Saturday, August 22, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 48 প্রেম তরঙ্গে শ্রীশ্রীহরিগুরুচাঁদ প্রস্তাবনা

পিতাপুত্র অভেদাত্মা অবতীর্ণ হল।


ধর্ম্মশক্তি কর্ম্মশক্তি একত্রে মিশিল।।


বাহ্য জগতেরে নিয়ে লীলা-কর্ম্মকান্ড।


ভক্ত সঙ্গে গূঢ় খেলা তরায় পাষান্ড।।


যেই কান্ডে যেই থাকে দেখে সেই ভাবে।


ভাবের ভাবুক হরি থাকে নিজ ভাবে।।


এই ভাব গুরুচাঁদে করিয়া প্রত্যক্ষ।


কবিরসরাজ তাই দিয়াছেন সাক্ষ্য।।


হরি লীলামৃত গ্রন্থে করিয়াছে ধার্য্য।


“বাহিরে ঐশ্বর্য্য প্রভু অন্তরে মাধুর্য্য।।”


সংসার জুড়িয়া তাঁর কর্ম্মধারা চলে।


নিরালে কাঁদায় ভক্তে প্রেম-খেলাচ্ছলে।।


বাহির দেখিল যারা তারা বলে ডাকি।


‘ধর্ম্ম-শক্তি গুরুচাঁদে মোরা নাহি দেখি।।


অবশ্য চরিত্র ক্ষেত্রে তাঁর তূল্য নাই।


কি দিয়ে কি করে তাহা বুঝে নাহি পাই।।


আর ভাবি কোনগুণে এতলোক আসে।


ভারে ভারে টাকা দেয় কিসের বিশ্বাসে?


তাতে মনে হয় উনি যাদু কিছু জানে।


তাই দিয়ে দলে দলে ভক্ত টেনে আনে।।


অন্তর দেখিল যারা সঁপিয়া অন্তর।


বারিধারা-সম দুই চক্ষে বহে লোর।।


অন্তরঙ্গে তাঁর সঙ্গে যার হল দেখা।


সে বলে ‘এরূপ দেখে যায় নাকি থাকা?’

 

 

বালুতলে ছুটে চলে ফাল্গু-নদী ধারা।


বাহিরে দেখায় শুষ্ক, বুকে সুধা-ভরা।।


বালি ঠেলি যেই জন পশিয়াছে তলে।


নিদাঘে তাপিত প্রাণ স্নিগ্ধ তার জলে।।


তাই ভক্ত কান্দি বলে ‘হেন দেখি নাই।’


অভক্তে রাগিয়া কহে ‘পেলে কোন ছাই।।


ভক্ত বলে তুমি অন্ধ জ্ঞানচক্ষু নাই।


অভক্ত হাসিয়া কহে কথার বালাই।।


ভক্ত বলে প্রেমনীরে ডুব একবার।


গর্ব্বী বলে ‘নাহি তত গরজ আমার।।


ভক্ত বলে “গুরুচাঁদ সর্ব্বসিদ্ধি-দাতা।’


অবিশ্বাসী বলে ‘তুমি বল ভন্ড কথা।”


ভক্ত বলে ‘মরা-দেহে পাইয়াছে প্রাণ।


দুষ্ট বলে ‘ঠাকুরের পুত্র ম’ল কেন?


ভক্ত বলে ‘তিনি হন সম্বন্ধ রহিত।


ভন্ড বলে সম্বন্ধটা টাকার সহিত।।


যাহার যেমন মন সে দেখে তেমন।


মনোরমাকারী হরি মানস-রঞ্জন।।


কর্ম্মক্ষেত্রে গুরুচাঁদে এক ভাবে দেখে।


ভক্ত ভাবে ‘প্রভু কেন দুষ্টগণে ডাকে।।


স্বার্থের খাতিরে আসি কর্তা, কর্তা, কয়।


দূরে গেল নিন্দাবাদে পঞ্চমুখ হয়।।


জানিয়া ভক্তের মন ভকত-রঞ্জন।


বাক্যচ্ছলে একদিন কহিল বচন।।


মম পিতা হরিচাঁদ বলেছিল কথা।


তারক আপন গ্রন্থে লিখেছে সে গাঁথা।।


শ্রীরাম ভরত সাধু ওড়াকান্দী রয়।


তাঁহাকে সকল ভক্তে করে মহাভয়।।


রামধন নামে ভক্ত ছিল এই বাড়ী।


গাভী গুরু ঘুরাইল ‘মলেনেতে’ জুড়ি।।


অন্য এক নারী দেখ মাছ কেটে ছিল।


এ সব দেখিয়া সাধু অতি ক্রুদ্ধ হল।।


উভয়ের মারিবারে করে আয়োজন।


পিতা আসি বহু কষ্টে করে নিবারণ।।


পতিার কথায় রাম নিরস্ত হইল।


উভয়েরে তাড়াইতে পিতাকে কহিল।।


পরম দয়াল পিতা পতিত পাবন।


দয়া করে বলেছিল মধুর বচন।।


“বাড়াইয়া দিল পরে চলে যাবে ওরা।


পতিত পাবন নাম বৃথা হবে ধারা।”


সেই কথা সর্ব্বদাই আমি ভাবি বসে।


যাহারে তারিব তারে বাড়াইব কিসে?


গঙ্গাজলে বিষ্ঠা ফেলে তাতে কিবা হয়।


পতিত-পাবনী গঙ্গা সকলে তরায়।।


কি জানি কাহার ভাগ্যে কবে কিবা ঘটে।


অভক্তের ভক্ত হতে বাধা নাই মোটে।।


অভক্ত দু’ভাই ছিল জগাই মাধাই।


তারা কেন ভক্ত হল বল দেখি তাই?


আত্মতত্ত্ব না জানিয়া কত মূর্খ জন।


দর্প ভরে করে থাকে কত আস্ফালন।।


বিধাতার বাধাহীন নিয়ম বিধানে।


দর্প যায় শান্ত হয় কত দুষ্ট জনে।।


তাই বলি অভক্তেরে ক্রোধ নাহি কর।


যার যার নায় উঠে যার পাড়ি ধর।।


এমত প্রবোধ বক্তে দিল দয়াময়।


পরে কিবা ইচ্ছা করে বলিব ত্বরায়।।


দুই পথে দুই ধারা চলে একদিকে।


গুরুচাঁদ ইচ্ছা করে মিলাবে দোঁহাকে।।


কর্ম্মশূণ্য ধর্ম্মাচার প্রলাপ বচন।


ইচ্ছা করে তাই দোঁহে করিতে বন্ধন।।


হরিচাঁদ রূপে কেহ যেই ধর্ম্মনীতি।


সেই তত্ত্ব বুঝাইতে চাহে না সংপ্রতি।।


‘হাতে কাম মুখে নাম’ এই নীতি সার।


ইচ্ছা করে ভক্তে দিতে দয়াল এবার।।

 

সংসারী পক্ষে পালা সর্ব্বনীতি রয়।


ধর্ম্মনীতি, কর্ম্মনীতি যত নীতিচয়।।


ক্রমে ক্রমে সেই পথে ভক্তকে টানিল।


ভক্ত দিয়ে ভক্তাধীন জগত তরা’ল।।

 

No comments: