Friday, March 20, 2020

শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবা ভুলে এবার সবার কথা ভাবার সময় এসেছে। সরকার আপনাকে দীঘা ও পুরী ঘুরতে যাওয়ার জন্য ছুটি দেয়নি।

"আমি জানি আপনি নর্দমা থেকে বল তুলেছেন, আমি এও জানি আপনার কত জ্বর এল আর গেল, সিজন চেঞ্জের সময় এইসব হয়। এই ভাইরাস চিন বানিয়েছেন, বোম তৈরির জন্য। চিনের বয়স্ক মানুষদের মেরে পেনশনের টাকা বাঁচাতে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে চিন সরকার। সেটাও জানি। আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা কিন্তু আমি এটাও জানি যে মন্দির, মসজিদ, গির্জা বন্ধ, কিন্তু হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা খোলা। এবার প্লিজ একটু মন দিয়ে শুনুন। 

আমরা যে ভুলটা এখন করছি ইতালি ৩ সপ্তাহ আগে সেটা করেছিল। সোমবার ইতালিতে ৩৪৯ জন মারা গিয়েছেন। মাত্র ২৪ ঘণ্টায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে  এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে ৭,০০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গোটা বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৮৫০,০০,০০,০০০ জন। এই কয়েকটা মানুষ মরলে কিচ্ছু এসে যায় না, এই ধরনের অশিক্ষা প্লিজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াবেন না। 

বুড়োদের এই রোগ হচ্ছে। আমার কিসসু হবে না। ধরে নিলাম আপনার কিছু হবে না। ভগবান করুন আপনার যেন কিছু না হয়। কিন্তু আপনার অজ্ঞতার জন্য আপনার চারপাশের মানুষগুলোর সংক্রমণ হতে পারে। আপনার হয়তো দুই দিন জ্বর হওয়ার পরে ঠিক হয়ে যাবেন। কিন্তু আপনার তিরিশ বছরের যে বন্ধুটা রিউমটয়েড আর্থারাইটিসের জন্য মিথট্রেক্সেট খায় আপনার কাছ থেকে সংক্রমণের তার ভালো মন্দ কিছু হলে, সেই দায় আপনি নেবেন? আপনার পাশের বাড়ির যে কাকিমার গত ৩০ বছর ডায়াবিটিসে ভুগছেন তাঁর কিছু হলে সেই দায় কার? 

শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবা ভুলে এবার সবার কথা ভাবার সময় এসেছে। সরকার আপনাকে দীঘা ও পুরী ঘুরতে যাওয়ার জন্য ছুটি দেয়নি। দিয়েছে বাড়িতে বসে থাকার জন্য। প্রয়োজন ছাড়া প্লিজ বাড়ি থেকে বেরোবেন না। 

সংক্রমণ ঠেকাতে যে দেশ (চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং) যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিয়েছে সেই দেশে তত তাড়াতাড়ি সংক্রমণ কমানো গিয়েছে। ভারতেও কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুগ্রহ করে মেনে চলার চেষ্টা করুন। 

গোটা বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ইতালির লম্বার্ডি প্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইউরোপের অন্যতম সেরা। ইতিমধ্যেই লম্বার্ডি প্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গুরুতর সংক্রমণে শ্বাসকষ্টের রুগীদের চিকিৎসা দিতে সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর পাওয়া যাচ্ছে না। মার্কিন মুলুকের স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা প্রহর গুনছেন। ইতিমধ্যেই নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে নতুন হাসপাতাল তৈরির দাবি জানিয়েছেন। বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলি যখন হাঁপাতে শুরু করেছে তখন ভারতের মতো দেশে এই মহামারি ছড়িয়ে পড়লে কী অবস্থা হবে ভেবে দেখুন।

একটা উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি। ইতালিতে চার সপ্তাহে ২৭,৯৮০ জন মানুষের মধ্যেই এই ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। মাত্র এক মাসে এই বিপুল পরিমাণ সংক্রমণের কারণে সেই দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তিন মাসে বা ছয় মাসে ২৭,৯৮০ জন মানুষের এই সংক্রমণ হলে সব গুরুতর রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া যেত। যেটা এখন করা যাচ্ছে না। ভারতকে যেন এই দিন দেখতে না হয় সেই জন্যই সরকারের তরফ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

সংখ্যাতত্ত্ব বলছে বর্তমান পরিস্থিতির থেকে আমরা সবাই দুই সপ্তাহ পিছিয়ে রয়েছি। এই মুহুর্তে সমাজে যে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে তার প্রভাব ১০-১৪ দিন পরে দেখা যাবে (কারণ সংক্রমণের পরে মানুষের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের পরে উপসর্গ দেখা দিতে কয়েকদিন সময় লাগে)। তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করে চলুন। কারণ দুই সপ্তাহ পরে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। 

সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই তালাবন্ধ ইতালি। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বারোলেই ২০০ ইউরোর বেশি জরিমানা করছে পুলিশ। সঙ্গে রয়েছে জেল যাওয়ার ভয়। মনে রাখবেন দুই সপ্তাহ আগেই ইতালির সোশ্যাল মিডিয়াতেও হাইড্রেন থেকে ফুটবল তুলে আনার মিম ছড়িয়েছিল। 

নিয়মিত হাত ধুতে থাকুন। যে কোন সাবান দিয়ে ধুলেই চলবে। ভিড় এড়িয়ে চলুন (সম্ভব হলে)। মজার ছলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্য ছড়ানো বন্ধ করুন। কয়েকটা সপ্তাহ একটু সতর্ক থাকুন। আপনার ভুলে যেন মহামারি প্রশ্রয় না পায় সেই দিকে নজর রাখুন। আপনি তো মরবেন না, ফলে বীরত্ব দেখানোর জন্য সারা জীবন পরে আছে।"

Satyaki দা'র ফেসবুক ওয়াল থেকে।

#CoronaVirusInIndia #Corona #Covid19

No comments: