Tuesday, May 10, 2022

॥ শ্রাদ্ধবাড়ির খাওয়া দাওয়া ।।

যিনি  মারা  গেলেন  তিনি  যা যা ভালোবাসতেন সে সমস্ত  ষোড়শোপচারে রান্না  হয় । সকলেই  কব্জি ডুবিয়ে  খান । "দাদা  আর দুটো ইলিশ পাতুরি  দিন  তো  ! অপূর্ব  হয়েছে । বহু দিন  পর এমন রান্না  খেলাম  অথবা  আহা ,সন্দেশটা অসাধারণ  !! কোন  দোকানের  ?  দাদা  fish fry  টা repeat করতে  বলুন না " ইত্যাদি  ইত্যাদি ।   আমার  তো মনে  হয়  বৃদ্ধ কেউ  হলেও  তাঁর  সন্তান  ,স্বামী  তাঁদের  কি আনন্দ  করার  মতো  মানসিকতা  থাকে ? অনেক দিন  অসুস্থ  থাকলে  অথবা  এমন কোনও  অসুখ হলে  যেটি মানুষটিকে  মৃত্যুর  দিকেই  টেনে  নিয়ে  যাবে  , আমাদের মনে  হয়  এভাবে  বাঁচার চেয়ে  মৃত্যু  শ্রেয় । মুখে  বললে ও প্রিয়জনের  বিয়োগ  ব্যথা  একটুও  কি বাজেনা সদ্য সদ্য  ?  সময়  সব কিছু  ভোলায় ঠিক  । ঐ তেরো  চোদ্দ  দিনের  মাথায়  সেটা কি নিঃশ্বেস  হয়ে যায়  ?  প্রশ্নগুলো  মাথায়  ঘোরে ।

মহাভারতে, অনুশাসন পর্বে লেখা আছে, মৃত্যুভোজ কর্মচঞ্চলতা কমিয়ে প্রৌঢ়ত্ব প্রদান করে।

যে পরিবার মৃত্যু নামক বিপদের সম্মুখীন, সেই প্রবল বিপত্তির সময় সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ান, টাকা পয়সা থেকে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাদের সবরকম সাহায্য করুন কিন্তু এগারো কি তেরো দিনে শ্রাদ্ধবাড়ির খাবার পরিত্যাগ করুন। বহিষ্কার করুন এই কুরীতির।

মহাভারতের যুদ্ধ আসন্ন। শ্রীকৃষ্ণ দুর্যোধনের প্রাসাদে গিয়ে যুদ্ধ না করার অনুরোধ করেন ও সন্ধি প্রস্তাব রাখেন,  কিন্তু দুর্যোধন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। শ্রীকৃষ্ণ মনে কষ্ট পান এবং তিনি সেখান থেকে ফেরত যাবার জন্যে উদ্যত হন। সেই সময় দুর্যোধন ওনাকে খাবার খেয়ে যেতে অনুগ্রহ করে। তাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেন,

"সম্প্রীতি ভোজ্যানি আপদা ভোজ্যানি বা পুনৈঃ", অর্থাৎ,

"যে খাওয়াচ্ছে আর যে খাচ্ছে, দুজনেরই যদি মন প্রসন্ন হয়, তাহলেই খাবার খাওয়া উচিত।

কিন্তু যিনি খাওয়াচ্ছেন আর যিনি খাচ্ছেন, তাদের মনে যদি ব্যথা বেদনা থাকে, সেই পরিস্থিতিতে কক্ষনো ভোজন গ্রহণ করা উচিত নয়।"

হিন্দু ধর্মে ১৬ টি সংস্কার তৈরি করা হয়েছে। প্রথম সংস্কার গর্ভধারণ এবং ষষ্টদশ অন্ত্যেষ্টি। সপ্তদশ সংস্কার তৈরি করাই হয় নি, তাহলে শ্রাদ্ধের সংস্কার এল কোথা থেকে.??

কোন ধর্মগ্রন্থে শ্রাদ্ধের বিধান নেই বলেই জানি। কিন্তু আমাদের সমাজে ঈশ্বরই একমাত্র ভরসা।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, পন্ডিত শ্রীরাম শর্মা, স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদি মহান পুরুষেরা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জবরদস্ত বিরোধিতা করেছেন আজীবন।

যে খাবার মানুষ কান্নাভেজা মনে তৈরি করায়, যে খাবার অশ্রুজলে সিক্ত সেই খাবার নিকৃষ্ট খাবারের পর্যায় পড়ে।

শ্রাদ্ধ ভোজনের এই কুসংস্কার কে সম্পূর্ণ ভাবে বহিষ্কার করা উচিত আর এক সঠিক পথপ্রদর্শকের ভুমিকায় সমাজের সামনে এগিয়ে আসা উচিত।

জন্তু জানোয়ার থেকেও আমরা শিক্ষালাভ করতে পারি, যারা স্বজন মারা যেতে সেদিন খাবার না খেয়ে শোক ব্যক্ত করে।

চুরাশী লক্ষ যোনিতে মানব যোনি শ্রেষ্ঠ কিন্তু আমরাই এক যুবকের মৃত্যুর তেরো দিন পূর্ণ হবার পরে পাত সাজিয়ে লুচি ছোলার ডাল আর রকমারি খাদ্য আত্মীয় বন্ধুদের খাওয়াতে তৎপর হয়ে উঠি আর শোক ব্যক্ত করার ভান করি মাত্র। এর চেয়ে বড় নিন্দনীয় কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।

যদি আপনি এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন তাহলে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কারুর মৃত্যুর পরে তার শ্রাদ্ধ বাড়িতে ভোজন গ্রহণ করবেন না আর শ্রাদ্ধর এই প্রথাকে রোখবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

আমাদের প্রয়াসেই এই কুপ্রথা ধীরে ধীরে কিন্তু একদিন নিশ্চয় সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত হতে পারে।

শ্রাদ্ধবাড়ি মানব সমাজের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এক অভিশাপ..!!

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

বিঃ দ্রঃ - কারুর মনে আঘাত দেবার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি প্রথমেই তার সম্মুখ ক্ষমাপ্রার্থী

No comments: