Wednesday, July 29, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 6 গৃহাশ্রমের শিক্ষা লাভ

 

বিয়া করি গুরুচাঁদ সংসারী সাজিল।

তাঁরে কত নীতি কথা শ্রী হরি কহিল।।

পিতৃসনে গুরুচাঁদ ভক্ত গৃহে যায়।

ভক্তের ভাবের তত্ত্ব সব শিখি লয়।।

কিছুকাল পরে সেই শ্রী হরি ঠাকুর।

গুরুচাঁদে ডাকি বাক্য কহিল প্রচুর।।

“শুন পুত্র তব কাছে মোর সমাচার।

আজি হতে দিনু তোমা সংসারের ভার।।

আয় ব্যায় যাহা কিছু সকলি করিবে।

জানাবার হলে তাহা মাতাকে জানাবে।।

মাতাপুত্রে কর সুখে সংসার রচনা।

তার মধ্যে আর মোরে কভু ডাকিও না।।

গৃহাশ্রম কথা কিছু কহি তব ঠাঁই।

প্রয়োজনে আরো ক’ব কোন চিন্তা নাই।।

গৃহধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম জানিবে নিপুন।

গৃহধর্ম মধ্যে রয় সর্ববিধ গুণ।।

গৃহাশ্রমে ভর করি সর্বজীব রয়।

শাস্ত্রেতে বাখানে গৃহ সর্ব তীর্থ ময়।।

গৃহাশ্রম রক্ষা হেতু কর্মই প্রধান।

সুকর্মে সুফল ফলে পাপে অকল্যাণ।।

আর শুন শাস্ত্র বাক্য কিছু মিথ্যা নয়।

কোন গৃহে ধর্মরাজ বসতি করয়।।

ধর্মযুক্ত গৃহী যেথা পবিত্রা রমনী।

ধর্ম সেথা বাস করে দিবস রজনী।।

ধর্মের আত্মীয় যত সত্য প্রজ্ঞা আদি।

সেই গৃহে বাস করে সুখে নিরবধি।।

“এতৈঃ সার্দ্ধং বসাম্যেব সতীষু ধর্ম্মবৎ সুচ।

সাধুষ্বেতে ষু সর্ব্বেষু গৃহরূপেষু মে সদা।।

উক্তেনাপি কুটুম্বেন বসাম্যেব ত্বয়া সহ।।”

(পদ্ম পুরাণম্)

নিজালয় বসি কর্ম কর ধর্ম মতে।

ধর্মে দিবে যশ-মান ধনের সহিতে।।

রিপু নাশে’ ধর্ম কর্ম সর্ব বিধ ফল।

ষড় রিপু হ’তে দূরে থাক চিরকাল।।

ষড়রিপু দমিবারে আছে শুদ্ধ পথ।

ষড় বর্ষ নারী সঙ্গে না কর সুরত।।

ভিন্ন ভিন্ন রহ দোঁহে পবিত্র আচারে।

রাজপুত্র জন্ম লবে তোমাদের ঘরে।।

আর দিন ডেকে বলে সত্যভামা মায়।

শুনোগো জননী মোর কল্যাণ আশ্রয়।।

নারী ধর্ম কথা কিছু বলিব তোমারে।

তোমা হ’তে সবে শিক্ষা পাবে এ সংসারে।।

নারী জাতি স্বভাবতঃ কোমল হৃদয়া।

পিতৃগৃহে যেতে চায় সুখে মত্ত্ব হৈয়া।।

শাস্ত্রে বলে চিরধীনা রমনী রহিবে।

বাল্যে পিতা প্রৌঢ়ে পুত্র যতনে পালিবে।।

পতি পেয়ে নারী হবে তাঁহার অধীনা।

জীবনে হবে না নারী কখন স্বাধীনা।।

কেবা পিতা কেবা মাতা কেবা বন্ধু ভাই।

পতি ভিন্ন রমনীর অন্য গতি নাই।।

(“কন্যা মাতা পিতা ভ্রাতা কস্যাঃ স্বজনবান্ধবাঃ।

সর্বস্থানে পতির্হ্যেকো ভার্ষায়াস্ত ন সংশয়”)

সু গৃহিনী বলে কারে শুন বলি তাই।

সু অর্থে পবিত্র জান ইথে ভুল নাই।।

পবিত্র রহিয়া যেবা পতি সেবা করে।

লক্ষ্মী আসি বাস করে সদা তার ঘরে।।

পতি গতি করে নারী পতিব্রতা কয়।

সদ্ভাবে চলিলে নারী সতী আখ্যা পায়।।

সৎ থাকে পতি সেবে পতিব্রতা সতী।

“সাধ্বাসতী” কথা তবে বলিব সম্প্রতি।।

সেবাদানে তোষে পতি সন্তোষ বিধানে।

ইহাধিক সময়েতে ডাকে ভগবানে।।

সাধনা-নিপুনা দেবী পরমা প্রকৃতি।

নরগণে বলে তাঁরে ধ্বন্যা সাধ্ব্যা-সতী।।

তাই বলি জননীগো মম বাক্য লও।

সৎ থাকি পতি সেবি সাধ্বা সতী হও।।

ষষ্ঠ বর্ষ পতি পত্নি রহ শুদ্ধ ভাবে।

দেব তুল্য পুত্র কন্যা আবশ্য লভিবে।।

শ্রী হরির মুখে শুনি মধু মাখা বাণী।

করজোড়ে নিবেদন করিল জননী।।

“ওগো পিতঃ এ অধিনী এই ভিক্ষা চায়।

পতি পদে মন যেন সদা মোর রয়।।

তব আজ্ঞা পালিবারে পারে যেন পতি।

তাঁর দাসী হ’তে যেন থাকে মোর মতি।।

মোরা দোঁহে হই যেন তোমার সেবক।

তুমি যে পরম গুরু বিশ্বের জনক।।

এমত বিনয় শুনি পুত্রবধু মুখে।

আনন্দে শ্রী হরিচাঁদ হাসে মহাসুখে।।

শিরে কর দিয়া তারে আশীষ করিল।

জগত জননী হও এই বাক্য বলিল।।

এসব কহিয়া হরি সংসার ছাড়িল।

অবিরাম হরিনাম প্রচার বাড়িল।।

ভক্তসঙ্গে মনো রঙ্গে নাম গুণ গান।

ঘরে ঘরে নাম রসে উঠিল তুফান।।

নাম অস্ত্রে করে হরি প্রথম আবাদ।

কৃষক সাজিয়া ভূমি কর্ষে গুরুচাঁদ।।

ধর্ম অস্ত্রে হরিচাঁদ পাপকে কাটিল।

কর্ম বলে গুরুচাঁদ পুণ্যকে আনিল।।

পবিত্র চরিত্র বীজ তাহে দিল বুনি।

প্রসস্ত গার্হস্থ্য ধর্ম ফলিল তখনি।।

গৃহীজনে পেল মুক্তি অনর্পিত যাহা।

কলি শেষে গুরুচাঁদ বিলাইল তাহা।।

আপনি আচারি গুরু সে ধর্ম শিখায়।

গুরুকৃপা গুণে মহানন্দ তাই কয়।।

No comments: