Tuesday, September 29, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 96 যাদবের ওড়াকান্দী গমন ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদের চতুর্ভুজ মুর্তি দর্শন

তারকের সঙ্গে সঙ্গে যাদব আসিল।


শ্রীধাম ওড়াকান্দী আসি পঁহুছিল।।


বারুণীর তীর্থক্ষেত্রে শান্তির আশায়।


দলে দলে কত লোক আসিতেছে হায়।।


দিকে দিকে শোনা যায় সোর শব্দ গোল।


আর কিছু নয় শুধু ‘‘বল হরিবোল।।’’


প্লাবনে বন্যার স্রোতে যথা বারি ধায়।


ধাম প্রতি সেই মত সবে ধেয়ে যায়।।


শ্রীধামের প্রতি যত হ’ন অগ্রসর।


গোস্বামীর ভাবে ক্রমে ঘটে ভাবান্তর।।


অবিরল নেত্র জল বক্ষ বাহি ধায়।


ভাবের তরঙ্গে যেন ঢলে পড়ে যায়।।


মনে হয় এইবার হইবে পতন।


প্রতিবারে সে যাদব করেন ধারণ।।


প্রেমের আগুণে যারা তারকের প্রাণ।


আরো জ্বলে শ্রীধামের যত কাছে যান।।


তারকের পরশনে যাদবের দেহ।


অসাড় অবশ যেন করি দিল কেহ।।


কেটে যেন গেল তার নয়নের ঘোর।


কেহ যেন কোন দুঃখে প্রাণ হ’ল ভোর।।


এই ভাবে ক্রমে তবে ধামে উপস্থিত।


যাদবের চিত্ত হ’ল প্রেমে পুলকিত।।


সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করি ধুলিতে পড়িল।


দয়া করে সে তারক তাহারে ধরিল।।


ডাক দিয়া যাদবেরে গোস্বামীজী কয়।


‘‘মানুষ দেখিবি যদি মোর সাথে আয়।।’’


এত বলি করে ধরি টানিয়া চলিল।


শ্রীগুরুচাঁদের ঠাঁই উপস্থিত হল।।


তারক সাষ্টাঙ্গে তাঁরে করিল প্রণাম।


চোখ ভরে জল তাঁর বহে অবিরাম।।


যাদব ভুমেতে পড়ি প্রণাম করিল।


আপনার অগোচরে নয়ন ঝরিল।।


মস্তক উঠায়ে যবে করে দরশন।


মহাভাবে যাদবের পূর্ণ হল মন।।


কি যে কি দেখিল তাহা বলিবার নয়।


যে দেখেছে যে বুঝেছে তাঁরে কিবা কয়।।


যাদব চাহিয়া দেখে গুরুচাঁদ কই?


চতুর্ভূজ মুর্তিধারী কেবা বসে অই।


কনক বরণ ছবি চতুর্ভুজ ধারী।


শঙ্খচক্র গাদা পদ্ম চারি হস্তে তাঁরি।।


মূর্তি দেখি যাদবের দেহে নাই বল।


অঝোরে তাঁহার চোখে ঝরিতেছে জল।।


ক্ষণমাত্র দেখা দিয়ে রূপ লুকাইল।


ফুকারিয়া সে যাদব কাঁদিয়া উঠিল।।


গুরুচাঁদ ডাকি তবে তারকেরে কয়।


‘‘সামাজিক কারে ধরে আনিলে হেথায়?’’


তারক কহিল ‘‘বাবা সকলি তোমার।


দয়া করে যাদবেরে করহে নিস্তার।।’’


গুরুচাঁদ ডাকি বলে যাদবের প্রতি।


‘‘ওড়াকান্দী মান্য করো’’ যাদব সুমতি।।’’


এই ভাবে যাদবের হল পরিচয়।


ভক্তি বলে চতুর্ভুজ মুর্তি দেখা পায়।।


বহুভাবে তাঁরে দয়া করে গুরুচাঁন।


আরে কিছু বলি আমি তাঁহার আখ্যান।

 

শ্রীশ্রীগুরুচাঁদের বিরাট রূপ ধারণ

যাদব মল্লিক আর শ্রীযাদব ঢালী।


একসাথে দোঁহে মিশে হয়ে কুতুহলী।।

 

 

উভয়ে বিশেষ প্রাজ্ঞ বংশেতে প্রধান।


দুইজনে এক সঙ্গে ওড়াকান্দী যান।।


একবার ওড়াকান্দী গেল দুই জনে।


প্রণাম করিল দোঁহে প্রভুর চরণে।।


প্রভুর আনন্দ হল দেখি উভয়েরে।


বলিলেন বহু কথা তাদের গোচরে।।


তত্ত্বকথা আলাপনে কাটাইল নিশি।


প্রেমানন্দে শোনে দোঁহে আঁখি জলে ভাসি।।


প্রভাতে উভয়ে গেলে পুকুরের পাড়ে।


এক সঙ্গে চলে দোঁহে সঙ্গ নাহি ছাড়ে।।


পশ্চিম পাড়েতে দোঁহে বসে এক খানে।


পূর্ব্ব পাড়ে গুরুচাঁদ চলে নিজ মনে।।


হেন কালে সে যাদব করে নিরীক্ষণ।


পুকুরের পাড়ে কেহ ছিলনা তখন।।


সুদীর্ঘ বিরাট বাবু অতীব সুন্দর।


দীর্ঘ বাহু দীর্ঘ পদ অতি ভয়ঙ্কর।।


দৃষ্টিভ্রম ভাবি তেহ নয়ন মুছিল।


আরবার সে বিরাট বপুকে দেখিল।।


বার বার দেখি তার সন্দেহ ভাঙ্গিল।


হতজ্ঞান সে যাদব ভূমিতে পড়িল।।


যাদব মল্লিক তারে শুশ্রুষা করিল।


জ্ঞান পেয়ে সে যাদব সকলি কহিল।।


নর নহে গুরুচাঁদ বিরাট পুরুষ।


যাদব কহিল কথা যবে পে’ল হুষ।

 

শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ সর্ব্বদর্শী

যাদবের জ্যেষ্ঠ পুত্র কার্ত্তিক সুজন।


গনপতি নামে পুত্র কনিষ্ঠ যে জন।।


তারকের বরে জন্ম নাম গণপতি।


সংক্ষেপে বলিব তার জন্মের ভারতী।।


একমাত্র পুত্রে সুখী নহে তাঁর নারী।


তারকে প্রণাম করে পুত্র বাঞ্ছা করি।।


তারক যাদবে বলে ‘‘পুর্ণ বর্ষকাল।


নারী হতে দূরে থাকে থাকগে নির্ম্মল।।’’


যাদব বলিল তাহা মোটে সাধ্য নয়।


পারিব না, এই কতা বলিনু নিশ্চয়।।’’


বারে বারে শ্রীতারক বলিলেন কথা।


বারে বারে যে যাদব নাড়িলেন মাথা।।


শক্তির আধার সাধু কবি রসরাজ।


গম্ভীরে বলিল কথা যেন পড়ে বাজ।।


‘‘বারে বারে মোর কথা তুই না শুনিলি।


আচ্ছা দেখি কাম-শক্তি কত বড় বলী।।


বর্ষাকাল তোর দেহে কাম নাহি রবে।


চেষ্টা করে এইবারে দেখ গিয়ে তবে।।’’


অব্যর্থ গোস্বামী বাক্য কেবা করে আন।


বর্ষমধ্যে যাদবের নাহি কামজ্ঞান।।


এই সাধনার ফলে জন্মে গণপতি।


তার পেয়ে সুখী হল যাদব সুমতি।।


এবে শুন মূল সূত্র যাহা বলি পদে।


সর্ব্বদর্শী গুরুচাঁদ বলে কি প্রকারে?


কার্ত্তিকের পুত্র হল যাদবের সুখ।


ওড়াকান্দী যেতে মন হইল উন্মুখ।।


ঠাকুরের বাণী আছে ‘জন্মিলে নন্দন।


ইলিশ মাছ দিয়া কর সাদুর ভোজন।।


কন্যা জন্মিলে কাতলা মাছ দিতে হয়।


এই কার্য্যে পুত্র কন্যা আয়ু যশঃ পায়।।’’


সেই ভাবে ওড়াকান্দী যাদব চলিল।


চারটি ইলিশ মাছ পথেতে কিনিল।।


সঙ্গে তার দুই কাৎলা নিল মহাশয়।


মল্লিক যাদবচন্দ্রে সঙ্গে করি লয়।।


এদিকেতে ওড়াকান্দী কুটুম্ব আসিল।


চাঁদসী ডাক্তার তারা সবে জানে ভাল।।

 

প্রভুর আশ্চর্য্য লীলা নরে বোঝা ভার।


অন্তঃপুর হতে সবে কহে সমাচার।।


কুটুম্ব এসেছে বাড়ী তাতে মাছ নাই।


বড়ই লজ্জার কথা মাছ কোথা পাই?


প্রভু কয় ‘‘ওরে অন্ধ! চুপকরে থাক।


কি দিয়ে কি করে হরি বসে থেকে দেখ।।


কল্পবৃক্ষ-মূলে বসে গেলনা পিপাসা।


অবিশ্বাসী জনে দেখ নাহি মেটে আশা।।


মাছ মাছ করে সবে চিন্তা করিতেছে।


আমি দেখিতেছি যেন মাছ আসিতেছে।।


কিবা ছাই চিন্তা তোরা করিস বসিয়া।


তাঁরে ভেবে একবার থাকনা চাহিয়া।।’’


বলিতে বলিতে দুই যাদব আসিল।


ছয় মাছ এক সাথে আনিয়া ফেলিল।।


তাহা দেখি সকলের লাগিল বিস্ময়।


মনে ভাবে সর্ব্বদর্শী প্রভু দয়াময়।।


গোমস্তা শ্রীযজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস সুজন।


একান্তে যাদবে ডাকি কহে বিবরণ।।


শুনিয়া যাদব হল প্রেমে পুলকিত।


বলে ‘‘প্রভু গুরুচাঁদ ঈশ্বর নিশ্চিত।।’’


উঠিল ভাবে ঢেউ ভক্তের হৃদয়।


ভাবে মুগ্ধ ভক্তগণ রজনী কাটায়।।


প্রভাতে চলিল প্রভু বাহিরে প্রাঙ্গণে।


নতুন একটী গৃহে হতেছে সেখানে।।


প্রভুর কর্ম্মের কেহ নিশানা না পায়।


কোন ভাবে কি যে করে নরে বোঝা দায়।।


একখানে গর্ত্ত করি কাটিলেন মাটি।


গর্ত্ত ভর্ত্তি করে পুনঃ করে পরিপাটি।।


কাটি কাটা কার্য্যে যেন পেতেন আনন্দ।


গর্ত্ত কেটে পুনরায় গর্ত্ত করে বন্ধ।।


যার যে স্ববাব তাহা ছাড়িতে না পারে।


সেইভাব বোঝা যায় তাঁর ব্যবহারে।।


স্বর্ণকাশী ছেড়ে যাঁর শ্মশানেতে বাস।


ধনরত্নে বল তাঁর মিটাবে কি আশ?


দিবারাত্রি স্রোতাকারে লক্ষ নরনারী।


দানরত্ন দ্রব্য কত আনে ভুরি ভুরি।।


দয়া করে নেয় বটে প্রভু গুরুচান।


কিন্তু কোন দ্রব্য বলে নাহি তাঁর টান।।


আপন স্বভাব যাহা তাই থাকে ধরি।


আট হস্ত মরিমিত ধূতি রহে পরি।।


আহারে বিহারে কিংবা শয়নে গমনে।


সর্ব্বত্যাগী সন্ন্যাসীর ভাব সর্ব্বখানে।।


ভাতে ভাত তার মধ্যে সিদ্ধ কিছু চাই।


পরম আনন্দে তাহা সেবেন গোঁসাই।।


প্রভু সেজে বসে তাঁর আজ্ঞা-করা নাই।


সব কাজ সব খানে দেখেন গোঁসাই।।


বাড়ী পরে যে যেখানে যেই গাছ আছে।


প্রত্যহ প্রভুজী যান সকলের কাছে।।


সকলেরে দেয়া প্রভু স্নেহের পরশ।


প্রভুর পরশে গাছ সতেজ সরস।।


কাটিকাটে কৃষাণেরা প্রভু যায় কাছে।


নিজ চোখে দেখে কাজ কেমন হতেছে।।


জগতের ভার বয় যেই পদ্ম করে।


গার্হস্থ্য গন্ডীর মধ্যে আছে তাই ধরে।।


ভাঙ্গা-গড়া খেলা যাঁর অসীম ব্রহ্মান্ডে।


গর্ত্ত কেটে গর্ত্ত ভরে গৃহ-কর্ম্ম-কান্ডে।।


এবে শুন নবগৃহে কি কান্ড ঘটিল।


যেতে যেতে প্রভু তবে যাদবে ডাকিল।।


ডাক শুনি দুইজনে শীঘ্রগতি ধায়।


অল্প পরে সেই গৃহে হইল উদয়।।


প্রভু বলে ‘‘দুইজনে কর বসে কাজ।


‘কৃষ্ণকথাকিচু আমি বলিতেছি আজ।।’’


নুতন ঘরের পোঁতা নহেক সমান।


সমান করিতে বলে প্রভু গুরুচান।।

দুই সাধু সেই কাজ করিতেছে জোরে।


প্রভু বলে ‘‘কাজ নাই জোরে কাজ করে।।


গৃহে বসে কাজ করা নাহিক অভ্যাস।


চিরকাল দোঁহে সুখে করিতেছ বাস।।


অনভ্যাসে জোরে কাজ যদি কর হেথা।


কষ্ট করে হাতে পরে হাতে পারে ব্যাথা।।


ধীরে ধীরে কাজ কর আমি বসে রই।


কাজ কর আর শোন কৃষ্ণকথা কই।।’’


দয়া দিয়ে কথা কয় দয়ার সাগর।


উভয়ের চক্ষে বারি ঝরে ঝর ঝর।।


সহানুভূতিতে-মাখা এই কৃপা বাণী।


নরনারী সকলেরে কাছে রাখে টানি।।


যত ভক্ত ওড়াকান্দী করেন গমন।


সেথা গিয়ে তারা সবে ভাবে মনে মন।।


কর্ম্ম যদি করি প্রভু নিকটে আসিবে।


হাসি হাসি কাছে বসি কত কি কহিবে।।


সে যে কি আনন্দ তাহা বলা নাহি যায়।


প্রেমানন্দে কাজ করে সকলে সদায়।।


এর মধ্যে শিক্ষা দেখ কতই মধুর।


কর্ম্মছাড়া ভাল নাহি বাসেন ঠাকুর।।


কর্ম্মী যারা ধর্ম্মী তারা বহু ভাগ্যবান।


গুরুচাঁদ বলিতেন তাহার প্রমাণ।।


‘‘কাজ যে করে সে কাজী কাজে পরিচয়।


অকেজো অলস হলে তারে পাজী কয়।।


একস্থানে এক সাধু থাকিত সদায়।


চুপ করে থাকে প্রায় কথা নাহি কয়।।


অন্য কোন কর্ম্ম নাহি করেন গোঁসাই।


কর্ম্ম মধ্যে এক কাজ দেখিত সবাই।।


ঝিনুক লইয়া হাতে সেই মহাজন।


সর্ব্বদা মৃত্তিকা তিনি করেন খনন।।


যদি কেহ প্রশ্ন করে সাধুজীর ঠাঁই।


মাটি খুঁড়ে কিবা হয় বলুন গোঁসাই?

হাসিয়া বলিত সাধু ‘‘শোন বাবা মোর।


প্রভুর রাজ্যেতে আমি কেন হব চোর?


দুইখানি হাত দিছে তিনি দয়া করে।


হাতের খাজনা দেই কিছু মাটি খুঁড়ে।।’’


কর্ম্মের প্রাধান্য লাগি এ প্রমাণ কয়।


হাতে হাতে প্রভু তার দিত পরিচয়।।


এবে শোন ‘‘কৃষ্ণ কথা’’ প্রভু যা’ কহিল।


তারকের উপাখ্যান আরম্ভ করিল।।


তারকের নিষ্ঠা ভক্তি বলিলেন সব।


শেষে ডাকি বলে প্রভু ‘‘শোন হে যাদব।।’’


তারকের মূল্য এই নমঃ নাহি জানে।


তাঁহারে চিনিত সব উচ্চ হিন্দুগণে।।


রাজা রাজচক্রবর্ত্তী যতেক সুজন।


তারকের মান্য ছিল তাঁদের সদন।।’’


এত বলি দয়াময় বলে পুনরায়।


‘‘তারকের ভক্তি ছিল লোচনের পায়।।


সুরসিক সাধু ছিল গোস্বামী লোচন।


শোন বলি আমি তবে এক বিবরণ।।


কত শক্তিধারী ছিল লোচন গোঁসাই।


শোন তবে সেই কথা আমি বলে যাই।।


একবার সে তারক গান গাহিবারে।


উপস্থিত হ’ল গিয়ে কালনা বাজারে।।


সঙ্গে তার ছিল বটে বারটী দোহার।


এক সঙ্গে উঠা-বসা একত্রে আহার।।


জলপানি লাগি দিল চিড়া পাঁচ সের।


তিন সের গুড় দিল পাকা ওজনের।।


হেনকালে উপনীত গোস্বামী লোচন।


তাঁরে পেয়ে মহাসুখী হ’ল সর্ব্বজন।।


সবে ভাবে গোস্বামীজী আজি কি কারণে?


ভিক্ষা লাগি যাবে দূরে থাকুক এখানে।।


আমাদের সঙ্গে তাঁর হইবে আহার।


তাঁরে কাছে পেয়ে হবে আনন্দ অপার।।

মনোকথা খুলে পরে গোস্বামীকে কয়।


শুনিয়া গোস্বামী হ’ল প্রীত অতিশয়।।


একজনে বলে ‘‘প্রভু করি নিবেদন।


অগ্রভাগে জল পান করুন এখন।।


যত ইচ্ছা চিড়া গুড় করুন আহার।


প্রসাদ সকলে মোরা পাব অতঃপর।।’’


হাসিয়া গোস্বামী বলে ‘‘বড়ই উত্তম।


চিড়া-যুদ্ধে দন্ত আজি দেখাবে বিক্রম।।’’


এত বলি একা একা গোস্বামী সুজন।


চিড়া গুড় সবটুকু করিল ভক্ষণ।।


অবশেষে পাত্র ধরে করে চাটাচাটি।


কোনখানে কিছু নাই সব পরিপাটি।।


হেনকালে পাকশালে অন্নাদি ব্যাঞ্জন।


দোহারেরা সবে মিলে করিল রন্ধন।।


স্থান করি কোলাবাসী ভোলানাথ ধায়।


গোস্বামীকে ডাকিবারে হইল উদয়।।


গিয়া দেখে গোস্বামীজী আপনার করে।


চাটাচাটি করিতেছে পাত্রখানি ধরে।।


বিস্মিত হইয়া ভোলা কহিছে তাঁহারে।


‘‘কিবা কার্য্য কর প্রভু পাত্রখানি ধরে?’’


সাধু কয় ‘‘ভোলানাথ যে দয়া করিলে।


বহুদিন এ-খাওয়া জোটেনি কপালে।।’’


ভোলা কয় ‘‘মহাশয় খেয়েছ কি সব?’’


লোচন হাসিয়া বলে ‘‘ক্ষিদের গৌরব।।


শোন শোন ভোলানাথ শাস্ত্রের বচন।


কিছু জমা নাহি রাখে কোন কোন জন?


সাধু আর পাখী দেখ বড়ই পবিত্র।


যাহা পায় তাহা খায় জমা নাহি মাত্র।।’’


কথা শুনি ভোলানাথ মানিল বিস্ময়।


গোস্বামীর পানে চাহি তবু ধীরে কয়।।


‘‘হয়েছে প্রস্তুত অন্ন শুনহে গোঁসাই।


ক্ষুধা যদি থাকে তবে চল গিয়ে খাই।।’’


শুনিয়া লোচন বলে হাসিয়া হাসিয়া।


‘‘ক্ষুধা নিয়ে কষ্ট কেন পাইব বসিয়া?’’


এত বলি উপনীত হল পাকশালে।


দ্রুতগতি ভোলানাথ পিছে পিছে চলে।।


পাকশালে গিয়ে তবে বলিছে গোঁসাই।


‘‘এমন সুখের দিন আর পাই নাই।।’’


সূর্য্য নারায়ণ যিনি ডুমুরিয়া বাস।


উপস্থিত হইলেন গোস্বামীর পাশ।।


হীরামন শ্রীলোচন এই দুই জনে।


‘‘মাসী’’ বলে ডাকে সদা সূর্য্য নারায়ণে।।


আনন্দে গোঁসাই ডেকে বলিল তাহারে।


‘‘আন মাসি অন্ন দেও বসিব আহারে।।


কত যে দয়াল মাসি তোমরা সকলে।


কি আর বলিব বল সেই কথা বলে।।


সুস্বাদু করেছ খাদ্য আয়োজন বেশ।


সব মোরে এনে দেও করে ফেলি শেষ।।’’


গোস্বামীর কান্ড দেখি ভোলাত অজ্ঞান।


মহা ক্রোধে বলে ভোলা ‘‘সবে সাবধান।।


এই বেটা মানুষ ত নহে কদাচন।


এই মাত্র সব চিড়া করেছে ভক্ষণ।।


মানুষের পক্ষে ইহা কেমনে সম্ভবে?


দৈত্য কি দানব হবে বুঝিলাম ভাবে।।’’


ভোলানাথে ক্রুদ্ধ দেখি গোস্বামীর সুখ।


হেসে হেসে বলে কথা করিয়া কৌতুক।।


‘‘না, না, ভোলা চিন্তা তুমি করিও না আর।


সব ভাত খেতে কষ্ট হবে না আমার।।’’


বারে বারে বলে ভোলা একি রে দুর্ভোগ।


টুন্ডারে রাখিয়া হল কপালের ভোগ।।


হেনকালে শ্রীতারক হ’ল অগ্রসর।


বলে ‘‘ভোলা আর নাহি কর কটুত্তর।।


গোস্বামীর লীলাখেলা তুমি নাহি জান।


ভক্তি ভরে ভাত ডাল সব ধরে আন।।

অতঃপর দোহারেরা মিলিয়া সকলে।


গোস্বামীর পাতে অন্ন সব দিল ঢেলে।।


অনায়াসে গোস্বামীজী খাইল সকল।


তারকের চক্ষে জল ঝরে অবিরল।।


আহারান্তে গোস্বামীজী করিল প্রস্থান।


অনাহার সে তারক তথা করে গান।।


সেদিন কেমন গান হইল তথায়।


বর্ণনা করিতে তাহা নাহি পারা যায়।।


মোহিত হইল সব সভাবাসী জন।


অপূর্ব্ব ভাবের বন্যা বহে সর্ব্বক্ষণ।।


এমনি সুকবি ছিল তারক সুজন।


তাঁর গানে মুদ্ধ হত নর নারীগণ।।


কিন্তু এক কথা আজি বলিবারে চাই।


আমিও বলিব ছড়া শুনে রাখ তাই।।


আমি যা বলিব আজ ছড়ার কাহিনী।


সে-ছড়া তারক কভু কাণেও শোনেনি।।


কিছু দেরী কর সবে আসিছে সময়।


আমার ছড়ার বস্তু আসিবে হেথায়।।’’


এত বলি দয়াময় স্তব্ধ হয়ে রহে।


উভয় যাদব স্তব্ধ কথা নাহি কহে।।


হেনকালে শোন সবে অপূর্ব্ব ঘটনা।


যাদব গোস্বামী যাহা করিল রটনা।।


এক নারী ত্বরা করি আসিয়া সেখানে।


কান্দিয়া পড়িল গিয়া প্রভুর চরণে।।


মহা ক্রোধে গুরুচাঁদ কাঁপে থর থর।


কেশে ধরে টেনে তারে করিছে প্রহার।।


প্রহার করিয়া প্রভু তারে ছেড়ে দেয়।


আরক্ত নয়নে তারে প্রভু ডেকে কয়।।


‘‘ওরে দুষ্টা, বুদ্ধি নষ্টা, আজ কান্দ’ কেন?


যার গায়ে তেল দিলে সে দুষ্টেরে আন।।


যার গুণে ছেলে পেলি তার গায়ে ছাই।


ব্যাভিচারী দুষ্টে এনে করেছ গোঁসাই।

তার গায়ে তেল দাও তারে কর সেবা।


যার ছেলে তারে তুমি পেয়েছ কি হাবা?


যার গুণে পুত্র এল তার মান্য নাই।


আসল পুত্রের কর্ত্তা পুত্র নিচ্ছে তাই।।


চলে যা পাপিনী তুই রক্ষা নাই আর।


পুত্র মরে গেলে আমি কি করিব তার?’’


প্রভুর মুখেতে শুনি এ হেন বচন।


উভয় যাদব তবে ভাবে মনে মন।।


‘‘কি কারণে করে প্রভু হেন ব্যবহার?


কোন ভাবে জানি মোরা সেই সমাচার?’’


অন্তর্য্যামী প্রভু সব জানিয়া অন্তরে।


বলিতে লাগিল কথা চাহি উভয়েরে।।


‘‘শোন দোঁহে কিবা কব এজাতির কথা?


অন্ধ জাতি কভু নাহি চেনে পবিত্রতা।।


এই যে রমণী দেখ অতীব সরলা।


নাহি বোঝে দুষ্টে করে কত ছলা কলা।।


এক দুষ্ট এর গৃহে আছে অধিষ্ঠান।


গুরু সেজে মহাসুখে সেবা পূজা পান।।


ব্যাভিচারী সেই দুষ্ট আছে সাধু বেশে।


এ পাপিনী তার সঙ্গে জল তেল ঘষে।।


তেল-ঘষা যত দুষ্ট তারা ভাল নয়।


ব্যভিচারী সেই জন জানিও নিশ্চয়।।


এই কার্য্য এই নারী করেছে যেদিনে।


পুত্র তার পড়িয়াছে বিষম তুফানে।।


জ্বররূপে কাল এসে তারে নিতে চায়।


দেখহ এখনে এসে ধরে মোর পায়।।


আমি কি করিব বল এ কোপ কালের।


তেল ঘষাঘষি কর এই তার জের।।’’


এত বলি ক্রোধে প্রভু রমনীরে কয়।


‘‘এই কথা সত্য কিনা বল এ সভায়।।


কতকষ্টে তোর স্বামী গৃহকর্ম্ম করে।


তার পায় কোন দিন তেল দিলি নারে।।

কোথাকার ভক্ত দুষ্ট কিছু ঠিক নাই।


তারে পেয়ে অনায়াসে বলেছে গোঁসাই।।


বিষ কচু তোরা যত রঙ্গিনী রমণী।


তোদের ও কান্নাকাটি কিছু নাহি মানি।।


তোমরাও শোন কিন্তু যতেক গোঁসাই।


তেল ঘষাঘষি মতে আমি কিন্তু নাই।।


ব্যাভিচারী ভেকধারী বৈরাগী যাহারা।


নাচানাচি ঘষাঘষি করে থাকে তারা।।


হরিঠাকুরের পুত্র আমি বলে যাই।


নারী দিয়ে তেল-ঘষা এই মতে নাই।।


পরনারী মাতৃজ্ঞান সম্মান দেখাবে।


কোন লোভে কোন ক্ষণে স্পর্শ না করিবে।।


আমার এ কথা-ছাড়া যারা কাজ করে।


তারা কিন্তু মতো নয় বলিনু সবারে।।


এই দোষ তারকের ঘটে একবার।


আমি তাহা দুর করি করে তিরস্কার।।


দতবধি তারকের ভ্রম ভেঙ্গে গেল।


জীবনে সে সব কর্ম্ম আর না করিল।।


সামাল, সামাল, তাই সামাল যাদব।


সামাল, সামাল হও হরিভক্ত সব।।’’


সামালের এই বাণী প্রভু চিরদিন।


উচ্চারণ করে গেছে সারা রাত্রি দিন।।


প্রভুর বচন শুনি কেন্দে বলে নারী।


‘‘যাহা বল সব সত্য দয়াময় হরি।।


সেই ব্যক্তি দুষ্ট আমি তাহা বুঝি নাই।


দয়া করে কর ক্ষমা এই ভিক্ষা চাই।।


এক দিন তার অঙ্গে তৈল মাখিয়াছি।


এখনে বুঝিয়া দেখি অন্যায় করেছি।।


আর না করিব প্রভু হেন মন্দ কাজ।


দয়া করে এ বিপদে রক্ষা কর আজ।।’’


প্রভু কয় ‘‘নয়, নয়, শুধু মাপ নয়।


মাপ নিতে গেলে তার কাজ দিতে হয়।।


আমি যাহা বলি যদি পারিস তা করতে।


নিশ্চয় পুত্রকে তোর দেবনা মরতে।।


এক্ষুণি চলে যা বাড়ী না ছেড়ে নিরিখ।


আমি যাহা বলে দেই মনে রাখ ঠিক।।


বাড়ী গিয়ে ঝাঁটা নিয়ে ভন্ড তপস্বীরে।


বেদম মারিবি ঝাঁটা দুই হাতে ধরে।।


মার খেয়ে ভন্ড যদি পালাইয়ে যায়।


তারঘাড়ে উঠে জ্বর পালাবে নিশ্চয়।।’’


প্রভুর বচন শুনি সাহস আসিল।


শীঘ্র গতি গৃহ প্রতি সেই নারী গেল।।


উভয় যাদব তাহে উচাটন মন।


কি জানি কি ঘটে তার নাহি নিরুপণ।।


উভয়ের দিকে চাহি প্রভু হাসি কয়।


‘‘কি মধুর কৃষ্ণকথা শুনিলে হেথায়?’’


যাদব কান্দিয়া কয় ‘‘দয়াল আমার।


হে কৃষ্ণকথা কভু শুনি নাই আর।।


কি কি কৃষ্ণ করে গেল এই মা্ত্র শুনি।


কিছু মাত্র চোখে তার কখন দেখিনি।।


হাতে হাতে ফল দিলে সর্ব্বফল দাতা।


এর চেয়ে কি শুনিব আর কৃষ্ণকথা?’’


এই ভাবে দিন কেটে রজনী আসিল।


নাম গানে মতুয়ারা আনন্দে ভাসিল।।


পরদিন অতি প্রাতেঃ এল সেই নারী।


অঝোরে ঝরিছে তার দুই চোখে বারি।।


প্রণাম প্রভুর পায় বলিছে কান্দিয়া।


‘‘তোমার দয়ায় বাবা এসেছি ফিরিয়া।।


তোমার আজ্ঞার মতে করিয়াছি কাজ।


জ্বর ছেড়ে গেছে রাত্রি, খোকা ভাল আজ।।’’


প্রভু কয় ‘‘যা চলে যা’’ আর ভয় নাই।


আর যেন রাখিস নারে ওসব গোঁসাই।।’’


উভয় যাদব হ’ল বিস্মিত তখন।


অশ্রুভরা চোখে দেখে প্রভুর চরণ।।

সর্ব্বদর্শী গুরুচাঁদ সব কিছু দেখে।

মায়া জালে মহানন্দ আপনারে ঢাকে।।

ভক্ত শ্রীযাদবচন্দ্র মল্লিকের উপাখ্যান

যশোহর জিলাধীনে পদুমা নিবাসী।


প্রিয় ভক্ত যাদবের বহু গুন রাশি।।


মল্লিক উপাধি তাঁর অতি মহাশয়।


অনুক্ষণ হরিনাম করিয়া বেড়ায়।।


তাঁহার পিতার নাম শ্রীচন্ডি চরণ।


ঠাকুরের কৃপা পেল শোন কি কারণ।।


যেই কালে হরিচাঁদ অবতীর্ণ হয়।


সাহেবের নীলকুঠী ছিল সে সময়।।


নীল চাষ কার্য্যে লাগে বহুৎ মজুর।


মনে মনে ভাবে তাই ইংরাজ চতুর।।


দেশমধ্যে বেছে নেয় যতেক প্রধান।


তারা সবে করে দেয় মজুর চালান।।


অবশ্য অর্থের প্রম্ন আছে তাতে কিছু।


সর্দ্দরের চারি আনা মজুরের পিছু।।


এ জগতে একভাব দেখি সর্ব্বদায়।


চোরা-ব্যবসায় চুরি সবখানে রয়।।


সাহেব করিয়া চুরি ফাঁকি দিতে চায়।


সর্দ্দার শিখিয়া চুরি ব্যবসা চালায়।।


জমিদার গোমস্তারে কি দেয় বেতন?


তিন টাকা মহিনায় ভরণ পোষণ।।


কি ফল দাঁড়ায় তাতে সবে ভাল জানে।


প্রজাকে লুটিয়া খায় নায়েব কখনে।।


ব্যবসায়ী আর তার যতেক দালাল।


গরীবেরে লুটে খেয়ে করে পয়মাল।।


নীল চাষে নাহি ছিল এই ভাব ছাড়া।


মজুরের স্কন্ধে সব ‘‘সুখের পায়রা।।’’


সর্দ্দার দালাল হ’ল চন্ডী একজন।


ডানলপ সাহেবের খাইত বেতন।।


নদীয়া জেলায় মধ্যে সে কৃষ্ণনগর।


মজুর চালান হত মাস মাসান্তর।।


অগ্রিম আনিত টাকা মজুরের লাগি।


বিশ বলে দশ দেয় সাথে রেখে ভাগী।।


যেই দামে টাকা আনে সাহেবের কাছে।


অর্দ্ধ দামে লোক দিয়ে চুরি করে পাছে।।


পঞ্চাশজনের লাগি আনে শত টাকা।


পঞ্চাশে পঞ্চাশ দিয়ে বাকী মারে ফাঁকা।।


ইহা ছাড়া লোক পিছু চারি আনা আছে।


মোট কথা যত টাকা অর্দ্ধ তার বাঁচে।।


এসব চুরির কান্ড সাহেব জানে না।


পাছ দিয়ে হাতী গেলে চেয়েও দেখে না।।


পাপের বেসাতী বল কয়দিন চলে।


‘‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’’ শাস্ত্রে তাই বলে।।


একবার টাকা নিয়ে ভাগীদের সাথে।


চন্ডীর বিবাদ হ’ল নানাবিধ মতে।।


বন্ধু যারা শত্রু তারা হ’ল একদিনে।


জানা’ল চুরির কথা সাহেবের স্থানে।।


সাহেব জানিয়া তাতে হইল আগুন।


ফৌজদারী করে দিল বিচার দরুণ।।


গুরুতর অপরাধ আইনেতে লেখা।


অগোচরে ফাঁকি দিয়ে নেয়া হ’ল টাকা।।


জেলের হুকুম তাতে হইবে নিশ্চয়।


অন্ধকার দেখে চন্ডী নাহিক উপায়।।


বিপদে বান্ধব বল কেবা হ’বে তার?


সম্মুখে দেখেছি চন্ডী অকুল পাথার।।


মৃত্যুঞ্জয় গোস্বামীজী ওড়াকান্দী যায়।


কালীনগরীতে বাস করে সে সময়।।


পদুমা কালীনগর গ্রাম পাশাপাশি।


চন্ডী উদয় হ’ল কালীনগর আসি।।

 

মনোব্যাথা কহিতেছে মৃত্যুঞ্জয় ঠাঁই।


মৃত্যুঞ্জয় বলে ‘‘চল ওড়াকান্দী যাই।।


হরি বিনে বন্ধু নাই বিপদের কালে।


চল দেখি দয়াময় কোন কথা বলে।।’’


বিপদ এমন করে কিবা চমৎকার।


বিপদের কালে নাহি থাকে অহঙ্কার।।


চিরকাল চন্ডী করে ম’তোদের ঘৃণা।


বিপদে পড়িয়া মনে সে ভাব আসে না।।


মান ফেলে চলে চন্ডী মনে অতি ভয়।


কি জানি কি হরিচাঁদ কোন কথা কয়।।


নানা কথা মনে ভাবি সে চন্ডীচরণ।


উপনীত ওড়াকান্দী বিষাদিত মন।।


প্রভুর নিকটে রাখে কিছু জরিমানা।


প্রভু বলে ‘‘ঐ টাকা আমিত নেবনা।।


গরীবেরে ফাঁকি দিয়ে আনিয়াছ টাকা।


ওটাকা নিরেট নয় ওর মধ্যে ফাঁকা।।’’


কথা শুনি সে চন্ডীর দুঃখ হ’ল মনে।


অমনি লোটায়ে পড়ে প্রভুর চরণে।।


কা্ন্দিয়া কান্দিয়া কহে ‘‘ওহে দয়াময়।


অপরাধ ক্ষমা করে করহে উপায়।।’’


প্রভু কয় ‘‘ওই কথা বল কিসে হয়।


মাপ দিলে দিতে পারি কি দিব উপায়?


তবে বলি এই দোষে মুক্তি পেতে চাও।


যারা যেই টাকা পাবে তারে তাই দাও।।


তাতে যদি তারা সুখী হয় তবোপরে।


উপায় মিলিবে তাতে বলিনু তোমারে।।’’


চন্ডী বলে ‘‘টাকা নাই খরচ হয়েছে।


নিশ্চই বুঝিনু শাস্তি এ কপালে আছে।।


শুনেছি তোমার নামে মরা বেঁচে যায়।


এ মরা বাঁচায়ে নহ ওগো দয়াময়।।’’


প্রভু কয় যাও তবে কোন ভয় নাই।


রক্ষা হবে বটে কিন্তু মতো হওয়া চাই।।


আর এক কাজ তুমি অবশ্য করিবে।


সকলের কাছে তুমি মাপ চেয়ে লবে।।


মতুয়া ডাকিয়া গৃহে কর হরিনাম।


সাধু যদি মাপ করে মিলে মোক্ষধাম।।’’


প্র্রভুর আশ্চর্য্য লীলা কিছু নাহি বুঝি।


পাপীকে তরাতে প্রভু সর্ব্বকালে রাজী।।


প্রভুর আদেশ মত চন্ডী সব করে।


সংবাদ পাইল চন্ডী কিছুদিন পরে।।


আপনা হইতে দাবী সাহেব তুলেছে।


আর পাঁচ শত টাকা পুরস্কার দেছে।।


ইহার কারণ যাহা হ’ল লোকাচারে।


সেইটুকু বলিমাত্র সভার ভিতরে।।


সেইবারে সাহেবের বহুলাভ হ’ল।


লাভ দেখে মহাসুখে চন্ডীকে ছাড়িল।।


সকলের পিছে কিন্তু হরির করুণা।


বুদ্ধিমান মোরা যারা সে সব মানিনা।।


সেই হতে চন্ডী হল মতুয়া সুজন।


পাপচারী ব্যবসায় না করে কখন।।


তার পুত্র সে যাদব বহু নিষ্ঠাবান।


ওড়াকান্দী বলে সদা কান্দে তাঁর প্রাণ।।


গৃহেতে বিবাদ করে গেল ওড়াকান্দী।


প্রভুর চরণে গিয়ে পড়িলেন কান্দি।।


প্রভু বলে ‘রে যাদব এই বাড়ী থাক।


আমার পালের গরু সব তুই রাখ।।’’


আজ্ঞা পেয়ে সে যাদব ওড়াকান্দী রয়।


মহাপ্রভু হরিচাঁদ দেহ ছেড়ে যায়।।


বহু স্নেহ গুরুচাঁদ করিতেন তাঁরে।


আপন বাড়ীর লোক ভাবে সদা তারে।।


কিছুকালে পরে সাধু নিজ বাসে যায়।


ঠাকুরের নাম লয়ে ঘুরিয়া বেড়ায়।।


যাদব ঢালীর সঙ্গে বহু প্রীতি ছিল।


বহু স্থানে দুই জনে নাম প্রচারিল।।

পবিত্র চরিত্র সাধু অহঙ্কার নাই।


তাঁর কৃপা পেয়ে ধন্য নকুল গোঁসাই।।


গুরুচাঁদ তাঁরে বড় বাসিতেন ভাল।


হরি কথা উচ্চারণে আঁখি ছল ছল।।


ভ্রমণের জন্য প্রভু পশ্চিমেতে যায়।


অবশ্য উদয় হত গ্রাম পদুমায়।।


এসব পবিত্র সাধু দেশের গৌরব।


কোন দিনে নাহি ম্লান হবে সে সৌরভ।।


যাদব মল্লিক ধন্য পবিত্র গোঁসাই।


সাধুর চরণে আমি প্রণাম জানাই।।

 



 

No comments: