Monday, August 3, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 21 নমঃশূদ্র সভা – ১২৮৭ বঙ্গাব্দ


শ্রী হরি চাঁদের গুণে বলিহারি যাই।

নমঃশূদ্র বলে সবে “আর ভয় নাই।।


রোগ-শোক-দুঃখ-ব্যথা-জ্বালা অপহারী।

পরম দয়াল রূপে এসেছে শ্রী হরি।।


তারিতে কাঙ্গাল জনে বুকে দিতে আশা।

অন্ধ প্রাণে দিতে আলো মূক মুখে ভাষা।।


পিছে -পড়া নিস্বঃদল বুকে – ভরা ব্যথা।

কেহ বুঝে নাই তার মরমের কথা।।


মরা – দেহে দিতে প্রাণ জাগাতে সবারে।

প্রাণদাতা-হরি এল সফলানগরে।।


অসীম – তত্ত্বেতে -ভরা মানব – জীবন।

মর্ম্মকথা ঘরে ঘরে করে বিতরণ।।


“বলহীনে নাহি পায় আত্মার সন্ধান “।

কোন বলে তারে পাবে কহে মতিমান।।


‘পবিত্র – চরিত্র কহে মূলভিত্তি তার।

সত্যবাক্য নামে-রুচি জান ‘ পরস্পর।।


জীবে দয়া পর নারী মাতৃতুল্য – জ্ঞান।

মানুষেতে – নিষ্ঠা কহে তত্ত্বের প্রধান।।


আশা – হারা ছিল যত শুনি সেই বানী।

আপনা বিলায়ে পূজে চরণ দু ‘খানি।।


বিশ্বজয়ী – মন্ত্র যেন সবে পেল বুকে।

পতিত – পাবন হরি বলে তাঁরে ডাকে।।


অবতার মধ্যে দেখি এই কার্য ধারা।

প্রেমের তরঙ্গ তুলি চলে যায় তাঁরা।।


সে তরঙ্গে ডুবে যায় কত জনপদ।

জীব তাহে ডুবি পায় পরম আহ্লাদ।।


সে তরঙ্গ – গতি – বেগ কভু না থামিবে।

অনন্ত কালের বুকে বহিয়া চলিবে।।


যেই ঢেউ তুলে গেছে প্রভু রামচন্দ্র।

তাহে পুনঃ বেগ দিল বিভু কৃষ্ণ চন্দ্র।।


নবীন – ভাবের ঢেউ বুদ্ধ দেব তোলে।

মহা ভাব তোলে গোরা হরি হরি বলে।।


যে যে যুগে যতটুকু হয় প্রয়োজন।

সেই শক্তি নিয়ে আসে জগত – তারণ।।


অসীম শক্তির কেন্দ্র মানবের মন।

যুগে যুগে পলে পলে হয় বিবর্ত্তন।।


কলি হতে ফুল যথা ফুটে ধীরে ধীরে।

মানবের মন-পুস্প ফোটে সে প্রকারে।।


বিকাশের ধারা তার ক্রমে বেড়ে যায়।

পরিনতি পেলে তার বৃদ্ধি নাহি হয়।।


যত ফুল বাড়ে সে যে আলো তত চায়।

কলিতে কুসুম এই ব্যবধান রয়।।


আদি হতে অদ্যাবধি যত অবতার।

এই ধারা ক্রমে দেখি বিকাশ সবার।।


আদি পুরুষের রূপে রাম অবতার।

আপন জীবনে করে মানব – আচার।।


জীবে ভাবে এই ধর্ম্ম প্রভুতে সম্ভবে।

মানবের পক্ষে চেষ্টা শুধু বৃথা হবে।।


তাই দেখি সেই যুগে রাম ভক্ত যত।

প্রাণপণে হল বটে রাম – অনুগত।।


যে ধর্ম্ম আনিল রাম শিখাবার তরে।

মনে প্রাণে মানিল না তাহা কোন নরে।।


মানবের ধর্ম্ম তাহা বুঝাবার জন্য।

মথুরাতে কৃষ্ণ চন্দ্র হ ‘ল অবতীর্ণ।।


নর – শ্রেষ্ঠ মহীপাল যুধিষ্ঠির বীর।

তাঁরে কেন্দ্র করি ধর্ম্ম শিখায় সুধীর।।


রাজা যেই ধর্ম্ম পালে প্রজা নাহি বুঝে।

‘ধর্ম্ম ‘ বদ্ধ রহে শুধু রাজার সমাজে।।


জ্ঞান – অবতার বুদ্ধ নব যুগ আনে।

রাজা প্রজা সবে মাতে অহিংসার গানে।।


সবে একাকার হ’ল পেয়ে তাঁর শিক্ষা।

আসমুদ্র – হিমাচল নিল এক দীক্ষা।।


দেশে দেশে সাম্যনীতি হ ‘ল পরচার।

মনে হল বিশ্ব বাসী হবে একাকার।।


কুটিল কলির চক্র বুঝা বড় দায়।

ব্রাহ্মণ্য – ধর্ম্মের ছলে সে কলি দাঁড়ায়।।


হিংসা দ্বেশ দ্বন্দ – নীতি আনে ঘরে ঘরে।

আর্য ম’ল হিন্দু হ’ল বীর্য গেল মরে।।


বিমাতা সাজিয়া হিন্দু বৌদ্ধ দূরে দিল।

যশোদার মত তারে অন্য দেশে নিল।।


মহাচীন জাপানেতে যত জাতি রয়।

বৌদ্ধ নীতি মানে তাঁরা বীর পরিচয়।।


নিজ দেশে বৌদ্ধ ধর্ম্ম স্থান নাহি পেল।

পর – দেশে বীর্য গুণে নৃপতি সাজিল।।


বৌদ্ধ ধর্ম্মে মুক্তি-মন্ত্র তারা সবে পায়।

ব্রাহ্মণ্য – ধর্ম্মের তলে ভারত ঘুমায়।।


জগতের আদি গুরু আর্য ঋষি যাঁরা।

ভারতের বুকে পেল অধরাকে ধরা।।


চারি – স্তম্ভ পরে যেই সমাজ গড়িল।

ধর্ম্ম – ভিত্তি ‘ পরে তারে উচ্চ চূড়া দিল।।


সেই ধর্ম্ম – ভিত্তি পরে ভেঙ্গে দিল যারা।

এ দেশের পতনের মূল হ’ল তারা।।


সেই যে ভেঙ্গেছে ভিত্তি আর জুড়ে নাই।

দিনে দিনে ভারতের অবনতি তাই।।


কৃষ্ণ আসি গোরা আসি অনেক কহিল।

বলাবলি সার হল ভিত্তি ফাঁক র’ল।।


গার্হস্থ্য – আশ্রমে ধরি নরকুল বাঁচে।

গৃহীকে করিয়া ভর সকলে রয়েছে।।


তাই দেখি গৃহ ধর্ম্ম সকলের মূল।

এই খানে বুদ্ধদেব করিলেন ভুল।।


এই ভুল এত কাল সারা নাহি হল।

ভুল সেরে মুক্তি দিতে হরিচাঁদ এল।।


গার্হস্থ্য আশ্রমে ভিত্তি করিল জীবনে।

সর্ব্ব শক্তি লভ্য হয় সে ধর্ম্ম পালনে।।


বিশ্ব ভরা নরকুলে আছে যে যেখানে।

গৃহ – ছাড়া বল দেখি আছে কয় জনে।।


শাস্ত্র – গ্রন্থ পুরাণাদি বহুৎ প্রমাণে।

গৃহাশ্রম সর্ব্বশ্রেষ্ঠ সবে ইহা জানে।।


হরি লীলামৃত গ্রন্থে কবি রসরাজে।

যাহা কহে তাহা কহি সাধুর সমাজে।।


“গৃহেতে থাকিয়া যার হয় ভাবোদয়।

সেই সে পরম সাধু জানিবে নিশ্চয়।। 


গৃহী জনে দিতে মুক্তি হরি অবতার।

ব্যথিতের ঘরে জন্মে সফলা নগর।।


পূর্ব্ব পূর্ব্ব অবতারে প্রভু যা করিল।

উত্তর সাধক তার কেহ নাহি ছিল।।


ঢেউ তুলে যায় প্রভু আপনার লোকে।

ঢেউ চলে নিজ মতে জীব পিছে থাকে।।


উত্তর – সাধক তাই লাগে তাল দিতে।

উত্তর – সাধক হরি নিয়ে এল সাথে।।


আর দেখ নরাকারে করে যত কর্ম্ম।

নরাকারে পালে প্রভু মানবের ধর্ম্ম।।


আধি-ব্যাধি-জ্বরা-মৃত্যু সবার অধীন।

দীনবেশে থাকে যেন দীনেরও দীন।।


আপনারে ধরা দিতে প্রভু নাহি চায়।

দেখা দিয়ে ঢেউ তুলে তাই চলে যায়।।


তাঁরে দেখে যার মন হয়েছে পাগল।

ছুটে ছুটে খুঁজে তারে প্রেমেতে বিভোল।।


কিবা সেই কয়ে গেল কিবা দিয়ে গেল।

সে ধার ধারেনা যত ভাবের পাগল।।


মনোহরা রূপ দেখে মন ভুলে যায়।

রূপের তরঙ্গে পড়ি সাঁতার খেলায়।।


এ হেন জনের নহে গৃহস্থের ধর্ম্ম।

সে কেন বুঝিতে যাবে গৃহ-ধর্ম্ম-মর্ম্ম।।


রূপের পাগল চলে রূপের প্রবাহে।

সে ভাব না বুঝে গৃহী পিছে পড়ে রহে।।


তাই তত্ত্ব বুঝাবারে লাগে কোন জন।

উত্তর সাধক এবে শ্রী গুরুচরণ।।


পুত্র রূপে জন্ম নিল হরিচাঁদ – ঘরে।

পিতৃ-ধর্ম্ম-মর্ম্ম কথা শিখাল জীবেরে।।


যবে হরিচাঁদ আসি অবতীর্ণ হল।

তার রূপে বাধ্য কত পাগল সাজিল।।


গৃহ – ধর্ম্ম ছার বলি গৃহ ছেড়ে দিল।

রসরাজ হরি-পদে প্রাণ সমর্পিল।।


গোলক,বদন,আর বীর হীরমন।

বিশ্বনাথ শ্রী অক্ষয় আর শ্রী লোচন।।


নটবর, ব্রজনাথ, শ্রী রাম ভরত।

এই রূপ কত জন নাম ক’ব কত।।


রূপের পাগল এরা প্রেমের কাঙ্গাল।

গৃহাশ্রমকে গণ্য করে বড়ই জঞ্জাল।।


হরিচাঁদ – রূপ প্রভু যবে লুকাইল।

এই সব ভক্ত প্রায় উদাসী হইল।।


বিরহ – বেদনা যেবা সহিতে না পারে।

দেহ – তরী দিয়ে পাড়ি গেল ভবপারে।।


সবাই না হতে পারে গোলক পাগল।

গৃহীজনে আছে কত বিষয়ের গোল।।


এ আদর্শ সবজনে নিতে নাহি পারে।

গৃহীর আদর্শ তাই এল প্রভু – ঘরে।।


ঘর – ছাড়া ভোলানাথ গৃহস্থ সাজিল।

হরিপুত্র গুরুচাঁদ – রূপে জনমিল।।


মনের গঠন প্রভু প্রথমে করিল।

গুরুচাঁদ – রূপে গৃহ – ধর্ম্ম শিক্ষা দিল।।


গৃহস্থ জনের পক্ষে যাহা প্রয়োজন।

সর্ব্ব নীতি শিক্ষা দিল শ্রী গুরুচরণ।।


কঠোর সংযমে রাখি চরিত্র পবিত্র।

গৃহস্থ – আশ্রমে করে সেই মূল সুত্র।।


ধর্ম্ম নীতি কর্ম্মনীতি রাজনীতি যত।

ঘরে ঘরে জনে জনে কহে অবিরত।।


বিদ্যা হীন সমাজের কোন গতি নাই।

“বিদ্যা শেখ বিদ্যা শেখ “ বলিলেন তাই।।


স্ব – সমাজে দোষ ত্রুটি যত কিছু ছিল।

দূর করিবারে প্রভু মনস্থ করিল।।


ঘরে ঘরে আন্দোলন প্রয়োজন হল।

“সভা কর সভা কর “প্রভুজী হাঁকিল।।


একসাথে সবে মিলি করিল মন্ত্রণা।

একতা থাকিলে যাবে সকল যন্ত্রণা।।


‘এক ঠাঁই বস ভাই ‘ প্রভু ভীর দিল।

প্রভুর ইচ্ছাতে সভা দত্ত ডাঙ্গা হল।।


এবে সেই সভা আমি করিব বর্ণন।

“জয় গুরুচাঁদ “ ধ্বনি – কর সর্ব্বজন।।

No comments: