Sunday, May 31, 2020

ভাত দেয়ার মুরোদ না থাকলে, কিল দেয়ার গোঁসাই হবেন না।

তিনবার তিনটে আলাদা আলাদা জায়গা থেকে চেক করলাম। সত্যিই একটা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান শ্রমিক এক্সপ্রেসকে কোরোনা এক্সপ্রেস বলেছেন? রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের রাজ্যের শ্রমিককে কোরোনার সঙ্গে তুলনা !!

ট্রেনের সোশ্যাল ডিস্টান্সিং বলছেন আর রাজ্যে লকডাউনের নামে কি চলছে এটা? এটাকে কি কোরোনা রাজ্য বলা হবে? কোরোনাকে পাশবালিশ করে শুতে বলছেন। কাদের পাশবালিশ থাকে? খোঁজ নিন শ্রমিক এক্সপ্রেসে যারা ফিরছে তাদের কাছে পাশবালিশ ও বিলাসিতা।

শ্রমিক এক্সপ্রেসে চেপে কারা পাগলের মতো বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে? কেডি সিংহ? সুদীপ্ত সেন? প্রশান্ত কিশোর? না সেই দিন আনে দিন খায় মানুষগুলো যারা বাংলায় কাজ না পেয়ে ভীনরাজ্যে দোকান, রেস্তোরাঁ, কল কারখানা, ইটভাটা, ফ্ল্যাটবাড়িতে ঠিকে কাজ করে উপার্জন করছিল।

আপনার কাছে হিসেব আছে দুর্গাপূজো বা ঈদের আগে ঠিক কতো শ্রমিক বাংলায় ফেরে? আপনার হিসেব আছে দিল্লিতে বা মুম্বাইয়ে ঠিক কতোগুলো বাজারে সব্জি-মাছ এমনকি ঝালমুড়ি ও বেচে দিনহাটা, মালদা বা মেদিনীপুরের লোকেরা? কাদের বাড়ি ফেরাকে হেয় করলেন?

কাদের অপমান করলেন? যারা প্রতিদিন একটা দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘরে বাকি ২০জনের সাথে গাদাগাদি করে শুয়ে বাড়ির কথা মনে করে একা একা কাঁদে। ঘরের উঠোন, মায়ের হাতে আলুভাতে, পাড়ার বন্ধু, প্রিয় সাইকেল স্বপ্নে দেখতে পায়। ওরা শখে গেছিল রাজ্য ছেড়ে? সিঙ্গুর, শালবনী, নন্দীগ্রামে শিল্প হলে ঘরকুনো বাঙালি কখনো অত দূরে যায়?

ঝাড়খণ্ড নিজের পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রাইভেট বিমানে ফিরিয়ে আনছে আর আরেকটা রাজ্য ঘরে ফিরতে চাইছে যে শ্রমিকরা তাদের ট্রেনকে বলছে কোরোনা এক্সপ্রেস। কে চেয়েছিল কোরোনা এক্সপ্রেস? বাংলা তো দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে টাটার কারখানা চেয়েছিল। পাশে গাড়ির সিট, টায়ার, নাট, বল্টু, সিটবেল্টের অনুসারী শিল্প। বাইরে থেকে লোক কাজ করতে এলে দোকান দরকার হবে, হোটেল দরকার হবে, প্লামবার, রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ান, মুটে, মজুর, অটোওয়ালা এমনকি কাজের লোক ও দরকার হবে। তা এই কোরোনা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা দিল্লি উত্তর প্রদেশে না গিয়ে মালদা থেকে হুগলি আসতে পারতো না?

এদের বড় অংশ সব ভোটে অংশ নিতে পারেন না বলে এদের এভাবে বলবেন না। কোন বাঙালি বাংলার বাইরে থাকতে চায় না। অনেক মনখারাপ নিয়ে কাজ করতে যায়৷ ট্রেন বিহার থেকে বাংলার শস্যশ্যামলা অঞ্চলে ঢুকলে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে অনেকের।

ভাত দেয়ার মুরোদ না থাকলে, কিল দেয়ার গোঁসাই হবেন না। হয়তো এরা এখন আসবে না আপনার ধমকে চমকে। বেঁচে থাকলে সব্বাই একসাথে ভোটের আগে আসবে এক একটা টাকা জমিয়ে। পাল্টে দিতে অনেক হিসেব। ঠিক কতো মানুষ বাংলাকে বৃদ্ধাশ্রম বানিয়ে বাইরে কাজের সূত্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে  পরিসংখ্যান আছে নিশ্চয়ই!  

 (ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের দেওয়াল থেকে সংগৃহিত ও সম্পাদিত)

No comments: