Monday, April 25, 2022

গায়ত্রী কে? আর সন্ধ্যাদেবীও বা কে?


#গায়ত্রী_মন্ত্ররুপা
======================================

        গায়ত্রী কে? আর সন্ধ্যাদেবীও বা কে?
শাস্ত্র বলছে,
     'যা সন্ধ্যা সা তু গায়ত্রী দ্বিধাভূত্বা প্রতিষ্ঠিতা'

অর্থাৎ যে সন্ধ্যা সেই ই গায়ত্রীদেবী৷ গায়ত্রী বা সন্ধ্যা দেবীর মাহাত্ম্য অস্বীকারের জায়গা নেই৷ কি সৌরী, কি গাণপত্য, শৈব, বৈষ্ণব বা শাক্ত৷ সন্ধ্যাদেবী সকলের আরাধ্যা৷ ইষ্ট ব্যাতীতও সন্ধ্যার উপাসনা করতেই হবে৷
          কেন করতে হবে?
শাস্ত্রানুযায়ী এই সন্ধ্যা বা গায়ত্রী হলেন দেবগণের আদিমাতা৷ বেদেও গায়ত্রী আছেন৷ তাই তাঁকে বেদমাতাও বলা হয়৷ আবার তন্ত্রশাস্ত্রেও তিনি আছেন৷ গায়ত্রী সর্বত্র৷
       আমার কথাগুলি কিছুজনের কাছে কটু লাগতেই পারে৷ তথাপি এগুলি আমার কথা নয়৷ এ শাস্ত্রবাক্য৷ বেদবাক্য৷ তন্ত্রশাস্ত্র ও স্বীকৃত৷ তাই অস্বীকারের জায়গা নেই৷
     ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব ও দ্বিজের দ্বিজত্ব বা অভিষিক্তের পদমর্যাদা ধরে রাখতে সন্ধ্যার উপাসনা করতেই হবে৷ বিকল্প পথ নাই দ্বিতীয়৷
    এই যে আমরা দেখি হাটে ঘাটে মাঠে বাজারে আজকাল বহুজনই পূজা করেন৷ তা ভালো কথা৷ এবং জনসমাজে একটা ভ্রান্ত মত রয়েছে বা প্রবাদ রয়েছে৷ 'চেনা বামুনের পৈতে লাগেনা'৷
কথাটা কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? যারা এ কথা বলে তাদের কি পৈতে বা শাস্ত্রের শুদ্ধভাষায় যাকে যজ্ঞোপবীত বলা হয়, সেটির মাহাত্ম্য কি জানা আছে? এই পৈতেটা কি খালি একগাছা সাদা সুতো? এটা কি চাইলে যেকেউ গলিয়ে নিয়ে পুজো করতে পারে? এতোটাই সস্তা কি সব জিনিস????
  আসলে যে বা যারা বলে তারা কখনো জানতেই চায়নি এই একগাছা সাদা সুতোর জন্য সারাজীবন কি ত্যাগ করতে হয়৷ কতটা করতে হয়৷ যদি জানত তবে এই উক্তি খাটত না৷ যদিও কথাটি একটি প্রবাদবাক্য৷ তথাপি অবজ্ঞার সুরেই এটি অনেকে বলেন৷
    যাই হোক, উপনয়ন বলে একটি সংস্কার রয়েছে সনাতনধর্মে৷ বৈদিক আচারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, বর্ণের উপনয়নের বিধান আছে৷ আবার তন্ত্রশাস্ত্র অনুযায়ী ব্রাহ্মণ আদি চতুর্বর্ণেরই তন্ত্রোক্ত সংস্কার নিয়ে উপনয়নের বিধান আছে৷ দুটি পদ্ধতি আলাদা হলেও আখেরে ঐ সাদা সুতোর জন্য নিয়মপালন একই৷ বর্তমানে বৈদিকাচারে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের বিশেষ উপনয়ন পদ্ধতি কেউ পালন না করায় ব্রাহ্মণবর্ণের উপনয়ন সংস্কার লক্ষ্য করা যায়৷ একজন ব্রাহ্মণের ঔরসে ও ব্রাহ্মণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করলে সেই সন্তান ব্রাহ্মণবর্ণের হয়৷ এবং নির্দিষ্ট সময়ে তার উপনয়ন সংস্কার দিতে হয়৷
এবার বিষয়টি হল একজন ছেলে ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মালেই কি সে যজন অর্থাৎ নিজের ঘরে পূজোপাঠ ও যাজন অর্থাৎ অন্যের ঘরে ঘরে গিয়ে পুজো করতে পারবে?
   একদমই নয়৷ ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও তাকে উপযুক্ত উপনয়ন সংস্কার নিতে হবে৷ যখন উপনয়ন হল তখন তাকে বলা হবে 'দ্বিজ'৷ অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জন্ম হওয়া বা জাত হওয়া৷ দ্বিজ হলে তখন সে যজন ও যাজনের অধিকার পাবে৷
এবার এখানেও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ সে উপনয়ন পেলে বা দ্বিজ হয়ে গেলেই কি যজন যাজনের অধিকারী? নাহ৷ তারজন্যও সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য আছে৷ তা পালন না করলে পূজো করার অধিকারী হবেনা‌৷ সেটি হল নিত্যসন্ধ্যাবন্দনা৷ কোন উপনীত ব্রাহ্মণ বা একই ক্ষেত্রে অভিষিক্ত কোন সাধক যদি নিত্যসন্ধ্যাবন্দনা না করে তবে সে পতিত৷ বা শুদ্রের অধম৷ যিনি প্রাতঃকৃত্য করেন না, যিনি সন্ধ্যাহ্নিক করেন না তিনি শুদ্রের অধম৷ তাই তিনি ব্রাহ্মণ হলেও বা অভিষিক্ত সাধক হলেও তিনি কোন পূজাপাঠের অধিকারী হবেন না৷ সন্ধ্যাহীন ব্যক্তি কোন কার্য্যেই অধিকারী না৷ এই ত্রিসন্ধ্যার ওপর ব্রাহ্মণ্য অধিষ্ঠিত৷ অতএব বুঝলেন আশা করি যে ব্রাহ্মণ হয়ে কেবল জন্ম নিলেই হবেনা৷ যথাযোগ্য কর্মের দ্বারা তার ব্রাহ্মণ্য রক্ষাও করতে হবে৷
    যে ব্রাহ্মণ কোনদিন ভোরে উঠে প্রাতঃকৃত্যাদি সন্ধ্যাহ্নিক করেন না৷ তিনি অন্যের বাড়ি পূজা করলে বা নিজের বাড়ি করলে অভিচার স্বরুপ৷ তা কোন কাজেই লাগবেনা৷ বৈদিক উপনীত ব্রাহ্মণের কয়েকটি পর্ব্বদিনে ও শ্রাদ্ধদিনে সায়ংসন্ধ্যা নিষেধ হলেও তান্ত্রিক সন্ধ্যা কোনদিনই বন্ধ করা যায়না৷ সংস্কারের দিন থেকেই আজীবন আমৃত্যু সন্ধ্যা কর্তব্য৷ নচেৎ নিত্যকর্ম বা নৈমিত্তিক কর্মে কোন অধিকার হবেনা৷
     
হর হর মহাদেব শ্রীদুর্গা কালী কালী৷৷ 🌺🌺

No comments: