Sunday, March 8, 2020

ভারতবর্ষে হিন্দু গণহত্যা-৬



সেই সময় হরিদ্বারে কুম্ভ মেলা বসেছিল এবং স্বভাবতই বহু হিন্দু সেখানে স্নান করতে উপস্থিত হয়েছিলেন। ঘাতক জল্লাদ তৈমুর তার বাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হল। “আমার সৈনারা বহু হিন্দুকে হত্যা করল এবং যারা ধারে কাছে পাহাড় পর্বতে গিয়ে লুকিয়েছিল, তাদের পিছনে ধাওয়া করল। তাদের অনেকেই কাটা পড়ল। এই ভাবে সবাইকেই নরকে পাঠিয়ে দেওয়া হল এবং রক্তের ধারা পাহাড় থেকে জমিতে এবং তারপর গঙ্গায় মিশে গেল” (38) | সুলতান নাসিরুদ্দিনের সেনাপতি উলুঘ খাঁ (পরে এই জানােয়ারটা গিয়াসুদ্দিন বলবন নাম নিয়ে দিল্লীর বাদশা হয়) হিমালয়ের পাদদেশে গাড়ােয়াল অঞ্চলে যায় এবং তার সৈন্যদের হুকুম দেয় যে, কেউ একটা জ্যান্ত কাফের ধরে আনতে পারলে ২ টাকা এবং কাফেরের একটা কাটা মুণ্ড আনতে পারলে ১ টাকা বখশিস পাবে। ক্ষুধার্ত কুকুরের মত মুসলমান সৈন্যরা কাফেরের খোঁজে আশেপাশের হিন্দু বসতিগুলাের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। দীর্ঘ ৩ সপ্তাহ ধরে সেই কোতল পর্ব চলতে থাকে। হিন্দুর কাটা মুণ্ড ও কবন্ধের কূপ পাহাড়ের মত উঁচু হয়ে যায়। 
আজ ইতিহাস বইতে লেখা হচ্ছে যে ফতেপুর সিক্রির দুর্গ প্রাসাদ অট্টালিকা, সব কিছুই তৈরি করেছে বাদশা আকবর। প্রকৃত পক্ষে তা রাজা সংগ্রাম সিংহের দুর্গ ছিল। ওই দুর্গের পার্শ্ববর্তী প্রান্তরে ১৫২৭ খ্রীস্টাব্দের ১৬ই মার্চ রাজপুতদের সঙ্গে বাবরের মােগল বাহিনীর যুদ্ধ হয়, যা ইতিহাসে 

খানুয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। সকাল থেকে শুরু করে ১০ ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর যুদ্ধের ফলাফল যখন সম্পূর্ণভাবে রাজপুতদের পক্ষে, এমন সময় সংগ্রাম সিংহ গুরুতরভাবে আহত হলেন। ফলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাকে বিদায় নিতে হল। সেই কারণে রাজপুতদের মনােবল ভেঙে গেল এবং যুদ্ধের গতি বাবরের পক্ষে চলে গেল। এ ব্যাপারে বাবর তার আত্মজীবনী তুজুকই বাবরীতে লিখছে, “শত্রুকে পরাজিত করার পর আমরা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলাম এবং ব্যাপকভাবে হত্যা করতে থাকলাম।” প্রকৃত ঘটনা হল, যুদ্ধ শেষ হলে বাবর গণহত্যার (কোৎল-এ-আম) আদেশ দেয় এবং মুহম্মদি ও বাবরের অন্যান্য সেনাপতিরা ১,০০,০০০ বা তারও বেশি রাজপুত সৈন্য এবং কম করে আরও ১,০০,০০০ অসামরিক হিন্দু কেটে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেয়। এই ঘটনার পরে রাজপুতরা ফতেপুর সিক্রি পরিত্যাগ করে এবং ক্রমে তা বন জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। পরে আকবর সেই বনজঙ্গল সাফ করে তাকে আবার বাসযােগ্য করে তোেল এবং মুসলমান তােষণের যে সেকুলার রাজনীতি এই দেশে চলছে, সেই রাজনীতির বশংবদ ঐতিহাসিকরা লিখে চলেছেন যে ফতেপুর সিক্রি আকবরের তৈরি। 
| অন্যান্য মুসলমান আক্রমণকারীদের মত বাবরও ছিল একটি জানােয়ার এবং বহু হিন্দুর গণহত্যা, হিন্দু মন্দির ও হিন্দু বিগ্রহ ধ্বংস করার মত বর্বরতার বহু স্বাক্ষর সেই পাষণ্ড রেখে গিয়েছে। বাবরের আদেশে তার সেনাপতি মীর বাকি অযযাধ্যায় রামজন্মভুমি মন্দির ভেঙ্গে তাকে মসজিতে রূপান্তরিত করে। তা ছাড়া বাবর গােয়ালিয়রের নিকটবর্তী উভরের বিখ্যাত জৈন মন্দির ও বিগ্রহ ধ্বংস করে।(39) 
গুরু নানক দস্যু বাবরের সমসাময়িক ছিলেন। জানােয়ার বাবরের পৈশাচিক হিন্দু হত্যা, হিন্দু নারী ও শিশুদের প্রতি তার পশুর মত ব্যবহার ইত্যাদি আরও অনেক বর্বরতা গুরু নানক স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ১৫২১ সালে বাবর তৃতীয়বার যখন ভারতে হানা দেয়, গুরুনানক তখন লাহাের থেকে ৮০ কিমি দুরে গুজরানওয়ালা জেলার সৈয়দপুর (বর্তমান আমিনাবাদ)-এ অবস্থান করছিলেন। পাঞ্জাবের স্বাধীনচেতা গরদের তাড়া খেয়ে বাবর উত্তরে পালায়। 
। 

প্রথমে শিয়ালকোট ও পরে সৈয়দপুর দখল করে বাবর গণহত্যার আদেশ দেয়। ফলে লক্ষ লক্ষ হিন্দু কাটা পড়তে থাকে এবং লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারীও শিশু বন্দী হয়। জানােয়ার বাবরের এই সব পশুসুলভ কাজ গুরু নানকের কোমল হৃদয়কে অতিশয় ব্যথিত করে। তিনি লিখলেন, 
“হে সৃষ্টি কত ভগবান, জীবন্ত যম হিসাবে তুমি কি দানবরূপী এই বাবরকে পাঠিয়েছ ? অমানুষিক তার অত্যাচার, পৈশাচিক তার হত্যালীলা। অত্যাচারিতদের বুকফাটা আর্তনাদ ও করুণ ক্রন্দন তুমি কি শুনতে পাও না ? তাহলে তুমি কেমন দেবতা” (40) | এহেন বর্বর, নৃশংস কসাই বাবর সম্বন্ধে আমাদের তথাকথিত সেকুলার ঐতিহাসিকরা তাদের মুসলমান তােষণের নীতি অনুসরণ করে লিখে চলেছেন যে, বাবর তৎকালীন নৃপতিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল। তার চরিত্রে ৮টি বিশেষ গুণ ছিল, যেমন বিচক্ষণতা, মহৎ উচ্চাশা, যদ্ধ নিপণতা, সদক্ষ শাসন ক্ষমতা ইত্যাদি ইত্যাদি। তারও উপরে বাবর নাকি ছিল শিল্প ও সঙ্গীতানুরাগী এবং কবি। অথচ আসল কথা হল, লম্পট বাবর বাবরি নামে গজনীর এক কিশাের বালকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে এবং তাকে নিয়ে ফার্সীভাষায় কবিতা লেখে। অন্যান্য যে সব গুণের ফিরিস্তি আমাদের ঐতিহাসিকরা দিয়ে চলেছেন, জল্লাদ ও ঘাতক বাবরের মধ্যে তা থাকা কতখানি সম্ভব তা পাঠকের বিচার্য। 
অপর যে মুঘল শাসকের গুণের বর্ণনা আমাদের মেরুদণ্ডহীন, গােলামী করতে করতে ভেড়া বনে যাওয়া ঐতিহাসিকরা পাতার পর পাতা ধরে লিখে চলেছেন, সেই লম্পট ও ঘাতক জল্লাদের নাম হল আকবর। তার নামের আগে লেখা হয় মহামতি! অথাৎ সেই লম্পট ছিল নাকি সম্রাট অশােকের মতই মহান। প্রকৃত সত্য হল আকবরের হারেমে যে ৫০০০ রমণী ছিল এবং মীনা বাজার নামক নারী বিক্রীর যে হাট আকবর বসাতে আমাদের ঐতিহাসিকরা সযত্নে তা এড়িয়ে চলেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই ওই সব হারেমবাসিনীদের মধ্যে প্রায় সকলেই ছিল হিন্দু। 
এই সব মেরুদণ্ডহীন ঐতিহাসিকরা আকবরের হিন্দু রমনী বিবাহ করাকে তার মহত্বের আর একটি নিদর্শন বলে দেখাতে চেষ্টা করেন এবং বলেন এটা 

প্রমাণ করে যে আকবর ধর্মের ব্যাপারে উদার ছিলেন। কিন্তু যদি তাই হত এবে আকবর অবশ্যই হিন্দু রাজাদের সঙ্গে মুসলমান রমনীদের বিবাহ দেবার চেষ্টা করত। কিন্তু সেরকম কোন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নেই। প্রকৃত সত্য হল, যে সব হিন্দুরাজা আকবরের বশ্যতা স্বীকার করতেন, সেই বশ্যতার নিদর্শন হিসাবে আকবরকে তার পছন্দমত সেই রাজবংশের একজন কুমারীকে উপটৌকন দিতে বাধ্য থাকতেন। এবং সন্ধির চুক্তিপত্রেই তার উল্লেখ থাকত। উদাহরণস্বরূপ রণথম্ভোর দূর্গের তৎকালীন অধিকর্তা ও বুন্দি বংশের প্রধানের সঙ্গে আকবরের যে চুক্তি হয় তা উল্লেখ করা যেতে পারে। সেই চুক্তিপত্রে লেখা হয়েছিল, “....The Chief of Bundi was exempted from the custom degrading to Rajputs to send a bride to the Royal Harem." থাৎ রাজপুতদের হীনতার চিহ্ন হিসাবে রাজকীয়ঃ হারেমে একটি বধূ পাঠ'র যে রীতি আছে, তা থেকে বুন্দি প্রধানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।”(41) 

38. H. M. Elliot & J. Dowson, ibid, IV, 272. 
39. R. C. Majumdar, ibid, BVB, VII, 307, 
40. R.c.Majumdar, ibid, BVB, VIl, 306. 
41. R.C. Majumdar, ibid, BVR. VII, 116

https://www.facebook.com/groups/590050411814603/

No comments: