Tuesday, July 28, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 3 ওড়াকান্দী ঠাকুর বংশের ইতিহাস

 “এ বংশে জন্মিল যত,    শুদ্ধ শান্ত কৃষ্ণ ভক্ত”

( কবি রসরাজ)

 কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা    অপূর্ব ভাবের গোরা

শ্রী চৈতন্য জগত মাতাল।

যোগী, ন্যাসী কি সন্যাসী ব্রাহ্মণ যবন মিশি

নামে প্রেমে একাকার হ’ল।।

প্রেম হীন বিদ্যা লয়ে      কুট তর্কে মত্ত হয়ে

অভিমানে পন্ডিত সবাই।

কেহ সাজে ন্যায় রত্ন      কেহ কহে তর্ক রত্ন

উপাধির সীমা মাত্র নাই।।

দূরে গেল তর্ক জাল       সবে বলে হরিবল

ভাবের পাগল সবে হ’ল।

কি নাম আনিল গোরা     অফুরন্ত মধু পোরা

মধুময় জগত বানা’ল।।

একে ত শিক্ষার কেন্দ্র    তাহে উঠে গৌরচন্দ্র

নবদ্বীপ ধন্য ধন্য হয়।

বিভিন্ন প্রদেশ হতে        অবিরাম জনস্রোতে

নবদ্বীপ পানে সবে ধায়।।

কেহ শিক্ষা নিতে এল     কেহ প্রেমে ডুব দিল

কেহ করে চিরকাল বাস।

এই রূপ ভাবাবেগে        খৃষ্টিয় ষোড়শ ভাগে

বঙ্গ দেশে এল রাম দাস।।

মৈথিলী ব্রাহ্মণ জাতি      ছিল রাঢ়েতে বসতি

পাতি পাতি ঘুরে তীর্থ ধাম।

আগে যায় বৃন্দাবন        পতি পত্নী একমন

কাশী কাঞ্চী প্রয়াগাদি নাম।।

চন্দ্রনাথ তীর্থ শ্রেষ্ঠ         মনে ভাবি তাহা ইষ্ট

শিষ্ট সাধু এল বঙ্গ পানে।

নবগঙ্গা পুন্যতোয়া      জু’ড়াতে তাপিত কায়া

যশোহরে এল গঙ্গা স্নানে।।

নবগঙ্গা নদী তীরে        লক্ষ্মীপাশা গ্রাম পরে

অতঃপরে করিলেন বাস।

নমঃশূদ্র বীর জাতী       তথায় করে বসতি

রহিলেন তাহাদের পাশ।।

প্রতাপ আদিত্য নাম       মহারাজ পুণ্যধাম

তাঁর কীর্ত্তি গাঁথা সব শুনে।

বায়ান্ন হাজার ঢালী       নমঃশূদ্র বংশাবলী

ব্যাখা তার করে সর্ব্বজনে।।

বীর্যবান সে প্রতাপ        পেল কত মনস্তাপ

অভিশাপ বাঙ্গালীর ভালে।

শেষ হিন্দু নরপতি         ভোগ করে কি দুর্গতি

প্রাণ গেল কঠিন শৃঙ্খলে।।

তাঁর যত ছিল বীর        দুর্দ্দশায় নৃপতির

যবনের বশ্যতা মানিল।

সেনা-বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে   কৃষি আদি কর্ম্ম নিয়ে

জীবিকার উপায় করিল।।

নমঃশূদ্র দিল ঠাঁই         রামদাস পেয়ে তাই

পাশাপাশি করিলেন বাসা।

জিজ্ঞাসে তাদের ঠাঁই      কি কারণে বল ভাই

তোমাদের এ হেন দুর্দ্দশা।।

এই প্রশ্ন শুনি কানে       যত নমঃশূদ্র গণে

বলে শুন দয়াল ঠাকুর।

মনো মধ্যে যত ব্যাথা    পরেতে পরেতে গাঁথা

বলি কথা আজি করি দূর।।

পাল বংশ মহাতেজা      বঙ্গ দেশে যবে রাজা

বৌদ্ধ ধর্ম আসিল এদেশে।

বৌদ্ধ রাজ-ধর্ম মানি      বঙ্গ বাসী যত প্রাণী

বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিল শেষে।।

উদার বুদ্ধে নীতি          নাহি জানে ভেদ নীতি

জাতি জাতি ভাগ নাহি করে।

প্রেমের নিগড়ে বান্ধি      সবে করে কাঁদা কাঁদি

ভ্রাতৃভাব আনিল সংসারে।।

ব্রাহ্মণ্য ধর্মেতে পুষ্ট        ভেদ বুদ্ধি দ্বারা দুষ্ট

স্বার্থ লোভী ব্রাহ্মণের দল।

খেদে বলি একি হল       সব রসাতলে গেল

সম হল ব্রাহ্মণ চন্ডাল।।

কি উপায় করি এবে      কিছু নাহি পাই ভেবে

কোন ভাবে বৌদ্ধরে তাড়াই।

বাহিরে মিত্রতা করি      অন্তরে গরল পুরি

বৌদ্ধ অঙ্গে সে বিষ ছড়াই।।

যেমন হয়েছে কাল        কালগুণে সবে কাল

ব্রহ্মা আদি দেবতা সবাই।

ব্রহ্মা নিদ্রাগত রয়         তাই ব্রাহ্মণের ভয়

ভিত্তি ছাড়া কোথা বা দাড়াই।।

 এরূপ করিয়া যুক্তি        যত ব্রাহ্মণের শক্তি

ছল করি বৌদ্ধ সাজি রয়।

বৌদ্ধ সেজে বৌদ্ধ ভানে   অযুক্তি বিধান মানে

হীন গুণে বৌদ্ধরে দেখায়।।

যারা বুদ্ধি জীবি ছিল     প্রকাশ্যে বিদ্রোহী হ’ল

ডেকে বলে দেশবাসী ঠাঁই।

কি কারণে বৌদ্ধ মান     বৌদ্ধরে ডাকিয়া আন

বৌদ্ধ ধর্মে কোন যুক্তি নাই।।

প্রমাণ দেখিতে চাও       জাজ্জ্বল্য প্রমাণ লও

বৌদ্ধ কিবা করে দেখ তাই।

বসে দেখ একি কাণ্ড      যত বৌদ্ধ সব ভণ্ড

আচরণে বুঝহে সবাই।।

এই ভাবে যুক্তি দিয়ে      সবে নিল ভুলাইয়ে

পরে গড়ে অভিনব ধর্ম।

কিছু কিছু বৌদ্ধ নীতি     হিন্দু ধর্মে দিল গাঁথি

কেহ নাহি বুঝিল সে ধর্ম।।

অভিনব পুরাণাদি         লিখে সবে নিরবধি

“বেদ ভাষ্য” বলি তারে কহে।

সৃজিল দেবতা কত        যার যার মনোমত

সবে শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র কেহ নহে।।

তন্ত্র মন্ত্র উপাখ্যান         শাস্ত্র মধ্যে পেল স্থান

ব্রাহ্মণ সাজিল পুরোহিত।

ক্রিয়া কর্ম যজ্ঞ যাগে      সর্বত্র ব্রাহ্মণ লাগে

সর্ব্ব ঠাঁই ব্রাহ্মণ পূজিত।।

পাপ ক্ষয়, স্বর্গ লাভ       প্রজাপতি পদ্মনাভ

ব্রাহ্মণের পদে রেখে দেয়।

ব্রাহ্মণ দেবতা হল         ব্রাহ্মণে পূজিলে ভাল

অনায়াসে স্বর্গ ধামে যায়।।

ব্রাহ্মণ হইলে রুষ্ট             কিছুতেই নাহি ইষ্ট

জগদিষ্ট কৃষ্ণ নাকি বলে।

লোভ আর ভয় দিয়ে     ভাবে ব্যাখ্যা বুঝাইয়ে

সকলে টানিল নিজ দলে।।

ক্রমেতে প্রবল হ’ল        বৌদ্ধ পথ ছেড়ে দিল

রাজা কত গেল সেই দলে।

ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মের ধ্বজা    রাজ্য লোভে করে পুজা

আপনারে “ব্রহ্ম দাস” বলে।।

কত হল অত্যাচার        কিবা কব সমাচার

বৌদ্ধ কত বধ্য ভূমে যায়।

যে ছাড়ে বৌদ্ধের ধর্ম      সে হয় পরম ধন্য

রাজ দ্বারে সন্মান সে পায়।।

বঙ্গ দেশে পাল রাজা     হল যবে হীন তেজা

রাজা হল আদিশূর রায়।

ব্রাহ্মণ না পেয়ে বঙ্গে     নিদারুণ মনোভঙ্গে

কান্যকুব্জ পানে ছুটে যায়।।

পঞ্চ ব্রাহ্মণের গণ         করে বঙ্গে আগমণ

পঞ্চ শূদ্র সঙ্গে সঙ্গে এল।

বল্লাল সেনের কালে       কৌলিন্য প্রথার ছলে

পঞ্চ শূদ্র কুলীন হইল।।

ব্রাহ্মণ্য ধর্মের রাজা       শ্রী বল্লাল মহাতেজা

রাজ্য মধ্যে করিল ঘোষণা।

“বঙ্গ ভূমি পুণ্য স্থান      বৌদ্ধ হল অন্তর্দ্ধান

বৌদ্ধ ধর্ম্মে কেহ থাকিবে না”।।

এবে নমঃশূদ্র যারা        সকলি ব্রাহ্মণ তারা

বৌদ্ধ ধর্মে নিয়া ছিল দীক্ষা।

রাজার ঘোষণা শুনি       অন্তরে প্রমাদ গনি

খেদে বলে এ কোন পরীক্ষা!

জন্মিলে মরিতে হবে      এ জীবন নাহি র’বে

ধর্ম মাত্র অমর ভুবনে।

ভীত হয়ে ধর্ম ছেড়ে       বেঁচে রব এ সংসারে

কাজ নাই এ ছার জীবনে।।

থাক ধর্ম যাক জান       রাখিতে ধর্মের মান

মোরা সবে করি যে প্রতিজ্ঞা।

যা ইচ্ছা করুক রাজা      যাহা ইচ্ছা দিক সাজা

তবু নাহি মানিব এ আজ্ঞা।।

কিংবা দেশ ছেড়ে যাব    বনে কি জঙ্গলে র’ব

না থাকিব রাজধানী পাশে।

যদি মোরা রাখি ধর্ম      মোদেরে রাখিবে ধর্ম

দেখা যাক কিবা হয় শেষে।।

এই কথা করি ঠিক       যত ব্রাহ্মণ নির্ভিক

বৌদ্ধ মতে করে উপাসনা।

সে কথা জানিতে পেরে রাজা অতি ক্রোধ ভরে

বলে দেখ বৌদ্ধ কতজনা।।

যে খানে যে বৌদ্ধ পাও  কারে নাহি ক্ষমা দেও

মুণ্ডচ্ছেদ করহে সবার।

অদ্য হ’তে সপ্তদিনে      যদি আজ্ঞা নাহি মানে

এই আজ্ঞা পালিবে আমার।।

এই আজ্ঞা শুনি কানে     বৌদ্ধ ব্রাহ্মণের গণে

জনে জনে করে আলোচনা।

শুনহে সকলে ভাই        যে দেশে বিচার নাই

ক্ষণমাত্র সে দেশে র’বনা।।

এত বলি দলে দলে       দেশ ছাড়ি যায় চলে

তবু কেহ ধর্মকে না ছাড়ে।

ধর্মকে সহায় করি        সবে রাজধানী ছাড়ি

নিজে নড়ে ধর্মকে না নাড়ে।।

বল্লাল শুনিয়া কথা        বলে আর যায় কোথা

সৈন্য দিয়া সকলি নাশিব।

আস্পর্দা বেড়েছে কত     কর সব মুণ্ড পাত

বৌদ্ধ ধর্ম রসাতলে দিব।।

মন্ত্রী ছিল সু বিদ্ধান        মনে মনে ব্যাথা পান

প্রাণে তার বিষম বেদনা।

চক্ষে তার বহে নীর      মনে মনে করে স্থির

হেন কর্ম কভু ঘটিবে না।।

বিনা কাজে নরবলি       রাজা হোক মহাবলী

হেন কার্য উচিত না হয়।

রাজাকে বলিয়া দেখি   রাজা কথা রাখে নাকি

হতভাগ্য যা’তে প্রাণ পায়।।

বলে শুন মহীপাল         বৌদ্ধ ব্রাহ্মণের দল

দূরে গেছে ছেড়ে রাজধানী।

সম্বর আপন ক্রোধ        কেন লবে প্রতিশোধ

রাজ ধর্ম ইহা নহে গুণি।।

এদিকে বৌদ্ধের দল       ত্যাজি রাজধানী স্থল

গহন কান্তারে চলে যায়।

খাদ্যা খাদ্য নাহি মিলে   কেহ জলে কেহ কূলে

নানা ভাবে জীবন কাটায়।।

ডাকিয়া বল্লাল কয়        শুন মন্ত্রী মহাশয়

ঐ যারা দূরে গেল চলি।

কিবা হবে পরিচয়        কোন জাতি বলা যায়

বৌদ্ধ শব্দ যাও সবে ভুলি।।

তবে মন্ত্রী মহাশয়         না দেখি কোন উপায়

মনে ভাবে কিবা দেব নাম।

ধর্মে বৌদ্ধ সুনিশ্চয়      তবু ব্রাহ্মণ-তনয়

শুধুমাত্র জাতী তত্ত্বে বাম।।

যজ্ঞ সুত্র গলে নাই        জাতি বলে কিবা ছাই

শূদ্র ভাব এই মাত্র দেখি।

শূদ্রের নমস্য বটে         বলি আমি অকপটে

নমঃশূদ্র নাম তাই রাখি।।

বল্লাল যে দিল নাম        শুন ওহে গুনধাম

সেই নামে আছে পরিচিত।

কালে কালে বংশ বৃদ্ধি    হৃত-ধন-হৃত-ঋদ্ধি

যোগশূন্য ধর্মের সহিত।।

কুচক্রি ব্রাহ্মণ সবে        অত্যাচারে ঘোর রবে

বৌদ্ধ ধর্ম দেয় দূর করি।

নবীন হিন্দুর ধর্মে         বেদ বিধি ক্রিয়া কর্মে

বৌদ্ধ সবে ক্রমে এল ফিরি।।

লক্ষণ সেনের কালে       হিন্দু রাজ্য গেল চলে

ইসলামে রাজ্য কেড়ে লয়।

যতেক ব্রাহ্মণ ছিল       ইসলামে মানিয়া নিল

রাজ কার্যে বড় পদ পায়।।

সমাজে সাজিয়া ক্ষুদ্র      ছিল যত হীন শুদ্র

ব্রাহ্মণের রুদ্র রোষ ভয়।

উদার ইসলাম নীতি      এক প্রাণ এক জাতি

কেহ কেহ সেই ধর্ম লয়।।

ইসলামের যে রাজা       বুদ্ধিমান মহাতেজা

মনে চিন্তা করে এই সদা।

স্বধর্মী না যদি পাই        এ রাজত্বে রক্ষা নাই

পদে পদে পাব বহু বাঁধা।।

এত ভাবি মনে মনে       ছলে বলে প্রতিদিনে

কত হিন্দু যবন করিল।

উচ্চ পদ স্বার্থ দিয়ে        অর্থে মন ভুলাইয়ে

শক্তি শালী হিন্দুকে ধরিল।।

নমঃশূদ্র ছিল যারা        সে ধার ধারেনা তারা

আত্ম শক্তি বজায় রাখিল।

আত্মরক্ষা করিবারে       ক্রীড়াদি অভ্যাস করে

শক্তি শালী বীর জাতি হল।।

প্রতাপ আদিত্য যবে     হিন্দুকে জাগাবে ভেবে

রাজ্য গড়ি সৈনিক গড়ায়।

নমঃশূদ্র হতে তুলি        বায়ান্ন হাজার ঢালী

তা সবারে সৈনিক সাজায়।।

প্রতাপের পরাজয়         ইসলামে রাজ্য পায়

ভেঙ্গে গেল প্রতাপের দল।

সেই নমঃশূদ্র ক্রমে        ক্ষাত্র বীর্য পরাক্রমে

বঙ্গ ভূমে হল “লাঠিয়াল”।।

রাজধানী হ’তে দূরে      বাস করে একত্তরে

হিন্দু নীতি সব নাহি জানে।

ক্রমে কাল গত হয়        পরিচয়ে হিন্দু কয়

হিন্দু গণে হীন বলি গণে।।

শুনি কথা রামদাস        মনে করে এই আশ

নমঃশূদ্র পাশে আমি র’ব।

বঙ্গীয় ব্রাহ্মণ গণে         কহিব সরল মনে

নমঃশূদ্রে উদ্ধার করিব।।

সকলে ব্রাহ্মণ অংশ       ব্রহ্ম কুলে অবতংস

মোর মত এরাও ব্রাহ্মণ।

এরা যদি কুল পায়        ব্রাহ্মণের কিবা ভয়

ব্রহ্ম শক্তি দেখিবে ভুবন।।

এই ভাবে অতঃপরে       নবগঙ্গা নদী তীরে

লক্ষ্মীপাশা গ্রামে করে বাস।

সতী সাধ্বী পতিব্রতা      দোহে মিলি একত্রতা

প্রেমানন্দে রহে রাম দাস।।

শুদ্ধ শান্ত দিব্যকান্তি     প্রেম, দয়া, ক্ষমা, শান্তি

দীর্ঘ দেহ গৌরাঙ্গ বরণ।

পতি অনুযায়ী সতী      উচ্চশির দিব্যজ্যোতিঃ

হেমপ্রভা অঙ্গের গঠন।।

শক্তি মন্ত্রে উপাসনা       ছিল আদি আরাধনা

পরে যবে এল নদীয়ায়।

প্রেমের তরঙ্গে পড়ি       করে প্রেমে গড়াগড়ি

ভক্ত পদ ধুলি মাখে গায়।।

ত্রিশূল রাখিত সাথে       ভক্তি তত্ত্ব কথামৃতে

সভা ডাকি কহিত প্রচুর।

শাক্ত ভাবে শাক্ত যারা    বৈষ্ণবের মনোহরা

তারে ডাকে বৈষ্ণব ঠাকুর।।

ভেদহীন মনে প্রাণে        আপন বলিয়া জানে

বিশ্ববাসী যত জীবগণে।

উদার চরিত দেখি        সবে বলে থাকি থাকি

এ মানুষ ছিল কোনখানে।।

নমঃশূদ্র সঙ্গে রয়         তা’দের ডাকিয়া কয়

শোন সবে আমার বচন।

জাতি মধ্যে ভগবান     তোরা সবে ডেকে আন

গতি দিবে শ্রীমধুসূদন।।

ভগবান নাহি এলে       মুক্তি বল কোথা মিলে

মুক্তি রহে সে চরণ তলে।

যদি ডেকে আন তাঁরে     নিবে সে উদ্ধার করে

শুদ্ধ হবে কৃপা গঙ্গা জলে।।

 এই ভাবে রাম দাস       নমঃশূদ্র সঙ্গে বাস

করিলেন শ্রী লক্ষ্মী পাশায়।

নমঃশূদ্র সবে জুটি        গৃহ এক পরিপাটি

তাঁর লাগি সবে তুলি দেয়।।

আনি দেয় দ্রব্য কত       সেবা করে অবিরত

সাধক দম্পতি যাহা চায়।

এই ভাবে দিন যায়        কোলে এক পুত্র পায়

চাঁদমণি বলি ডাকে তায়।।

বঙ্গ বাসী ব্রাহ্মণেরা       সকলে জুটিয়ে তারা

বলে হায় একি অঘটন।

মোরা সবে রহি দূরে      রাম দাস কি প্রকারে

নমঃশূদ্রে করিছে পালন।।

আমরা থাকিতে সব       নমঃশূদ্রে হ’ল সব

না সহিব হেন অপমান।

কোনগুণে এত গুণী        আমারা সকলে শুনি

রামদাসে শীঘ্র ডেকে আন্।।

রামদাসে ডেকে কয়      শুন শুন মহাশয়

একি আচরণ তব হেরি।

ব্রহ্ম কূলে জন্ম লয়ে       কোন গুণে বাধ্য হয়ে

বাস কর নমঃশূদ্র বাড়ি।।

অস্পৃশ্য দরিদ্র জাতি    নাহি জানে রীতি নীতি

কি কারণে সেই সঙ্গে রহ।

তব আচরণ দেখি         আমরা বড়ই দুঃখী

এই মতি কেন তব কহ।।

শুনি কথা রামদাস        হাসিয়া মধুর হাস

বলে শুন স্বজাতি সুজন।

নাহি জানি মর্ম কথা      কহ কথা যথা তথা

এই নহে সাধুর আচরণ।।

অস্পৃশ্য দরিদ্র বলি       যারে কর গালাগালি

পরিচয় কিছু জান তার।

কেমনে চিনিবে বল       কতকাল গত হ’ল

সে দিন কি মনে পরে আর।।

তোমাদের পিতৃগণ        জ্ঞাত ছিল বিবরণ

প্রতাপ আদিত্য জ্ঞাত ছিল।

যত ব্রাহ্মণ মণ্ডলী         বায়ান্ন হাজার ঢালী

বল দেখি কোথা হতে এল।।

তৎপূর্ব বিবরণে           এই বঙ্গ সিংহাসনে

যবে ছিল পাল রাজা গণ।

বল দেখি মহাশয়          বঙ্গে কোন ধর্ম রয়

কোথা ছিল ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণ।।

যদি বল সবে ছিল        কথা ত বলিতে ভাল

তবু প্রশ্ন আসে মম মনে।

কোন জন্যে আদিশূর      কান্যকুব্জে অতদূর

ছুটে গেল ব্রাহ্মণ কারণে।।

সত্য কথা এবে বলি      শুন সবে কর্ণ খুলি

বঙ্গ বাসী আছ যতজন।

যবে পাল রাজা হয়       শুন সব মহাশয়

বৌদ্ধ ভিন্ন না ছিল ব্রাহ্মণ।।

কি কব কালের শক্তি     বেদাচার অনুরক্তি

কালে কালে আর্য ছেড়ে দিল।

সমাজের শিরোমণি       ছিল যে ব্রাহ্মণ গুণী

হীনাচারে হীন বুদ্ধি হ’ল।।

বেদাধ্যায়ী যে ব্রাহ্মণে   রাজা মানে প্রজা গণে

তাঁর যত বংশধর গণ।

মত্ত হয়ে হীন ভাবে       আচরণে কি স্বভাবে

পূর্ব স্মৃতি হৈল বিস্মরণ।।

রাজ দ্বারে চাটুকার       সেজে রহে অতঃপর

রাজ ধর্ম নিজ ধর্ম কহে।

রাজা যবে বৌদ্ধ হয়      ব্রাহ্মণ কি বাদ যায়

রাজাজ্ঞায় বৌদ্ধ সাজি রহে।।

বঙ্গ ভূমে ঘটে তাই       বৌদ্ধ ছাড়া কেহ নাই

পরে যবে হিন্দু রাজা হয়।

যতেক ব্রাহ্মণ ছিল        পুনরায় হিন্দু হ’ল

কেহ কেহ পূর্ব ভাবে রয়।।

 হিন্দু বৌদ্ধ রেষারেষি     নাহি ছিল মেশামেশি

বৌদ্ধ সহে কত অত্যাচার।

কত হীন আখ্যাপায়       ইতিহাসে সাক্ষ্য দেয়

আর বলি শুন সমাচার।।

বুদ্ধ হল অবতার            হিন্দু কৈল পূজা তাঁর

এই ছলে বৌদ্ধ হিন্দু হ’ল।

বৌদ্ধ হিন্দু ধর্মে এল       যাহারা পশ্চাতে ছিল

হীন ভাবে সমাজেতে র’ল।।

যত নমঃশূদ্র গণ             সকলি বৌদ্ধ ব্রাহ্মণ

আর যত আছে হীন ভাবে।

ক্ষত্রিয় নন্দন কেহ         কেহ বৈশ্য শূদ্র কেহ

নানা আখ্যা লভিয়াছে এবে।।

ব্রহ্ম সূত নমঃশূদ্র          তোমা হতে নহে ক্ষুদ্র

এক বংশে জন্ম ও তাদের।

কাল চক্র তালে তালে    তুমি আজ ধন্য হলে

ক্ষুদ্র কেহ কপালের ফের।।

মৈথিলী ব্রাহ্মণ আমি       ভ্রমিআছি আর্য ভূমি

জানি চিনি সব ব্রাহ্মণেরে।

বঙ্গ বাসী আছে যত      মোর এই অভিমত

সমগুণে গণি সবাকারে।।

আর মম মনে কষ্ট         হায় কিবা দুর দৃষ্ট

হীনহয়ে রহে ব্রহ্ম সূত।

আমার কর্তব্য হবে        উদ্ধার করিব সবে

সেই কার্য মোর মনঃপূত।।

শুনিয়া ব্রাহ্মণ গণ          বলে একি অঘটন

তব মনে এই ভাব নাকি।

যাহা ইচ্ছা কর তাই      কিছুই আপত্তি নাই

মোরা তবে দূরে বসে দেখি।।

ক্রমে ক্রমে দিন গেল      পুত্র তার বড় হল

যৌবনেতে করে পদার্পণ।

রামদাস ভাবে মনে      পাত্রী পাই কোন খানে

বিয়া দিব শ্রী চন্দ্রমোহন।।

বঙ্গ বাসী ব্রহ্ম কূলে      পাত্রী খুঁজে পলে পলে

বাঞ্ছা পূর্ণ নাহি হয় তাহে।

ব্যঙ্গ করি বঙ্গ বাসী বলে শুন হে সন্ন্যাসী  পুত্র

যোগ্য কন্যা হেথা নহে।।

ব্রহ্ম সূত নমঃশূদ্র          গুণেতে নহেত ক্ষুদ্র

আর নাকি বীর বংশাবলী।

দেখ গিয়ে সেই ঘরে       কমলা বিরাজ করে

পেলে পেতে পার মহা কালী।।

দুঃখ মনে নিদ্রা যায়       স্বপনে আদেশ পায়

নমঃশূদ্র ঘরে রাজ লক্ষ্মী।

সেই কন্যা দেখি পরে     চন্দ্রমোহনের তরে

বধু করে ধর্ম রেখে সাক্ষী।।

জীবনের শেষ দিনে       পুত্রে ডাকি সন্নিধানে

বলে চাঁদ হয়ো না কাতর।

রাখে কৃষ্ণ কেবা মারে মারে কৃষ্ণ রাখে কে রে

এই বাক্য মনে কর সার।।

মম হৃদাসনে বসি         বলিয়াছে কাল শশী

এই বংশে আসিবেন তিনি।

হরি হবে অবতার         সন্দেহ নাহিক আর

প্রেম গুণে বাঁধিবে অবনী।।

যাহা কভু দেখে নাই      যাহা কভু শোনে নাই

এমত আশ্চর্য হবে লীলা।

নীচ জন উচু হবে         সম ভাবে রবে সবে

সমক্ষেত্রে হবে প্রেম খেলা।।

প্রস্তুত থাকিও সবে     কে জানে আসিবে কবে

পুত্র পৌত্র রহ শুদ্ধ ভাবে।

পবিত্র রাখিবে বংশ       অধর্মে হ’য়োনা ধ্বংস

পবিত্রতা গুণে তারে পাবে।।

এত বলি মহাশয়          দেশ ছাড়ি চলি যায়

ভক্ত সবে জুটি একত্তরে।

দেহ সাথে ত্রিশূলেরে      এক সাথে ভষ্ম করে

শোকচ্ছায়া পড়ে ঘরে ঘরে।।

যে সমাধি ক্ষেত্রে তাঁরে    রেখেছিল নারী নরে

কিছুকাল পরে সেই খানে।

শ্রী কালী মন্দির ঘর       নবগঙ্গা নদী ধার

সবে মিলে গড়িল যতনে।।

চন্দ্রমোহন তারপরে       পিতৃ আজ্ঞা অনুসারে

পবিত্র চরিত্র রাখি চলে।

শুকদেব তার পুত্র         ক্রমে ক্রমে বলি সুত্র

জয় পুর গেল হরি বলে।।

আচারে নৈষ্ঠিক ভক্ত      নামে প্রেমে অনুরক্ত

শুকদেব জীবন কাটায়।

সাধনায় সুনিপুণ         অশেষ গুণের গুণ

কালিদাস নামে পুত্র পায়।।

পরম বৈষ্ণব তিনি        প্রেমরস-রত্ন খানি

তাঁর গুণে বাধ্য দেবতায়।

দেখিয়া সাধক ধন্য        বৈষ্ণব সেবার জন্য

দেবশীলা তার বাড়ী যায়।।

পিতৃ বাসস্থান ছেড়ে       পাচুনে গ্রামের ‘পরে

এল কালিদাস গুণধাম।

পাথর আসিত ঘাটে       এই কথা সবে রটে

হইল পাথর ঘাটা নাম।।

তার হ’ল তিন পুত্র        সাধু শিষ্ট সুচরিত

জেষ্ঠ্য পুত্র নাম নিধিরাম।

মধ্যম শ্রী রবি দাস        কৃষ্ণ পদে অভিলাষ

কনিষ্ঠ শ্রীজীব গুণধাম।।

নিধিরাম সর্ব্ব জেষ্ঠ্য       গুণে শ্রেষ্ঠ কর্মে শ্রেষ্ঠ

দুই পুত্র এল তার ঘরে।

তেজস্বী মুকুন্দ রাম       অপর মোচাই নাম

কনিষ্ঠ কার্তিক নাম ধরে।।

অশেষ গুণের ধাম         ঠাকুর মুকুন্দরাম

সফলা ডাঙ্গায় এল পরে।

পঞ্চ পুত্র সেই ঘরে        জন্ম নিল পরে পরে

রূপে গুণে দেশ আলো করে।।

যশোবন্ত সনাতন          প্রাণ কৃষ্ণ রামমোহন

রণ কৃষ্ণ সে পাঁচের নাম।

সর্ব জ্যেষ্ঠ যশোবন্ত        গুণে তার নাহি অন্ত

অশেষ গুণেতে গুণধাম।।

হরি চিন্তা হরি কথা       হরি সুখ হরি ব্যথা

হরি দেহ হরি মন প্রাণ।

অন্নপূর্ণা নামে সতী        পতি পদে নিষ্ঠাবতী

পতি সঙ্গে করে গুণগান।।

নন্দ যশোমতী মত        কৃষ্ণ প্রেমে সদা রত

বাৎসল্য রসেতে মগন।

যে দিকে যেখানে চায়   কৃষ্ণ কে দেখিতে পায়

কৃষ্ণ রূপে ভরেছে নয়ন।।

কৃষ্ণ ছাড়া কিছু নাই    কৃষ্ণে থাকি কৃষ্ণে খাই

কৃষ্ণ যেন রয়েছে ঘিরিয়া।

দেহ প্রাণ সঁপে দিয়ে       কৃষ্ণ ময় ভাব নিয়ে

কৃষ্ণ প্রেমে গিয়াছে মরিয়া।।

এই ভাব যেথা হয়         তথা আসে রসময়

অন্নপূর্ণা তাঁরে পেল কোলে।

সে রামদাসের বাণী       পূর্ণ করে চিন্তা মনি

অবতীর্ণ হল হরিবলে।।

অগ্রে এল কৃষ্ণ দাস       হরি হ’ল হরিদাস

পরে আসে শ্রী বৈষ্ণব দাস।

তারপরে গৌরী দাস       পরেতে স্বরূপ দাস

পঞ্চ অংশে ভুবনে প্রকাশ।।

শ্রী হরি ঠাকুর নামে       অবতীর্ণ ধরাধামে

ভক্তে ডাকে হরিচাঁদ বলে।

অনন্ত ক্ষীরোদ ছাড়ি      ওড়াকান্দী এল হরি

পাপী তাপী তরা’বে সকলে।।

কর্মভার দিতে পরে       ডেকে আনে মহেশ্বরে

ভোলা এল গুরুচাঁদ রূপে।

পিতৃশক্তি যবে পায়       হরি-গুরুচাঁদ হয়

পিতাপুত্র স্বয়ং স্বরূপে।।

এই গুরুচাঁদ লীলা          অশেষ ভাবের খেলা

এই গ্রন্থে কিছু নিরূপণ।

শ্রী গুরুচাঁদের ঘরে         চারি পুত্র জন্ম ধরে

জেষ্ঠ পুত্র শ্রী শশিভূষণ।।

মধ্যম সুধন্য নামে         মত্ত ছিল নামে প্রেমে

উপেন্দ্র সুরেন্দ্র দুই জন।

শ্রী শশিভূষণ যিনি         অশেষ গুণেতে গুণী

করেছিল চাকুরী গ্রহণ।।

সাব রেজিস্টার পদে      চাকুরী করিত সাধে

নমঃশূদ্রে শিক্ষা দান ছলে।

মনে ভাব ছিল তার       যত্নে হলে তৎপর

পদ পাবে নমঃশূদ্র দলে।।

নমঃশূদ্র জাতী মাঝে      প্রথম চাকুরী কাজে

নিয়োজিত হইলেন তিনি।

এক সঙ্গে ছিল যারা      চাকুরী পাইল তারা

ডেপুটী কুমুদ হল জানি।।

খুলনা জেলায় ঘর         রূপে অতি মনোহর

নাম তার কুমুদ মল্লিক।

বিদ্যা শিক্ষা করে পরে   ঘুরে দেশ দেশান্তরে

রাজ কার্যে নাহি হয় ঠিক।।

শেষে গেল ওড়াকান্দী     গুরুচাঁদে বলে কান্দি

বল প্রভু কি করি উপায়।

লেখাপড়া শিখিলাম        চাকুরী না পাইলাম

পড়িয়াছি বিষম লজ্জায়।।

আপনি জাতীর কর্তা      জানাই দুঃখের বার্তা

এবে কিছু করুন উপায়।

জন্মি নমঃশূদ্র কুলে       ক্ষুদ্র বলে সবে ঠেলে

মন দুঃখে প্রাণ ফেটে যায়।।

কাতর বচন শুনি            দয়ালের শিরোমণি

দয়াকরি বলিলেন তারে।

মনে নাহি কর ভয়        আছে হরি দয়াময়

দেখ হরি কি দিয়ে কি করে।।

নামেতে ডক্টর মীড        খৃষ্ট ধর্ম্মেতে নৈষ্ঠিক

অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশ বাসী।

খৃষ্ট ধর্ম প্রচারিতে         বহু বাঞ্ছা তার চিতে

ভারতে উদয় হল আসি।।

আসিয়া ফরিদপুরে        মনে মনে চিন্তা করে

কোথা পা’ব মিশনের স্থান।

শ্রী শশিভূষণ যিনি         সাহেবের ভাব জানি

সাহেবেরে করে আমন্ত্রণ।।

মীড ওড়াকান্দী আসি     বিপুল সন্মান রাশি

পাইলেন গুরুচাঁদ কাছে।

উভ উভে জানিলেন       উভ উভে মানিলেন

প্রেমে বদ্ধ হইলেন পাছে।।

গুরুচাঁদ দেখে তবে         রাজ শক্তি বিনা ভবে

ধর্ম কর্ম সকলি দুর্ব্বল।

মীড যদি চেষ্টা করে      নমঃশূদ্র জাতী তরে

দিতে পারে ত্রাণকারী ফল।।

মীডে প্রভু ডেকে কয়           শুন শুন মহাশয়

জীর্ণ শীর্ণ নমঃশূদ্র জাতি।

উচ্চ বংশে জন্ম বটে      কাল চক্রে সব ঘটে

কর্ম দোষে এ হেন দুর্গতি।।

পরম দয়াল যীশু           পরম পিতার শিশু

পতিতেরে দেয় মুক্তি পদ।

তার অনুগামী তুমি        রহ ওড়াকান্দী ভূমি

তাহা হলে পাইব আহ্লাদ।।

গুরুচাঁদ মুখে শুনি          এসব মধুর বাণী

ওড়াকান্দ মীড বাঁধে ঘর।

উদ্ধারিতে নমঃশূদ্রে       চেষ্টা করে যথাসাধ্যে

সেই কার্যে অতি তৎপর।।

কুমুদের কাছে শুনি       যতেক দুঃখের বানী

মীডে ডাকি প্রভু কহে কথা।

শুন ওগো মহাশয়         পড়েছি বিষম দায়

তুমি বিনে কে ঘুচাবে ব্যাথা।।

আজি মম জাতি মাঝে কেহ নাহি রাজ -কাজে

আমি ইহা বুঝি অকল্যাণ।

কিছু কিছু শিক্ষা পেয়ে   কত আছে দুঃখী হয়ে

রাজ কার্যে নাহি পায় স্থান।।

সাহেব কহিছে হেসে    কে কোথায় আছে বসে

বল শুনি দয়াল ঠাকুর।

আমি রাজ পুরোহিত      সকল প্রজার হিত

আমি বটে করিব প্রচুর।।

গুরুচাঁদ কহে বাণী         নৈষ্ঠেকের শিরোমণি

এই দেখ শশী ও কুমুদ।

শ্রী রাধা চরণ আছে       আমার বাড়ির কাছে

কাজ কর্মে অতি মজবুত।।

আমার বচন ধর              এদের উপায় কর

রাজকার্য দেহ সকলেরে।

এদের দুর্দ্দশা দেখে      আমি মরি মহা দুঃখে

অনুরোধ সে সবার তরে।।

শ্রী শশিভূষণ কন          শুন ওহে মতিমান

রাজ প্রতিনিধি যেবা আছে।

মোদের দুঃখের কথা   মনো মধ্যে যত ব্যাথা

সব তুমি বল তার কাছে।।

সাহেব স্বীকৃতি হল       লাট দরবারে গেল

জানাইল নমঃশূদ্র কথা।

রাজ ভক্ত বীর জাতি     সদা ধর্ম পথে মতি

জাতি মধ্যে অপূর্ব একতা।।

রাজ প্রতিনিধি শুনি       মীডের এ হেন বাণী

বলে সাধু চলি যাহ ঘরে।

তব বাঞ্ছা পূর্ণ হবে        নমঃশূদ্র কার্য পাবে

ধন্য হবে অবনী ভিতরে।।

এই সাধনার জোরে       কিছুদিন গত পরে

কুমুদ ডেপুটী পদ পায়।

তার কিছু পূর্বে শশি      রাজ কার্য মধ্যে পশি

নমঃকুল উদ্ধার করয়।।

নমঃশূদ্র জাতি তরে       সদা চিন্তা শশি করে

পাঠশালা করে নিজ দেশে।

জাতির উন্নতি লাগি       নিদ্রাহীন নিশি জাগি

কত ভাবে করে পরামিশে।

সরল উদার প্রাণ            সীমাহীন ধর্ম জ্ঞান

পিতৃ পদে ভক্তি রাখে অতি।

গুরুচাঁদ প্রাণ ভরে          বড় ভালবাসে তারে

আশীর্বাদ সদা তাঁর প্রতি।।

বিনম্র স্বভাব দেখি         করুণ কমল আঁখি

ভাতৃ গণে দেখে প্রাণ সম।

শিক্ষা চাই দীক্ষা চাই    শিক্ষা ভিন্ন গতি নাই

শিক্ষা দিব আকিঞ্চন মম।।

স্বদেশে বিদেশে থাকি    চরিত্র পবিত্র রাখি

বিদ্যাশেখে শ্রী শশি ভূষণ।

তরুণ অরুণ কান্তি          চন্দাননে ক্ষমা শান্তি

দেহ সম অঙ্গের গঠন।।

চাঁদসী নিবাসী ধন্য       নমঃশূদ্র অগ্রগন্য

প্রসন্ন কুমার দাস নামে।

প্রসিদ্ধ ডাক্তার বংশ      সবে ধন্বন্তরি অংশ

সবে ভক্ত মনসা আশ্রমে।।

তস্য কন্যা সুচরিতা       অনঙ্গ মোহিনী মাতা

শ্রী শশি ভূষনে করে দান।

একে একে পঞ্চ কন্যা     সকলে পবিত্রা ধন্যা

তার গর্ভে হন অধিষ্ঠান।।

পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা    মনে ভাবি মহা তেজা

পুত্র লাগি করে আরাধনা।

সু-পুত্র লভিতে গৃহে       নারী হতে দূরে রহে

হরি মন্ত্রে করে উপাসনা।।

দুই বর্ষ গত হয়           শুদ্ধ ভাবে দিন যায়

এক দিন প্রাতঃকালে উঠি।

প্রণমি পিতার পায়        কর জোড় করি রয়

কোন কিছু নাহি বলে ফুটি।।

 গুরুচাঁদ রসময়             পুত্র পানে চাহি কয়

বলে’ শশি না ভাবিও মনে।

পুত্র এক তব ঘরে         আসিতেছে অতঃপরে

বংশ ধন্য হবে তাঁর গুণে।।

এই আশীর্বাদ শুনি        শ্রী শশি ভূষণ গুণী

পিতৃ পদে পরে লোটাইয়া।


বলে’ পিতঃ! ভিক্ষা চাই জন্মে জন্মে স্থান পাই


তব ঘরে পুত্র রূপ নিয়া।।

সেই নিশি স্বপ্ন ঘোরে      নিদ্রিত আপন ঘরে

শ্রী শশি ভূষণ রহে একা।

যামিনির শেষ ভাগে       কেহ যেন তার আগে

হাসি হাসি দিল আসি দেখা।।

শ্রী শশি ভূষণে ডাকি      শিরে যেন হস্ত রাখি

কহিলেন আনন্দ সংবাদ।

“বিভূ পদে ভিক্ষা মাগি   রত্ন এক তোমা লাগি

আনিয়াছি অমূল্য সম্পদ।।

পুত্র রূপে তব ঘরে         শ্রী গুরু চাঁদের বরে

আসিবেন তোমার আলয়।

পবিত্র করিবে বংশ       রিপুকূল হবে ধ্বংস

সত্য ইহা জানিবে নিশ্চয়।।

বর্ষ পরে জ্যৈষ্ঠ মাসে      ভুবন মোহন বেশে

তের শত নয় সাল গণি।

শনিবার মধ্য রাত্রি        গঙ্গা স্নান পূণ্য তিথি

জন্মিলেন পুত্র মহাগুণি।।

বরীয়ান যোগ রয়         নক্ষত্রের পরিচয়

হস্তা নামে পূণ্য শীলা অতি।

দশমী তিথির কালে       দশহরা গঙ্গা জলে

সেই কালে নামিলেন ক্ষিতি।।

প্রমথরঞ্জন নাম           অশেষ গুণের ধাম

আদি ব্যারিস্টার নমঃকুলে।

আইন সভার সভ্য         হিন্দুর পরম গর্ব

প্রমথরঞ্জনে পেয়ে দলে।।

সহজ সরল প্রাণ          গুণশীলে গরীয়ান

বীর্য বান চরিত্র সুন্দর।

মতুয়া সংঘের পতি       মহাপ্রাজ্ঞ মহামতি

ছলা কলা নাহি ধারে ধার।।

মন্মথ রঞ্জন যিনি          পরে জন্ম নিল তিনি

পরম উদার তার প্রাণ।

জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সম পিতা    মনে রাখে সেই কথা

মুন্সেফ রূপে অধিষ্ঠান।।

সমপ্রাণ দুটি ভাই          ভেদাভেদ কিছু নাই

এক প্রাণ রহে দুই দেহে।

কোন কিছু মনে হলে      মনের কপাট খুলে

দুই ভাই দুই জনে কহে।।

নামেতে কপিল কৃষ্ণ      সূর্য সম তেজে উষ্ণ

প্রমথরঞ্জন পুত্র পায়।

বাসুদেব আশুদেব         রূপ যিনি কামদেব

মন্মথের দু’টী পুত্র রয়।।

শ্রী গুরু চাঁদের পায়        দীন এই ভিক্ষা চায়

ইহ সবে রাখিবে কুশলে।

সবে দীর্ঘ জীবি হোক     ধরাতলে কীর্ত্তি রোক

পবিত্র করুক নমঃকুলে।।

ঠাকুর বংশের কথা       পরম পবিত্র গাঁথা

পাপ তাপ কলুষ নাষন।

ভক্তি করে শুনে যেই     পারে যেতে বাধা নেই

এই বাক্য না হবে লঙ্ঘন।।

শ্রী গুরুচাঁদের লীলা        শ্রী গুরুচাঁদের খেলা

বুঝিবারে সাধ্য কিছু নাই।

কিবা কাজ বসে থেকে    চল সবে তাঁকে ডেকে

হরিবলে ভব পারে যাই।।

No comments: