Monday, September 21, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :-86 “স্বধর্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরোধর্ম্ম ভয়াবহঃ”


….গীতা…


তাই বলি ব্রহ্ম পেতে ব্রহ্ম কেন হবে?


পরধর্ম্ম নিয়ে প্রাণে কিবা শান্তি পাবে?


আর শুন মম ঠাঁই যত সমাচার।


তুমিত বলিলে ব্রাহ্ম সব একাকার।।


বলিতে পারকি শশী কোন কোন জাতি?


ব্রাহ্ম ধর্ম্মে দীক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছ সম্প্রতি?


মুচি, ডোম, আদি করি নীচ জাতি যত।


ব্রাহ্মধর্ম্ম দীক্ষা এরা নেয়’ত সতত।।


ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, যত ব্রাহ্ম হ’ল।


নীচ জাতি ব্রাহ্ম সাথে আছে জল চল?


আমি জানি ব্রাহ্ম হলে কিবা হবে পার।


যার জাতি তার সাথী মিশামিশি তার।।

 

বাক্যে সমন্বয় বাপু পাবে বহুজন।


কার্য্যকালে প্রায় তার নাহি আচরণ।।


তাই বলি ব্রাহ্ম হয়ে কার্য্য কিছু নাই।


ব্রহ্মচারী হলে ব্রহ্ম নিজ দেহে পাই।।


অকাট্য প্রভুর যুক্তি তত্ত্ব-রসে ভরা।


পরম পবিত্র সত্য প্রকৃতি “অপরা”।।


পুনঃ প্রভু বলে তারে ‘শুন তুমি শশি।


কলিকাতা ছেড়ে এস থেকোনা বিদেশী।।


ঘরে এসে দেখ যদি নিজ জাতি তরে।


কিছুকাজ করে যেতে পার এ সংসারে।।


সুকীর্ত্তি ঘোষিবে লোকে জাগিবে এ বংশ।


কীর্ত্তি যার সেই ধন্য নর-অবতংস।।


পিতৃমুখে শুনি এই অপূর্ব্ব ভারতী।


কলিকাতা ছাড়ি করে ওড়াকান্দী স্থিতি।।


জাতির উন্নতি লাগি মনেতে পিপাসা।


‘শিক্ষা দাও’ ‘শিক্ষা দাও’ এই মাত্র ভাষা।।


মধ্যম ইংরেজী স্কুল গ্রামেতে স্থাপিল।


প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হইল।।


সেই পদে অধিষ্ঠিত ছিল কত দিন।


ছাত্রগণে শিক্ষা দেয় শিক্ষাতে প্রবীণ।।


বিশুদ্ধ চরিত্র ব্যাখ্যা করে সর্ব্বক্ষণে।


সেই শিক্ষা ছাত্রদলে নিল প্রাণে প্রাণে।।


তার হস্তে যেই ছাত্র কভু শিক্ষা পায়।


জ্ঞানে গুণে, ধনে মানে উন্নত সে হয়।।


ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাঠশালা করে কত শত।


শিক্ষাগ্রহ দেশ-মধ্যে বাড়ে অবিরত।।


শিক্ষা বিনে গতি নাই বুঝে দেশবাসী।


পথপ্রদর্শক তার হইলেন শশী।।


এহেন মধুর ভাব দেশ মধ্যে এল।


জাতির উন্নতি লাগি শ্রীশশী মাতিল।।


গৃহেতে থাকিয়া তেঁহ পিতৃ-আজ্ঞা মতে।


স্বজাতি উন্নতি তরে চিন্তে নানা পথে।।


শহর বন্দর গ্রামে যেথা যেথা যান।


নমঃশূদ্র-হিত-কথা সবাকে বুঝান।।


মাঝে মাঝে গুরুচাঁদে বলে বিনয়েতে।


এ জাতির ভাল, পিতাঃ হবে কোন পথে?


একদিন গুরুচাঁদ বলিলেন তাঁরে।


“শুন এক কথা শশী বলিব তোমারে।।


ধর্ম্মের পালক রাজা জানিবে নিশ্চয়।


রাজশক্তি বিনা কিছু বড় নাহি হয়।।


জাতি, ধর্ম্ম যাহা কিছু উঠাইতে চাও।


রাজশক্তি থাকে যদি যাহা চাও পাও।।


রাজার করুণ-দৃষ্টি এই জাতি পরে।


কোন ক্রমে বাপু যদি পার আনিবারে।।


তবেত জাগিবে জাতি নাহিক সংশয়।


রাজশক্তি মূলশক্তি কহিনু নিশ্চয়।।


ইংরেজ মোদের রাজা রাজদন্ডধারী।


তার সাথে সখ্যভাবে ন্যায্য মনে করি।।


প্রভু মুখে বাণী শুনি শশী ভাবে মনে।


ইংরেজ বান্ধব আমি পাব কোন খানে?


বালিয়াকান্দিতে দেখা অক্ষয়ের সাথে।


শুনিল তাহার কথা নানাবিধ মতে।।


পিতৃপদে আসি সব নিবেদন করে।


পরে করে সবকাজ আজ্ঞা অনুসারে।।


দেশবাসী আর যত আছিল প্রধান।


সকলের সঙ্গে নিয়ে করে অভিযান।।


সে সব বৃত্তান্ত পূর্ব্বে করেছি লিখন।


পুনঃ তাহা উল্লেখের নাহি প্রয়োজন।।


এবে বলি কি কি কার্য্য শ্রীশশী করিল।


কেন দেশবাসী তাঁরে বেসেছিল ভাল।।


মন দিয়া শুন সবে অপূর্ব্ব ঘটনা।


‘ভঙ্গ ভঙ্গ’ হবে বলি হল যে রটনা।।


পূর্ব্ব ও পশ্চিম বঙ্গ নামে দুই ভাগে।


বঙ্গদেশে হল ভঙ্গ বিভিন্ন বিভাগে।।

বঙ্গবাসী ক্ষুন্ন হয়ে করে আন্দোলন।


‘স্বদেশী’ নামেতে করে দল সংগঠন।।


বঙ্গভঙ্গ রদ হবে এক রবে।


অন্যথায় বঙ্গবাসী রাজাজ্ঞা লঙ্ঘিবে।।


ঊনিশ শ’ পাঁচ অব্দে এই আন্দোলন।


দলে দলে উচ্চ হিন্দু মাতিল তখন।।


অম্বিকা চরণ নামে এক মহাশয়।


উপাধি মজুমদার উকিল সে হয়।।


ফরিদপুরেতে তেঁহ করে ব্যবসায়।


এই আন্দোলনে তেঁহ দৃঢ় মত্ত হয়।।


ফরিদপুরেতে যত নমঃশূদ্র ছিল।


এই আন্দোলনে কেহ যোগ নাহি দিল।।


তাহা দেখি চিন্তা করে সেই মহাশয়।


নমঃশূদ্রে সঙ্গে নিলে কাজ ভাল হয়।।


এই ভাবে তিনি আসি ঘৃতকান্দী গাঁয়।


স্বদেশী দলের সভা সেখানে মিলায়।।


বহু নমঃশূদ্র সেথা বক্তৃতা শুনিতে।


উপস্থিত হল সবে নানা গ্রাম হতে।।


বড় শক্তিশালী বক্তা অম্বিকাচরণ।


বক্তৃতার গুণে করে হৃদয় হরণ।।


দলে দলে স্বদেশীতে যোগ দিতে সবে।


বক্তৃতাতে বলে তেঁহ বীরের স্বভাবে।।


বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে নমঃশূদ্র গণ।


স্বদেশী দলেতে যেতে করিল মনন।।


সবে মনে ভাবে মোরা স্বদেশী সাজিব।


বড় কর্তা গুরুচাঁদে এ বার্ত্তা জানাব।।


এ জাতির পিতা তিনি মান্য সবাকার।


একবার অনুমতি লইব তাঁহার।।


বিশেষ তাঁহার পুত্র শ্রীশশীভূষণ।


এই দেশে মধ্যে তিনি বিদ্যাতে প্রধান।।


তাঁহার মন্ত্রণা মোরা অবশ্য শুনিব।


আজ্ঞা যদি পাই সবে স্বদেশী সাজিব।।


এই যুক্তি করি যত নমঃশূদ্র গণ।


পতাকা ধরিয়া হস্তে করিল গমন।।


যেইমাত্র ওড়াকান্দী উপনীত হ’ল।


তা সবারে মহাপ্রভু তিরস্কার কৈল।।


পরে সবে পাঠাইল শশীর নিকটে।


তেঁহ সবে বলে শশী অতি অকপটে।।


“‘আমরা স্বজাতি ভাই কবা এই কান্ড?


কোন কার্য্য সাধিবারে হস্তে নিলে দন্ড?”


অগ্রগণ্য হয়ে তবে এক মহাশয়।


বলে “শুন বড়বাবু যাহা অভিপ্রায়।।


আমরা সকলে আজি স্বদেশী সাজিব।


দেশ-মাতৃকার লাগি জীবন ত্যাজিব।।


দেশের সন্তান মোরা বুঝেছি নিশ্চয়।


বিফল জনম যদি মাতা দুঃখ পায়।।


তব পিতা বড়কর্ত্তা আমাদের নেতা।


তাঁর অনুমতি লাগি আসিয়াছি হেথা।।”


কথা শুনি হাসি শশী কহিল সবারে।


“এই শিক্ষা পেলে বুঝি সভার ভিতরে?


কথা ভাল শোনা যায় আপাততঃ বটে।


ভিন্ন ভাব জাগে কিন্তু মোর হৃদি-পটে।।


অবশ্য বক্তৃতা শোনা নহে কিছু দোষ।


তবু কিছু বলি আমি নাহি কর রোষ।।


দেশ-মাতৃকার তরে স্বদেশী সাজিবে।


“দেশ তামা বলে কারে বুঝিয়াছ সবে?


মাটি নাকি মাটি তাহা বলে দেখি ভাই।


‘দেশ মাতৃকার’ ব্যাখ্যা বুঝে নিতে চাই।।


যে মাটিতে নাহি কোন মানব বসতি।


কেবা তারে ডাকে মাতা কে তার সন্ততি?


দেশ নহে মাটি মাত্র “দশে-দেশ বাসী।


নর নারী যত সব এক সাথে মিশি।।


নর নারী যদি কভু দুঃখ পেয়ে কান্দে।


“দেশ” কান্দে বলে সবে অতি নিরানন্দে।।

আজ’ত ‘স্বদেশী’ সবে সাজিতেছ ভাই।


তোমরা দেশের কেবা জানিয়াছি তাই।।


এতকাল তিলে তিলে অসহ্য যাতনা।


কতই সয়েছ সবে নাহিক তুলনা।।


কোথা ছিল ‘দেশমাতা’ সে দুঃখের দিনে?


দুর করি দিল দেখি আপন সন্তানে।।


“ত্যজ্যপুত্র” মোরা সবে মাতা নাহি চিনি।


কোন শঠ আসি কাণে দেয় মাতৃ ধ্বনি?


মোদের কারণে মাতা নয় দয়া দয়াবতী।


উপেক্ষিত সন্তানের নাহি কোন গতি।।


ভাই ভাই রব তুলি আজি যারা আসে।


মুখে মধু বুকে বিষ কার্য্য সিদ্ধি আশে।।


নিজ-স্বার্থ বিঘ্ন বুঝি ঘটিয়াছে আজ।


তাই ভাই বলে ডাকে মোদের সমাজ।।


দেশ নহে শুধু মাত্র শিক্ষিত সমাজ।


সেই কথা সবাকারে বুঝাইব আজ।।


অশিক্ষিত যারা দেশে তাহারা সংখ্যায়।


শিক্ষিত হইতে শশী জানিও নিশ্চয়।।


ইহাদের পানে কেহ কভু এতদিন।


চাহে নাই দেখে নাই মনে ভেবে হীন।।


মুষ্টিমেয় ব্যক্তি লয়ে যদি দেশ হয়।


প্রকৃত দেশের প্রাণ বহু দুরে রয়।।


এদের উন্নতি লাগি এ সব স্বদেশী।


কি করেছে কোনখানে দেশমধ্যে আসি?


শিক্ষার আলোকে যারা চিনিয়াছে দেশ।


দেশ-মাতা পূজা তারা করুক বিশেষ।।


মোরা অশিক্ষিত সবে আপনা না চিনি।


কোথা দেশমাতা তারা মোরা কিবা জানি?


প্রকৃত তত্তেবর কথা শুন সবে ভাই।


এ সব হুজুগে মেতে কোন ফল নাই।।


আর শুনি গূঢ় কথা বলিব সবারে।


মম পিতৃদেব যাহা বলিলেন মোরে।।

 

রাজ-কৃপা ব্যতিরেকে জাতি নাহি জাগে।


ধন, মান, বিদ্যাশিক্ষা সব কিছু লাগে।।


আমরা কৃষক সবে কৃষিকার্য্য করি।


সম্পদের মধ্যে মোরা ভূমি মাত্র ধরি।।


বিলাস ব্যসন মোরা কিছু নাহি চিনি।


কায়ক্লেশে মাটি চিরে ধান্য শস্য আনি।।


“দেশের পরান” বলি যদি কিছু রয়।


কৃষক দেশের প্রাণ জানিবে নিশ্চয়।।


দেশ-বৃক্ষ-মূল বলি কৃষকে জানিবে।


কৃষকের স্কন্ধে সুখে রাখিয়াছে সবে।।


মূল দেয় রস বহি শাখা প্রশাখাতে।


“সুখের কপোত” সেজে সবে বাঁচে তাতে।।


এ হেন দুব্বৃত্ত দেখ এই সব শাখা।


মূল-মূলে জল দিতে কার নাই দেখা।।


বিষময় ফল দেখ ফলিয়াছে আজ।


মেরুদন্ডহীন যত শোষক সমাজ।।


‘সুখের বাসায়’ বুঝি বিঘ্ন ঘটিয়াছে।


চাপে পড়ি তাড়াতাড়ি ‘দরদী’ সেজেছে।।


‘দরদী চিনিতে কিছু বাকী নাহি রয়।


এতদিনে এ দরদ ছিল বা কোথায়?।।


পতিত দলিত যত আছে বঙ্গদেশে।


রাজা ভিন্ন বন্ধু নাই জানিবে বিশেষে।।


আগে বিদ্যা আন ঘরে আন ধন মান।


আচরণে সৎ হও ডাক ভগবান।।


এ কর্ম্ম করিলে তবে এ জাতি জাগিবে।


‘দেশ মহা’ বলে কারে তখন চিনিবে।।


অন্ধজনে কিবা পারে? চোখে দৃষ্টি নাই।


আগে দৃষ্টি আন চোখে ঘুমাতে বালাই।।


দৃষ্টি পেয়ে জ্যান্ত হয়ে যদি কর কাজ।


মান পাবে ধন্য হবে জগতের মাঝ।।


এত বলি শশী বাবু নীরব হইল।


নমঃশূদ্রগণ তবে ভাবিতে লাগিল।।

সবে পুণ উপনীত প্রভু সদনে।


বহু উপদেশ প্রভু দিল সর্ব্বজনে।।


মনের সন্দেহ দূর হইল সবার।


দল ভাঙ্গি সবে ফিরি গেল নিজ ঘর।।


এ হেন প্রকারে প্রভু জাতি রক্ষা কৈল।


প্রভুর আদর্শে জাতি জাগিয়া উঠিল।।


অতঃপর মীড এল ওড়াকান্দী গ্রামে।


প্রভুকে দেখিয়া মত্ত হল তার প্রেমে।।


বহু স্নেহ করে মীড শ্রী শশীভূষণে।


বহু কথা এক সাথে কহে দুই জনে।।


এক দিন মীড পাশে শশী দুঃখে কয়।


মোদের দুঃখের কথা শুন মহাশয়।।


লেখাপড়া কিছু মোরা করিয়াছি বটে।


কিন্তু কোন রাজকার্য ভাগ্যে নাহি ঘটে।।


ইহার উপায় করি করহে কল্যাণ।


আপনি ভরসা শুধু রহে মতিমান।।


শশীর বচনে তুষ্ট মীড মহাশয়।


বলে শুন শশী বাবু বলি যে তোমায়।।


তোমার পিতা কাছে এই আবেদন।


পূর্ব্বেই শুনেছি আমি সব বিবরণ।।


প্রাণপণে চেষ্টা আমি নিশ্চয় করিব।


নমঃশূদ্রে রাজকার্য্য নিশ্চিতই দিব।।


এক কার্য্য এবে তুমি কর মহাশয়।


ছোটলাট বাহাদুরে জানাইতে হয়।।


সম্প্রতি ফরিদপুরে আসিবেন তিনি।


সবে পরিচিত হবে সেথা আমি জানি।।


তোমার জাতির পক্ষে মিলি কতজনে।


লাট-দরবারে যাহ জাতির কারণে।।


সেই উপদেশে শশী সে কার্য্য করিল।


তাঁর ফলে নমঃশূদ্রে চাকুরি পাইল।।


সে ঘটনা সব আমি প্রভুর জীবনে।


পূর্ব্বে বলিয়াছি তাহা বিবিধ বিধানে।।


শ্রীশশীভূষণ তবে পায় রাজ কার্য্য।


সাবরেজিষ্ট্রার পদ করে দিল ধার্য্য।।


ঊনিশশ সাত সালে রাজকার্য্য পায়।


বহুস্থানে বঙ্গদেশে ঘুরিয়া বেড়ায়।।


বহুদিন রহে গোপালগঞ্জের শহরে।


বহু ব্যাখ্যা করে তাঁরে যত নারী নরে।।


তাঁহার শুণের কথা বাখানে না যায়।


গুণে ব্যাধ্য ছিল সবে যেবা সঙ্গ পায়।।


সকল বিনয়ী তাহে পবিত্র চরিত্র।


সকলে সম্ভ্রম করে যায় যত্র তত্র।।


সুন্দর শোভন বেশ অতি পরিপাটী।


বাক্য কার্য্য আচরণে নাহি কোন ত্রুটি।।


পিতৃপদে ভক্তি তাঁর ছিল অতিশয়।


সদা করজোড় করি পিতৃ অগ্রে যায়।।


ন্যায়কর্ম্মে শিশু সম উলঙ্গ পরাণ।


অন্যায় দেখিলে তার নাহি ছিল ত্রাণ।।


‘বজ্রাদপি কঠোরাণী” দুষ্ট জন পক্ষে।


‘মৃদুনি কুসুমাদপি’ সাধুর সমক্ষে।।


ঊনিশ শ আঠার সালে খুলনা জিলায়।


রামপাল থানাস্থানে বদলি সে হয়।।


নোনা জল নোনা দেশ সাগরের কাছে।


স্বাস্থ্যভঙ্গ হলে সেথা দীর্ঘ ছুটি যাচে।।


এমনি মহৎ প্রাণ ছিল যে তাঁহার।


একটি ঘটনা বলি কিবা চমৎকার।।


রামপালে বসি যবে ব্যাধিগ্রস্থ হল।


প্রিয় ভক্ত শ্রীগোপালে সংবাদ পাঠাইল।।


ধন্য শ্রীগোপাল সাধু লহ্মীখালী গাঁয়।


যাঁর কীর্ত্তিগাঁথা ব্যাপ্ত হল বিশ্বময়।।


সংবাদ পাইয়া ব্যস্ত সাধু মহাশয়।


এ অধমে সঙ্গে করি রামপালে যায়।।


গিয়া দেখে বাবু আছে গৃহের ভিতরে।


ভূমিষ্ঠ হইয়া সাধু প্রণমিল তাঁরে।।

সাধুকে দেখিয়া বাবু উঠে তাড়াতাড়ি।


বারান্দা উপরে বসে গৃহশয্যা ছাড়ি।।


কুশল জিজ্ঞাসা করে প্রফুল্ল হৃদয়।


রোগজ্বালা যেন কিছু বোঝা নাহি যায়।।


তখনে কান্দিয়া সাধু বলিল তাঁহারে।


“রোগের বৃত্তান্ত কিছু বলুন আমারে।।”


সাধুকে ডাকিয়া তবে বলিলেন শশী।


‘রোগে পড়ি শোন সাধু রামপালে আসি।।


আমার পিতার তুমি ভক্ত যে প্রধান।


তাঁর পদে দিলে অর্ঘ্য দেহ মন প্রাণ।।


লোক মুখে আমি বটে শনিয়াছি কথা।


তব বাক্য কোন কালে না হল অন্যথা।।


আমার রোগের বিধি আজ করি দেহ।


মম প্রতি কিছুমাত্র যদি থাকে স্নেহ।।


বাবুর বচন শুনি সাধু উঠে কান্দি।


বলে “বাবু চিরকাল আমি পদে বন্দী।।


তব পিতা গুরুচাঁদ পরম দয়াল।


তাঁর কৃপাগুণে চলে এ দীন কাঙ্গাল।।


কোন কিচু করিবারে সাধ্য মোর নাই।


যা করে তা করে মোর গুরুচাঁদ সাঁই।।


তাঁর অংশ বটে বাবু আপনি মহান।


তব ব্যাধি বিধি দিতে কহেনা পরাণ।।


মম মনে বলে প্রভু আপনি সত্বর।


ছুটি লয়ে চলে যান আপনার ঘর।।


সেখানে বাবার আজ্ঞা যাহা তব প্রতি।


সেই বিধি মান্য হলে পাবে অব্যাহতি।।”


কথা শুনি বড় বাবু সাধু প্রতি কয়।


‘শোন সাধু মম মনে সেই ভাব হয়।।


শাস্ত্রে শুনি আর সাধু মহাজনে কয়।


হরি হতে হরিভক্ত শ্রেষ্ঠ বটে হয়।।


ভক্তে মান্য দিয়ে সুখী ভক্তবৎসল।


তেঁহ যেন বৃক্ষপ্রায় ভক্ত যেন ফল।।


ভক্তে যাহা বলে হরি তাই আগে রাখে।


তাঁর চিন্তা সদা কিসে ভক্ত সুখে থাকে।।


ভক্তে যদি দয়া করে হরি করে গ্রাহ্য।


আপনা হইতে হরি ভক্তে করে পূজ্য।ৎ


জানি বটে পিতা মোর জগতের নাথ।


তবু ভয় হয় মনে যাইতে সাক্ষাৎ।।


তুমি ভক্ত শ্রেষ্ঠ তাহা জানিত বিশেষ।


তুমি দাও বিধি মোর রোগ হোক শেষ।।


তুমি যা বলিবে মোর যেন এই লয়।


সেই বিধি পালি যদি রোগ হবে ক্ষয়।।”


এতেক বিনয় বাক্য বাবু যদি বলে।


অবিরল ভাসে সাধু নয়নের জলে।।


কিছু পরে সাধু কহে করিয়া মিনতি।


‘বড় বাবু দীনহীন আমি হীনমতি।।


আমার মনের মাঝে উঠে এক কথা।


নিবেদন করি পদে নোয়াইয়া মাথা।।


দেখুন কাননে ফুটে নানা জাতি ফুল।


রূপে গন্ধে মুগ্ধ করে যত অবিকুল।।


যে ফোটায় এই ফুল যেবা ডালে রাখে?


ভুলে কি মানব কভু মনে করে তাঁকে।।


আর দেখ কিমাশ্চর্য্য যত নারী নরে।


তাঁর ফুল দিয়ে সবে তাঁরে পূজা করে।।


মোর পক্ষে বিধি-বলা সেই কার্য্য প্রায়।


ঠাকুরের বিধি কহি ঠাকুর সভায়।।


যাঁর বিধি তাঁকে বলি পুষ্প-অর্ঘ্য যথা।


যাঁর কতা তাঁরে কহি নহে মোর কথা।।”


এত বলি সাধু তবে বিধিকথা কয়।


বিধি পালি শশীবাবু রোগে শান্তি পায়।।


অতঃপর তেঁহ ওড়াকান্দী চলি গেল।


দৈবের নির্ব্বন্ধে পুনঃ রোগগ্রস্ত হল।।


বৎসর অবধি রোগ কমে আর বাড়ে।


যাই যাই করে রোগ নাহি যায় ছেড়ে।।

 

মৃত্যুদিন আসে ক্রমে জানিতে পারিল।


সপ্তাহ পূর্ব্বেতে পিতৃপদে নিবেদিল।।


“ওহে তাতঃ প্রণিপাত জানাই চরণে।


নিশ্চয় বুঝিনু মোরে লইবে মরণে।।


জন্মিলে মরণ ধ্রুব ইথে নাহি আন।


তবু এক চিন্তা করি কেন্দে উঠে প্রাণ।।


আপনার আশীর্ব্বাদে শ্রীহরি-কৃপায়।


প্রথম মন্মথ দুই পুত্র জন্ম লয়।।


নিতান্ত বালক দোঁহে না চিনে জগত।


আমি গেলে এ দোঁহেকে কে দেখিবে তাতঃ?


মনোখেদে গুরুচাঁদে কান্দি কথা কয়।


সুখদুঃখাতীত প্রভু বিচলিত নয়।।


হাসিয়া বলেন প্রভু “শুন শুন শশী।


কি জন্য ব্যাকুল তুমি তাইভাবি বসি।।


কেবা কার পিতা পুত্র আত্মীয় স্বজন।


যার যার তার তার আপন আপন।।


নরদহে মায়া মোহ দেখায় সম্বন্ধ।


দেহ ফেলে আত্মা গেলে কবো করে বন্ধ?


এ মাটিতে যাহা ফলে এ মাটিতেই রয়।


মাটি ছাড়া হলে দেখ কেহ কার নয়।।


কর্ম্মফলে আত্মা দেখ দেহবদ্ধ হয়।


যার যেই কর্ম্ম দেখ তার পিছে ধায়।।


মাটি দিয়ে গড়া দেহ মাটিতেই লয়।


দেহ হতে দেহ তাই প্রকৃতি গড়ায়।।


যা নিয়ে সম্বন্ধ হেথা সেও অই মাটি।


মাটি পরে মাটি রবে আত্ম যাবে খাঁটি।।


পুত্র বল কারে তুমি দেহ বা আত্মাকে?


দেহ যদি পুত্র বল তাত হেথা থাকে।।


তাহলে ত দেহ তুমি চিন্তা কিবা আর?


কখনো হবে না যেতে ছাড়িয়া সংসার।।


আর যদি আত্মারামে পুত্র বলি বল।


আত্মা রহে সর্ব্বস্থানে বেড়িয়া সকল।।


অবিনাশী এই আত্মা জরা মৃত্যু নাই।


কি লাগি কাঁন্দিবে আত্মা কিসের বালাই?


“বেদাবিনাশিনং নিত্যং য এনমজরব্যারম”।।


–শ্রীমদ্ভাগবদগীতা


দেহিতে পারে না তারে প্রবল অনলে।


সিক্ত নাহি হয় আত্মা অগাধ সলিলে।।


আপন ইচ্ছায় আত্মা সর্ব্ব স্থানে চলে।


জীবদেহে বান্ধে বাসা প্রকৃতির ছলে।।


‘ণেনংছিন্দন্তি শাস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবক”।


নচৈনঃক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।।”


–শ্রীমদ্ভাগবদগীতা


এবে শুন কেবা কান্দে কিসের মায়ায়।


ব্রহ্মের বিকারে সৃষ্ট ব্রহ্মান্ড যে হয়।।


অবিকারী চিৎশক্তি ব্রহ্ম যাঁর নাম।


গুণাতীত সত্ত্বা সেই বি-কুন্ঠ নিষ্কাম।।


ব্রহ্মের বিকার ভাগ হল পঞ্চ ক্রমে।


ক্ষিতি অপঃ তেজঃ মরুদ্বোম পঞ্চ নামে।।


অবিনাশী ব্রহ্মশক্তি নশ্বর-বিকার।


ব্যোম, বায়ু, তেজঃ ক্রমে হয় রূপান্তর।।


শব্দ মাত্র গুণ হয় ব্যোমেতে প্রকাশ।


শব্দ, স্পর্শ. দুই গুণে বহিছে বাতাস।।


শব্দ, স্পর্শ রূপ দেখি তেজ-তত্ত্ব মাঝে।


শব্দ, স্পর্শ রূপ রস জল মধ্যে রাজে।।


ক্ষিতি ধরে শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ।


পঞ্চগুণময়ী সৃষ্টি এই তার ছন্দ।।


কূর্ম্ম যথা নিজ অঙ্গ দেহ মধ্যে লয়।


পঞ্চ যবে মিশে ব্রহ্মে সৃষ্টি লয় হয়।।


পঞ্চতত্ত্ব মধ্যে যত সকলি নশ্বর।


পঞ্চতত্ত্ব মধ্যে ঘুরে ব্রহ্ম পরাৎপর।।


ব্রহ্ম ধরে ‘আত্মা’ নাম তত্ত্বে দেহ কয়।


উভয়ে মিলন হলে জীব সৃষ্টি হয়।।

 

ভুত’ত আধার মাত্র দেহ নাম ধরে।


চিৎ শক্তি আত্মা আছে তাই চলে ফিরে।।


নির্গুণ ব্রহ্মকে সদা জানিবে নিস্ক্রিয়।


দেহতত্ত্বে অচৈতন্য সর্ব্বত্র জানিও।।


প্রশ্ন বটে উঠে তাতে ইহা কি সম্ভব?


দুই যদি নাহি করে কেবা করে সব?


ব্রহ্ম তত্ত্ব দুই যবে মিলন করয়।


চারি বস্তু সেই ক্ষণে প্রকাশিত হয়।।


অহং, চিত্ত, বুদ্ধি, মন এই চারি কহে।


“জীবাত্মা” নামেতে সেই জীব দেহে রহে।।


জীবাত্মা চালায় দেহ “আত্মা’ রহে ঘুমে।


মায়াশক্তি জীবাত্মাকে ঘিরে ক্রমে ক্রমে।।


গর্ভবাসে জীবাত্মার মহাকষ্ট হয়।


পরমাত্মা কাছে সদা কেঁদে কেঁদে কয়।।


“এই কারা হতে আজি উদ্ধারহ মোরে।


তোমাকে ভুলিব না কবু ঘিরে ধরা পরে।।


মায়াময়ী প্রকৃতির এ-মায়া প্রপঞ্চ।


মায়া দিয়ে ঘেরা তার এই বিশ্বমঞ্চ।।


‘ভূমিষ্ঠ’ জীবাত্মা তাই পড়ে মায়া-ফাঁদে।


মায়াতে কান্দায় জীবে তাই জীবে কাঁদে।।


অতঃপর “জীবাত্মার” কিবা গতি হয়?


সেই কথা আমি ক্রমে বলিব নিশ্চয়।।


প্রতি পলে মায়া ছলে প্রকৃতি জননী।


জীবকে ভুলায়ে রাখে করিয়া মেলানি।।


গর্ভাবাসে মহাকষ্ট মনে হয় ভুল।


এমায়া প্রপঞ্চে ভাবে সর্ব্ব-সুখ-মূল।।


পরমাত্মা সাথে বার্ত্তা মনে নাহি হয়।


দারা, পুত্র, পেয়ে পূর্ব্বস্মৃতি ভুলে যায়।।


কত দুঃখে কাটে কাল নাহিক চেতনা।


মায়া মুগ্ধ জীব পরমাত্মাকে চেনে না।।


পরমাত্মা তারি মাঝে রহে অচেতন।


তার তত্ত্ব নাহি রাখে এম্নি অভাজন।।


এই ভাবে দিন যায় জীবন সন্ধ্যায়।


‘কর্ম্মফল’ বলে চল নাহিক সময়।।


অতি দুঃখে সে ‘জীবাত্মা’ দেহকে ছাড়িয়ে।


‘কর্ম্মফল’ নাশিবারে জন্মে’ত আসিয়ে।।


যতকাল কর্ম্মফল নাশ নাহি হয়।


বারে বারে সে জীবাত্মা জন্মে এ ধরায়।।


যবে কর্ম্মফল নাশ সুকৃতি উদয়।


‘জীবাত্মা’ মিশিয়া যায় পরম আত্মায়।।


অবিরত অগণিত জীব সমুদয়।


‘কর্ম্মফলে’ বারে বারে জনম লভয়।।


ভোগ ইচ্ছা সেই কর্ম্মে কামনা জাগায়।


পিপাসা মিটেনা শুধু তৃষ্ণা বেড়ে যায়।।


তৃষ্ণা যদি নাহি মিটে কামনা রহিবে।


কামনা পূরাতে পুনঃ ধরাতে আসিবে।।


মানা-বিহীন-কর্ম্ম সাথে যেই জন।


তার নাহি হবে পুনঃ ধরাতে গমন।।


ফল হীন কর্ম্মে দেখ ফলে মোক্ষ ফল।


‘ফলহীন কর্ম্ম’ এবে কহিব সকল।।


নিজ ভোগ জানি কর্ম্ম করিলে জীবাত্মা।


সেই কর্ম্মে ফলে ভোগ রুষ্ট পরমাত্মা।।


ভোগে বাড়ে তৃষ্ণা, তৃষ্ণা বাড়ায় কামনা।


কামনা শোধিতে জীব না জন্মে পারে না।।


আত্মাসুখ-ভোগ ভুলি জীবে সাধে কর্ম্ম।


ফলহীন-কর্ম্ম তাহা মহাজন-ধর্ম্ম।।


পরমাত্মা-প্রীতি-হেতু যেই কর্ম্ম হয়।


ফলহীন-কর্ম্ম বলি জানিবে নিশ্চয়।।


ফল-শূণ্য কর্ম্মে লাগে পূর্ণ নির্ভরতা।


তাঁর ইচ্ছাক্রমে চলে, বলে তাঁর কথা।।


নিষ্কাম কর্ম্মেতে যবে জীবাত্মা চলয়।


পরমাত্মা সনে তার হয় পরিনয়।।


এই পরিনয়-ফলে ফলে মোক্ষফল।


যাতায়াত শেষ হয় জনম সফল।।

কর্ম্মজৎ বুদ্ধি যুক্তাহি ফলং ত্যক্ত্যা মনীষিণঃ।


জন্মবন্ধ বিনির্স্মৃক্তঃ পদং গচ্ছস্ত্যাময়ম।।”


–শ্রীমদ্ভাগবদগীতা


সেই হেতু বলি শশী কিবা দুঃখ কর।


মায়া ফাঁসি কেটে ফেলে তাঁর চিন্তা ধর।।


নাবালক পুত্র ভাবি দুঃখিত অন্তরে।


কার কাজ কেবা করে এই ধরা পরে।।


যার কাজ সেই করে পায় কর্ম্মফল।


কর্ম্মে দেয় সুখ দুঃখ কর্ম্মই প্রবল।।


কর্ত্তব্য আমার তবু জানাই তোমারে।


তব পুত্রগণে আমি পালিব সাদরে।।”


এই কথা বলি স্তব্ধ প্রভু গুরুচন্দ্র।


শ্রীশশীভূষণ পেল পরম আনন্দ।।


“পিতা যদি নিল ভাব পুত্র পালিবারে।


কিছুই নাহিক দুঃখ যেতে পরগারে।।


আমার ভাগ্যের কথা কহেন না যায়।


পিতা নিল পুত্র ভার কিবা আর দায়।।


সপ্ত দিন ছিল তাঁর দেহেতে জীবন।


অবিরাম হরিনাম করেন কীর্ত্তন।।


ভক্তগণে যথা কান্দে ডাকে হরিচান্দে।


নিরালে বসিয়া শশী হরি বলে কান্দে।।


“হৃদয়ের নাথ কোথা প্রভু হরিচন্দ্র।


দেখা দাও সাথে লও জগতের চন্দ্র।।


শৈশব দেখিনু তোমা স্মৃতি অবশেষ।


পূর্ণরূপে এসো প্রাণে হৃষীকেশ।।


বত বংশে জন্ম হল অপার সৌভাগ্য।


গুণে, জ্ঞানে কোনখানে নাহি আমি যোগ্য।।


বেলা যায় সন্ধ্যা হয় খেয়া আসে ঘাটে।


দয়া করি এস হরি মৃত্যু-নদীতটে।।


তব সাথে আঁধারেতে যেতে নাহি ডর।


এসো প্রিয়তম মোর প্রাণের ঈশ্বর।।”


এই ভাবে কাঁদাকাঁদি করিলেন শশী।


ক্রমে ক্রমে উপনীত শেষ দিন আসি।।


পিতা মাতা উভে আনি আপনার কাছে।


পদধূলি অঙ্গে মাখি ক্ষমা ভিক্ষা যাচে।।


পুত্র কন্যা পাশে ডাকি কহে উপদেশ।


“মম পিতৃ আজ্ঞা সবে পালিবে বিশেষ।।


তেঁহ বিনা গতি নাই জীবনে মরণে।


সকলে শরণ নিও অভয় চরণে।।


আমার পিতার পদে লইলে স্মরণ।


যাহা চাবে তাহা পাবে না হবে লঙ্ঘন।।


মম প্রাণে দুঃখ নাই সবে ছেড়ে যেতে।


দুঃখ মাত্র পারি নাই পিতাকে সেবিতে।।


অধিক কহিব কিবা সবে রাখ শুনি।


নর নয়-পিতা মোর দেব শূলপাণি।।


কি খেলা খেলিতে পিতা এসেছে অবনী।


তাঁর মর্ম্ম কথা আমি কিছু নাহি জানি।।


পিতা যদি ইচ্ছা করে মোরে বাঁচাবারে।


অবশ্য বাঁচাতে পার অতি অকাতরে।।


তবু যে মরণ মোর হল এ সময়।


এ সব পিতার ইচ্ছা জানিবে নিশ্চয়।।


তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হোক পূর্ণ হোক লীলা।


আমি কিবা বুঝি তাঁর সীমা-হীন-খেলা।।


আমার মরণ লাগি কোন দুঃখ নাই।


পিতার চরণে ভক্তি রাখিও সবাই।।


এতবলি রুদ্ধ করি আপন-নয়ন।


“হরিচাঁদ” বলি ডাক ছাড়ে ঘন ঘন।।


ক্ষণপরে বলে শুধু “বাবা গুরুচাঁদ।।”


আমাকে করহ দয়া ক্ষম অপরাধ।।


‘হরি’ ‘হরি’ ধ্বনি করি নয়ন মুদিল।


ব্রহ্মরন্ধ্র ভেদি প্রাণ উর্দ্ধেতে উঠিল।।


উঠিল ক্রন্দন রোল গৃহের ভিতরে।


প্রভু গুরুচাঁদ আস সবে শান্ত করে।।

প্রমথ মন্মথ দুই পৌত্র কোলে করি।


বসিলেন গুরুচাঁদ আপনা আশরি।।


ঘৃত মাখি সর্ব্ব অঙ্গে সৎকার হইল।


দেশবাসী সবে আসি যোগদান দিল।।


অশ্রান্ত কীর্ত্তন করে মতুয়ার গণ।


শেষকৃত্য করিলেন প্রমথরঞ্জন।।


পরম পবিত্র চিত্ত শ্রীশশি ভূষণ।


দেহ ছাড়ি নিজ লোকে করিল গমন।।


এহেন চরিত্র কথা শুনে ভক্তিমান।


ধন ধন্যে গৃহপূর্ণ ধন্য যশ মান।।


হরি হরি বল সবে দিন নাহি আর।


মহানন্দ রহে ভুলে পাতিয়া সংসার।।



No comments: