Sunday, March 8, 2020

ভারতবর্ষে হিন্দু গণহত্যা-৫



১৩৬০ খ্রীস্টাব্দে এই পিশাচ ফিরােজ শাহ উড়িষ্যা আক্রমণ করে। পুরী শহর লুণ্ঠন করে, জগন্নাথের মন্দির অপবিত্র করে এবং জগন্নাথের বিগ্রহ সমুদ্রে ফেলে দেয়। তখন উড়িষ্যার রাজধানী ছিল জাজনগর। সেখানে এসে ফিরােজ শাহ জানতে পারল যে, সেখানকার অধিবাসীরা ভয়ে সমুদ্রতীরবতী একটি দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছে। ফিরােজ শাহ তার লােজন নিয়ে সেই দ্বীপে গেল এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া ১,২০,০০০ হিন্দুকে এক দিনের মধ্যে কোতল করে সমুদ্রে ফেলে দিল।(31) স্বাধীন ভারতের পক্ষে এটা খুবই লজ্জার বিষয় যে, এই পাষণ্ডের নামে দিল্লীতে একটি রাস্তা ও একটি খেলার মাঠের নাম করণ করা হয়েছে। 
যে সব মুসলমান দানব বাইরে থেকে ভারতে এসে গণহত্যা ও লুণ্ঠন করে গিয়েছে তাদের মধ্যে একজন হল তৈমুর লং। এই দানব তার আত্মজীবনী তুজুখ-ই-তৈমুরি তে লিখেছে, “এই সময় আমার মনে ইচ্ছা হল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে একটা অভিযান করি, এবং তাদের হত্যা করে গাজী হই।....কিন্তু তখনও আমি মন স্থির করতে পারছিলাম না যে, চীনের কাফেরদের বিরুদ্ধে না ভারতের অংশীবাদী কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযান করব। এই সব ভাবতে ভাবতে আমি কোরাণ খুললাম এবং যে আয়াৎটি আমার নজরে এল তা হল, “হে নবী, অবিশ্বাসী কাফের ও কপটচারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং ওদের প্রতি কঠোর হও” (৬৬/৯)। আমার অনুগত অনুচররা তখন বলল যে, হিন্দুস্থান হল অবিশ্বাসী কাফেরদের বাসস্থান। এই ভাবে আল্লার আজ্ঞায় আমি তাদের (হিন্দুদের) বিরুদ্ধে জিহাদ করব স্থির করলাম” (32) 
তৈমুর হিন্দুস্থানে এসে প্রথমে ভাটনির (বর্তমান হনুমানগড়) এ পৌঁছাল। সেখানে “সাহসী ইসলামের সৈন্যরা চতুর্দিক থেকে কাফের হিন্দুদের আক্রমণ করল ....আল্লার ইচ্ছায় আমাদের বিজয় হল। মুহূর্তের মধ্যে দুর্গের সকল হিন্দুদের হত্যা করা হল এবং এক ঘন্টার মধ্যে ১০,০০০ হিন্দুর মাথা কেটে ফেলা হল। ইসলামের রক্তপিপাসু তরবারি অবিশ্বাসীদের রক্তে ধােয়া হয়ে গেল।”(33) এরপর সুরসুতি (বর্তমান সিরসা)-র মাটি হিন্দুর রক্তে ভাসিয়ে নরখাদক তৈমুর জাঠদের আক্রমণ করল। “পিপড়ের মতই জাঠরা সংখ্যায় ছিল অগুন্তি।...আমরা মাঠে ও জঙ্গলে তাদের তাড়া করে গেলাম এবং প্রায় ২০০০ জাঠ কাটা পড়ল। আমি তাদের স্ত্রীও শিশুদের বন্দী করলাম।”(34) | এরপর তৈমুর যমুনার পারে, দিল্লীর বিপরীতে, লােনি শহরে উপস্থিত হল। সেখানে হিন্দু মুসলমান, উভয়েরই বাস ছিল। তৈমুর মুসলমানদের ক্ষতি করল না। বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করল। “অনেক রাজপুত তাদের স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের ঘরে বন্ধ করে ঘরে আগুন দিল, তারপর তারা প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে ছুটল।...তারা শয়তানের মত যুদ্ধ করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারা পড়ল। অনেক বন্দী হল। পরদিন আমি মুসলমান বন্দীদের আলাদা করতে বললাম এবং তারপর হিন্দু বন্দীদের ইসলামের তরবারির সাহায্যে নরকের আগুনে পাঠিয়ে দেওয়া হল। আমি আদেশ দিলাম মুসলমানদের ঘরবাড়ি কোন ক্ষতি না করে কাফেরদের ঘরবাড়ি লুট করে তারপর আগুন দিতে”(35) 
এই সময় তৈমুরের আমিররা খবর দিল যে এত দিনে প্রায় ১ লক্ষ হিন্দুকে বন্দী করা হয়েছে এবং তারা শিবিরেই আছে। তৈমুরের বাহিনী তখন দিল্লী আক্রমণ করতে অগ্রসর হচ্ছিল। তৈমুর তার আমিরদের কাছে বন্দীদের ব্যাপারে পরামর্শ চাইল। তারা বলল যে, এই যুদ্ধকালীন সময়ে ১ লক্ষ শত্ৰু পিছনে রেখে দিল্লী আক্রমণ করা ঠিক হবে না। অপরদিকে কোরাণের নির্দেশ অনুসারে এত কাফেরকে মুক্ত করে দেওয়াও ঠিক হবে না। প্রকৃতপক্ষে এই ১ লক্ষ কাফেরকে তরবারির খাদ্য বানানাে ছাড়া আর কোন রাস্তাই পাওয়া গেল 
”। তৈমুর তখন ওই এক লক্ষ হিন্দুকে হত্যা করার আদেশ দিল এবং তর সৈন্যরা এক দিনের মধ্যে ওই ১ লক্ষ হিন্দুকে কেটে যমুনায় ফেলে দিল। ফলে যমুনার জলপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেল। দুদিন পড়ে সব মৃতদেহ পচে সমস্ত পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলল। যমুনার জল পানের অযােগ্য হয়ে গেল।(36) দিল্লীর ঘটনা বর্ণনা করতে তৈমুর তার আত্মজীবনীতে লিখছে,“ মাসের ৬ 
 
তারিখে আমি দিল্লী দখল করলাম। হিন্দুরা তাদের স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের ঘরে বন্দী করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে যুদ্ধ করতে চলে এল এবং শেষ পর্যন্ত মারা পড়ল। ...পরদিন শুক্রবার আমি দিল্লীবাসী কাফেরদের ঘরে লুণ্ঠন ও হত্যা করার জন্য ১৫ হাজার তুর্কীকে নিযুক্ত করলাম। তাদের প্রত্যেকে এত লুঠের মাল আনল যা এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সেই সঙ্গে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ টা করে বন্দী নিয়ে এল। এত নারী বন্দী পাওয়া গেল যে গুণে শেষ করা সম্ভব নয়। মুসলমান ছাড়া আর সকল হিন্দুকে কোতল করা হল।”(37) . 
31.H.M. Elliot & J.Dowson, ibid, III. 421.22. 
32. H. M. Elliot & J. Dowson, ibid, Ill, 429. 
33. Mulfujat-i-Taimuri (as quoted by Elliot & Dowson. ibid, 111, 432-33). 
34.H. M. Elliot & J.Dowson, ibid, III, 435-36. 
35.H. M. Elliot & J. Dowson, ibid, Ill, 445-46. 
36.H. M. Elliot & J. Dowson, ibid, Ill,459.
37.P.N. Oak, Islamic Havoc in Indian History, 144.

https://www.facebook.com/groups/590050411814603/

No comments: