Monday, August 31, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 70 শ্রীহরি–চূড়া’ গোস্বামী তারকচন্দ্র

ধন্য কবি শ্রীতারক কহে সর্ব্বজনে।


দেশে দেশে সবে সবে গানের কারণে।।


একবার ডাক হ’ল ঢাকার জিলায়।


মনে মনে তারকের হ’ল কিছু ভয়।।


অভয় চরণ-ধারী প্রভু হরিচন্দ্র।


উপনীত প্রদপ্রান্তে সে তারকচন্দ্র।।


মনে মনে বলে কথা মুখে নাহি ফুটে।


প্রভু কয় “তারকের বুন্ধি নাহি মোটে।।


ঢাতা’ত বাড়ীর কাছে যাকনা পাবনায়।


প্রেমে পুলকিত তনু কহিল তারক।


“অন্তর্য্যামী দয়াময় ভূভার-হারক।


মনে ভয় সর্ব্বদা কিসে কিবা করি?


সকলি তোমার দয়া বুঝিনু শ্রীহরি।


যেথা যাই দয়াময়, তাতে ভয় নাই।


মনে ভয় কর্ম্মদোষে তোমারে হারাই।।


শ্রীমুখে যখনে প্রভু করিলে স্বীকার।


গিয়াছে সকল দুঃখ ভয় নাই আর।।”


এত বলি দন্ডবৎ করিল চরণে।


অতঃপর উপনীত শান্তিমাতা স্থানে।।


প্রণাম করিয়া বলে “ওগো লীলাময়ি।


রাতুল চরণে মাতাঃ নত-শির হই।।


ঢাকা যাব গান গাব এ বাসনা মনে।


দয়া করে দয়াময়ী দেখিও নয়নে।।


মাতৃ-শক্তি বিনা পুত্রে কোথা পাবে বল?


তাতে আমি ভক্তিহীন চক্ষে নাহি জল।।


দয়াময়ী জননীগো কৃপা নেত্রে চাহ।


চলেচি ঢাকার পথে অনুমতি দেহ।।”


তারকের বাণী শুনি হাসিয়া জননী।


স্নেহ করে বলে তারে “শুন গো বাছনি।।


ঢাকায় চলেছ তুমি আমি তাহা জানি।


সেথা হতে মোর লাগি শাখা এন কিনি।।


জানি আমি ভাল শাঁখা ঢাকায় শহরে।


এক জোড়া কিনে এনে দাও তা আমারে।।


যাও ঢাকা বলিলাম কোন ভয় নাই।


বারে বারে বলি কিন্তু শাঁখা আনা চাই।।

 

 

 

বালিকার মত মাতা আব্দার জানায়।


আঁখি ঝরে তারকের বক্ষ ভেসে যায়।


দন্ডবৎ করি যাত্রা করে মহাশয়।


নির্দিষ্ট তারিখে হ’ল ঢাকায় উদয়।।


বহু লোক সমারোহ গানের খেলায়।


তারক বসিয়া কান্দে একা নিরালায়।।


আরোপে দেখিল শীরে শ্রীহরি ঠাকুর।


মনে এল দৃঢ় শক্তি শঙ্কা হ’ল দূর।।


বিপক্ষ নায়ক যিনি কবি সরকার।


গানে, শাস্ত্রে সর্ব্বভাবে বহু শিক্ষা তার।।


মনে মনে ছিল তাঁর গর্ব্ব অতিশয়।


নিশ্চয় তারকচন্দ্রে দিবে পরাজয়।।


বিষেশত” বিদেশেতে আর শক্তি কম।


আজি তার ভাগ্যে পরাজয় একদম।।


কিন্তু যারে শক্তি দেছে নিজে শক্তিময়।


কোন শক্তি কিসে তারে করে পরাজয়?


পর্ব্বতের গাত্রে যদি লোষ্ট্রাঘাত হয়।


পর্ব্বত অচল রহে লোষ্ট্র হয় ক্ষয়।।


এক্ষেত্রে তেমনি হ’ল গানের আসরে।


অন্যপক্ষে সরকার পদে পদে হারে।।


তারকের দলে ছিল প্রবীণ দোহার।


সূর্য্য নারায়ন আর ভোলা সাথে তাঁর।।


উভয়ের কন্ঠে যেন পিকরাজ যিনি।


সভা শুদ্ধ হ’ল মুগ্ধ সেইস্বর শুনি।।


সুরের মুর্চ্ছনা যেন ভেদিল আকাশ।


নীরব সভার লোক নীরব বাতাস।।


পাঁচালী বলিতে যবে উঠে শ্রীতারক।


মুখ পানে চেয়ে থাকে সভাশুদ্ধ লোক।।


একেত গোরাঙ্গ কায় নবীন বয়স।


তাহাতে রচনা তাঁর অতীব সরস।।


থরে থরে কথা যেন মুক্ত সম ঝরে।


যেই শুনে বক্ষ ভাসে নয়নের নীরে।।


এই ভাবে সারা রাতি গানের আসরে।


মন্ত্র-মুগ্ধ মত থাকে যত নারী নরে।।


এমনি হইল দশা অত্যাশ্চর্য্যময়।


বিপক্ষে নায়ক যবে আসিল সভায়।।


সবে বলে, “শ্রীঘ্র তুমি সেরে যাও।


অপর দলের গান শুনিবারে দাও।।”


গর্ব্ব গেল হত মান হ’ল সরকার।


চুপ করি রহে বসি মুখ অন্ধকার।।


‘অহং চুর্ণ’ দীনবন্ধু যাঁর সাথে রয়।


তাঁরে ব্যথা দিলে গেলে ব্যথা পেতে হয়।।


এই ভাবে রাত্রি গেল ঊষার উদয়।


এবে শুন কি ঘটনা ঘটিল তথায়?


প্রভাতে তারক একা মাঠ মধ্যে যায়।


মলত্যাগ করিবার ইচ্ছা মনে রয়।।


কিশোর রাখাল এক আসি হেনকালে।


পথ আগুলিয়া কথা তারকেরে বলে।।


“শুন শুন মহাশয় আমার বচন।


কল্য রাত্রে তব গান করেছি শ্রবণ।।


সব কথা শুনিয়াছি তাতে ভুল নাই।


একটি কারণ আমি বুঝিয়া না পাই।।


তুমি যবে কথা বল গানের আসরে।


ক্ষুদ্র এক শিশু দেখি তব শিরোপরে।।


সেই শিশু বল কেবা তব সঙ্গে রয়?


এখনে তাহারে রাখি আসিলে কোথায়?”


কিশোর কহিছে কথা শুনেছে তারক।


রাখালের অঙ্গে খেলে রূপের ঝলক।।


আশ্চর্য্য মানিয়া সাধু ভাবিছে তখন।


এ বালক রাখাল’ত নহে কদাচন।।


ব্রজের বালক এই রাখালের রাজা।


ব্রহ্মা বিষ্ণু সবে করে যাঁর পদ পূজা।।


সেরূপ ছাড়িয়া এবে আছে ওড়াকান্দী।


সেয়েছি’ত ছাড়িব না রাখি করে বন্ধী।।

 

এত ভাবি বাহুড়িয়া ধরিবারে যায়।


অকস্মাৎ সে রাখাল বাতাসে মিলায়।।


কান্দিয়া তারক তবে ভুমে পড়ে লুটী।


বলে হায়! দয়াময় এসেছিল খাঁটি।।


ওড়াকান্দী বসে প্রভু বলিল আমারে।


“তোর সাথী আছি আমি ভয় কি অন্তরে?


অলক্ষ্যে রয়েছে প্রভু ভাবিয়াছি তাই।


প্রত্যক্ষে রয়েছে সাথে তাহা দেখি নাই।


তোমার দয়ায় প্রভু কোটি দন্ডবৎ।


অজ্ঞান অবোধ আমি বড়ই অসৎ।।”


গান শেষ করি পরে কিনিলেন শাখা।


পর দিনে ত্যাগ করি চলিলেন ঢাকা।।


ওড়াকান্দী উপনীত হইলেন যবে।


প্রভু বলে “কি তারক! ছিলে কোন ভাবে।।


রাখালে বান্ধিতে তুমি নাহি পাও দিশে।


রাখালে তালাস কর ওড়াকান্দী এসে।।”


প্রভুর বচন তবে তারক কান্দিল।


আদ্যোপান্ত সে বৃত্তান্ত প্রভুকে কহিল।।


প্রভু বলে “সব জানি তবু তব ঠাঁই।


শুনিলে সে সব কথা বহু সুখ পাই।।”


অতঃপর অন্তঃপুরে উদয় তারক।


জননী আসিল ছুটে হইয়া পুলক।।


“শাঁখা দেও শাঁখা দেও’ বলে বারে বার।


তারকের দু’নয়নে বহে অশ্রুধার।।


বাহির করিল শাঁখা জননী পরিল।


অপরূপ সাজ যে জননী ধরিল।।


পরে তাহা দেখি প্রভু তারকেরে কয়।


“লহ্মীরে করিলে দান ধনবৃদ্ধি হয়।।”


শ্রীমুখের বাক্য প্রবু না হ;য় বিফল।


ক্রমে ক্রমে তারকের হ’ল ধন বল।।


যাবৎ জীবিত ছিল তারক গোঁসাই।


শাঁখা দিতে কোনমতে ভুল করে নাই।।


করুণা রূপিণী লহ্মী শান্তি মাতা হ’ল।


প্রভুর আজ্ঞাতে ভক্তে বহু ধন দিল।।


তারকের শিরে দেখি শিশুরূপী হরি।


গেল দীন কহে দীন কর্ম্মদোষে মরি।।

No comments: