Monday, June 29, 2020

প্রায়শই শুনে থাকি ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক সীমান্ত হত্যা

প্রায়শই শুনে থাকি ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক সীমান্ত হত্যা, মুসলিম নির্যাতন ইত্যাদি নানা খারাপ আচরণের কারণেই এদেশের মানুষের ইন্ডিয়া বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।

তো এদেশের মেজরিটির ইন্ডিয়া বিদ্বেষ কবে ছিলো না?

পাকিস্তান আমলে? ইন্ডিয়া বিদ্বেষের বীজ বুনে এবং সার, পানি দিয়েই তো এদেশের মানুষকে পাকিস্তানিরা শত শোষনের পরেও ধরে রাখতে চেয়েছে বা দীর্ঘসময় সফলতাও পেয়েছে। এমনকি রবীন্দ্রনাথকেও তারা এদেশে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল।

১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও তো পাকিস্তানীদের প্রধান শ্লোগানই ছিল ইন্ডিয়ার চক্রান্তেই ষড়যন্ত্রকারীরা পেয়ারা পাকিস্তান ভাঙ্গতে চাচ্ছে।

৯ মাস যুদ্ধের সমস্ত অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, ১ কোটি শরণার্থীকে  ৯ মাস আশ্রয় ও খাদ্যের সংস্থান, সকল আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করে দেয়া, সরাসরি যুদ্ধে নেমে তাদের ৫০০০ সৈন্য মৃত্যু, এতকিছুর পরেও ১৯৭২ সালের সদ্য স্বাধীন দেশেও ইন্ডিয়ার প্রতি এদেশের জনতার কৃতজ্ঞতা ছিল? ছিল না।

তারা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছিল, ইন্ডিয়া এদেশের সব লুট করে নিয়ে গেছে, সোনা, রূপা, কলকারখানা, অস্ত্র....। বটে। এত অস্ত্র, কলকারখানা কোত্থেকে এলো? ৯ মাস যুদ্ধ করলেন কার যোগাড় করে দেয়া অস্ত্র থেকে।

বলে, ইন্ডিয়া নিজের স্বার্থেই আমাদের সহযোগিতা করেছে। তো আপনি আল্লাহর ইবাদত ও তো করেন নিজের স্বার্থেই, নয় কি?

৭৫ থেকে ৯৬, দীর্ঘ ২১ বছর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট, পাকিস্তানপন্থী জিয়া, এরশাদ, খালেদা এদেশে রাষ্ট্রক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে শুধু ইন্ডিয়া জুজু কাজে লাগিয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ইন্ডিয়া দখল করে নিবে, এদেশে আর মসজিদ থাকবে না, আজান থাকবে না, মসজিদে উলু ধ্বনি হবে, সকল জমি হিন্দুরা দখল করে নিবে, শেখ মুজিব হিন্দু, তার বাবা হিন্দু বা মা হিন্দু, ছোটবেলা থেকে এসব শুনে শুনেই তো বড় হয়েছি।

 ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের ভুখন্ডটি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীন করেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ।
আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি লড়াই করে ভারতের কাছ থেকে ২৮,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার ভুখন্ড ছিনিয়ে এনেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামিলীগ সরকার। মায়ানমারের কাছ থেকে ৭০,০০০ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা অবমুক্ত করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামিলীগ সরকার। ইন্ডিয়ার সাথে পানিচুক্তি করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছে। হ্যাঁ, মমতার একগুঁয়েমির কারণে তিস্তা চুক্তি করা যায়নি। খালেদা জিয়া ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে দিল্লী গিয়ে পানির ন্যায্য হিস্যার কথা বলতেই ভুলে যেতেন। উলটা বিজেপি ক্ষমতায় আসলেই ফের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন, অমিত শা এর ফোন, মোদীকে প্রথম অভিনন্দন তারাই জানিয়েছিলেন।

 পাড়া প্রতিবেশী হাজার জনে একজনও পাইনি ইন্ডিয়া ক্রিকেটের সমর্থক। পাকিস্তানের খেলার দিন এদেশে ঈদ, পাকিস্তান জিতলে মিছিল হতে দেখেছি, গরু জবাই দিতে দেখেছি। গাল-মুখ-গ্যালারী ভরা চান তাঁরা পতাকায় ভরা দেখেছি।
ঢাকা ভার্সিটির হলে ২০০১ সালেও ১০০০ জনে ৮/১০ জন বাদে সব ছিল পাকিস্তানি সাপোর্টার। ম্যারি মী আফ্রিদি প্লাকার্ডে এদেশের তরুণীদের অর্গাজম দেখেছি।

ধীরে ধীরে পাকি ক্রিকেটের পতন, ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের উত্থান, এবং একই সাথে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে ৯৭ সালে আইসিসি বিজয়, ৯৯ তে পাকিকে হার, জগমোহন ডালমিয়ার সহযোগিতায় ওডিআই ও টেস্ট মর্যাদা লাভ, এসব কারণে পাকি ক্রিকেট প্রীতি কিছুটা চাপা পড়ে বা সুপ্ত অবস্থায় দেখা গেছে দশক যাবত।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হওয়ার পর আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা বাংপাকিরা কখনো এরদোগান, কখনো প্লেবয় ইমরানকে পীর মেনেছে। গে, লেসবিয়ান অধিকার আদায়ে সোচ্চার জাস্টিন ট্রুডো কিংবা  লিভ টুগেদার করা কুমারী মাতা জেসিন্ডা হচ্ছে তাদের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো।

পাকি ক্রিকেটের সাফল্যের সাথে এদেশে গোআজম ভক্ত বাংপাকিদের সফলতার হার সমানুপাতিক। 

পাক ক্রিকেটে নতুন করে উজ্জীবিত হতে না পারলেও ৭১ এ আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী চীন চিরকালই বাংপাকিদের মুক্তির সুধা নিয়ে আসে। উইঘুর মুসলিমদের ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনকারী, কুরআন পরিবর্তনের ঘোষনা দেয়া চিনকে কিছুদিন আগেও করোনা গজব দিয়ে শাস্তি দেয়া মুমিন ভাইয়েরা চিনকে নিয়ে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে। ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ইসরাইল কিছু বললে এরা ইসরাইলের নেতানিয়াহুকে কদমবুচী দিবে। চিন ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে এদেশে ঘাটি গাড়ানোর প্রধান কারিগর। ওসব আমরা ভুলে যাই। ভুলে যাই পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে হাজার হাজার মুসলিম নিধন, সিরিয়া, ইয়েমেনের লাখ, লাখ মুসলিম হত্যাও আমাদের অনুভূতি জাগায় না।

আজীবন ইন্ডিয়া বিরোধীদের কাছে সীমান্ত হত্যা নিয়ে নতুন ঘৃনা সৃষ্টি হওয়া উছিলা মাত্র।
পৃথিবীর ৫ম দীর্ঘতম সীমান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া সীমান্ত। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বৈধ পথে ওদেশে যায়, কেউ কখনো বিপদে পড়েছে শোনা যায়নি। প্রতিনিয়ত চুরি বা চোরাকারকাবীতে ঢোকাদের ধরে আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার কাম্য। কিন্তু পলায়নপর চোরদের যখন গুলি করা হয়, এবং তারপরও চোরাকারবারী চলতেই থাকে তখন চোর সন্দেহে গণপিটুনীতে মেরে ফেলা বা নিয়মিত ক্রসফায়ারের মহাভক্ত জাতির চোরের মায়ের বড় গলা করতেও বিব্রত বোধ করা উচিৎ।

বৃহৎ গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ইন্ডিয়ায় গুজরাট রক্তমাখা মোদীর মেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের উত্থান হচ্ছে এটা সত্য। তবে মুসলিম প্রীতি আমাদের একটা উছিলা মাত্র।  ইন্ডিয়ায় গত কয়েক দশকে মুসলিমদের সংখ্যা বা অনুপাত কোনটিই কমেনি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে, ওদেশের একটি মুসলিম পরিবারও চাকরি বা ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া ওদেশ ছেড়ে প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপে আশ্রয় নেয়নি। বরং বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে সংখ্যালঘু ক্রমশ নাই হয়ে যাচ্ছে। ভারতে একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি সহ বড় বড় পদাধিকারীরা সন্মান ও গৌরবের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। মনসুর আলী খান পতৌদি বা ৯ বছর আজহারউদ্দিন ছিলেন ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। আমাদের সৌম্য বা লিটন পূজার শুভেচ্ছা দিলেও বা সত্য সাহা বুয়েটের ভিসি নিয়োগ পেলেও যে পরিমাণ অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালির সম্মুখীন হয় তা কল্পনাতীত।

এরশাদ আমলে যে প্রাইমারিতে পড়েছি সেখানেও দেখেছি ৪ জন শিক্ষকের ৩ জনই হিন্দু, নিজ যোগ্যতায়ই নিয়োগ পেয়েছেন এবং ভালো পড়াচ্ছেন। হাইস্কুলগুলোতে দেখেছি অংক, বিজ্ঞান, ইংরেজির অধিকাংশ ভালো শিক্ষক হিন্দু। এখনো দেখি গ্রাম পর্যায়ের ডিগ্রি কলেজ গুলোতেও হিন্দু মেয়েরা তুলনামূলক বেশি পড়ালেখা করছে। এমনকি অনার্স পর্যায়েও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মুসলিম মেয়ে বিয়ে শাদী, ঘর সংসারে ঝরে গেলেও হিন্দু মেয়েরা পড়ালেখা শেষ করে চাকরিতে যায়। মুসলিম মেয়েয়া এত পর্দা করার পরেও স্বামীরা সাহস ও বিশ্বাস করে চাকরিতে দেয় না, গেলে সংসার ভাঙ্গতে চায়। হিন্দু মেয়েরা পিঠ খোলা শাড়ি পরলেও স্বামীরা তাদের বিশ্বাস করে, পড়ালেখা শেষ করিয়ে ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করে থাকে।

সংখ্যালঘু নির্যাতন, সংখ্যাগরিষ্ঠের আস্ফালন, ডানপন্থীদের উত্থান সারা পৃথিবী জুড়ে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া বড় সমস্যা। ধর্মীয় বিভেদ আর ঘৃনা চর্চা আরো বড় সমস্যা। ইন্ডিয়ায় হিন্দু প্রধান না হয়ে ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ প্রধান হলেও আমরা একই ভাবে ঘৃনা করতাম। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র আমরাই সেরা, একমাত্র আমরাই সঠিক, পৃথিবীর বাকি সব জাতি, গোষ্ঠী, ধর্মই মালাউন  বা অভিশপ্ত।

আমাদের মনে রাখা উচিৎ, ভুগোল চাপার জোর দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বাংলা ভাষাকে ভাগ করা যায় না। ঘৃনা বাদ দিয়ে জ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জন করে, পরস্পরকে ভালোবেসে, ব্যক্তিত্ব নিয়ে আমাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে সকল প্রতিবেশি জনগণেরই ভালোবাসা দিয়ে দায়িত্বশীল হওয়ার শিক্ষা, মানসিকতা অর্জন করতে হবে।

আর ভারতেরও তার নিজের স্বার্থেই প্রতিবেশী জনগণের কাছে তার পজিটিভ ইমেজ গঠনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। নয় তার সেভেন সিস্টার রাজ্যসমূহের স্থিতিশীলতা, অখন্ডতা ও তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা কঠিন হয়ে যাবে।

লিখেছেন: Abdul Karim বাংলাদেশ 

** শিব গীতা ** 2 বৈরাগ্যোপদেহো দ্ধিতীয়োহধ্যায়

ঋষয় ঊচুঃ ||
 কিমর্থমাগতোঽগস্ত্যো রামচন্দ্রস্য সন্নিধিম্ |
 কথং বা বিরজাং দীক্ষাং কারয়ামাস রাঘবম্ |
 ততঃ কিমাপ্তবান্ রামঃ ফলং তদ্বক্তুমর্হসি || ১||

 সূত উবাচ ||
 রাবণেন যদা সীতাঽপহৃতা জনকাত্মজা |
 তদা বিয়োগদুঃখেন বিলপন্নাস রাঘবঃ || ২||

 নির্নিদ্রো নিরহংকারো নিরাহারো দিবানিশম্ |
 মোক্তুমৈচ্ছত্ততঃ প্রাণান্সানুজো রঘুনন্দনঃ || ৩||

 লোপামুদ্রাপতির্জ্ঞাৎবা তস্য সন্নিধিমাগমৎ |
 অথ তং বোধয়ামাস সংসারাসারতাং মুনিঃ || ৪||

 অগস্ত্য উবাচ ||
 কিং বিষীদসি রাজেন্দ্র কান্তা কস্য বিচার্যতাম্ |
 জডঃ কিং নু বিজানাতি দেহোঽযং পাঞ্চভৌতিকঃ || ৫||

 নির্লেপঃ পরিপূর্ণশ্চ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ |
 আত্মা ন জায়তে নৈব ম্রিয়তে ন চ দুঃখভাক্ || ৬||

 সূর্যোঽসৌ সর্বলোকস্য চক্ষুষ্ট্বেন ব্যবস্থিতঃ |
 তথাপি চাক্ষুষৈর্দোষৈর্ন কদাচিদ্বিলিপ্যতে || ৭||

 সর্বভূতান্তরাত্মাপি তদ্বদ্দৃশ্যৈর্ন লিপ্যতে |
 দেহোঽপি মলপিণ্ডোঽযং মুক্তজীবো জডাত্মকঃ || ৮||

 দহ্যতে বহ্নিনা কাষ্ঠৈঃ শিবাদ্যৈর্ভক্ষ্যতেঽপি বা |
 তথাপি নৈব জানাতি বিরহে তস্য কা ব্যথা || ৯||

 সুবর্ণগৌরী দূর্বায়া দলবচ্ছ্যামলাপি বা |
 পীনোত্তুঙ্গস্তনাভোগভুগ্নসূক্ষ্মবলগ্নিকা || ১০||

 বৃহন্নিতম্বজঘনা রক্তপাদসরোরুহা |
 রাকাচন্দ্রমুখী বিম্বপ্রতিবিম্বরদচ্ছদা || ১১||

 নীলেন্দীবরনীকাশনয়নদ্বয়শোভিতা |
 মত্তকোকিলসঁল্লাপা মত্তদ্বিরদগামিনী || ১২||

 কটাক্ষৈরনুগৃহ্ণাতি মাং পঞ্চেষুশরোত্তমৈঃ |
 ইতি যাং মন্যতে মূঢ স তু পঞ্চেষুশাসিতঃ || ১৩||

 তস্যাবিবেকং বক্ষ্যামি শৃণুষ্বাবহিতো নৃপ |
 ন চ স্ত্রী ন পুমানেষ নৈব চায়ং নপুংসকঃ || ১৪||

 অমূর্তঃ পুরুষঃ পূর্ণো দ্রষ্টা দেহী স জীবিনঃ |
 যা তন্বঙ্গী মৃদুর্বালা মলপিণ্ডাত্মিকা জডা || ১৫||

 সা ন পশ্যতি যৎকিংচিন্ন শৃণোতি ন জিঘ্রতি |
 চর্মমাত্রা তনুস্তস্যা বুদ্ধ্বা ত্যক্ষস্ব রাঘব || ১৬||

 যা প্রাণাদধিকা সৈব হংত তে স্যাদ্ঘৃণাস্পদম্ |
 জায়ন্তে যদি ভূতেভ্যো দেহিনঃ পাঞ্চভৌতিকাঃ || ১৭||

 আত্মা যদেকলস্তেষু পরিপূর্ণঃ সনাতনঃ |
 কা কান্তা তত্র কঃ কান্তঃ সর্ব এব সহোদরাঃ || ১৮||

 নির্মিতায়াং গৃহাবল্যাং তদবচ্ছিন্নতাং গতম্ |
 নভস্তস্যাং তু দগ্ধায়াং ন কাংচিৎক্ষতিমৃচ্ছতি || ১৯||

 তদ্বদাত্মাপি দেহেষু পরিপূর্ণঃ সনাতনঃ |
 হন্যমানেষু তেষ্বেব স স্বয়ং নৈব হন্যতে || ২০||

 হন্তা চেন্মন্যতে হন্তুং হতশ্চেন্মন্যতে হতম্ |
 তাবুভৌ ন বিজানীতো নায়ং হন্তি ন হন্যতে || ২১||

 অস্মান্নৃপাতিদুঃখেন কিং খেদস্যাস্তি কারণম্ |
 স্বস্বরূপং বিদিৎবেদং দুঃখং ত্যক্ত্বা সুখী ভব || ২২||

 রাম উবাচ ||
 মুনে দেহস্য নো দুঃখং নৈব চেৎপরমাত্মনঃ |
 সীতাবিয়োগদুঃখাগ্নির্মাং ভস্মীকুরুতে কথম্ || ২৩||

 সদাঽনুভূয়তে যোঽর্থঃ স নাস্তীতি ৎবয়েরিতঃ |
 জায়াতাং তত্র বিশ্বাসঃ কথং মে মুনিপুঙ্গব || ২৪||

 অন্যোঽত্র নাস্তি কো ভোক্তা যেন জন্তুঃ প্রতপ্যতে |
 সুখস্য বাপি দুঃখস্য তদ্ব্রূহি মুনিসত্তম || ২৫||

 অগস্ত্য উবাচ ||
 দুর্জ্ঞেয়া শাম্ভবী মায়া তয়া সংমোহ্যতে জগৎ |
 মায়া তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মায়িনং তু মহেশ্বরম্ | ২৬||

 তস্যাবয়বভূতৈস্তু ব্যাপ্তং সর্বমিদং জগৎ.
 সত্যজ্ঞানাত্মকোঽনন্তো বিভুরাত্মা মহেশ্বরঃ || ২৭||

 তস্যৈবাংশো জীবলোকে হৃদয়ে প্রাণিনাং স্থিতঃ |
 বিস্ফুলিঙ্গা যথা বহ্নের্জায়ন্তে কাষ্ঠয়োগতঃ || ২৮||

 অনাদিকর্মসম্বদ্ধাস্তদ্বদংশা মহেশিতুঃ |
 অনাদিবাসনায়ুক্তাঃ ক্ষেত্রজ্ঞা ইতি তে স্মৃতাঃ || ২৯||

 মনো বুদ্ধিরহংকারশ্চিত্তং চেতি চতুষ্টয়ম্ |
 অন্তঃকরণমিত্যাহুস্তত্র তে প্রতিবিম্বিতাঃ || ৩০||

 জীবৎবং প্রাপ্নুয়ুঃ কর্মফলভোক্তার এব তে |
 ততো বৈষয়িকং তেষাং সুখং বা দুঃখমেব বা || ৩১||

 ত এব ভুঞ্জতে ভোগায়তনেঽস্মিন্ শরীরকে |
 স্থাবরং জঙ্গমং চেতি দ্বিবিধং বপুরুচ্যতে || ৩২||

 স্থাবরাস্তত্র দেহাঃ স্যুঃ সূক্ষ্মা গুল্মলতাদয়ঃ |
 অণ্ডজাঃ স্বেদজাস্তদ্বদুদ্ভিজ্জা ইতি জঙ্গমাঃ || ৩৩||

 যোনিমন্যে প্রপদ্যন্তে শরীরৎবায় দেহিনঃ |
 স্থাণুমন্যেঽনুসংযন্তি যথাকর্ম যথাশ্রুতম্ || ৩৪||

 সুখ্যহং দুঃখ্যহং চেতি জীব এবাভিমন্যতে |
 নির্লেপোঽপি পরং জ্যোতির্মোহিতঃ শম্ভুমায়য়া || ৩৫||

 কামঃ ক্রোধস্তথা লোভো মদো মাৎসর্যমেব চ |
 মোহশ্চেত্যরিষড্বর্গমহংকারগতং বিদুঃ || ৩৬||

 স এব বধ্যতে জীবঃ স্বপ্নজাগ্রদবস্থয়োঃ |
 সুষুপ্তৌ তদভাবাচ্চ জীবঃ শংকরতাং গতঃ || ৩৭||

 স এব মায়াসংস্পৃষ্টঃ কারণং সুখদুঃখয়োঃ |
 শুক্তো রজতবদ্বিশ্বং মায়য়া দৃশ্যতে শিবে || ৩৮||

 ততো বিবেকজ্ঞানেন ন কোঽপ্যত্রাস্তি দুঃখভাক্ |
 ততো বিরম দুঃখাত্ত্বং কিং মুধা পরিতপ্যসে || ৩৯||

 শ্রীরাম উবাচ ||
 মুনে সর্বমিদং তথ্যং যন্মদগ্রে ৎবয়েরিতম্ |
 তথাপি ন জহাত্যেতৎপ্রারব্ধাদৃষ্টমুল্বণম্ || ৪০||

 মত্তং কুর্যাদ্যথা মদ্যং নষ্টাবিদ্যমপি দ্বিজম্ |
 তদ্বৎপ্রারব্ধভোগোঽপি ন জহাতি বিবেকিনম্ || ৪১||

 ততঃ কিং বহুনোক্তেন প্রারব্ধসচিবঃ স্মরঃ |
 বাধতে মাং দিবারাত্রমহংকারোঽপি তাদৃশঃ || ৪২||

 অত্যন্তপীডিতো জীবঃ স্থূলদেহং বিমুঞ্চতি |
 তস্মাজ্জীবাপ্তয়ে মহ্যমুপায়ঃ ক্রিয়তাং দ্বিজ || ৪৩||

 ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উপরিভাগে শিবগীতাসূপনিষৎসু
 ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শিবরাঘবসংবাদে

Sunday, June 28, 2020

** শিব গীতা ** নং:-1 শিবভুক্ত্যুৎ কর্ষনিরুপনং প্রথমোহধ্যায়

সূত উবাচ ||
 অথাতঃ সম্প্রবক্ষ্যামি শুদ্ধং কৈবল্যমুক্তিদম্ |
 অনুগ্রহান্মহেশস্য ভবদুঃখস্য ভেষজম্ || ১||

 ন কর্মণামনুষ্ঠানৈর্ন দানৈস্তপসাপি বা |
 কৈবল্যং লভতে মর্ত্যঃ কিংতু জ্ঞানেন কেবলম্ || ২||

 রামায় দণ্ডকারণ্যে পার্বতীপতিনা পুরা |
 যা প্রোক্তা শিবগীতাখ্যা গুহ্যাদ্গুহ্যতমা হি সা || ৩||

 যস্যাঃ শ্রবণমাত্রেণ নৃণাং মুক্তির্ধ্রুবং ভবেৎ |
 পুরা সনৎকুমারায় স্কন্দেনাভিহিতা হি সা || ৪||

 সনৎকুমারঃ প্রোবাচ ব্যাসায় মুনিসত্তমাঃ |
 মহ্যং কৃপাতিরেকেণ প্রদদৌ বাদরায়ণঃ || ৫||

 উক্তং চ তেন কস্মৈচিন্ন দাতব্যমিদং ৎবয়া |
 সূতপুত্রান্যথা দেবাঃ ক্ষুভ্যন্তি চ শপন্তি চ || ৬||

 অথ পৃষ্টো ময়া বিপ্রা ভগবান্বাদরায়ণঃ |
 ভগবন্দেবতাঃ সর্বাঃ কিং ক্ষুভ্যন্তি শপন্তি চ || ৭||

 তাসামত্রাস্তি কা হানির্যয়া কুপ্যন্তি দেবতাঃ |
 পারাশর্যোঽথ মামাহ যৎপৃষ্টং শৃণু বৎস তৎ || ৮||

 নিত্যাগ্নিহোত্রিণো বিপ্রাঃ সংতি যে গৃহমেধিনঃ |
 ত এব সর্বফলদাঃ সুরাণাং কামধেনবঃ || ৯||

 ভক্ষ্যং ভোজ্যং চ পেয়ং চ যদ্যদিষ্টং সুপর্বণাম্ |
 অগ্নৌ হুতেন হবিষা সৎসর্বং লভ্যতে দিবি || ১০||

 নান্যদস্তি সুরেশানামিষ্টসিদ্ধিপ্রদং দিবি |
 দোগ্ধ্রী ধেনুর্যথা নীতা দুঃখদা গৃহমেধিনাম্ || ১১||

 তথৈব জ্ঞানবান্বিপ্রো দেবানাং দুঃখদো ভবেৎ |
 ত্রিদশাস্তেন বিঘ্নন্তি প্রবিষ্টা বিষয়ং নৃণাম্ || ১২||

 ততো ন জায়তে ভক্তিঃ শিবে কস্যাপি দেহিনঃ |
 তস্মাদবিদুষাং নৈব জায়তে শূলপাণিনঃ || ১৩||

 যথাকথংচিজ্জাতাপি মধ্যে বিচ্ছিদ্যতে নৃণাম্ |
 জাতং বাপি শিবজ্ঞানং ন বিশ্বাসং ভজত্যলম্ || ১৪||

 ঋষয় ঊচুঃ ||
 যদ্যেবং দেবতা বিঘ্নমাচরন্তি তনূভৃতাম্ |
 পৌরুষং তত্র কস্যাস্তি যেন মুক্তির্ভবিষ্যতি || ১৫||

 সত্যং সূতাত্মজ ব্রূহি তত্রোপায়োঽস্তি বা ন বা ||
 সূত উবাচ ||
 কোটিজন্মার্জিতৈঃ পুণ্যৈঃ শিবে ভক্তিঃ প্রজায়তে || ১৬||

 ইষ্টাপূর্তাদিকর্মাণি তেনাচরতি মানবঃ |
 শিবার্পণধিয়া কামান্পরিত্যজ্য যথাবিধি || ১৭||

 অনুগ্রহাত্তেন শম্ভোর্জায়তে সুদৃঢো নরঃ |
 ততো ভীতাঃ পলায়ন্তে বিঘ্নং হিৎবা সুরেশ্বরাঃ || ১৮||

 জায়তে তেন শুশ্রূষা চরিতে চন্দ্রমৌলিনঃ |
 শৃণ্বতো জায়তে জ্ঞানং জ্ঞানাদেব বিমুচ্যতে || ১৯||

 বহুনাত্র বিমুক্তেন যস্য ভক্তিঃ শিবে দৃঢা |
 মহাপাপোপপাপৌঘকোটিগ্রস্তোঽপি মুচ্যতে || ২০||

 অনাদরেণ শাঠ্যেন পরিহাসেন মায়য়া |
 শিবভক্তিরতশ্চেৎস্যাদন্ত্যজোঽপি বিমুচ্যতে || ২১||

 এবং ভক্তিশ্চ সর্বেষাং সর্বদা সর্বতোমুখী |
 তস্যাং তু বিদ্যমানায়াং যস্তু মর্ত্যো ন মুচ্যতে || ২২||

 সংসারবন্ধনাত্তস্মাদন্যঃ কো বাস্তি মূঢধীঃ |
 নিয়মাদ্যস্তু কুর্বীত ভক্তিং বা দ্রোহমেব বা || ২৩||

 তস্যাপি চেৎপ্রসন্নোঽসৌ ফলং যচ্ছতি বাঞ্ছিতম্ |
 ঋদ্ধং কিংচিৎসমাদায় ক্ষুল্লকং জলমেব বা || ২৪||

 যো দত্তে নিয়মেনাসৌ তস্মৈ দত্তে জগত্ত্রয়ম্ |
 তত্রাপ্যশক্তো নিয়মান্নমস্কারং প্রদক্ষিণাম্ || ২৫||

 যঃ করোতি মহেশস্য তস্মৈ তুষ্টো ভবেচ্ছিবঃ |
 প্রদক্ষিণাস্বশক্তোঽপি যঃ স্বান্তে চিন্তয়েচ্ছিবম্ || ২৬||

 গচ্ছন্সমুপবিষ্টো বা তস্যাভীষ্টং প্রয়চ্ছতি |
 চন্দনং বিল্বকাষ্ঠস্য পুষ্পাণি বনজান্যপি || ২৭||

 ফলানি তাদৃশান্যেব যস্য প্রীতিকরাণি বৈ |
 দুষ্করং তস্য সেবায়াং কিমস্তি ভুবনত্রয়ে || ২৮||

 বন্যেষু যাদৃশী প্রীতির্বর্ততে পরমেশিতুঃ |
 উত্তমেষ্বপি নাস্ত্যেব তাদৃশী গ্রামজেষ্বপি || ২৯||

 তং ত্যক্ত্বা তাদৃশং দেবং যঃ সেবেতান্যদেবতাম্ |
 স হি ভাগীরথীং ত্যক্ত্বা কাঙ্ক্ষতে মৃগতৃষ্ণিকাম্ || ৩০||

 কিংতু যস্যাস্তি দুরিতং কোটিজন্মসু সংচিতম্ |
 তস্য প্রকাশতে নায়মর্থো মোহান্ধচেতসঃ || ৩১||

 ন কালনিয়মো যত্র ন দেশস্য স্থলস্য চ |
 যত্রাস্য চিত্রং রমতে তস্য ধ্যানেন কেবলম্ || ৩২||

 আত্মৎবেন শিবস্যাসৌ শিবসায়ুজ্যমাপ্নুয়াৎ |
 অতিস্বল্পতরায়ুঃ শ্রীর্ভূতেশাংশাধিপোঽপি যঃ || ৩৩||

 স তু রাজাহমস্মীতি বাদিনং হন্তি সান্বয়ম্ |
 কর্তাপি সর্বলোকানামক্ষয়ৈশ্বর্যবানপি || ৩৪||

 শিবঃ শিবোঽহমস্মীতি বাদিনং যং চ কঞ্চন |
 আত্মনা সহ তাদাত্ম্যভাগিনং কুরুতে ভৃশম্ || ৩৫||

 ধর্মার্থকামমোক্ষাণাং পারং যস্যাথ যেন বৈ |
 মুনয়স্তৎপ্রবক্ষ্যামি ব্রতং পাশুপতাভিধম্ || ৩৬||

 কৃৎবা তু বিরজাং দীক্ষাং ভূতিরুদ্রাক্ষধারিণঃ |
 জপন্তো বেদসারাখ্যং শিবনামসহস্রকম্ || ৩৭||

 সংত্যজ্য তেন মর্ত্যৎবং শৈবীং তনুমবাপ্স্যথ |
 ততঃ প্রসন্নো ভগবাঞ্ছংকরো লোকশংকরঃ || ৩৮||

 ভবতাং দৃশ্যতামেত্য কৈবল্যং বঃ প্রদাস্যতি |
 রামায় দণ্ডকারণ্যে যৎপ্রাদাৎকুম্ভসম্ভবঃ || ৩৯||

 তৎসর্বং বঃ প্রবক্ষ্যামি শৃণুধ্বং ভক্তিয়োগিনঃ || ৪০||

 ইতি শ্রীপদ্মপুরাণে উপরিভাগে শিবগীতাসূপনিষৎসু
 ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শিবরাঘবসংবাদে

শিবগীতা

নমস্কার বন্ধুরা , আজকের আলোচ্য বিষয় হলো  শিবগীতা  কি ? আপনারা সকলেই হয়তো ভগবদ্ গীতা সম্পর্কে জানেন কিন্তু শিবগীতা সম্পর্কে ঠিক ততটা জানেন না । তাই আজকে আমি শিবগীতা সম্বন্ধেে একটা
সাধারন জ্ঞান প্রকাশিত করছি । যে প্রকার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে ভগবদ্গীতা বের হয়েছে , অনুরূপ ভাবে ভগবান শিবের মুখারবিন্দ থেকে বের হয়েছে এই  শিবগীতা।  মহাভারতের ভীষ্ম পর্ব থেকে ভগবদ্গীতা এসেছে , এবং সেখানে মোট আঠারোটি অধ্যায় রয়েছে । তাকে কৃষ্ণার্জুন সংবাদ বলে উল্লিখিত করা হয়েছে ।

 ঠিক তেমনই পদ্মপুরাণে উল্লিখিত শিবরাঘব সংবাদ শিবগীতা নামে প্রসিদ্ধ । এখানেও আঠারোটি অধ্যায় রয়েছে । এই আঠারোটি অধ্যায় যথাক্রমে - শিবভক্তি নিরূপণ , বৈরাগ্য উপদেশ , বিরজাদীক্ষা নিরূপণ , শিব প্রাদুর্ভাব , রামকে বর প্রদান , বিভূতি যোগ , বিশ্বরূপ দর্শন , পিণ্ডোৎপত্তি কথন , দেহ স্বরূপ নির্ণয় , জীব স্বরূপ কথন , জীব গতি নিরূপণ , উপাসনা জ্ঞান ফল , মোক্ষ নিরূপণ , পঞ্চকোশোপপাদন , ভক্তিযোগ , গীতা অধিকারী নিরূপণ , ব্রহ্ম নিরূপণ যোগ এবং জীবন্মুক্তি স্বরূপ নিরূপণ যোগ ।

 যেভাবে অর্জুনের প্রশ্নের উত্তরে ভগবদ্গীতা সামনে এসেছে , সেভাবেই শ্রীরামচন্দ্রের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশিত হয়েছে এই শিবগীতা । শিবগীতা আধ্যাত্ম বিদ্যার এক অসামান্য গ্রন্থ যেখানে বেদান্তের সার বস্তু সমাহিত হয়েছে । বেদান্ত যাকে ব্রহ্ম বলে বলেছেন তাকে এখানে শিব নামে অভিহিত করা হয়েছে । শিবই এই সৃষ্টির নির্মাতা , পালন কর্ত্তা এবং সংহার কর্ত্তা ।

 সম্পূর্ণ সৃষ্টি পরমেশ্বর শিবের শক্তির রূপ বলা হয়েছে , বেদান্ত তাকে মায়া শক্তি নামে আখ্যায়িত করেছেন । এই মায়াশক্তিকে অতিক্রম করে পরব্রহ্ম বিষয়ে জ্ঞাত হওয়াই মুক্তির একমাত্র উপায় ।

 এই জ্ঞান তথা মুক্তির জন্যই পরমেশ্বর শিব ব্রহ্ম , শিব থেকে সৃষ্টির রচনার বর্ণনা , শরীর রচনার বর্ণনা , শিব সাধনা , শিবপূজার বিধান , সংসারের অসারতা , তত্ত্বজ্ঞান , কর্মফল , বিরজা দীক্ষা , শিবের বিরাট স্বরূপ , শিবের বিভূতি , জীবের গতি , মুক্তির স্বরূপ , ভক্তির বিধি , ধ্যান যোগ ইত্যাদি অনেক আধ্যাত্মিক রহস্যের উদ্ঘাটন করেছে এই শিবগীতা । এই দৃষ্টিতে শিবগীতার মহত্ব সর্বাধিক । জ্ঞান প্রাপ্তির জিজ্ঞাসুদের জন্য এই শিবগীতা গ্রন্থ অতি মহত্বপূর্ণ ।

 আশাকরি কিছুটা হলেও , শিবগীতা কি ? এর উত্তর দিতে পেরেছি । নমস্কার , ওঁ নমঃ শিবায় ।

শিব কে ? , শিবের পরিচয় কি ?

নমস্কার বন্ধুরা আজকে আমি আলোচনা করতে চলেছি শিব কে ? , শিবের পরিচয় কি ?
পরমেশ্বর শিবকে প্রনাম জানিয়ে শুরু করছি আজকের আলোচিত বিষয় । প্রথমে জানবো শিব শব্দের অর্থ , শিব শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে  কল্যাণকারী  বা  মঙ্গল।  ভগবান শিবের পাঁচটি মুখ রয়েছে , এই পাঁচ মুখ দিয়ে তিনি জগতের মঙ্গল করে থাকেন , তাই তিনি কল্যাণকারী বা শিব নামে পরিচিত । 

 পাঁচ মুখ যথাক্রমে বামদেব , কালাগ্নি , দক্ষিনেশ্বর , ঈশান এবং কল্যাণ সুন্দরম্ । আবার কোথাও একে ঈশান , তৎপুরুষ , অঘোর , বামদেব এবং সদ্যোজাত নামেও উল্লেখিত হয়েছে । শিবের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে  চিত্তিশক্তি  যা সকল প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত । শিবের তৃতীয় অর্থ  সদাশিব  । 

 ব্রহ্মের সাকার এবং সগুণ রুপকে বলা হয় সদাশিব । তিনি আনুমানিক সাত হাজার বছর পূর্বে অবতরিত হয়েছেন । পরব্রহ্মের নানা শক্তির নানা অভিব্যাক্তিকে বলা হয়েছে দেবতা কিন্তু শিব এইসব দেবতাদেরও দেবতা । তাই তার এক নাম  মহাদেব । যাকে পরব্রহ্ম বলা হয়েছে যিনি নিরাকার এবং নির্গুণ তিনিই ' শিব ' নামে বিখ্যাত । যা সৃষ্টির মূলতত্ত্ব তাই শিবতত্ত্ব । বিভিন্ন শাস্ত্রে একমাত্র শিবকেই ' ঈশ্বর ' রূপে মানা হয়েছে । ভগবান শিবই এই সম্পূর্ণ সৃষ্টির অনাদি দেব । যার মহিমা বেদ , পুরাণ , দর্শন , যোগ , তন্ত্র ইত্যাদি সাহিত্যে সর্বত্র বর্ণিত হয়েছে । 

 ভারতের জন মানস যতটুকু বৈষ্ণব ধর্মে প্রভাবিত তার থেকে অনেক বেশি প্রভাবিত শৈবধর্মে । ভগবান শিব যোগী , ভক্ত , তান্ত্রিক , বেদান্তি , কর্মকাণ্ডী , উপাসক এবং দার্শনিক সকলের কাছে পূজনীয় । তিনিই জ্ঞান , কর্ম এবং ভক্তির আদি দেবতা । তিনিই পরমপুরুষ পরমব্রহ্ম । শিব এবং শক্তি মিলেই ব্রহ্ম তাই শিবকে ' অর্দ্ধনারীশ্বর ' বলা হয় । 

 তার দক্ষিণ অঙ্গ শিব স্বরূপ এবং বাম অঙ্গ শক্তিরূপ । মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করেছেন । মহাভারতের অনুশাসন পর্বে ( 15/11 ) লিখিত হয়েছে --- শিবের সমান দেব নেই , শিবের সমান গতি নেই , শিবের সমান দাতা নেই , শিবের সমান বীর নেই । বন্ধুরা শিব কে ? শিবের পরিচয় কি ? এর যথার্থ বর্ণনার শেষ নেই , এর আদি অন্ত নেই । সুতরাং আজ এই পর্যন্ত । সবাইকে নমস্কার , ওঁ নমঃ শিবায়

Saturday, June 27, 2020

আসুন গীতা পাঠ করি:- 18 অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ মোক্ষযোগ

অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ মোক্ষযোগ

 অর্জুন উবাচ

 সন্নাসস্য মহাবাহো তত্তুম্‌ ইচ্ছামি বেদিতুম্‌ ।

 ত্যাগস্য চ হৃষীকেশ পৃথক কেশিনিসুদন ।।১

 অর্থ-অর্জুন বললেন- হে মহাবাহো, হৃষিকেশ হে কেশিনিসুদন আমি সন্নাস ও ত্যাগ শব্দের তত্ত্ব পৃথক পৃথক ভাবে জানতে ইচ্ছা করি।

 ভগবান উবাচ

 কাম্যানাম্‌ কর্মনাম্‌ ন্যাসম্‌ সন্নাসম্‌ কবয়ঃ বিদুঃ ।

 সর্ব কর্ম ফল ত্যাগম্‌ প্রাহুঃ ত্যাগম বিচক্ষনাঃ ।।২

 অর্থ-ভগবান বললেন সম কর্মের ফল ত্যাগকে বিচক্ষন ব্যক্তিগন ত্যাগবলেন এবং কাম্য কর্মের পরিত্যাগকেই পন্ডিতগন সন্নাস বলে।

 ত্যাজ্যম্‌ দোশবত্ ইতি একে কর্ম প্রাহুঃ মনিষিণঃ ।

 যজ্ঞ দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজ্যম্‌ ইতি চ অপরে ।।৩

 অর্থ-ত্যাগ সম্বন্ধে একশ্রেনীর পন্ডিতেরা এরুপ স্থির করেছেন যে,কর্মকে দোষ বলে একেবারে ত্যাগ করবে, অপর এক শ্রেণীর পন্ডিত যজ্ঞ,দান,তপস্যা প্রভৃতি কর্মকে অত্যাজ্য বলে সিদ্ধান্ত করেছে।

 নিশ্চয়ম্‌ শৃনু মে অত্র ত্যাগে ভরতম্‌ ।

 ত্যাগ হি পুরুষব্যাগ্র ত্রিবিধঃ সংপ্রকীর্তিতঃ ।।৪

 অর্থ-হে ভরত সত্তম্‌ ত্যাগ সম্বন্ধে আমার সিদ্ধান্ত শ্রবন কর, হে পুরুষ ব্যাগ্র শাস্ত্রে ত্যাগও তিন প্রকার বলে কীর্তিত হয়েছে।

 যজ্ঞ দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজম্‌ কার্যম্‌ এব তত্ ।

 যজ্ঞ দানম্‌ তপঃ চ এব পাবনানি মনীষিণাম্‌ ।।৫

 অর্থ-যজ্ঞ, দান, তপস্যা কখনো ত্যাগ করা ইচিত নয় যজ্ঞ দান এবং তপস্যা মনীষীদের পর্য্যন্ত পবিত্র করে।

 এতানি অপি তু কর্মানি সঙ্গম্‌ ত্যক্তা ফলানি চ ।

 কর্তব্যানি ইতি মে পার্থ নিশ্চিতম্‌ মতম্‌ উত্তমম্‌ ।।৬

 অর্থ-আশক্তি ও ফেেলর আশা ত্যাগ করে কর্তব্য বোধে এই সমস্ত কর্ম অনুষ্ঠান করা উচিত্। ইহাই আমার সিদ্ধান্ত।

 নিয়তস্য তু সন্নাসঃ কর্মনঃ ন উপপদ্যতে ।

 মোহাত্ তস্য পরিত্যাগঃ তমসঃ পরিকীর্তিত ।।৭

 অর্থ-নিত্ত কর্ম অবশ্য কর্তব্য, কখনোই ত্যাগ করা উচিত্ নয়, মোহ বশত কেউ যদি নিত্ত কর্ম ত্যাগ করে, তা হলে তাকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়।

 দঃখম্‌ ইতি এব যত্ কর্ম কায় ক্লেশ ভয়াত্ ত্যজেত্ ।

 স কৃত্বা রাজসম্‌ ত্যাগম্‌ ন এব ত্যাগ ফলম্‌ লভেত্ ।।৮

 অর্থ-যিনি নিত্ত কর্মকে ক্লেশকর বলে মনে করেন, সেই ত্যাগ রাজস ত্যাগ, তার ফল কখনো ত্যাগের ফল লাভ হয় না।

 কার্যম্‌ ইতি এব চ যত্ কর্ম নিয়তম্‌ ক্রিয়তে অর্জুন ।

 সঙ্গম্‌ ত্যাক্তা ফল চ এব সঃ ত্যাগৈঃ সাত্ত্বিক মতঃ ।।৯

 অর্থ-হে অর্জুন যিনি কর্তব্য বোধে নিত্ত কর্ম অনুষ্ঠান করেন এবং সেই কর্মের আশক্তি ও ফল পরিত্যাগ করেন, তার ত্যাগ সাত্ত্বিক।

 ন দ্বেষ্টি অকুশলম্‌ কর্ম কুশলেন অনুষজ্জতে ।

 ত্যাগী সত্ত্ব সমাবিষ্টঃ মেধাবী ছিন্ন সংশয় ।।১০

 অর্থ-যারা সত্ত্বগুনে অবস্থিত যারা অশুভ কর্মে বিদ্দেশ করেন না এবং শুভ কর্মে অনাশক্ত হয় না সেই প্রকার মেধাবী ব্যাক্তির কর্ম সম্বন্ধে কোন সংশয় নাই।

 ন হি দেহভূতা শক্যম্‌ ত্যক্তুম্‌ কর্মানি অশেষতঃ ।

 যঃ তু কর্ম ফল ত্যাগী সঃ ত্যাগী ইতি অভিধিয়তে ।।১১

 অর্থ-দেহধারী জীবের সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়, তাই যিনি সমস্ত কর্মের ফল পরিত্যাগ করেন তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী।

 অনিষ্টম ইষ্টম মিশ্রম্‌ চ ত্রিবিধম্‌ কর্মনঃ ফলম্‌ ।

 ভবতী অত্যাগীনাম্‌ প্রেত্য ন তু সন্নাসি নাম্‌ কচিত্ ।১২

 অর্থ-যারা কর্মফল ত্যাগ করেনি তাদের অনিষ্ট ইষ্ট ও মিশ্র এই তিন প্রকার কর্ম ফল ভোগ হয়। কিন্তু সন্নাসিদের উক্ত ত্রিবিধ ফল ভোগ করতে হয় না।

 পঞ্চ এতানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে ।

 সাংখ্যে কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধয়ে সর্ব কর্মনম্‌ ।।১৩

 অর্থ-হে মহাবাহো বেদান্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্তে কর্ম সমুহের সিদ্ধির উদ্দেশ্যে পাচটি কারন নির্দিষ্ট হয়েছে তা আমি বলছি শ্রবন কর।

 অধিষ্ঠানম্‌ তথা কর্তা করনম্‌ চ পৃথগবিধম্‌ ।

 বিবিধঃ চ পৃথক চেষ্টাঃ দৈবম্‌ চ এব অত্র পঞ্চমম্‌ ।।১৪

 অর্থ-অধিষ্ঠান, কর্তা, ইন্দ্রিয়সমুহ,প্রচেষ্টা এবং চরমে পরমাত্মা এই পাচটি হল কর্মের হেতু।

 শরির বাক্‌ মনোভিঃ যত্ কর্ম প্রারাভতে নরঃ ।

 ন্যয্যম্‌ বা বিপরীতম্‌ বা পঞ্চ এতে তস্য হেতবঃ ।।১৫

 অর্থ-শরির বাক্য মন দ্বারা মানুষ কার্য করে,তা ন্যায্যই হোক আর অন্যায্যই হোক উক্ত পঞ্চবিধ কারণ দ্বারাই সাধিত হয়।

 তত্র এবম্‌ সতি কর্তারম্‌ আত্মনম্‌ কেবলম্‌ তু যঃ ।

 ঈশ্যতি অকৃতবুদ্ধিত্বাত্ ন সঃ পশ্যতি দুর্মতি ।।১৬

 অর্থ-যে কর্মের পাচটি কারনের কথা বিবেচনা না করে নিজকে কর্তা বলে মনে করে সে অবশ্যই নির্বোধ এবং দুর্মতি, সে যথাযথভাবে দর্শন করতে পারে না।

 যস্য ন অহংকৃত ভাবঃ বুদ্ধি যস্য ন লিপ্যতে ।

 হত্বাপি সঃ ইমান লোকান ন হন্তি ন নিবধ্যতে ।।১৭

 অর্থ-আমি কর্তা এই অভিমান যার নাই যার বুদ্ধি কর্মফলে লিপ্ত হয়না, তিনি জগতের সমসত প্রাণী হত্যা করলেও হত্যাকারি হয়না বা হত্যার ক্রিয়া ফলে আবদ্ধ হয়না।

 জ্ঞানম্‌ জ্ঞেয়ম্‌ পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্ম চোদনা ।

 কারনম্‌ কর্ম কর্তা ইতি ত্রিবিধা কর্ম সংগ্রহ ।।১৮

 অর্থ-জ্ঞান, জ্ঞেয়, পরিজ্ঞাতা এই তিনটি কর্মের প্রেরনা,তারণ কর্ম ও কর্তা তিনটিই কর্মের আশ্রয়।

 জ্ঞানম্‌ কর্ম চ কর্তা চ ত্রিধা এব গুনভেদতঃ ।

 প্রোচ্যতে গুন সংখ্যানে যথাবত্ শৃনু তানি অপি ।।১৯

 অর্থ-প্রকৃতির তিনটি গুন অনুসারে জ্ঞান কর্ম ও কর্তা তিন প্রকার। সেই ভেদসমুহ আমি বলছি, যথযথভাবে শ্রবন কর।

 সর্বভুতেষু যেন একম্‌ ভাবম্‌ অব্যয়ম্‌ ঈক্ষ্যতে ।

 অবিভক্তম বিভক্তেষু তত্ জ্ঞানম্‌ বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্‌ ।।২০

 অর্থ-যে জ্ঞানের দ্বারা সমস- প্রণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়,অনেক জীব পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, এই জ্ঞানকে সাত্ত্বিক জ্ঞান বলে।

 পৃথক্তেন তু যজজ্ঞানম্‌ নানাভাবান পৃথগ বিধান ।

 বেত্তি সর্বেষু ভূতেষু তজজ্ঞানম্‌ বিদ্ধি রাজসম্‌ ।।২১

 অর্থ-সেই জ্ঞানের দ্বারা বিভিন্ন প্রাণীতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আত্মা অবস্থিত বলে দর্শন হয়। সেই জ্ঞান রাজসিক বলে জানবে।

 যত্ তু কৃত্স্নবত্ একস্মি কার্যে সক্তম্‌ অহৈতুকম্‌ ।

 অতত্ত্বার্থবত্ অল্পম্‌ চ তত্ তামসম উদহৃতম্‌ ।।২২

 অর্থ-এবং সেই জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত তত্ত্ব অবগত না হয়ে কোন একটি বিশেষ কাজে তীর্ব আশক্তির উদয় হয়, সেই তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে।

 নিয়তম্‌ সঙ্গরহিতম্‌ অরাগদ্বেষতঃ কৃতম্‌ ।

 অফলপ্রেপ্সুনা কর্ম যত্ তত্ সাত্ত্বিকম্‌ উচ্যতে ।।২৩

 অর্থ-ফলের আকাঙ্ক্ষা না কাে রাগ ও দ্বেষ বর্জন পুর্বক আশক্তি শুন্য হয়ে যে নিত্ত কর্ম অনুষ্ঠিত হয় তাকে সাত্তিক কর্ম বলে।

 এতত্ তু কামেপ্সুনা কর্ম সাহঙ্কারেন বা পুনঃ ।

 ক্রিয়তে বহুলায়াসম্‌ তত্ রাজসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।২৪

 অর্থ-কিন্তু ফলাকাঙ্ক্ষা যুক্ত এবং অহংঙ্কার যুক্ত হয়ে বহু কষ্ট সাধ্যকরে যে কর্মের অনুষ্ঠান হয় সে কর্ম রাজসিক বলে অভিহিত হয়।

 অনুবন্ধন ক্ষয়ম্‌ হিংসাম্‌ অনপেক্ষ চ পৌরুষম ।

 মোহাত্ আরভ্যতে কর্ম যত্ তত্ তামসম্‌ উচ্যতে ।।২৫

 অর্থ-ভাবি ক্লেশ ধর্ম জ্ঞানাদির অপচয় হিংসা এই সমস্ত পরিনতির কথা বিবেচনা না করে মোহ বসত যে কর্ম অনুষ্ঠিত হয় তাকে তমসিক কর্ম বলা হয়।

 মুক্তসঙ্গঃ অনহংবাদী ধৃত্যুত্সাহ সমন্বিতাঃ ।

 সিদ্ধি অসিদ্ধোঃ নির্বিকারঃ কর্তা সাত্ত্বিকঃ উচ্যতে ।২৬

 অর্থ-মুক্তসঙ্গ, অহংঙ্কারশুন্য, ধৃতি উত্সাহসমন্বিত এবং সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে নির্বিকার, এই রুপ কর্তাই সাত্ত্বিক।

 রাগী কর্মফল প্রেপ্সু লুব্ধাঃ হিংসত্মকঃ অশুচি ।

 হর্ষ শোকান্বিতাঃ কর্তা রাজসঃ পরিকির্তিতঃ ।।২৭

 অর্থ-অত্যন্ত বিষয়াসক্ত কর্মফল লুব্ধ হিংসা প্রিয় অশুচি হর্ষ শোকাদির বশিভূত যে কর্তা সে রাজস কর্তা।

 অযুক্তঃ প্রাকৃতঃ স্তব্ধাঃ শঠঃ নৈস্কৃতিকঃ অলসঃ ।

 বিষাদী দীর্ঘসুত্রী চ কর্তা তামসঃ উচ্যতে ।।২৮

 অর্থ-অনুচিত্ কার্যপ্রিয়, জড় চেষ্টাযুক্ত,অনম্র শঠ অপমান কার্যে রত,অলস,সর্বদা বিষাদযুক্ত, দীর্ঘসুত্রী যে কর্তা, সেই তামস কর্তা।

 বুদ্ধেঃ ভেদম্‌ ধৃতে চ এব গুনতঃ ত্রিবিধম্‌ শৃনু ।

 প্রোচ্যমানম্‌ অশেষেন পৃথক্তেন ধনঞ্জয় ।।২৯

 অর্থ-হে ধনঞ্জয়, বুদ্ধির ও ধৃতির সত্ত্ব,রজ ও তমোগুন দ্বারা যে ত্রিবিধ ভেদ আছে তা আমি তোমাকে বিস-ারিত বলছি তুমি শ্রবন কর।

 প্রবির্ত্তিম চ নিবৃর্ত্তিম চ কার্য অকার্য ভয় অভয় ।

 বন্ধম্‌ মোক্ষ্যম চ যা বেত্তি বুদ্ধি সা পার্থ সাত্ত্বিকী ।।৩০

 অর্থ-যে বুদ্ধির দ্বারা প্রবৃত্তি,নিবৃত্তি কার্য ও অকার্য ভয় ও অভয় বন্ধন ও মুক্তি এই সকলের পার্থক্য নিশ্চিত হয় সেই বুদ্ধি সাত্ত্বিকী।

 যয়া ধর্মম্‌ অধর্মম্‌ চ কার্যম্‌ অকার্যম্‌ এব চ ।

 অযথাবত্ প্রজানাতি বুদ্ধি সা পার্থ রাজসী ।।৩১

 অর্থ-যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম কার্য ও অকার্য প্রভৃতির পার্থক্য অসম্যক রুপে স্থিরীকৃত হয়, সে বুদ্ধি রাজস।

 অধর্মম্‌ ধর্মম ইতি যা মন্যতে তমসা আবৃতা ।

 সর্বার্থান বিপরিতান চ বুদ্ধি সা পার্থ তামসী ।।৩২

 অর্থ-হে পার্থ যে বুদ্ধি অজ্ঞান এবং মোহাচ্ছন্ন হয় অধর্মকে ধর্ম বলে মনে করে এবং ধর্মকে অধর্ম বলে মনে করে এবং সব কিছুই বিপরিত ভাবে বোঝেন, তা তামসী বুদ্ধি বলে জানবে।

 ধৃত্যা যয়া ধারয়েতে মনঃ প্রান ইন্দ্রিয় ক্রিয়া ।

 যোগেন অব্যভিচারিণ্যা ধৃতিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ।।৩৩

 অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি অব্যভিচারি যোগ দ্বারা মন, প্রান,ইন্দ্রিয় ও ক্রিয়া সকলকে ধারন করে সেই ধৃতিই সাত্ত্বিকী।

 যয়া তু ধর্ম-কামার্থান ধৃত্যা ধারয়তে অর্জুন ।

 প্রসঙ্গেন ফলাকাঙ্ক্ষী ধৃতিঃ সা পার্থ রাজসী ।।৩৪

 অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি ফলাকাঙ্ক্ষার সহিত ধর্ম অর্থ ও কামকে ধারন করে তাই রাজসি।

 যয়া স্বপ্নম ভয়ম্‌ শোকম্‌ বিষাদম্‌ মদম্‌ এব চ ।

 ন বিমুঞ্চতি দুর্মেধা ধৃতিঃ সা পার্থ তামসী ।।৩৫

 অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি স্বপ্ন ভয় শোক বিষাদ মদ ইত্যাদিকে ত্যাগ করে না সেই বুদ্ধিহীনা ধৃতিই তামসী।

 সুখম্‌ তু ইদানীম ত্রিবিধম্‌ শৃনু মে ভরতর্ষভ ।

 অভ্যাসাত্ রমতে যত্র দুঃখ অন্তম্‌ চ নিগচ্ছতি ।।৩৬

 অর্থ-হে ভরতর্ষভ, এখন তুমি ত্রিবিধ সুখের বিষয় শ্রবন কর বদ্ধজীব পুনঃ, পুনঃ অনুশিলন দ্বারা সেই সুখে রমন করে, এবং কোন কোন স্থলে সমস্ত দুঃখ থেকে সম্যক রুপে মুক্ত হয়।

 যত্ তত্ অগ্রে বিষমিব পরিণামে অমৃত উপমম্‌ ।

 তত্ সুখম্‌ সাত্ত্বিকম্‌ প্রোক্তম্‌ আত্মা বুদ্ধি প্রসাদজম্‌ ।।৩৭

 অর্থ-যে সুখ প্রথম বিষের মত কিন্তু পরি নামে অমৃততুল্য, আত্মনিষ্ট বুদ্ধির নির্মলতা থেকে উত্পন্ন, সেই সুখ সাত্ত্বিক সুখ বলে কথিত হয়।

 বিষয় ইন্দ্রিয় সংযোগাত্ যত্ তত্ অগ্রে অমৃতপমম্‌ ।

 পরিনামে বিষমিব তত্ সুখম্‌ রাজসম্‌ স্মৃতম্‌ ।।৩৮

 অর্থ-বিষয় ইন্দ্রিয়ের সংযোগের ফলে যে সুখ প্রথমে অমৃতের মত এবং পরিনামে বিষের মত অনুভব হয় তাকে রাজস সুখ বলা হয়।

 যত্ অগ্রে চ অনুবন্ধে চ সুখম্‌ মোহনম্‌ আত্মনঃ ।

 নিদ্রা আলস্য প্রমাদ উত্থম্‌ তত্ তমসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।৩৯

 অর্থ-যে সুখ প্রথমে ও পরিনামে আত্মতত্ত্ব জ্ঞানরহিত, এবং যা নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ থেকে উত্পন্ন হয়, তা তামসিক সুখ বলে কথিত হয়।

 ন তত্ অস্তি পৃথিব্যাম্‌ বা দিবি দেবেষু বা পুনঃ ।

 সত্ত্বম্‌ প্রকৃতিজৈঃ মুক্তম্‌ যত্ এভিঃ স্যাত্ এিভিঃ গুনৈঃ ।৪০

 অর্থ-এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে অথবা স্বর্গের দেবতাদের মধ্যে এমন কোন জীব নেই যে প্রকৃতির গুন থেকে মুক্ত।

 বাহ্মন ক্ষত্রিয় বিষাম্‌ শুদ্রানাম্‌ চ পরন্তপ ।

 কর্মানি প্রবিভক্তানি স্বভাব প্রভাব প্রভবেঃ গুনৈঃ ।।৪১

 অর্থ-হে পরন-প স্বভাবজাত গুন অনুসারে ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এবং শুদ্রেরও কর্ম সমুহ পৃথক ভাবে বিভক্ত আছে।

 শমঃ,দমঃ,তপঃ শৌচম্‌ ক্ষান্তি আর্জবম্‌ এব চ ।

 জ্ঞানম্‌ বিজ্ঞানম্‌ অস্তিকম্‌ ব্রহ্ম কর্ম সভাবজম্‌ ।।৪২

 অর্থ-শম, দম, তপ, শৌচ, ক্ষান্তি সরলতা, জ্ঞান,বিজ্ঞান ও আস্তিক্য এই কয়টি ব্রাহ্মনদের স্বভাবজ কর্ম।

 শৌর্যম্‌ তেজঃ ধৃতিঃ দাক্ষ্যম্‌ যুদ্ধে চ অপি অপলায়নম্‌ ।

 আনম্‌ ঈশ্বরম্‌ ভাবঃ চ ক্ষাত্রম্‌ কর্ম স্বভবজম্‌ ।।৪৩

 অর্থ-শৌর্য,তেজ,ধৃতি, দক্ষ্যতা,যুদ্ধে অপরাম্মুখতা দানশীলতা ও শাসন ক্ষমতা এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাব জাত কর্ম ।

 কৃষি গোরক্ষা বানিজ্যম্‌ বৈশ্য কর্ম স্বভাবজম ।

 পরিচর্যা আত্মকম্‌ কর্মঃ শুদ্রস্য অপি স্বভাবজম্‌ ।।৪৪

 অর্থ-কৃষি, গোরক্ষা ও বানিজ্য এই কয়টি বৈশ্যের স্বাভাবিক কর্ম। পরিচার্যা শুদ্রের স্বভাবজাত কর্ম।

 স্বে স্বে কর্মানি অভিরত সংসিদ্ধিম্‌ লভতে নরঃ ।

 স্বকর্ম নিরতঃ সিদ্ধিম্‌ যথা বিন্দতি তত্ শৃনু ।।৪৫

 অর্থ-স্বকর্মে নিয়ত ব্যক্তি স্বকর্মে অভিরত হয়ে যেভাবে সংসিদ্ধি লাভ করে, তা শ্রবন কর।

 যতঃ প্রবৃত্তিঃ ভূতানাম্‌ যেন সর্বম্‌ ইদম্‌ ততম্‌ ।

 স্বকর্মনা তম্‌ অভ্যর্চ্য সিদ্ধিম্‌ বিন্দতি মানবঃ ।।৪৬

 অর্থ-যে পরমেশ্বর ভগবান থেকে সমস্ত জীবের উত্পত্তি, যিনি এই সমগ্র বিশ্ব ব্যপ্ত আছেন, তাকে মানুষ তার কর্মের দ্বারা অর্চনা করে সিদ্ধি লাভ করে।

 শ্রেয়ান স্বধর্ম বিগুনঃ পরধর্মাত্ স্বনুষ্ঠিতাত্ ।

 স্বভাব নিয়তম্‌ কর্ম কুর্বন ন আপ্নোতি কিল্বিষম্‌ ।।৪৭

 অর্থ-উত্তম্‌ রুপে অনষ্ঠিত পরধর্ম থেকে অসম্যক রুপে অননিষ্ঠিত স্বধর্ম শ্রেয়। কারন স্বভাব অনুসারে কর্ম করলে মানুষ পাপের ভাগী হয়না।

 সহজম্‌ কর্ম কৌন্তেয় স্বদোষম্‌ অপি ন ত্যজ্যম ।

 সর্বরম্ভা হি দোষেন ধুমেন অগ্নি ইব আবৃতাঃ ।।৪৮

 অর্থ-প্রতিটি কর্ম প্রচেষ্টাতেই-কিছুনা কিছু দোষ থাকে, ঠিক যেমন অগ্নি ধুমের দ্বারা আবৃত থাকে। তাই হে কৌন্তেয় দোষযুক্ত হলেও স্বধর্ম কখন ত্যাগ করা উচিত্ না।

 অসক্তবুদ্ধিঃ সর্বত্র জিতাত্মা বিগতস্পৃহঃ ।

 নৈস্কর্ম্য সিদ্ধিম্‌ পরমাম্‌ সন্নাসেন অধিগচ্ছতি ।।৪৯

 অর্থ-জড় বিষয় অনাসক্ত সংযতচিত্ত এবং ভোগস্পৃহাশুন্য আত্মজ্ঞ ব্যক্তি

 স্বরুপত কর্ম ত্যগপুর্বক নৈস্কর্ম রুপ পরম সিদ্ধি লাভ করবে।

 সিদ্ধিম্‌ প্রাপ্ত যথা ব্রহ্ম তথা আপ্নোতি নিবোধ মে ।

 সমাসেন এব কৌন্তেয় নিষ্ঠা জ্ঞানস্য যা পরা ।।৫০

 অর্থ-হে কৌন্তে নৈস্কর্ম সিদ্ধি লাভ করে জীব যেমন জ্ঞানের পরানিষ্ঠারুপ ব্রহ্মকে লাভ করেন তা আমি সংক্ষেপে বলছি, শ্রবন কর।

 বুদ্ধ্যা বিশুদ্ধয়া যুক্তঃ ধৃত্যা আত্মা নিয়ম্য চ ।

 শব্দাদীন বিষয়ান ত্যাক্তা রাগ দ্বেষৌ ব্যুদস্য চ ।।৫১

 বিবিক্তসেবী লঘ্যাশী যতবাক কায় মানসঃ ।

 ধ্যানযোগপরঃ নিত্যম্‌ বৈরাগ্যম্‌ সমুপাশ্রিতঃ ।।৫২

 অহংকারম্‌ বলম্‌ দর্পম্‌ কাম ক্রোধম্‌ পরিগ্রহম্‌ ।

 বিমুচ্য নির্মমঃ শান্ত ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ।।৫৩

 অর্থ-বিশুদ্ধ বুদ্ধিযুক্ত হয়ে মনকে ধৃতির দ্বারা নিয়ত্রিত করে শব্দ আদি ইন্দ্রিয় বিষয় পরি ত্যাগ করে, রাগ, দ্বেষ বর্জন করে, নির্জন স্থানে বাস করে, অল্প আহার করে, দেহ, মন এবং বাক সংযত করে, ধ্যান যোগে যুক্ত হয়ে বৈরাগ্য আশ্রয় কওে, অহংঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ, পরিগ্রহ থেকে সম্পুর্নরুপে মুক্ত, মমত্ব বোধশুন্য শান্ত পুরুষ আত্মজ্ঞান লাভে সমর্থ হন।

 ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ।

 সমঃ সর্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিম্‌ লভতে পরাম্‌ ।।৫৪

 অর্থ-যিনি এই ভাবে চিন্ময় ভাব লাভ করেছেন, তিনি পরম ব্রহ্মকে উপলব্ধি করেছেন। তিনি কখনো কোন কিছুর জন্য শোক করেন না বা কোন কিছুর আকঙ্খা করেন না, তিনি সমস্ত জীবের প্রতি সমদৃষ্টি সম্পন্ন। সেই অবস্থায় তিনি আমার শুদ্ধ ভক্তি লাভ করে।

 ভক্তা মাম অভিজানাতি যাবান যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ ।

 ততঃ মাম তত্ত্বত জ্ঞাত্বা বিশতে তত্ অন্তরম্‌ ।।৫৫

 অর্থ-ভক্তির দ্বারা কেবল পরমেশ্বর ভগবানকে পাওয়া যায়। এই প্রকার ভক্তিদ্বারা ভগবানকে যথাযথ ভাবে জানার ফলে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করা যায়।

 সর্ব কর্মানি অপি সদা কুর্বাণঃ মত্ ব্যপাশ্রয়ঃ ।

 মত্ প্রসাদাত্ অবাপ্নোতি শাশ্বতম্‌ পদম্‌ অব্যয়ম্‌ ।।৫৬

 অর্থ-আমার ভক্ত সকল রকম কার্য কলাপে লিপ্ত হওয়া সত্তেও আমার প্রসাদে অব্যয় ও শাশ্বত আমার নিত্য ধাম লাভ করে।

 চেতসা সর্বকর্মানি ময়ি সংনস্য মত্পর ।

 বুদ্ধিযোগম উপাশ্রিত্য মচ্চিত্তঃ সততম্‌ ভব ।।৫৭

 অর্থ-তোমার সম্স্ত কর্মে তুমি কেবল আমার উপর নির্ভর কর এবং সর্বদা আমার আশ্রয় অবলম্বন কর। এইভাবে ভক্তি যোগে যুক্ত হয়ে মদ্গত চিত্ত হও।

 মত্ চিত্তঃ সর্বদুর্গানি মত্ প্রসাদাত্ তরিষ্যসি ।

 অথ চেত্ ত্বম্‌ অহঙ্কারান ন শ্রোষ্যসি বিনঙ্ক্ষ্যসি ।।৫৮

 অর্থ-এইভাবে মদ্গত চিত্ত হলে আমার কৃপায় জড়জীবনের সমস্ত প্রতিবন্ধক থেকে উত্তীর্ন হবে। কিন্তু তুমি যদি তা নাকরে আমার কথা না শুনে, অহংকারের বশীভূত হয়ে কর্ম কর, তাহলে তুমি বিনষ্ট হবে।

 যত্ অহঙ্কারম্‌ আশ্রিত্য ন যোত্স্য ইতি মন্যসে ।

 মিথ্যা এষঃ ব্যবসায়ঃ তে প্রকৃতি তাম্‌ নিযোক্ষতি ।।৫৯

 অর্থ-তুমি যদি আমার নির্দ্দেশ অনুসারে যুদ্ধ না কর, তাহলে তুমি ভ্রান্ত ভাবে পরিচালিত হবে। কারন তোমার প্রকৃতি তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করবে।

 স্বভাবজেন কৌন্তেয় নিবদ্বঃ স্বেন কর্মনা ।

 কর্তুম ন ইচ্ছসি যত্ মোহাত্ করিষ্যসি অবশঃ অপি তত্ ।।৬০

 অর্থ-হে কৌন্তেয় তুমি মোহ বশত আমার নির্দ্দেশ অনুসারে আচরন করতে চাইছনা। তোমার নিজ স্বভাবে বশবর্ত্তি হয়ে তোমাকে সেই কর্মে প্রবৃত্তি হতে হবে।

 ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌ হৃদ্দেশে অর্জুন তিষ্ঠতি ।

 ভ্রাময়ন সর্বভূতানি যন্ত্র আরুঢ়ানি মায়য়া ।।৬১

 অর্থ-হে অর্জুন, পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবকে দেহরুপ যন্ত্রেআহরন করিয়ে মায়ার দ্বারা ভ্রমন করান।

 তম এব শরনম্‌ গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত ।

 তত্ প্রসাদাত্ পরাম্‌ শান্তিম্‌ স্থানম্‌ প্রপ্সসি শাশ্বতম্‌ ।।৬২

 অর্থ-হে ভারত সর্বত ভাবে তার শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে।

 ইতি তে জ্ঞানম্‌ আখ্যাতম্‌ গুহ্যাত্ গুহ্যতরম্‌ ময়া ।

 বিমৃশ্য এতত্ অশেষেন যথা ইচ্ছসি তথা কুরু ।।৬৩

 অর্থ-এইভাবে আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান দান করলাম। তুমি তা বিশেষ ভাবে বিচার করে যাহা ইচ্ছা তাই কর।

 সর্ব গুহ্যতমম্‌ ভূয় শৃনু মে পরমম্‌ বচঃ ।

 ইষ্টঃ অসি মে দৃঢ়ম্‌ ইতি ততঃ বক্ষ্যামি তে হিতম্‌ ।।৬৪

 অর্থ-তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় তাই তোমার হিতের জন্য আমি সব চেয়ে গোপনিয় জ্ঞান উপদেশ করছি তুমি তা শ্রবন কর।

 মন্মনা ভব মদ্ভক্তঃ মদযাজি মাম্‌ নমস্কুরু ।

 মাম এষ্যসি সত্যম্‌ তে প্রতিজানে প্রিয় অসি মে ।।৬৫

 অর্থ-তুমি আমাতে চিত্ত স্থির কর এবং আমার ভক্ত হও। আমার পুজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই ভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে।

 সর্বাধর্মান পরিত্যজ্য মাম একম্‌ শরনম্‌ ব্রজ ।

 অহম্‌ ত্বাম সর্বপাপেভ্যঃ মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ।।৬৬

 অর্থ-সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শ্বরনাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। সে বিষয়ে তুমি কোন দুশ্চিন্তা করো না।

 ইদম তে ন অতপস্কায় ন অভক্তায় কদাচন ।

 ন চ অশুশ্রুষবে বাচ্যম ন চ মাম্‌ য়ঃ অভ্যসুয়তি ।।৬৭

 অর্থ-যারা সংযম হীন, ভক্তি হীন, পরিচর্য্যা হীন এবং আমার প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন তাদের কখন এই গোপনীয় জ্ঞান প্রদান করবে না।

 যঃ ইদম্‌ পরমম্‌ গুহ্যম্‌ মত্ ভক্তেষু অভিধাস্যতি ।

 ভক্তিম্‌ ময়ি পরাম্‌ কৃত্বা মাম্‌ এব এষ্যতি অসংশয়ঃ ।।৬৮

 অর্থ-যিনি আমার ভক্তদের পরম জ্ঞান দান করেন তিনি অবশ্যই পরা ভক্তি লাভ করেন এবং অবশেষে আমার কাছে ফিরে আসবেন।

 ন চ তস্মাত্ মনুষ্যেসু কশ্চিত্ মে প্রিয় কৃত্তম্‌ ।

 ভবিতা ন চ মে তস্মাত্ অন্যঃ প্রিয়তর ভূবি ।৬৯

 অর্থ-এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তার থেকে অধিক প্রিয়কারি এবং আমার প্রিয় আর কেউ নেই এবং কখনও হবে না।

 অধ্যেষ্যতে চ য ইমম্‌ ধর্মম্‌ সংবাদম্‌ আবয়োঃ ।

 জ্ঞান যজ্ঞেন তেন অহম্‌ ইষ্টঃ স্যাম ইতি মে মতিঃ ।।৭০

 অর্থ-এবং আমি ঘোষনা করছি যে, যে ব্যক্তি আমাদের এই পবিত্র কথপকথন অধ্যায়ন করবেন, তার সেই জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা আমি পুজিত হব।

 শ্রদ্ধাবান অনসুয়শ্চ শৃনুয়াত্ অপি যঃ নরঃ ।

 সোহপি মুক্তঃ শুভান লোকান পাপ্নুয়াত্ পুন্যকর্মনাম্‌ ।।৭১

 অর্থ-অসুয়া শুন্য যে ব্যক্তি শ্রদ্ধা সহকারে এই জ্ঞান শ্রবন করেন, তিনিও পাপ মূক্ত হয়ে পুন্য কর্মকারীদের লোক প্রাপ্ত হয়।

 কচ্চিত্ এতত্ শ্রুতম্‌ পার্থ তয়া একাগ্রেন চেতসা ।

 কচ্চিত্ অজ্ঞান সম্মোহঃ প্রনষ্টঃ তে ধনঞ্জয় ।।৭২

 অর্থ-হে ধনঞ্জয় অর্জুন তুমি কি একাগ্র চিত্তে এই উপদেশ শ্রবন করেছ,তোমার অজ্ঞান জনিত মোহ কি এখন বিদুরিত হয়েছে।

 অর্জুন উবাচ

 নষ্টঃ মোহ স্মৃতি লব্ধা তত্ প্রসাদাত্ ময়া অচ্যুত ।

 স্মিতঃ অস্মি গত সন্দেহঃ করিষ্যে বচনম তব ।।৭৩

 অর্থ-অর্জুন বললেন, হে কৃষ্ণ, হে অচ্যুত তোমার কৃপায় এখন আমার মোহ দুর হয়েছে। আমার স্মৃতি ফিরে এসছে এবং আমার সমস্ত সন্দেহ দুর হয়েছে। আমি এখন তোমার নির্দ্দেশ অনুসারে আচরন করব।

 সঞ্জয় উবাচ

 ইতি অহম্‌ বাসুদেবস্য পার্থস্য চ মহাত্মনঃ ।

 সংবাদম্‌ ইমম্‌ অশ্রৌষম্‌ অদ্ভূতম্‌ রোমহর্ষণম ।।৭৪

 অর্থ-সঞ্জয় বললেন, এইভাবে আমি কৃষ্ণ ও অর্জুন দুই মহাত্মার কথপকথন শ্রবন করে ছিলাম এবং সেই অদ্ভুদ বাণী শ্রবন করে রোমাঞ্চিত হয়ে ছিলাম।

 ব্যাসপ্রসাদ্যাত্ শ্রুতবান এতত্ গুহ্যম্‌ অহম্‌ পরম্‌ ।

 যোগম্‌ যোগেশ্বরাত্ কৃষ্ণাত্ সাক্ষাত্ কথয়তঃ সয়ম্‌ ।।৭৫

 অর্থ-ব্যাসদেবের কৃপায় এই পরম গোপণীয় যোগের উপদেশ আমি সয়ং যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণর কাছ থেকে শ্রবন করে ছিলাম।

 রাজন সংস্মৃত্য, সংস্মৃত্য সংবাদম্‌ ইমম্‌ অদ্ভুতম্‌ ।

 কেশব অর্জুনয়ো পুন্যম্‌ হৃষ্যামি চ মূহু, মূহু ।।৭৬

 অর্থ-হে রাজন শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের এই অমৃত সংবাদ স্বরন করতে, করতে আমি বারংবার রোমাঞ্চিত হচ্ছি।

 তত্ চ সংস্মৃত্য, সংস্মৃত্য রূপম্‌ অতি অদ্ভুতম হরেঃ ।

 বিস্ময়া মে মহান রাজন হৃষ্যামি চ পুনঃ, পুনঃ ।।৭৭

 অর্থ-হে রাজন শ্রীকৃষ্ণের সে অদ্ভুত্ রুপ স্বরন করতে, করতে বিস্ময়া বিভূত হচ্ছি এবং বারংবার হরষিত হচ্ছি।

 যত্র যোগেশ্বর কৃষ্ণ যত্রপার্থ ধনুধর ।

 তত্র শ্রীঃ বিজয়ঃ ভূতিঃ ধ্রূবা নীতিঃ মতির্মম্‌ ।।৭৮

 অর্থ-যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং যেখানে ধনুধর পার্থ সেখানে শ্রী,বিজয়,ভূতি,ও ন্যায় বর্ত্তমান এই দুইটিই আমার অভিমত।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 মোক্ষসংন্যাসযোগো নামাষ্টাদশোঽধ্যাযঃ ॥১৮॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 17 সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগযোগ

সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগযোগ

 অর্জুন উবাচ

 যে শাস্ত্রবিধিম্‌ উত্সৃজ্য যজন্তে শ্রদ্ধয়া অন্বিতা ।

 তেষাম্‌ নিষ্ট তু কা কৃষ্ণ সপ্তম্‌ অহো রজঃ তমঃ ।।১

 অর্থ-অর্জুন বললেন-হে ভগবান যারা শাস্ত্রিয় বিধান পরিত্যাগ করে শ্রদ্ধা সহকারে দেব দেবীর পূজা করে তাদের সেই নিষ্ঠা কি সাত্তিক,রাজসিক না তামসিক।

 ভগবান উবাচ

 ত্রিবিধা ভবতী শ্রদ্ধা দেহীনাম সা স্বভাবজা ।

 স্বাত্ত্বিকী রাজসী চ এব তামসী চ ইতি তাম শৃণু ।।২

 অর্থ-দেহীদের স্বভাবজনিত শ্রদ্ধা তিন প্রকার,সাত্ত্বিক,রাজসীক ও তামসীক।

 সত্ত্বানুরুপা সর্বস্য শ্রদ্ধা ভবতী ভারত ।

 শ্রদ্ধাময়ঃ অময় পুরুষঃ যঃ যত্ শ্রদ্ধা সঃ এব সঃ ।।৩

 অর্থ-হে ভারত সকলেই প্রকৃতির মাত্রা অনুযায়ী বিশেষ রকম শ্রদ্ধা যুক্ত হয় যে যেরকম গুনের প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত সে সেইরকম শ্রদ্ধাবান।

 যজন্তে সাত্ত্বিকাঃ দেবান যক্ষরক্ষাংসি রাজসাঃ ।

 প্রেতান ভূতাগনান চ অন্যে যজন্তে তামসাঃ জনাঃ ।।৪

 অর্থ-সাত্ত্বিক ব্যক্তিরা দেবতাদের পূজা করে রাজসীক ব্যক্তিরা যক্ষ্য ও রাক্ষসদের পূজা করে এবং তমসিক ব্যক্তিরা ভূত প্রেতদের পূজা করে।

 অশাস্ত্র বিহিতম্‌ ঘোরম্‌ তপন্তে যে তপঃ জনাঃ ।

 দম্ভ অহংঙ্কার সংযুক্তঃ কামরাগ বল অন্বিতাঃ ।।৫

 কর্ষয়ন্ত শরিরস্থম্‌ ভূতগ্রামম্‌ অচেতসঃ ।

 মাম্‌ চ এব অন্ত শরিরস্থম্‌ তান বিদ্ধি আসুর নিশ্চয়ান ।।৬

 অর্থ-দম্ভ ও অহংঙ্কার যুক্ত এবং কামনা ও আশক্তির প্রভাবে বলান্বিত হয়ে যে সমস্ত অবিবেকী ব্যক্তিরা তাদের দেহস’ ইন্দ্রিয় সমুহকে এবং অন্তরস্থ পরমাত্মাকে কষ্টদিয়ে শাস্ত্র বিরুদ্ধ ঘোর তপস্যার অনুষ্ঠান করে তাদের আসুরিক বুদ্ধিবিশিষ্ট বলে জানবে।

 আহারঃ তু অপি সর্বস্য ত্রিবিধ ভবতী প্রিয়ঃ ।

 যজ্ঞ তপঃ তথা দানম্‌ তেষাম্‌ ভেদম্‌ ইমম্‌ শৃনু ।।৭

 অর্থ-প্রকৃতির তিনটি গুন অনুসারে সেই তিন প্রকার মানুষের আহর ও ত্রিবিধ।তেমনই তাদের যজ্ঞ তপস্যা এবং দান ও ত্রিবিধ বলে জানবে।

 অয়ু সত্ত্ব বল আরগ্য সুখ প্রীতি বিবর্ধনা ।

 রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যাঃ আহারাঃ সাত্ত্বিক প্রিয়াঃ ।।৮

 কটু অম্ল লবন অত্যুষ্ণ তীক্ষ্ণ রুক্ষ্য বিদাহীনঃ ।

 আহারাঃ রাজসস্য ইষ্টাঃ দুঃখ শোক আময়প্রদাঃ ।।৯

 যাতষামম গতরসম পুতি পর্যুষিতম্‌ চ যত্ ।

 উচ্ছিষ্টম্‌ অপি চ অমেধ্যম্‌ ভোজনম্‌ তামস প্রিয়ম্‌ ।।১০

 অর্থ-যে সমস্ত আহার আয়ু উদ্যম বল আরগ্য সুখ ও প্রিতি বৃদ্ধি করে এবং সরল স্নিগ্ধ পুষ্টিকর ও মনোরম সেগুলি সাত্ত্বিক ব্যক্তিদের প্রিয় হয়। যে সমস্ত আহার দুঃখ্য শোক ও রোগ সৃষ্টি করে এবং অতি তিক্ত অতি অম্ল অতি লবন যুক্ত অতি উষ্ণ অতি তিক্ষ্ণ অতি শুস্ক অতি প্রদাহকর সে গুলি রাজসিকদের প্রিয় হয়। এক প্রহরের অধিক পুর্বে রান্না হওয়ার ফলে যে সমস্ত খাদ্য বাসী হয়ে গেছে যা নিরস অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত পুর্বদিনে রান্না হয়ে পর্যুষিত এবং অপরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য ও অমেধা দ্রব্যসকল তামসিক লোকের প্রিয়।

 অফলাকাঙ্ক্ষিভিঃ যজ্ঞঃ বিধি দিষ্টঃ যত্ ইজ্যতে ।

 যষ্টব্যম্‌ এবম্‌ ইতি মনঃ সমাধায় সঃ সাত্ত্বিকঃ ।।১১

 অর্থ-কোন রকম ফলের আশা না করে , শাস্ত্রের বিধি অনুসারে কর্তব্য বোধে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত তা সাত্ত্বিক যজ্ঞ।

 অভিসন্ধায় তু ফলম্‌ দম্ভ অর্থম্‌ অপি চ এব যত্ ।

 ইজ্যতে ভরতশ্রেষ্ঠ তম্‌ যজ্ঞম্‌ বিদ্ধি রাজসম্‌ ।।১২

 অর্থ-হে ভরতশ্রেষ্ঠ জাগতিক লাভের আশায় ফল কামনা করে দম্ভ প্রকাশের জন্য যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় তাকে রাজসিক বলে জানবে।

 বিধিহীনম্‌ অসৃষ্টন্নম্‌ মন্ত্রহীনম্‌ অদক্ষিনম্‌ ।

 শ্রদ্ধাবিরহিতম্‌ যজ্ঞম্‌ তামসম্‌ পরিচক্ষতে ।।১৩

 অর্থ-শাস্ত্রবিধি বর্জিত প্রসাদান্ন বিতরণহীন শন্ত্রহীন শ্রদ্ধারহিত যজ্ঞকে তামসিক যজ্ঞ বলা হয়।

 দেব দ্বিজ গুরু প্রাজ্ঞ পূজনম্‌ শৌচম্‌ আর্জবম ।

 ম্ব্র্রহ্মচর্যম্‌ অহিংসা চ শরিরম তপঃ উচ্চতে ।।১৪

 অর্থ-পরমেশ্বর ভগবান ব্রাহ্মন গুরুজন ও প্রাজ্ঞগনের পূজা এবং শৌচ সরলতা ব্রহ্ম চর্য্যা ও অহিংসা এইগুলিকে কায়িক তপস্যা বলে।

 অনুদ্বেগ করম্‌ বাক্যম্‌ সত্যম্‌ প্রিয় হিতম্‌ চ যত্ ।

 স্বাধ্যায় অভ্যসনম্‌ চ এব বাঙ্ময়ম্‌ তপঃ উচ্যতে ।।১৫

 অর্থ-অনুদ্বেগকর সত্য প্রিয় অথচ হিতকর বাক্য এবং বেদাদি শাস্ত্র পাঠ করাকে বাচিক তপস্যা বলে।

 মনঃপ্রসাদঃ সৌম্যত্বম্‌ মৌনম্‌ আত্মবিনিগ্রহঃ ।

 ভাবসংশুদ্ধিঃ ইতিএতত্ তপঃ মানসম্‌ উচ্যতে ।।১৬

 অর্থ-চিত্তের প্রসন্নতা সরলতা মৌন আত্মনিগ্রহ ব্যবহারে ছলনা রাহিত্য এইগুলিকে মানুষিক তপস্যা বলে।

 শ্রদ্ধায় পরয়া তপ্তম্‌ তপঃ তত্ ত্রিবিধম্‌ নরৈঃ ।

 অফলা কাঙ্খিভিঃ যুক্তৈঃ সাত্ত্বিকম্‌ পরিচক্ষতে ।১৭

 অর্থ-নিস্কাম ব্যক্তির দ্বারা পরমেশ্বর ভগবানের প্রীতি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে যখন এই ত্রিবিধ তপস্যা অনুষ্ঠিত হয়, তাকে সাত্ত্বিক তপস্যা বলা হয়।

 সত্কার মান পূজার্থম তপঃ দম্ভেন চ এব যত্ ।

 ক্রিয়তে তত্ ইহ প্রোক্তম্‌ রাজসম্‌ চলম্‌ অধ্রুবম্‌ ।।১৮

 অর্থ-প্রসাংসা সন্মান পুজা পাওয়ার আশায় দম্ভ সহকারে যে তপস্যা করা হয় তা অনিত্য ও অনিশ্চিত রাজসিক তপস্যা।

 মুঢ় গ্রাহেন আত্মনঃ যত্ পীড়য়া ক্রিয়তে তপঃ ।

 পরস্য উত্সাদনার্থম্‌ বা তত্ তামসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।১৯

 অর্থ-মুঢ় ব্যক্তির প্রভাবে নিজেকে কষ্টদিয়ে বা অপরের বিনাশের জন্য যে তপস্যা করা হয় তাকে তামসিক তপস্যা বলে।

 দাতব্যম্‌ ইতি যত্ দানম্‌ দীয়তে অনুপকারিণে ।

 দেশে কালে চ পাত্রে চ তত্ দানম্‌ সাত্ত্বিকম্‌ স্মৃতম্‌ ।।২০

 অর্থ-দানকরা কর্তব্য বলে মনে করে প্রত্যুপকারের আশা না করে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত সময় উপযুক্ত পাত্রে যে দান করা হয় তাকে সাত্ত্বিক দান বলে।

 যত্ তু প্রত্যুপকারার্থ ফলম্‌ উদ্দিশ্য বা পুন ।

 দীয়তে চ পরিক্লিষ্টম্‌ তত্ দানম্‌ রাজসম্‌ স্মৃতম্‌ ।।২১

 অদেশ কালে যত্ দানম্‌ অপাত্রেভ্যঃ চ দীয়তে ।

 অসত্কৃতম্‌ অবজ্ঞাতম্‌ তত্ তামসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।২২

 অর্থ-যে দান প্রত্যুপকারের আশা করে বা সর্গাদির লাভের উদ্দেশে এবং অনিচ্ছা সত্ত্বে করা হয়,তাকে রাজসিক দান বলে। অশুচি স্থানে অশুভ সময় অযোগ্য পাত্রে অবজ্ঞা সহকারে,এবং অনাদরে যে দান করা হয় তাকে তামসিক দান বলে।

 ওঁং তত্ সত্ ইতি নির্দশঃ ব্রাহ্মণঃ ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ ।

 ব্রাহ্মণাঃ তেন বেদাঃ চ যজ্ঞাঃ চ বিহিতাঃ পুরা ।।২৩

 অর্থ-সৃষ্টির আদিতে ওঁ তত্ সত্ এই শব্দ দ্বারা পরমেশ্বর ভগবানের ত্রিবিধ নাম নিদৃষ্ট হয়েছে। যজ্ঞকর্তা ব্রাহ্মনেরা যজ্ঞ অনুষ্ঠান সময় ভগবানের সন’ষ্টির জন্য তা উচ্চারন করতেন।

 তস্মাত্ ওঁ ইতি উদাহৃত্য যজ্ঞ্য দান তপঃ ক্রিয়াঃ ।

 প্রবর্তন্তে বিধানোক্তাঃ সততম্‌ ব্রহ্মবাদিনাম্‌ ।।২৪

 অর্থ-সেই হেতু পরমার্থিবাদিরা পরমেশ্বর ভগবানকে লাভ করার জন্য ওঁ শব্দ ব্যবহার পুর্বক যজ্ঞ দান তপস্যা এবং ক্রিয়া অনুষ্ঠান করেন।

 অদিতি অনভিসন্ধায় ফলম্‌ যজ্ঞ তপঃ ক্রিয়াঃ ।

 দান ক্রিয়া চ বিবিধাঃ ক্রিয়ন্তে মোক্ষকাঙ্ক্ষিভিঃ ।।২৫

 অর্থ-তত্ এই শব্দ উচ্চারন করে মূমূক্ষু ব্যক্তিরা ফলের আকাঙ্ক্ষা না করে নানা প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা, দান আদি কর্মের অনুষ্ঠান করেন।

 সদ্ভাবে সাধুভাবে চ সত্ ইতি এতত্ প্রজুয্যতে ।

 প্রশস্তে কর্মণি তথা সচ্ছব্দঃ পার্থ যুজ্যতে ।।২৬

 যজ্ঞে তপসি দানে চ স্থিতিঃ সত্ ইতি চ উচ্যতে ।

 কর্ম চ এব তত্ অর্থিয়ম্‌ সত্ ইতি এব অভিধিয়তে ।।২৭

 অর্থ-হে পার্থ সত্ভাবে ও সাধুভাবে সম্পাদন করার জন্য সত্ এই তৃতীয় ব্রহ্ম বাচক শব্দটি প্রযুক্ত হয়। যজ্ঞ ,তপস্যা, ও দানেও পরমেশ্বর ভগবানের প্রীতি সম্পাদনের জন্য যে তা অনুষ্ঠিত হয়েছে তা নির্দেশ করার জন্য সত্ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

 অশ্রদ্ধয়া হুতম্‌ দত্তম্‌ তপঃ তপ্তম্‌ চ উচ্যতে ।

 অসত্ ইতি উচ্যতে পার্থ ন চ তত্ প্রেত্য ন ইহ ।।২৮

 অর্থ-হে পার্থ পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধাপরায়ন না হয়ে যেদান বা তপস্যা অনুষ্ঠিত হয় তা অসত্।সেইসস্ত ক্রিয়া ইহকাল ও পরকাল কোন কালেই উপকারে আসেনা বা উপকার করে না।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 শ্রদ্ধাত্রযবিভাগযোগো নাম সপ্তদশোঽধ্যাযঃ ॥১৭॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 16 ষোড়শ অধ্যায়ঃ দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ

ষোড়শ অধ্যায়ঃ দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ

 শ্রীভগবানুবাচ ।

 অভয়ম্‌ সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ জ্ঞান যোগ ব্যবস্তিতিঃ ॥

 দানম্‌ দমঃ চ যজ্ঞঃ চ সাধ্যায় তপ আর্জবম্‌ ॥১॥

 অহিংসা সত্যম্‌ অক্রোধঃ ত্যাগঃ শান্তি অপৈশুনম্‌ ॥

 দয়া ভূতেষু অলোলুপ্তম্‌ মার্দবম্‌ হ্রীঃ অচাপলম্‌ ॥২॥

 তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ সৌচম্‌ অদ্রোহঃ ন অতিমানিতা ॥

 ভবন্তি সম্পদম দৈবীম্‌ অভিজাতস্য ভারত ॥৩॥

 অর্থ-ভগবান বললেন হে ভারত, ভয়শুন্যতা, সত্তার, পবিত্রতা পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশিলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান,বৈদিক শাস্ত্র অধ্যায়ন,তপশ্চর্যা, সরলতা,অহিংসা,সত্যবাদিতা,ক্রোধশুন্যতা,বৈরাগ্য, শান্তি ,অন্যের দোশদর্শন না করা,দয়া,লোভহীনতা,মৃদুতা,অসত্ চিন্তা ও অসত্ কর্ম লজ্জা, অচপলতা,তেজ,ক্ষমা, ধৈর্য,শৌচ,মত্সর্য শুন্যতা, অনভিমান এই সমসত গুনগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।

 দম্ভঃ দর্পঃ অভিমান চ ক্রোধঃ পারুষ্যম্‌ এব চ ॥

 অজ্ঞানাম্‌ চ অভিজাতস্য পার্থ সম্পাদম্‌ আসুরীম্‌ ॥৪॥

 অর্থ-হে পার্থ যারা আসুরি ভাব নিয়া জন্মগ্রহন করেছেন, দম্ভ, দর্প,অহংঙ্কার, ক্রোধ, বাক্য এবং ব্যবহরে কর্কশভাব্‌ এবং অবিবেক এই সমস্ত অসত্ ভাব তাদের মধ্যে প্রকাশিত হয়।

 দৈবী সম্পত্ বিমোক্ষায় নিবন্ধায় আসুরী মতা ॥

 মা শুচঃ সম্পাদম্‌ দৈবীম্‌ অভিজাত অসি পান্ডব ॥৫॥

 অর্থ-দৈবী গুনাবলী মূক্তির অনুকুল আর আসুরীক গুনাবলী সংসার বন্ধনের কারন। হে পান্ডুপুত্র তুমি শোক করোনা কারন তুমি দৈবী গুনাবলীতে বিভূষিত হয়ে জন্ম গ্রহন করেছ।

 দৌঃ ভূতসর্গৌ লোকে অস্মিন দৈব আসুর এব চ ॥

 দৈব বিস্তরশঃ প্রোক্তঃ আসুরম্‌ পার্থ মে শৃনু ॥৬॥

 অর্থ-হে পার্থ এজগতে দেব স্বভাব প্রাণীদের কথা বিস্তারিত ভাবে বর্ননা করেছি। এখন আসুরীক স্বভাব বিশিষ্ট প্রাণীদের কথা শ্রবন কর।

 প্রবৃত্তিম্‌ চ নিবৃত্তিম্‌ চ জনাঃ ন বিদুঃ অসুরাঃ ॥

 নশৌচম্‌ ন অপি চ আচারঃ ন সত্যম্‌ তেষু বিদ্যতে ॥৭॥

 অর্থ-অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয় প্রবৃত্ত হতে জানে না এবং অধর্ম বিষয়ে থেকেও নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের শৌচ নেই সদাচার নেই এবং সত্যও নেই।

 অসত্যম অপ্রতিষ্ঠম তে জগত্ আহুঃ অনীশ্বরম্‌ ॥

 অপস্পর সম্ভুতম্‌ কিমন্যত্ কাম হৈতুকম্‌ ॥৮॥

 অর্থ-অসুর স্বভাক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে এই জগত্ মিথ্যা অবলম্বন হীন এবং অবিনশ্বর কাম বশত স্ত্রীপুরুষের সংযোগেই এই জগত্ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছারা অন্য কেন কারন নাই।

 এতাম্‌ দৃষ্টিম্‌ অবষ্টভ্য নষ্ট আত্মনঃ অল্পবুদ্ধয় ॥

 প্রভবন্তি উগ্রকর্মাণ ক্ষয়ায় জগতঃ অহিত্বাঃ ॥৯॥

 অর্থ-এই প্রকার সিন্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্তহীন অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন উগ্রকর্মা অসুরস্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জগত্ ধংসকারি কার্যে নিয়োজিত থাকে।

 কামম্‌ আশ্রিত্য দুঃস্পুরম্‌ দম্ভ মান মদান্বিতাঃ ॥

 মোহাত্ গৃহীত্বা অসত্ গ্রাহান প্রবর্তন্ত অশুচি ব্রতাঃ ॥১০॥

 অর্থ-তাদের হৃদয় দুঃস্পুরনীয় বাসনায় পুর্ন। দম্ভ মান ও মদযুক্ত হয়ে তারা অশুচি কার্যে ব্রতী হয় এবং মোহ বশতঃ অসৎ বিষয় প্রবৃত্ত হয়।

 চিন্তাম্‌ অপরিমেয়াম্‌ চ প্রলয়ান্তাম্‌ উপাশ্রিতাঃ

 কামোপভোগ পরমাঃ এতাবত্ ইতি নিশ্চিতাঃ ॥১১॥

 আশাপাশ শতৈঃ বদ্ধাঃ কাম ক্রোধ পরায়ণাঃ ॥

 ঈহনতে কাম ভোগ অর্থম্‌ অন্যায়েন অর্থ সঞ্চয়ন ॥১২॥

 অর্থ-মৃত্যুকাল পর্যনত ইন্দ্রিয় সুখ ভোগকেই তারা তাদের জীবনের উদ্বেশ্য বলে মনে করে। অপরিমেয় দুঃখ দুশ্চিন্তার আশ্রয় গ্রহন অসংখ্য আশাপাপে আবদ্ধ হয় এবং কাম ক্রোধের অদীন হয়ে তারা বিষয় ভোগের জন্য নানা রকম অসৎ উপাত্ অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে।

 ইদম্‌ অদ্য ময়া লব্ধম্‌ ইমম্‌ প্রাপস্যে মনোরথম্‌ ॥

 ইদম্‌ অস্তি ইদম্‌ অপি মে ভবিষ্যতি পুনঃ ধনম্‌ ॥১৩॥

 অসৌ ময়া হতঃ শত্রুঃ হনিষ্যে চ অপরান অপি ॥

 ঈশ্বর অহম্‌ অহম্‌ ভোগী সিদ্ধঃ অহম্‌ বলবান সুখী ॥১৪॥

 আঢ্যঃ অভিজনবান অস্মি কঃ অন্য অস্তি সদৃশ্যঃ ময়া ॥

 যক্ষ্যে দাস্যামি মোদিস্যে ইতি অজ্ঞান বিমেহিতাঃ ॥১৫॥

 অনেক চিত্তবিভ্রান্তঃ মোহ জাল সমাবৃতাঃ ॥

 প্রসক্তাঃ কাম ভোগেষু পতন্ত নরকে অশুচৌ ॥১৬॥

 অর্থ-অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা মনেকরে আজ আমার এত লাভ হল এবং ভবিষ্যতে আমার পরি কল্পনা অনুসারে আরো লাভ হবে।এখন আমার এত ধন আছে এবং ভবিষ্যতে আর ধন হবে এবং সে আমার শত্রু এবং আমি তাকে নাশ করেছি এবং অন্যান্য শত্রুদের আমি নাশ করব। আমিই ঈশ্বর আমি ভোক্তা আমি সিদ্ধ, বলবান এবং সুখী। আমি সব চেয়ে ধনবান, এবং অভিজাত আত্মীয়-স্বজন পরিবৃত। আমার মত বলবান এবং সুখী আর কেউ নাই। আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব। আমি দান করব, এবং আনন্দ করব। এই ভাবে অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত হয়। নানা প্রকার দুঃশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজালে বিজরিত হয়ে কামভোগে আসক্ত চিত্ত অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়।

 আত্মসম্ভাবিতাঃ স্তব্ধাঃ ধনমান মদান্বিতা ॥

 যজন্তে নাম যজ্ঞৈঃ তে দম্ভেন অবিধিপুর্বকম্‌ ॥১৭

 অর্থ-সেই আত্মাভিমানী অনম্র ও ধনবান ও মদান্বিতা ব্যক্তিরা অবিধিপুর্বক দম্ভ সহকারে নাম মাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।

 অহংঙ্কারম বলম্‌ দর্পম্‌ কামম্‌ ক্রোধম্‌ চ সংশ্রিতা ॥

 মাম আত্মা পরদেহেষু প্রদ্বিষ্যন্তে অভ্যসুয়কা ॥১৮॥

 অর্থ-অহংঙ্কার, বল, দপর্, কাম ও ক্রোধের দ্বারা বিমোহিত হয়ে অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা স্বীয় দেহে এবং পরদেহে অবস্তিত পরমেশ্বর স্বরুপ আমাকে দ্বেষ করে এবং প্রকৃত ধর্মের নিন্দা করে।

 তান অহম দ্বিষতঃ ক্রুরান সংসারেষু নরাধমান্‌ ॥

 ক্ষিপামি অজস্রম্‌ অশুভান আসুরীষু এব যোনিষু ॥১৯।।

 অর্থ-সেই বিদ্বেষী ক্রুর নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে পুনঃ পুনঃ নিক্ষেপ করি।

 আসুরীম্‌ যোনিম্‌ আপন্নাঃ মুঢ়া জন্মানি জন্মানি ॥

 মাম্‌ অপ্রাপ্য এব কৌন্তেয় ততঃ যান্তি অধমাম্‌ গতিম্‌ ॥২০॥

 অর্থ-হে অর্জুন অসুর যোনি প্রাপ্ত হয়ে সেই মুঢ় ব্যক্তিরা জন্মে জন্মে আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়।

 ত্রিবিধম্‌ নরকস্য ইদম্‌ দ্বারম্‌ নাশনম্‌ আত্মনঃ ॥

 কামক্রোধঃ ততঅ লোভঃ তস্মাত্ এতত্ ত্রয়ম্‌ ত্যাজেত্ ২১॥

 অর্থ-কাম ক্রোধ এবং লোভ এই তিনটি নরকের দ্বারস্বরুপ। অতএব উত্তম ব্যক্তিরা এই তিনটি পরিত্যাগ করেন কারন এগুলি আত্মাকে অধঃগামী করে।

 এতৈঃ বিমুক্তঃ কৌন্তেয় তমোদ্বারৈঃ ত্রিভিঃ নরঃ ॥

 আচরিত আত্মনঃ শ্রেয় ততঃ যাতি পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২২॥

 অর্থ-হে কৌন্তেয় এই তিন প্রকার তমদ্বার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আত্মার শ্রেয় আচরন করবে,তা হলেই পরাগতি লাভ করতে পারবে।

 যঃ শাস্ত্রবিধিম্‌ উত্সৃজ্য বর্ততে কামকারত ॥

 ন সঃ সিদ্ধিম্‌ অবাপেনাতি ন সুখেন ন পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২৩॥

 অর্থ-কিন্তু শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে যে কামাচারে বর্তমান থাকে সে সিদ্ধি বা সুখ বা পরা গতীলাভ করতে পারে না।

 তস্মাত্ শাস্ত্রম্‌ প্রমানম্‌ তে কার্য অকার্য ব্যবস্থিতৌ ॥

 জ্ঞাতা শাস্ত্র বিধান উত্তম্‌ কর্ম কর্তুম্‌ ইহ অর্হসি ॥২৪॥

 অর্থ-অতএব কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই একমাত্র প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রিয় বিধি নিষেধের স্বরুপ জেনে কর্ম করা উচিত যাতে পারমার্থিক উন্নতি লাভ করা যায়।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 দৈবাসুরসংপদ্বিভাগযোগো নাম ষোডশোঽধ্যাযঃ ॥১৬॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 15 পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পুরুষোত্তমযোগ

পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পুরুষোত্তমযোগ
 ভগবান উবাচ

 উর্ধ্বমুলম্‌ অধঃ শাখম্‌ অশ্বত্থম্‌ প্রাহুঃ অব্যয়ম্‌ ।

 ছন্দাংসি যস্য পর্নানি যঃ তম বেদ সঃ বেদবিত্ ।।১

 অর্থ-ভগবান বললেন-উর্ধমুল এবং অধঃ শাখা বিশিষ্ঠ একটি অশ্বত্থবৃক্ষ রয়েছে,বৈদিক মন্ত্র সমুহ সেইবৃক্ষের পত্র স্বরুপ। যিনি এই বৃক্ষ্যটিকে ভাল ভাবে জানেন তিনিই বেদবিদ।

 অধঃ চ উর্ধ্বম্‌ প্রসৃতাঃ তস্য শাখাঃ

 গুন প্রবৃদ্বাঃ বিষয় প্রবালাঃ ।

 অধঃ চ মুলানি অনুসন্ততানি

 করম অনুবন্ধীনি মনুষ্য লোকে ।।২

 অর্থ-এই বৃক্ষের শাখা সমুহ জরাপ্রকৃতির তিনটি গুনের দ্বারা পুষ্টহয়ে অধঃদেশে ও উর্ধদেশে বিস্তৃ্ত। জড়ীয় বিষয় সমুহই এই শাখাগনের পল্লব। এই বৃক্ষের মুলগুলি অধোঃদেশে প্রশারিত এবং সেগুলি মনুষ্যলোকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ।

 ন রূপম অস্য ইহ তথা উপলভ্যতে

 ন অন্ত ন চ আদিঃ ন চ সংপ্রতিষ্ঠা ।

 অশ্বত্থম্‌ এনম সুবিরূঢ় মুলম

 অসঙ্গশস্ত্রেণ দৃঢ়েন ছিত্ত্বা ।।৩

 ততঃ পদম্‌ তং পরিমার্গিতম্‌

 যস্মি গতাঃ ন নিবতন্তি ভুয়ঃ ।

 ত্বম এব চ আদ্যম্‌ পুরুষম্‌ প্রপদ্যে

 যতঃ প্রবৃত্তিঃ প্রসুতা পুরাণী ।।৪

 অর্থ-এই বৃক্ষের স্বরুপ এই জগতে অব গত হওয়া যায়না। এর আদি এবং আশ্রয় যে কোথায় কেউ বুজতে পারেনা। বৈরাগ্যের রুপ অস্ত্রের দ্বারা এই বৃক্ষকে ছেদন করে, সত্য বস্তুর অন্বেষন করা কর্তব্য। সেই সত্য তত্ত্বে অবস্থিত হলে তা থেকে আর নিবৃত্তি হয় না। সেই পমশ্বর ভগবান থেকে সব কিছু শৃষ্টি হয়েছে এবং অনাদি কালথেকে তারই অনুস্বরন করছে, সেই পরম পুরুষের স্বরনাগত হও।

 নিঃ মান মোহাঃ জিত সংঙ্গঁ দোষাঃ

 আধ্যাত্ম নিত্যাঃ বিনিবৃত্ত কামাঃ ।

 দ্বন্দ্বৈঃ বিমুক্তাঃ সুখ-দুঃখ সজ্ঞৈঃ

 গচ্ছন্তি অমুঢ়া পদম অব্যয়ম তত্ ।।৫

 অর্থ-যিনি অভিমান এবং মোহশুন্য, সঙ্গঁদোষ রহিত, নিত্য অনিত্য বিচার পরায়ন নিবৃত্ত, কাম সুখ-দুখ প্রভৃতি দ্বন্ধ সমুহ থেকে মুক্ত এবং পরমেশ্বর ভগবানের শ্বরনাগত পন্থা অবগত তিনি সেই অব্যয় পদ লাভ করতে পারে ।

 ন তত্ ভাসয়তে সুর্য্য ন শশাঙ্কঃ ন পাবক ।

 যত্ গত্বান নিবর্তন্তে তত্ ধাম্‌ পরম মম ।।৬

 অর্থ-আমার সেই পরম ধাম ‌চন্দ্রসুর্য্য অথবা বিদ্যুত্ আলোকিত করতে পারে না। সে খানে গেলে এই জড়জগতে আর ফিরে আসতে হয় না।

 মম এব অংশঃ জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ ।

 মনঃ ষষ্টানি ইন্দ্রিয়াণি প্রকৃতি স্থানি কর্ষতি ।৭

 অর্থ-এই জড় জগতে বদ্ব জীব সমুহ আমার সনাতন বিভিন্ন অংশ। জড়া প্রকৃতির বন্ধনে আবদ্ব হওয়ার ফলে তারা মন সহ ছটি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতির রুপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্র্রাম করছে।

 শরিরম্‌ যত্ অবাপ্নোতি যত্ চ অপি উত্ক্রামতি ঈশ্বর ।

 গৃহীত্বা এতানি সংযাতি বায়ু গন্ধান ইব আশয়াত্ ।।৮

 অর্থ-বায়ু যেমন ফুলের গন্ধ নিয়া অন্যত্র গমন করে, তেমনিই এই জগতে জীব এক স্থুল শরির থেকে অন্য স্থুল শরিরে তার জীবনের ধারনা গুলি নিয়ে যায়।

 শ্রোত্রম্‌ চক্ষুঃ স্পর্শনম্‌ চ রসনম্‌ ঘ্রানম্‌ এব চ ।

 অধিষ্ঠায় মনঃ চ অয়ম্‌ বিষয়ান উপসেবতে ।।৯

 অর্থ-অন্য স্থুলশরির লাভ করে চক্ষু, কর্ন, ত্বক, জিহ্বা এবং নাসিকা আশ্রয় করে মনের সাহায্যে রুপ রসাদি বিষয় সমুহ উপভোগ করে।

 উত্ক্রমন্তম স্থিতম বাপি ভুঞ্জনাম্‌ বা গুনান্বিতাম।

 বিমুঢ়ান অনুপশ্যন্তি পশ্যন্তি জ্ঞান চক্ষুষঃ ।।১০

 অর্থ-মুঢ় লোকেরা বুজতে পারে না জীব কিভাবে দেহ ত্যাগ করে অথবা প্রকৃতির গুনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিভাবে তার পরবর্তি শরির উপভোগ করে। কিন্তু জ্ঞান চক্ষুবিশিষ্ঠ তিনি সমস্ত বিষয় যথাযথ ভাবে দর্শন করতে পারে।

 যতন্তঃ যোগিনঃ চ এনম পশ্যন্তি আত্মনি অবস্থিতম।

 যতন্তঃ অপি অকৃতাত্মান ন এনম পশ্যন্তি অচেতসা ।।১১

 অর্থ-আত্মজ্ঞানসম্পন্ন, যত্নশীল যোগীগন, এই তত্ত স্পষ্টরুপে দর্শন করতে পারেন কিন্তু আত্ত তত্ত জ্ঞান হীন অবিবেকিগন যত্ন করেও এই তত্ত অবগত হন না।

 যত্ আদিত্যগতম তেজঃ জগত্ ভাষয়েতে অখিলম ।

 যত্ চন্দ্রমসি যত্ চ অগ্নৌ তত্ তেজঃ বিদ্ধি মামকম্‌ ।।১২

 অর্থ-সুর্য্যের যে জ্যোতি সমস্ত জগতকে উত্ভাশিত করে, তা আমারই তেজ এবং চন্দ্র ও অগ্নির যে জ্যোতি তাও আমারই।

 গাম আবিশ্য চ ভূতানি ধারয়ামি অহম ওজসা ।

 পুঞ্চামি চ ঔষধীঃ সর্বাঃ সোমঃ ভূত্মা রসাত্মকঃ ।।১৩

 অর্থ-প্রতিটি গৃহে প্রবৃষ্ট হয়ে আমি আমার শক্তির দ্বারা চরাচর সমস্ত প্রাণীদের ধারন করি এবং রসাত্তক চন্দ্ররুপে ধান, যবাদি ঔষধী পুষ্টি করি।

 অহম বৈশ্বানর ভুত্বা প্রাণীনাম দেহম্‌ আশ্রিতঃ ।

 প্রাণ অপান সমাযুক্তঃ পচামি অন্ন্‌ম্‌ চতুর্বিধ্‌ ।।১৪

 অর্থ-আমি জঠরাগ্নি রুপে প্রাণীগনের দেহ আশ্রয় করে প্রাণ ও অপান বায়ুর সংযোগে চার প্রকার খাদ্য পরিপাক করি।

 সর্বস্য চ অহম্‌ হৃদি সন্নিবিষ্টঃ ;

 মত্তঃস্মৃতি জ্ঞানম্‌ অপোহনম ।

 বেদৈঃ চ সর্বৈঃ অহম এব বেদ্যঃ;

 বেদান্ত কৃত্ বেদবিদ এব চ অহম ।।১৫

 অর্থ-আমি সকলের হৃদয় অবস্থিত আছি এবং আমার থেকেই জীবের স্মৃতি এবং জ্ঞান উত্পন্ন ও বিলোপ হয়। আমি সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য সমস্ত বেদান্ত কর্তা এবং বেদবেত্তা।

 দ্বৌ ইমৌ পুরুষৌ লোকে ক্ষর চ অক্ষরঃ এব চ ।

 ক্ষরঃ সর্বানি ভূতানি কুটস্থঃ অক্ষরঃ উচ্যতে ।।১৬

 অর্থ-ক্ষর এবং অক্ষর এই দুই প্রকার জীব রয়েছে। এই জড় জগতে প্রতিটি জীবই ক্ষর, এবং চিত্ জগতে প্রতিটি জীবই অক্ষর।

 উত্তম্‌ পুরুষঃ তু অন্যঃ পরম্‌ আত্মা ইতি উদাহৃত ।

 যঃ লোক ত্রয়ম্‌ আবিশ্য বিভর্তি অব্যয়ঃ ঈশ্বর ।।১৭

 অর্থ-এই উভয পুরুষ থেকে ভিন্ন পুরুষোত্তম্‌ পরমাত্মা রুপে সমগ্র বিশ্বে প্রবেশ করে তাদের পালন করে।

 যস্মাত্ ক্ষরম্‌ অতীতঃ অহম্‌ অক্ষরাত্ অপি চ ঊত্তম্‌ ।

 ততঃ অস্মি লোকে বেদে চ প্রথিতঃ পুরুষোত্তম্‌ ।।১৮

 অর্থ-যে হেতু আমি ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর থেকেও উত্তম্‌ সেই হেতু ইহ লোকেও বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে বিখ্যাত।

 যঃ মাম্‌ এবম্‌ অসংমূঢ় জানাতি পুরুষোত্তম্‌ ।

 সঃ সর্ববিদ ভজতি মাম্‌ সর্বভাবেন ভারত ।।১৯

 অর্থ-হে ভারত যিনি নিঃসন্দেহে আমাকে পুরুষোত্তম্‌ বলে জানেন, তিনি সর্বদা এবং তিনিই সর্বত ভাবে আমাকে ভজনা করেন।

 ইতি গুহ্যতমম্‌ শাস্ত্রম্‌ ইদম্‌ উক্ত্যম্‌ ময়া অনঘ ।

 এতত্ বুদ্ধা বুদ্ধিমান স্যাত্ কৃত কত্যঃ চ ভারত ।।২০

 অর্থ-হে নিস্পাপ অর্জুন এনটিই বৈদিক শাস্ত্রের সবচেয়ে গোপনিয় অংশ, এবং আমি তোমার কাছে প্রকাশ করলাম। যিনি এই তত্ত অব গত হয়েছেন, তিনিই প্রকৃত বুদ্ধিমান এবং তিনিই কৃতার্থ হয়েছেন।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 পুরুষোত্তমযোগো নাম পঞ্চদশোঽধ্যাযঃ ॥১৫॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 14 চতুর্দশ অধ্যায়ঃ গুণত্রয় বিভাগযোগ

চতুর্দশ অধ্যায়ঃ গুণত্রয় বিভাগযোগ

 ভগবান উবাচ

 পরম ভূয় প্রবক্ষামি জ্ঞানানাম ‌জ্ঞানম্ উত্তমম।

 যত্ জ্ঞাত্বা মুনয়ঃ সর্বে পরাম সিদ্ধিম ইতঃ গতাঃ।।১

 অর্থ-ভগবান বললেন-আমি পুনরায় তোমাকে সমস্ত জ্ঞানের মধ্যে সর্বতম জ্ঞান সম্বন্ধেই বলব, যা লাভ করে, মুনিগন পরা সিদ্ধিরূপা ভক্তি লাভ করে ছিলেন।

 ইদম জ্ঞানম উপাশ্রিত্য মম সাধর্ম্যম আগতাঃ ।

 সর্গে অপি ন উপজায়ন্তে প্রলয়ে ন ব্যথন্তি চ ।।২

 অর্থ-সেই জ্ঞান আশ্রয় করলে আমার পরা প্রকৃতি, চিন্ময় জগত্ লাভকরে। তখন আর সৃষ্ঠির সময় জড় জগতে জন্মগ্রহন করে না এবং প্রলয়ে আত্মবিনাশ রুপ ব্রাথা পায় না।

 মম যোনিঃ মহত্ ব্রহ্ম তস্মিন গর্ভম দধামি অহম্‌।

 সম্ভবঃ সর্বভূতানাম্‌ ততঃ ভবতি ভারত ।।৩

 অর্থ-হে ভরত প্রকৃতি সংজ্ঞক ব্রহ্ম এই জড় জগতের উত্পত্তির কারন, এবং সেই ব্রহ্মে আমি গর্ভদান করি ফলে সর্বভূতের সৃষ্ঠি হয়ে।

 সর্বযোনিষু কৌন্তেয় মুর্তয় সম্ভবন্তি যাঃ ।

 তাসাম্‌ ব্রহ্ম মহত্ যোনিঃ অহম জীবপ্রদ পিতা ।।৪

 অর্থ-হে কৌন্তেয় সমস্ত যোনিতে যত মুর্তি প্রকাশিত হয় ব্রহ্মরুপ যোনিই তাদের জননী স্বরুপা এবং আমি তাদের বীজ প্রদানকারি পিতা।

 সত্তম রজ তমঃ ইতি গুনা প্রকৃতি সম্ভবাঃ ।

 নিবধ্‌নন্তি মহাবাহো দেহে দেহিনম অব্যয়ম ।।৫

 অর্থ-হে মহাবাহো জড় প্রকৃতি থেকে সতঃ, রজঃ ,তমঃ এই তিনটি গুনের প্রকাশ হয়। জীব যখন জড়া প্রকৃতির সংর্স্পেশে আসে তখন সে তিনটি গুনের দ্বারা আবদ্ধ হয়।

 তত্র সত্তম নির্ম্মলত্বাত্ প্রকাশকম অনাময়ম ।

 সুখে সঙ্গেঁন বধ্‌নতি জ্ঞান সঙ্গেন চ অনঘ ।।৬

 অর্থ-হে নিস্পাপ;এই তিনটি গুনের মধ্যে সত্ত্বগুন অপেক্ষাকৃত নির্ম্মল, প্রকাশক এবং পাপশুন্য। এই সত্ত্বগুন আমি সুখি এই প্রকার সুখাশক্তি এবং আমি জ্ঞানি এই প্রকার জ্ঞানা শক্তি দ্বারা আমাকে আবদ্ধ করে।

 রজঃ রাগাত্মকম্‌ বিদ্ধি তৃষ্ণা সঙ্গ সমুদ্ভবম্‌ ।

 তত্নিবধ্‌নাতি কৌন্তেয় কর্মসঙ্গেন দেহিনম ।।৭

 অর্থ-হে কৌন্তেয়, অন্তহীন কামনা বাসনা থেকে রজগুণের উত্পত্তি হয় এবং রজগুনেই জীবকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ করে।

 তমঃ তু অজ্ঞানজম্‌ বিদ্ধি মোহনম্‌ সর্বদেহীনম ।

 প্রমাদ আলস্য নিদ্‌্রাভিঃ তত্ নিবধ্‌নাতি ভারত ।।৮

 অর্থ-হে ভারত তমগুন জীবের ভ্রান্তি উত্পাদন করে। প্রমাদ, আলস্য ও নিদ্রার দ্বারা তমঃগুন জীবকে আবদ্ধ করে।

 সত্তম সুখে সঞ্জয়তি রজঃ কর্মানি ভারত ।

 জ্ঞানম আবৃত্য তু তমঃ প্রমাদে সঞ্জয়তি ।।৯

 অর্থ-সত্ত্বগুন জীবকে সুখের বন্ধনে আবদ্ধ কওে, রজগুন জীবকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ কওে, এবং তমগুন প্রমাদের বন্ধনে আবদ্ব করে।

 রজঃ তমঃ চ অভিভুয় সত্তম ভবতী ভারত ।

 রজঃ সত্ত্বম তমঃ চ এব তমঃ সত্ত্বম রজঃ তথা ।।১০

 অর্থ-সত্ত্বগুন যখন প্রবল হয় তখন রজঃ ও তমঃগুন পরাজিত হয়। রজঃগুন যখন প্রবল হয় সত্ত্ব ও তমঃগুন পরাজিত হয়,এবং তমঃগুন যখন প্রবল হয় তখন সত্ত্ব ও রজঃগুন পরাজিত হয় এই ভাবে প্রকৃতির তিনটিগুনের মধ্যে সর্বদা আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা হয়।

 সর্বদ্বারেষু দেহে অস্মিন প্রকাশঃ উপজায়তে ।

 জ্ঞানম যদা তদা বিদ্যাত্ বিবৃদ্ধম্‌ সত্ত্ব্‌ ইতি উত ।।১১

 অর্থ-জ্ঞানের আলোকে জড়দেহের ইদ্রিয় রুপ দ্বারগুলিতে সত্ত্বঃ গুনের প্রকাশ অনুভুতি হয়।

 লাভঃ প্রবৃত্তিঃ আরম্ভঃ কর্মনাম অশমঃ স্পৃহা ।

 রজসী এতানি জায়ন্তে বিবৃদ্ধে ভরতর্ষভ ।।১২

 অর্থ-হে ভরত শ্রেষ্ঠ রজঃগুনের প্রবল বর্ধিত হলে লোভ, কর্মে প্রবৃত্তি, উদ্যম, ও বিষয় ভোগের স্পৃহা বৃদ্ধি পায় ।

 অপ্রকাশঃ অপ্রবৃত্তিঃ চ প্রমাদঃ মোহঃ এব চ ।

 তমসি এতানি যায়ন্তে বিবৃদ্ধে কুরুনন্দন ।।১৩

 অর্থ-তমঃ গুনের প্রভাব বর্ধিত হলে, অপ্সানান্ধকার, প্রমাদ, মোহ উত্পন্ন হয়।

 যদা সত্তে প্রবৃদ্ধে তু প্রলয়ম্‌ যাতি দেহভূত্ ।

 তদা উত্তমবিদাম্‌ লোকান অমলান প্রতিপদ্যতে ।।১৪

 অর্থ-সত্ত্বগুন সম্পন্ন ব্যাক্তির দেহ ত্যাগ হইলে নির্ম্মল উচ্চতর লোক প্রাপ্ত হয়।

 রজসি প্রলয়ম গত্বা কর্মসঙ্গিষু জায়তে ।

 তথা প্রলীনঃ তমসি মূঢ় যোনিষু জায়তে ।।১৫

 অর্থ-রজোগুণসম্পন্ন ব্যাক্তির মৃত্যু হলে কর্মাসক্ত মনুষ্যকুলে জন্ম হয়; এবং তমোগুণে আবিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হলে পশুযোনিতে জন্ম হয়।

 কর্মণঃ সুকৃতস্য আহুঃ সাত্তিকম্‌ নির্মলম্‌ ফলম্‌ ।

 রজসঃ তু ফলম্‌ দুঃখ্যম্‌ অজ্ঞানম্‌ তমসঃ ফল্‌ ।।১৬

 অর্থ-সার্থিক কর্মের ফলে জীব পবিত্র হয়। রাজসিক কর্মের ফলে দুঃখভোগ হয় এবং তামসিক কর্মের ফলে অজ্ঞান অচেতনত্ব লাভ হয়।

 সত্ত্বাত্ সংজায়তে জ্ঞানম্‌ রজসঃ লোভঃ এব চ ।

 প্রমাদ মোহৌ তমসঃ ভবতঃ অপ্সানম এব চ ।।১৭

 অর্খ-সত্ত্বগুন থেকে প্রকৃত জ্ঞান, রজগুন থেকে লোভ এবং তমগুন থেকে অজ্ঞান প্রমাদ ও মোহ উত্পন্ন হয়।

 উর্ধ্বম গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ ।

 জঘন্য গুণ বৃত্তিস্থা অধঃ গচ্ছন্তি তামসাঃ ।।১৮

 অর্থ-সত্ত্বগুনস্থ ব্যক্তিগন উধ্বর্ গতী লাভ করেন অর্থাত্ উচ্চতর লোকে গমন করেন;রাজসিক ব্যক্তিগন নর লোকে অবস্থান করেন; এবং তামসিক ব্যক্তিগন অধঃ পাতিত হয়ে নর লোকে গমন করেন।

 ন অন্যম গুনেভ্যঃ কর্তারম যদা দ্রষ্টা অনুপশ্যতি ।

 গুনেভ্যঃ চ পরম বেত্তি মদ্ভাবম্‌ সঃ অধিগচ্ছতি ।।১৯

 অর্থ-জীব যখন অনুভব করেন যে প্রকৃতির গুন ব্যথিত কর্মে অন্য কোন কর্তা নেই এবং পনমেশ্বর ভগবান এই সমস্ত গুনের অতিত তখন তিনি আমার পরা প্রকৃতি জানতে পারেন।

 গুনান এতান অতীত্য ত্রীন দেহী দেহ সমুদ্ভভবম ।

 জন্ম মৃত্যু জরাঃ দুখৈঃ বিমুক্তঃ অমৃতম্‌ অশ্নুতে ।।২০

 অর্থ-দেহ ধারী জীব যখন প্রকৃতির তিন গুন অতিক্রম করে জন্ম, জরারুপ দুঃখ বিমুক্ত হন, তখন তিনি ইহ জীবনেই অমৃত তত্ত আস্বাদন করেন।

 অর্জুন উবাচ

 কৈঃ লিঙ্গৈঃ ত্রীগুনান এতান অতীতঃ ভবতী প্রভো ।

 কিম্‌ আচার কথম চ এতান ত্রীন গুনান অতিবর্ততে ।।২১

 অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করিলেন হে প্রভু যিনি প্রকৃতির তিনটি গুনের অতীত হন তার লক্ষন কি? আর আচারন কিরকম এবং তিনি কিভাবে প্রকৃতির গুনত্রয় অতিক্রম করে।

 ভগবান উবাচ

 প্রকাশম চ প্রবৃত্তিম চ মোহম্‌ এব চ পান্ডব ।

 ন দেষ্টি সংপ্রবৃত্তানি ন নিবৃত্তানি কাঙ্খতি ।।২২

 উদাসীন বদ আসীনঃ গুনৈ যঃ ন বিচাল্যতে।

 গুনা বর্তন্তে ইতি এবম যঃ অবতিষ্ঠতি ন ইঙ্গতে ।।২৩

 সম দুঃখ সুখঃ স্বস্থঃ সম লোষ্ট্র অশ্ম কাষ্ণনঃ ।

 তুল্য প্রিয়ঃ অপ্রিয় ধীর তুল্য নিন্দা আত্ম সংস্তুতিঃ ।।২৪

 মান অপোমানয়ো তুল্যঃ তুল্যঃ মিত্র অরি পক্ষয়োঃ।

 সর্ব আরম্ভ পরিত্যাগী গুনাতিতঃ সঃ উচ্যতে ।।২৫

 অর্থ-ভগবান বলিলেন -প্রকাশ প্রবৃত্তি ও মোহ আবির্ভুত হলে যিনি দ্বেষ করেন ন,া এবং তাদের নিবৃত্তি ও আকাঙ্খা করে না, তিনিই গুনাতিত, উদাসিনের মত অবসি’ত থেকে যিনি গুনের দ্বারা বিচলিত হন না, যিনি সুখ, দুঃখ, মাটির ঢেলা, পাথও, সোনা, প্রিয়, অপ্রিয়, নিন্দাস্তুতি ইত্যাদির প্রতি সমদৃষ্টিসম্পন্ন এবং আত্মস্বরুপে অবস্থিত হয়ে তাদের তুল্য জ্ঞান করেন,যিনি সন্মান এবং অপমানে নির্বিকার, শত্রু ও মিত্রের প্রতি পক্ষ্যপাত শুন্য,যিনি ফলভোগের উদ্দেশ্যে কর্ম না করেও , কেবল ভগবানের প্রীতি সম্পাদনের জন্য কর্ম করেন তিনি গুনাতিত।

 মাম্‌ চ যঃ অভ্যভিচারেণ ভক্তি যোগেন সেবতে।

 সঃ গুণান সমতিত্য এতান ব্রহ্মভুয়ায় কল্পতে ।।২৬

 অর্থ-যিনি ঐকান্তিক ভক্তিসহকারে আমার সেবা করেন, এবং যিনি কোন অবস্থাতে অধঃপাতিত হন না, তিনিই প্রকৃতির সমস্ত গুন অতিক্রম করে ব্রহ্মভুত অবস্থায় উন্নিত হয়েছেন।

 ব্রহ্মণঃ হি প্রতিষ্ঠ অহম্‌ অমৃতস্য অব্যয়স্য চ ।

 শাশ্বতস্য চ ধর্মস্য সুখস্য ঐকান্তিকস্য চ ।।২৭

 অর্থ-অমিই নির্বিশেষ ব্যহ্মের প্রতিষ্ঠা বা আশ্রয়। অমৃতত্ত, অব্যয়ত্ব, নিতত্ত্ব্‌, নিত্য ধর্ম এবং ঐকান্তিক সুখের আশ্রয় আমিই।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 গুণত্রযবিভাগযোগো নাম চতুর্দশোঽধ্যাযঃ ॥১৪॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 13 ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ

ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ

 প্রকৃতি পুরুষ বিবেক যোগ

 অর্জুন উবাচ

 প্রকৃতিম্‌ পুরুষম্‌ চ এ ক্ষেত্রম্‌ ক্ষেত্রজ্ঞ্‌ এব চ ।

 এতত্ বেদিতু্‌ ইচ্ছামি জ্ঞান জ্ঞেয়্‌ম্‌ চ কেশব ।।১

 অর্থ-অর্জুন বলিলেন-হে কেশব, আমি প্রকৃতি, পুরুষ, ক্ষেত্র,ক্ষেত্রজ্ঞ, জ্ঞান ও জ্ঞেয় এই সমস্ত তত্ত জানতে ইচ্‌ছা করি।

 ভগবান উবাচ

 ইদম শরিরম কৌন্তেয় ক্ষেত্রম ইতি অভিধিয়তে ।

 এতত্ যঃ বেত্তি তম প্রাহুঃ ক্ষেত্রজ্ঞ ইতি তদ্ধিদঃ ।।২

 অর্থ-ভগবান বলিলেন-হে অর্জুন এই শরিরে নামই ক্ষেত্র যিনি এই ক্ষেত্রকে অবগত হন, তিনিই ক্ষেত্রজ্ঞ।

 ক্ষেত্রজ্ঞম চ অপি মাম বিদ্ধি সর্ব ক্ষেত্রেষু ভারত ।

 ক্ষেত্র ক্ষেত্রজ্ঞয়োঃ জ্ঞানম যত্ তত্ জ্ঞানম মতম মম ।।৩

 অর্থ- হে ভারত আমাকে সমস্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রজ্ঞ বলে জানবে, এবং ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে যথাযত ভাবে অবগত হওয়াই আমার মতে প্রকৃত জ্ঞান।

 তত্ ক্ষেত্রম যত্ চ যাদৃক চ যত্ বিকারি যতঃ চ যত্ ।

 সঃ চ যত্ প্রভাবঃ চ তত্ সমাসেন মে শৃণু ।।৪

 অর্থ-সে ক্ষেত্র কি,তার প্রকার কি,তার বিকার কি ,তা কার থেকে উত্পন্ন হয়েছে এবং তার প্রভাব কি, আমি সংক্ষেপে বলছি শ্রবন কর।

 ঋষিভিঃ বহুধা গীতম্‌ ছন্দোভিঃ বিবিধৈঃ পৃথক ।

 ব্রহ্মসুত্র পদৈঃ চ এব হৈতুমদ্ভিঃ বিনিশ্চিতৈঃ ।।৫

 অথ- এই ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞর জ্ঞান ঋষিগণ বৈদিক শাস্ত্রে বর্ননা করেছেন। বেদান্ত সুত্রে তা বিশেষ ভাবে যুক্তি যুক্ত সিদ্ধানত সহকারে বর্নিত আছে।

 মহাভুতানি অহঙ্কার বুদ্ধি অব্যক্তম্‌ এব চ ।

 ইন্দিয়ানি দশৈকম্‌ চ পঞ্চ চ ইন্দ্রিয়-গোচরাঃ ।।৬

 ইচ্ছা দ্বেষঃ সুখম্‌ দুঃখম্‌ সংঘাতঃ চেতনা ধৃতি ।

 এতত্ ক্ষেত্রম সমাসেন সবিকারম্‌ উদাহৃতম্‌।।৭

 অর্থ-পঞ্চমহাভুত, অহঙ্কার, বুদ্ধি, অব্যক্ত, দশ ইন্দিয় ও মন, ইন্দিয়ের পাঁচটি বিষয়, ইচ্ছা, দ্বেষ, সুখ, দুঃখ, সংঘাত্ অর্থাত্ পঞ্চমহাভুতের পরিনামরুপ দেহ, চেতনা এবং ধৃতি- এই সমস্ত বিকার যুক্ত ক্ষেত্র সংক্ষেপে বর্নিত হল।

 অমানিত্বম্‌ অদম্ভিতম্‌ অহিংসা ক্ষান্তি আর্জবম ।

 আচার্যোপাষনম শৌচম্‌ স্থৈর্যম আত্মবিনিগ্রহঃ ।।৮

 ইন্দিয়ার্থেষু বৈরাগ্যম্‌ অনহংঙ্কারঃ এব চ ।

 জন্ম মৃত্যু জরা ব্যাধি দুঃখ দোষ অনুদর্শনম্‌ ।।৯

 অসক্তিঃ অনভিস্বঙ্গঃ পুত্র দার গৃহাদিষু ।

 নিত্তম্‌ চ সমচিত্তত্বম্‌ ইষ্ট অনিষ্ট উপপত্তিষু ।।১০

 ময়ি চ অনন্য যোগেন ভক্তিঃ অব্যভিচারিণী ।

 বিবিক্ত দেশ সেবিত্তম্‌ অরতিঃ জনসংসদি ।।১১

 অধ্যাত্ম জ্ঞান নিত্যত্বম্‌ তত্ত্ব জ্ঞান অর্থ দর্শনম ।

 এতত্ জ্ঞানম ইতি প্রোক্তম্‌ অজ্ঞানম্‌ যত্ অতঅন্যথা ।।১২

 অর্থ- অমানিত্য, দম্ভশুন্যতা, অহিংসা, ক্ষমা, সরলাতা, গুরুসেবা, শৌচ, স্থৈর্য্য, আত্মসংযম্‌, ইন্দ্রিয়বিষয় বৈরাগ্য, অহংঙ্কারশুন্যতা, জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যধি-দুঃখ্য প্রভৃতির দোশ দর্শন, পুত্রাদিতে আসক্তিশুন্যতা, পুত্রাদির শোক দুঃখে ঔদাসিন্য, সর্বদা সমচিত্ত্বত্ব, আমার প্রতি অনন্যা ও অব্যভিচারিণী ভক্তি, নির্জন স্থানে প্রিয়তা, জনাকির্ণ স্থানে অরুচি, আধ্যত্মজ্ঞানে নিত্তত্ব বুদ্ধি এবং পরম তত্ত অনুসন্ধানে ঐকান্তিক আগ্রহ,এইগুলি আত্মজ্ঞানে সাধন বলে কথিত হয় এবং বিপরিত যা কিছু সবই অজ্ঞান।

 জ্ঞেয়ম্‌ যত্ তত্ প্রবক্ষামি অমৃতম্‌ অশ্নুতে ।

 অনাদি মত্পর্‌ম্‌ ব্রহ্ম ন সত্ তত্ ন অসত্ উচ্যতে ।।১৩

 আমি এখন তোমাকে জ্ঞানের কথা বলব, যা জেনে তুমি অমৃত তত্ত লাভ করবে। সেই জ্ঞেয় বস্তু অনাদি এবং আমার আশ্রিত। তাকে বলা হয়ে ব্রহ্ম এবং তা এই জড় জগতের কার্য্য ও কারণের অতীত।

 সর্বতঃ পানি পাদম তত্ সর্বতঃ অক্ষি শির মুখম্‌ ।

 সর্বতঃ শ্রুতিমত্ লোকে সর্বম আবৃতম্‌ তিষ্ঠতি ।।১৪

 অর্থ-তার হস্ত পদ চক্ষু ও কর্ন মস্তক ও মুখ সর্বত ব্যপ্ত এই ভাবে তিনি সকলকেই আবৃত করে বিরাজমান।

 সর্ব ইন্দ্রিয় গুন আভাসম সর্ব ইন্দ্রিয় বিবর্জিতম্‌ ।

 অসক্তম সর্বভুত চ এব নির্গুনম গুনভোক্তৃ চ ।।১৫

 অর্থ-সেই পরম আত্মা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের প্রকাশক তথাপি তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয় বিবর্জি। যদিও তিনি সকলের পালক তথাপি তিনি সম্পুর্ন অনাসক্ত। তিনি জড়া প্রকৃতির গুনের অতিত তথাপি তিনি সমস্ত গুনের ঈশ্বর।

 বহিঃ অন্তঃ চ ভুতানাম্‌ অচরম্‌ চরম্‌ এব চ ।

 সুক্ষ্মত্বাত্ তত্ অবিজ্ঞেয়ম দুরস্তম্‌ চ অন্তিকে চ তত্ ।।১৬

 অর্থ-সেই পরম্‌ তত্ত্ব সমস্ত ভুতের অন্তরে ও বাহিরে বর্ত্তমান। তার থেকেই সমস্ত চরাচর ,তিনি জড় ইন্দ্রিয়ের অগোচর এবং অবিজ্ঞেয়। যদিও তিনি বহুদুরে অবস্থিত তবুও তিনি সকলের অত্যন্ত নিকটে।

 অবিভক্তম্‌ ভুতেষু বিভক্তম্‌ ইব চ স্থিতম্‌ ।

 ঋুতভর্তৃ চ তত্ জ্ঞেয়ম্‌ গ্রাসিষ্ণু প্রভবিষ্ণু চ ।।১৭

 অর্থ-পরমাত্মাকে যদিও সমস্ত ভুতে বিভক্তরুপে বোদ হয়, কিন্তু তিনি অবিভক্ত। তিনি সর্বভুতের পালক,

 সংহার কর্তা ও সৃষ্টিকর্তা।

 জ্যোতিসাম্‌ অপি তত্ জ্যোতিঃ তমসঃ পরম উচ্যতে ।

 জ্ঞানম্‌ জ্ঞেয়ম্‌ জ্ঞানগম্যম্‌ হৃদি সর্বস্য বিষ্ঠিতম ।।১৮

 অর্থ-তিনি সমস্ত জ্যোতিস্কের পরম জ্যোতি; তিনি সমস্ত অন্ধকারের অতিত এবং অব্যক্তসরুপ । তিনিই জ্ঞান তিনিই জ্ঞেয় এবং তিনিই জ্ঞানগম্য তিনিই সকলের হৃদয় অবস্থিত।

 ইতি ক্ষেত্রম্‌ তথা জ্ঞানম জ্ঞেয়ম চ উত্তম্‌ সমাসতঃ ।

 মত্ ভক্তঃ এতত্ বিজ্ঞায় মদ্ভাবায় উপপদ্যতে ।।১৯

 অর্থ-সংক্ষেপে আমি তোমাকে ক্ষেত্র জ্ঞান ও জ্ঞেয় এই তিনটি তত্ত বলিলাম। আমার ভক্তরাই কেবল এই জ্ঞান লাভ করে আবার প্রেমভক্তি লাভ করে।

 প্রকৃতিম্‌ পুরুষম্‌ চ এব বিদ্ধি অনাদী উভৌ অপি ।

 বিকারান চ গুণান চ এব বিদ্ধি প্রকৃতি সম্ভবান ।।২০

 অর্থ-প্রকৃতি এবং পুরুষ উভয়েই আদি বলে জানবে। তাদের বিকার এবং গুনসমুহ প্রকৃতি থেকে উত্পন্ন বলে জানবে।

 কার্য কারন কর্তৃত্বে হেতুঃ প্রকৃতি উচ্যতে ।

 পুরুষ সুখ দুঃখানাম্‌ ভোক্তৃত্বেূ হেতুঃ উচ্যতে ।।২১

 অর্ত-প্রকৃতি সমস্ত কার্য এবং কারনের হেতু এবং জীব এই জড় জগতের সমস্ত সুখ ও দুঃখ সমুহের উপলব্ধির কারন।

 পুরুষ প্রকৃতিস্থঃ হি ভুঙক্তে প্রকৃতিজান গুনান ।

 কারনম্‌ গুনসঙ্গঁ অস্য সদসদ যোনি জন্মসু ।।২২

 অর্থ-জড়া প্রকৃ্রতিতে অবস্তিত জীব প্রকৃতির গুন সমুহ ভোগ করে। প্রকৃতির গুনের সংঙ্গ বসতই তার সত্ ও অসত্ যোনিসমহে জন্ম হয়ে।

 উপদ্রস্টা অনুমন্তা চ ভর্তা ভোক্তা মহেশ্বর ।

 পরমাত্মা ইতি চ অপি উক্ত দেহে অস্মিন পুরুষপর ।।২৩

 অর্থ-তথাপি এই শরিরে আর একজন পরম ভোক্তা রয়েছে। তিনি পরম ঈশ্বর পরম প্রভু তিনি সকলের সমস্ত কর্মের স্বাক্ষী এবং অনুমোদন কর্তা। তাকে বলা হয়ে পরমাত্মা।

 এবম বেত্তি পুরুষম প্রকৃতিম্‌ চ গুণৈঃ সহ ।

 সর্বথা বর্তমান অপি ন সঃ ভুঃয় অভিজায়তে ।২৪

 অর্থ-যিনি এই ভাবে জড়া প্রকৃতি এবং গুনের প্রভাবে অবগত হন, তিনি জড়জগতে বর্ত্তমান হয়েও পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহনকরে না। অর্থাত্ আমার প্রাসাধে আমার পরম ধাম প্রাপ্ত হন।

 ধ্যানেন আত্মনি পশ্যন্তি কেশ্চিত্ আত্মনম্‌ আত্মন ।

 অন্যে সাংখেন যোগেন কর্মযোগেন চ অপরে ।।২৫

 অর্থ-কেউ কেউ পরম আত্মাকে ধ্যানের মাধ্যমে দর্শন করেন, কেউ যোগের মাধ্যমে দর্শন, করেন এবং অন্য কেউ কর্ম যোগের মাধ্যমে দর্শন করেন।

 অন্যে তু এবম্‌ অজানন্তঃ শ্রুত্বা অন্যেভ্যঃ উপাসতে।

 তে অপি চ অতিতরন্তি এব মৃত্যুম্‌ শ্রুতি পরায়না ।।২৬

 অর্থ-অন্য কেউ কেউ আত্মাকে জানতে না পেরে আচার্য্যের উপদেশ গ্রহন করে, উপসনা করেন; তারাও সদগুরু প্রদত্ত উপদেশ নিষ্টা সহকারে সাধন করে এই মৃত্যুময় সংসার অতিক্রম করে।

 যাবত্ সংজায়তে কিঞ্চিত্ সত্ত্বম্‌ স্থাবর জঙ্গঁমম্‌।

 ক্ষেত্র ক্ষেত্রজ্ঞ সংযোগাত্ তত্ বিদ্ধি ভরতর্ষভ ।।২৭

 অর্থ-হে ভরত শ্রেষ্ঠ স্থাবর জঙ্গঁম যা কিছু আছে তা সবই ক্ষেত্র ক্ষেত্রজ্ঞের সংযোগের ফলে উপন্ন হয়েছে বলে জানবে।

 সমম সর্বেষু ভুতেষু তিষ্ঠস্তম পরমেশ্বরম্‌ ।

 বিনশ্যত্সু অবিনশ্যন্তম্‌ যঃ পশ্যতি সঃ পশ্যতি ।।২৮

 অর্থ-যিনি সর্বভুতে সমভাবে অবস্তিত পরম্‌ আত্মাকে দর্শন করেন তিনি জানেন যে জীব আত্মা এবং পরম্‌ আত্মা উভয়েই অবিনাশী, তিনিই প্রকৃতভাবে দর্শন করেন।

 সমম্‌ পশ্যন হি সর্বত্র সমবস্থিতম্‌ ঈশ্বরম।

 ন হিনস্তি আত্মনম্‌ ততঃ যাতি পরাম্‌ গতিম ।।২৯

 অর্থ-যিনি সর্বত্র সমভাবে অবস্থিত পরম্‌ আত্মাকে দশৃন করেন, তিনি কখন মনের দ্বারা অধপতন সাধন করেন না। এই ভাবে তিনি পরম গতি লাভ করেন।

 প্রকৃত্যা এব চ কর্মানি ক্রিয় মানানি সর্বস্যঃ ।

 যঃ পশ্যতি তথা আত্মনম্‌ অকর্তারম্‌ সঃ পশ্যতি ।।৩০

 অর্থ-দেহের দ্বারা কৃত সমস্ত কর্ম প্রকৃতিই সম্পাদন করেছে, শুদ্ধ আত্মাস্বরুপ আমি কিছুই করি না এই ভাবে যিনি দর্শন করেন,তিনিই যথাযথ ভাবে দর্শনকরেন।

 যদা ভুত পৃথক-ভাবম্‌ একস্থম অনুপশ্যতি।

 ততঃ এব চ বিস্থারম্‌ ব্রহ্ম সম্পাদতে তদা ।।৩১

 অর্থ-বিবেকমান পুরুষ যখন জঢ়দেহের পার্থক্য অনুসারে বিভিন্ন জীবের পার্থক্য দশৃন করেন না; তিনিই ব্রহ্মভুত অবস্থা প্রাপ্ত হন। এই ভাবে তিনি সর্বত্র চিন্ময় প্রকৃতির বিস্তার দর্শন করেন।

 অনাদিত্বাত্ নির্গুনত্বাত্ পরম্‌ আত্মা অয়ম অব্যয়ম।

 শরিরস্থ অপি কৌন্তেয় ন করোতি ন লিপ্যতে ।।৩২

 অর্থ-ব্রহ্মভুত অবস্থায় জীব দর্শন করে যে ,আত্মচিন্ময়,অনাদি,নির্গুন এবং জড়া প্রকৃতির অতিত। হে অর্জুন জড়দেহে অবস্থান করলেও আত্মা কোন কিছু করেন না এবং কোন কিছুতে লিপ্ত হন না।

 যথা সর্ব গতম সৌক্ষ্যাত্ আকাশম্‌ ন উপলিপ্যতে ।

 সর্বত্র অবস্থিতঃ দেহে তথা আত্মা ন উপলিপ্যতে ।।৩৩

 অর্থ-আকাশ যেমন সর্ব গত হয়েও সুক্ষ্মতা হেতু অন্য বস্তুতে লিপ্ত হয়ে না, তেমনি ব্রহ্ম দর্শনসম্পন্ন ব্যক্তি দেহে অবস্থিত হয়েও দেহ ধর্মে লিপ্ত হন না।

 যথা প্রকাশয়তি একঃ কৃত্স্নম্‌ লোকম্‌ ইমম্‌ রবি ।

 ক্ষেত্রম্‌ ক্ষেত্রী তথা কৃতত্স্নম্‌ প্রকাশয়তি ভারত ।।৩৪

 অর্থ-হে ভারত একসুর্য যেমন সমস্ত জগত্ কে প্রকাশ করে, ক্ষেত্রী আত্মাও সেই ভাবে সমগ্র ক্ষেত্রকে প্রকাশিত করে।

 ক্ষত্র ক্ষেত্রজ্ঞয়ো এবম্‌ অন্তরম্‌ জ্ঞান চক্ষুষা ।

 ভূত প্রকৃতি মোক্ষ্যম্‌ চ যে বিদুঃ যান্তিতে পরম ।।৩৫

 অর্থ-যারা এই ভাবে ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের পার্থক্য জানেন এবং জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার পন্থা জানেন তারা পরম্‌ গতি লাভ করেন।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগো নাম ত্রযোদশোঽধ্যাযঃ ॥১৩॥