Wednesday, August 12, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 30 ডক্টর মীডের ওড়াকান্দী পুনরাগমন ও স্থিতি


কথাবার্ত্তা স্থির করি মীড চলি গেল।


স্বজাতি -প্রধানে ডাকি প্রভুজী বলিল।।


স্বজাতি সভায় সব হ’ল নিরূপণ।


রাখিতে হইবে মীডে করিয়া যতন।।


অতঃপর হ’ল দেশে স্বদেশি প্রচার।


ইতিপূর্ব্বে করিয়াছি বর্ণনা তাহার।।


প্রভুর চেষ্টায় সবে ভুলে আন্দোলন।


প্রভু পুনঃ স্বজাতিকে করে আবাহন।।


স্বজাতি প্রধান সবে উপস্থিত হ ‘ল।


সাহেবে আনিতে সবে মনস্থ করিল।।


সংবাদ পাঠালো সবে সাহেবের ঠাঁই।


ওড়াকান্দী সাহেবের শীঘ্র আসা চাই।।


আন্দোলন বার্ত্তা কিছু জানা’ল ইঙ্গিতে।


প্রভু বাক্য সাহেব না পারিল লঙ্ঘিতে।


প্রভুর নিকটে পুনঃ সংবাদ পাঠা ‘ল।


শীঘ্র ওড়াকান্দী যাবে পত্রেতে লিখিল।।


পূর্ব্বভাগে পাঠাইল অক্ষয় সুজনে।


দেখিবে সে জমাজমি নিবে কোন্ খানে।।


প্রভুর গৃহের কাছে পশ্চিমের দিকে।


প্রভুর একটি ভিটা শূন্য পড়ি থাকে।।


প্রভু বলে ‘ আপাততঃ থাক এই স্থানে।


পরে আর দিব স্থান কিছু অন্য খানে।।


স্থান দেখি সে অক্ষয় পুনঃ চলি গেল।


সমস্ত বৃত্তান্ত তবে সাহেবে জানাল।।


শুনিয়া সাহেব বলে হয়ে খুশি মন।


বুঝিলাম গুরুচাঁদ অতি সৎজন।।


অতএব বিলম্বেতে আর কার্য নাই।


যত শীঘ্র পারি চল ওড়াকান্দী যাই।।


শুনহে অক্ষয় আমি মনে যাহা ভাবি।


নিত্য যেন আমি দেখি ওড়াকান্দী-ছবি।।


আমি ভাবি হেন ভাব কেন হয় মনে।


দিবারাত্রি মোরে যেন সেথা কেন টানে।।


গুরুচাঁদে ভাবি মনে বড় সুখ পাই।


ইহার কারণ আমি বুঝিয়া না পাই।।


জান ত ইংরাজ মোরা শহরেতে বাস।


পাড়াগাঁয়ে যেতে মনে পাই বড় ত্রাস।।

 

ওড়াকান্দী বিলাঞ্চল সুযোগাদি নাই।
বহু কষ্ট হতে পারে মনে ভাবি তাই।।
কিন্তু তবু কেহ যেন বসিয়া অন্তরে।
ওড়াকান্দী যেতে মোরে সদা আজ্ঞা করে।।
গুরুচাঁদ নাহি হবে সামান্য মানুষ।
দেবতুল্য রূপ দেখি পরম পুরুষ।।
নিশ্চয় যীশুজী মোরে যাইবারে কয়।
চল চল শীঘ্র চল বৃথা কাল ক্ষয়’।।
মাস-কাল মধ্যে মীড ওড়াকান্দী এল।
প্রভুর ভিটার পরে তাঁবু বানাইল।।
সমাদরে প্রভু তাঁরে বসাল সেখানে।
দেশবাসী সুখী হ’ল মীড আগমনে।।
প্রথমে মীডের হাতে প্রভু দিল হাত।
রাজশক্তি ধরিবারে এই সূত্রপাত।।
পতিত তরাতে এল পতিত পাবন।

“হরি-গুরুচাঁদ “ধ্বনি কর সর্ব্বজন।।

বন্দনা

প্রণমি চরণে মাগো শ্রী হরি – রঞ্জিনী।


শান্তিময়ী শান্তিদেবী ক্ষীরোদ – বাসিনী।।


ত্রিলোক-পূজিতা দেবী পতিত পাবনী।


সর্ব্ব শক্তিময়ী মাগো শক্তি প্রদায়িনী।।


কৃপা কণা দানে ধন্য করিলে তারকে।


হীরামন,মৃত্যুঞ্জয়,লোচন, গোলকে।।


তোমার প্রসাদে মাগো হরি – ভক্ত গণ।


প্রেম সুধা পানে মত্ত থাকে অনুক্ষণ।।


সর্ব্বজীবে প্রাণ রূপে তুমি বিরাজিতা।


জ্ঞান বুদ্ধি প্রেম ভক্তি তোমাতে আশ্রিতা।।


তব করুণায় মাগো,জীবে তাহা পায়।


কর্ম্ম দোষে এ অভাগা নাহি পেল হায়।।


বিদ্যা রূপে জীব দেহে তুমি বীণাপাণি।


প্রেম রূপে সত্যভামা জগৎ-জননী।।


এ জগতে দেখি হায় মাতার স্বভাব।


বরাভয় হাতে করি রহে শান্ত-ভাব।।


কু-পুত্রের প্রতি মাতা নাহি করে রোষ।


করুণায় করে ক্ষয় কু-পুত্রের দোষ।।


রাতুল চরণে তাই এই নিবেদন।


দয়া করি দয়াময়ী!দেহ গো চরণ।।


পতি তব হরিচাঁদ ক্ষীরোদের নাথ।


জীব কুলে দয়া করি এলে তাঁর সাথ।।


কতই করুণা মাগো জীবেরে করিলে।


পুত্র রূপে মহেশ্বর জগতে আনিলে।।


তাঁর গুণ গাহি মনে এমত বাসনা।


দয়া করি দেহ শক্তি কমল আসনা।।


তব আগমন হৃদে আসুক আনন্দ।


পদে পড়ি কাঁদে তোর পাপী মহানন্দ।।

 

বর্ণানুক্রমিক বন্দনা

অনাদি অনন্ত দেব অনন্ত শায়িন্।


আদ্যাশক্তি লক্ষ্মী রূপে শ্রী পদে আসীন্।।


ইচ্ছাময় ইচ্ছারূপে সৃষ্টির বিকার।


ঈক্ষণে ঈশ্বর ভাবে শকতি প্রচার।।


উর্ম্মিমালা রূপে যুগ ক্ষীরোদ সাগরে।


ঊষা সন্ধ্যা কালাকাল নাহি তার নীরে।।


ঋতু কাল ভেদাভেদ কিছু মনে নাই।


৯কার বিকার শূন্য ধ্যান তত্ত্বে পাই।।


এক সত্তা একাকার একক সকল।


ঐশী শক্তি সেই বৃক্ষে ক্ষুদ্র এক ফল।।


ওম্ ধ্বনি আদি নাথ অনাহত শব্দ।


ঔরস – ঔষধি – রসে সৃজন আরদ্ধ।।

 

 

 

 

কমল-কোরক-কান্তি কমলার কান্ত।


খড়গতি খগপতি বহে যাঁরে শান্ত।।


গগনে গরজি’ঘন গাহে যাঁর গান।


ঘটন – কারণ যিনি বিভু ভগবান।।


ঙ কার নাদ যাঁর প্রণব প্রকাশে।


চঞ্চলা চরণ বন্দে ‘ চাহি অনিমেষে।


জগত জন্মিল যাঁর জলদ জঠরে।।


ঝর ঝর ঝরে ধারা ধরা রাণী শিরে।


ঞ কার প্রকাশে যাঁর অস্তিত্ব বিকার।।


টল টল টলে ধরা শুনিয়া টঙ্কার।।


ঠমকি ঠমকি চলে শব্দ অনুপম।


ডমরু বাজিয়া উঠে সমেতে বিষম।।


ঢল ঢল সিন্ধু – বারি চরণ ধোয়ায়।


ণত্ব – তত্ত্বাশ্রয়ী যিনি স্তত্বাহীন প্রায়।।


তারক-তরণী -রূপে তরঙ্গ মাঝারে।


থৈ থৈ সৃষ্টি লীলা ক্ষীরোদ সাগরে।।


স্থিতি সৃষ্টি প্রলয়াদি কারণ যে জন।


নমঃ পদে নরগণ লহ রে শরণ।।


পূর্ণানন্দ পূর্ণরূপ পূরণ-পূরণ।


ফণীন্দ্র বিস্তারি ফণা করিছে ব্যঞ্জন।।


বরা ভয় দাতা যিনি বিধাতার বিধি।


ভয় হারী ভবার্ণবে আপনি ভবাদি।।


মনোময় মনোচোর মধুর মূরতি।


যুগপতি যোগেশ্বর যোগে যাঁর প্রীতি।।


রসমুর্ত্তি রসোজ্জল রসের আঁধার।


লহরে লহরে চলে প্রেম-পারাবার।।


বদন আকাশ যাঁর বারিধি বসন।


শব্দ রূপে বিশ্ব সদা করিছে শাসন।।


ষড়ৈর্শ্বয শালী যিনি নরের আকারে।


সহস্র ফণায় পূজে অনন্ত যাঁহারে।।


হরিচাঁদ রূপে সে এল ওড়াকান্দী।


ক্ষম অপরাধ প্রভু কর জোড়ে বন্দী।।


বিশ্বাস ভকতি হীন অতি দুরাচার।


এ মরু হৃদয় সিক্ত হল না আমার।।


গুরুদত্ত কৃপা বীজ কতই পড়িল।


ভক্তিরস বিনে সব অঙ্কুরে শুকা’ল।।


ধন, মান,যশঃ করি ঘুরি নিশিদিনে।


সংসার – মরুর মাঝে মরিনু পরাণে।।


দিনে দিনে সর্ব্বহারা কাঙ্গালের বেশে।


কতই সহি যে জ্বালা আসিয়া বিদেশে।।


আলোময় এ জগতে একা সেজে অন্ধ।


নিরানন্দে বসে কান্দে দীন মহানন্দ।।



 

No comments: