Friday, July 31, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 14 অর্থ উপার্জন

বিলে ভরা জলাদেশ ওড়াকান্দী আদি।

নিকটে নাহিক কোন স্রোতস্বতী নদী।।

শহর বন্দর দূরে যেতে কষ্ট-সাধ্য।

পদ ব্রজে যাতায়াত বড়ই অসাধ্য।।

বর্ষমধ্যে বেশী ভাগ বিলে খালে জল।

নৌকা যোগে যাতায়াত করেন সকল।।

নিত্য প্রয়োজন দ্রব্য মেলা বড় ভার।

নৌকা যোগে আনে তাই দ্রব্যের সম্ভার।।

দেশ জাত ধান্য পাট সরিষা কলাই।

নৌকায় চালানি হত করিয়া বোঝাই।।

এই ভাবে বহুজনে ধনাঢ্য হইল।

ইহা দেখি গুরুচাঁদ অন্তরে ভাবিল।।

“বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ” এই সত্য বাণী।

আপন জীবনে আমি পালিব এখনি।।

আর এক কথা মোর মনেতে আসিল।

মল্লকান্দী বাসী সবে যে কার্য করিল।।

দুর্ভিক্ষেতে অন্নাভাব সেই দেশে হয়।

অনাহারে কতজন প্রাণে মারা যায়।।

অসহ্য ক্ষুধার জ্বালা সহিতে না পারি।

দলে দলে দেশান্তরী হ’ল নরনারী।।

যারা কেহ নিরুপায় রহিলেন পিছে।

কোনক্রমে ভিক্ষা অন্নে রহিলেন বেঁচে।।

জল গণ্ড জমা জমি ধান্য নাহি হয়।

পর গৃহে কার্য করি প্রাণে বেঁচে রয়।।

অসহ্য দুঃখের জ্বালা সহা বড় ভার।

মনে চিন্তা করে সবে কিসে প্রতিকার।।

ওড়াকান্দী অবতীর্ণ দয়াল ঠাকুর।

তার কাছে গেলে দুঃখ হতে পারে দূর।।

এত মনে করি তারা এল ওড়াকান্দী।

পিতার চরণে পড়ি বলে কান্দি কান্দি।।

“পীড়িতের ঘরে তুমি আনন্দ সদন।

এজাতি হয়েছে ধন্য পেয়ে শ্রী চরণ।।

জানি মোরা দয়া গুণে মৃতে প্রাণ পায়।

জ্যান্তে মরা আছি মোরা করহে উপায়।।

জলগণ্ড দেশে বাস অফলা পতিত।

অনাহারে কাটে দিন নাহিক বিহিত।।

নিরাশায় আশা তুমি দীনের সহায়।

দয়া করি কর প্রভু মোদের উপায়।।

ভক্তজনে ভক্তিগুণে তব দয়া পায়।

ভক্তিহীন মোরা দীন অতি দুরাশয়।।

নিজগুণে দয়া তাই হবে গো করিতে।

তুমি ধরা নাহি দিলে কে পারে ধরিতে।।

কি জানি কি পুণ্য ফলে তোমা হেন নিধি।

দীন নমঃশূদ্র কুলে মিলিয়াছে বিধি।।

চরণ ভরসা করি আসিয়াছি মোরা।

চরণ পরশে কাট’ দুঃখের পসরা।।

সবে মিলি কান্দি কান্দি এই কথা কয়।

কান্না দেখি দয়া হল হরির হৃদয়।।

সকলে ডাকিয়া হরি কহিল বচন।

“আমি যাহা বলি তোরা সবে তাহা শোন।।

আজন্ম পতিত তোরা মূর্খ অতিশয়।

মানব জীবন তত্ত্ব চিনিলিনা হায়।।

বড়ই অদ্ভুদ শুনি বন্ধা নাকি মাটি।

মাটি মা যে দুগ্ধ দেয় চাষী হলে খাঁটি।।

অফলা নহেক মাটি তোরা যে অকর্মা।

মাটি মা যে বসুমতী দানে পুণ্য ধর্মা।।

মন দিয়ে কৃষি কর পূজ মাটি মায়।

মনে রেখ বেঁচে আছ মাটির কৃপায়।।

আর শুন বলি কথা লক্ষ্মী লভিবারে।

“বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী” মানিও অন্তরে।।

বসুমতি দিবে খাদ্য কথা মিথ্যা নয়।

বাণিজ্য আসনে লক্ষ্মী সদা বসি রয়।।

না হলে লক্ষ্মীর কৃপা কোন গতি নাই।

লক্ষ্মীর সহিতে রহে গোলক গোঁসাই।।

লক্ষ্মীর কৃপাতে বাড়ে ধন ধান্য শ্রী।

ইহ জনমতে বল আর কাম্য কি।।

আর বলি শুন সবে বাণিজ্যের কথা।

মূলধন নাহি ভেবে পেয়ে না’ক ব্যাথা।।

নিজের মধ্যেতে দেখ আছে মূলধন।

পরম সম্পদ তারে কহে পিতৃধন।।

পিতৃধন ভাঙ্গা যেন কভু নাহি পড়ে।

আপনি আসিবে লক্ষ্মী তোমাদের ঘরে।।

এই মূলধন রাখ যতন করিয়া।

এবে আমি যাহা বলি শুন মন দিয়া।।

শুন্য হস্তে যাবে সবে বন্দরের পরে।

আমি যাহা বলি কর সরল অন্তরে।।

বিবিধ সামগ্রী কত আনিবে বন্দরে।

কাঁচামাল বলি যাহা কহে পরস্পরে।।

সেই দ্রব্য যেই আনে তাহা হতে লয়ে।

পাইকারী মতে লহ দরটি কাটিয়ে।।

সেই দ্রব্য নিজ হাতে খুচরা বেচিয়ে।

লভ্যাংশ আপনি লহ নিশ্চিত হইয়ে।।

এই ভাবে দেখ হবে সংসার সচল।

অতঃপর নৌকা যোগে আন সব মাল।।

এভাবে বাণিজ্য কর তোমরা সবাই।

শ্রীলক্ষ্মী আসিবে ঘরে ইথে ভুল নাই।।

সত্য কথা কবে সদা এক দরে কিনে।

এক দরে বেচ তাহা সঠিক ওজনে।।

দুষ্ট বুদ্ধি করি ঠিক ওজন না দিলে।

বাণিজ্য হইবে ধ্বংস যাবে রসাতলে।।

দরাদরি জুয়াচুরি ছাড়িবে বিশেষ।

এক দর এক কথা নাহি কোন ক্লেশ।।

আর কথা শুন সবে যাহা আমি বলি।

সংসারকে ধর্ম ক্ষেত্র জানিবে সকলি।।

ধর্মের বাজার হেথা ধর্ম দণ্ড ধারী।

ধর্ম পথে কর কর্ম ধর্ম আস্থা করি।।

এত যদি মম পিতা তাহা দিগে বলে।

পিতাকে প্রণমি সবে ঘরে গেল চলে।।

মম পিতৃ বাক্য তারা পালিছে জীবনে।

মল্লকান্দী উঠিতেছে উন্নতি সোপানে।।

আমার পিতার বাক্য আমি মান্য করি।

বাণিজ্যে আনিব ঘরে মাতা ধনেশ্বরী।।

এত মনে ভাবি প্রভু করে আয়োজন।

নৌকাদি সংগ্রহ করে বাণিজ্য কারণ।।

মল্লকান্দী বাসী সাধু গিরি কির্ত্তনীয়া।

মনোভাব বলে তারে নিরালে বসিয়া।।

চৌধুরী শ্রী নীলকান্ত ওড়াকান্দী বাসী।

তাঁর সাথে গুরুচাঁদে আসে মিশামিশি।।

উভয়ের সঙ্গে প্রভু পরামর্শ করি।

বাণিজ্য করিতে প্রভু গড়াইল তরী।।

দাড়ী মাঝি মাল্লাগণে সংগ্রহ করিল।

শ্রী গুরুচাঁদের তরী চালানেতে গেল।।

লভ্যাংশ ভাগে ভাগী জুটিল সকল।

তিন চারি জনে মিশি করে একদল।।

নৌকার চালান যবে বিদেশেতে যাবে।

পিতা আগে গুরুচাঁদ দাঁড়াইল তবে।।

মাল্লা মাঝি সবে আসি নিকটে দাঁড়ায়।

বিনয় বচনে তবে গুরুচাঁদ কয়।।

“আপনি কহিলা তাত বাণিজ্যেতে লক্ষ্মী।

বাণিজ্য করিব আমি তুমি রহ সাক্ষী।।

তোমার চরণে জন্ম গঙ্গা ভাগীরথী।

গঙ্গা বক্ষে যাবে তরী এ মোর ভারতী।।

তব পদ বাঞ্ছা করে লক্ষ্মী ধনেশ্বরী।

মোর তরী পরে চলো নিজে কৃপা করি।।

শ্রীপদ পরশ যদি লাগে মোর নায়।

নিশ্চয় উঠিবে লক্ষ্মী আমার নৌকায়।।

আমি কি বাণিজ্য করি সকলি তোমার।

তোমার তরণী প্রভু মোরাও তোমার।।

তোমার তরণী তুমি দেহ যাত্রা করি।

শ্রীহরির তরী যাবে বলিয়া শ্রীহরি।।

ছল ছল আঁখি জল জুড়ি দুই পাণি।

শ্রীগুরু কহিছে কথা শুনে সর্ব প্রাণী।।

শ্রীহরি শুনিয়া তবে মধুময় কথা।

আনন্দ অন্তরে চলে তরী বান্ধা যেথা।।

আপনি উঠিলা হরি তরণী উপরে।

প্রেমানন্দে সবে মিলি হরিধ্বনি করে।।

“শ্রীহরিচাঁদের জয়” গাহে এই বোল।

শঙ্খ শিঙ্গা-ডঙ্কা বাজে আর বাজে খোল।।

এক তরী ছাড়ি প্রভু অন্য নায় যায়।

আনন্দে ভক্তে সবে কহে জয়-জয়।।

গলবস্ত্র গুরুচাঁদ তরী ধরে চলে।

বক্ষ তাঁর ভেসে যায় নয়নের জলে।।

মহেশ বিশ্বাস নাম তালতলা গ্রাম।

প্রধাণ বেপারী সেই এবে কহিলাম।।

নিজাম কান্দীর পরে আদি বাস ছিল।

শ্রী হরির পদ পেয়ে নামে মত্ত হল।।

মহেশ নাচিয়া চলে সকলের আগে।

প্রভু গুরুচাঁদ চলে তাঁর পুরোভাগে।।

নর্ত্তন কীর্ত্তন কত ভক্তগণে করে।

তরী হইতে হরিচাঁদ নামিলেন তীরে।।

মাল্লা মাঝি ছিল যত ভূমে লুটি পরে।

প্রণাম করিয়া উঠি রহে করোজোড়ে।।

মহেশে ডাকিয়া তবে হরিচাঁদ কয়।

“শুনহে মহেশ মোর বেপারী মশায়।।

মহেশ বেপারী নাম হল সেই হতে।

শ্রীহরির মাঝি বলি ধন্য এ জগতে।।

এই মহেশের কীর্তি শুনিতে অপূর্ব।

হরিলীলামৃতে আছে মহেশের পর্ব।।

‘বেপারী জীবনে কীর্তি যাহা শুনিয়াছি।

ভক্ত পদে প্রণমিয়া তাই বলিতেছি।।

একত্রে শতেক নৌকা বেপারেতে যায়।

সর্বাপেক্ষা বেশী লাভ মহেশের নায়।।

লোকসান দূরের কথা লাভ কিছু কম।

কভু হয় নাই তার নায় একদম।।

এ হেন দেখিয়া তারে হরিচাঁদ কয়।

মহেশের নায় যেন লক্ষ্মীবসে রয়।।

এ হেন বেপারী ছিল বিশ্বাস মহেশ।

তাঁর গুণে বাধ্য রহে হরি হৃষিকেশ।।

পরম নৈষ্ঠিক ছিল মহেশ বিশ্বাস।

নিষ্ঠা গুণে কাটে তার কর্ম বন্ধ ফাঁস।।

এবে শুন বলি এক মধুর ঘটনা।

জলন্ত বিশ্বাসে তার না মিলে তুলনা।।

সেই মহেশেরে ডাকি বলে হরি দয়াময়।

“শুনহে মহেশ মোর মনে যাহা লয়।।

“বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ” বাক্য সত্য বটে।

কেমন বাণিজ্যে এই বাক্য সত্য ঘটে।।

নারায়ণ রহে সদা লক্ষ্মীদেবী সাথ।

লক্ষ্মীনারায়ণ রহে জুড়ি দুই হাত।।

ধর্মের আসনে বসে প্রভু নারায়ণ।

ধর্মের বাণিজ্য হলে লক্ষ্মী দেয় ধন।।

এক দরে বেচাকেনা নাহি জুয়াচুরি।

সাধু বলে এক কথা জানেনা চাতুরী।।

নিজ দ্রব্য মিথ্যা বলি না বলিও ভাল।

যে দ্রব্যে যে গুণাগুণ বলিবে সকল।।

ওজনে মাপিবে ঠিক কম নাহি দিবে।

এভাবে বাণিজ্য হলে ধন তাতে পাবে”।।

প্রভুর মুখেতে শুনি এই কৃপা বাণী।

প্রেমানন্দে সে মহেশ লোটায় ধরণী।।

কাঁদিয়া বলেছে “নাথ এই ভিক্ষা চাই।

পারি যেন তব বাক্য পালিতে সদাই।।

তোমার তরণী প্রভু তোমার চালান।

তোমার ঘরণী লক্ষ্মী দিবে সব ধন।।

যাহা কর তুমি মোরা উপলক্ষ্য।

তোমার আজ্ঞাতে চলে দেব যক্ষ রক্ষ।।

সকলি করত তুমি হরি গুণধাম।

তুমি কর সব কাজ মোরা পাই নাম।।

এমন দয়াল হায় আর কোথা নাই।

কিছু নাহি করি মোরা তবু সব পাই।।

এমনি নৈষ্ঠিক ছিল সেই মহা সাধু।

অবিরত মত্ত পানে হরি নাম মধু।।

এবে শুন বলি তার মধুর চরিত্র।

শ্রবণে কলুষ নাশ জীবন পবিত্র।।

নৌকার চালান হল ওড়াকান্দী বাড়ী।

হরির তরণী সব চলে সারি সারি।।

দূরদেশে সবে যায় বাণিজ্য কারণে।

মাঝে মাঝে ঘাটে আসে হিসাবাদি দানে।।

প্রতিবারে দেখা যায় মহেশের নায়।

সর্বাপেক্ষা বেশি লাভ হয়েছে সদায়।।

একবার আগে ভাগে সব নৌকা এল।

দৈবক্রমে মহেশের কিছু দেরী হল।।

সকল বেপারী আসে প্রভুর নিকটে।

আপন হিসাব দেয় সবে নিষ্কপটে।।

অর্থপানে হরিচাঁদ ফিরিয়া না চায়।

মহাপ্রভু গুরুচাঁদ সব বুঝি লয়।।

সহসা জিজ্ঞাসে হরি গুরুচাঁদ ঠাঁই।

কে কত পেয়েছ টাকা বল দেখি তাই।।

আজ্ঞা মাত্র গুরুচাঁদ হিসাব কহিল।

হিসাব শুনিয়া হরি হাসিয়া উঠিল।।

পরে বলে “তোরা সবে কি কাজ করিস্।

মহেশের সঙ্গে তোরা সকলে ঠকিস্।।

কি যে বেটা করে সেটা বোঝা বড় দায়।

যতেক রাজ্যের টাকা (যেন) বাঁধে তার গায়”।।

এই মাত্র কথা যবে বলিল শ্রী হরি।

উপনীত শ্রীমহেশ বলে হরি হরি।।

মহেশ আসিয়া বন্দে শ্রীহরির চরণ।

মহেশে দেখিয়া হরি বড় খুশি মন।।

ছলা করি বলে হরি মহেশের ঠাঁই।

“বলহে আমারে তুমি মহেশ গোঁসাই।।

কি যে কর কোথা থাক বোঝা বড় দায়।

রাজ্য ভরা টাকা যেন চিনিছে তোমায়।।

এক সাথে সবে জুটি বেপারেতে যাও।

সব হতে বেশী টাকা তুমি কিসে পাও।।

প্রভুর বচন শুনি মহেশ হাসিল।

অন্তরে রাখিল ভক্তি রহস্যে কহিল।।

“শুন হরি লাজে মরি তোমার বচন।

মহেশ বেপারী নাকি হয়েছে এমন।।

বড়ই যোগ্যতা রাখে মহেশ বেপারী।

দিবারাত্রি বলে সবে শুনে লাজে মরি।।

আমার মনের কথা বুঝিলনা কেহ।

কিছুতে গেলনা তাই মনের সন্দেহ।।

মহেশের গায়ে বেঁধে টাকা যদি আসে।

কেবা টাকা দেয় কেহ জানে কি এ দেশে।।

মহেশ এনেছে টাকা সবে ইহা কয়।

যেই বেটা টাকা দেয় চিনে না তাঁহায়।।

মূল ছেড়ে ডাল নিয়ে করে ঝাঁকা ঝাকি।

আসল ফেলিয়া সবে তুলে নেয় মেকি।।

টাকাত লক্ষ্মীর বাসা লক্ষ্মী যার দাসী।

সেই বেটা ওড়াকান্দী আছে চুপে বসি।।

টাকা’ত সামান্য ধন সেই বেটা দিলে।

লক্ষ্মীর বাঞ্ছিত ধন অনায়াসে মিলে।।

সে বেটার কথা কোন বেটা নাহি বলে।

এই দুঃখে মহেশের বুক যায় জ্বলে।।

ওগো হরি শ্রীমুরারি এই ভিক্ষা চাই।

সে বেটার কথা যেন ভুলে নাহি যাই।।

এত বলি শ্রীমহেশ ভূমেতে লোটায়।

নয়নের জলে তার ধরা ভিজে যায়।।

শ্রীনাথ হরিচাঁদ বড় প্রীত মনে।

সবারে ডাকিয়া বলে মধুর বচনে।।

“দেখ সবে কোন ভাবে বহু লভ্য হয়।

মহেশের মত হলে লাভ করা যায়।।

এই ভাবে গুরুচাঁদ বাণিজ্য করিল।

বাণিজ্যের ফলে বহু ধন ঘরে এল।।

বয়স বিংশতি কালে বাণিজ্যে নামিল।

দশ বর্ষকাল মধ্যে বহু লভ্য হল।।

বিভিন্ন বন্দরে করে তরণী চালান।

যেথা যায় সেথা হয় বহু লাভবান।।

শ্রীগুরুচাঁদের নায় যেবা ভাগী হ’ল।

দারিদ্র ঘুচিল তাঁর ধন রত্ন পেল।।

বিদেশে নৌকার মাল চালানাদি করে।

বড়ই ঝঞ্ঝাট তা’তে বুঝিলা অন্তরে।।

মনে ভাবে স্থায়ী ভাবে কোন বন্দরেতে।

নির্মাণ করিয়া গৃহ রহিবে তাহাতে।।

ইতি মধ্যে জন্মিয়াছে সুধন্য কুমার।

বয়স তখন তার পঞ্চম বছর।।

বাণিজ্যে আনিয়া অর্থ প্রভু ভাবে মনে।

গৃহাদি উন্নতি করি বিশেষ যতনে।।

আসাম হইতে আনে কাষ্ঠ মূল্যবান।

টিনের ছাউনি গৃহ করিল নির্মাণ।।

ক্রমেই উন্নতি দেখি গুরুচাঁদ প্রতি।

মহাপ্রভু হরিচাঁদ মনে হর্ষ অতি।।

গৃহে ধর্মে সুনিপুণ সংযত চরিত্র।

বেশ ভূষা আচরণে সকলি পবিত্র।।

গম্ভীর বচন কহে চপলতা শূন্য।

বাল, বৃদ্ধ, যুবা সবে তাঁরে করে মান্য।।

গুরুচাঁদ দরশনে ভকতে আনন্দ।

তাহা দেখি হরিচাঁদে হয় প্রেমানন্দ।।

ধর্ম নীতি শাস্ত্রে গুরুচাঁদ দক্ষ।

পিতৃ ধর্ম রক্ষিবারে একমাত্র লক্ষ্য।।

এই ভাবে গুরুচাঁদে দেখিয়া নয়নে।

হরিচাঁদ যেতে চায় নিজ নিকেতনে।।

আপনার কর্ম ভার গুরুচাঁদে দিয়া।

হরিচাঁদ যেতে চায় পৃথিবী ছাড়িয়া।।

উপযুক্ত সর্বোত্তম গুরুচাঁদ বটে।

শক্তি তাই দিতে চায় শ্রীগুরু নিকটে।।

বাসাঘর করিবারে গুরুচাঁদ ভাবে।

হরিচাঁদ ইচ্ছা করে তার আগে যাবে।।

বার’শ চুরাশি সাল ফাল্গুন আসিল।

উত্তর আয়নে হরি স্বদেহ ত্যাজিল।।

আপন শক্তি নাথ গুরুচাঁদে রাখে।

সে শক্তি শ্রীগুরুচাঁদ ঐশ্বর্যেতে ঢাকে।।

হরি লীলামৃত গ্রন্থে তিরোভাব খণ্ডে।

কবি রসরাজ লিখে মধুর প্রবন্ধে।।

কোন ভাবে হরিচাঁদ দেহ তেয়াগিল।

কোন ভাবে তার শক্তি গুরুচাঁদে গেল।।

পূর্বাপর রাখিয়াছ গ্রন্থের সম্বন্ধ।

সংক্ষেপে বর্ণিব কিছু সেই যে প্রবন্ধ।।

মতুয়া ভক্তের পদে কোটি দণ্ডবৎ।

যাহাদের কৃপাগুণে পাপী হয় সৎ।।

গুরু গোপালের দয়া শিরোপরে ধরি।

তরিতে সংসার-সিন্ধু বল হরি হরি।।

No comments: