লেখার নামটা পড়ে অনেক পাঠকেরই নাক চোখ একটু কুঁচকে যেতে পারে কেউবা পাশ কাটাতে পারেন।
* হিজড়া *
✍দেবাশীষ রায় চৌধুরী
(পুনঃপ্রকাশিত)
লেখার নামটা পড়ে অনেক পাঠকেরই নাক চোখ একটু কুঁচকে যেতে পারে কেউবা পাশ কাটাতে পারেন।
আমি কিন্তু সেদিন পাশ কাটাতে পারিনি।
কলকাতার দিকে একটা বিশেষ কাজ ছিল। বাস পেয়ে গেলাম। এমনকি জানলার ধারে একটা বসার সিটও পেয়ে গেলাম।
অনেকটা পথ। ঠান্ডা গরম হাওয়ায় একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ভাত ঘুমের মৌতাত নিচ্ছি।
এমন সময় তেনারা বাসে উঠলেন।
জনা তিনেক হবে। না, যাত্রী হিসেবে নয়। যাত্রীদের থেকে কিছু পয়সা তুলতে।
হঠাৎ চড়াৎ চড়াৎ হাততালির এবং কড়কড়ে গলার আওয়াজে রেশমি ঘুমটা চটকে যেতে একটু বিরক্তই হয়েছিলাম।
যারা মুখ ঘুরিয়ে বসেছিল বা ঘুমচ্ছিল প্রত্যেকেই ওদের আঙ্গুলের ঠ্যালায় দু এক টাকা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দিচ্ছিল। অভ্যাসগত ভাবে আমিও দশটা টাকা দিলাম। খুচরো টাকা না থাকায় একটু বেশিই গেল। পরিবর্তে ভালোবেসে মাথায় হাতও বুলিয়ে কি আশীর্বাদ করল কে জানে।
ওদেরই একজনের - একজন যাত্রীর দিকে চোখ পড়তেই কেমন যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেল। সেই যাত্রীর চোখের দৃষ্টির রেখা টেনে দেখা গেল এক ভদ্রমহিলার আনাবৃত উন্মুক্ত পিঠের ওপর স্থির দৃষ্টি আটকে আছে যেখানে দুটি সরল রেখার মত অসতর্ক অন্তর্বাসীয় ইলাস্টিক বিদ্যমান।
দু পা এগিয়ে গিয়ে মহিলার আঁচল টা নিয়ে সযত্নে ঢেকে দিল নারীর অসতর্ক লজ্জা অনেক সন্মান আর ভালোবাসা দিয়ে।
ওদের আর একজন জানতে চাইছিল
- কি হয়েছে র্যা ।
- মানুষের সাথে বাসে কিছু রাক্ষসও ওঠে বে, চোখ দিয়ে চাটছিলো শ্শালা।
চাবুক টা যেন সপাং করে আমাদের মুখের ওপর আছড়ে পড়ল।
আমিও ব্যপারটা আগেই খেয়াল করেছিলাম কিন্তু প্রতিবাদ তো করতে পারিনি।
এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বাসের গতির সাথে টাল খেয়ে পড়ছিলেন। সামনের সিটে একটা অল্প বয়সের ছেলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে না দেখার ভান করে বসেছিল।
- অ ভালোমানুষের ছেলে। বুড়ো বাপটা সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাচ্ছিস না।
নিজের বাপ হলে কি কত্তিস বে।
নিমেষে বৃদ্ধ বসলেন ছেলেটির আসনে।
আমরা পারিনি।
ওরা নেমে যাওয়ার আগেই একটা বাচ্চা ছেলে বাসে উঠেই কাঁদো কাঁদো ভাবে পয়সা চাইতে লাগল।
- বাবু আমি আর মা দু দিন কিছু খাইনি।
খুবই মায়া হচ্ছিল। দু এক টাকা দিতেও যাচ্ছিলাম। কিন্তু তখনই ওদের মধ্যে একজন খেঁকিয়ে উঠে বলল।
- কি বে ঢপ দিছ্ছিস্।
- না গো সত্যি বলছি। দেখবে চলো। বাবাটা দশদিন আগে মরে গেছে। আমি ফোর এ পড়তাম। ছেড়ে দিয়েছি।
- এই লে টাকা। চাল লিয়ে বাড়ি যা শ্শালা। মা বেটায় খেয়ে লিবি। কি বে খেতে পেলে পড়বি।
- হ্যাঁ - এ্যাঁ - এ্যাঁ
- তুই তো আমাদের থেকে বড় ভিখিরি বে। চল বে তোর বাড়ি দেখে আসি। এ্যাই চল্ল্ আজ ইনকাম ইস্টপ্। লে, আর এট্টা পুষ্যি বাড়লো।
ওরা সবাই নেমে গেল।
বাস হাওয়ায় উড়ে হু হু করে চলছে।
আমি দেখলাম ওরা তিন জন বাচ্চাটার হাত ধরে বাসের অনেক আগে আগে হেঁটে চলেছে।
আমাদের তীব্র গতিতে চলা বাস ওদেরকে ছূঁতেও পারছে না।
কোনোদিনও পারবে না।
ওরা যে অনেক এগিয়ে।🍀
✍দেবাশীষ রায় চৌধুরী
(পুনঃপ্রকাশিত)
লেখার নামটা পড়ে অনেক পাঠকেরই নাক চোখ একটু কুঁচকে যেতে পারে কেউবা পাশ কাটাতে পারেন।
আমি কিন্তু সেদিন পাশ কাটাতে পারিনি।
কলকাতার দিকে একটা বিশেষ কাজ ছিল। বাস পেয়ে গেলাম। এমনকি জানলার ধারে একটা বসার সিটও পেয়ে গেলাম।
অনেকটা পথ। ঠান্ডা গরম হাওয়ায় একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ভাত ঘুমের মৌতাত নিচ্ছি।
এমন সময় তেনারা বাসে উঠলেন।
জনা তিনেক হবে। না, যাত্রী হিসেবে নয়। যাত্রীদের থেকে কিছু পয়সা তুলতে।
হঠাৎ চড়াৎ চড়াৎ হাততালির এবং কড়কড়ে গলার আওয়াজে রেশমি ঘুমটা চটকে যেতে একটু বিরক্তই হয়েছিলাম।
যারা মুখ ঘুরিয়ে বসেছিল বা ঘুমচ্ছিল প্রত্যেকেই ওদের আঙ্গুলের ঠ্যালায় দু এক টাকা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দিচ্ছিল। অভ্যাসগত ভাবে আমিও দশটা টাকা দিলাম। খুচরো টাকা না থাকায় একটু বেশিই গেল। পরিবর্তে ভালোবেসে মাথায় হাতও বুলিয়ে কি আশীর্বাদ করল কে জানে।
ওদেরই একজনের - একজন যাত্রীর দিকে চোখ পড়তেই কেমন যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেল। সেই যাত্রীর চোখের দৃষ্টির রেখা টেনে দেখা গেল এক ভদ্রমহিলার আনাবৃত উন্মুক্ত পিঠের ওপর স্থির দৃষ্টি আটকে আছে যেখানে দুটি সরল রেখার মত অসতর্ক অন্তর্বাসীয় ইলাস্টিক বিদ্যমান।
দু পা এগিয়ে গিয়ে মহিলার আঁচল টা নিয়ে সযত্নে ঢেকে দিল নারীর অসতর্ক লজ্জা অনেক সন্মান আর ভালোবাসা দিয়ে।
ওদের আর একজন জানতে চাইছিল
- কি হয়েছে র্যা ।
- মানুষের সাথে বাসে কিছু রাক্ষসও ওঠে বে, চোখ দিয়ে চাটছিলো শ্শালা।
চাবুক টা যেন সপাং করে আমাদের মুখের ওপর আছড়ে পড়ল।
আমিও ব্যপারটা আগেই খেয়াল করেছিলাম কিন্তু প্রতিবাদ তো করতে পারিনি।
এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বাসের গতির সাথে টাল খেয়ে পড়ছিলেন। সামনের সিটে একটা অল্প বয়সের ছেলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে না দেখার ভান করে বসেছিল।
- অ ভালোমানুষের ছেলে। বুড়ো বাপটা সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাচ্ছিস না।
নিজের বাপ হলে কি কত্তিস বে।
নিমেষে বৃদ্ধ বসলেন ছেলেটির আসনে।
আমরা পারিনি।
ওরা নেমে যাওয়ার আগেই একটা বাচ্চা ছেলে বাসে উঠেই কাঁদো কাঁদো ভাবে পয়সা চাইতে লাগল।
- বাবু আমি আর মা দু দিন কিছু খাইনি।
খুবই মায়া হচ্ছিল। দু এক টাকা দিতেও যাচ্ছিলাম। কিন্তু তখনই ওদের মধ্যে একজন খেঁকিয়ে উঠে বলল।
- কি বে ঢপ দিছ্ছিস্।
- না গো সত্যি বলছি। দেখবে চলো। বাবাটা দশদিন আগে মরে গেছে। আমি ফোর এ পড়তাম। ছেড়ে দিয়েছি।
- এই লে টাকা। চাল লিয়ে বাড়ি যা শ্শালা। মা বেটায় খেয়ে লিবি। কি বে খেতে পেলে পড়বি।
- হ্যাঁ - এ্যাঁ - এ্যাঁ
- তুই তো আমাদের থেকে বড় ভিখিরি বে। চল বে তোর বাড়ি দেখে আসি। এ্যাই চল্ল্ আজ ইনকাম ইস্টপ্। লে, আর এট্টা পুষ্যি বাড়লো।
ওরা সবাই নেমে গেল।
বাস হাওয়ায় উড়ে হু হু করে চলছে।
আমি দেখলাম ওরা তিন জন বাচ্চাটার হাত ধরে বাসের অনেক আগে আগে হেঁটে চলেছে।
আমাদের তীব্র গতিতে চলা বাস ওদেরকে ছূঁতেও পারছে না।
কোনোদিনও পারবে না।
ওরা যে অনেক এগিয়ে।🍀
Comments