Sunday, March 8, 2020

ভারতবর্ষে হিন্দু গণহত্যা - ৮



“তার অনুচরেরা আশেপাশের আরও১২২টি মন্দির ধ্বংস করে” (53) ঔরঙজেব নামক দানবের মন্দির ভাঙার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে ঐতিহাসিক জে, এন. চৌধুরী লিখছেন, “সমস্ত সাম্রাজ্যের অসংখ্য মন্দিরের সাথে ঔরঙজেব বেনারসের বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির (১৬৬৯ খ্রীঃ) এবং মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমির বিখ্যাত কেশব রায় মন্দির বা ডেরা কে রায় এবং পাটনের বিখ্যাত সােমনাথের মন্দির ধ্বংস করে। 
অনেক সময় অনেক মূর্খ হিন্দু মুসলমানদের পরামর্শ দেন, “তােমরা। নিষ্ঠাবান মুসলমান হও”। তাঁরা মনে করেন যে, কোন মুসলমান নিষ্ঠাবান মুসলমান হলে তার চারিত্রিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটবে এবং সে ভাই বলে হিন্দুদের জড়িয়ে ধরবে ও কোলাকুলি করবে। ইসলাম সম্পর্ক সম্পূর্ণ অজ্ঞ ঐ সব মূখ হিন্দুর জানা নেই যে, সেই মুসলমানটি নিষ্ঠাবান মুসলমান হলে তার নিজের কি ভয়ঙ্কর বিপদ উপস্থিত হবে। কোন মুসলমান নিষ্ঠাবান হলে সে সঙ্গে সঙ্গে ঔরঙজেব বা তৈমুর লঙ বা বাবরের মতই একটি হিংস্র জানােয়ারে পরিণত হবে এবং উপদেশ প্রদানকারী সেই কাফেরের মাথাটি সবার আগে ধড় থেকে আলাদা করে ফেলবে। ক্ষমতা থাকলে সে সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়াকে কাফেরমুক্ত করবে। ইসলাম বর্হিভুত সমস্ত বই পুস্তক জ্বালিয়ে দেবে। ইসলাম বহির্ভূত সমস্ত উপাসনালয় ধ্বংস করবে এবং সমস্ত পৃথিবীতে আল্লার রাজত্ব কায়েম করবে। 
সেই সময় ঔরঙজেব কাশ্মীরের হিন্দুদের মুসলমান করার জন্য খুব অত্যাচার শুরু করে এবং শিখদের সপ্তম গুরু, গুরু তেগ বাহাদুর তার প্রতিবাদ করেন। সেই কারণে ঔরঙজেব গুরু তেগ বাহাদুর ও তার তিন প্রিয় শিষ্যকে গ্রেফতার করে পশুর মত খাঁচায় বন্দি করে দিল্লী নিয়ে আসে। প্রথমে তিন শিষ্যকে ইসলাম গ্রহণ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা অস্বীকার করার ফলে প্রথমে ভাই মতিদাস নামক শিষ্যকে করাত দিয়ে কাঠ চেরাই করার মত দুভাগ করে কাটা হয়। আর এক শিষ্য ভাই দিয়ালাকে একটা বড় হাড়িতে করে জীবন্ত সিদ্ধ করা হয় এবং তৃতীয় শিষ্যর গায়ে তুলে জড়িয়ে তা তেল দিয়ে ভিজিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তথাপি গুরু তেগ 

53.A.Ghosh, ibid, 48. 
বাহাদুর ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় তার মাথা তরােয়াল দিয়ে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর আগে আর এক মুসলমান জানােয়ার সম্রাট জাহাঙ্গীর শিখদের পঞ্চম গুরু অর্জুন সিংহকে তপ্ত লােহার ওপর বসিয়ে, তপ্ত বালি দিয়ে শরীর ঢেকে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।(54) | ১৬৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ঔরঙজেব রাজা শিবাজীর পুত্র রাজা শম্ভাজী ও তার মন্ত্রী কবি কলসকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরাজিত শত্রুকে মুক্ত করে দেওয়া ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ এবং ইসলামী নিয়ম হল যত বেশি সম্ভব যন্ত্রণা দিয়ে সেই শত্রুকে হত্যা করা। শত্রু যদি কাফের হয়, তা হলে তাে কোন কথাই নেই। এক কোপে কাফেরের মাথাটা নামিয়ে দেওয়া কখনই চলতে পারে না, কারণ তাতে মৃত্যু যন্ত্রণা হবে ক্ষণস্থায়ী। তাই ইসলামী পন্থা হল, ধীরে ধীরে যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করা। এ ব্যাপারে প্রশস্ত রাস্তা হল ধীরে ধীরে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে কেটে সবার শেষে মাথা কেটে ফেলা। এই ইসলামী পদ্ধতি অনুসারে প্রথমে শম্ভাজীর চোখ দুটো উপড়ে ফেলা হয় এবং তাতে নুন এবং লেবুর রস দেওয়া হয়। অপর দিকে কবি কলসের জিভ শারাসী দিয়ে টেনে ছিড়ে ফেলা হয়। এর কয়েক দিন পর, ১৮৮৯ সালের ১১ই মার্চ, এক এক করে তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে কেটে কুকুর দিয়ে খাওয়ানাে হয়। 

| কাফেরদের এই ভাবে ধীরে ধীরে যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে মারার ব্যাপরটা স্বয়ং নবী মহম্মদ নিজে করে মুসলমানদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এক বার উকল গােত্রের ৮ জন লােক মদিনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু তার কয়েক দিন পরেই তারা একটা উটের আস্তাবলের রক্ষীকে হত্যা করে উটগুলাে নিয়ে পালায় এবং ইসলাম ত্যাগ করে। দু এক দিনের মধ্যেই মুসলমানরা সেই আটজন অপরাধীকে ধরে ফেলে ও মদিনায় নিয়ে আসে। নবী মহম্মদ তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেবার সঙ্কল্প করলেন এবং তা নিজের হাতে দেবেন স্থির করলেন। প্রথমে তিনি দুটো লােহার শিক নিলেন এবং সেগুলােকে লাল করে গরম করে ওই ৮ জনের চোখে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর তাদের হাত পা কেটে মরুভূমির তপ্ত বালির ওপর চিৎ করে শুইয়ে রাখলেন। এ 
54. P.N.0ak, ibid. 377. 

ভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারা মারা গেল। এই ঘটনা থেকে বুঝতে সুবিধা হয় যে, স্বয়ং নবী কতখানি নিষ্ঠুর ও হিংস্র ছিলেন।55) । 
আর একটি ঘটনা থেকেও নবীর হিংস্রতার পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল ৮০০ কুরাইজা ইহুদীয় গণহত্যা। এ ব্যাপারে আরও একটা ঘটনার বর্ণনা করা চলতে পারে। ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে শেষবারের মত হজ করতে যাবার সময় নবী কোরবানির জন্য ১০০ উট সঙ্গে নিয়ে যান। তাঁর ইচ্ছা ছিল সবগুলাে উটকে তিনি নিজেই জবেহ করেন। কিন্তু ৬৩টা উট জবেহ করার পর তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং জামাতা ও চাচাত ভাই আলি বাদবাকি উটগুলােকে জবেহ করে।56) আগেই বলা হয়েছে যে, নবী আতঙ্ক সৃষ্টি করে নজির ও কানুইকা গােত্রের ইহুদীদের মদিনা থেকে বিতাড়িত করেন। এর পর নজির ইহুদিরা রে আরবের খয়বর নামক স্থানে বসবাস রতে থাকে। ৬২৮ খ্রীষ্টাব্দের আগষ্ট বাসে নবী খয়বর অভিযান করেন। উদ্দেশ্য ছিল তাদের আরব ভূখন্ড থেকে উৎখাৎ করা। সেই সময় ইহুদী সদর কিনানা-র কাছ থেকে তার গুপ্তধনের হদিস বের করার জন্য তার হাত পা বেঁধে চিৎ করে শােয়ানাে হয় এবং বুকের ওপর জ্বলন্ত কাঠ কয়লা রেখে তাতে বাতাস দেওয়া হয়।(57) যাদের পথপ্রদর্শক নবী এমন হিংস্র ও নিষ্ঠুর তার চ্যালারা হিংস্র ও নিষ্ঠুর হবে তাতে আর আশ্চর্য কি? 
অনেকের মনে হতে পারে যে, এককালে মধ্যযুগে মুসলমানরা এ সব হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতা করেছে বটে। তবে আজ দিন পাল্টেছে, তাই সেই সব হিংস্রতা তারা আজ আর করবে না। তাই এ ব্যাপারে কয়েকটি ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। ১৯৪৬ সালে বাংলার প্রধান মন্ত্রী সুরাবর্দীর মেয়েকে হরেন ঘােষ নামক এক বৃদ্ধ গান শেখাতেন। ওই বছর ১৬ আগষ্ট মুসলমানরা হিন্দুদের আক্রমণ করে, যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নামে খ্যাত। সুরাবর্দীর বাড়ীতেই ওই হিন্দু হত্যার ছক তৈরী করা হয়। পরে দেখা যায় যে, সেই ছকের কিছু কিছু অংশ হিন্দুরা আগেই থেকেই টের পেয়ে গিয়েছিল। স্বভাবতই সন্দেহ গিয়ে পড়ে হরেণ বাবুর ওপর। 
55. muslim Sharif,430.4131 and 4232. 
56. Abdul Azizal Aman. Kabar Pathe (in Volumes). 1. 336. 
57. R. Brahnachari, Islaini Dharmatattava : Ebar Ghare Ferer Pala, 277-78. 

তা ছাড়া সুরাবর্দী ও তার অনুচরের দল টালার জলের ট্যাঙ্ক, হাওড়া পুল, হাওড়া রেল স্টেশন, শিয়ালদহ রেল স্টেশন ইত্যাদি বােমা দিয়ে উড়িয়ে দেবার এক ব্যাপক পরিকল্পনা করে। সুরাবর্দীর অনুপস্থিতিতে একদিন সেই পরিকল্পনার খাতাটি হরেণবাবুর হাতে পড়ে। বিষয়টার গুরুত্ব উপলব্ধি করে হরেণবাবু তৎক্ষণাৎ সেই পরিকল্পনার বিষয় প্রশাসনের উপদ কর্তাদের গােচরে আনেন। ফলে কলকাতা এক ব্যাপক ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ব্যাপারেও সুরাবর্দীর সন্দেহ গিয়ে পড়ে হরেনবাবুর ওপর। তাই সুরাবর্দীর লােকেরা তাকে ধরে নিয়ে আসে। তারপর এক এক করে তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে তিলে তিলে যন্ত্রণা দিয়ে মায়া হয়। পরে তাঁর টুকরাে টুকরাে করা মৃতদেহ একটা বাক্সে ভর্তি করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়।১৪) কার্গিল যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন পাইলট নিখোঁজ হন। কিছু দিন পরে পাকিস্তানী মিলিটারী তার মৃতদেহ ভারতীয় সৈন্যদের হাতে তুলে দেয়। বার খুলে দেখা যায় তার দেহকে প্রায় ৫০ টুকরাে করে কাটা হয়েছিল। বছর তিনেক আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর ১৮ জন জোয়ানকে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীরা ধরে নিয়ে যায়। সেই দেহগুলাে যখন তারা ফের দেয় তখন দেখা যায় যে, তাদেরও টুকরাে টুকরাে করে কেটে যন্ত্রণা দিয়ে মারা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোরাণের নির্দেশ হল, যে মুসলমান যত বেশি যন্ত্রণা দিয়ে কাফের হত্যা করবে, সে আপ্লর কাছ থেকে ততবেশি সােয়াব পুণ্য ও রহম রহমং (দয়া) পাবে। | যাই হােক, আরও কয়েকজন মুসলমান জানােয়ারের জিহাদের বীভৎসতা বর্ণনা করে এই প্রসঙ্গের ইতি করা সঙ্গত হবে। সকলেরই জানা আছে যে, ১৭৫৭ সালে বাংলার পলাশীর প্রান্তরে মুসলমান নবাব সিরাদ্দেীলার সাথে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু অনেকেরই হয়তো স্মরণ নেই যে, সেই বছরই আর এক মুসলমান জানােয়ার ভারতের মাটিতে ইসলামী জিহাদের বর্বরতার অনুষ্ঠান করেছিল। সেই সানবের নাম ছিল আহম্মদ শা আবদলি। 
সেই দানব সর্বপ্রথম মথুরা ও বৃন্দাবন লুঠ করতে যায়। জওয়াহির সিং 

58.A.Ghosh, ibid, 64, 

নামে এক জাঠ বীর মাত্র ১০,০০০ লােক নিয়ে তাকে বাধা দেয়। ১৭৫৭ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয় এবং ৯ ঘন্টা ধরে তুমুল যুদ্ধ চলে। তখন দেখা গেল দু পক্ষের ১০ থেকে ১২ হাজার সৈন্য মারা গিয়েছে এবং অসংখ্য আহত হয়েছে। এর পর মুসলমানদের বাধা দেবার কেউ থাকল না। আগের দিনের যুদ্ধে তাদের অনেক সৈন্য মারা গিয়েছিল সেই রাগে এবং আবদালির আদেশে ১লা মার্চ, ১৭৫৭ আফগান ঘােড়সওয়াররা দানবের মত মথুরা নগরীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। চার ঘন্টা ধরে চলল নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোেগ। সেই সঙ্গে মন্দির ও মন্দিরের বিগ্রহ ভাঙ্গার কাজও চলে অবাধে। গণহত্যা শেষ হলে আবদালি তার এক সেনাপতি নাজির খাঁকে সেখানে রেখে মথুরা ত্যাগ করল। সঙ্গে নিল প্রচুর পরিমানে লুণ্ঠিত মাল এবং বন্দী হিন্দু নারী ও শিশু। হিন্দুর রক্তে সেদিন যমুনার জল লাল হয়ে গিয়েছিল। দেখা গেল অনেক হিন্দু রমণী তাদের সম্মান ও সতীত্ব রক্ষা করতে কুয়ায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। | ৬ই মার্চ আবদালির আদেশে সেনাপতি জাহান খাঁ মথুরার ৭ মাইল উত্তরে বৃন্দাবনে উপস্থিত হল। সেখানেও বর্বর মুসলমানের দল ঝাঁপিয়ে পড়ল অসামরিক নিরীহ হিন্দু বৈষ্ণবদের ওপর। সেই হত্যাকাণ্ড বর্ণনা করতে একজন মুসলমান লিপিকার লিখছে, “যে দিকেই তাকাই চোখে পড়ে কাটা মাথার স্থূপ, যার মধ্য দিয়ে কোন মতে সাবধানে পা ফেলে এগুতে লাগলাম, কারণ ৰূপীকৃত মৃতদেহ থেকে রক্ত চুইয়ে পড়র ফলে পুরাে বৃন্দাবনই পিছল হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ এক জায়গায় দেখি প্রায় ২০০ শিশুর মৃতদেহ স্তুপীকৃত হয়ে পড়ে আছে, কিন্তু কারও মাথা নেই। মৃত দেহের পচা গন্ধে পুরাে বৃন্দাবন এত দূষিত হয়ে রয়েছে যে নিশ্বাস নেবার উপায় নেই, মুখ খুললে মনে হয় বমি হয়ে যাবে।”(59) | এর পর আবদালির বাহিনী উপস্থিত হল গােকুলে। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ বিদ্যায় নিপুণ চার হাজার নাগা সন্যাসী তাদের বাধা দিল। গায়ে ভস্ম মাখা ৪ হাজার নয় সন্যাসী প্রবল প্রতাপে যুদ্ধ করতে লাগল এবং প্রায় ২০০০ মুসলমানকে যমের দুয়ারে পাঠিয়ে দিল। ২০০০ সন্যাসীও মারা গেল। 
59. J. N. Sarkar, Fall of the Mughal Empire, 11, 69-70.

https://www.facebook.com/groups/590050411814603/

No comments: