Monday, August 24, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 54 চন্ডাল গালি মোচন প্রসঙ্গে বিবধা–বিবাহ

তালতলা হতে প্রভু মনের হরিষে।


টাকা নিয়ে শীঘ্রগতি ওড়াকান্দী আসে।।


মীডেরে ডাকিয়া টাকা দিল তাঁর হাতে।


টাকা পেয়ে মীড লিখে রিপোর্ট আনিতে।।


সপ্তাহের মধ্যে তবে রিপোর্ট আসিল।


নমঃশূদ্র জাতি বলি নাহি পরিচয়।


চন্ডাল বলিয়া তাতে লেখা দেখা যায়।।


রিপোর্টে লিখেছে কথা অতি কদাকার।


নমঃশূদ্র নাহি মানে আচার বিচার।।


বিদ্যাহীন দাঙ্গাবাজ আর কত গালি।


রিপোর্টে লিখিয়া দিল নমঃকূলে কালি।।


বিধবা প্রসঙ্গে লিখে কথা কদাচার।


তারা নাকি কভু নাহি মানে সদাচার।।


রিপোর্ট পড়িয়া মীড ক্রদ্ধ কলেবর।


মহাক্রোধে অঙ্গ তাঁর কাঁপে থরথর।।


মীড বলে ‘এ রিপোর্ট লেখায়েছে যারা।


মানুষ্য নামের যোগ্য নহে কবু তারা।।


বহুদিন বঙ্গদেশে আমি আসিয়াছি।


ইতি উনি সব জাতি আমি দেখিয়াছি।।


সকলের ইতিহাস আমি জানি ভাল।


সকলের মধ্যে আমি দেখিয়াছি কালো।।


বিশেষতঃ এই ভাবে নারীর সম্মানে।


আঘাত করিতে মাত্র বন্য-পশু জানে।।


এত হিংসা এই দেশে আশ্চর্য্য ব্যাপার।


হিংসা বশে পারে এরা খুন করিবার।।


এতকাল নমঃশূদ্র দেখিলাম চোখে।


রিপোর্ট দেখিয়া আজ কথা নাই মুখে।।


হীন মনা হলে লেখে এমন রিপোর্ট।


উচিত পাঠানো তারে আন্দামান পোর্ট।।

 

দোষ দিয়া ঢাকিয়াছে সত্য পরিচয়।


দোষ যেন রহে মাত্র নমঃশূদ্র-কায়।।


অন্য সবে সাধু শুদ্ধ দোষ গন্ধ নাই।


যে-লেখে এমন কথা তার মুখে ছাই।।


বহুভাষে দুঃখ করি সেই মহাশয়।


উপনীত হইলেন ঠাকুর-আলয়।।


প্রভুর নিকটে বসি মনোদুঃখে কয়।


“বড় ব্যথা পাইয়াছি শুন মহাশয়।।


বড়ই জঘন্য কথা রিপোর্টেতে লেখা।


বিষম-দায়ের হাতে পড়িয়াছি ঠেকা।।


নিজ মুখে উচ্চারণ করিতে না পারি।


আভাসেতে কিছু কিছু ব্যাখ্যা আমি করি।।


রীতি নীতি এ জাতির কিছু লেখা নাই।


দোষ লিখে সব খানে রখেছে সাফাই।।


বিবাহাদি শ্রাদ্ধকর্ম্ম, পূজাদি পার্ব্বণ।


কিছুই উল্লেখ নাই হিংসার কারণ।।


বিধবা নারীর কথা লিখিয়াছে যাহা।


মম কন্ঠে উচ্চারণ নাহি হবে তাহা।।


যত কাল এই দেশে লোক-গণা হয়।


রিপোর্ট লিখিয়া হেন কটু কথা কয়।।


বিদ্যাহীন জাতি নাহি রাখে সমাচার।


‘চন্ডাল’ সেজেছে তাই ব্রাহ্মণ-কুমার।।


এ সব কাটিতে গেলে শুন দিয়া মন।


জাতি মধ্যে আন তুমি ঘোর আন্দোলন।।


সকল শুনিয়া প্রভু মীডেরে সুধায়।


কোন ভাবে আন্দোলন করি মহাশয়।।


মীড কহে ‘বড় কর্তা অন্য কিছু নয়।


আপাততঃ এক কাজ কর মহাশয়।।


বিধবা রমণী যত আছে সমাজেতে।


তাহাদিগে বিয়া দাও হিন্দু শাস্ত্র মতে।।


প্রমাণ লিখেছে জান ঈশ্বর পন্ডিত।


বিধবা-বিবাহ হয় সাস্ত্রেতে বিহিত।।


এই কার্য অবিলম্বে কর মহাশয়।


আমি দেখি চেষ্টা করে কিভাবে কি হয়।।


এই কথা বলি মীড নিজে বাসে গেল।


শ্রীবিধু ভূষণে প্রভু তখনি ডাকিল।।


শ্রীবিধু ভূষণ আসি করে দন্ডবৎ।


প্রভু বলে “দেখ বিধু আর নাহি পথ।।


এইমাত্র মীড এসে যাহা বলে গেল।


মনে হয় নমঃজাতি ডুবিয়া মরিল।।”


আদ্যোপান্ত সব কথা প্রভু তারে কয়।


শেষে বলে “বিবাহের কি হবে উপায়?।।


বিদ্যাহীন জাতি দেখ মনে বল নাই।


এ কার্য করিতে যেন বল থাকা চাই।।


এমন সাহসী লোক পাইব কোথায়?


বল বিধু এ বিপদে কি করি উপায়?।।”


প্রভুর নিকট শুনি সব বিবরণ।


কিছু কাল স্তব্ধ রহে সেই মহাজন।।


প্রভু পানে চাহি পরে কহিতে লাগিল।


তেজেদীপ্ত হুতাশন যেন রে জ্বলিল।।


“কিবাছলা কলা কর কর্তা মহাশয়।


তোমার অসাধ্য কিবা আছে এ ধরায়?


তুমি যদি ইচ্ছা কর এখনি এখানে।


সাগরে বহাতে পার বিস্তৃত-যোজনে।।


কতকাল এই ভাবে ফাঁকি দিবে আল।


তোমাকে বুঝিতে পারি শক্তি কি আমার।।


বিধবার বিখা দিবে করেছ মনন।


আজ্ঞামাত্র সেই কার্য হইবে এখন।।


সামাজিক লোক যারা মতো ধর্ম্মে নাই।


এ প্রস্তাব তুমি নাহি কর সেই ঠাঁই।।


পরম বান্ধব আছে মতুয়া সকল।


নিশ্চয় এ কার্য্য তারা করিবে সকল।।


কয় দিন পরে হেথা বারুণী সময়ে।


মতো সবে এই আজ্ঞা দিবে তুমি দিয়ে।।

 

দেখিবে সহজে কার্য্য হবে সমাপন।


এর লাগি প্রভু কেন কর ক্ষুন্ন মন।।


ভক্ত বীর চৌধুরীর দৃঢ় বাক্য শুনি।


ধন্য ধন্য করে তারে প্রভু গুণমণি।।


“এই জন্য বিধু সদা ডাকি যে কোমায়।


শুনিলে তোমার কথা পরাণ জুড়ায়।।


জ্ঞানী গুণী তুমি বিধু সাঘনে প্রশস্ত।


তোমাকে করেছি আমি তাই ডান হস্ত।।


পরামর্শ দিলে যাহা অতীব উত্তম।


ঘাট বুঝে নৌকা-রাখা মাঝির নিয়ম।।


মতো ভিন্ন বুন্ধ নাই অতি ন্যায্য কথা।


তাঁরা রাখে ভক্তি শ্রদ্ধা আর সরলতা।।


হরিচাঁদ এসেছিল তরাতে এ জাতি।


সেই কাজে মতো সব আছে তাঁর সাথী।।


জাতির মঙ্গল তরে কোন কাজ হলে।


মতোরা করিতে পারে স্বার্থ-চিন্তা ফেলে।।


সেই ভাল তাই করি ভাল পরামিশে।


দেখি তারা কিবা বলে বারুণীতে এসে।।”


কথা শুনি চৌধুরীজী বিদায় হইল।


এবে শুন বারুনীতে কি কার্য ঘটিল?


গোপালচাঁদের বাঞ্ছা গুরু-গীতি শোনে।


মহানন্দ আজ্ঞানান্ধ গাহিবে কেমনে?

 

No comments: