Sunday, March 8, 2020

ভারতবর্ষে হিন্দু গণহত্যা - ৭



এ ব্যাপারে সবসময় এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, আকবর ছিল কোরানের জিহাদের তত্ত্বে উদ্বুদ্ধ অন্যান্য মুসলমান শাসকের মতই একজন ঘাতক। আহত হিন্দু সম্রাট বিক্রমাদিত হেমরাজ (যাঁকে আমাদের মেরুদণ্ডহীন ঐতিহাসিকের দল তাচ্ছিল্লভরে হিমু লেখেন)-কে আকবরের সামনে আনা হয় তখন ১২ বছরের কিশাের আকবর নিজে হাতে অবলীলাক্রমে তাঁর দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে দেয়। কারণ নিজহাতে ওই কাফেরকে খুন করলে সে গাজী হতে পারবে।(42) 
চিতাের দুর্গ অধিকার করতে আকবরকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। তাই দুর্গ দখল করার পর আকবর গণহত্যার আদেশ দিল। স্ত্রী পুরুষ, নারী শিশু, যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে রাজপুত কাটা পড়ল। কত হিন্দুকে সেদিন দানব কসাই আকবর হত্যা করেছিল? আবুল ফজলের মতে তা ৩০,০০০। আমাদের ঐতিহাসিকদের মধ্যে কারও মতে ৩০,০০০, আবার কারাে কারাে মতে ৪০,০০০। যাই হােক, অত মৃতদেহ কারও পক্ষে গুণে দেখা সম্ভব ছিল না। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের মতে আকবর সব মৃতদেহ থেকে পৈতা খুলে 

42.H. M. Elliot & J.Dowson, ibid,v65-66, 

আনার হুকুম দেয় এবং সেই সংগৃহীত পৈতার সুপ ওজন করা হয়। ওজন হয়েছিল সাড়ে চুয়াত্তর মন। কাজেই অনুমান করা চলে যে, কত লক্ষ পৈতা একত্র করলে ৭৪/, মন হতে পারে। এর পর রাজপুতরা চিতাের দুর্গ পরিত্যাগ করে এবং ফতেপুর সিক্রির মত চিতাের দুর্গও বনজঙ্গলে ছেয়ে যায় (43) 
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল, আল্লার নির্দেশকে মান্য করেই আকবর নিহত কাফেরদের শবদেহ গুণে দেখার কোন উৎসাহ দেখায়নি। আরও লক্ষ্য করার বিষয় হল, চিতাের থেকে আকবর খালিপায়ে সােজা চলে যায় ফতেপুর সিক্রিতে, গুরু সুফি ফকির সেলিম চিস্তিকে শুভ সংবাদ দেবার জন্য। এবং সেলিম চিস্তিও ব্যাপক সংখ্যক হিন্দুকে নরকে পাঠানাের সংবাদে প্রসন্ন হয়। অনেক ঐতিহাসিকের মতে আকবর ও জাহাঙ্গীরের আমলে ৬ থেকে ৭ লক্ষ হিন্দুর গণহত্যা করা হয়। 
১৫৭৬ সালে হলদিঘাটের প্রান্তরে রাণা প্রতাপ সিংহের সাথে আকবরের যখন যুদ্ধ হয়েছিল, তখনকার একটা ঘটনা এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করা সঙ্গত হবে। সেই সময় মান সিংহের রাজপুত সৈন্যরা আকবরের হয়ে যুদ্ধ করছিল। তখন আকবরের এক সেনাপতি বদায়ুনি আর এক সেনাপতি আসফ খাঁ কে বলল, কে যে কোন দিকের রাজপুত তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। তখন আসফ খাঁ একে বলল, রাজপুত মারতে থাক। যে দিকের রাজপুতই মরুক না কেন, তাতে ইসলামেরই লাভ।(44) 
এই প্রসঙ্গে আরও একটা ঘটনার উল্লেখ করা দরকার, যাতে হিন্দু পাঠকের পক্ষে মুসলমানের চরিত্র বুঝতে সুবিধা হবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশের ভারতীয় বাহিনীকে ক্রিমিয়াতে পাঠানাে হয়। সেই যুদ্ধে বৃটিশের বিপক্ষে ছিল তুরস্কের মুসলমান বাহিনী। ভারতীয় বাহিনীতে হিন্দু ও মুসলমান দুই ই ছিল এবং হিন্দু বাহিনী আগে এবং মুসলমান বাহিনী পিছনে ছিল। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল মুসলমান সৈন্যরা তুরস্কের মুসলমান সৈন্যদের আঘাত 
করে আপন বাহিনীর হিন্দু সৈন্যদের পিছন থেকে গুলি করে মেরে 

43. R.C. Majumdar, H.C. Raychaudhuri & K. Datta, An Advanced His tory of India, MacMillan & Co.(1980)443. 
44. V. A. Smith, Akbar The Great Moghal, Oxford Clarendon Press, 91 and R. C. Majumdar, ibid, BVB, VII, 334, 122. 

ফেলেছে।(45) 
এই রকম আর একটি ঘটনা বিশিষ্ট মার্কসবাদী নেতা কল্যাণ দত্ত তাঁর “আমার কমিউনিষ্ট জীবন” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। গত ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগষ্ট শুক্রবার কলকাতার মুসলমানরা হঠাৎ হিন্দুদের আক্রমণ করে হত্যা করতে থাকে, যা “গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং” নামে খ্যাত। সেই সময় খিদিরপুর ডক এর মুসলমান শ্রমিকরা খিদিরপুর ডকেরই হিন্দু শ্রমিকদের আক্রমণ করে হত্যা করতে থাকে। হিন্দু শ্রমিকরা তখন মুসলমান শ্রমিকদেয় বলে, তােমরা ও আমরা একই সংস্থায় কাজ করি। তা ছাড়া আমরা একই ইউনিয়নের সদস্য। তােমাৱাও কমরেড, আমরাও কমরেড। তাই আমাদের হত্যা করা তোমাদের উচিত হচ্ছে না। কিন্তু সেই হিন্দু শ্রমিকরা জানতাে না যে, মুসলমানদের পক্ষে শ্রমিক শ্রেণীর সমাজতন্ত্রের চাইতে আল্লার আদেশে কাফের হত্যা করে ভারতকে দার-উল-ইসলাম বানানাে আরও বেশী জরুরী (46) 
| ঔরঙ্গজেবের সময় হিন্দু ধর্মের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে তা খুবই ভয়াবহ। তার আদেশেই মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমির কেশবরায় মন্দির ও কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ভাঙ্গা হয়। দুরাত্মা ঔরঙজেব কাশী ও মথুরার মন্দির সহ হাজার হাজার হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে। কিন্তু আজকের মুসলমান তােষণকারী সেকুলার রাজনীতির উচ্ছিষ্টভােজী ঐতিহাসিকরা লিখছে যে, ঔরঙজেৰ মন্দির ধ্বংস করেছিল কিনা তা বিতর্কের বিষয়। তাই ঐতিহাসিক শ্রীরমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখছেন, “ঔরঙজেবের মন্দির ধ্বংস করার নীতি যদি বিতর্কিত বিষয় হয় তবে আজকের মানব ইতিহাসে একটিও বিষয় পাওয়া যাবে না যাকে বিতর্কের উর্ধ্বে বলা যেতে পারে” (47) 
| ওই সব ভাঙ্গা মন্দিরের বিগ্রহদের কি করা হয়েছিল? সে ব্যাপারে মুসলমান ঐতিহাসিক সাকি মুস্তাইদ খা লিখছে, “জংলী (Pagan) সেই সব মন্দির থেকে মূল্যবান রত্ন খচিত যে সব বিগ্রহ পাওয়া গেল সেগুলােকে আগ্রায় 

45. R.C.Majumda, ibid, BVB, Vil,312. 
46. The India Office Library, UK, MSS No. 2397 (as quoted by J. D. Sen, ibid, 42) 
47. Kalyan Datta, Amar Communist Jivan, p-20 (as quoted by J, D. Sen, ibid,42-43). 

আনা হল এবং সেখানে নবাব বেগম সাহেবার (অথাৎ জাহানারার) মসজিদের সিঁড়ির নীচে ফেলে রাখা হল, যাতে সত্য ধর্মে বিশ্বাসীরা (মসজিদে যাওয়া আসার সময়) সেগুলােকে চিরকাল পায়ের তলায় মাড়িয়ে যেতে পারে” (48) 
সাকি মুস্তইদ খা আরও লিখছে,“রবিউল আখির মাসের ২৪ তারিখে খান জাহান বাহাদুর কয়েক গাড়ি হিন্দু বিগ্রহ নিয়ে যােধপুর থেকে ফিরল। সেখানকার অনেক মন্দির ভেঙে ওই সব বিগ্রহ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সােনা, রুপা, পিতল, তামা বা পাথরের তৈরী এই সব বিগ্রহের বেশির। ভাগই মহামূল্য রত্নখচিত ছিল। সম্রাটের হুকুম হল, কিছু বিগ্রহ জঞ্জাল হিসাবে এখানে সেখানে ফেলে রাখতে, বাকীগুলােকে মসজিদের সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করতে, যাতে বিশ্বাসীরা মসজিদে যাতায়াতের পথে সেগুলােকে মাড়াতে পারে।”(49) কথিত আছে যে, পরে পাথরের মূর্তিগুলােকে ভেঙে খােয়া করা হয় এবং সেই খােয়া দিয়ে দিল্লীর জাম-ইমসজিদের চাতাল মােজাইক করা হয়, যাতে নামাজীরা ওই সব বিগ্রহকে মাড়িয়ে নামাজ করে আল্লার নাম রােশন করতে পারে। 
সাকি মুস্তইদ খাঁ আরও লিখছে, “১০৯০ হিজরীর ১২ই জিলহজ (৬ই জানুয়ারী, ১৬৮০ খ্রীঃ) যুবরাজ মহম্মদ আজম ও খানজাহান বাহাদুরকে উদয়পুর যাবার অনুমতি দেওয়া হল। রুহুল্লা খা ও ইক্কাতাজ খাঁকে সঙ্গে করে তারা হিন্দু মন্দির ভাঙ্গার জন্য সেখানে রওনা দিল। মন্দিরগুলাে ছিল সে যুগের বিস্ময়। কাফেররা গায়ের রক্ত জল করে বহুঅর্থব্যয়ে সেই সব মন্দির নির্মাণ করেছিল।(50) কুড়িজন রাজপুত যুবক মন্দির রক্ষার্থে প্রাণ বিসর্জন দিতে সঙ্কল্প করে। বর্বর মুসলমানদের সঙ্গে তারা পরম বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকে এবং বহু মুসলমান জানােয়ারকে হতাহত করে প্রাণ দেন। “শেষে মন্দির মুক্ত হলে অগ্রবর্তী লােকেরা (অর্থাৎ মুসলমানরা) মন্দিরের বিগ্রহ ও মন্দির ধ্বংস করল।”(51) সফর মাসের ১ তারিখে মহামান্য সম্রাট (ঔরঙজেব) চিতাের যাত্রা করলেন এবং সেখানে ৬৩টি মন্দির ভাঙ্গা হল”।(52) 
48.R.C. Majundar, ibid. BVB, VII. xii. 
49.H. M. Elliot & J.Dowson, ibid, Vii, 185. 
50. H. M, Eiliot & J.Dowson, ibid,vii,1876. 
51.H.M.Elliot  &J. Dowson, ibid, Vl,188. 
52. H. M. Elliot J. Dowson, ibid, Vii, 235.

https://www.facebook.com/groups/590050411814603/

No comments: