Saturday, June 27, 2020

আসুন গীতা পাঠ করি:- 18 অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ মোক্ষযোগ

অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ মোক্ষযোগ

 অর্জুন উবাচ

 সন্নাসস্য মহাবাহো তত্তুম্‌ ইচ্ছামি বেদিতুম্‌ ।

 ত্যাগস্য চ হৃষীকেশ পৃথক কেশিনিসুদন ।।১

 অর্থ-অর্জুন বললেন- হে মহাবাহো, হৃষিকেশ হে কেশিনিসুদন আমি সন্নাস ও ত্যাগ শব্দের তত্ত্ব পৃথক পৃথক ভাবে জানতে ইচ্ছা করি।

 ভগবান উবাচ

 কাম্যানাম্‌ কর্মনাম্‌ ন্যাসম্‌ সন্নাসম্‌ কবয়ঃ বিদুঃ ।

 সর্ব কর্ম ফল ত্যাগম্‌ প্রাহুঃ ত্যাগম বিচক্ষনাঃ ।।২

 অর্থ-ভগবান বললেন সম কর্মের ফল ত্যাগকে বিচক্ষন ব্যক্তিগন ত্যাগবলেন এবং কাম্য কর্মের পরিত্যাগকেই পন্ডিতগন সন্নাস বলে।

 ত্যাজ্যম্‌ দোশবত্ ইতি একে কর্ম প্রাহুঃ মনিষিণঃ ।

 যজ্ঞ দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজ্যম্‌ ইতি চ অপরে ।।৩

 অর্থ-ত্যাগ সম্বন্ধে একশ্রেনীর পন্ডিতেরা এরুপ স্থির করেছেন যে,কর্মকে দোষ বলে একেবারে ত্যাগ করবে, অপর এক শ্রেণীর পন্ডিত যজ্ঞ,দান,তপস্যা প্রভৃতি কর্মকে অত্যাজ্য বলে সিদ্ধান্ত করেছে।

 নিশ্চয়ম্‌ শৃনু মে অত্র ত্যাগে ভরতম্‌ ।

 ত্যাগ হি পুরুষব্যাগ্র ত্রিবিধঃ সংপ্রকীর্তিতঃ ।।৪

 অর্থ-হে ভরত সত্তম্‌ ত্যাগ সম্বন্ধে আমার সিদ্ধান্ত শ্রবন কর, হে পুরুষ ব্যাগ্র শাস্ত্রে ত্যাগও তিন প্রকার বলে কীর্তিত হয়েছে।

 যজ্ঞ দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজম্‌ কার্যম্‌ এব তত্ ।

 যজ্ঞ দানম্‌ তপঃ চ এব পাবনানি মনীষিণাম্‌ ।।৫

 অর্থ-যজ্ঞ, দান, তপস্যা কখনো ত্যাগ করা ইচিত নয় যজ্ঞ দান এবং তপস্যা মনীষীদের পর্য্যন্ত পবিত্র করে।

 এতানি অপি তু কর্মানি সঙ্গম্‌ ত্যক্তা ফলানি চ ।

 কর্তব্যানি ইতি মে পার্থ নিশ্চিতম্‌ মতম্‌ উত্তমম্‌ ।।৬

 অর্থ-আশক্তি ও ফেেলর আশা ত্যাগ করে কর্তব্য বোধে এই সমস্ত কর্ম অনুষ্ঠান করা উচিত্। ইহাই আমার সিদ্ধান্ত।

 নিয়তস্য তু সন্নাসঃ কর্মনঃ ন উপপদ্যতে ।

 মোহাত্ তস্য পরিত্যাগঃ তমসঃ পরিকীর্তিত ।।৭

 অর্থ-নিত্ত কর্ম অবশ্য কর্তব্য, কখনোই ত্যাগ করা উচিত্ নয়, মোহ বশত কেউ যদি নিত্ত কর্ম ত্যাগ করে, তা হলে তাকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়।

 দঃখম্‌ ইতি এব যত্ কর্ম কায় ক্লেশ ভয়াত্ ত্যজেত্ ।

 স কৃত্বা রাজসম্‌ ত্যাগম্‌ ন এব ত্যাগ ফলম্‌ লভেত্ ।।৮

 অর্থ-যিনি নিত্ত কর্মকে ক্লেশকর বলে মনে করেন, সেই ত্যাগ রাজস ত্যাগ, তার ফল কখনো ত্যাগের ফল লাভ হয় না।

 কার্যম্‌ ইতি এব চ যত্ কর্ম নিয়তম্‌ ক্রিয়তে অর্জুন ।

 সঙ্গম্‌ ত্যাক্তা ফল চ এব সঃ ত্যাগৈঃ সাত্ত্বিক মতঃ ।।৯

 অর্থ-হে অর্জুন যিনি কর্তব্য বোধে নিত্ত কর্ম অনুষ্ঠান করেন এবং সেই কর্মের আশক্তি ও ফল পরিত্যাগ করেন, তার ত্যাগ সাত্ত্বিক।

 ন দ্বেষ্টি অকুশলম্‌ কর্ম কুশলেন অনুষজ্জতে ।

 ত্যাগী সত্ত্ব সমাবিষ্টঃ মেধাবী ছিন্ন সংশয় ।।১০

 অর্থ-যারা সত্ত্বগুনে অবস্থিত যারা অশুভ কর্মে বিদ্দেশ করেন না এবং শুভ কর্মে অনাশক্ত হয় না সেই প্রকার মেধাবী ব্যাক্তির কর্ম সম্বন্ধে কোন সংশয় নাই।

 ন হি দেহভূতা শক্যম্‌ ত্যক্তুম্‌ কর্মানি অশেষতঃ ।

 যঃ তু কর্ম ফল ত্যাগী সঃ ত্যাগী ইতি অভিধিয়তে ।।১১

 অর্থ-দেহধারী জীবের সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়, তাই যিনি সমস্ত কর্মের ফল পরিত্যাগ করেন তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী।

 অনিষ্টম ইষ্টম মিশ্রম্‌ চ ত্রিবিধম্‌ কর্মনঃ ফলম্‌ ।

 ভবতী অত্যাগীনাম্‌ প্রেত্য ন তু সন্নাসি নাম্‌ কচিত্ ।১২

 অর্থ-যারা কর্মফল ত্যাগ করেনি তাদের অনিষ্ট ইষ্ট ও মিশ্র এই তিন প্রকার কর্ম ফল ভোগ হয়। কিন্তু সন্নাসিদের উক্ত ত্রিবিধ ফল ভোগ করতে হয় না।

 পঞ্চ এতানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে ।

 সাংখ্যে কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধয়ে সর্ব কর্মনম্‌ ।।১৩

 অর্থ-হে মহাবাহো বেদান্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্তে কর্ম সমুহের সিদ্ধির উদ্দেশ্যে পাচটি কারন নির্দিষ্ট হয়েছে তা আমি বলছি শ্রবন কর।

 অধিষ্ঠানম্‌ তথা কর্তা করনম্‌ চ পৃথগবিধম্‌ ।

 বিবিধঃ চ পৃথক চেষ্টাঃ দৈবম্‌ চ এব অত্র পঞ্চমম্‌ ।।১৪

 অর্থ-অধিষ্ঠান, কর্তা, ইন্দ্রিয়সমুহ,প্রচেষ্টা এবং চরমে পরমাত্মা এই পাচটি হল কর্মের হেতু।

 শরির বাক্‌ মনোভিঃ যত্ কর্ম প্রারাভতে নরঃ ।

 ন্যয্যম্‌ বা বিপরীতম্‌ বা পঞ্চ এতে তস্য হেতবঃ ।।১৫

 অর্থ-শরির বাক্য মন দ্বারা মানুষ কার্য করে,তা ন্যায্যই হোক আর অন্যায্যই হোক উক্ত পঞ্চবিধ কারণ দ্বারাই সাধিত হয়।

 তত্র এবম্‌ সতি কর্তারম্‌ আত্মনম্‌ কেবলম্‌ তু যঃ ।

 ঈশ্যতি অকৃতবুদ্ধিত্বাত্ ন সঃ পশ্যতি দুর্মতি ।।১৬

 অর্থ-যে কর্মের পাচটি কারনের কথা বিবেচনা না করে নিজকে কর্তা বলে মনে করে সে অবশ্যই নির্বোধ এবং দুর্মতি, সে যথাযথভাবে দর্শন করতে পারে না।

 যস্য ন অহংকৃত ভাবঃ বুদ্ধি যস্য ন লিপ্যতে ।

 হত্বাপি সঃ ইমান লোকান ন হন্তি ন নিবধ্যতে ।।১৭

 অর্থ-আমি কর্তা এই অভিমান যার নাই যার বুদ্ধি কর্মফলে লিপ্ত হয়না, তিনি জগতের সমসত প্রাণী হত্যা করলেও হত্যাকারি হয়না বা হত্যার ক্রিয়া ফলে আবদ্ধ হয়না।

 জ্ঞানম্‌ জ্ঞেয়ম্‌ পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্ম চোদনা ।

 কারনম্‌ কর্ম কর্তা ইতি ত্রিবিধা কর্ম সংগ্রহ ।।১৮

 অর্থ-জ্ঞান, জ্ঞেয়, পরিজ্ঞাতা এই তিনটি কর্মের প্রেরনা,তারণ কর্ম ও কর্তা তিনটিই কর্মের আশ্রয়।

 জ্ঞানম্‌ কর্ম চ কর্তা চ ত্রিধা এব গুনভেদতঃ ।

 প্রোচ্যতে গুন সংখ্যানে যথাবত্ শৃনু তানি অপি ।।১৯

 অর্থ-প্রকৃতির তিনটি গুন অনুসারে জ্ঞান কর্ম ও কর্তা তিন প্রকার। সেই ভেদসমুহ আমি বলছি, যথযথভাবে শ্রবন কর।

 সর্বভুতেষু যেন একম্‌ ভাবম্‌ অব্যয়ম্‌ ঈক্ষ্যতে ।

 অবিভক্তম বিভক্তেষু তত্ জ্ঞানম্‌ বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্‌ ।।২০

 অর্থ-যে জ্ঞানের দ্বারা সমস- প্রণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়,অনেক জীব পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, এই জ্ঞানকে সাত্ত্বিক জ্ঞান বলে।

 পৃথক্তেন তু যজজ্ঞানম্‌ নানাভাবান পৃথগ বিধান ।

 বেত্তি সর্বেষু ভূতেষু তজজ্ঞানম্‌ বিদ্ধি রাজসম্‌ ।।২১

 অর্থ-সেই জ্ঞানের দ্বারা বিভিন্ন প্রাণীতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আত্মা অবস্থিত বলে দর্শন হয়। সেই জ্ঞান রাজসিক বলে জানবে।

 যত্ তু কৃত্স্নবত্ একস্মি কার্যে সক্তম্‌ অহৈতুকম্‌ ।

 অতত্ত্বার্থবত্ অল্পম্‌ চ তত্ তামসম উদহৃতম্‌ ।।২২

 অর্থ-এবং সেই জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত তত্ত্ব অবগত না হয়ে কোন একটি বিশেষ কাজে তীর্ব আশক্তির উদয় হয়, সেই তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে।

 নিয়তম্‌ সঙ্গরহিতম্‌ অরাগদ্বেষতঃ কৃতম্‌ ।

 অফলপ্রেপ্সুনা কর্ম যত্ তত্ সাত্ত্বিকম্‌ উচ্যতে ।।২৩

 অর্থ-ফলের আকাঙ্ক্ষা না কাে রাগ ও দ্বেষ বর্জন পুর্বক আশক্তি শুন্য হয়ে যে নিত্ত কর্ম অনুষ্ঠিত হয় তাকে সাত্তিক কর্ম বলে।

 এতত্ তু কামেপ্সুনা কর্ম সাহঙ্কারেন বা পুনঃ ।

 ক্রিয়তে বহুলায়াসম্‌ তত্ রাজসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।২৪

 অর্থ-কিন্তু ফলাকাঙ্ক্ষা যুক্ত এবং অহংঙ্কার যুক্ত হয়ে বহু কষ্ট সাধ্যকরে যে কর্মের অনুষ্ঠান হয় সে কর্ম রাজসিক বলে অভিহিত হয়।

 অনুবন্ধন ক্ষয়ম্‌ হিংসাম্‌ অনপেক্ষ চ পৌরুষম ।

 মোহাত্ আরভ্যতে কর্ম যত্ তত্ তামসম্‌ উচ্যতে ।।২৫

 অর্থ-ভাবি ক্লেশ ধর্ম জ্ঞানাদির অপচয় হিংসা এই সমস্ত পরিনতির কথা বিবেচনা না করে মোহ বসত যে কর্ম অনুষ্ঠিত হয় তাকে তমসিক কর্ম বলা হয়।

 মুক্তসঙ্গঃ অনহংবাদী ধৃত্যুত্সাহ সমন্বিতাঃ ।

 সিদ্ধি অসিদ্ধোঃ নির্বিকারঃ কর্তা সাত্ত্বিকঃ উচ্যতে ।২৬

 অর্থ-মুক্তসঙ্গ, অহংঙ্কারশুন্য, ধৃতি উত্সাহসমন্বিত এবং সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে নির্বিকার, এই রুপ কর্তাই সাত্ত্বিক।

 রাগী কর্মফল প্রেপ্সু লুব্ধাঃ হিংসত্মকঃ অশুচি ।

 হর্ষ শোকান্বিতাঃ কর্তা রাজসঃ পরিকির্তিতঃ ।।২৭

 অর্থ-অত্যন্ত বিষয়াসক্ত কর্মফল লুব্ধ হিংসা প্রিয় অশুচি হর্ষ শোকাদির বশিভূত যে কর্তা সে রাজস কর্তা।

 অযুক্তঃ প্রাকৃতঃ স্তব্ধাঃ শঠঃ নৈস্কৃতিকঃ অলসঃ ।

 বিষাদী দীর্ঘসুত্রী চ কর্তা তামসঃ উচ্যতে ।।২৮

 অর্থ-অনুচিত্ কার্যপ্রিয়, জড় চেষ্টাযুক্ত,অনম্র শঠ অপমান কার্যে রত,অলস,সর্বদা বিষাদযুক্ত, দীর্ঘসুত্রী যে কর্তা, সেই তামস কর্তা।

 বুদ্ধেঃ ভেদম্‌ ধৃতে চ এব গুনতঃ ত্রিবিধম্‌ শৃনু ।

 প্রোচ্যমানম্‌ অশেষেন পৃথক্তেন ধনঞ্জয় ।।২৯

 অর্থ-হে ধনঞ্জয়, বুদ্ধির ও ধৃতির সত্ত্ব,রজ ও তমোগুন দ্বারা যে ত্রিবিধ ভেদ আছে তা আমি তোমাকে বিস-ারিত বলছি তুমি শ্রবন কর।

 প্রবির্ত্তিম চ নিবৃর্ত্তিম চ কার্য অকার্য ভয় অভয় ।

 বন্ধম্‌ মোক্ষ্যম চ যা বেত্তি বুদ্ধি সা পার্থ সাত্ত্বিকী ।।৩০

 অর্থ-যে বুদ্ধির দ্বারা প্রবৃত্তি,নিবৃত্তি কার্য ও অকার্য ভয় ও অভয় বন্ধন ও মুক্তি এই সকলের পার্থক্য নিশ্চিত হয় সেই বুদ্ধি সাত্ত্বিকী।

 যয়া ধর্মম্‌ অধর্মম্‌ চ কার্যম্‌ অকার্যম্‌ এব চ ।

 অযথাবত্ প্রজানাতি বুদ্ধি সা পার্থ রাজসী ।।৩১

 অর্থ-যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম কার্য ও অকার্য প্রভৃতির পার্থক্য অসম্যক রুপে স্থিরীকৃত হয়, সে বুদ্ধি রাজস।

 অধর্মম্‌ ধর্মম ইতি যা মন্যতে তমসা আবৃতা ।

 সর্বার্থান বিপরিতান চ বুদ্ধি সা পার্থ তামসী ।।৩২

 অর্থ-হে পার্থ যে বুদ্ধি অজ্ঞান এবং মোহাচ্ছন্ন হয় অধর্মকে ধর্ম বলে মনে করে এবং ধর্মকে অধর্ম বলে মনে করে এবং সব কিছুই বিপরিত ভাবে বোঝেন, তা তামসী বুদ্ধি বলে জানবে।

 ধৃত্যা যয়া ধারয়েতে মনঃ প্রান ইন্দ্রিয় ক্রিয়া ।

 যোগেন অব্যভিচারিণ্যা ধৃতিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ।।৩৩

 অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি অব্যভিচারি যোগ দ্বারা মন, প্রান,ইন্দ্রিয় ও ক্রিয়া সকলকে ধারন করে সেই ধৃতিই সাত্ত্বিকী।

 যয়া তু ধর্ম-কামার্থান ধৃত্যা ধারয়তে অর্জুন ।

 প্রসঙ্গেন ফলাকাঙ্ক্ষী ধৃতিঃ সা পার্থ রাজসী ।।৩৪

 অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি ফলাকাঙ্ক্ষার সহিত ধর্ম অর্থ ও কামকে ধারন করে তাই রাজসি।

 যয়া স্বপ্নম ভয়ম্‌ শোকম্‌ বিষাদম্‌ মদম্‌ এব চ ।

 ন বিমুঞ্চতি দুর্মেধা ধৃতিঃ সা পার্থ তামসী ।।৩৫

 অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি স্বপ্ন ভয় শোক বিষাদ মদ ইত্যাদিকে ত্যাগ করে না সেই বুদ্ধিহীনা ধৃতিই তামসী।

 সুখম্‌ তু ইদানীম ত্রিবিধম্‌ শৃনু মে ভরতর্ষভ ।

 অভ্যাসাত্ রমতে যত্র দুঃখ অন্তম্‌ চ নিগচ্ছতি ।।৩৬

 অর্থ-হে ভরতর্ষভ, এখন তুমি ত্রিবিধ সুখের বিষয় শ্রবন কর বদ্ধজীব পুনঃ, পুনঃ অনুশিলন দ্বারা সেই সুখে রমন করে, এবং কোন কোন স্থলে সমস্ত দুঃখ থেকে সম্যক রুপে মুক্ত হয়।

 যত্ তত্ অগ্রে বিষমিব পরিণামে অমৃত উপমম্‌ ।

 তত্ সুখম্‌ সাত্ত্বিকম্‌ প্রোক্তম্‌ আত্মা বুদ্ধি প্রসাদজম্‌ ।।৩৭

 অর্থ-যে সুখ প্রথম বিষের মত কিন্তু পরি নামে অমৃততুল্য, আত্মনিষ্ট বুদ্ধির নির্মলতা থেকে উত্পন্ন, সেই সুখ সাত্ত্বিক সুখ বলে কথিত হয়।

 বিষয় ইন্দ্রিয় সংযোগাত্ যত্ তত্ অগ্রে অমৃতপমম্‌ ।

 পরিনামে বিষমিব তত্ সুখম্‌ রাজসম্‌ স্মৃতম্‌ ।।৩৮

 অর্থ-বিষয় ইন্দ্রিয়ের সংযোগের ফলে যে সুখ প্রথমে অমৃতের মত এবং পরিনামে বিষের মত অনুভব হয় তাকে রাজস সুখ বলা হয়।

 যত্ অগ্রে চ অনুবন্ধে চ সুখম্‌ মোহনম্‌ আত্মনঃ ।

 নিদ্রা আলস্য প্রমাদ উত্থম্‌ তত্ তমসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।৩৯

 অর্থ-যে সুখ প্রথমে ও পরিনামে আত্মতত্ত্ব জ্ঞানরহিত, এবং যা নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ থেকে উত্পন্ন হয়, তা তামসিক সুখ বলে কথিত হয়।

 ন তত্ অস্তি পৃথিব্যাম্‌ বা দিবি দেবেষু বা পুনঃ ।

 সত্ত্বম্‌ প্রকৃতিজৈঃ মুক্তম্‌ যত্ এভিঃ স্যাত্ এিভিঃ গুনৈঃ ।৪০

 অর্থ-এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে অথবা স্বর্গের দেবতাদের মধ্যে এমন কোন জীব নেই যে প্রকৃতির গুন থেকে মুক্ত।

 বাহ্মন ক্ষত্রিয় বিষাম্‌ শুদ্রানাম্‌ চ পরন্তপ ।

 কর্মানি প্রবিভক্তানি স্বভাব প্রভাব প্রভবেঃ গুনৈঃ ।।৪১

 অর্থ-হে পরন-প স্বভাবজাত গুন অনুসারে ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এবং শুদ্রেরও কর্ম সমুহ পৃথক ভাবে বিভক্ত আছে।

 শমঃ,দমঃ,তপঃ শৌচম্‌ ক্ষান্তি আর্জবম্‌ এব চ ।

 জ্ঞানম্‌ বিজ্ঞানম্‌ অস্তিকম্‌ ব্রহ্ম কর্ম সভাবজম্‌ ।।৪২

 অর্থ-শম, দম, তপ, শৌচ, ক্ষান্তি সরলতা, জ্ঞান,বিজ্ঞান ও আস্তিক্য এই কয়টি ব্রাহ্মনদের স্বভাবজ কর্ম।

 শৌর্যম্‌ তেজঃ ধৃতিঃ দাক্ষ্যম্‌ যুদ্ধে চ অপি অপলায়নম্‌ ।

 আনম্‌ ঈশ্বরম্‌ ভাবঃ চ ক্ষাত্রম্‌ কর্ম স্বভবজম্‌ ।।৪৩

 অর্থ-শৌর্য,তেজ,ধৃতি, দক্ষ্যতা,যুদ্ধে অপরাম্মুখতা দানশীলতা ও শাসন ক্ষমতা এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাব জাত কর্ম ।

 কৃষি গোরক্ষা বানিজ্যম্‌ বৈশ্য কর্ম স্বভাবজম ।

 পরিচর্যা আত্মকম্‌ কর্মঃ শুদ্রস্য অপি স্বভাবজম্‌ ।।৪৪

 অর্থ-কৃষি, গোরক্ষা ও বানিজ্য এই কয়টি বৈশ্যের স্বাভাবিক কর্ম। পরিচার্যা শুদ্রের স্বভাবজাত কর্ম।

 স্বে স্বে কর্মানি অভিরত সংসিদ্ধিম্‌ লভতে নরঃ ।

 স্বকর্ম নিরতঃ সিদ্ধিম্‌ যথা বিন্দতি তত্ শৃনু ।।৪৫

 অর্থ-স্বকর্মে নিয়ত ব্যক্তি স্বকর্মে অভিরত হয়ে যেভাবে সংসিদ্ধি লাভ করে, তা শ্রবন কর।

 যতঃ প্রবৃত্তিঃ ভূতানাম্‌ যেন সর্বম্‌ ইদম্‌ ততম্‌ ।

 স্বকর্মনা তম্‌ অভ্যর্চ্য সিদ্ধিম্‌ বিন্দতি মানবঃ ।।৪৬

 অর্থ-যে পরমেশ্বর ভগবান থেকে সমস্ত জীবের উত্পত্তি, যিনি এই সমগ্র বিশ্ব ব্যপ্ত আছেন, তাকে মানুষ তার কর্মের দ্বারা অর্চনা করে সিদ্ধি লাভ করে।

 শ্রেয়ান স্বধর্ম বিগুনঃ পরধর্মাত্ স্বনুষ্ঠিতাত্ ।

 স্বভাব নিয়তম্‌ কর্ম কুর্বন ন আপ্নোতি কিল্বিষম্‌ ।।৪৭

 অর্থ-উত্তম্‌ রুপে অনষ্ঠিত পরধর্ম থেকে অসম্যক রুপে অননিষ্ঠিত স্বধর্ম শ্রেয়। কারন স্বভাব অনুসারে কর্ম করলে মানুষ পাপের ভাগী হয়না।

 সহজম্‌ কর্ম কৌন্তেয় স্বদোষম্‌ অপি ন ত্যজ্যম ।

 সর্বরম্ভা হি দোষেন ধুমেন অগ্নি ইব আবৃতাঃ ।।৪৮

 অর্থ-প্রতিটি কর্ম প্রচেষ্টাতেই-কিছুনা কিছু দোষ থাকে, ঠিক যেমন অগ্নি ধুমের দ্বারা আবৃত থাকে। তাই হে কৌন্তেয় দোষযুক্ত হলেও স্বধর্ম কখন ত্যাগ করা উচিত্ না।

 অসক্তবুদ্ধিঃ সর্বত্র জিতাত্মা বিগতস্পৃহঃ ।

 নৈস্কর্ম্য সিদ্ধিম্‌ পরমাম্‌ সন্নাসেন অধিগচ্ছতি ।।৪৯

 অর্থ-জড় বিষয় অনাসক্ত সংযতচিত্ত এবং ভোগস্পৃহাশুন্য আত্মজ্ঞ ব্যক্তি

 স্বরুপত কর্ম ত্যগপুর্বক নৈস্কর্ম রুপ পরম সিদ্ধি লাভ করবে।

 সিদ্ধিম্‌ প্রাপ্ত যথা ব্রহ্ম তথা আপ্নোতি নিবোধ মে ।

 সমাসেন এব কৌন্তেয় নিষ্ঠা জ্ঞানস্য যা পরা ।।৫০

 অর্থ-হে কৌন্তে নৈস্কর্ম সিদ্ধি লাভ করে জীব যেমন জ্ঞানের পরানিষ্ঠারুপ ব্রহ্মকে লাভ করেন তা আমি সংক্ষেপে বলছি, শ্রবন কর।

 বুদ্ধ্যা বিশুদ্ধয়া যুক্তঃ ধৃত্যা আত্মা নিয়ম্য চ ।

 শব্দাদীন বিষয়ান ত্যাক্তা রাগ দ্বেষৌ ব্যুদস্য চ ।।৫১

 বিবিক্তসেবী লঘ্যাশী যতবাক কায় মানসঃ ।

 ধ্যানযোগপরঃ নিত্যম্‌ বৈরাগ্যম্‌ সমুপাশ্রিতঃ ।।৫২

 অহংকারম্‌ বলম্‌ দর্পম্‌ কাম ক্রোধম্‌ পরিগ্রহম্‌ ।

 বিমুচ্য নির্মমঃ শান্ত ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ।।৫৩

 অর্থ-বিশুদ্ধ বুদ্ধিযুক্ত হয়ে মনকে ধৃতির দ্বারা নিয়ত্রিত করে শব্দ আদি ইন্দ্রিয় বিষয় পরি ত্যাগ করে, রাগ, দ্বেষ বর্জন করে, নির্জন স্থানে বাস করে, অল্প আহার করে, দেহ, মন এবং বাক সংযত করে, ধ্যান যোগে যুক্ত হয়ে বৈরাগ্য আশ্রয় কওে, অহংঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ, পরিগ্রহ থেকে সম্পুর্নরুপে মুক্ত, মমত্ব বোধশুন্য শান্ত পুরুষ আত্মজ্ঞান লাভে সমর্থ হন।

 ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ।

 সমঃ সর্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিম্‌ লভতে পরাম্‌ ।।৫৪

 অর্থ-যিনি এই ভাবে চিন্ময় ভাব লাভ করেছেন, তিনি পরম ব্রহ্মকে উপলব্ধি করেছেন। তিনি কখনো কোন কিছুর জন্য শোক করেন না বা কোন কিছুর আকঙ্খা করেন না, তিনি সমস্ত জীবের প্রতি সমদৃষ্টি সম্পন্ন। সেই অবস্থায় তিনি আমার শুদ্ধ ভক্তি লাভ করে।

 ভক্তা মাম অভিজানাতি যাবান যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ ।

 ততঃ মাম তত্ত্বত জ্ঞাত্বা বিশতে তত্ অন্তরম্‌ ।।৫৫

 অর্থ-ভক্তির দ্বারা কেবল পরমেশ্বর ভগবানকে পাওয়া যায়। এই প্রকার ভক্তিদ্বারা ভগবানকে যথাযথ ভাবে জানার ফলে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করা যায়।

 সর্ব কর্মানি অপি সদা কুর্বাণঃ মত্ ব্যপাশ্রয়ঃ ।

 মত্ প্রসাদাত্ অবাপ্নোতি শাশ্বতম্‌ পদম্‌ অব্যয়ম্‌ ।।৫৬

 অর্থ-আমার ভক্ত সকল রকম কার্য কলাপে লিপ্ত হওয়া সত্তেও আমার প্রসাদে অব্যয় ও শাশ্বত আমার নিত্য ধাম লাভ করে।

 চেতসা সর্বকর্মানি ময়ি সংনস্য মত্পর ।

 বুদ্ধিযোগম উপাশ্রিত্য মচ্চিত্তঃ সততম্‌ ভব ।।৫৭

 অর্থ-তোমার সম্স্ত কর্মে তুমি কেবল আমার উপর নির্ভর কর এবং সর্বদা আমার আশ্রয় অবলম্বন কর। এইভাবে ভক্তি যোগে যুক্ত হয়ে মদ্গত চিত্ত হও।

 মত্ চিত্তঃ সর্বদুর্গানি মত্ প্রসাদাত্ তরিষ্যসি ।

 অথ চেত্ ত্বম্‌ অহঙ্কারান ন শ্রোষ্যসি বিনঙ্ক্ষ্যসি ।।৫৮

 অর্থ-এইভাবে মদ্গত চিত্ত হলে আমার কৃপায় জড়জীবনের সমস্ত প্রতিবন্ধক থেকে উত্তীর্ন হবে। কিন্তু তুমি যদি তা নাকরে আমার কথা না শুনে, অহংকারের বশীভূত হয়ে কর্ম কর, তাহলে তুমি বিনষ্ট হবে।

 যত্ অহঙ্কারম্‌ আশ্রিত্য ন যোত্স্য ইতি মন্যসে ।

 মিথ্যা এষঃ ব্যবসায়ঃ তে প্রকৃতি তাম্‌ নিযোক্ষতি ।।৫৯

 অর্থ-তুমি যদি আমার নির্দ্দেশ অনুসারে যুদ্ধ না কর, তাহলে তুমি ভ্রান্ত ভাবে পরিচালিত হবে। কারন তোমার প্রকৃতি তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করবে।

 স্বভাবজেন কৌন্তেয় নিবদ্বঃ স্বেন কর্মনা ।

 কর্তুম ন ইচ্ছসি যত্ মোহাত্ করিষ্যসি অবশঃ অপি তত্ ।।৬০

 অর্থ-হে কৌন্তেয় তুমি মোহ বশত আমার নির্দ্দেশ অনুসারে আচরন করতে চাইছনা। তোমার নিজ স্বভাবে বশবর্ত্তি হয়ে তোমাকে সেই কর্মে প্রবৃত্তি হতে হবে।

 ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌ হৃদ্দেশে অর্জুন তিষ্ঠতি ।

 ভ্রাময়ন সর্বভূতানি যন্ত্র আরুঢ়ানি মায়য়া ।।৬১

 অর্থ-হে অর্জুন, পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবকে দেহরুপ যন্ত্রেআহরন করিয়ে মায়ার দ্বারা ভ্রমন করান।

 তম এব শরনম্‌ গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত ।

 তত্ প্রসাদাত্ পরাম্‌ শান্তিম্‌ স্থানম্‌ প্রপ্সসি শাশ্বতম্‌ ।।৬২

 অর্থ-হে ভারত সর্বত ভাবে তার শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে।

 ইতি তে জ্ঞানম্‌ আখ্যাতম্‌ গুহ্যাত্ গুহ্যতরম্‌ ময়া ।

 বিমৃশ্য এতত্ অশেষেন যথা ইচ্ছসি তথা কুরু ।।৬৩

 অর্থ-এইভাবে আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান দান করলাম। তুমি তা বিশেষ ভাবে বিচার করে যাহা ইচ্ছা তাই কর।

 সর্ব গুহ্যতমম্‌ ভূয় শৃনু মে পরমম্‌ বচঃ ।

 ইষ্টঃ অসি মে দৃঢ়ম্‌ ইতি ততঃ বক্ষ্যামি তে হিতম্‌ ।।৬৪

 অর্থ-তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় তাই তোমার হিতের জন্য আমি সব চেয়ে গোপনিয় জ্ঞান উপদেশ করছি তুমি তা শ্রবন কর।

 মন্মনা ভব মদ্ভক্তঃ মদযাজি মাম্‌ নমস্কুরু ।

 মাম এষ্যসি সত্যম্‌ তে প্রতিজানে প্রিয় অসি মে ।।৬৫

 অর্থ-তুমি আমাতে চিত্ত স্থির কর এবং আমার ভক্ত হও। আমার পুজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই ভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে।

 সর্বাধর্মান পরিত্যজ্য মাম একম্‌ শরনম্‌ ব্রজ ।

 অহম্‌ ত্বাম সর্বপাপেভ্যঃ মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ।।৬৬

 অর্থ-সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শ্বরনাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। সে বিষয়ে তুমি কোন দুশ্চিন্তা করো না।

 ইদম তে ন অতপস্কায় ন অভক্তায় কদাচন ।

 ন চ অশুশ্রুষবে বাচ্যম ন চ মাম্‌ য়ঃ অভ্যসুয়তি ।।৬৭

 অর্থ-যারা সংযম হীন, ভক্তি হীন, পরিচর্য্যা হীন এবং আমার প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন তাদের কখন এই গোপনীয় জ্ঞান প্রদান করবে না।

 যঃ ইদম্‌ পরমম্‌ গুহ্যম্‌ মত্ ভক্তেষু অভিধাস্যতি ।

 ভক্তিম্‌ ময়ি পরাম্‌ কৃত্বা মাম্‌ এব এষ্যতি অসংশয়ঃ ।।৬৮

 অর্থ-যিনি আমার ভক্তদের পরম জ্ঞান দান করেন তিনি অবশ্যই পরা ভক্তি লাভ করেন এবং অবশেষে আমার কাছে ফিরে আসবেন।

 ন চ তস্মাত্ মনুষ্যেসু কশ্চিত্ মে প্রিয় কৃত্তম্‌ ।

 ভবিতা ন চ মে তস্মাত্ অন্যঃ প্রিয়তর ভূবি ।৬৯

 অর্থ-এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তার থেকে অধিক প্রিয়কারি এবং আমার প্রিয় আর কেউ নেই এবং কখনও হবে না।

 অধ্যেষ্যতে চ য ইমম্‌ ধর্মম্‌ সংবাদম্‌ আবয়োঃ ।

 জ্ঞান যজ্ঞেন তেন অহম্‌ ইষ্টঃ স্যাম ইতি মে মতিঃ ।।৭০

 অর্থ-এবং আমি ঘোষনা করছি যে, যে ব্যক্তি আমাদের এই পবিত্র কথপকথন অধ্যায়ন করবেন, তার সেই জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা আমি পুজিত হব।

 শ্রদ্ধাবান অনসুয়শ্চ শৃনুয়াত্ অপি যঃ নরঃ ।

 সোহপি মুক্তঃ শুভান লোকান পাপ্নুয়াত্ পুন্যকর্মনাম্‌ ।।৭১

 অর্থ-অসুয়া শুন্য যে ব্যক্তি শ্রদ্ধা সহকারে এই জ্ঞান শ্রবন করেন, তিনিও পাপ মূক্ত হয়ে পুন্য কর্মকারীদের লোক প্রাপ্ত হয়।

 কচ্চিত্ এতত্ শ্রুতম্‌ পার্থ তয়া একাগ্রেন চেতসা ।

 কচ্চিত্ অজ্ঞান সম্মোহঃ প্রনষ্টঃ তে ধনঞ্জয় ।।৭২

 অর্থ-হে ধনঞ্জয় অর্জুন তুমি কি একাগ্র চিত্তে এই উপদেশ শ্রবন করেছ,তোমার অজ্ঞান জনিত মোহ কি এখন বিদুরিত হয়েছে।

 অর্জুন উবাচ

 নষ্টঃ মোহ স্মৃতি লব্ধা তত্ প্রসাদাত্ ময়া অচ্যুত ।

 স্মিতঃ অস্মি গত সন্দেহঃ করিষ্যে বচনম তব ।।৭৩

 অর্থ-অর্জুন বললেন, হে কৃষ্ণ, হে অচ্যুত তোমার কৃপায় এখন আমার মোহ দুর হয়েছে। আমার স্মৃতি ফিরে এসছে এবং আমার সমস্ত সন্দেহ দুর হয়েছে। আমি এখন তোমার নির্দ্দেশ অনুসারে আচরন করব।

 সঞ্জয় উবাচ

 ইতি অহম্‌ বাসুদেবস্য পার্থস্য চ মহাত্মনঃ ।

 সংবাদম্‌ ইমম্‌ অশ্রৌষম্‌ অদ্ভূতম্‌ রোমহর্ষণম ।।৭৪

 অর্থ-সঞ্জয় বললেন, এইভাবে আমি কৃষ্ণ ও অর্জুন দুই মহাত্মার কথপকথন শ্রবন করে ছিলাম এবং সেই অদ্ভুদ বাণী শ্রবন করে রোমাঞ্চিত হয়ে ছিলাম।

 ব্যাসপ্রসাদ্যাত্ শ্রুতবান এতত্ গুহ্যম্‌ অহম্‌ পরম্‌ ।

 যোগম্‌ যোগেশ্বরাত্ কৃষ্ণাত্ সাক্ষাত্ কথয়তঃ সয়ম্‌ ।।৭৫

 অর্থ-ব্যাসদেবের কৃপায় এই পরম গোপণীয় যোগের উপদেশ আমি সয়ং যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণর কাছ থেকে শ্রবন করে ছিলাম।

 রাজন সংস্মৃত্য, সংস্মৃত্য সংবাদম্‌ ইমম্‌ অদ্ভুতম্‌ ।

 কেশব অর্জুনয়ো পুন্যম্‌ হৃষ্যামি চ মূহু, মূহু ।।৭৬

 অর্থ-হে রাজন শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের এই অমৃত সংবাদ স্বরন করতে, করতে আমি বারংবার রোমাঞ্চিত হচ্ছি।

 তত্ চ সংস্মৃত্য, সংস্মৃত্য রূপম্‌ অতি অদ্ভুতম হরেঃ ।

 বিস্ময়া মে মহান রাজন হৃষ্যামি চ পুনঃ, পুনঃ ।।৭৭

 অর্থ-হে রাজন শ্রীকৃষ্ণের সে অদ্ভুত্ রুপ স্বরন করতে, করতে বিস্ময়া বিভূত হচ্ছি এবং বারংবার হরষিত হচ্ছি।

 যত্র যোগেশ্বর কৃষ্ণ যত্রপার্থ ধনুধর ।

 তত্র শ্রীঃ বিজয়ঃ ভূতিঃ ধ্রূবা নীতিঃ মতির্মম্‌ ।।৭৮

 অর্থ-যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং যেখানে ধনুধর পার্থ সেখানে শ্রী,বিজয়,ভূতি,ও ন্যায় বর্ত্তমান এই দুইটিই আমার অভিমত।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 মোক্ষসংন্যাসযোগো নামাষ্টাদশোঽধ্যাযঃ ॥১৮॥

No comments: