শনির প্রকোপে রাজা নলের কী দশা হয়েছিল, তা সেই কাহিনির পাঠকমাত্রেই জানেন। কিন্তু সত্যিই কি শনি এক ভয়ানক দেবতা। কথায় বলে— শনির দশা চলছে। ভারতীয় মহাকাব্য এবং পুরাণে শনি এক অতি পরিচিত মুখ। তাঁকে ঘিরে পল্লবিত রয়েছে অসংখ্য কাহিনি। কিন্তু সত্যিই কি শনি এক ভয়ানক দেবতা ? কী রয়েছে তাঁর কংবদন্তির পিছনে। দেখা যাক শনি-রহস্য।
• পুরাণ অনুযায়ী শনিদেব সূর্য ও ছায়ার সন্তান।
• তিনি নবগ্রহের অন্যতম এবং পার্থিব জীবনের উপরে তাঁর প্রভাব অপরিসীম।
• শনিকে কোনও অপশক্তি মনে করলে ভুল করা হবে। তিনি ইচ্ছা করে কাউকে বিপদে ফেলেন না।
• গ্রহ হিসেবে শনি নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রম, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদিকে চিহ্নিত করেন। এই গুণগুলি থেকে বিচ্যুত হলে তিনি কুপিত হন।
• মানুষের যাবতীয় কর্ম— ভাল-মন্দ সবকিছুকেই শনিদেব লক্ষ করেন। দুষ্কর্মের জন্য তিনি রুষ্ট হন।
• কতগুলি সদগুণ শনি যেমন নিয়ন্ত্রণ করেন, তেমনই দুর্ঘটনা, লোভ, নেশা বা আসক্তি, অপরাধ প্রবণতাকেও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন।
• শনিদেব পরম শিবভক্ত।
• কারো প্রতি শনি কুপিত হলে তিনি আগে থেকেই তা টের পেতে পারেন। জ্যোতিষ অন্তত তাই বলে।
ইন্দ্রনীলনিভঃ শূলী বরদো গৃধ্রবাহনঃ ।
পাশবাণাসনধরো ধ্যাতব্যেহর্কসুতঃ ।।
ইন্দ্রনীলমণির মত বর্ণ, শূলধারী ও বরদহস্ত, পাশ ও ধনুর্বাণধারী, শকুনিবাহন সূর্যপুত্র শনৈশ্চরকে ধ্যান করি।
মহানির্বাণতন্ত্রানুশারে শনিদেব কানা ও খোঁড়া মহাভারতে কলিযুগের অধীশ্বর মূর্তিমান কলির অমঙ্গল ও অশুভের প্রতিমূর্তিই হলো "শনি"। কলি ও শনি সমন্বিত হয়ে অমঙ্গলকর গ্রহরূপে শনি নামে পরিগণিত হয়েছেন। শকুনি অমঙ্গলের প্রতীক হিসাবে শনিদেবের বাহন নির্বাচিত হয়েছেন। তাই শনিদেবের বাহন শকুনিকে নির্বাচন যতার্থ হয়েছে। তাছাড়াও শনিদেবের বাহন শকুনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর বাহন গরুড়ের আদর্শে পরিকল্পিত হয়েছে।
পুরাণানুশারে শনিদেবের পিতার নাম সূর্য এবং মাতার নাম ছায়া। শনিদেব যম রাজার বৈমাত্রেয় ভাই। ধর্মরাজ যম ও গ্রহরাজ শনিদেব উভয়ের পিতৃদেব সূর্য। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে শনি Saturn নামক গ্রহ।
শনিদেবের নীলগাত্রবর্ণ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর গাত্রবর্ণের সাদৃশ্যে কল্পিত হওয়ায়,শনিদেবের পূজায় সির্নির ব্যবস্হা সত্যপীর বা সত্যনারায়ণের পূজার উপকরণ থেকে সংগৃহীত হয়েছে। শনি দেবতা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বটে কিন্তু গৃহাভ্যান্তরে পূজা পাওয়ার স্বীকৃতি কখনো পান নি। সেজন্যই শনিদেবের পূজার আয়োজন বসতগৃহের বাহিরে হয়ে থাকে।
শনিঠাকুরের পূজায় কাহাকেও নিমন্ত্রন করা যায় না, এমনকি তিনির পূজার প্রসাদ বাসিও করা যায় না। সোয়া পরিমানে দুধ, চিনী, সুজি/চালের গুড়ি , সোয়াকুড়ি কলার সমন্বয়ে তৈরী সির্নি ,পঞ্চবর্ণের ফুল, পঞ্চবিধ ফল, নীল রঙ্গের ঘট, নীল বস্ত্র ও লৌহাঙ্গুরী ( আসনাঙ্গুরিয় ) তিনির পূজার বিধান। গুড়ের তৈরী কৃষ্ণ তীলের নাড়ু শনিদেবর খুব প্রীয়। লৌহ পাত্রে তীল ও তীল তৈল গ্রহবিপ্রকে দান করলে শনিদেব দাতার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন।
শনিদেবের আরাধ্যাদেবী হলেন মা দক্ষিণা কালী। অতএব মা দক্ষিণা কালিকা দেবীর কৃপা দৃষ্টি যদি আপনার প্রতি থেকে থাকে তা হলে শনিদেব আপনার কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারবেন না। তাই আনন্দময়ী মাকে এক মনে ডাকুন মা আপনাকে শনিদেবের কুদৃষ্টি থেকে সবসময় রক্ষা করবেন।
জয় জয় গ্রহরাজ শনৈশ্চরের জয়।
শনিদেবের প্রণাম মন্ত্র।
ওঁ নীলান্জ্ঞনচয়প্রখ্যং রবিসূত-মহাগ্রহম্।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভূতং ত্বং নমামি শনৈশ্চরম্।।
সরলার্থ:- তোমার দেহ কৃষ্ণবর্ণ,তুমি সুর্যদেবতার পুত্র,ছায়ার গর্ভে তোমার জন্ম,তুমি আমার প্রণাম গ্রহণ করো।
শ্রী শ্রী শনি ঠাকুরের চরণে ভক্তির ভরে প্রনাম জানিয়ে কমেন্টে লিখুন ?
"জয় শনিদেব"
সবাইকে জানার জন্য শেয়ার করুন।
No comments:
Post a Comment