Wednesday, July 29, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 7 সংযম শিক্ষা লাভ

 

শ্রী হরির ভক্ত শ্রেষ্ঠ নাম শ্রী গোলক।

ব্যাধি হতে মুক্তি পেয়ে সাজিল সেবক।।

নারিকেলবাড়ী গ্রামে বসতি তাহার।

প্রভু কৃপা দৃষ্টি পেয়ে ত্যজিল সংসার।।

সদা রহে ওড়াকান্দী সাজিয়া প্রহরী।

তাহা করে প্রভু যাহা দেন আজ্ঞা করি।।

শ্রী ধামের যাবতীয় গৃহস্থালী কর্ম।

সে সব সম্পন্ন করা গোলকের ধর্ম।।

“শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত” গ্রন্থে রসরাজ।

গোলক চরিত্র কথা লিখে তার মাঝ।।

সংসারের ভার দিয়া শ্রী গুরুচাঁদেরে।

ভক্ত গৃহে হরিচাঁদ নাম দিয়া ফেরে।।

নিয়মিত গৃহকার্য গোলক করিত।

এবে মাঝে মাঝে গুরুচাঁদকে ডাকিত।।

একদিন প্রাতঃকালে সেই ভক্ত বীর।

পাকা ধান্য কাটিবারে মন কৈল স্থির।।

ডাকি বলে গুরুচাঁদে বড় দাদা এস।

আমি ধান কাটি তুমি মোর ধারে বস।।

গোলকের ডাক শুনি প্রভু চলে সাথে।

নৌকায় বসিয়া প্রভু গোলক জলেতে।।

অলসের মত ধান কাটে ধীরে ধীরে।

তামাকু সাজিয়া দিতে বলে বারে বারে।।

কতবার গুরুচাঁদ তামাকু সাজিল।

গোলকের ভাব দেখি মনে ক্রোধ হল।।

তামাকু সাজিতে পুনঃ আজ্ঞা করে যেই।

রাগ করে বলে প্রভু “আমি এতে নেই।।

অলস দুর্ব্বল বুড়া গায়ে নাহি বল।

কাজ নাই বসে খায় তামাকু কেবল।।

যাহা ইচ্ছা কর তুমি আমি চলে যাই।

অকেজো লোকের সাথে বাক্যালাপ নাই।।

এতবলি গুরুচাঁদ ক্রোধিত অন্তরে।

নৌকা ফেলি উঠিলেন বাড়ির উপরে।।

গৃহমধ্যে প্রবেশিতে শ্রী হরি ডাকিল।

একা কেন ফিরে এলে জিজ্ঞাসা করিল।।

মনোক্ষোভে গুরুচাঁদ কহিছে পিতারে।

“অলস গোলক বুড়া কাজ নাহি করে।।

তামাকু সেবনে আছে বড়ই আনন্দ।

বহুবার সাজিয়াছি সহিয়াছি গন্ধ।।

আর নাহি পারি পিতা থাকিতে সেখানে।

অলসের সঙ্গে থাকা নাহি লয় মনে।।

কথা শুনি হরিচাঁদ কহিল প্রভুকে।

“শোন গুরুচাঁদ তুমি চেন না গোলকে।।

তোমাকে দিয়াছি আমি সংসারের ভার।

গোলক করেছে মনে গূঢ় অর্থ তার।।

তুমি বুঝিয়াছ মনে এই ঘর বাড়ি।

গোলক বুঝেছে সে তো বাহির কাছারী।।

ধর্ম খুঁটি দিয়া বান্ধি যেই ধর্ম ঘর।

গোলক বুঝিছে পেলে সেই গৃহভার।।

এ হেন দ্বায়িত্ব পূর্ণ যেই মহাভার।

পার কিনা নিতে করে পরীক্ষা তাহার।।

এ ভার বহিতে লাগে অসীম সংযম।

সংযমেতে প্রাপ্ত হয় ধৈর্য পরাক্রম।।

সামান্য দুখেঃর কাজ জানিবে অস্থায়ী।

মহা দুঃখ সহ্য কর সাজিতে বিজয়ী।।

একেলা গোলক তোমা করিল বিরক্ত।

লক্ষ প্রাণী ভার নিতে তুমি তো অশক্ত।।

তব ধৈর্য পরীক্ষিতে গোলকের মন।

তার কাছে গেলে হেরে এ হ’ল কেমন।।

গোলক অলস কিসে মহাবীর্যবান।

দেখ গিয়া কাটিয়াছে সেই সব ধান।।

ধৈর্য শক্তি না থাকিলে সকলি বিফল।

ধৈর্য ধর কর্ম কর প্রাণে হবে বল।।

আর শোন গুরুচাঁদ আমার বচন।

আমি যবে না রহিব কি হবে তখন।।

সংখ্যাতীত নরনারী সকলি আসিবে।

নানা ভাবে সবে মিলি বিরক্ত করিবে।।

সকলি সহিতে হবে ধৈর্য শক্তি দিয়ে।

সে সব এখনে শেখ এক মন হয়ে।।

আর শোন জ্ঞানী লোক যেই কথা কয়।

যে সয় সে মহাশয় কথা মিথ্যা নয়।।

পিতৃ উপদেশে প্রভু সান্ত্বনা পাইল।

গোলকের কাছে পুনঃ আপনি ধাইল।।

গিয়ে দেখে একি কাণ্ড অত্যাশ্চর্য ময়।

সব ধান কাটিয়াছে বুড়া মহাশয়।।

যে কার্য করিতে লাগে লোক দশজন।

একাকী গোলক তাহা করিল সাধন।।

প্রভুকে দেখিয়া সাধু হাসিয়া বলিল।

“আমাকে ডাকিতে বাবা তোমাকে পাঠাল”।।

গুরুচাঁদ বলে “দাদা সকলি তো জান।

উঠে এস বাড়ী ‘পরে আর জলে কেন”।।

এইভাবে গুরুচাঁদ সংযম শিখিল।

গোলকের প্রতি মন নির্মল হইল।।

প্রভুর অপূর্ব লীলা বুঝা বড় দায়।

গোপালের কৃপাগুণে মহানন্দ কয়।।

No comments: