Saturday, August 22, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 44 কমিশনারে আগমন ও সম্বর্দ্ধনা

তিন দিনে রাস্তাঘাট ফিট ফাট হ’ল।


চতুর্থ দিনেতে সে কমিশনার এল।।


জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট আর এল তাঁর সঙ্গে।


ডেপুটী, দারোগা সবে এল নানা রঙ্গে।।


শ্রীনব গোপাল চাকী কায়স্থ-সন্তান।


গোপাল গঞ্জের তিনি ডেপুটি যে হন।।


প্রভু প্রতি মনে মনে তার হিংসা ছিল।


প্রভুর বিরুদ্ধে বহু সাহেবে জানাল।।

সাহেব হাসিয়া বলে “চাকী মহাশয়।


তাঁর মত লোক দুষ্ট, তা’কি কভু হয়?


তুমি বল মানে তাঁর সব নমঃশূদ্র।


এতই সম্মান যাঁর তিনি কিসে ক্ষুদ্র?


যাহা হোক জানা যাবে হ’লে পরিচয়।


আমি ভাবি এ সম্বন্ধে কি করি উপায়?


এক দলে দাঙ্গা করে এই কোন কথা?


বিশেষ মুসলমানে বড়ই একতা।।


তুমি বল এই দেশে তারা সংখ্যাধিক।


তারা বলে ‘মার খাই’ একথা কি ঠিক?


দেখা যাক তদন্তেতে কি ফল দাড়ায়?


পরে বুঝে করা যাবে বিহিত উপায়”?


এই ভাবে আলাপন হয় পথে পথে।


সাহেব নামিল শেষে নিজ ‘লঞ্চ’ হ’তে।।


ঘাটেতে দাঁড়ায়ে আছে নমঃশূদ্রগণ।


তা ছাড়া মুসলমান রহে অগণণ।।


নমঃশূদ্র মধ্যে ছিল শ্রীবিধু চৌধুরী।


শ্রীশশি ভূষণ বাবু মান্য হাতে করি।।


ভীষ্ম বাবু আদি করি যতেক প্রধান।


সাহেবের মান দিতে সবে আগুয়ান।।


আর বহু নমঃশূদ্র উপস্থিত হয়।


সে সব লিখিতে গেলে গ্রন্থ বেড়ে যায়।।


মাটিতে নামিল যবে সে কমিশনার।


শশীবাবু তাঁর কন্ঠে দিল পুষ্পহার।।


সাহেব হাসিয়া তাঁরে করিল সম্মান।


পরে জিজ্ঞাসিল কথা ডেপুটির স্থান।।


“বলহে মিষ্টার চাকী! এই কোন জন।


নমঃশূদ্র কিংবা কোন কায়স্থ ব্রাহ্মণ?”


চাকী বলে “ইনি স্যার ওড়াকান্দী বাসী।


ঠাকুরের পুত্র ইনি নাম এঁর শশী।।


সাহেব কহিল “চাকী! আর কথা নাই।


অগ্রভাগে চল মোরা এর বাড়ী যায়।।


বাবুরে ডাকিয়া বলে “ওগো মহাশয়!


আপনার বাড়ী আমি যাইব নিশ্চয়।।


কোন পথে যেতে হবে বলুন আমায়।


আপনার পিতা বুঝি আছেন আলয়।।”


বাবু বলে “মহাশয় করি নিবেদন।


আমাকে পাঠাল পিতা এই সে কারণ।।


আপনারে মাল্য দিয়া করিতে সম্মান।


আমাকে বলিল পিতা হ’তে আগুয়ান।।


বিশেষে তাঁহার ইচ্ছা আমোদের বাড়ী।


আপনার যেতে হবে নিজ দয়া করি।।”


সাহেব হাসিয়া বলে “বুঝিয়াছি তাই।


তাই ত তোমার সাথে আমি যেতে চাই।।


শীঘ্র করি পথে চল মিষ্টার ঠাকুর।


মনে হয় ওড়াকান্দী নহে কম দুর।।


এতবলি পথে দরি সাহেব চলিল।


পাশে পাশে শশীবাবু চালিতে লাগিল।।


সাহেব পথেতে চলে দুই দিকে চায়।


অপরূপ সাজ সজ্জা দেখিবারে পায়।।


মনে ভাবে ‘এই শেষ কিন্তু শেষ নয়।


যত যায় তত দেখে কথা নাহি কয়।।


হিন্দু-পল্লী মাঝে যবে সাহেব আসিল।


দলে দলে নারী যবে হুলুধ্বনি দিল।।


সাহেব শশীকে কহে “কি শব্দ হইল?”


শশী বাবু বলে ‘স্যার যত নারী গণে।


করিল মঙ্গল-ধ্বনি তব দরশনে।।


আমাদের রীতি এই দেব-পূজা কালে।


হুলুধ্বনি করে মিষে যত নারী দলে।।


দেব-পূজা, শুভকর্ম্মে এই আচরণ।


‘শুভ’ বলি করে বঙ্গে যত হিন্দুগণ।।


রাজাকে দেবতা-জ্ঞানে হিন্দু কর পূজা।


তাই এই ধ্বনি করে বলিলাম সোজা।।”

 

 

সাহেব শুনিয়া কথা প্রীতি হৈল মনে।


যত চলে ঘরে ঘরে হুলুধ্বনি শোনে।।


এই ভাবে পথ চলি ওড়াকান্দী এল।


হুলুধ্বনি, জয় ধ্বনি সকলে করিল।।


অবশেষে উপনীত প্রভুজীর বাড়ী।


দেখে লোক দাঁড়াইয়া আছে সারি সারি।।


বহু বখ্ত নারী সেথা ছিল উপস্থিত।


হুলুধ্বনি করে সবে অতি আনন্দিত।।


মীড সঙ্গে প্রভু তবে আইল বাহুড়ি’


সাহেবের হস্ত ধরে মীড অগ্রসরি।।”


প্রভুকে দেখা’য় বলে “এই সে ঠাকুর।”


সাহেবের চিত্ত তাহে হল ভরপুর।।


শ্রীকর মর্দ্দন করে দিয়ে নিজ হাতে।


প্রভু বলে “গৃহ মধ্যে চল মম সাথে।।


আর এক নিবেদন জানাই তোমায়।


বাংলা ভিন্ন অন্য ভাষা মোর জ্ঞাত নয়।।


তুমি কি বলিবে কথা আমার ভাষায়?


তাহা হ’লে মোর পক্ষে বড় ভাল হয়।।”


সাহেব হাসিয়া বলে “যে ইচ্ছা তোমার।


তব বঙ্গো বঙ্গভাষা হবে ব্যবহার।।”


অতঃপর সাহেবের গৃহমধ্যে লয়।


ম্যাজিষ্ট্রেট আর মীড সঙ্গে সঙ্গে রয়।।


চেয়ার পাতিয়া দিল মধ্যের উঠানে।


সাহেবে আনিয়া প্রভু বসায় আসনে।।


সাহেবে বসিয়া তবে প্রভু-প্রতি কয়।


“একটা আসনে নিজে বসুন মহাশয়।।”


মীড বসে প্রবু বসে বসে ম্যাজিষ্ট্রেট।


কিছু দূরে ‘চাকী’ থাকে করি মাথা হেঁট।।


তাহা দেখি প্রভু কহে সাহেবের কাছে।


“আপনার কাছে এক নিবেদন আছে।।


আপনার ভিন্ন হেথা অন্য কোন জন।


আসিবারে নিবারণ করুন এখন।।


বিশেষতঃ পুলিশের যত কর্ম্মচারী।


তারা যেন নাহি হেথা আসে দয়া করি।।


এই যে কনেষ্টবল দাঁড়াইয়া আছে।


দয়া করি উনি যেন নাহি আসে কাছে।।”


সাহেব চাহিয়া দেখে চাকী মহাশয়।


কিছু দূরে একা একা দাঁড়াইয়া রয়।।


সাহেব বুঝিল প্রভু তাঁর নাহি চিনে।


তাহাকে কনেষ্টবল করিয়াছে মনে।।


হাসিয়া সাহেব বলে “শুনুন ঠাকুর।


যাহা ভুল হইয়াছে আমি করি দূর।।


পুলিশেষ লোক উনি নহে কদাচার।


উনি ত ডেপুটী-বাবু বলিনু বচন।।


উহাকে আসন দিন, অনুরোধ করি।


অতিথি আজিকে উনি আপনার বাড়ী।।


এত বলি হাতছানী দিয়া ডাকে তাঁরে।


আসিল ডেপুটী বাবু সাহেবের ধারে।।


প্রভুর আজ্ঞাতে ভৃত্য মনেতে ‘বেজার।’


সাহেব ডাকিয়া বলে প্রভুজীর ঠাঁই।।”


‘আপনার কথা যত শুনিবারে চাই।’


প্রভু বলে ‘মহাশয় পুঁছি তব কাছে।


ধনী মানী বড়লোক সব দেশে আছে।।


আমরা দরিদ্র সবে এই বিল-দেশে।


সকলি কাঙ্গাল মোরা জানিবে বিশেষে।।


আচার বিচার মোরা কিছু নাহি জানি।


তাহাতে জিজ্ঞাসা করি মনে শঙ্কা গণি।।


সকলে গৃহে তব আছে যাতায়াত।


তাঁর কোন ব্যবহার করে তব সাথ?


কোন উপহার দেয় কিবা অভ্যর্থনা?


আমরা কাঙ্গাল জাতি কিছুই জানিনা।।


দয়া করি সেই সব বল মোর কাছে।


অন্য কথা এর পরে বলিবার আছে।।”

 

 

সাহেব হাসিয়া বলে প্রভুজীর কাছে।


এ সম্বন্ধে কিবা কথা বলিবার আছে?


যে-যেমন লোক তার তেম্নি ব্যবহার।


সাধ্য অনুযায়ী লোকে দেয় উপহার।।


রাজা করে স্বর্ণ দান পন্ডিতে পুস্তক।


মনোমত দেয়া লোকে যার যাহা সখ।।


দ্রব্য নহে মন নিয়ে হইবে বিচার।


শুদ্ধ মনে দিলে হয় শ্রেষ্ঠ উপহার।।”


প্রভু বলে ‘কথা শুনি ভরসা হইল।


দারুণ দুশ্চিন্তা মোর দূর হ’য়ে গেল।।


আমরা কাঙ্গাল জাতি অন্য কিছু নাই।


বহু কষ্টে জমি হতে কিছু ধন পাই।।


ফুলের বাগান মোরা কভু নাহি চিনি।


মাঠে থাকে দূর্ব্বাদল তাই তুলে আনি।।


দেবপূজা, রাজপূজা যত শুভকর্ম্ম।


‘ধান্য দূর্ব্বা’ শ্রেষ্ঠ বলি বলে হিন্দু-ধর্ম্ম।।


রাজ কর্ম্মচারী বটে রাজশক্তিধারী।


মনে বলে রাজজ্ঞানে তাঁরে পূজা করি।।


অনুমতি যদি হয় তা হলে পুলকে।


মান্য করে ‘ধান্য দূর্ব্বা’ দিব ও মস্তকে।।


ধান্য দূর্ব্বা দানে যদি করে আশীর্ব্বাদ।


শত্রুও বশ্যতা করে, করে না বিবাদ।।


যাঁরে দেয় তার হয় মহা উপকার।


আমি ত করিতে চাই সেই ব্যবহার।।”


প্রভুর বিনয় শুনি সে সাহেব কয়।


“যাহা কর তাহে বাধ্য আমি সর্ব্বদায়।।”


এমত বচন শুনি প্রভুজী তখন।


আজ্ঞা দিল নারীগণে করিতে বরণ।।


আজ্ঞামাত্রে নারীগণ উপস্থিত হল।


ধান্য দূর্ব্বা চন্দনাদি কূলেতে আনিল।।


ইঙ্গিতে দেখায় প্রভু সে কমিশনারে।


নারীগণে ধান্য দূর্ব্বা দেয় তার শিরে।।


পরে করে হুলুধ্বনি মঙ্গলাচরণ।


এই ভাবে ধান্য দূর্ব্বা পেল সর্ব্বজন।।


যদিও ইংরেজি জাতি সাহেব দু’জন।


আচার দেখিয়া মুদ্ধ তাঁহাদের মন।।


মনে মনে তাঁরা ভাবে এ কোন মানুষ।


এর কাছে এলে নাহি থাকি নিজ-হুষ।।


ইংরেজী ভাষায় বলে ম্যাজিষ্ট্রেট ঠাঁই।


“এমন পবিত্র লোক আমি দেখি নাই।।”


ডেপুটির পানে চাহি কহিল বাংলায়।


“মনে মনে কিবা ভাব’ চাকী মহাশয়।।”


বড়ই মহৎ দেখি এই মহাজন।


মাঝে মাঝে তুমি হেথা করো’ আগমন।।


সাহেবের কথা শুনি চাকি দিল সায়।


বলে “মাঝ মাঝে আমি আসিব হেথায়।।”


অতঃপর প্রভু বলে সাহেবের কাছে।


“এক আর্জ্জি সাহেব জী তব ঠাঁই আছে।।


এই যে ডক্টর মীড পুরুষ মহান।


বিশেষ স্বভাব গুণে অতি মান্যবান।।


এই গ্রামে বাস করে এই মহোদয়।


ইনি চাহে খুলিবারে উচ্চ-বিদ্যালয়।।


গোপালপুরের যত নমঃশূদ্র গণ।


সেই স্কুলে চাঁদা দান করে সর্ব্বজন।।


লেখাপড়া শিখিবারে তাহাদের মন।


বড়ই উৎসুক তারা বিদ্যার কারণ।।


তারা নাহি ‘দাঙ্গাবাজ’ এই কথা বলে।’


দরখাস্ত গেছে নাকি আপনার স্থলে।।


আর নাকি শুনিলাম নমঃশূদ্র গন।


মুসলমানের আগে করে আক্রমন।।


মুষ্টিমেয় নমঃশূদ্র আছে এই দেশে।


আক্রমণ করে তারা কিসের সাহসে?


অধিক কি কব আর মীড এই আছে।


শুনুন জিজ্ঞাসা করে সব তার কাছে।।

 

হতে পারে দীনহীন নমঃশূদ্র গণ।


কিন্তু “দঙ্গাবাজ” তারা নাহয় কখন।।


দাঙ্গাবাজ হতে গেলে শক্তি থাকা চাই।


সংখ্যা কম নমঃশূদ্র শক্তি কোথা পাই?


আর কথা শুনিলাম এই জন্যে নাকি।


পিটুনী পুলিশ দিবে শাসিতে দেমাকী।।


অবশ্য কাঙ্গাল প্রজা আমরা সকলে।


রাজ-আজ্ঞা মানি সবে অতি কুতুহলে।।


কিন্তু যাহা নিবেদন বলিলাম তাই।


জানিয়া দিবেন শাস্তি এই ভিক্ষা চাই।।”


এমত বলিল যদি প্রভু দয়াময়।


সাহেবে ডাকিয়া তবে মীড কথা কয়।।


ইংরাজীতে আলাপন করে দুই জনে।


কাছে থাকি শশীবাবু সেই সব শোনে।।


ধীরে ধীরে মীড কহে সকল বারতা।


প্রভুর কেমন শক্তি বলে কোন কথা।।


সাহেব কহিল “মোর সব জানা আছে।


ম্যাজিষ্ট্রেট সব কথা আমাকে বলেছে।।


লাট-দরবারে সে সব ঘটনা ঘটিল।


সেই সব ম্যাজিষ্ট্রেট আমাকে কহিল।।”


হেনকালে সাহেবেরে প্রভু ডাকি কয়।


“এই দেশে হাইস্কুল নাহিক কোথায়।।


পূর্ব্বে বলিয়াছি আমি মীডের সহিত।


স্কুল করিবারে চেষ্টা করেছি বিহিত।।


আপনার শুভদৃষ্টি তাতে আমি চাই।


আপনি ভরসা দিলে বড় সুখ পাই।।


সাহেব বলিল “ইহা উত্তম প্রস্তাব।


হাইস্কুল হলে যাবে শিক্ষার অভাব।।


চেষ্টা করি মীড তুমি হাইস্কুল করো।


তুমি চেষ্টা করিলে করিতে ইহা পারো।।


আমি বলি স্কুল যদি হয় এই খানে।


সরকারী দান দিব অতি অল্প দিনে।।


ঠাকুরের সহযোগে কর এই কাজ।


স্কুল পেলে উচ্চ হবে পতিত সমাজ।।”


পুনরায় প্রভু বলে সাহেবের ঠাঁই।


কতটাকা হলে মোরা হাইস্কুল পাই?


সাহেব ডাকিয়া মীডে জিজ্ঞাসে তখন।


স্কুল ঘরে কত টাকা হবে প্রয়োজন।?


মীড বলে “কিছু টাকা আছে তহবিলে।


ঘর দিতে পারি আর বারশত পেলে।।”


মীড যদি বলে কথা এরূপ প্রকার।


প্রভু বার শত দিতে করে অঙ্গীকার।।


প্রভু বলে “একা আমি টাকা নাহি দিব।


স্বজাতি বান্ধবগণে শরিক রাখিব।।


বহির্ব্বাটি তারা সবে রয়েছে বসিয়া।


অনুমতি কর যদি জিজ্ঞাসিব গিয়া।।”


সাহেব বলিল তাতে বাধা কিছু নাই।


চলুন সকলে মোরা বহির্ব্বাটি যাই।।”


বহির্ব্বাটি লোকারণ্য করিছে বিরাজ।


প্রভু আসি জিজ্ঞাসিল তাহাদের মাঝ।।


“হাইস্কুল করিবারে সম্মত হয়েছি।


বার শত টাকা দিব স্বীকার করেছি।।


এই শুভ কার্য্যে কেহ আছি কি শরিক?


যদি থাক সবে মিলে অংশ কর ঠিক।।”


পভু যবে এই কথা বলিল সকলে।


“সবে বলে দিব টাকা আর দিব ছেলে।।”


এই ভাবে হইতেছে কথোপকথন।


সাহেব মীডের সঙ্গে করিছে গমন।।


প্রভু বলে “ঠিক কর কেবা কত দিবে।


সাহেবে জানাব আমি কথা সেই ভাবে।।”


এত বলি প্রভু যবে দৃষ্টি ফিরাইল।


দেখিল সাহেব নাই-বুঝি চলে গেল।।


মনে মনে হাসে প্রভু কথা নাহি কয়।


আশ্চর্য্য লীলার ইচ্ছা করে ইচ্ছাময়।।

 

প্রভু কয় “বল সবে কে কি টাকা দিবে?


সাহেব আসিলে ফিরে বলি সেই ভাবে।।”


সবে বলে ‘কর্তা ঐ সাহেব চলে গেলে।


প্রভু কয় “যায় যাক কি দিবে তাই বল।।”


সকলে জুটিয়া তাই করে পরামিশে।


বলে ‘কর্তা বহুলোক আছি এই দেশে।।


সকলে এখানে আজি নহে উপস্থিত।


কোন রূপে এই কার্য্য করিব বিহিত?


এই নিবেদন করি তব রাঙ্গা পায়।


মোরা আজ যাই সবে যার যার গাঁয়।।


প্রতি গ্রামে অংশ মোরা ঠিক করি ল’ব।


সেই বার্তা আপনার গোচরে আনিব।।


যার কাছে টাকা দিতে আজ্ঞা হবে তব।


আমরা সরল প্রাণে তাঁরে টাকা দিব।।”


প্রভু কয় “মন্দ নয় সবে যা” বলিলে।


সেইভাবে কাজ তবে কর সবে মিলে।।”


সকলে বিদায় নিতে করে আয়োজন।


হেনকালে শুন এক আশ্চর্য্য ঘটন।।


সাহেব মীডের সঙ্গে কতদূর যায়।


কি জানি কি মনে তার পড়িল তথায়।।


মীডে ডাকি বলে “মীড! অন্যায় হইল।


বিদায় হইতে মোর দেড়ী পড়ে গেল।।


ঠাকুরের কাছে কিছু আমি বলি নাই।


বড়ই অন্যায় হ’ল মনে ভাবি তাই।।


এইরূপ কার্য্য নহে কিছুতে উত্তম।


বিশেষতঃ ইংরেজের এ নহে নিময়”।।


এত বলি দ্রুতগতি সাহেব ফিরিল।


প্রভুর নিকটে গিয়া উপস্থিত হ’ল।।


বিনয়ে প্রভুকে কহে “শুন মহাশয়।


মম পক্ষে হ’ল আজ বড়ই অন্যায়।।


বিদায় না মাগি আমি গিয়াছিনু চলে।


বড়ই লজ্জিত আমি হই তব স্থলে।।


শুভমনে এইক্ষণে দেহ গা বিদায়।


মোর মনে স্মৃতি তব রহিবে নিশ্চয়।।”


প্রভু বলে “কোন চিন্তা নাহি মহাজন।


আনন্দে আপনি তবে করুন গমন।।


আমাদের প্রতি যেন কৃপাদৃষ্টি রয়।


অধিক কি কব “হোক রাজার বিজয়।।


চিরসুখী হন যেন রাজ-রাজেশ্বর।


এই ইচ্ছা ভিন্ন ইচ্ছা নাহিক আমার।।”


শুনিয়া প্রভুর কথা মাথা নোয়াইয়া।


চলিগেল সাহেবেরা আনন্দিত হৈয়া।।


এই সব কান্ড দেখি বিস্মিত সবাই।


সবে বলে ‘হেন রত্ন মোরা চিনি নাই।।


ভস্ম মাঝে অগ্নি যথা লুক্কায়িত থাকে।


অবোধ নমঃর ঘরে প্রভু রহে ঢেকে।।


পর্ব্বতের মধ্যে অগ্নি ঘুমাইয়া রয়।


ঠুক্নির আঘাতে অগ্নি প্রজ্বলিত হয়।।


কাষ্ঠ দিয়া যদি কেহ করয় আঘাত।


অগ্নি নাহি জ্বলে কাষ্ঠ নিজে খন্ডপাত।।


জহুরী রতন চিনে যতন করয়।


ধর্ম্মের মর্ম্মার্থ পাপী কভু নাহি পায়।।”


এইরূপে সবে মিলি বিলাপ করিল।


প্রভুর নিকটে সবে বিদায় মাগিল।।


এদিকে সাহেব চলি গেল নিজ স্থান।


নমঃশূদ্রগণ সবে পেল পরিত্রাণ।।


“পিটুনি পুলিশ আর নাহিপ প্রয়োজন।’


সাহেব করিয়া দিল এমত লিখন।।


‘ভদ্র ও বিনয়ী হল নমঃশূদ্র জাতি।


এমত রিপোর্ট লিখি রাখিলা সম্প্রতি।।


এসব সম্ভব হল শ্রীগুরু-কৃপায়।


নমঃকুলে অবতীর্ণ নিজে দয়াময়।।


পতিত দুঃখিত জনে উদ্ধারের লাগিল।


ব্যথিতের সাথে নিজে হল দুঃখ-ভাগী।।

 

অনন্ত গুণের সিন্ধু প্রভু গুরুচন্দ্র।


তাহে নাহি ডুব দিল মূঢ় মহানন্দ।।

 

No comments: