আসুন গীতা পাঠ করি:- 6 ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ ধ্যানযোগ বা অভ্যাসযোগ

ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ ধ্যানযোগ বা অভ্যাসযোগ

 ভগবান উবাচ-

 অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্যং করোতি যঃ ।

 স সন্ন্যাসী চ যোগী চ নিরগ্নির্নচাক্রিয়ঃ ॥ ১

 অর্থ-ভগবান বললেন-যিনি অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ত্যাগ করেছেন তিনি সন্নাসী বা যোগীনন, যিনি কোন রকম ফলের আশা না করে তার কর্তব্য কর্ম করেন তিনিই যথার্থ সন্নাসী বা যোগী।

 যং সন্ন্যাসমিতি প্রাহুর্যোগং তং বিদ্ধি পান্ডব ।

 ন হ্যসংন্যস্তসঙ্কল্পো যোগী ভবতি কশ্চন ॥ ২

 অর্থ-হে পান্ডব যাকে সন্নাস বলা যায় তাকেই যোগ বলা যায় কারন ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে কখনো যোগী হওয়া যায় না।

 আরুরুক্ষোর্মুনের্যোগং কর্ম কারনমুচ্যতে ।

 যোগারুঢ়স্য তস্যৈব শমঃ কারণমুচ্যতে ॥ ৩

 অর্থ-অষ্টাংঙ্গ যোগ অনুষ্ঠানে যারা নবীন তাদের পক্ষে নিস্কাম কর্ম অনুষ্ঠান করাই উত্কৃষ্ট সাধন, আর যারা ইতিমধ্যে যোগরুঢ় হয়েছেন তাদেও পক্ষে সমস্ত কর্ম থেকে নিবৃত্তিই উত্কৃষ্ট সাধন।

 যদা হি নেন্দ্রিয়ার্থেষু ন কর্মস্বনুষজ্যতে ।

 সর্বসঙ্কল্প সন্নাসী যোগারুঢ়স্তদোচ্যতে ॥ ৪

 অর্থ-যখন যোগীর জড়সুখ ভোগের সমস্ত সংকল্প ত্যাগ করে ইন্দ্রিয় ভোগ্য বিষয়ের প্রতি আসক্ত রহিত হন তখন তারে যোগরুর বলা হয়।

 উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মনমবসাদয়েৎ ।

 আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ ॥ ৫

 অর্থ-মানুষের কর্তব্য তার মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেকে উদ্ধার করা, মনের দ্বারা আত্মাকে অধোপাতিত করা কখনো উচিৎ নয়। মন জীবের অবস্থা ভেদে বন্ধু ও শত্রু হয়।

 বন্ধুরাত্মাত্মনস্তস্য যেনাত্মাবাত্মনা জিতঃ ।

 অনাত্মনস্তুু শত্রুত্বে বর্ত্তেতাত্মৈব শত্রুবৎ ॥ ৬

 অর্থ-যিনি তার মনকে জয় করেছে তার মন তার পরম বন্ধু কিন্তু যিনি তা করতে অক্ষম তার মন তার পরম শত্রু।

 জিতাত্মনঃ প্রশান্তস্য পরমাত্মা সমাহিতঃ ।

 শীতোষ্ণসুখদুঃখেষু তথা মানাপমানয়ো ॥ ৭

 অর্থ- জিতেন্দ্রিয় ও প্রশান্ত যোগরুঢ় ব্যক্তি পরমার্থকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি শীত ও উষ্ণ সুখ দুঃখ্যে এবং সন্মান অপমানে অবিচালিত থাকেন।

 জ্ঞানবিজ্ঞানতৃপ্তাত্মা কূটস্থো বিজিতেন্দ্রিয়ঃ ।

 যুক্ত ইত্যচ্যতে যোগী সমলোষ্ট্রাশ্মকাঞ্চনঃ ॥ ৮

 অর্থ-যে যোগী শাস্ত্রজ্ঞান ও তত্ত্ব অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত, যিনি শীত উষ্ণ আদি দন্ধে নির্বিকার ও জিতেদ্রিয় এবং যিনি মৃতখন্ড প্রস্তর ও সুবর্ণে সর্বদর্শি তিনি যোগরুঢ় বলে কথিত হন।

 সুহৃন্মিত্রায়্যুদাসীনমধ্যস্থদ্বেষ্যবন্ধুষু ।

 সাধুষ্বপি চ পাপেষু সমবুদ্ধির্বিশিষ্যতে ॥ ৯

 অর্থ-যিনি সহৃৎ মিত্র শত্রু উদাসিন মধ্যস্ত মৎসর বন্ধু ধার্মিক ও পাপাচারি এবং সকলের প্রতি সমবুদ্ধি তিনিই শ্রেষ্ঠতা লাভ করেন।

 যোগী যুঞ্জীত সততমাত্মানং রহসি স্থিতঃ ।

 একাকী যতচিত্তাত্মা নিরাশীরপরিগ্রাহঃ ॥ ১০

 অর্থ-যোগরুঢ় ব্যক্তি সর্বদা একান্তে অবস্থিত হয়ে মনকে সমাধিযুক্ত করবেন। অসৎ পরিগ্রহ বর্জন করবেন এবং ফলাকাঙ্খা শূন্য হবেন।

 শুচৌ দেশে প্রতিষ্ঠাপ্য স্থিরমাসনমাত্মনঃ ।

 নাত্যচ্ছ্রিতং নাতিনীচং চৈলাজিনকুশোত্তরম্ ॥ ১১

 তত্রৈকাগ্রং মনঃ কৃত্বা যতচিত্তেন্দ্রিয়ক্রিয়ঃ ।

 উপবিশ্যাসনে যুঞ্জ্যাদ্ যোগমাত্মবিশুদ্ধয়ে ॥ ১২

 অর্থ-যোগ আসনের নিয়ম এই যে কুশাষনের উপর মৃগচর্মের আসন তার উপরে বস্ত্রাশন রেখে অত্যন্ত উচু বা অত্যন্ত নিচু না করে সেই আসন বিশুদ্ধ ভূমিতে স্থাপন করে তাতে আসিন হবেন। সেখানে উপবিষ্ট হয়ে চিত্ত ইন্দ্রিয় ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে চিত্ত শুদ্ধির জন্য মনকে একাগ্র করে যোগ অভ্যাষ করবেন।

 সমং কায়শিরোগ্রীবং ধারয়ন্নচলং স্থিরঃ

 সংপ্রেক্ষ্য নাসিকাগ্রং স্বং দিশশ্চানবলোকয়ন ॥ ১৩

 প্রশান্তাত্মা বিগতভীর্ব্রহ্মচারিব্রতে স্থিতঃ ।

 মনঃ সংযম্য মচ্চিত্তোযুক্ত আসীত মৎপরঃ ॥ ১৪

 অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।

 যুঞ্জন্নেবং সদাত্নানং যোগী নিয়তমানসঃ ।

 শান্তিং নির্ব্বাণপরমাং মত্সংস্থামাধিগচ্ছতি ।। ১৫

 অর্থ-এইভাবে যোগ সাধন করিয়া যিনি চিত্ত জয় করেন, তিনি আমার মধ্যেই নির্বাণ ও শান্তি লাভ করেন।

 নাত্যশ্নতস্তুু যোগোহস্তি ন চৈকান্তমনশ্নতঃ ।

 ন চাতিস্বপ্নশীলস্য জাগ্রতো নৈব চার্জ্জুন ।। ১৬

 অর্থ-অতি আহার, অনাহার, অতিনিদ্রা বা অতি জাগরণ কোনটিতেই যোগ সাদন হয় না।

 যুক্তাহারবিহারস্য যুক্তচেষ্টস্য কর্মষু ।

 যুক্তস্বপ্নাববোধস্য যোগো ভবতি দুঃখহা ॥ ১৭

 অর্থ-যিনি পরিমিত আহার বিহার করেন পরিমিত প্রয়াস করেন যার নিদ্রা জাগরন নিয়মিত তিনিই যোগ অভ্যাসের দ্বারা সমস্ত জড় জাগতিক দুঃখের নিবৃত্তি সাধন করতে পারেন।

 যদা বিনিয়তং চিত্তমাত্মন্যেবাবতিষ্ঠতে ।

 নিস্পৃহঃ সর্বকামেভ্যো যুক্ত ইত্যুচ্যতে তদা ॥ ১৮

 অর্থ-যোগী যখন অনুশীলনের দ্বারা চিত্তবৃত্তির নিরোধ করেন এবং সমস্ত জড় কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মাতে অবস্থান করে তখন তিনি যোগযুক্ত হয়েছে বলা হয়।

 যথা দীপো নিবাতস্থো নেঙ্গতে সেপমা স্মৃতা ।

 যোগিনো যতচিত্তস্য যুঞ্জতা যোগমাত্মনঃ ॥ ১৯

 অর্থ-বায়ু শুন্য স্থানে দীপ শিখা যেমন কম্পিত হয় না চিত্ত-বৃত্তির নিরোধ অভ্যাসকারি যোগীর চিত্তও তেমনই ভাবে অবিচলিত থাকে।

 যত্রোপরমতে চিত্তং নিরুদ্ধং যোগসেবয়া ।

 যত্রো চৈবাত্মনাত্মানং পশ্যন্নাত্মনি তুষ্যতি ॥ ২০

 অর্থ- যোগযুক্ত ব্যক্তি চিত্তরোধ করিয়া এবং শান্ত মনে আত্মদর্শন করিয়া আনন্দ লাভ করেন।

 সুখমাত্যন্তিকং যত্তদবুদ্ধিগ্রাহ্যমতীন্দ্রিয়ম্ ।

 বেত্তি যত্র ন চৈবায়ং স্থিতশ্চলতি তত্ত্বতঃ ॥ ২১

 অর্থ-আত্ম দর্শন হইলে যোগীর মনস্থির হয় এবং সেই অপূর্ব অবস্থায় বাক্যাতীত ও অতীন্দ্রিয় সুখ লাভ হইয়া থাকে।

 যং লব্ধা চাপরং লাভং মন্যতে নাধিকং ততঃ ।

 যস্মিন্ স্থিতো ন দুঃখেন গুরুণাপি বিচাল্যতে ॥ ২২

 অর্থ- এই সুখ লাভ করিলে অন্য সকল সুখই তুচ্ছ বোধ হয় তখন অতিশয় দুঃখেও মন বিচলিত হয় না।

 তং বিদ্যাদ্ দুঃখসংযোগবিয়োগং যোগসংজ্ঞিতম্ ।

 স নিশ্চয়েন যোক্তব্যো যোগোনির্ব্বিন্নচেতসা ॥ ২৩

 অর্থ-হে অর্জুন, যেই যোগে সুখ-দুঃখের লেশ মাত্র নাই, তুমি সেই যোগ অভ্যাস করিবে।

 সংকল্পপ্রভবান্ কামাংত্যক্ত্বা সর্বানশেষতঃ ।

 মনসৈবেন্দ্রিয়গ্রামং বিনিয়ম্য সমন্ততঃ ॥ ২৪

 অর্থ-অবিচালিত অধ্যবসায় এবং বিশ্বাষ সহকারে এই যোগ অনুশিলন করা উচিৎ সংকল্প জাত সমস্ত কামনা সম্পুর্ন রুপে ত্যাগ করে মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সর্বদিক থেকে নিবৃত্ত করা কর্তব্য।

 শনৈঃ শনৈরুপরমেদ্ বুদ্ধ্যা ধৃতিগৃহীতয়া ।

 আত্মসংস্থং মনঃ কৃত্বা ন কিঞ্চিদপি চিন্তয়েৎ ॥ ২৫

 অর্থ-ধৈর্যযুক্ত বুদ্ধি দ্বারা মনকে ধীরে ধীরে নিবৃত্ত করে এবং কিছু চিন্তা না করে সমাধিস্থ হতে হয়।

 যতো যতো নিশ্চরতি মণশ্চঞ্চলমস্থিরম্ ।

 ততস্ততো নিয়ম্যৈতদাত্মন্যেব বশং নয়েৎ ॥ ২৬

 অর্থ-যোগী তার চঞ্চল ও অস্থির মন যে বিষয় ধাবিত হয় সেই সেই বিষয়ে থেকে নিবৃত্ত করে আত্মাতে স্থির করবেন।

 প্রশান্তমনসং হ্যেনং যোগিনং সুখমুত্তমম্ ।

 উপৈতি শান্তরজসং ব্রহ্মভূতমকল্মসম্ ॥ ২৭

 অর্থ-ব্রহ্মভূত অবস্থায় প্রশান্ত চিত্ত, রজ বৃত্তি রহিত এবং নিস্পাপ হয়ে যার মন আমাতে নিবিষ্ট হয়েছে তিনিই পরম সুখ প্রাপ্ত হয়।

 যুঞ্জন্নেবং সদাত্মানং যোগী বিগতকল্মষঃ ।

 সুখেন ব্রহ্মসংস্পর্শমত্যন্তং সুখমশ্নুতে ॥ ২৮

 অর্থ-এইভাবে আত্মসংযমী যোগী জড় জগতে সমস্থ কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্ম সংস্পর্শরুপ পরম সুখ আস্বাদন করেন।

 সর্বভূতস্থমাত্মানং সর্বভুতানি চাত্মনি ।

 ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥ ২৯

 অর্থ-প্রকৃত যোগী সর্বভূতে আমাকে দর্শন করে এবং আমাতে সব কিছু দর্শন করেন। যোগযুক্ত আত্মা সর্বত্রই আমাকেই দর্শন করেন।

 যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি ।

 তস্যহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি ॥ ৩০

 অর্থ-যিনি সর্বত্র আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতেই সমস্ত কিছু বস্তু দর্শন করেন আমি কখনো তার দৃষ্টির অগোচর হই না এবং তিনিও আমার দৃষ্টির অগোচর হন না।

 সর্বভূতস্থিতং যো মাং ভজত্যেকত্বমাস্থিতঃ ।

 সর্বথা বর্ত্তমানোপি স যোগী ময়ি বর্ততে ॥ ৩১

 অর্থ-যে যোগী সর্বভূতে সংস্থাপিত পরমত্মারুপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন তিনি সর্ব অবস্থাতেই আমাতেই অবস্থান করেন।

 আত্মৌপম্যেন সর্বত্র সমং পশ্যতি যোহর্জুন ।

 সুখং বা যদি বা দুঃখমং স যোগী পরমো মতঃ ॥ ৩২

 অর্থ-হে অর্জুন যিনি সমস্থ জীবের সুখ ও দুঃখকে নিজের সুখ-দুঃখ বলে মনে করেন আমার মতে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী।

 অর্জুন উবাচ-

 যোহয়ং যোগস্তয়া প্রোক্তঃ সাম্যেন মধুসুদন ।

 এতস্যাহং ন পশ্যামি চঞ্চলত্বাৎ স্থিতিং স্থিরাম্ ॥ ৩৩

 অর্থ-অর্জুন বললেন- হে মধুসুদন তুমি যে যোগ উপদেশ করলে, আমার মনের চঞ্চল স্বভাব বসত আমি তা সত্ত্বেও নিশ্চল স্থিতি দেখতে পাচ্ছি না।

 চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্ ।

 তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুস্করম্ ॥ ৩৪

 অর্থ-হে কৃষ্ণ মন অত্যন্ত চঞ্চল প্রবল এবং শরির ও ইন্দ্রিয়াদি বিক্ষেপ উৎপাদক তাকে বিষয় বাসনা থেকে নিবৃত্ত করা অত্যন্ত কঠিন তাই এই মনকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভুত করার থেকেও কঠিন বলে আমি মনে করি।

 ভগবান উবাচ-

 অসংশয়ং মহাবাহো মনঃ দুর্নিগ্রহং চলম্ ।

 অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে ॥ ৩৫

 অর্থ-ভগবান বললেন- হে মহাবাহো মন যে দুর্বার ও চঞ্চল ততে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু হে কৌন্তেয় ক্রমশ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভুত করা যায়।

 অসংযতাত্মনা যোগো দুষ্প্রাপ ইতি মে মতিঃ ।

 বশ্যাত্মনা তু যততা শক্যোহবাপ্তুমুপায়তঃ ॥ ৩৬

 অর্থ-অসংযত ব্যাক্তির পক্ষে আত্মোউপলব্ধি দুসপ্রাপ্যঃ কিন্তু যার মন সংযত এবং যিনি যথার্থ উপায় অবলম্বন করে মনকে বশ করতে চেষ্টা করেন তিনি অবশ্যই সিদ্ধি লাভ করে।

 অর্জন ঊবাচ-

 অযতিঃ শ্রদ্ধয়োপেতো যোগাচ্চলিতমনসঃ ।

 অপ্রাপ্য যোগসংসিদ্ধিং কাং গতিং কৃষ্ণ গচ্ছতি ॥ ৩৭

 অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কৃষ্ণ শ্রদ্ধাবান সম্যক যত্নহীন যোগচ্যুত যোগী যোগে সিদ্ধি লাভ না করলে কোন মার্গে গমন করেন।

 কচ্চিন্নোভয়বিভ্রষ্টশ্ছিন্নাভ্রমব নশ্যতি ।

 অপ্রতিষ্ঠো মহাবাহো বিমূঢ়োব্রাহ্মণঃ পথি ॥ ৩৮

 অর্থ-হে মহাবাহো কৃষ্ণ ব্রহ্ম লাভের পথ থেকে বিমূঢ় হয়ে অপ্রতিষ্ঠ হয়ে পড়ে যে ব্যক্তি, সে কি ছিন্ন মেঘের মত একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

 এতন্মে সংশয়ং কৃষ্ণ ছেত্তুমর্হস্যশেষতঃ ।

 ত্বদন্যঃ সংসয়স্যাস্য ছেত্তা ন হ্যুপপদ্যতে ॥ ৩৯

 অর্থ-হে কৃষ্ণ তুমিই কেবল আমার এই সংসয় দুর করতে সমর্থ। কারন তুমি ছারা আর কেউ এই সংসয় দুর করতে পারবে না।

 ভগবান উবাচ-

 পার্থ নৈবেহ নামুত্র বিনাশস্তস্য বিদ্যতে ।

 ন হি কল্যাণকৃৎ কশ্চিতদ্ দুর্গতিং তাত গচ্ছতি ॥ ৪০

 অর্থ-ভগবান বললেন- হে পার্থ শূভানুষ্ঠানকারি পরমার্থ বিদের ইহলোক এবং পরলোকে কোন দুর্গতি হয় না, হে বৎস্য তার কারন কল্যান কারির কখনো অধঃগতী হয় না।

 প্রাপ্য পুন্যকৃতাং লোকানুষিত্বা শাশ্বতীঃ সমাঃ ।

 শুচিনাং শ্রীমতাং গেহে যোগভ্রষ্টোহভিজায়তে ॥ ৪১

 অর্থ-যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুন্যবানদের প্রাপ্য সর্গাদি লোক সকলে বহুকাল বাস করে সদাচারি গৃহে অথবা ধনীলোকদের গৃহে জন্ম গ্রহন করেন।

 অথবা যোগিনামেব কুলে ভবতি ধীমতাম্ ।

 এতদ্ধি দুর্লভতরং লোকে জন্ম যদীদৃশম্ ॥ ৪২

 অর্থ-অথবা যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান যোগীগনের বংশে জন্মগ্রহন করেন। এই প্রকার জন্ম এই জগতে অবশ্য অত্যন্তই দুর্লভ।

 অত্র তং বুদ্ধিসংযোগং লভতে পৌর্বদেহিকম্ ।

 যততে চ ততো ভূয় সংসিদ্ধৌ কুরুনন্দন ॥ ৪৩

 অর্থ-হে কুরুনন্দন সেই প্রকার জন্মগ্রহন করার ফলে তিনি পুনরায় তার পুর্বজন্মকৃত পারমার্থিক চেতনায় বুদ্ধি সংযোগ লাভকরে সিদ্ধি লাভের জন্য পুনরায় যত্নবান হন।

 পুর্বাভ্যাসেন তেনৈব হ্রিয়তে হ্যবশোপি সঃ ।

 জিজ্ঞাসুরপি যোগস্য শব্দব্রহ্মাতিবর্ততে ॥ ৪৪

 অর্থ-তিনি পুর্ব জন্মের অভ্যাস বশে যেন অবশ হয়েও যোগ সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই প্রকার যোগশাস্ত্র জিজ্ঞাসু পুরুষ যোগ অনুশিলন করার সময়ই বেদোক্ত সকাম কর্ম মার্গকে অতিক্রম করেন, অর্থাৎ সকাম কর্ম মার্গে যে ফল নিদৃষ্ট আছে, তার থেকে উৎকৃষ্ট লাভ করেন।

 প্রযত্নাদ্ যতমানস্তুু যোগী সংশুদ্ধকিল্বিষঃ ।

 অনেকজন্মসংসিদ্ধস্ততো যাতি পরাং গতিম্ ॥ ৪৫

 অর্থ-যোগী ইহ জন্মে পুর্বজন্মকৃত যত্ন অপেক্ষা অধিকতর যত্নকরে পাপ মুক্তহয়, পুর্ব জন্মের সাধন সঞ্চিত সংস্কার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করে পরম গতী লাভ করেন।

 তপস্বিভ্যোধিকো যোগীজ্ঞানিভ্যোপি মতোহধিকঃ ।

 কর্মিভ্যশ্চাধিকো যোগী তস্মাদ্ যোগী ভবার্জুন ॥ ৪৬

 অর্থ-যোগী তপস্বীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং সকাম কর্মিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ অতএব হে অর্জুন সর্ব অবস্থাতেই তুমি যোগী হও।

 যোগিনামপি সর্বেষাং মদ্গতেনান্তরাত্মনা ।

 শ্রদ্ধাবান্ ভজতে যো মাং স মে যুক্ততমো মতঃ ॥ ৪৭

 অর্থ-যিনি শ্রদ্ধা সহকারে মদ্গত চিত্তে আমার ভজনা করেন, তিনিই সব চেয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে আমার সঙ্গেযুক্ত এবং তিনিই সমস্ত যোগীদের খেকে শ্রেষ্ঠ।

 ওঁ তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 আত্মসংযমযোগো নাম ষষ্ঠোঽধ্যাযঃ

Comments

Popular posts from this blog

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 97 নিখিল বঙ্গ নমঃশূদ্র সম্মেলন বা খুলনা কনফারেন্স

Hindus are on the verge of extinction in the Grass of the Python, according to the helpless affectionate.

the sacrifice of Sri Guru Gurchand Thakur's whole life, I am trying to raise my mind