ভারত-জার্মান যোগাযোগের খবর জেনে যায়। বাঘা যতীন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বালেশ্বরের যুদ্ধে শহীদ হন (১০ই সেপ্টেম্বর ১৯১৫)। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার বিপ্লবী কাজে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তবুও ইংরেজের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে পূর্ব-ভারতের পথ ধরে চীন ও আসামের মধ্য দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র আনিয়ে ভারতে বিদ্রোহ ঘটাবার জন্য বিপ্লবীরা আবার চেষ্টা করেছিলেন যাদুগোপাল মুখার্জীর নেতৃত্বে।

চারদিকে চলছে তখন আহত ব্রিটিশ-সিংহের প্রচণ্ড আক্রমণ ও নির্মম অত্যাচার। সেই অত্যাচারের ধরন ছিল- ফাঁসি, দ্বীপান্তর, পুলিসের নির্যাতনে পাগল হয়ে যাওয়া এবং চার্লস টেগার্টের তদারকে নিত্য নতুন বীভৎস অত্যাচার। মলদ্বারে রুল ঢোকানো, কমোড থেকে মলমূত্র এনে মাথায় ঢেলে দেওয়া, চোখের মণিতে সুঁচ ফোটানো, গরম লোহা হাতের তালু বা পায়ে চেপে ধরা, কয়েকদিন উপোস করিয়ে পিছনে হাতকড়া অবস্থায় ঠা ঠা রোদে বন্দীকে দাঁড় করিয়ে রেখে লাথি ও রুলের মার - এই ছিল টেগার্টের অত্যাচারের রীতি। এইরকম অসহায় বিপদভরা দিনে, সম্পর্কে ভাইয়ের ছেলে বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জীর কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেলেন বাল্যবিধবা ননীবালা দেবী।

দেশকে ভালোবেসে বিপ্লবীদের হয়ে তিনি নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিতেন ও নিপুণ দক্ষতায় সে কাজ সম্পন্ন করতেন। অনেক কাছের মানুষও টের পেত না যে তিনি বিপ্লবী দলের সক্রিয় সদস্য। তিনি বিপ্লবীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, এক জায়গার নেতাদের নির্দেশ ও নানা দরকারি খবর অন্য জায়গার বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। অস্ত্রশস্ত্র নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতেন আবার গোপনে বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছেও দিতেন।

১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে
ভারত-জার্মান যোগাযোগ এবং তার পরের পর বিভিন্ন ঘটনার খবর পেয়ে, সেই সম্পর্কে পুলিস কলকাতার ‘শ্রমজীবী সমবায়’ নামে এক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশী করতে যায়। তল্লাশীর সময় অমর চ্যাটার্জী পলাতক হন এবং এক সঙ্গী রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেপ্তার হন।

পলাতক অমর চ্যাটার্জী এবং তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে প্রায় দুই মাস আশ্রয় দিয়ে রাখলেন ননীবালা দেবী রিষড়াতে। এদিকে গ্রেপ্তারের সময় রামচন্দ্র মজুমদার একটা ‘মাউজার’ (Mauser) পিস্তল কোথায় রেখে গেছেন সে-কথা দল কে জানিয়ে যেতে পারেননি। বিপ্লবীদের  দরকার ছিল সেটির, কিন্তু কীভাবে সন্ধান জানা যাবে?
অতএব জেলে ঢুকে রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করে পিস্তলের খোঁজ আনতে চললেন  দুঃসাহসী ননীবালা দেবী।
সেদিনের সমাজে যা কেউ কল্পনা করতেও পারত না তাই করলেন তিনি। বিধবা ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে, তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেলে দেখা করতে এলেন। ১৯১৫-১৬ সালে যে যুগ ছিল তখন বাঙালী বিধবাদের পক্ষে সিঁদুর মাথায় এরকম পরের স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে পুলিসের কড়া দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে কাজ হাসিল করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। পুলিস তো নয়ই, কোনো সাধারণ মেয়েও নয়। আজকের সমাজ ও সেদিনকার সমাজ - মধ্যে আছে বিরাট সাগরের ব্যবধান। বিধবা ননীবালা সধবার সাজে সিঁদুর পরে একগলা ঘোমটা দিয়ে রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন জেলে। পুলিশের চোখে  ধুলো দিয়ে পিস্তলের সন্ধান জেনে বেড়িয়ে এলেন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে।

পুলিস অনেক পরে জানাত পারল যে, ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী নন। কিন্তু এটা জানতে পারেননি যে, তিনিই রিষড়াতে ছিলেন আশ্রয়দাত্রী।

পুলিশ নজর এড়াতে ১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চন্দননগরে আবার বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তবে রিষড়ার মতো এখানেও মেয়েরা না থাকলে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যেত না। তখন আবার এলেন ননীবালা দেবী, গৃহকর্ত্রীর বেশে। এখানে এইসময়ে আশ্রয়দানের উদ্দেশ্যে তাঁর বড়পিসিকেও এনেছিলেন বিপ্লবী ভোলানাথ চ্যাটার্জী। এই বড়পিসি ও ননীবালা দেবী দুটো আলাদা বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন পলাতক বিপ্লবীদের। পলাতক হয়ে আছেন সেখানে বিপ্লবী নেতা যাদুগোপাল মুখার্জী, অমর চ্যাটার্জী, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চ্যাটার্জী, নলিনীকান্ত কর, বিনয়ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তী। এঁদের সকলেরই মাথায় অনেক হাজার টাকার হুলিয়া ছিল।
এই নিশাচরেরা সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে কাটিয়ে দিতেন। শুধু রাতে সুবিধা মতো বেড়িয়ে পড়তেন। পুলিস এসে পড়লেই এই পলাতক বিপ্লবীরা নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যেতেন।

এইভাবে চন্দননগরের বিভিন্ন জায়গায়ে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশী ও বিপ্লবীদের নিমেষে পলাবার পর ননীবালা দেবীকে আর চন্দননগরে রাখা নিরাপদ হলো না। কারণ পুলিস তৎপর হয়ে উঠেছিল ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে। তাঁর বাবা সূর্যকান্ত ব্যানার্জীকে পুলিস বালি থানাতে নিয়ে গিয়ে দশটা থেকে পাঁচটা অবধি বসিয়ে রেখে জেরা করত - ননীবালা দেবীর কোথায় আছেন জানতে।

ননীবালা দেবী পলাতক হলেন। তাঁর এক বাল্যবন্ধুর দাদা প্রবোধ মিত্র কাজের জন্য যাচ্ছিলেন পেশোয়ার। বাল্যবন্ধু তার দাদাকে অনেক অনুনয় করে রাজী করালেন ননীবালাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। ননীবালা দেবী পলাতক অবস্থায় তাঁর সঙ্গে পেশোয়ার গেলেন। এও এক অনন্য কাজ, এক বাঙালী বিধবা অচেনা এক পুরুষের সাথে কয়েক হাজার কিমি দূরে সম্পূর্ণ অন্য এক জায়গায়ে চলে গেলেন লুকিয়ে থাকতে! প্রায় ষোলো-সতের দিন পরে পুলিস সন্ধান পেয়ে যখন ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে পেশোয়ার গেছে, তখন ননীবালা দেবীর কলেরা চলছে তিনদিন ধরে। প্রথমদিন বাড়ি ঘিরে রেখে তার পরদিনই নিয়ে গেল তাঁকে পুলিস-হাজতে স্ট্রেচারে করে। কয়েকদিন পেশোয়ার হাজতে রাখার পর একটু সুস্থ অবস্থায় তাঁকে নিয়ে আসা হয় কাশীর জেলে, তখন তিনি প্রায় সেরে উঠেছেন।

কাশীতে আসার কয়েকদিন পরে, প্রতিদিন তাঁকে জেলগেটের অফিসে এনে কাশীর ডেপুটি পুলিস-সুপারিনটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জী জেরা করত। ননীবালা দেবী সবই অস্বীকার করতেন -  বলতেন কাউকেই চেনেন না, কিছুই জানেন না। তারপর জিতেন ব্যানাজীর তুই-তুকারির অসভ্য ভাষা। ননীবালা দেবী তখনও চুপচাপ থাকতেন।
একদিন দুইজন জমাদারনী (Wardress) ননীবালা দেবীকে একটা আলাদা সেলে (cell) নিয়ে গেল। দুজনে মিলে তাকে জোর করে ধরে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর সমস্ত কাপড় খুলে নিয়ে দু-বাটি লঙ্কাবাটা ওঁর শরীরের ভেতরে দিয়ে দিতে লাগল। ননীবালা দেবী চীৎকার করে লাথি মারতে লাগলেন সমস্ত শক্তি দিয়ে। অসহ্য অসম্ভব অসহনীয় এক বীভৎস জ্বালা, যার বর্ণনা করার ভাষা নেই। এভাবেই অত্যাচার চলত, তার পর আবার তাঁকে নিয়ে আসা হত সেই জেল-গেটের অফিসে জিতেন ব্যানার্জীর কাছে। আবার জেরা। এত অত্যাচার, শরীরের ভেতরে লঙ্কার জ্বালা, তবু তাঁকে ভাঙা সম্ভব হ'ল না।
কাশীর জেলে - সেখানে মাটির নীচে একটা খুবই ছোট ‘পানিশমেন্ট সেল’ অর্থাৎ শাস্তি কুঠুরী ছিল। তাতে দরজা ছিল একটাই, কিন্তু আলো বাতাস প্রবেশ করবার জন্য কোনো জানালা বা সমান্য ঘুলঘুলিও ছিল না। জিতেন ব্যানার্জী তিন দিন প্রায় আধঘণ্টা সময় ধরে ননীবালা দেবীকে ঐ আলো-বাতাসহীন অন্ধকার সেলে তালাবন্ধ করে আটকে রাখত। কবরের মতো সেলে আধঘণ্টা পরে দেখা যেতো ননীবালা দেবীর অর্ধমৃত অবস্থা, তবু মুখ দিয়ে স্বীকারোক্তি বের করতে পারল না। তৃতীয় দিনে বন্ধ রাখল আধঘণ্টারও বেশি, প্রায় ৪৫ মিনিট। স্নায়ুর শক্তিকে চূর্ণ করে দেবার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। সেদিন তালা খুলে দেখা গেল ননীবালা দেবী পড়ে আছেন মাটিতে, জ্ঞানশূন্য।

হাল ছেড়ে দিয়ে পুলিস ননীবালা দেবীকে কাশী থেকে নিয়ে এল কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে। ১৮১৮ সালের তিন নম্বর রেগুলেশনের ধারা প্রয়োগ হল তাঁর বিরুদ্ধে, প্রথম মহিলা রাজবন্দি হিসাবে প্রেসিডেন্সি জেলে এলেন তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। জেল-কর্তৃপক্ষ, এমনকি জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটও তাঁকে অনুরোধ করে খাওয়াতে পারলেন না। ননীবালা দেবী বললেন, বাইরে গেলে খাবেন। প্রতিদিন সকাল ৯টায় নিয়ে যেত তাঁকে গোয়েন্দা-আফিসে, সেখানে আই.বি. পুলিসের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি (Goldie) তাঁকে জেরা করত।

-আপনাকে এখানেই থাকতে হবে, তাই বলুন কী করলে খাবেন?
-যা চাইব তাই করবেন?
-করব।
-আমাকে বাগবাজারে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী সারদা মা'য়ের কাছে রেখে দিন, তাহলে খাব।
গোল্ডি শয়তানি হাসি লুকিয়ে বলে-আপনি দরখাস্ত লিখে দিন।

ননীবালা দেবী তখুনি দরখাস্ত লিখে দিলেন।

গোল্ডি সেটা নিয়ে ছিড়ে দলা পাকিয়ে ছেড়া কাগজের টুকরিতে ফেলে দিল। এবারে সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ আহত বাঘের মতো লাফিয়ে উঠে ননীবালা দেবী এক চড় বসিয়ে দিলেন গোল্ডির মুখে। 
-ছিড়ে ফেলবে তো, আমায় দরখাস্ত লিখতে বলেছিলে কেন? আমাদের দেশের মানুষের কোনো মান সম্মান থাকতে নেই? দ্বিতীয় চড় মারবার আগেই অন্য সি.আই.ডি'রা তাঁকে ধরে ফেলে। - একশো বছরেরও আগে এক বাল্য বিধবা মেয়ের কি আশ্চর্য সাহস !

জেলের মধ্যে একদিন সিউড়ির দুকড়িবালা দেবীর (১৮৮৭-১৯৭০) সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সকলের কাছে তিনি 'মাসিমা' নামে পরিচিতি ছিলেন। দুকড়িবালা দেবী ছিলেন ভারতে 'অস্ত্র আইনে সাজা প্রাপ্ত প্রথম মহিলা বন্দি'। জানতে পারলেন, সিউড়িতে দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে সাতটা ‘মাউসার’  (Mauser) পিস্তল পাবার অপরাধে দুকড়িবালা দেবীর হয়েছে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড। রাখা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদী করে (মানে চোর-ডাকাত'দের সাথে একই সেলে। রাজবন্দী হলে আলাদা সেলে আলাদা ভাবে রাখা হয়)। অসম্ভব খাটাচ্ছে, ডাল ভাঙতে দিচ্ছে প্রতিদিন আধমণ। 

মতলব স্থির করে ফেললেন ননীবালা দেবী। উপবাসের ১৯ থেকে ২০ দিন চলছে তখন। আবার এলেন ম্যাজিস্ট্রেট অনুরোধ করতে।

-আপনাকে তো এখানেই থাকতে হবে। কী করলে খাবেন বলুন?
-আমার ইচ্ছামতো হবে?
-হ্যাঁ, হবে।
-তাহলে আমার রান্না করবার জন্য একজন ব্রাহ্মণ-কন্যা চাই, দুজন ঝি চাই।
-ব্রাহ্মণ-কন্যা কেউ আছেন এখানে?
-আছেন, দুকড়িবালা দেবী।
-আচ্ছা, তাই হবে।

এরপরে এলো সমস্ত নতুন বাসন-কোসন, হাঁড়িকুড়ি। ২১ দিনের পরে ভাত খেলেন সেই অসামান্য দৃঢ়চেতা বন্দিনী। সেইসাথে দুকড়িবালা দেবী'কেও বাঁচালেন পরিশ্রম থেকে।

দুই বছর এইভাবে বন্দীজীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। ১৯১৯ সালের এক দিন ননীবালা দেবীর মুক্তির আদেশ এলো।

জেল থেকে ফিরে এসে বালিতে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে তিনি ঠাই পেলেন না। প্রথমত সকলেই পুলিসকে ভয় পায়। এছাড়া বিধবা হয়েও পরস্ত্রী সাজা, পরপুরুষের সাথে একঘরে থাকা বা পেশোয়ার যাওয়া - এইসব কারনে সেই সময়ের অদ্ভুত সমাজের এক পক্ষ তাঁকে মেনে নেয়নি, মেনে নেয়নি তাঁর নিজের বাড়ীর লোকেরা। অন্যদিকে তাঁর নিজস্ব বিপ্লবী সংগঠন বা চেনাজানা সবটাই ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে শেষ হয়ে গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এই অবস্থায় তখন উত্তর কলকাতার এক বস্তিতে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়। (অন্য মতে, কোনও পূর্বপরিচিতের অনুগ্রহে একটি কুঁড়ে ভাড়া করেছিলেন হুগলিতে)। সুতো কেটে, রান্নার কাজ করে কোনমতে আধপেটা খেয়ে তাঁর দিন কাটতে থাকে। সমাজ এবং নিজের আত্মীয়-স্বজনদের ওপর রাগে, দু:খে, অপমানে তিনি সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন .. নিজেকে একপ্রকার লুকিয়ে রাখলেন .. এমনকি পরবর্তীকালের কোনও দেশনেতাদের কাছেও গেলেন না। যিনি সমাজকে উপেক্ষা করে দেশের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিলেন, তিনি কোথায় গেলেন সে ব্যাপারে কেউ জানতেও পারল না, খোঁজও করলো না।

দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় কুড়ি বছর পরে ১৯৬৭ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। না, ইতিহাস তাঁর জন্মদিন বা মৃত্যুদিনের তারিখ মনে রাখার প্রয়োজনবোধ করেনি। একটা সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, পুরনো কোনও বিপ্লবী সাথীর চেষ্টায় অথবা পরাধীন জেলের খাতায় নাম থাকায়, বেঁচে থাকা অবস্থায় পঞ্চাশের দশকে ৫০ টাকা পেনশন পেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে - যদিও তার কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কেউ মনে রাখেনি যাঁদের আত্মত্যাগের কথা তাঁদের দলেই ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী। তবে স্বদেশীদের নিয়ে তৈরি একটি বাংলা সিনেমায় (সিনেমার নাম 'বিয়াল্লিশ') তাঁকে নিয়ে কিছু দৃশ্য ছিল, এইটুকুই। শুধু দেশের জন্য বিধবা হয়েও সধবা সেজেছিলেন, খুবই ছোট কুঠুরী ‘পানিশমেন্ট সেলে’ শ্বাস নিতে না পেরে কতবার অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন। সামান্য একটা গোটা কাঁচালঙ্কা শুধু খেতে বললেই আমরা ভয় পাবো। এইরকম দু-বাটি লঙ্কাবাটা তাঁর শরীরের গোপন জায়গায়ে ভেতরে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কি অপরিশীম যন্ত্রণা তিনি সহ্য করেছিলেন - আমরা সুস্থ অবস্থায় কেউই তা অনুভব করতে পরবো না। উনিশ শতকের গোড়ার বিধবা মহিলা হওয়া সত্বেও নিজ চেষ্টায় তিনি সামান্য লেখাপড়া শিখেছিলেন। নিজে সুতো কেটে পৈতে তৈরি করে তা বিক্রি করে নিজের খরচ চালাতেন। তবু সেই সময়ের বাংলার কোথাও তিনি সম্মানের সাথে থাকার জায়গা পেলেন না। স্বাধীন ভারতেই তাঁকে অনাহারে কাটাতে হোলো। একবুক অভিমান নিয়ে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন - যা তাঁর মৃত্যুর পরেও শেষ হয়নি।
তাঁর কিছু মহিলা সহযোদ্ধাদের টুকরো টুকরো নানা লেখা থেকে যেটুকু জানা গেছে তাঁর বিষয়ে সেটুকু পুঁজি করেই তাঁকে এই শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন।

সংগৃহিত।
#ধর্মীয়ইতিহাস

Tuesday, May 10, 2022

॥ শ্রাদ্ধবাড়ির খাওয়া দাওয়া ।।

যিনি  মারা  গেলেন  তিনি  যা যা ভালোবাসতেন সে সমস্ত  ষোড়শোপচারে রান্না  হয় । সকলেই  কব্জি ডুবিয়ে  খান । "দাদা  আর দুটো ইলিশ পাতুরি  দিন  তো  ! অপূর্ব  হয়েছে । বহু দিন  পর এমন রান্না  খেলাম  অথবা  আহা ,সন্দেশটা অসাধারণ  !! কোন  দোকানের  ?  দাদা  fish fry  টা repeat করতে  বলুন না " ইত্যাদি  ইত্যাদি ।   আমার  তো মনে  হয়  বৃদ্ধ কেউ  হলেও  তাঁর  সন্তান  ,স্বামী  তাঁদের  কি আনন্দ  করার  মতো  মানসিকতা  থাকে ? অনেক দিন  অসুস্থ  থাকলে  অথবা  এমন কোনও  অসুখ হলে  যেটি মানুষটিকে  মৃত্যুর  দিকেই  টেনে  নিয়ে  যাবে  , আমাদের মনে  হয়  এভাবে  বাঁচার চেয়ে  মৃত্যু  শ্রেয় । মুখে  বললে ও প্রিয়জনের  বিয়োগ  ব্যথা  একটুও  কি বাজেনা সদ্য সদ্য  ?  সময়  সব কিছু  ভোলায় ঠিক  । ঐ তেরো  চোদ্দ  দিনের  মাথায়  সেটা কি নিঃশ্বেস  হয়ে যায়  ?  প্রশ্নগুলো  মাথায়  ঘোরে ।

মহাভারতে, অনুশাসন পর্বে লেখা আছে, মৃত্যুভোজ কর্মচঞ্চলতা কমিয়ে প্রৌঢ়ত্ব প্রদান করে।

যে পরিবার মৃত্যু নামক বিপদের সম্মুখীন, সেই প্রবল বিপত্তির সময় সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ান, টাকা পয়সা থেকে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাদের সবরকম সাহায্য করুন কিন্তু এগারো কি তেরো দিনে শ্রাদ্ধবাড়ির খাবার পরিত্যাগ করুন। বহিষ্কার করুন এই কুরীতির।

মহাভারতের যুদ্ধ আসন্ন। শ্রীকৃষ্ণ দুর্যোধনের প্রাসাদে গিয়ে যুদ্ধ না করার অনুরোধ করেন ও সন্ধি প্রস্তাব রাখেন,  কিন্তু দুর্যোধন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। শ্রীকৃষ্ণ মনে কষ্ট পান এবং তিনি সেখান থেকে ফেরত যাবার জন্যে উদ্যত হন। সেই সময় দুর্যোধন ওনাকে খাবার খেয়ে যেতে অনুগ্রহ করে। তাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেন,

"সম্প্রীতি ভোজ্যানি আপদা ভোজ্যানি বা পুনৈঃ", অর্থাৎ,

"যে খাওয়াচ্ছে আর যে খাচ্ছে, দুজনেরই যদি মন প্রসন্ন হয়, তাহলেই খাবার খাওয়া উচিত।

কিন্তু যিনি খাওয়াচ্ছেন আর যিনি খাচ্ছেন, তাদের মনে যদি ব্যথা বেদনা থাকে, সেই পরিস্থিতিতে কক্ষনো ভোজন গ্রহণ করা উচিত নয়।"

হিন্দু ধর্মে ১৬ টি সংস্কার তৈরি করা হয়েছে। প্রথম সংস্কার গর্ভধারণ এবং ষষ্টদশ অন্ত্যেষ্টি। সপ্তদশ সংস্কার তৈরি করাই হয় নি, তাহলে শ্রাদ্ধের সংস্কার এল কোথা থেকে.??

কোন ধর্মগ্রন্থে শ্রাদ্ধের বিধান নেই বলেই জানি। কিন্তু আমাদের সমাজে ঈশ্বরই একমাত্র ভরসা।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, পন্ডিত শ্রীরাম শর্মা, স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদি মহান পুরুষেরা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জবরদস্ত বিরোধিতা করেছেন আজীবন।

যে খাবার মানুষ কান্নাভেজা মনে তৈরি করায়, যে খাবার অশ্রুজলে সিক্ত সেই খাবার নিকৃষ্ট খাবারের পর্যায় পড়ে।

শ্রাদ্ধ ভোজনের এই কুসংস্কার কে সম্পূর্ণ ভাবে বহিষ্কার করা উচিত আর এক সঠিক পথপ্রদর্শকের ভুমিকায় সমাজের সামনে এগিয়ে আসা উচিত।

জন্তু জানোয়ার থেকেও আমরা শিক্ষালাভ করতে পারি, যারা স্বজন মারা যেতে সেদিন খাবার না খেয়ে শোক ব্যক্ত করে।

চুরাশী লক্ষ যোনিতে মানব যোনি শ্রেষ্ঠ কিন্তু আমরাই এক যুবকের মৃত্যুর তেরো দিন পূর্ণ হবার পরে পাত সাজিয়ে লুচি ছোলার ডাল আর রকমারি খাদ্য আত্মীয় বন্ধুদের খাওয়াতে তৎপর হয়ে উঠি আর শোক ব্যক্ত করার ভান করি মাত্র। এর চেয়ে বড় নিন্দনীয় কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।

যদি আপনি এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন তাহলে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কারুর মৃত্যুর পরে তার শ্রাদ্ধ বাড়িতে ভোজন গ্রহণ করবেন না আর শ্রাদ্ধর এই প্রথাকে রোখবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

আমাদের প্রয়াসেই এই কুপ্রথা ধীরে ধীরে কিন্তু একদিন নিশ্চয় সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত হতে পারে।

শ্রাদ্ধবাড়ি মানব সমাজের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এক অভিশাপ..!!

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

বিঃ দ্রঃ - কারুর মনে আঘাত দেবার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি প্রথমেই তার সম্মুখ ক্ষমাপ্রার্থী

Saturday, May 7, 2022

এতজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অন্যায়টা স্বীকার করার ক্ষমতা রাখে ছেলেটা। আবার ঋণমুক্ত হবারও সাহস আছে।

😎
👇
আজ একটা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হলাম। এটিএমের সামনে লম্বা লাইন। দাঁড়িয়ে আছি অন্তত ছয়-সাতজনের পিছনে। আমার পিছনে আরও ছয়জন। একটা ছেলে দেখলাম সবাইকে রিকোয়েস্ট করছে, প্লিজ আমায় আগে ছেড়ে দিন একটু, খুব দরকার আছে। সামনে একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তাকেও গিয়ে অনুরোধ করছে বছর চব্বিশ-পঁচিশের ছেলেটা। বয়স্ক মানুষটি বললেন, তোমরা যদি আমাদের অনুরোধ কর কেমন লাগে দেখতে? আর এই লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছে সকলেরই তো আগে প্রয়োজন। 
ছেলেটি বলল, আমার দরকারটা একটু অন্যরকম। এখনই নিয়ে যাবে মন্মথ জেঠুকে। আমার শোধ করা হবে না আর। 
ওর কথা শেষ হবার আগেই শবযাত্রীর দল বলো হরি হরি বোল করতে করতে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটা চেঁচিয়ে বলল, একটু দাঁড়াও মৃন্ময়দা দুমিনিট। উনি সম্ভবত মন্মথবাবুর ছেলে। 
ছেলেটা হাতজোড় করে বলল, প্লিজ আমায় একটু ছেড়ে দিন। আসলে জেঠু আমার বিপদের সময় ধার দিয়েছিলেন আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। তারপর টাকাটা শোধ দিতে হবে বলে জেঠুকে দেখলেই আমি অন্য রাস্তা ধরে নিতাম। জেঠু কোনোদিন চাননি। 
কাল মধ্যরাতে জেঠুর স্ট্রোক হয়, মারা যান। আমি টাকাটা শোধ দিয়ে দিতে চাই। নাহলে নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে যাব। 
ছেলেটাকে সবাই ছেড়ে দিল। সে টাকা তুলে নিয়েই পাশের চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা শবযাত্রীর দলটার কাছে গেল। মৃতদেহের পায়ের কাছে টাকাটা রেখে কান ধরে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইল। অপলক তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটাকে। এতজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অন্যায়টা স্বীকার করার ক্ষমতা রাখে ছেলেটা। আবার ঋণমুক্ত হবারও সাহস আছে। আমার বাবা আকস্মিকভাবে মারা যাওয়ার পরে নিজের লোকেদের মুহূর্তে পাল্টে যেতে দেখেছিলাম। ঋণীরা যেন সুযোগ পেয়েছিল ঋণ শোধ না করার। অস্বীকার করতে পারলে যেখানে মানুষ আর কিছু চায় না সেখানে এই বয়সের একটা ছেলের ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চাওয়া দেখে মনে হল, এইজন্যই তো বেঁচে থাকা। নোংরা ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ মুক্তো পাবার লোভেই তো বাঁচতে ইচ্ছে করে। 
© এক চিলতে রোদ্দুর
✍️- অর্পিতা সরকার
(সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা)

Monday, May 2, 2022

লেখার নামটা পড়ে অনেক পাঠকেরই নাক চোখ একটু কুঁচকে যেতে পারে কেউবা পাশ কাটাতে পারেন।

* হিজড়া *
✍দেবাশীষ রায় চৌধুরী
(পুনঃপ্রকাশিত)

লেখার নামটা পড়ে অনেক পাঠকেরই নাক চোখ একটু  কুঁচকে যেতে পারে কেউবা পাশ কাটাতে পারেন।
আমি কিন্তু  সেদিন পাশ কাটাতে পারিনি।

কলকাতার দিকে একটা বিশেষ কাজ ছিল। বাস পেয়ে গেলাম। এমনকি জানলার ধারে একটা বসার সিটও পেয়ে গেলাম।
অনেকটা পথ। ঠান্ডা গরম হাওয়ায় একটু  তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ভাত ঘুমের মৌতাত নিচ্ছি।
এমন সময় তেনারা বাসে উঠলেন।
জনা তিনেক হবে। না, যাত্রী হিসেবে নয়। যাত্রীদের থেকে কিছু  পয়সা তুলতে।
হঠাৎ চড়াৎ চড়াৎ হাততালির এবং কড়কড়ে গলার আওয়াজে রেশমি ঘুমটা চটকে যেতে একটু  বিরক্তই হয়েছিলাম।

যারা মুখ ঘুরিয়ে বসেছিল বা ঘুমচ্ছিল প্রত্যেকেই ওদের আঙ্গুলের ঠ্যালায় দু এক টাকা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দিচ্ছিল। অভ্যাসগত ভাবে আমিও দশটা টাকা দিলাম। খুচরো টাকা না থাকায় একটু  বেশিই গেল। পরিবর্তে ভালোবেসে মাথায় হাতও বুলিয়ে কি আশীর্বাদ করল কে জানে।

ওদেরই একজনের - একজন যাত্রীর দিকে চোখ পড়তেই কেমন যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেল। সেই যাত্রীর চোখের দৃষ্টির রেখা টেনে দেখা গেল এক ভদ্রমহিলার আনাবৃত উন্মুক্ত পিঠের ওপর স্থির দৃষ্টি আটকে আছে যেখানে দুটি সরল রেখার মত অসতর্ক অন্তর্বাসীয় ইলাস্টিক বিদ্যমান।

দু পা এগিয়ে গিয়ে মহিলার আঁচল টা নিয়ে সযত্নে ঢেকে দিল নারীর অসতর্ক লজ্জা অনেক সন্মান আর ভালোবাসা দিয়ে।
ওদের আর একজন জানতে চাইছিল
- কি হয়েছে র‍্যা ।
- মানুষের সাথে বাসে কিছু  রাক্ষসও ওঠে বে,  চোখ দিয়ে  চাটছিলো শ্শালা।

চাবুক টা যেন সপাং করে আমাদের মুখের ওপর আছড়ে পড়ল।
আমিও ব্যপারটা আগেই খেয়াল করেছিলাম কিন্তু প্রতিবাদ তো করতে পারিনি।

এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বাসের গতির সাথে টাল খেয়ে পড়ছিলেন। সামনের সিটে একটা  অল্প বয়সের ছেলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে না দেখার ভান করে বসেছিল।

- অ ভালোমানুষের ছেলে। বুড়ো বাপটা সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাচ্ছিস না।
নিজের বাপ হলে কি কত্তিস বে।
নিমেষে বৃদ্ধ বসলেন ছেলেটির আসনে।
আমরা পারিনি।

ওরা নেমে যাওয়ার আগেই একটা  বাচ্চা ছেলে বাসে উঠেই কাঁদো কাঁদো ভাবে পয়সা চাইতে লাগল।

- বাবু আমি আর মা দু দিন কিছু  খাইনি।

খুবই মায়া হচ্ছিল। দু এক টাকা দিতেও যাচ্ছিলাম। কিন্তু  তখনই ওদের মধ্যে একজন খেঁকিয়ে উঠে বলল।

- কি বে ঢপ দিছ্ছিস্।
- না গো সত্যি বলছি। দেখবে চলো। বাবাটা দশদিন আগে মরে গেছে। আমি ফোর এ পড়তাম। ছেড়ে দিয়েছি।
- এই লে টাকা। চাল লিয়ে বাড়ি যা শ্শালা। মা বেটায় খেয়ে লিবি। কি বে খেতে পেলে পড়বি।
- হ্যাঁ - এ্যাঁ - এ্যাঁ
- তুই তো আমাদের থেকে বড় ভিখিরি বে। চল বে তোর বাড়ি দেখে আসি। এ্যাই চল্ল্ আজ ইনকাম ইস্টপ্। লে, আর এট্টা পুষ্যি বাড়লো।

ওরা সবাই নেমে গেল।
বাস হাওয়ায় উড়ে হু হু করে চলছে।
আমি দেখলাম ওরা তিন জন বাচ্চাটার হাত ধরে বাসের অনেক আগে আগে হেঁটে চলেছে।
আমাদের তীব্র গতিতে চলা বাস ওদেরকে ছূঁতেও পারছে না।
কোনোদিনও পারবে না।
ওরা যে অনেক এগিয়ে।🍀