Monday, July 13, 2020

একাদশী পর্ব :-4 ভৈমী/জয়া একাদশী মাহাত্ম্য

 

মাঘী শুক্লপক্ষীয়া ‘জয়া’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তরপুরাণে যুধিষ্ঠির – শ্রীকৃষ্ণসংবাদরূপে বর্ণিত আছে। শ্রীগরুড়পুরাণে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশী তিথিকে ‘ভৈমী’ একাদশী নামে অভিহিতকরা হয়েছে। পদ্মপুরান অনুসারে জৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর নামই ‘পান্ডবা নির্জলাবা ‘ভৈমীসেনী’ ( ভৈমী) একাদশী। যুধিষ্ঠির বললেন- হে মহারাজ ! মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী জয়া নামে প্রসিদ্ধ । এইতিথি সর্বপাপবিনাশিনি, সর্বশ্রেষ্ঠা, পবিত্রা, সর্বকাম ও মুক্তি প্রদায়িনী। এই ব্রতের ফলেমানুষ কখনও প্রেতত্ব প্রাপ্তি হয় না । এই একাদশীর নিম্নরূপ উপাখ্যান শোনা যায়।

একসময় স্বর্গলোকে ইন্দ্র রাজত্ব করেছিলেন। সেখানে অন্য দেবতারাও বেশ সুখেই ছিলেন।তারা পারিজাত পুষ্প শোভিত নন্দনকাননে অপ্সরাদের সাথে বিহার করতেন। একদিনপঞ্চাশ কোটি অপ্সরা নায়ক দেবরাজ ইন্দ্র স্বেচ্ছায় আনন্দভরে তাদের নৃত্য করতেবললেন। নৃত্যের সাথে গন্ধর্বগন গান করতে লাগলেন। পুষ্পদত্ত, চিত্রসেনের পত্মীর নামমালিনী । পুষ্পবন্তী নামে তাঁদের এক কন্যা ছিল। পুষ্পদত্তের পুত্রের নাম মাল্যবান। এইমাল্যবান পুষ্পবন্তীর রূপে মুগ্ধ হয়েছিল। পুষ্পবন্তী পুনঃ পুনঃ কটাক্ষ দ্বারা মাল্যবানকেবশীভূত করেছিল।

ইন্দ্রের প্রতিবিধানের জন্য তারা দুজনেই নৃত্যগীতের দ্বারা সেই সভায় যোগদান করেছিল।কিন্তু একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট থাকায় উভয়েরেই চিত্ত বিভ্রান্ত হচ্ছিল। সেখানে তারাপরস্পর কেবল দৃষ্টিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকল। ফলে গানের ক্রম বিপর্যয় ঘটল । তাদেরএইরখম তাল- মান ভঙ্গভাব দেখে তারা যে পরস্পর কামাসক্ত হয়েছে, দেবরাজ ইন্দ্র তাবুঝতে পারলেন। তখন ক্রোধবশে তিনি তাদের অভিশাপ দিলেন- রে মূঢ় ! তোমরা আমারআজ্ঞা লঙ্ঘন করেছ । তোমাদের ধিক! এখনই তেমারা পিশাচযোনী লাভ করে মর্ত্যলোকেনিজ দুষ্কর্মের ফল ভোগ কর।

ইন্দ্রের অভিশাপে তারা দুজন দুঃখিত মনে হিমালয় পর্বতে বিচরন করছিল। পিশাচত্ব প্রাপ্তহওয়ায় তারা অত্যন্ত দুঃখ ভোগ করতে লাগল। হিমালয়ের প্রচন্ড শীতে কাতর হয়েনিজেদের পূর্বপরিচয় বিষ্মৃত হল। এইভাবে অতিকষ্টে সেখানে দিনযাপন করতে লাগল। একদিন পিশাচ নিজপত্নী পিশাচীকে বলল- সামান্য মাত্র পাপ করিনি । অথচ নরকযন্ত্রণারমতো পিশাচত্ব প্রাপ্ত হয়েছি। অতএব এখন থেকে আর কখনও কোন পাপকর্ম করব না ।এইভাবে চিন্তা করে তারা সেই পর্বতে মৃতপায় বাস করত লাগল। মাল্যবান ও পুষ্পবন্তীর পূর্বকোন পুন্যবশত সেই সময় মাঘী শুক্লপক্ষীয় ‘জয়া’ একাদশী তিথি উপস্থিত হল। তারা একটিঅশ্বত্থ বৃক্ষতলে নিরাহারে নির্জলা অবস্থায় দিবানিশি যাপন করল। শীতের প্রকোপেঅনিদ্রায় রাত্রি অতিবাহিত হল।

পরদিন সূর্যোদয়ে দ্বাদিশী তিথি উপস্থিত হল। জয়া একাদশীর দিন অনাহারে ও রাত্রিজাগরনে তাদের ভক্তির অনুষ্টান পালিত হল। এই ব্রত পালনের ফলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপারদ্বারা পিশাচত্ব দূর হল। তারা দুজনই তাদের পূর্ব রূপ ফিরে পেল। তারপর তারা স্বর্গে ফিরেগেল। দেবরাজ তাদেরকে দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হলেন । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কোনপুণ্যফলে তোমাতের পিশাচত্ব দূর হল। আমার অভিশাপ কে তোমাদের মুক্ত করল ? মাল্যবান বললেন- হে প্রভু ! ভগবান বাসুদেবের কৃপায় জয়া একাদশী ব্রতের পুন্যপ্রভাবআমাদের পিশাচত্ব দূর হয়েছে। তাদের কথা শুনে দেবরাজ ইন্দ্র বললেন হে মাল্যবান তোমরাএখন থেকে আবার অমৃত পান করো । একাদশী ব্রতে যাঁরা আসক্ত এবং কৃষ্ণভক্তি পারায়নতাঁরা আমাদেরও পূজ্য বলে জানবে। এই দেবলোকে তুমি পুষ্পবন্তির সাথে সুখে বাস কর। হে মহারাজ ! এই ‘জয়া’ ব্রত ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপকেও বিনাশ করে। এই ব্রত পালনেসমস্ত প্রকার দানের ফল লাভ হয়। সকল যজ্ঞ ও তীর্থের পুন্যফল এই একাদশী প্রভাবেআপনা হতেই লাভ হয়। অবশেষে মহানন্দে অনন্তকাল বৈকুন্ঠ বাস হয়। এই জয়া একাদশীব্রত কথা পাঠ ও শ্রবনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

No comments: