Sunday, July 19, 2020

শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অবতার রহস্য ও তার দ্বাদশ আজ্ঞা প্রসঙ্গঃ"

শাস্ত্র সিদ্ধান্তে যুগাবতার পূর্ণ বর্গ ব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অবতার রহস্য ও তার দ্বাদশ আজ্ঞা প্রসঙ্গঃ"

 

সত্য যুগ:


সত্য যুগ (দেবনাগরী) হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের প্রথম যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ ও কলি যুগ।
বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষে তৃতীয়া তিথিতে রবিবারে সত্যযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ১৭,২৮,০০০ বছর। অবতার সংখ্যা চার। মৎস্য (মাছ), কুর্ম (কুমির), বরাহ (শুকর), নৃসিংহ (মানুষ ও সিংহের সমন্বিত রূপ)। ছয় জন শাসক। বলি, বেণ, মান্ধাতা, পুরোরবা, ধুন্ধুমার, কাত্তাবীর্য্য অর্জুন। শুধু পুণ্য ছিল, পাপ ছিল না। প্রাণ ছিল মজ্জায়। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। সোনার পাত্র ব্যবহার করা হত। বেদ ছিল সামবেদ। তীর্থ ছিল পুষ্কর তীর্থ। তারক ব্রহ্মনাম ছিল- নারায়ণ পরা বেদা, নারায়ণ পরা অক্ষরা, নারায়ণ পরা মুক্তি, নারায়ণ পরা গতি। অর্থাৎ নারায়ণ পরম বেদ, নারায়ণ পরম অক্ষর, নারায়ণ পরম মুক্তি, নারায়ণ পরম গতি।

ত্রেতা যুগ :


ত্রেতা যুগ (দেবনাগরী): এটি হলো হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, চার যুগের দ্বিতীয় যুগ। ত্রেতা মানে সংস্কৃত ভাষায় তৃতীয়। প্রথম যুগ হলো সিদ্ধ নৈতিকতার সত্য যুগ এবং দ্বিতীয়টি দ্বাপর যুগ। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে সোমবারে ত্রেতা যুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ১২,৯৬,০০০ বছর। এই যুগের পালনকর্তা বিষ্ণুর তিন অবতার যথাক্রমে বামন, পরশুরাম এবং রাম। পুণ্য তিন ভাগ, পাপ এক ভাগ। সূর্য বংশের শাসক- ব্রহ্ম, মরীচি, কাশ্যপ, সাবর্ণিক, মনু, ধনু, সুষেণ, হরিদাস, যৌবনাশ্ব, মুচুকুন্দ, শতবাহু, বেন, পৃত্থু, ইক্ষাকু, দ্যোতকর, কৎসর্প, শ্রেষ্ঠধর, ককুৎস্থ, শতঞ্জীব, দণ্ড, হরিষ, বিজয়, হরিশচন্দ্র, রোহিতাশ্ব, মৃত্যুঞ্জয়, মহাপদ্ম, ত্রিশঙ্কু, উচ্চাঙ্গদ, মরুৎ, অনরণ্য, বিকর্ণবাহু, সগর, অংশুমান, অসমঞ্জা, ভগীরথ, অশ্বঞ্জয়, মণি দীলিপ, রঘু, অজ, দশরথ, শ্রীরাম, লব, কুশ। প্রাণ ছিল অস্থিতে। বেদ ছিল ঋগ্বেদ। রূপার পাত্র ব্যবহার করা হত। তীর্থ ছিল নৈমিষ অরণ্য। তারক ব্রহ্মনাম- রাম নারায়ণানন্ত মুকুন্দ মধুসুদন। কৃষ্ণ কেশব কংসারে হরে বৈকুণ্ঠ বামন। অর্থাৎ রাম নারায়ণ অনন্ত মুকুন্দ মধুসুদন কৃষ্ণ কেশব কংস অরি হরি বৈকুণ্ঠ বামন।

দ্বাপর যুগ :


দ্বাপর যুগ (দেবনাগরী): এটি হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের তৃতীয় অন্য যুগ গুলো হলো সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, ও কলি যুগ
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে বৃহস্পতিবারে দ্বাপর যুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৮,৬৪,০০০ বছর। অবতার সংখ্যা দুই। শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ। পুণ্য অর্ধেক, পাপ অর্ধেক। শাসক ছিল-শাল্ব, বিরাট, হংসধ্বজ, কুশধ্বজ, ময়ুরধ্বজ, বভ্রুবাহন, রুক্ষাঙ্গদ, দুর্যোধন, যুধিষ্ঠির, পরিক্ষিৎ, জনমেজয়, বিষকসেন, শিশুপাল, জরাসন্ধ, উগ্রসেন, কংস। প্রাণ ছিল রক্তে। বেদ ছিল যজুর্বেদ। তামার পাত্র ব্যবহার করা হত। তীর্থ ছিল কুরুক্ষেত্র। তারক ব্রহ্মনাম- হরে মুরারে মধুকৈটভারে গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে যজ্ঞেশ নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণো নিরাশ্রয় মাং জগদীশ রক্ষো। অর্থাৎ হরি মুরারী মধু কৈটভ অরি, গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরি, নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণু যজ্ঞেশ, নিরাশ্রয় আমাকে রাখ জগদীশ।

কলি যুগ:


কলি যুগ : আক্ষরিকভাবে "কালীর যুগ", বা "পাপের যুগ") হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের শেষ যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, ও দ্বাপর যুগ মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৪,৩২,০০০ বছর। পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। অবতার কল্কি। মানুষের আয়ু একশ বিশ বছর প্রায়। নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত নিজের শরীরের আয়তন। প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। সব পাত্র ব্যবহার করা হয়। ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। তারক ব্রহ্মনাম- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

সময় পরিমাণসম্পাদনা

বেদব্যাস রচিত বিষ্ণু পুরাণ বলা হয়েছে যে কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা হয়েছে।
“ যস্মিন্ দিনে হরির্ঘাতে দিবং সন্ত্যজ্য মেদিনীম্।
তস্মিন্নেবাবতীর্ণোহয়ং কালকায়ো বলী কলিঃ।।

মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে মানুষের এক বছরে দেবতাদের এক দিবারাত্র হয়। উত্তরাযণ দেবতাদের দিন এবং দক্ষিণায়ন তাদের রাত। ৪,০০০ (চার সহস্র) দৈবপরিমাণ বছরে সত্য বা কৃত যুগ হয় এবং ওই যুগের আগে ৪০০(চার শত) বছর সন্ধ্যা ও পরে ৪০০ বছর সন্ধ্যাংশ হয়। পরবর্তী যুগগুলিতে (ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) যুগের পরিমাণ ১,০০০(এক হাজার) বছর করে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০(এক শত) বছর করে কমে যায়। এই হিসাবে ১০০০ দৈব বছরে কলিযুগ হয় এবং এর সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০ বছর হয়; অর্থাৎ ১২০০ দৈব বছরে কলি যুগ সম্পূর্ণ

কলিতে ঈশান কোণে :



শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা :

১ সদা সত্য কথা বল
২ পরোস্ত্রীকে মাতৃজ্ঞান করো
৩ পিতা মাতাকে ভক্তি করো
৪ চরিত্র পবিত্র ব্যাক্তির প্রতি জাতিভেদ করো না
৫ কাহারো ধর্ম নিন্দা করো না
৬ বাহ্যঅঙ্গে সাধু সাজ ত্যাগ করো
৭ ষড়রিপুর নিকট হতে সাবধান থাকো
৮ হাতে কাজ মুখে নাম করো
৯ প্রতি ঘরে হরি মন্দির প্রতিষ্ঠা করো
১০ দৈনিক প্রার্থনা করো
১১ ঈশ্বরে আত্মাদান করো
১২ জগৎ কে ভালবাসো

 

সংক্ষেপে মতুয়া ধর্ম প্রচার /মতুয়া আন্দোলন ।।।।

ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে পূর্ববঙ্গে (অধুনা বাংলাদেশ) “পতিত পাবন” হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরে নমঃশুদ্র ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের নবজাগরণ সূচিত হয় । এই দুই মহামানবের নীতি ও আদর্শ ‘মতুয়া ধর্মান্দোলন’ নামে প্রসার লাভ করে । হরিচাঁদ ঠাকুর বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সফলাডাঙ্গা গ্রামে ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের (২৯-শে ফাল্গুন ১২১৮ বঙ্গাব্দ) বুধবার জন্মগ্রহণ করেন । পিতা যশোবন্ত ঠাকুর ও মাতা অন্নপূর্ণাদেবী । প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চেয়ে ধর্মভিত্তিক আধুনিকতার মাধ্যমে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা ও গণমুক্তি অর্জনের লক্ষে চিরন্তন ঐতিহ্য নির্ভর বিশ্বমানবতাবাদী ‘মতুয়া ধর্মমত’ প্রবর্তন করেন । বাল্যকালে তিনি বিদ্যালাভ করেন । ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে মতুয়া ভক্তবৃন্দ’দের নিয়ে জোনাসুর ‘নীল কুটিয়াল’ ডিক সাহেবের নীল কুটি অভিযান করেন । জমিদার মহাজনদের শোষন ও ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক সমাজের কঠোর অনুশাষনের হাত থেকে পরিত্রান পেতে, ইসলাম বা খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত না হয়ে বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠী হরিচাঁদ’কে ত্রাতা বা অবতার মেনে তাঁর ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন । জমিদার সূর্যমনি মজুমদারের অত্যাচারে ঠাকুর পরিবার ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দী গ্রামে আসতে বাধ্য হন । ভক্ত দশরথের উপর নায়েবের অত্যাচারের বিচারের জন্য তিনি মহিলা কাছারি প্রতিষ্ঠা করে বিচারকের আসনে নারী শক্তিকে মনোনীত করেন । তৎকালিন সমাজ ব্যবস্থায় যা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ।
হরিচাঁদের দর্শনকে পাথেও করে জাগতিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করেন তদ্পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর । তিনি ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মার্চ (১২৫৩ বঙ্গাব্দের ফাল্গুনী পূর্ণিমা) জন্মগ্রহন করেন । তিনি পাঠশালার পাঠ সমাপ্ত করে ‘মক্তবে’ আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন । ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সাম্য ও মর্যাদার দাবীতে নানা আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহন করেন । ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে নিজ বাড়িতে তিনি প্রথম ‘পিছিয়ে রাখা’ শোষিত জাতির শিক্ষার জন্য বাংলা মাধ্যম পাঠশালা স্থাপন করেন । পুত্র শশিভূষন ঠাকুর ও রঘুনাথ পন্ডিত পাঠশালার শিক্ষকরূপে যোগদান করেন । ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে খুলনার দত্তডাঙ্গার ঈশ্বর গাইনের বাড়িতে সমগ্র বঙ্গদেশের পাঁচ হাজার প্রতিনিধি সমন্বিত সভার সভাপতি গুরুচাঁদ ঠাকুর শিক্ষা সম্পর্কে এক দীর্ঘ ভাষন দেন । তিনি বলেন---- “বিদ্যা ধর্ম বিদ্যা কর্ম বিদ্যা সর্বসার । বিদ্যা বিনা মানবের গতি নাই আর ।” ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে খুলনা শহরে Namasudra Welfare Association গঠিত হয় । উক্ত সংগঠনে তৎকালীন ২২-টি জেলার প্রতিনিধি যোগদান করেন । শিক্ষা ও জাগরণের এই সম্মেলনের পর সর্বত্র সর্বশিক্ষা অভিযানের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে । এসময় সমগ্র বঙ্গে এক হাজারের উপর বিদ্যালয় (পাঠশালা) প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৮৭২-১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সেন্সাস রিপোর্টে মধ্যবঙ্গের বৃহত্তম জনসমাজের মানুষ’কে ‘চন্ডাল’ বলে লেখা হয় । এর বিরুদ্ধে গুরুচাঁদ ঠাকুর বিশাল জনমত ও প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন । ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে গুরুচাঁদ ঠাকুর ও তাঁর অনুগামীরা কৃষকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দু-মুসলীম যৌথভাবে ‘লাঙল যার জমি তাঁর’ স্লোগান তুলে তে-ভাগা আন্দোলনের ডাক দেন । ঈশ্বর চন্দ্রের প্রবর্তিত বিধবা বিবাহ পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) মানুষ মানতে না চাইলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে শ্রীমৎ গোপালচাঁদ সাধু ঠাকুর, রাধাচরণ চক্রবর্তী ও দেবীচাঁদ ঠাকুর বিধবা বিবাহের সার্থক রূপদান করেন । ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান পাদ্রী ডাঃ সি, এস, মীড গুরুচাঁদ ঠাকুরের সমাজ সংস্কার আন্দোলনে সামিল হন । জেলখানার মল-মূত্র পরিস্কার করার হীন কর্ম থেকে নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের মানুষকে তিনি আইনগতভাবে একাজ করা থেকে মুক্ত করেন । ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে ছোটলাট ল্যান্সলট হেয়ারের নিকট ‘পিছিয়ে রাখা’ বঞ্চিত সমাজের উন্নয়নের জন্য দাবীপত্র পেশ করেন । ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে ওড়াকান্দী মীড (M.E.) হাইস্কুল ও শান্তি-সত্যভামা বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রসুতি মায়েদের সেবার জন্য ‘মাতৃমঙ্গল’ দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত হয় । কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বেকার যুবক যুবতীদের স্বনিযুক্তি প্রকল্পে উৎসাহ দান করা হয় । ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে বিভাগের কমিশনার স্যামুয়েল ন্যাথন সাহেবের নিকট গুরুচাঁদ ঠাকুর শিক্ষা, ছাত্রাবাস ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য দাবী পেশ করেন । ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সম্রাট পঞ্চম জর্জের আগমন উপলক্ষে দিল্লি দরবারে গুরুচাঁদ ঠাকুর ‘রজত মেডেল’ লাভ করেন । ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার গভর্ণর লর্ড কারমাইকেলের নিকট দীর্ঘদীন যাবৎ শোষিত, বঞ্চিত মানুষগুলির জন্য বিশেষ সংরক্ষণের দাবীসহ বেশ কয়েক দফা দাবী পেশ করেন । এর ফলে শশিভুষন ঠাকুর, কুমুদ মল্লিক, রাধামোহন সিকদার সহ অনেকে সরকারী চাকুরী লাভ করেন এবং ভীষ্মদেব দাশ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য মনোনিত হন । ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে শ্রী বিরাট চন্দ্র মন্ডল অনুন্নত সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে সেখানে যোগদান করেন । ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ‘হরি-গুরুচাঁদ মিশন’ প্রতিষ্ঠিত হয় । শ্রী সুরেন্দ্র নাথ ঠাকুরের সম্পাদনায় ‘নমঃশূদ্র সুহৃদ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয় । কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল শহরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথী রূপে গুরুচাঁদ ঠাকুর অংশ গ্রহন করেন । ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর তিরোধান ঘটে । ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে খুলনার লবনচোরায় বিলাত ফেরত ব্যারিস্টার তথা গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাতি পি, আর, ঠাকুর উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ঠাকুরনগর গ্রামে মতুয়া মহাসংঘ গঠন করেন । যা আজ ‘সারাভারত মতুয়া মহাসংঘ’ নামে পরিচিত । বঙ্গীয় আইন পরিষদে ব্যারিস্টার পি, আর, ঠাকুর ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে MLC নির্বাচিত হন এবং ওই বৎসরই গুরুচাঁদ ঠাকুরের অনুগামী নেতৃবর্গ (চার জন নমঃশূদ্র)
১/ শ্রী যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল,
২/ শ্রী মুকুন্দ বিহারি মল্লিক,
৩/ শ্রী গয়ানাথ বিশ্বাস, 
৪/ শ্রী দ্বারিকানাথ বারুরী, 

ও (দুই জন রাজবংশী)

১/ শ্রী ক্ষেত্রনাথ সিংহ,
২/ শ্রী নগেন্দ্র নারায়ন রায় ডঃ বি, আর, আম্বেদকরকে গণপরিষদে নির্বাচিত করেন । ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে শ্রীধাম ঠাকুরনগরে মতুয়াধর্ম মহামেলার সূচনা হয় । ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সারাভারত মতুয়া মহাসংঘের তৎকালীন সংঘাধিপতি ৺কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় কলকাতার রাজারহাটে ‘হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয় । ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৫-ই জুলাই ঠাকুরনগরে পি, আর, ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ স্থাপিত হয় |

জয় হরিচাঁদ । জয় মতুয়া ।

তথ্য সংগ্রহঃমতুয়া বার্তা (Facebook page)

No comments: