Wednesday, July 29, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 5 বিবাহ ও সংসার আশ্রমে প্রবেশ

 

দ্বাদশ বরষ কালে      বিদ্যাশিক্ষা ক্ষান্ত দিলে

ভক্ত গৃহে ফিরে প্রভু পিতার সংহতি।

যেখানে যেখানে যায়        নর নারী মুগ্ধ হয়

রূপ দেখি মুখে শুনি মধুর ভারতী।।

চন্দ্র করোজ্জ্বল ভাতি    ভুবন মোহন জ্যোতিঃ

হাসি হাসি মুখে যেন সৌদামিনী রেখা।

আজানুলম্বিত ভুজ         নাসা জিনি খগরাজ

ভালে হেরি দিব্য জ্যোতিঃ চারুচন্দ্র লেখা।।

দ্বিতীয় ভাস্কর সম         কলেবর নিরুপম

ঘন কৃষ্ণ কেশ দোলে পৃষ্ঠের উপরে।

আনন্দে নাচিয়া চলে      চাঁদ যেন ধরাতলে

আধার নাশিয়া যায় চন্দ্রকলা শরে।।

ক্ষীরোদের নাথ হরি      এই ভাব লক্ষ্য করি

অন্তরে উল্লাস প্রভু দেখি গুরুচাঁদে।

মনে ইচ্ছা গৃহীগণে        তরা’বে সকল জনে

তাই গুরুচাঁদে ডাকি কহিলা আহ্লাদে।।

“শোন পুত্র প্রণাধিক       তব প্রতি সমধিক

স্নেহ কৃপা কৃতজ্ঞতা আছে বিদ্যমান।

বংশের গৌরব তুমি       তব প্রতি প্রীত আমি

তোমা পুত্র পেয়ে মোরে গনি ভাগ্যবান।।

শাস্ত্র গ্রন্থ আদি যত        পড়িয়াছ অবিরত

তত্ত্ব জ্ঞান তার মধ্যে লভিয়াছ কত।

নিশ্চয় শিখেছ তুমি       সংসার করম ভূমি

গৃহাশ্রম সর্ব্বশ্রেষ্ঠ সর্ব্ব বাদী মত।।

বেদ ব্যাস মহামুনি        পুরাণ রচিয়া তিনি

উপদেশে তার মধ্যে কহিয়াছে কথা।

তাহা পড়িয়াছ তুমি       অধিক কি কব আমি

মনে কর সেই সব মধুময় গাঁথা।।

গৃহস্থ আশ্রম ধর্ম          ভূতলে নরের জন্য

সর্ব্বতীর্থ সর্ব্ব পুণ্য গৃহাশ্রমে রয়।

গৃহীকে আশ্রয় করি       জীব রহে দেহ ধরি

গৃহাশ্রম সর্ব্বোত্তম সেই হেতু কয়।।

“গার্হস্থাৎ পরমো ধর্ম্মো দ্বিতীয় নাস্তি ভূতলে

গৃহস্থস্য গৃহঃ পুণ্য সত্য পুণ্য-সমন্বিতঃ।

সর্বতীর্থ ময়ো বৈশ্য সর্বদেব সমান্বিতাঃ

গার্হস্থ্যঞ্চ সমাশ্রিত্য সর্বে জীবন্তি জান্তবঃ

তাদৃশংনৈব পশ্য মিহ্যন্যমাশ্রমুত্তম্ ম।।


( পদ্ম পুরাণম্-ভূমিখণ্ডম )

সত্য আদি যুগ হতে      গৃহধর্ম বিধিমতে

পালিয়াছে নরনারী অসংখ্য নৃপতি।

গৃহধর্ম পালি সুখে         অন্তিমে পরম লোকে

বিষ্ণু পদে বিষ্ণু লোকে করেছে বসতি।।

বিশেষতঃ কলিকালে     পরমায়ু ক্ষীণ বলে

নর পক্ষে গৃহধর্ম একান্ত প্রশস্ত।

গৃহাশ্রমী হতে হলে        নারী সহ গৃহে মিলে

ব্রহ্মচর্য সদাচারে হইবে অভ্যস্ত।।

তাই বলি প্রিয়তম         শুন প্রিয় ইচ্ছা মম

যা’ কহিল শান্তি দেবী তোমার জননী।

তোমাকে বিবাহ দিব      বধূ পেয়ে সুখী হ’ব

বংশ রক্ষা হবে যশ ঘোষিবে অবনী।।

পিতৃমুখে এই বাণী        গুরুচাঁদ গুণমনি  শুনি

কানে প্রাণে ভীত মন হল।

মনে ভাবে একি দায়      কেন পিতা হেন কয়

মোর ভাগ্যে এতদিনে দুর্ভাগ্য আসিল।।

মনে মোর এই আশা      ভাঙ্গিয়া বিষয়-বাসা

প্রেম ভরে মহাশূণ্যে উড়িয়া বেড়া’ব।

যদি পরি মায়া-ডোর      আশা ভঙ্গ হবে মোর

মোক্ষ-ফল-দাতা পিতৃ-পদ ভূলে যাব।।

এত ভাবি মনে মনে       পিতৃদেব সন্নিধানে

বলে “তাত! শুন তবে দাসের বচন।

তুমি হরি জন্মদাতা      শান্তি দেবী মোর মাতা

আমি ধন্য পেয়ে তব যুগল চরণ।।

করিব চরণ সার             ভবসিন্ধু হব পার

তব নাম ঘুরে ঘুরে যাব বিলাইয়ে।

মিছা সব পুত্র পৌত্র        মায়া রাক্ষসীর সূত্র

কিবা কাজ দারা সুত পরিজন দিয়ে।।

কর এই আশির্বাদ         পূরে যেন মনো সাধ

তব পুত্র পরিচয় চাহি আবনীতে।

ব্রহ্মত্ব ইন্দ্রত্ব তুচ্ছ         চাহিনা মুক্তি গুচ্ছ

আমার কামনা তব কৃপাদাস হতে।।

এই বাক্য যদি কয়       তবে হরি রসময়

হাসি বলে প্রিয়তম শুন সমাচার।

কর্মফলে জীবগণ         করে ভবে আগমন

কর্ম ফল সুনিশ্চিত অবনী মাঝার।।

শুন শুন মহাশয়           দারা পুত্র মিছা নয়

পুত্র হতে নরে পায় কূলের উদ্ধার।

সৎ পুত্র যদি হয়            পুত্র গুণে মুক্তি পায়

ভগীরথ আদি যথা মহা গুণাকর।।

পুৎ নামে যে নরক        অন্যে সেথা অপারগ

একমাত্র পুত্রে করে সেখানে উদ্ধার।।

“পুত্রেন লোনন জয়তি পুত্রস্তারয়তে কুলম্

সৎ পুত্রেন মহাভাগ পিতামাতা চ জন্তবঃ”।।


( পদ্মপুরানম্ –ভূমিখণ্ডম্ )

অতএব মহাশয়           কিছু নাহি কর ভয়

গার্হস্থ্য আশ্রমে এবে করহে প্রবেশ।

মনে রেখ এই ধর্ম         যাহা কিছু কর কর্ম

সর্ব কর্মফল ভোক্তা প্রভু হৃষীকেশ।।

তাঁর পদে দিয়ে মন       কর কর্ম সর্বক্ষণ

আমিত্ব প্রভুত্ব যেন নাহি জাগে মনে।

তাঁর প্রীতি কাম জন্য     যাহা কর তাহা ধন্য

স্বীয় ভোগে যত কর সবই আকারণে।।

আর শুন বলি কথা        সত্য ধর্ম পবিত্রতা

গৃহী জনগণ পক্ষে জানিবে প্রধান।

গৃহ ধর্ম শ্রেষ্ঠ হয়         তার তুল্য কেহ নয়

বেদ, স্মৃতি সর্বশাস্ত্রে রয়েছে প্রমাণ।।

আর গূঢ় কথা জান        এই কথা বলি কেন

আপনার মাঝে তুমি ডুব একবার।

আপনারে দেখ তুমি     কি কারণে বলি আমি

গৃহী হয়ে গৃহ ধর্মে পাতিতে সংসার।।

আমি এক উদাসীন        নাহি রাত্রি নাহি দিন

কি জানি কাহার টানে ঘুরিয়া বেড়াই।

সংসার করিতে হলে      তব সম পুত্র পেলে

সেই পুত্র ভিন্ন ভার অন্যে দিতে নাই।।

“পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্ম্ম পিতাহি পরমং তপঃ

এই বাণী সত্য বলি যদি জাগে প্রাণে।

আমি আছি তব পিছে     তুমি কেন ভাব মিছে

যাহা বলি তাহা কর আর ভাব কেনে?

পিতৃ মুখে শুনি বাণী       গুরুচাঁদ গুণমণি

আপনার মাঝে যেন ডুবিল আপনি।

স্তব্ধ রহি কিছুকাল        হাসি ওঠে খল খল

বলে “পিতাঃ বুঝিয়াছি আপনার বাণী।।

তুমি পিতা ইচ্ছাময়       কর ইচ্ছা যাহা হয়

কর্তা তুমি মহাপ্রভু আমিতো কারণ।

পূরাতে তোমার ইচ্ছা      বল মোরে যথা ইচ্ছা

তব ইচ্ছা হলে তাহা কে করে বারণ?

যাহা ইচ্ছা তাহা দাও    যা’ করাবে তা’ করাও

তোমার ইচ্ছায় বাধা না করিব আমি।

তব ইচ্ছা বহিবারে      শক্তি যেন দিও মোরে

তব কার্যে তব শক্তি চাই অর্ন্তযামী।।

ধর্মাধর্ম নাহি জানি        পাপ পুণ্য নাহি চিনি

তব শক্তি এই মাত্র জানি যেন মনে।

মম সম দীন হতে     কোন দিনে কোন মতে

তব কার্য যদি হয় ধন্য এ জীবনে।।

“জানামি ধর্ম্মং ন চ মে প্রবিত্তিঃ

জানাম্য ধর্ম্মং ন চ মে নিবৃত্তিঃ

ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদি স্থিতেন

যথা নিযুক্তোস্মি তথা করোমি”


( শ্রী মদ্ভাগবদগীতা )

গুরু চাঁদ মহেশ্বর          পিতা রূপে হরি তাঁর

পিতা পুত্রে করে লীলা নরে অগোচর।

বহুকাল গত হয়          ঠেকিয়া জীবের দায়

ওড়াকান্দী অবতীর্ণ ক্ষীরোদ ঈশ্বর।।

গুরুচাঁদ বুঝে মনে          হরিচাঁদ কি কারণে

বিভা করি গৃহী হ’তে বলিল তাঁহারে।

শিখা’তে গার্হস্থ্য নীতি   কলি জীবে দিতে গতি

গৃহী রূপে সাজিলেন আপনি শঙ্করে।।

সাতবেরে গ্রামে ঘর       মহাপ্রাজ্ঞ গুণধর

রামকৃষ্ণ নামে সাধু ভজনে চতুর।

কৃষ্ণ কথা আলাপনে      দিনে রাতে সর্বক্ষণে

মগ্ন থাকি রহে সাধু প্রেমেতে আতুর।।

তার নারী পুণ্যশীলা       নামে সতী দেববালা

পতিনিষ্ঠা পতিপ্রাণা পতি-পরায়ণা।

পবিত্র চরিত্র দোঁহে        সদা কৃষ্ণ কথা কহে

কৃষ্ণ গত প্রাণ তাহে কৃষ্ণ উপাসনা।।

এ হেন পবিত্র ঘরে        রূপে গুণে আলো করে

আলোকসম্ভুতা কন্যা আবির্ভূতা হ’ল।

যবে কন্যা জন্ম লয়       রামকৃষ্ণ মহাশয়

দেখে যেন গৃহ তার আলোকে ভরিল।।

অপূর্ব ঘটনা দেখি         রামকৃষ্ণ মহাসুখী

মনে ভাবে সতী লক্ষ্মী এল ঘরে মোর।

হেন কন্যা দেখিবারে      ছুটীলেন অন্তঃপুরে

মহাভাবে মহাসাধু হয়েছে বিভোর।।

প্রসূতি গৃহের দ্বারে        রামকৃষ্ণ দৃষ্টি করে

রূপ দেখি পালটিতে নাহি পারে আঁখি।

উজ্জ্বল শ্যামাঙ্গী কন্যা    এ যেন রে নহে অন্যা

যাঁর লাগি ধ্যান কৈল আপনি পিনাকী।।

আয়ত লোচনা দেবী       যেন ভাস্করের ছবি

নিখুঁত নিটোল দেহ রক্ত পদতল।

সুকেশা সুনাসা হেরি      মুখপদ্ম আহা মরি

রূপ-গোলা পাত্রে যেন পদ্ম ঢল ঢল।।

রাম কৃষ্ণ শাস্ত্র জ্ঞাতা     চিত্তে গাঁথা কৃষ্ণ কথা

কৃষ্ণ প্রিয়া সত্যভামা স্মরণে আসিল।

রূপে সত্যভামা সম        এই কন্যা হবে মম

“সত্যভামা” নাম বলি তাহারে ডাকিল।।

জীব ধর্ম অনুসারে         সত্যভামা ক্রমে পরে

মাতৃকোল ছাড়ি দেবী হাঁটিতে শিখিল।

আশ্চর্য করম যত         করে দেবী অবিরত

তাহা দেখি নরনারী আশ্চর্য মানিল।।

চপলা নহেক মাতা        স্থির যান গিরিসুতা

মৃদু মৃদু হাসে দেবী আপনা আপনে।

যেই করে দরশন    সব হয় বিস্মরণ

অপলকে দেখে রূপ ভরিয়া নয়নে।।

পঞ্চম বরষ কালে         মিলি দেবী সখী দলে

মনোরঙ্গে করে খেলা অদ্ভূত প্রকারে।

যেই দেখে সেই কয়    এ মেয়ে তো মেয়ে নয়

শাপভ্রষ্টা দেবী কেহ আসিল সংসারে।।

সুন্দর মৃত্তিকা আনি       গড়ি দেব শূল পাণি

তাঁর আগে জুড়ি পাণি বসে এক মনে।

তুলিয়া কুসুমদাম          হার গাঁথি মনোরম

গলে হার দেয় আর দেয় সে চরণে।।

কান্দি বলে প্রাণেশ্বর      প্রাণাধিক দিগম্বর

দাসী বলে ঠাঁই দাও রাতুল চরণে।

ভোলানাথ আশুতোষ     জানি মোর কত দোষ

দয়া করে রেখ মোরে করুণ নয়নে।।

দেখি এই পূজাচার        দেশবাসী নারী নর

সবে বলে “এই কন্যা হবে কোন দেবী।

দেবী যদি নাহি হবে      তবে বল কি স্বভাবে

পূজা করে দেবতারে মোরা তাই ভাবি।।

পূজা করা বুঝে কিসে     পূজা কেন ভালবাসে

এত নহে ক্ষুদ্রমতি বালিকার খেলা।

ভাগ্যবতী লক্ষ্মীযুতা       হবে বুঝি শৈলসুতা

নৈলে কেন শিব পূজা করে সারা বেলা।।

এই ভাবে দিন চলে       দশম বরষ কালে

হরি-গৃহে যেতে দেবী করিল বাসনা।

গুরুচাঁদ বিভা লাগি        হরিচাঁদ কন্যা মাগি

সাতবেরে উপনীত যেথা বরাঙ্গনা।।

গগনে প্রহর বেলা         প্রভুর কি লীলা খেলা

পথ হাঁটি চলে প্রভু চারিদিকে চায়।

দেখে এক বৃক্ষ তলে      ভাসিয়া নয়ন জলে

বালা-এক শিবপদে ফুল জল দেয়।।

থমকি দাঁড়াল হরি       কার কন্যা এ কিশোরী

গৌরী যেন নামিয়াছে আপনি ভূতলে।

আহা মরি কি মাধুরী      এই নাকি গিরিপুরী

ভষ্ম মাঝে অগ্নি যেন ধিকি ধিকি জ্বলে।।

হেন কালে সেই কন্যা     চক্ষে যার অশ্রুবন্যা

ফিরে দেখে কিবা রূপ জগত মোহন।

প্রভু তাঁরে চেনে চিহ্নে    শৈলসুতা সাজি কন্যে

আসিয়াছে ধরাপরে জীবের কারণ।।

মা! মা! বলি ডাক      দেয় জননী ছুটিয়া যায়

হরিপদে পড়ে দেবী প্রণাম করিয়া।

মহাপ্রভু মহানন্দে          পিতৃস্নেহে প্রেমানন্দে

ধরা হতে বুকে কন্যা লইল তুলিয়া।।

নর ভাবে কহে কথা      বল শুনি ওগো মাতা

কেবা পিতা কেবা মাতা কোনখানে বাড়ী।

সুহাস হাসিয়া দেবী       নিষ্কলঙ্ক পূর্ণ ছবি

বলে “পিতা! পিতা মোর ক্ষীরোদের হরি।।

রসিকের চূড়ামণি         হরিচাঁদ রসখনি

বলে কন্যা! ঠিক কহ না ভাণ্ডিও কথা।

ক্ষীরোদের হরি যিনি     তব পিতা যদি তিনি

আমি জানি তবে তুমি জগতের মাতা।।

হরি গৌরী কিবা কয়     তার তত্ত্ব কেবা পায়

যারা জানে তারা জানে জানে তাঁরা তাঁরা।

মায়ামুগ্ধ নর মোরা        নয়নে আঁধার ভরা

মায়া মোহে অন্ধ সদা নয়নের তারা।।

জীবভাবে বলে মাতা      রামকৃষ্ণ মোর পিতা

চেয় দেখ দেখা যায় আমাদের বাড়ী।

তুমি মোর সাথে চল      বেলা দ্বিপ্রহর হল

মোর সাথে নাহি গেলে দিব না’ক ছাড়ি।।

বলে হরি দয়াময়     “তোর ভাব বোঝা দায়

তোর ভাবে ভব ভোলা আমি কিবা ছার।

তাই তোরে মা মা ডাকি তোর নাম নিয়ে থাকি

ওরে বেটী তোর লীলা অনন্ত অপার”।।

দেবী তায় কহে বাণী     কিবা কও নাহি জানি

সামান্য বালিকা আমি অতি জ্ঞান হীনা।

যদি পদে দেহ ঠাঁই        সফল জনম তাই

অবোধ বালিকা বলে চরণে ঠেলনা।।

রামকৃষ্ণ ভবনেতে      সত্যভামা দেবীর সাথে

দয়াময় হরিচাঁদ হইল উদয়।

ঠাকুরে দেখিয়া তবে      রামকৃষ্ণ মহাভাবে

শ্রী হরির পাদপদ্ম প্রণাম করয়।।

স্তুতি বাক্য কত কয়      পাদ্য অর্ঘ্য আনি দেয়

করজোড়ে বলে “প্রভু বসহ আসনে।

আজি মম কি সৌভাগ্য   তব সম পূজা যোগ্য

পরম রতন বিধি মিলা’ল এ দিনে।।

কুশলে তো আছ তাতঃ   পুত্র পরিজন সাথ

যথারীতি হরিনাম হতেছে প্রচার।

বল এবে মহাজন          কিবা হেতু আগমন

কোন পুণ্যে এ সৌভাগ্য উদয় আমার।।

প্রভু বলে হাসি হাসি    “সাধে কি হেথায় আসি

আমার জননী তুমি বাঁধিয়াছ ঘরে।

মা-হারা সন্তান আমি      ত্রিভুবনে সদা ভ্রমি

মাতৃদরশন হল বহুদিন পরে।।

সে সব এখনে থাক        শীঘ্র গতি হোক্ পাক

তুমি আমি দোঁহে এবে করি আলাপন।

এবে কহ কৃষ্ণ কথা       জুড়াই প্রাণের ব্যাথা

প্রেমময় কৃষ্ণ নাম অশান্তি নাশন।।

রামকৃষ্ণ শুনি বানী        করে কৃষ্ণ কৃষ্ণ ধ্বনি

প্রেমানন্দে মত্ত হয়ে করে ছোটাছুটি।

কখনে অন্দরে যায়        ছুটে আসি পুনরায়

শ্রী হরির পদতলে করে লুটাপটি।।

হরি বলে শুন সাধু         ব্যস্ত কেন শুধু শুধু

তব ঘরে অন্নপূর্ণা করিছে বিরাজ।

সকলি জোটাবে তিনি  তুমি আমি কিবা জানি

ছুটাছুটি লুটাপুটি ছেড়ে দাও আজ।।

অনন্ত প্রভুর লীলা        কে বুঝিবে তাঁর খেলা

কি অভাবে যেথা রয় কমলার পতি।

শ্রী হরির বার্তা পেয়ে      নরনারী আসে ধেয়ে

খাদ্য দ্রব্য দধি দুগ্ধ আনে শ্রীঘ্র গতি।।

দেবী সত্যভামা ধন্যা      কন্যারূপে অন্নপূর্ণা

স্বহস্তে রন্ধন দেবী করিল সত্তর।

হরি কৃষ্ণ দুইজনে         বসে খায় একখানে

সত্যভামা দেবী হল বন্টনে তৎপর।।

হরিচাঁদ বলে হাসি         বহুদিন উপবাসী

আমি যেন ছিনু ঘরে জননী অভাবে।

মাতা দেয় অন্ন আজি     আপনি জননী সাজি

পরিতৃপ্ত হল প্রাণ ভোজন উৎসবে।।

শুন রামকৃষ্ণ এবে        আসিলাম কিবা ভেবে

সেই তত্ত্ব বলি আমি পরম আহ্লাদে।

মোর জ্যেষ্ঠ পুত্র সনে     তোমার দুহিতা ধনে

বিভা দিতে চাই আমি বহু মনোসাধে।।

জননীর পানে চায়        হাসি হাসি কথা কয়

তাহা শুনি সত্যভামা মধুর হাসিল।

হাসি দেখি বলে হরি       “দেখ রাম দৃষ্টি করি

মোর বাক্যে কন্যা তব সন্দেহ নাশিল।।

রামকৃষ্ণ দেখে চেয়ে    আনন্দে হাসিছে মেয়ে

মনের সংসয় তার সব দূরে গেল।

রামকৃষ্ণ বলে কান্দি    মোরে ছেড়ে ওড়াকান্দী

সোনার পুতুল আজি বিদায় হইল।।

শুন হরিচাঁদ ভাই     আর কোন কথা নাই

তব গৃহ লক্ষ্মী তুমি লও নিজ ঘরে।

নাহি জানি কোন পুণ্যে   সতী হয়েছিল কন্যে

আমি ধন্য এতদিনে পুষিয়া মাতারে।।

আহারান্তে যবে আসি      দিন স্থির করে বসি

রামকৃষ্ণ বলে মোর প্রাণে না জুড়ায়।

প্রাণাধিকা প্রিয়তমা      কন্যা মোর সত্যভামা

তারে ছেড়ে গৃহে মোর থাকা হবে দায়।।

মোর মনে সদা কয়       কন্যা যদি ছেড়ে যায়

মম প্রাণ ধরাপরে আর নাহি রবে।

যা’ হোক তা হোক ভাই বিবাহেতে কার্য নাই

এই কন্যা গেলে চলে আর কি আসিবে।।

আত্মীয় স্বজন যত         বলে তারে কত মত

শাস্ত্র গ্রন্থ লোকাচার শুনা ‘ল প্রচুর।

শেষক্ষণে বলে তারে      কিবা ফল দুঃখ করে

কন্যা নিল ভগবান শ্রী হরি ঠাকুর।।

রামকৃষ্ণ হল শান্ত       শোক দুঃখ করে ক্ষান্ত

সুস্থ মনে দিন স্থির সকলে করিল।

পুত্র কন্যা দেখাদেখি      করে সবে মহাসুখী

রামকৃষ্ণ গুরুচাঁদে আশির্বাদ দিল।।

উত্তাল আনন্দ রোল     বাজে কংস বাজে ঢোল

ভেরী তুরী বাজে আর বাজিছে শানাই।

পুত্র বিভা দিবে হরি       দলে দলে আসে নারী

ক্ষণে ক্ষণে হুলুধ্বনি করিছে সবাই।।

শ্রী হরির ভক্ত যত         সকলেই আনন্দিত

অগনিত দ্রব্য কত আনে ভারে ভারে।

শান্তি দেবী পুত্রধনে        সাজাল আপন মনে

মস্তক আঘ্রাণ করি চুমা দিল শিরে।।

পিতৃ মাতৃ পদে পড়ি      পদধুলি শিরে ধরি

গুরুচাঁদ যাত্রা কৈল কন্যার ভবনে।

আহা কি অপূর্ব রূপ        ভরিয়া নয়ন কূপ

দেখামাত্র প্রাণ কাড়ি লয় একটানে।।

রামকৃষ্ণ গৃহোপরে        অপরূপ শোভা করে

ঠিক যেন দেবরাজ ইন্দ্রের ভবন।

আলো করে ঝলমল       মহানন্দে কোলাহল

মহা সিন্ধু মাঝে যেন উঠিছে গর্জ্জন।।

বরকন্যা সভাস্থলে         আসিয়া উদয় হলে

রূপ দেখি সভাজন মূর্চ্ছাপ্রায় হল।

গুরুচাঁদ সত্যভামা          সদাশিব আর উমা

গিরিপুরি ছাড়ি যেন ধরাতে নামিল।।

এইভাবে বিয়া হয়         গুরুচাঁদ রসময়

গৃহধর্ম্মে অতঃপর করিল প্রবেশ।

গৃহীজনে রক্ষিবারে        হরি-আজ্ঞা অনুসারে

ওড়াকান্দী মহেশ্বর গুরুচাঁদ বেশ।।







No comments: