Saturday, August 1, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 19 লগ্নী কারবার


 

“অর্থে জান ‘ মহাশক্তি লক্ষ্মীর বাহন।


যথা লক্ষ্মী তাঁর সাথে আছে নারায়ণ “।।


অবিরত গুরুচাঁদ এই বাণী কয়।


জনে জনে সর্ব্বক্ষণে এ নীতি শিখায়।।


অর্থ লাভে কোন কালে অলস না হবে।


পেলে ধন হীন স্থানে কুড়ায়ে তা লবে।।


পরম পবিত্র অর্থ লক্ষ্মীর আশ্রয়।


সৎ পথে সেই ধন লইবে সদায়।।


যথা তথা হতে ধন আন নিজ ঘরে।


সাধু – শ্রমে আন তারে বিবিধ প্রকারে।।


এমন কি ধন যদি হীন স্থানে পাও।


সাধু ভাবে এনে তাহা সংসার চালাও।।


এই ধন চুরি করি কভু না আনিবে।


চোরা ধন এলে ঘরে লক্ষ্মী দূরে যাবে।।


লক্ষ্মী – ছাড়া ধন হয় মৃত্যুর কারণ।


সেই ধন আন যাহা লক্ষ্মীর বাহন।।


সাধু ধন ভর করে লক্ষ্মী আসে ঘরে।


সৎভাবে যদি তারে উপার্জ্জন করে।।


অশুচি না হয় ধন পাত্রাপাত্র ভেদে।


পবিত্রতা নষ্ট তার শুধু অপরাধে।।


সৎ ভাবে যদি তারে তুমি তুলে লও।


অর্থের সহিত ঘরে লক্ষ্মী মাতা পাও।।


বাণিজ্য সাধুর কর্ম্ম মহাজনে কয়।


মহাজন হলে তার মহামন হয়।।


মহাজন সাজি করে দুষ্ট ব্যবসায়।


ইহকাল পরকাল সব নষ্ট হয়।।


“ব্যবসায়ে লক্ষ্মী লাভ সত্য বটে কথা।


তার মধ্যে রাখা চাই শুদ্ধ পবিত্রতা।।


দীনে যদি চাহ ‘ ধন কর ব্যবসায়।


ধন পাবে সৎ পথে থাকিলে নিশ্চয়।।


ব্যবসায় কা’রে বলে শুনহে সকলে।


শুধু দ্রব্য কেনা -বেচা নহে কোন কালে।।


টাকা কড়ি লেন্ দেন্ যে যে ভাবে হয়।


বিনিময় হলে অর্থ ব্যবসায় কয়।।


লগ্নী কারবার তা’তে হয় ব্যবসায়।


লগ্নী কারবারে প্রভু অর্থকে খাটায়।।


ব্যবসায়ী লোক কত আসে প্রভুুর ঠাঁই।


বলে “প্রভু কারবার লাগি অর্থ চাই।।


আপনার টাকা প্রতি সুদ কিছু দিব।


কারবার করি নিজে লাভবান হব।।


ঘরে ঘরে সবে যাহে ব্যবসায়ী হয়।


বাণিজ্য করিতে প্রভু তাই অর্থ দেয়।।


প্রভুর আদর্শ ধরি তাই দেশবাসী।


ব্যবসা করিয়া অর্থ পেল সবে বেশী।।


দীন হীন কতজনে অর্থের অভাবে।


করিত না কৃষি কর্ম্ম “পারিব না “ভেবে।।


সে সবে ডাকিয়া প্রভু কহে কৃপা করি।


“অর্থ নিয়ে কৃষি কর অলসতা ছাড়ি।।

 

 

কৃপাবাক্য শুনি তারা আনন্দ হৃদয়ে।


কৃষি কার্য করে সবে টাকা কর্জ্জ ল’য়ে।।


ফসলান্তে সবে আসি প্রভুর নিকটে।


সুদসহ টাকা দেয় সবে নিষ্কপটে।।


এ জগতে দেখি হায় মহাজন – নীতি!


দরিদ্র পিষিয়া তারা পায় মহা প্রীতি।।


মহাজন পদতলে পড়িলে কাঙ্গাল।


বাঁচা’ত দূরের কথা সব পয়মাল।।


তাহার প্রমাণ লিখে বিশ্ব কবি ‘রবি।

‘আঁকিয়াছে কাঙ্গালের ব্যথা-ভরা ছবি।।


“দুই বিঘা জমি “নামে গল্পের আকারে।


দেখা’য়েছে সেই চিত্র বিশ্বের মাঝারে।।

“এজগতে হায়, সেই বেশী চায়


যার আছে ভুরি ভুরি।


রাজার হস্ত, করে সমস্ত


কাঙ্গালের ধন চুরি।। “


— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কি আশ্চর্য দয়া ধৈর্য গুরুচাঁদে রয়।


গুণাতীত – গুণমণি গুনের আলয়।।


যেই অর্থ লয় আসি গুরুচাঁদ স্থানে।


ব্যবসায় কৃষি কর্ম্ম যে কোন কারণে।।


উভ লাভ হয় তা’তে নাহি লোকসান।


সুদ পায় লাভ হয় দ্বিগুণ প্রমাণ।।


ঠিক ভাবে নেয় অর্থ দেয় ঠিক ভাবে।


তারে নাহি ধরে কভু অর্থের অভাবে।।


আশ্চর্য গণিয়া তবে দেশবাসী বলে।


‘ধনপতি গুরুচাঁদ ‘ জন্মেছে এ কুলে।।


এমন আশ্চর্য মোরা কভু দেখি নাই।


নিয়া ধন দু’না দেই তবু দু’না পাই’।।


এ’ত নহে লগ্নী-করা এযে ধন-দান।


অসীম দয়ার গুণে করে গুরুচান।।


গুরুচাঁদ হতে যেবা লয় মূলধন।


অল্পদিনে সাজে সেই বড় মহাজন।।


দেখে সবে মনে ভাবে আশ্চর্য তো ভারী।


ধন লয়ে এল দেশে ধনের ভাণ্ডারী।।


কিসে কিসে অর্থ বাড়ে শ্রী গুরু শিখায়।


অর্থ-উপার্জ্জন-নীতি নমঃশূদ্রে পায়।।


লগ্নী কারবারে বাড়ে বহুমতে ধন।


জমি জমা বৃদ্ধি করে শ্রী গুরুচরণ।।


কত দয়া – ভরা তাহা কি দিব তুলনা।


ত্রিভুবনে হেন দয়া আর মিলিবে না।।


খাতকের যে দুর্দ্দশা মহাজনে করে।


‘কসায়ের ব্যবহার ‘ বলে সর্ব্ব নরে।।


আজি বটে গরীবের উদ্ধার কারণ।


‘খাতক আইন সৃষ্টি হয়েছে এখন।।


যেই দিনে গুরুচাঁদ দরিদ্র পালিল।


মহাজন যাহা করে সব জানি ভাল।।


পাঁচ টাকা কর্জ্জ করি কত অভাজন।


সুদের পাষাণ – তলে ছেড়েছে জীবন।।


জমি গেছে জমা গেছে গেছে অস্থাবর।


ঘর – হারা লক্ষ্মীছাড়া অবনী ভিতর।।


নীলাম-খড়্গের ধারে ডিক্রি যুপকাষ্ঠে।


কত দীন বলি হ’ল বাঁধা আষ্টেপৃষ্ঠে।।


কিন্তু গুরুচাঁদ মোর দীনের বান্ধব।


তাঁর পদাশ্রয়ে জীয়ে রহে দীন সব।।


কর্জ্জ- কড়ি সুদ বাড়ি হয়েছে প্রবল।


খাতকের জীর্ণ দেহ মনে নাই বল।।


দিবা রাত্রি চিন্তা জ্বরে বলিছে প্রলাপ।


ক্ষণে ক্ষণে অদৃষ্টেরে করে অভিশাপ।।


ডিক্রি হবে জমি যাবে হবে গৃহ -হারা।


দু’নয়নে বহে সদা শ্রাবণের ধারা।।


কেন্দে কেন্দে বলে ‘কোথা বিপদ-কাণ্ডারী!


দেনাদায় প্রাণ যায় উপায় কি করি ?

 

 

সেই জনে ডেকে বলে শ্রী গুরু দয়াল।


“ভয় নাই এ তুফানে ছাড়িস না হাল।।


ডোবা তরী তুলে দিতে আসিয়াছি আমি।


ঝড় দেখে ঝাপ দিতে যাস্ নারে থামি।।


শ্রী হরি ঠাকুর মোর পিতা দয়াময়।


আছে হরি রবে তরী নাহি ওরে ভয়।।


তোর ভার মো’রে দেরে তুই হ’রে মোর।


আমি নেবো তোরে ব’য়ে ভয় কিরে তোর।।”


দয়ালের বাণী শুনি দীন বলে কান্দি।


“দীনের বান্ধব মোর এল ওড়াকান্দী।।”


ঠাকুরের পদে করে দেনা – দরখাস্ত।


দয়াময় গুরুচাঁদ করে বন্দোবস্ত।।


জমি জমা গুরুচাঁদে করে সেই দান।


দেনা শোধ করে গুরুচাঁদ ভগবান।।


কবুলতি নিয়ে পুনঃ জমি ফিরে দেয়।


এক বিঘা বিনা – করে খাস করি লয়।।


ঋণ মুক্ত সে কাঙ্গাল প্রাণ ফিরে পায়।


প্রজা সাজি বিক্রি হয় শ্রী গুরুর পায়।।


এই মত শত শত ঋন – মুক্ত জন।


শ্রী গুরু – কৃপাতে ধন্য হয়েছে এখন।।


গৃহীজীবে বাঁচাইতে হরি অবতার।


গুরুচাঁদে দিয়া গেল অসমাপ্ত ভার।।


গৃহীকুল কুল পেল বাড়িল আনন্দ।


অন্ধকারে বদ্ধ থেকে নষ্ট মহানন্দ।।

No comments: