Monday, July 13, 2020

একাদশী পর্ব :- 5 বিজয়া একাদশীর মাহাত্ম্য


 স্কন্দপুরাণো এই একাদশী মাহাত্ম্য এইভাবে বর্নিত রয়েছে। যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন — হে বাসুদেব! ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর মাহাত্ম্য অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন হে যুধিষ্ঠির! এই একাদশী, বিজয়া, নামে পরিচিত। এই একাদশী সম্পর্কে একসময় দেবর্ষি নারদ স্বয়ম্ভূ ব্রক্ষাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি এই প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা আমি এখন তোমাকে বলছি। এই প্রবিএ পাপবিনাশকারী ব্রত মানুষকে জয় দান করে বলে, বিজয়া,নামে প্রসিদ্ধ। পুরাকালে শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন। সীতা ও লক্ষণের সঙ্গে তিনি পঞ্চবটী বনে বাস করতেন।সেই সময় লঙ্কাপতি রাবন সীতাকে হরণ করে। সীতার অনুসন্ধানে রাম চন্দ্র চতুর্দিক ভ্রমন করতে থাকেন। তখন মৃতপ্রায় জটায়ুর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। জটায়ু রাবণের সীতাহরণের সমস্ত বৃওান্ত রামচন্দ্রকে জানিয়ে মৃত্যুবরন করে। এরপর সীতা উদ্বারের জন্য বানররাজ সুগ্রীবের সাথে বন্ধুত্ব করেন। ভগবান রামচন্দ্রের কৃপায় হনুমান লঙ্কায় গমন করেন।সেখানে আশোক বনে সীতাদেবীকে দর্শন করে শ্রীরাম প্রগত অঙ্গুরীয় (আংটি) তাকে অর্পণ করেন। ফিরে এসে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে লঙ্কার সমস্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন। হনুমানের কথা শুনে রামচন্দ্র সুগ্রীবের পরামর্শে সমুদ্রতীরে যান।সেই দুস্তর সমুদ্র দেখে তিনি লক্ষ্মণকে বলেলেন —হে লক্ষ্মণ! কিভাবে এই অগাধ সমুদ্র পার হওয়া যায়। তার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। উওরে লক্ষ্মণ বলেলেন —হে পুরুষোওম! সর্বজ্ঞাতা আদিদেব আপনি, আপনাকে আমি কি উপদেশ দেব? তবে বক্দালভ্য নামে এক মুনি এই দ্বীপে বাস করেন। এখান থেকে চার মাইল দূরে তার আশ্রম। হে রঘব, আপনি সেই প্রাচীন ঋষিশ্রেষ্ঠকে এর উপায় জিজ্ঞাসা করুন।,লক্ষ্মণের মনোরম কথা শুনে, তারা সেই মহামুনির আশ্রমে উপনীত হলেন।

ভগবান রামচন্দ্র ভক্তরাজ সেই মুনিকে প্রণাম করলেন। মুনিবর রামচন্দ্রকে পুরাণপুরুষ বলে জানতে পারেলেন। আনন্দভরে জিজ্ঞাসা করলেন —হে রামচন্দ্র! কি কারনে আপনি আমার কাছে এসেছেন, তা কৃপা করে বলুন। শ্রীরামচন্দ্র বলেলেন —হে মুনিবর! আপনার কৃপায় সৈন্যসহ আমি এই সমুদ্র তীরে উপস্থিত হয়েছি। রাক্ষসরাজের লঙ্কা বিজয় করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। যাতে এই ভয়ঙ্কর সমুদ্র উওীন হতে পারি তার উপায় জানবার জন্য আমরা আপনার কৃপা প্রার্থনা করি।মুনিবর প্রসন্নচিওে পদ্মলোচন ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে বলেলেন —’হে রাম। আপনার অভীষ্ট সিদ্বির জন্য যে শ্রেষ্ঠ ব্রত করণীয় আমি তা বলছি।ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ’ বিজয়া’ নামক একাদশী ব্রতপালনে আপনি নিশ্চয়ই সৈন্যসহ সমুদ্র পার হতে পারবেন। এই ব্রতের বিধি শ্রবন করুন। বিজয় লাভের জন্য দশমীর দিনে সোনা, রুপা,তামা অথবা মাটির কলস সংগ্রহ করে তাতে জল ওআমপাতা দিয়ে সুগন্ধি চন্দনে সাজিয়ে তার উপর সোনার নারায়ণমূর্তি স্থাপন করবেন।একাদশীর দিন যথাবিধি প্রাতঃস্নান করে কলসের গলায় মালা চন্দন পড়িয়ে উপযুক্ত স্থানে নারিকেল ওগুবাক দিয়ে পূজা করবেন। এরপর গন্ধ, পুষ্প, তুলসী, ধুপ-দ্বীপ নৈবিদ্যি ইত্যাদি দিয়ে পরম ভক্তিসহকারে নারায়ণের পূজা করে হরিকথা কীর্তন সমস্ত দিন যাপন করবেন। রাএি জাগরন করে অখন্ড ঘি-প্রদীপ প্রজ্বলিত রাখবেন। দ্বাদশীর দিন সুর্যোদয়ের পর সেই কলস বিসর্জনের জন্য কোন নদী, সরোবর বা জলাশয়ের কাছে গিয়ে বিধি অনুসারে পূজা নিবেদনের পর তা বিসর্জন দেবেন।তার পর ঐ মুর্তি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে দান করবেন। এই ব্রত প্রভাবে নিশ্চয়ই আপনার বিজয় লাভ হবে। ব্রহ্মা বলেলেন —হে নারদ! ঋষির কথামতো ব্রত অনুষ্ঠানের ফলে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন।সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়,রাবণবধের মাধ্যমে শ্রীরামচন্দ্র অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন। তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পালন করবেন তাদের এজগতে জয়লাভ এবং পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে। হে যুধিষ্ঠির! এই কারণে এই বিজয়া একাদশী ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য। এই ব্রতকথায় শ্রবন-কীর্তন মাএেই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

No comments: