Friday, May 20, 2022

কাপড় খুলে শরীরে দুবাটি লঙ্কাবাঁটা ঢোকানো হয়েছিল, না না নেহেরু -গান্ধী মোটেই নয়, ওনারা তো ব্রিটিশ পরিবারের অনুগত।ইনি ননীবালা দেবী।।

একজন ননীবালা দেবী ছিলেন আমাদের বাংলায়। পুরোটা পড়বেন। এই ইতিহাস আমাদের প্রজন্মের জানা উচিত। 

কাপড় খুলে শরীরে দুবাটি লঙ্কাবাঁটা ঢোকানো হয়েছিল, না না নেহেরু -গান্ধী মোটেই নয়, ওনারা তো ব্রিটিশ পরিবারের অনুগত।ইনি ননীবালা দেবী।।        

                                                           বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮৮ সালে হাওড়া জেলার বালিতে। বাবা সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মা গিরিবালা দেবী। সেই সময়ের সামাজিক রীতি মেনে ১৮৯৯ সালে মাত্র এগার বছর বয়সে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। তাঁর বয়স তখন মাত্র ষোল। এরপর তিনি তাঁর বাবার কাছেই ফিরে আসেন।

১৯১৪ সালে বেধেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেই সময় ভারতে যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা জার্মানির কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতব্যাপী একটা বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে, স্বাধীনতা আনবার রাস্তা পরিষ্কার করতে চেষ্টা করেছিলেন। বাঘা যতীন ও রাসবিহারী বসুর মিলিত চেষ্টায় দ্বিতীয় সিপাহি বিদ্রোহের (২১ফেব্রুয়ারি, ১৯১৫) পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, রাসবিহারী বসু ভারত ত্যাগ করেন। ইংরেজ সরকার ভারত-জার্মান যোগাযোগের খবর জেনে যায়। বাঘা যতীন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বালেশ্বরের যুদ্ধে শহীদ হন (১০ই সেপ্টেম্বর ১৯১৫)। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার বিপ্লবী কাজে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তবুও ইংরেজের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে পূর্ব-ভারতের পথ ধরে চীন ও আসামের মধ্য দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র আনিয়ে ভারতে বিদ্রোহ ঘটাবার জন্য বিপ্লবীরা আবার চেষ্টা করেছিলেন যাদুগোপাল মুখার্জীর নেতৃত্বে।

চারদিকে চলছে তখন আহত ব্রিটিশ-সিংহের প্রচণ্ড আক্রমণ ও নির্মম অত্যাচার। সেই অত্যাচারের ধরন ছিল- ফাঁসি, দ্বীপান্তর, পুলিসের নির্যাতনে পাগল হয়ে যাওয়া এবং চার্লস টেগার্টের তদারকে নিত্য নতুন বীভৎস অত্যাচার। মলদ্বারে রুল ঢোকানো, কমোড থেকে মলমূত্র এনে মাথায় ঢেলে দেওয়া, চোখের মণিতে সুঁচ ফোটানো, গরম লোহা হাতের তালু বা পায়ে চেপে ধরা, কয়েকদিন উপোস করিয়ে পিছনে হাতকড়া অবস্থায় ঠা ঠা রোদে বন্দীকে দাঁড় করিয়ে রেখে লাথি ও রুলের মার - এই ছিল টেগার্টের অত্যাচারের রীতি। এইরকম অসহায় বিপদভরা দিনে, সম্পর্কে ভাইয়ের ছেলে বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জীর কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেলেন বাল্যবিধবা ননীবালা দেবী।

দেশকে ভালোবেসে বিপ্লবীদের হয়ে তিনি নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিতেন ও নিপুণ দক্ষতায় সে কাজ সম্পন্ন করতেন। অনেক কাছের মানুষও টের পেত না যে তিনি বিপ্লবী দলের সক্রিয় সদস্য। তিনি বিপ্লবীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, এক জায়গার নেতাদের নির্দেশ ও নানা দরকারি খবর অন্য জায়গার বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। অস্ত্রশস্ত্র নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতেন আবার গোপনে বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছেও দিতেন।

১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে
ভারত-জার্মান যোগাযোগ এবং তার পরের পর বিভিন্ন ঘটনার খবর পেয়ে, সেই সম্পর্কে পুলিস কলকাতার ‘শ্রমজীবী সমবায়’ নামে এক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশী করতে যায়। তল্লাশীর সময় অমর চ্যাটার্জী পলাতক হন এবং এক সঙ্গী রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেপ্তার হন।

পলাতক অমর চ্যাটার্জী এবং তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে প্রায় দুই মাস আশ্রয় দিয়ে রাখলেন ননীবালা দেবী রিষড়াতে। এদিকে গ্রেপ্তারের সময় রামচন্দ্র মজুমদার একটা ‘মাউজার’ (Mauser) পিস্তল কোথায় রেখে গেছেন সে-কথা দল কে জানিয়ে যেতে পারেননি। বিপ্লবীদের  দরকার ছিল সেটির, কিন্তু কীভাবে সন্ধান জানা যাবে?
অতএব জেলে ঢুকে রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করে পিস্তলের খোঁজ আনতে চললেন  দুঃসাহসী ননীবালা দেবী।
সেদিনের সমাজে যা কেউ কল্পনা করতেও পারত না তাই করলেন তিনি। বিধবা ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে, তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেলে দেখা করতে এলেন। ১৯১৫-১৬ সালে যে যুগ ছিল তখন বাঙালী বিধবাদের পক্ষে সিঁদুর মাথায় এরকম পরের স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে পুলিসের কড়া দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে কাজ হাসিল করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। পুলিস তো নয়ই, কোনো সাধারণ মেয়েও নয়। আজকের সমাজ ও সেদিনকার সমাজ - মধ্যে আছে বিরাট সাগরের ব্যবধান। বিধবা ননীবালা সধবার সাজে সিঁদুর পরে একগলা ঘোমটা দিয়ে রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন জেলে। পুলিশের চোখে  ধুলো দিয়ে পিস্তলের সন্ধান জেনে বেড়িয়ে এলেন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে।

পুলিস অনেক পরে জানাত পারল যে, ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী নন। কিন্তু এটা জানতে পারেননি যে, তিনিই রিষড়াতে ছিলেন আশ্রয়দাত্রী।

পুলিশ নজর এড়াতে ১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চন্দননগরে আবার বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তবে রিষড়ার মতো এখানেও মেয়েরা না থাকলে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যেত না। তখন আবার এলেন ননীবালা দেবী, গৃহকর্ত্রীর বেশে। এখানে এইসময়ে আশ্রয়দানের উদ্দেশ্যে তাঁর বড়পিসিকেও এনেছিলেন বিপ্লবী ভোলানাথ চ্যাটার্জী। এই বড়পিসি ও ননীবালা দেবী দুটো আলাদা বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন পলাতক বিপ্লবীদের। পলাতক হয়ে আছেন সেখানে বিপ্লবী নেতা যাদুগোপাল মুখার্জী, অমর চ্যাটার্জী, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চ্যাটার্জী, নলিনীকান্ত কর, বিনয়ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তী। এঁদের সকলেরই মাথায় অনেক হাজার টাকার হুলিয়া ছিল।
এই নিশাচরেরা সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে কাটিয়ে দিতেন। শুধু রাতে সুবিধা মতো বেড়িয়ে পড়তেন। পুলিস এসে পড়লেই এই পলাতক বিপ্লবীরা নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যেতেন।

এইভাবে চন্দননগরের বিভিন্ন জায়গায়ে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশী ও বিপ্লবীদের নিমেষে পলাবার পর ননীবালা দেবীকে আর চন্দননগরে রাখা নিরাপদ হলো না। কারণ পুলিস তৎপর হয়ে উঠেছিল ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে। তাঁর বাবা সূর্যকান্ত ব্যানার্জীকে পুলিস বালি থানাতে নিয়ে গিয়ে দশটা থেকে পাঁচটা অবধি বসিয়ে রেখে জেরা করত - ননীবালা দেবীর কোথায় আছেন জানতে।

ননীবালা দেবী পলাতক হলেন। তাঁর এক বাল্যবন্ধুর দাদা প্রবোধ মিত্র কাজের জন্য যাচ্ছিলেন পেশোয়ার। বাল্যবন্ধু তার দাদাকে অনেক অনুনয় করে রাজী করালেন ননীবালাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। ননীবালা দেবী পলাতক অবস্থায় তাঁর সঙ্গে পেশোয়ার গেলেন। এও এক অনন্য কাজ, এক বাঙালী বিধবা অচেনা এক পুরুষের সাথে কয়েক হাজার কিমি দূরে সম্পূর্ণ অন্য এক জায়গায়ে চলে গেলেন লুকিয়ে থাকতে! প্রায় ষোলো-সতের দিন পরে পুলিস সন্ধান পেয়ে যখন ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে পেশোয়ার গেছে, তখন ননীবালা দেবীর কলেরা চলছে তিনদিন ধরে। প্রথমদিন বাড়ি ঘিরে রেখে তার পরদিনই নিয়ে গেল তাঁকে পুলিস-হাজতে স্ট্রেচারে করে। কয়েকদিন পেশোয়ার হাজতে রাখার পর একটু সুস্থ অবস্থায় তাঁকে নিয়ে আসা হয় কাশীর জেলে, তখন তিনি প্রায় সেরে উঠেছেন।

কাশীতে আসার কয়েকদিন পরে, প্রতিদিন তাঁকে জেলগেটের অফিসে এনে কাশীর ডেপুটি পুলিস-সুপারিনটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জী জেরা করত। ননীবালা দেবী সবই অস্বীকার করতেন -  বলতেন কাউকেই চেনেন না, কিছুই জানেন না। তারপর জিতেন ব্যানাজীর তুই-তুকারির অসভ্য ভাষা। ননীবালা দেবী তখনও চুপচাপ থাকতেন।
একদিন দুইজন জমাদারনী (Wardress) ননীবালা দেবীকে একটা আলাদা সেলে (cell) নিয়ে গেল। দুজনে মিলে তাকে জোর করে ধরে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর সমস্ত কাপড় খুলে নিয়ে দু-বাটি লঙ্কাবাটা ওঁর শরীরের ভেতরে দিয়ে দিতে লাগল। ননীবালা দেবী চীৎকার করে লাথি মারতে লাগলেন সমস্ত শক্তি দিয়ে। অসহ্য অসম্ভব অসহনীয় এক বীভৎস জ্বালা, যার বর্ণনা করার ভাষা নেই। এভাবেই অত্যাচার চলত, তার পর আবার তাঁকে নিয়ে আসা হত সেই জেল-গেটের অফিসে জিতেন ব্যানার্জীর কাছে। আবার জেরা। এত অত্যাচার, শরীরের ভেতরে লঙ্কার জ্বালা, তবু তাঁকে ভাঙা সম্ভব হ'ল না।
কাশীর জেলে - সেখানে মাটির নীচে একটা খুবই ছোট ‘পানিশমেন্ট সেল’ অর্থাৎ শাস্তি কুঠুরী ছিল। তাতে দরজা ছিল একটাই, কিন্তু আলো বাতাস প্রবেশ করবার জন্য কোনো জানালা বা সমান্য ঘুলঘুলিও ছিল না। জিতেন ব্যানার্জী তিন দিন প্রায় আধঘণ্টা সময় ধরে ননীবালা দেবীকে ঐ আলো-বাতাসহীন অন্ধকার সেলে তালাবন্ধ করে আটকে রাখত। কবরের মতো সেলে আধঘণ্টা পরে দেখা যেতো ননীবালা দেবীর অর্ধমৃত অবস্থা, তবু মুখ দিয়ে স্বীকারোক্তি বের করতে পারল না। তৃতীয় দিনে বন্ধ রাখল আধঘণ্টারও বেশি, প্রায় ৪৫ মিনিট। স্নায়ুর শক্তিকে চূর্ণ করে দেবার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। সেদিন তালা খুলে দেখা গেল ননীবালা দেবী পড়ে আছেন মাটিতে, জ্ঞানশূন্য।

হাল ছেড়ে দিয়ে পুলিস ননীবালা দেবীকে কাশী থেকে নিয়ে এল কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে। ১৮১৮ সালের তিন নম্বর রেগুলেশনের ধারা প্রয়োগ হল তাঁর বিরুদ্ধে, প্রথম মহিলা রাজবন্দি হিসাবে প্রেসিডেন্সি জেলে এলেন তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। জেল-কর্তৃপক্ষ, এমনকি জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটও তাঁকে অনুরোধ করে খাওয়াতে পারলেন না। ননীবালা দেবী বললেন, বাইরে গেলে খাবেন। প্রতিদিন সকাল ৯টায় নিয়ে যেত তাঁকে গোয়েন্দা-আফিসে, সেখানে আই.বি. পুলিসের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি (Goldie) তাঁকে জেরা করত।

-আপনাকে এখানেই থাকতে হবে, তাই বলুন কী করলে খাবেন?
-যা চাইব তাই করবেন?
-করব।
-আমাকে বাগবাজারে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী সারদা মা'য়ের কাছে রেখে দিন, তাহলে খাব।
গোল্ডি শয়তানি হাসি লুকিয়ে বলে-আপনি দরখাস্ত লিখে দিন।

ননীবালা দেবী তখুনি দরখাস্ত লিখে দিলেন।

গোল্ডি সেটা নিয়ে ছিড়ে দলা পাকিয়ে ছেড়া কাগজের টুকরিতে ফেলে দিল। এবারে সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ আহত বাঘের মতো লাফিয়ে উঠে ননীবালা দেবী এক চড় বসিয়ে দিলেন গোল্ডির মুখে। 
-ছিড়ে ফেলবে তো, আমায় দরখাস্ত লিখতে বলেছিলে কেন? আমাদের দেশের মানুষের কোনো মান সম্মান থাকতে নেই? দ্বিতীয় চড় মারবার আগেই অন্য সি.আই.ডি'রা তাঁকে ধরে ফেলে। - একশো বছরেরও আগে এক বাল্য বিধবা মেয়ের কি আশ্চর্য সাহস !

জেলের মধ্যে একদিন সিউড়ির দুকড়িবালা দেবীর (১৮৮৭-১৯৭০) সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সকলের কাছে তিনি 'মাসিমা' নামে পরিচিতি ছিলেন। দুকড়িবালা দেবী ছিলেন ভারতে 'অস্ত্র আইনে সাজা প্রাপ্ত প্রথম মহিলা বন্দি'। জানতে পারলেন, সিউড়িতে দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে সাতটা ‘মাউসার’  (Mauser) পিস্তল পাবার অপরাধে দুকড়িবালা দেবীর হয়েছে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড। রাখা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদী করে (মানে চোর-ডাকাত'দের সাথে একই সেলে। রাজবন্দী হলে আলাদা সেলে আলাদা ভাবে রাখা হয়)। অসম্ভব খাটাচ্ছে, ডাল ভাঙতে দিচ্ছে প্রতিদিন আধমণ। 

মতলব স্থির করে ফেললেন ননীবালা দেবী। উপবাসের ১৯ থেকে ২০ দিন চলছে তখন। আবার এলেন ম্যাজিস্ট্রেট অনুরোধ করতে।

-আপনাকে তো এখানেই থাকতে হবে। কী করলে খাবেন বলুন?
-আমার ইচ্ছামতো হবে?
-হ্যাঁ, হবে।
-তাহলে আমার রান্না করবার জন্য একজন ব্রাহ্মণ-কন্যা চাই, দুজন ঝি চাই।
-ব্রাহ্মণ-কন্যা কেউ আছেন এখানে?
-আছেন, দুকড়িবালা দেবী।
-আচ্ছা, তাই হবে।

এরপরে এলো সমস্ত নতুন বাসন-কোসন, হাঁড়িকুড়ি। ২১ দিনের পরে ভাত খেলেন সেই অসামান্য দৃঢ়চেতা বন্দিনী। সেইসাথে দুকড়িবালা দেবী'কেও বাঁচালেন পরিশ্রম থেকে।

দুই বছর এইভাবে বন্দীজীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। ১৯১৯ সালের এক দিন ননীবালা দেবীর মুক্তির আদেশ এলো।

জেল থেকে ফিরে এসে বালিতে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে তিনি ঠাই পেলেন না। প্রথমত সকলেই পুলিসকে ভয় পায়। এছাড়া বিধবা হয়েও পরস্ত্রী সাজা, পরপুরুষের সাথে একঘরে থাকা বা পেশোয়ার যাওয়া - এইসব কারনে সেই সময়ের অদ্ভুত সমাজের এক পক্ষ তাঁকে মেনে নেয়নি, মেনে নেয়নি তাঁর নিজের বাড়ীর লোকেরা। অন্যদিকে তাঁর নিজস্ব বিপ্লবী সংগঠন বা চেনাজানা সবটাই ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে শেষ হয়ে গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এই অবস্থায় তখন উত্তর কলকাতার এক বস্তিতে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়। (অন্য মতে, কোনও পূর্বপরিচিতের অনুগ্রহে একটি কুঁড়ে ভাড়া করেছিলেন হুগলিতে)। সুতো কেটে, রান্নার কাজ করে কোনমতে আধপেটা খেয়ে তাঁর দিন কাটতে থাকে। সমাজ এবং নিজের আত্মীয়-স্বজনদের ওপর রাগে, দু:খে, অপমানে তিনি সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন .. নিজেকে একপ্রকার লুকিয়ে রাখলেন .. এমনকি পরবর্তীকালের কোনও দেশনেতাদের কাছেও গেলেন না। যিনি সমাজকে উপেক্ষা করে দেশের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিলেন, তিনি কোথায় গেলেন সে ব্যাপারে কেউ জানতেও পারল না, খোঁজও করলো না।

দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় কুড়ি বছর পরে ১৯৬৭ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। না, ইতিহাস তাঁর জন্মদিন বা মৃত্যুদিনের তারিখ মনে রাখার প্রয়োজনবোধ করেনি। একটা সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, পুরনো কোনও বিপ্লবী সাথীর চেষ্টায় অথবা পরাধীন জেলের খাতায় নাম থাকায়, বেঁচে থাকা অবস্থায় পঞ্চাশের দশকে ৫০ টাকা পেনশন পেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে - যদিও তার কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কেউ মনে রাখেনি যাঁদের আত্মত্যাগের কথা তাঁদের দলেই ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী। তবে স্বদেশীদের নিয়ে তৈরি একটি বাংলা সিনেমায় (সিনেমার নাম 'বিয়াল্লিশ') তাঁকে নিয়ে কিছু দৃশ্য ছিল, এইটুকুই। শুধু দেশের জন্য বিধবা হয়েও সধবা সেজেছিলেন, খুবই ছোট কুঠুরী ‘পানিশমেন্ট সেলে’ শ্বাস নিতে না পেরে কতবার অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন। সামান্য একটা গোটা কাঁচালঙ্কা শুধু খেতে বললেই আমরা ভয় পাবো। এইরকম দু-বাটি লঙ্কাবাটা তাঁর শরীরের গোপন জায়গায়ে ভেতরে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কি অপরিশীম যন্ত্রণা তিনি সহ্য করেছিলেন - আমরা সুস্থ অবস্থায় কেউই তা অনুভব করতে পরবো না। উনিশ শতকের গোড়ার বিধবা মহিলা হওয়া সত্বেও নিজ চেষ্টায় তিনি সামান্য লেখাপড়া শিখেছিলেন। নিজে সুতো কেটে পৈতে তৈরি করে তা বিক্রি করে নিজের খরচ চালাতেন। তবু সেই সময়ের বাংলার কোথাও তিনি সম্মানের সাথে থাকার জায়গা পেলেন না। স্বাধীন ভারতেই তাঁকে অনাহারে কাটাতে হোলো। একবুক অভিমান নিয়ে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন - যা তাঁর মৃত্যুর পরেও শেষ হয়নি।
তাঁর কিছু মহিলা সহযোদ্ধাদের টুকরো টুকরো নানা লেখা থেকে যেটুকু জানা গেছে তাঁর বিষয়ে সেটুকু পুঁজি করেই তাঁকে এই শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন।

সংগৃহিত।
#ধর্মীয়ইতিহাস

Tuesday, May 10, 2022

॥ শ্রাদ্ধবাড়ির খাওয়া দাওয়া ।।

যিনি  মারা  গেলেন  তিনি  যা যা ভালোবাসতেন সে সমস্ত  ষোড়শোপচারে রান্না  হয় । সকলেই  কব্জি ডুবিয়ে  খান । "দাদা  আর দুটো ইলিশ পাতুরি  দিন  তো  ! অপূর্ব  হয়েছে । বহু দিন  পর এমন রান্না  খেলাম  অথবা  আহা ,সন্দেশটা অসাধারণ  !! কোন  দোকানের  ?  দাদা  fish fry  টা repeat করতে  বলুন না " ইত্যাদি  ইত্যাদি ।   আমার  তো মনে  হয়  বৃদ্ধ কেউ  হলেও  তাঁর  সন্তান  ,স্বামী  তাঁদের  কি আনন্দ  করার  মতো  মানসিকতা  থাকে ? অনেক দিন  অসুস্থ  থাকলে  অথবা  এমন কোনও  অসুখ হলে  যেটি মানুষটিকে  মৃত্যুর  দিকেই  টেনে  নিয়ে  যাবে  , আমাদের মনে  হয়  এভাবে  বাঁচার চেয়ে  মৃত্যু  শ্রেয় । মুখে  বললে ও প্রিয়জনের  বিয়োগ  ব্যথা  একটুও  কি বাজেনা সদ্য সদ্য  ?  সময়  সব কিছু  ভোলায় ঠিক  । ঐ তেরো  চোদ্দ  দিনের  মাথায়  সেটা কি নিঃশ্বেস  হয়ে যায়  ?  প্রশ্নগুলো  মাথায়  ঘোরে ।

মহাভারতে, অনুশাসন পর্বে লেখা আছে, মৃত্যুভোজ কর্মচঞ্চলতা কমিয়ে প্রৌঢ়ত্ব প্রদান করে।

যে পরিবার মৃত্যু নামক বিপদের সম্মুখীন, সেই প্রবল বিপত্তির সময় সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ান, টাকা পয়সা থেকে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাদের সবরকম সাহায্য করুন কিন্তু এগারো কি তেরো দিনে শ্রাদ্ধবাড়ির খাবার পরিত্যাগ করুন। বহিষ্কার করুন এই কুরীতির।

মহাভারতের যুদ্ধ আসন্ন। শ্রীকৃষ্ণ দুর্যোধনের প্রাসাদে গিয়ে যুদ্ধ না করার অনুরোধ করেন ও সন্ধি প্রস্তাব রাখেন,  কিন্তু দুর্যোধন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। শ্রীকৃষ্ণ মনে কষ্ট পান এবং তিনি সেখান থেকে ফেরত যাবার জন্যে উদ্যত হন। সেই সময় দুর্যোধন ওনাকে খাবার খেয়ে যেতে অনুগ্রহ করে। তাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেন,

"সম্প্রীতি ভোজ্যানি আপদা ভোজ্যানি বা পুনৈঃ", অর্থাৎ,

"যে খাওয়াচ্ছে আর যে খাচ্ছে, দুজনেরই যদি মন প্রসন্ন হয়, তাহলেই খাবার খাওয়া উচিত।

কিন্তু যিনি খাওয়াচ্ছেন আর যিনি খাচ্ছেন, তাদের মনে যদি ব্যথা বেদনা থাকে, সেই পরিস্থিতিতে কক্ষনো ভোজন গ্রহণ করা উচিত নয়।"

হিন্দু ধর্মে ১৬ টি সংস্কার তৈরি করা হয়েছে। প্রথম সংস্কার গর্ভধারণ এবং ষষ্টদশ অন্ত্যেষ্টি। সপ্তদশ সংস্কার তৈরি করাই হয় নি, তাহলে শ্রাদ্ধের সংস্কার এল কোথা থেকে.??

কোন ধর্মগ্রন্থে শ্রাদ্ধের বিধান নেই বলেই জানি। কিন্তু আমাদের সমাজে ঈশ্বরই একমাত্র ভরসা।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, পন্ডিত শ্রীরাম শর্মা, স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদি মহান পুরুষেরা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জবরদস্ত বিরোধিতা করেছেন আজীবন।

যে খাবার মানুষ কান্নাভেজা মনে তৈরি করায়, যে খাবার অশ্রুজলে সিক্ত সেই খাবার নিকৃষ্ট খাবারের পর্যায় পড়ে।

শ্রাদ্ধ ভোজনের এই কুসংস্কার কে সম্পূর্ণ ভাবে বহিষ্কার করা উচিত আর এক সঠিক পথপ্রদর্শকের ভুমিকায় সমাজের সামনে এগিয়ে আসা উচিত।

জন্তু জানোয়ার থেকেও আমরা শিক্ষালাভ করতে পারি, যারা স্বজন মারা যেতে সেদিন খাবার না খেয়ে শোক ব্যক্ত করে।

চুরাশী লক্ষ যোনিতে মানব যোনি শ্রেষ্ঠ কিন্তু আমরাই এক যুবকের মৃত্যুর তেরো দিন পূর্ণ হবার পরে পাত সাজিয়ে লুচি ছোলার ডাল আর রকমারি খাদ্য আত্মীয় বন্ধুদের খাওয়াতে তৎপর হয়ে উঠি আর শোক ব্যক্ত করার ভান করি মাত্র। এর চেয়ে বড় নিন্দনীয় কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।

যদি আপনি এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন তাহলে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কারুর মৃত্যুর পরে তার শ্রাদ্ধ বাড়িতে ভোজন গ্রহণ করবেন না আর শ্রাদ্ধর এই প্রথাকে রোখবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

আমাদের প্রয়াসেই এই কুপ্রথা ধীরে ধীরে কিন্তু একদিন নিশ্চয় সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত হতে পারে।

শ্রাদ্ধবাড়ি মানব সমাজের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এক অভিশাপ..!!

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

বিঃ দ্রঃ - কারুর মনে আঘাত দেবার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি প্রথমেই তার সম্মুখ ক্ষমাপ্রার্থী

Saturday, May 7, 2022

এতজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অন্যায়টা স্বীকার করার ক্ষমতা রাখে ছেলেটা। আবার ঋণমুক্ত হবারও সাহস আছে।

😎
👇
আজ একটা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হলাম। এটিএমের সামনে লম্বা লাইন। দাঁড়িয়ে আছি অন্তত ছয়-সাতজনের পিছনে। আমার পিছনে আরও ছয়জন। একটা ছেলে দেখলাম সবাইকে রিকোয়েস্ট করছে, প্লিজ আমায় আগে ছেড়ে দিন একটু, খুব দরকার আছে। সামনে একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তাকেও গিয়ে অনুরোধ করছে বছর চব্বিশ-পঁচিশের ছেলেটা। বয়স্ক মানুষটি বললেন, তোমরা যদি আমাদের অনুরোধ কর কেমন লাগে দেখতে? আর এই লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছে সকলেরই তো আগে প্রয়োজন। 
ছেলেটি বলল, আমার দরকারটা একটু অন্যরকম। এখনই নিয়ে যাবে মন্মথ জেঠুকে। আমার শোধ করা হবে না আর। 
ওর কথা শেষ হবার আগেই শবযাত্রীর দল বলো হরি হরি বোল করতে করতে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটা চেঁচিয়ে বলল, একটু দাঁড়াও মৃন্ময়দা দুমিনিট। উনি সম্ভবত মন্মথবাবুর ছেলে। 
ছেলেটা হাতজোড় করে বলল, প্লিজ আমায় একটু ছেড়ে দিন। আসলে জেঠু আমার বিপদের সময় ধার দিয়েছিলেন আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। তারপর টাকাটা শোধ দিতে হবে বলে জেঠুকে দেখলেই আমি অন্য রাস্তা ধরে নিতাম। জেঠু কোনোদিন চাননি। 
কাল মধ্যরাতে জেঠুর স্ট্রোক হয়, মারা যান। আমি টাকাটা শোধ দিয়ে দিতে চাই। নাহলে নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে যাব। 
ছেলেটাকে সবাই ছেড়ে দিল। সে টাকা তুলে নিয়েই পাশের চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা শবযাত্রীর দলটার কাছে গেল। মৃতদেহের পায়ের কাছে টাকাটা রেখে কান ধরে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইল। অপলক তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটাকে। এতজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অন্যায়টা স্বীকার করার ক্ষমতা রাখে ছেলেটা। আবার ঋণমুক্ত হবারও সাহস আছে। আমার বাবা আকস্মিকভাবে মারা যাওয়ার পরে নিজের লোকেদের মুহূর্তে পাল্টে যেতে দেখেছিলাম। ঋণীরা যেন সুযোগ পেয়েছিল ঋণ শোধ না করার। অস্বীকার করতে পারলে যেখানে মানুষ আর কিছু চায় না সেখানে এই বয়সের একটা ছেলের ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চাওয়া দেখে মনে হল, এইজন্যই তো বেঁচে থাকা। নোংরা ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ মুক্তো পাবার লোভেই তো বাঁচতে ইচ্ছে করে। 
© এক চিলতে রোদ্দুর
✍️- অর্পিতা সরকার
(সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা)

Monday, May 2, 2022

লেখার নামটা পড়ে অনেক পাঠকেরই নাক চোখ একটু কুঁচকে যেতে পারে কেউবা পাশ কাটাতে পারেন।

* হিজড়া *
✍দেবাশীষ রায় চৌধুরী
(পুনঃপ্রকাশিত)

লেখার নামটা পড়ে অনেক পাঠকেরই নাক চোখ একটু  কুঁচকে যেতে পারে কেউবা পাশ কাটাতে পারেন।
আমি কিন্তু  সেদিন পাশ কাটাতে পারিনি।

কলকাতার দিকে একটা বিশেষ কাজ ছিল। বাস পেয়ে গেলাম। এমনকি জানলার ধারে একটা বসার সিটও পেয়ে গেলাম।
অনেকটা পথ। ঠান্ডা গরম হাওয়ায় একটু  তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ভাত ঘুমের মৌতাত নিচ্ছি।
এমন সময় তেনারা বাসে উঠলেন।
জনা তিনেক হবে। না, যাত্রী হিসেবে নয়। যাত্রীদের থেকে কিছু  পয়সা তুলতে।
হঠাৎ চড়াৎ চড়াৎ হাততালির এবং কড়কড়ে গলার আওয়াজে রেশমি ঘুমটা চটকে যেতে একটু  বিরক্তই হয়েছিলাম।

যারা মুখ ঘুরিয়ে বসেছিল বা ঘুমচ্ছিল প্রত্যেকেই ওদের আঙ্গুলের ঠ্যালায় দু এক টাকা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দিচ্ছিল। অভ্যাসগত ভাবে আমিও দশটা টাকা দিলাম। খুচরো টাকা না থাকায় একটু  বেশিই গেল। পরিবর্তে ভালোবেসে মাথায় হাতও বুলিয়ে কি আশীর্বাদ করল কে জানে।

ওদেরই একজনের - একজন যাত্রীর দিকে চোখ পড়তেই কেমন যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেল। সেই যাত্রীর চোখের দৃষ্টির রেখা টেনে দেখা গেল এক ভদ্রমহিলার আনাবৃত উন্মুক্ত পিঠের ওপর স্থির দৃষ্টি আটকে আছে যেখানে দুটি সরল রেখার মত অসতর্ক অন্তর্বাসীয় ইলাস্টিক বিদ্যমান।

দু পা এগিয়ে গিয়ে মহিলার আঁচল টা নিয়ে সযত্নে ঢেকে দিল নারীর অসতর্ক লজ্জা অনেক সন্মান আর ভালোবাসা দিয়ে।
ওদের আর একজন জানতে চাইছিল
- কি হয়েছে র‍্যা ।
- মানুষের সাথে বাসে কিছু  রাক্ষসও ওঠে বে,  চোখ দিয়ে  চাটছিলো শ্শালা।

চাবুক টা যেন সপাং করে আমাদের মুখের ওপর আছড়ে পড়ল।
আমিও ব্যপারটা আগেই খেয়াল করেছিলাম কিন্তু প্রতিবাদ তো করতে পারিনি।

এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বাসের গতির সাথে টাল খেয়ে পড়ছিলেন। সামনের সিটে একটা  অল্প বয়সের ছেলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে না দেখার ভান করে বসেছিল।

- অ ভালোমানুষের ছেলে। বুড়ো বাপটা সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাচ্ছিস না।
নিজের বাপ হলে কি কত্তিস বে।
নিমেষে বৃদ্ধ বসলেন ছেলেটির আসনে।
আমরা পারিনি।

ওরা নেমে যাওয়ার আগেই একটা  বাচ্চা ছেলে বাসে উঠেই কাঁদো কাঁদো ভাবে পয়সা চাইতে লাগল।

- বাবু আমি আর মা দু দিন কিছু  খাইনি।

খুবই মায়া হচ্ছিল। দু এক টাকা দিতেও যাচ্ছিলাম। কিন্তু  তখনই ওদের মধ্যে একজন খেঁকিয়ে উঠে বলল।

- কি বে ঢপ দিছ্ছিস্।
- না গো সত্যি বলছি। দেখবে চলো। বাবাটা দশদিন আগে মরে গেছে। আমি ফোর এ পড়তাম। ছেড়ে দিয়েছি।
- এই লে টাকা। চাল লিয়ে বাড়ি যা শ্শালা। মা বেটায় খেয়ে লিবি। কি বে খেতে পেলে পড়বি।
- হ্যাঁ - এ্যাঁ - এ্যাঁ
- তুই তো আমাদের থেকে বড় ভিখিরি বে। চল বে তোর বাড়ি দেখে আসি। এ্যাই চল্ল্ আজ ইনকাম ইস্টপ্। লে, আর এট্টা পুষ্যি বাড়লো।

ওরা সবাই নেমে গেল।
বাস হাওয়ায় উড়ে হু হু করে চলছে।
আমি দেখলাম ওরা তিন জন বাচ্চাটার হাত ধরে বাসের অনেক আগে আগে হেঁটে চলেছে।
আমাদের তীব্র গতিতে চলা বাস ওদেরকে ছূঁতেও পারছে না।
কোনোদিনও পারবে না।
ওরা যে অনেক এগিয়ে।🍀

Tuesday, April 26, 2022

বাবা, কিছু আনোনি মেলা থেকে?

দুটোই
=======
বাবা, কিছু আনোনি মেলা থেকে?

  ছোটো ছেলেটা স্লেট থেকে মাথা তুলে জিজ্ঞাসা করল। 

   বাবা উত্তর দিল না। ছেলেটাও আর প্রশ্ন করল না। খারাপ মনটা নিয়ে ছাদে উঠে গেল। সে যখন বড় হবে, মেলা থেকে সবার জন্য জিনিস আনবে। মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য লুঙ্গি, দিদির জন্য টিপের পাতা, তার জন্য ব্যাটারি দেওয়া খেলনা। 

   অনেক দিন গেল। ছেলেটা এখন ভালো চাকরি করে। গ্রামে আসার সময় পায় না। বছরের পর বছর মেলা হয়ে যায়। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে, সেও থাকে বাইরে। বাবা আর মা গ্রামেই থাকে। তারা আসবে না শহরে। 

    এক বছর সে এলো গ্রামে। তখন মেলা বসেছে। সে গেল মেলায়। কিন্তু কেনার মত কিচ্ছু পেলো না। সব ভীষণ সস্তার জিনিস। 

  বাড়ি ফিরল। বাবা জিজ্ঞাসা করল, কিরে কেমন দেখলি মেলা? একইরকম আছে না?

 ছেলে বলল, হ্যাঁ গো। 

  বাবা জিজ্ঞাসা করল, কিছু কিনলি? 

ছেলে বলল, না গো.. কেনার মত কিস্যু নেই....

ছেলেটা ছাদে গেল। রাতের তারারা বাতাসের কানে কানে বলল শাড়ির কথা, লুঙ্গির কথা, টিপের পাতার কথা...ব্যাটারি দেওয়া গাড়ির কথা...ছেলেটা বুঝল না কিছু...ভাবল এলোমেলো বাতাস খালি...

  বাবা উঠে এলো ছাদে। হাতে জিলিপির ঠোঙা। বলল, বাবু, এই নে মেলার থেকে আনা...

  ছেলে তাকালো। রাস্তার আলোয় অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, একবার ভাবল হাইজিনিক হবে কি? পেট ছাড়ে যদি! আবার ভাবল, যা হবে দেখা যাবে। 

    বাবা বলল, বাবু, জিলিপির দামটা আমি দিইনি, মানে নেয়নি...

  ছেলেটা আশ্চর্য হয়ে বলল, কেন? 

  বাবা বলল, আরে ভুতোন কাকার দোকানের রে...সে বলল, বাবু আমায় চিনল না...তোর জন্য পাঠালো...

   ছেলে বেশ কিছুক্ষণ মনে করার চেষ্টা করল। পারল না। ঘড়ি দেখল। সবে সাড়ে আটটা। সাইকেলটা বার করে ছুট লাগালো মেলায়। 

   খোঁচা খোঁচা দাড়ি। তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। হাসিটা চেনা। হাসিটা ম্যাজিকের মত সব বদলে দিল। মেলায় সব কিছু বদলে গেল। মেলা জুড়ে যেন শুধু এক পর্দা সরানো হাসি। সব হঠাৎ ভীষণ দামী যেন, হাজার হাজার টাকা থাকলেও কেনা যায় না। 

 ছেলেটা শাড়ি কিনল, লুঙ্গি কিনল, টিপের পাতা কিনল, ব্যাটারি দেওয়া গাড়ি কিনল....

   মেলা থেকে ফেরার আগে ভুতোন কাকাকে একটা ফতুয়া দিল। ভুতোন কাকার ছলছল চোখে বলল, তুই চিনেছিস এই আমার অনেক রে...

   ছেলেটা বলল, না গো, তার চাইতেও বড় আমি নিজেকে চিনেছি.. 

  ভুতোন কাকা কানে কম শোনে। তাছাড়া জোরে জোরে মাইকও বাজছে। ভুতোন কাকা বলল, কি বললি রে? জিলিপি নিবি না গজা?

   ছেলেটা ঝাপসা চোখে বলল, দুটোই....

সংগৃহীত।

অনেক লোক চিকিৎসার জন্য বোম্বেতে আসেন। এই দরকারী তথ্য হতে পারে. দয়া করে এটি সংরক্ষণ করুন:

*প্রচার করুন*



*ডিমার্ট এর প্রবর্তক রাধাকিশান দামানি,* মেট্রো সিনেমা, কুইন্স রোড, মুম্বাই এর কাছে *গোপাল ম্যানশন*-এ একটি সুবিধা তৈরি করেছেন যেখানে মুম্বাইতে চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিবারের থাকার জন্য 53টি কক্ষ রয়েছে।  গতকাল এর উদ্বোধন করা হয়। এটা খুব সুন্দরভাবে করা হয়েছে। শুভাকাঙ্খীদের জন্য এই ধরনের কোনো প্রকৃত প্রয়োজনের জন্য উল্লেখ করতে পারেন।

www.gopalmansion.com

*ঠিকানা:*
গোপাল ম্যানশন
50, কুইন রোড (সিনেমা লেন)
মেট্রো সিনেমার কাছে
মুম্বাই 400 020

*যোগাযোগের ঠিকানা:*
হোয়াটসআপ অ্যাপ মুঠোফোন
৯১ ৮৮৭৯৯ ৮৬৮৯৩

*ই-মেইল:*
fd@gopalmansion.com
gm@gopalmansion.com

*টেলিফোন নম্বর:*
022-2205 5001, 02
 
*খুব যুক্তিসঙ্গত*
সকালের নাস্তা 30
দুপুরের খাবার থালি 75
ডিনার থালি 75
800 এ রুম
রান্নাঘর এবং ডাইনিং খুব প্রশস্ত।

ব্যাপকভাবে শেয়ার করুন।
আপনার যদি মুম্বাইতে আত্মীয় থাকে তাহলে এই তথ্যটি সবার সাথে শেয়ার করুন। আমরা রোগী ও আত্মীয়দের কোনো চার্জ ছাড়াই টিফিন প্রদান করি। এলাকা - দক্ষিণ মুম্বাই
হাসপাতাল:- জাসলোক, সাইফি, বোম্বে, নায়ার, জেজে, মুম্বাই সেন্ট্রালের কাছাকাছি এবং ভিটি।

*যোগাযোগের ঠিকানা:*
এছাড়াও আপনি আমাদের WhatsApp করতে পারেন

*কল্পেশ লোধা* 9967236006

*মনোজ পাটোয়ারী* 9820645070

*অমরত জৈন* 9029373751
 
অন্ততপক্ষে এমন লোকদের কাছে ফরওয়ার্ড করুন যারা অন্যদের কাছে ফরওয়ার্ড করে সাহায্য করতে সক্ষম হতে পারে।
 
*আর.কে. চ্যারিটেবল ট্রাস্ট* এর মতো হোম চিকিৎসা সরঞ্জাম চালু করেছে

*হুইলচেয়ার*
*সাকশন মেশিন*
*জলাশয্যা*
*এয়ারবেড*
*ওয়াকার*
ব্যবহারের জন্য বিনামূল্যে (ফেরতযোগ্য আমানত সহ)
 
*যোগাযোগ ব্যক্তি:*

*সঞ্জয় শাহ*
9322516628
 
*চিন্তন পান্ড্য* 7666311942

*যোগ করুন:*
17-ডি, নিসর্গ অ্যাপ।  
IDBI ব্যাঙ্কের কাছে
মহাবীর নগর
কান্দিভালি (West)
মুম্বাই - 400 067

*সাই ভিলায়ত্রাই চ্যারিটেবল পলিক্লিনিক*
কম্বার দরবার 
শান্তিলাল মোদী রোড ভুরবভাই হলের সামনে কান্দিভালি (West)
মুম্বাই
022-6581 1644
022-2865 9615
 *www.kambardarbar.org*

*দিনের সময় চার্জ*

1. *সাধারণ ওপিডি* Re.1 শুধুমাত্র ওষুধের সাথে
প্রতিদিন সকাল 11-30 থেকে বিকাল 4-30

2. *এক্স-রে* Rs.100
প্রতিদিন সকাল 9:00 থেকে বিকাল 5:00

3. *ECG* Rs. 70.00
প্রতিদিন সকাল 9.00 am থেকে 11.00 am
 
4. *প্যাথলজি* উচ্চ ভর্তুকিযুক্ত হার।  
CBC Rs. 20
প্রতিদিন সকাল 8:30 থেকে দুপুর 12:00
 
5. *চোখ পরীক্ষা* Rs. 20
প্রতিদিন  3.30 pm_
সকাল 9:00 বুধ, শুক্র, শনি।
 
*ছানি সার্জারি:* সেরা ভারতীয় লেন্স সহ বিনামূল্যে।
লেজার (ফাকো) সার্জারি:
Rs.  5,300 মার্কিন আমদানিকৃত অ-ভাঁজযোগ্য লেন্স
Rs. 10,000 UK আমদানি করা ভাঁজযোগ্য অ্যাসফেরিক লেন্স।
(বাইরে রেট Rs. 40,000)
 
6. *স্ত্রীরোগবিদ্যা* আইভিএফ / হিস্টেরোস্কোপি
মঙ্গল/বৃহস্পতি/শুক্র: দুপুর ১টা।
 
7. *স্কিন স্প্ল*  Rs. 20
সোম 3.30 pm
 
8. *অর্থোপেডিক* Rs. 20.00
মঙ্গলবার 3.30 pm
 
9. *ডায়াবেটিক এবং কার্ডিও*  Rs. 20
বুধবার 4.30 pm
 
10. *চাইল্ড স্প্ল*  Rs. 20
শুক্র 5.30 pm

11. *কান/নাক/গলা*  Rs. 20
বুধ / শুক্র 3.30 pm
 
12. *ডেন্টাল* নামমাত্র চার্জ RC চার্জ: Rs. 750
প্রতিদিন 9.00 am থেকে 1.00 pm 
প্রতিদিন 2.00 pm থেকে 5.00 pm
 
13. *ডায়ালাইসিস* বিপিএল রোগীদের জন্য বিনামূল্যে প্রতিদিন 
(ফোন: 022-2806 7645)
 
14. *জরায়ু ক্যান্সার* বিনামূল্যে পরীক্ষা
 
15. 14 বছর থেকে 24 বছর বয়সী মেয়েদের জন্য *ক্যান্সার বিরোধী ইনজেকশন।*
 
16. প্রকৃত খরচের 50% @ সিনিয়র নাগরিকদের জন্য *শ্রবণযন্ত্র*। জন্মসূত্রে যোগ্য শিশুদের জন্য বিনামূল্যে।
 
17. গ্রীষ্মের ছুটিতে সমস্ত ছাত্রদের জন্য নোটবুক এবং অন্যান্য স্টেইনারি আইটেম ছাড়ের হারে।
 
18. *BE, MBBS, CA, CS, BPHARM, MCA এবং নির্বাচিত MBA ছাত্রদের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার জন্য *বৃত্তি।* 

*ভিজিট করুন*
www.kambarda bar.org এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় ঘের সহ ফর্ম জমা দিন।
অনুগ্রহ করে ইমেইল p_zijn zasainani@rediffmail.com এ যোগাযোগ করুন
 
*কোনও সুপারিশের প্রয়োজন নেই।*
*দয়া করে শেয়ার করুন*

নেচার'কে 'নাটুরে' (Nature) বলে উচ্চারণ করছে!

বাড়িতে পড়ানোর সময় অভিভাবক খেয়াল করলেন যে, তাঁদের ছেলে 'নেচার'কে 'নাটুরে' (Nature) বলে উচ্চারণ করছে!

কার কাছ থেকে উচ্চারণটি শিখেছে জানতে চাইলে ছেলে জানাল - স্কুলের ইংরেজি শিক্ষকের কাছ থেকে।

ইংরেজি শিক্ষকের কাছে গিয়ে অভিভাবক বিষয়টি জানতে চাইলেন।

তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে জানালেন, "চিন্তার কোনও কারণ নেই, ছাত্ররা একটু 'মাটুরে' (Mature) হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।"

বিষম খেয়ে অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ করলেন - "কী ধরনের বিদ্যাপীঠ এটা, স্যার! ছাত্র বলে 'নাটুরে', শিক্ষক বলেন 'মাটুরে'!"

শুনে প্রধান শিক্ষক উদাস হয়ে বললেন, "সবাই শুধু বড় বড় কথা বলে। একজনও ভাল 'লেকটুরে' (Lecture) দিতে পারে না।"

ক্ষিপ্ত অভিভাবক এবার উত্তেজিত হয়ে দেখা করলেন স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতির সঙ্গে।

সভাপতি একটু হতাশ কণ্ঠে বললেন, "আমিও বুঝি। কিন্তু কী করবেন বলুন? এটাই যে এই অঞ্চলের 'কালটুরে' (Culture)।"

অভিভাবকের মাথা এবার বোঁ-বোঁ করে ঘুরতে শুরু করল। তিনি কোনওমতে লোকাল কাউন্সিলরের সঙ্গে দেখা করলেন।

তিনি সব কিছু শুনে প্রবল চিৎকার, চেঁচামেচি করতে করতে বললেন, "আমি জানতাম, আমি আগেই জানতাম, এই স্কুলটার কোনও 'ফুটুরে' (Future) নেই !"

অভিভাবক কাঁপতে কাঁপতে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেললেন। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগে শুনতে পেলেন, কে যেন বলছে, "এটা ফেসবুকে দেব... একটা ‘পিকটুরে’ (Picture) তুলে দে!"
🤦🏻‍♂️😝🤭😆🤣🤠

বর্ন প্রথা


🌺🌺🌺🌺 🙏🚩

 আচ্ছা মাগো বল দেখি
 চন্ডাল কারে কয় ।🤔
আমারা নাকি নিচু জাতি ,
ইতিহাসের পাতায় ।।🙇‍♀️

মানুষের মধ্যে উচু নীচু 
কেমন করে হয় ,।🤔
মানুষ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ জাতি।
বলেন মহাশয়।।😏

মা হেসে কয় শোনরে খোকা 
চন্ডাল মোরা নয়।🧟‍♂️
নোংরা শাস্ত্র লিখেছে যারা 
চন্ডাল তারা হয়।।👆

আমরা কোনো কালেই
 ছিলাম না চন্ডাল। 🧟‍♂️
কিংবা কোনো পশু পাখি 
কুকুর শেয়াল ।।🐕

কুটিল যত শাস্ত্র লিখে 
বানিয়েছে নরকের দ্বার। 🧟‍♂️
বলেছে মোদের অস্পৃশ্য অসূচি 
কেড়েছিলো শিক্ষার অধিকার। ।✍

আমার মতে বলি শোন
নিচু জাতি কারা।🤨
বর্ন প্রথার সৃষ্টি করে
বিভেদ করেছে যারা ।।🤨

অসহায় মানুষ কে পশু বানিয়ে 
যারা বলি দেয় ।😥
বলতো তারা কেমন করে
মানুষ শ্রেষ্ঠ হয় ।।😥

অন্ধ বিশ্বাসে বোকা বানিয়ে 
যুগের পর যুগ। 😓
কত অত্যাচার আর লাঞ্ছনা দিয়ে
পেয়েছে তারা সুখ।।😤

ভক্ত বাঞ্ছা কল্পতরু 
হরিচাঁদ আমার ।🙏
দয়া করে পতিত জাতিকে 
করিলেন উদ্ধার। ।🙏🚩

গুন ও কর্ম বিচার করে
যদি হয় ব্রাহ্মণ। 👉
তবে আমার হরিচাঁদ 
পাবেন শ্রেষ্ঠাসন । 🙏🚩

Monday, April 25, 2022

গায়ত্রী কে? আর সন্ধ্যাদেবীও বা কে?


#গায়ত্রী_মন্ত্ররুপা
======================================

        গায়ত্রী কে? আর সন্ধ্যাদেবীও বা কে?
শাস্ত্র বলছে,
     'যা সন্ধ্যা সা তু গায়ত্রী দ্বিধাভূত্বা প্রতিষ্ঠিতা'

অর্থাৎ যে সন্ধ্যা সেই ই গায়ত্রীদেবী৷ গায়ত্রী বা সন্ধ্যা দেবীর মাহাত্ম্য অস্বীকারের জায়গা নেই৷ কি সৌরী, কি গাণপত্য, শৈব, বৈষ্ণব বা শাক্ত৷ সন্ধ্যাদেবী সকলের আরাধ্যা৷ ইষ্ট ব্যাতীতও সন্ধ্যার উপাসনা করতেই হবে৷
          কেন করতে হবে?
শাস্ত্রানুযায়ী এই সন্ধ্যা বা গায়ত্রী হলেন দেবগণের আদিমাতা৷ বেদেও গায়ত্রী আছেন৷ তাই তাঁকে বেদমাতাও বলা হয়৷ আবার তন্ত্রশাস্ত্রেও তিনি আছেন৷ গায়ত্রী সর্বত্র৷
       আমার কথাগুলি কিছুজনের কাছে কটু লাগতেই পারে৷ তথাপি এগুলি আমার কথা নয়৷ এ শাস্ত্রবাক্য৷ বেদবাক্য৷ তন্ত্রশাস্ত্র ও স্বীকৃত৷ তাই অস্বীকারের জায়গা নেই৷
     ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব ও দ্বিজের দ্বিজত্ব বা অভিষিক্তের পদমর্যাদা ধরে রাখতে সন্ধ্যার উপাসনা করতেই হবে৷ বিকল্প পথ নাই দ্বিতীয়৷
    এই যে আমরা দেখি হাটে ঘাটে মাঠে বাজারে আজকাল বহুজনই পূজা করেন৷ তা ভালো কথা৷ এবং জনসমাজে একটা ভ্রান্ত মত রয়েছে বা প্রবাদ রয়েছে৷ 'চেনা বামুনের পৈতে লাগেনা'৷
কথাটা কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? যারা এ কথা বলে তাদের কি পৈতে বা শাস্ত্রের শুদ্ধভাষায় যাকে যজ্ঞোপবীত বলা হয়, সেটির মাহাত্ম্য কি জানা আছে? এই পৈতেটা কি খালি একগাছা সাদা সুতো? এটা কি চাইলে যেকেউ গলিয়ে নিয়ে পুজো করতে পারে? এতোটাই সস্তা কি সব জিনিস????
  আসলে যে বা যারা বলে তারা কখনো জানতেই চায়নি এই একগাছা সাদা সুতোর জন্য সারাজীবন কি ত্যাগ করতে হয়৷ কতটা করতে হয়৷ যদি জানত তবে এই উক্তি খাটত না৷ যদিও কথাটি একটি প্রবাদবাক্য৷ তথাপি অবজ্ঞার সুরেই এটি অনেকে বলেন৷
    যাই হোক, উপনয়ন বলে একটি সংস্কার রয়েছে সনাতনধর্মে৷ বৈদিক আচারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, বর্ণের উপনয়নের বিধান আছে৷ আবার তন্ত্রশাস্ত্র অনুযায়ী ব্রাহ্মণ আদি চতুর্বর্ণেরই তন্ত্রোক্ত সংস্কার নিয়ে উপনয়নের বিধান আছে৷ দুটি পদ্ধতি আলাদা হলেও আখেরে ঐ সাদা সুতোর জন্য নিয়মপালন একই৷ বর্তমানে বৈদিকাচারে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের বিশেষ উপনয়ন পদ্ধতি কেউ পালন না করায় ব্রাহ্মণবর্ণের উপনয়ন সংস্কার লক্ষ্য করা যায়৷ একজন ব্রাহ্মণের ঔরসে ও ব্রাহ্মণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করলে সেই সন্তান ব্রাহ্মণবর্ণের হয়৷ এবং নির্দিষ্ট সময়ে তার উপনয়ন সংস্কার দিতে হয়৷
এবার বিষয়টি হল একজন ছেলে ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মালেই কি সে যজন অর্থাৎ নিজের ঘরে পূজোপাঠ ও যাজন অর্থাৎ অন্যের ঘরে ঘরে গিয়ে পুজো করতে পারবে?
   একদমই নয়৷ ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও তাকে উপযুক্ত উপনয়ন সংস্কার নিতে হবে৷ যখন উপনয়ন হল তখন তাকে বলা হবে 'দ্বিজ'৷ অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জন্ম হওয়া বা জাত হওয়া৷ দ্বিজ হলে তখন সে যজন ও যাজনের অধিকার পাবে৷
এবার এখানেও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ সে উপনয়ন পেলে বা দ্বিজ হয়ে গেলেই কি যজন যাজনের অধিকারী? নাহ৷ তারজন্যও সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য আছে৷ তা পালন না করলে পূজো করার অধিকারী হবেনা‌৷ সেটি হল নিত্যসন্ধ্যাবন্দনা৷ কোন উপনীত ব্রাহ্মণ বা একই ক্ষেত্রে অভিষিক্ত কোন সাধক যদি নিত্যসন্ধ্যাবন্দনা না করে তবে সে পতিত৷ বা শুদ্রের অধম৷ যিনি প্রাতঃকৃত্য করেন না, যিনি সন্ধ্যাহ্নিক করেন না তিনি শুদ্রের অধম৷ তাই তিনি ব্রাহ্মণ হলেও বা অভিষিক্ত সাধক হলেও তিনি কোন পূজাপাঠের অধিকারী হবেন না৷ সন্ধ্যাহীন ব্যক্তি কোন কার্য্যেই অধিকারী না৷ এই ত্রিসন্ধ্যার ওপর ব্রাহ্মণ্য অধিষ্ঠিত৷ অতএব বুঝলেন আশা করি যে ব্রাহ্মণ হয়ে কেবল জন্ম নিলেই হবেনা৷ যথাযোগ্য কর্মের দ্বারা তার ব্রাহ্মণ্য রক্ষাও করতে হবে৷
    যে ব্রাহ্মণ কোনদিন ভোরে উঠে প্রাতঃকৃত্যাদি সন্ধ্যাহ্নিক করেন না৷ তিনি অন্যের বাড়ি পূজা করলে বা নিজের বাড়ি করলে অভিচার স্বরুপ৷ তা কোন কাজেই লাগবেনা৷ বৈদিক উপনীত ব্রাহ্মণের কয়েকটি পর্ব্বদিনে ও শ্রাদ্ধদিনে সায়ংসন্ধ্যা নিষেধ হলেও তান্ত্রিক সন্ধ্যা কোনদিনই বন্ধ করা যায়না৷ সংস্কারের দিন থেকেই আজীবন আমৃত্যু সন্ধ্যা কর্তব্য৷ নচেৎ নিত্যকর্ম বা নৈমিত্তিক কর্মে কোন অধিকার হবেনা৷
     
হর হর মহাদেব শ্রীদুর্গা কালী কালী৷৷ 🌺🌺

Sunday, April 24, 2022

পৃথিবীতে যত ধর্ম মত ও পথ আছে, প্রত্যেক ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু ভাল সাধু , বুদ্ধিমান ও পবিত্র ব্যক্তি আছে

জয় শ্রী হরি।

"নিম্ন বিষয় টি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ"

পৃথিবীতে যত ধর্ম মত ও পথ আছে, প্রত্যেক ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু ভাল সাধু , বুদ্ধিমান ও পবিত্র ব্যক্তি আছেণ, এবং তাদের ই শত কর্ম ও মানবিক চিন্তা ধারার জন্য নিজ নিজ ধর্ম গুলি আজ ও চলছে। যেমন শ্রী হরি চাঁদ ঠাকুর তার দ্বাদশ বাণীর  মধ্যে একটা বাণীতে বলেছেন " চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতি ভেদ করিবে না " । ভারতে এর একটা জ্বলন্ত উদাহরণ, ডাক্তার আব্দুল কালাম জি, বিশাল ভারত ভূমির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, তিনি জাতিতে মুসলমান ছিলেন, কিন্তু তার পবিত্রতার, এবং সাধু কর্মের জন্য সমস্থ মানুষের কাছে বরণীয় ছিলেন আজ ও আছে। ঠিক তেমনি শ্রী গুরু চাঁদ ঠাকুরের সময় ছিলেন ডক্টর সি.এস. মিড , ডিক সাহেব, এবং পাঁচ কড়ি মিয়াঁ । তারা সকলেই বরণীয় এবং স্বরোনীয়।
ঠীক তেমনি একটা স্বরোনীয়  ঘটনা আমার  সঙ্গে ঘটে ছিল, যখন জীবনে প্রথমবার বাংলাদেশে  নিজের মানুষদের খুজে বের করবো এবং  মতুয়া তীর্থ রাজ ওড়াকান্দি দর্শন করবো সেই উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম।
ইং:২০১৮, এপ্রিল মাসের ৩০ তারিক দার্জিলিঙ এবং সিকিম পরিবার সহ ঘুরে এসে , কোলকাতায় বসে হঠাৎ সিদ্ধান্ত করলাম পরিবার কে কলকাতা রেখে আমরা ছেলেরা বাংলাদেশ যাবো। কারন প্রথমবার যাবো তাই পরিবার সঙ্গে নিয়ে কোথায় উঠবো, কারন 48 বৎসর পর জীবনে প্রথমবার বাংলাদেশে যাচ্ছি, আত্মীয় স্বজন কেউ কে চিনি না, বাবা মায়ের মুখে যে টুকু শুনেছে সেই জ্ঞান নিয়ে সাহস করে আমরা চারজন  আমি,  দুজন শিক্ষক  তারা হলেন শ্রী কৃষ্ণ প্রসাদ বিশ্বাস, শ্রী বিনয় কৃষ্ণ সরকার, মৃণাল চন্দ্র হালদার (ভাগ্নে) উক্ত তরিকে বোনগা পেট্রাপোল বোর্ডার দিয়ে যাত্রা করলাম।
মাজে একটু বলে যাই, আন্দামান দ্বীপ থেকে যাত্রা করার ৬ মাস আগে দুজন মুসলমান ভদ্রলোক আন্দামান সফরে এসেছিলেন এবং তারা আন্দামানের রাজধানি পোর্ট ব্লেয়ার স্থিত রিপিল রিসর্ট নামে এক হোটেলে  দুদিনের জন্য ছিলেন। সেই দু ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার এবং ভাগ্নে মৃণালের সঙ্গে ঘন্টাখানীক আলাপ হয়ে ছিল, তখন তিনি কথা প্রসঙ্গে আমন্ত্রণ করলেন যে বাংলাদেশ আসলে ঢাকা স্থিত তার বাস ভবনে একবার যাওয়ার জন্য এবং একটা ভিসিটিং কার্ড ও আমাকে দিয়েছিল। কিন্তু সে সময় স্বপনেও ভাবি নাই যে বাংলাদেশ যাবো।
মজার ব্যপার হল যখন ভিসা করবো, ঐ ভিসা তে যার বাড়িতে যাবো সেই লোকের নাম এবং ঠিকানা সহ মোবাইল নম্বর দিতে হয়। কিন্তু আমাদের কাছে কেউর  সঠিক ঠিকানা জানা ছিল না, তখন আমি সেই ব্যক্তির দেওয়া ভিসিটিং কার্ড টা দিয়ে তার নাম দিয়ে ভিসা বের করি, তখন ঐ ভদ্র লোকের নাম টা পড়লাম,তার নাম হল ফির্দোজ আলি খান  ঠিকানা বিশ্ব কুড়ির রোড, ঢাকা।
মনের ভিতর একটা আসঙ্ক্ষ হচ্ছিল, যে নূতন আজানা যায়গা, তবু ও মন কে সংযত করে  বাবা মা ও শ্রী হরি গুরু চাঁদের নাম স্বরণ করে বাকি তিন জন কে নিয়ে পাড়ি দিলাম বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে । সর্বদা মনের ভিতরে দুটি গানের লাইন অন্তরে অন্তরে গেয়ে চলেছিল সে হল " শ্রী হরি চাঁদের রূপে নয়ন দিয়ে আজ ঘরের বাহির হয়েছি"  আর " শ্রীধাম ওড়াকন্ধি চল যাই,এমন দিন আর হবে না ভাই "। 
আর বেশী হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছিল যে আজ থেকে 48 বৎসর পূর্বে ছোট্ট একটা শিশু রাতের আধারে মা বাবা তাঁকে বুকে আক্রে ধরে ভারতে চলে এসেছিলেন । ধীরে ধীরে তাদের আচলে বড় হলাম, আজ ফেলে আসা সেই সোনার দেশে যাচ্ছি কিন্তু আজ তারা সঙ্গে নেই, তারা আমাদের রেখে সেই আজানার দেশে চলে গেছে, সেই শিশু আমি অধম, আজ আমি বাবা হয়েছি এবং আপন জনদের খুজে পাওয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করলাম বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ।

লিখতে গেলে বড় হয়ে যায় কেউ পড়তে চায় না, তাই সংক্ষেপে বলছি।।আত্মীয় স্বজনদের খুব কষ্ট করে খুজে বের করলাম। যেখানে আমার জন্ম হয়েছিল সেই পিতৃ ভিটা জিকে বাড়ির (গোপাল গঞ্জ) মাটিতে স্নেহের দায়ে বহু সম্মানে বারেক ঠেকান মাথা,অস্রুসিক্ত নয়নে জন্ম ভিটার একটু মাটি সঙ্গগ্রহ করলাম , এবং মায়ের মুখে শুনেছিলাম যে ঘরের কোনায় একটা গাব গাছ ছিল , সত্যি দেখলাম সেই গাব গাছটি আজ দাড়িয়ে রয়েছে, চোখে জল আর রুক্ষতে পারলাম না, মা বলে তাঁকে একটা প্রণাম করলাম এবং তাঁকে স্বাক্ষী রেখে এলাম যে আমি এসেছিলাম সেই দুঃখীনি মায়ের বাড়িতে , যেখানে এই অধোম জন্ম গ্রহণ করে ছিল। ঘাটে মাঠে বাটে কয়েকদিন কাটিয়ে যাত্রা করলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে সেই শ্রী ফির্দোস আলি খান দাদার বাড়িতে, শুনেছি মা বাবার মুখে স্বপনের ঢাকা শহরের কথা, তাই মন টা বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল ঢাকা যাবো। ভিসিটিং কার্ডের ঠিকানা অনুসারে মোবাইল ফোন যোগে শ্রী ফির্দোস আলি দাদার সঙ্গে যোগযোগ করে  বললাম আমরা ঢাকা আসছি, শুরুতে উনি অবাক হলেন পরে খুব বিনয়ী ও উত্সাহের সঙ্গে আমাদের আমন্ত্রণ এবং অধির আগ্রহে প্রতীক্ষা করছিলেন। এবং তিনি  , কিভাবে কোথায় ঢাকা পৌছাতে হবে সমস্থ বিবারণ বলে দিলেন। তখন পবিত্র রাম যান মাস চলছিল। মনের ভিতর ভয় হচ্ছিল, কিন্তু কেউ কে প্রকাশ করিনি কারন বাকি তিন জন আমার উপর ভরসা করে আমার সাথে এসেছে। মুক্সুদ্পুর থেকে বাসে করে , উনি যে ভাবে বলেছেন, ঠিক  সেই ভাবে একটা স্টেশনে নামলাম, তখন বাজে বিকেল 4 টা , দেখি দুজন যুবক ছেলে একটা গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে আছে, নামতেই ওরা জিগস্সা করল, আপনি কি সুধীর বিশ্বাস ?।হ্যা বলতেই আমাদের বেদীং সব গড়িতে তুলে সকলে এক সঙ্গে ঐ গাড়িতে গেলাম। গাড়ী টা খুব আধুনিক এবং খুব সুন্দর, পরে শুনলাম বহুদামী গাড়ী (70 লখ্য টাকার গাড়ী) । ধীরে ধীরে বিশ্ব কুড়ির রোডের পাশে গাড়ি দাড়  করানোর সাথে সাথে আর চার জন লোক এসে আমাদের লিপ্টে করে একটা দশ মঞ্জিলা বিল্ডিং নিয়ে গেলেন, খুব ভয় হচ্ছিল , একে তো অচেনা ব্যক্তি, দেখি লীপটের সামনে আলি দাদা  দাড়িয়ে আমাদের কে স্বজত্নে ভিতরে নিয়ে গেলেন, তখন সন্ধ্যা 6 টা। বাকি দুজন খুব ভয়ে ভয়ে কথা বলছে , আমি ওদের সান্তণা দিয়ে বললাম ভয় নেই বাবা গুরু চাঁদ রয়েছেন । সঙ্গে সঙ্গে ফির্দোস দাদা, বয়স 55 yrs হবে, বললেন এসো আমরা একসঙ্গে ইফতার করবো। বিভিন্ন ধরনের ফল বড় বড় থালায় সাজিয়ে আমাদের দিলেন এবং নিজে ও খেলেন। তিনি রোজা রাখেন নি ,কারন ওনার সুগারের রোগ আছে বলল। সেখান থেকে পাশেই একটা তিন তারা হোটেল কাম রেস্টুরেন্ট এ আমাদের দুটি রূম দিলেন।।এবং রাত্রের খাবার আমরা ঐ হোটেলে করলাম। এক এক রাত একট একটা রুমের ভাড়া 10 হাজার  টাকা করে।  আমরা একটু চিন্তিত হলাম,কিন্তু আমি বললাম কোনো চিন্তা করো না,যা হবে দেখা যাবে, মন টা শক্ত করে আনন্দ করো। এই ভাবে অতি যন্ত ও ভক্তির সহিত তিন দিন সম্পূর্ণ ঢাকা শহর আমাদের দাদার নিজের দামিয় গাড়ী দিয়ে ঘুরালেন, যেমন ঢাকেশ্বরী মায়ের মন্দির, শহিদ বেদি, বঙ্গ বন্ধুকে যে ঘরে হত্যা করেছিল, এবং আর দার্শনিক পর্যটক স্থল, বড় বড় মল ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন কেবল মাত্র পদ্ম সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল সেই সব বিশিষ্ট স্থানে আমাদের ঘুড়ালেণ।

আসার একদিন আগে শ্রী ফির্দোস আলি খান  দাদার সম্পর্কে জানলাম যে, উনি বাংলাদেশের কয়েক জন ধনি ব্যক্তির মধ্যে একজন, উনি হিন্দু মুসলিম সমস্থ মানুষের জন্য একজন উপকারী বন্ধু, উনি 12 জন গরিব হিন্দু ছেলেদের বিদেশে ডাক্তারি (MBBS)পড়ার জন্য নিজে তাদের ব্যঙ্কে সিকিউরিটির টাকা জমা  দিয়েছেন। বাংলাদেশে ফির্দোস দাদার " Standard ব্যাঙ্ক"  নামে  170 টি শাখা চলছে। মুসলিম ভাইদের জন্য ৮ কোটি টাকা দিয়ে একটা সুন্দর  মর্জিদ বানিয়ে দিয়েছেন। 20 টা দেশের মন্ত্রী ভিভাগদের কোট সেলাই করার টেন্ডার পেয়েছেন। তার ঢাকা শহরে দশ তলার বহু বিল্ডিং রয়েছে, সেখানে ফিল্ম আর্টিস্ট, ক্রিকেট খেলোয়ারা ভাড়া থাকেন।
এত বড় ধনি ব্যক্তি কিন্তু তার সাজ পোশাক কথা বার্তা অতি সাধারন মানুষের মত। কোন গরিমা নেই, অনেক মুসলমান ভাইয়েরা আমাকে জিগস্সা করেছিলেন যে  , উনি আপনাদের কি হন ?  আমি বললাম আমার দাদা, কিন্তু তারা বলে আপনি ত হিন্দু ?
সত্যি উনি একজন সাধু ব্যক্তি, যানি না আমার মধ্যে উনি কি খুজে পেয়েছেন,  হয়ত এটা ও শ্রী গুরু চাঁদের ইচ্ছা।
একদিন রাত্রে  আমি শ্রী ফির্দোস  আলী দাদা কে ধীরে ধীরে  আমাদের মতুয়া দর্শন সম্মন্ধে বললাম  । শ্রী তিন কড়ি মিয়াঁর কথা, শ্রী সি.এস.মিড সাহেবের কথা অতি ভক্তির সঙ্গে বললাম। উনি খুব মন যোগ দিয়ে শুনলেন। অবশেসে আমি ওনাকে বললাম " দাদা আপনি আমার বাবা হরি চাঁদের লীলা ভূমি ,শ্রী ওড়াকান্দি ধামে এসে এমন কিছু একটা সুন্দর কাজ করে দেবেন যা চিরদিন আমরা তিন কড়ি মিয়াঁর মত আপনাকে মনে করবো।"  শ্রী ফির্দোস আলী  দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পরে বললেন, "ভাই সুধীর তুমি যখন বলছ  তুমি আবার যখন বাংলাদেশ আসবে আমি অবশ্য তোমার সাথে শ্রীধাম ওড়াকান্দি যাবো "।  আমি শুনে খুব ভাবুক হলাম এবং দু নয়নে জল ছল ছল করছিল।
আমরা ঢাকায় যাওয়ার একদিন আগে  শ্রী ওড়াকান্দি ধামে গিয়েছিলাম।  তাই বড় আশা করে আছি, এবার বাংলাদেশ গেলে শ্রী ফির্দোস আলি দাদা কে নিয়ে শ্রীধাম ওড়াকন্ধি যাব।
তিনদিন ঢাকা শহরে ছিলাম, আশার আগের দিন রাত্রে ফির্দোস দাদা এবং তার পরিবার সকলে এসে আমাদের চার জন কে নূতন বস্ত্র দিলেন। এবং অস্রুসিক্ত নয়নে একে অপরে আলিঙ্গন করলাম।  পরদিন সকালে আমরা হোটেলের থাকা ও খাবারের পয়সা/ বিল দিতে গেলাম, হোটেল মালিক বললেন আপনাদের বিল স্বং ফির্দোস দাদা দিয়ে গেছেন, আমি বললাম সেটা কেন হবে, কিন্তু ফির্দোস দাদা কোন কথা শুনলেন না,  তিনি তিনদিনে 50 হাজার টাকা বিল হয়েছিল সেটা নিজে আমাদের অজান্তে দিয়ে দিয়েছিলেন। এবং যশোরে আসার জন্য চার টি অতি আধুনিক বাসের টিকিট আমার হাতে খুজে দিয়ে নিজের সেই গাড়িতে  করে, আমাদের বাসে উঠিয়ে দিলেন। আসার সময় উনি কেদে দিলেন এবং সেই সঙ্গে আমি ও খুব ভাবুক হয়ে গিয়েছিলাম।
বাসে আসার সময় মনটা উদাস হয়ে বার বার প্রশ্ন জাগছিল , এটা কি হল, কেন হল, কে করাল, বাবা হরি চাঁদ সে নিজে তার ভক্তদের এই ভাবে সম্মান দিল, বাসে বসে একা একা খুব কান্না করলাম এবং সেই সাথে  বার বার মায়ের কথা মনে পড়ছিল আর নয়নে অশ্রু জল ঝড়ে ঝড়ে পড়ছিল।
এই হল আমার জীবনে একটা বড় পাওয়া। আর সেই দিনের অপেখা করছি , কবে শ্রী ফির্দোস দাদা কে নিয়ে শ্রীধাম ওড়াকান্দি  যাবো।  কিছু ছবি নিম্নে দিলাম।

একটু ধর্জ্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

জয় শ্রী হরি।

সুধীর, আন্দামাণ দ্বীপ
23/4/2022