Sunday, April 24, 2022

পৃথিবীতে যত ধর্ম মত ও পথ আছে, প্রত্যেক ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু ভাল সাধু , বুদ্ধিমান ও পবিত্র ব্যক্তি আছে

জয় শ্রী হরি।

"নিম্ন বিষয় টি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ"

পৃথিবীতে যত ধর্ম মত ও পথ আছে, প্রত্যেক ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু ভাল সাধু , বুদ্ধিমান ও পবিত্র ব্যক্তি আছেণ, এবং তাদের ই শত কর্ম ও মানবিক চিন্তা ধারার জন্য নিজ নিজ ধর্ম গুলি আজ ও চলছে। যেমন শ্রী হরি চাঁদ ঠাকুর তার দ্বাদশ বাণীর  মধ্যে একটা বাণীতে বলেছেন " চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতি ভেদ করিবে না " । ভারতে এর একটা জ্বলন্ত উদাহরণ, ডাক্তার আব্দুল কালাম জি, বিশাল ভারত ভূমির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, তিনি জাতিতে মুসলমান ছিলেন, কিন্তু তার পবিত্রতার, এবং সাধু কর্মের জন্য সমস্থ মানুষের কাছে বরণীয় ছিলেন আজ ও আছে। ঠিক তেমনি শ্রী গুরু চাঁদ ঠাকুরের সময় ছিলেন ডক্টর সি.এস. মিড , ডিক সাহেব, এবং পাঁচ কড়ি মিয়াঁ । তারা সকলেই বরণীয় এবং স্বরোনীয়।
ঠীক তেমনি একটা স্বরোনীয়  ঘটনা আমার  সঙ্গে ঘটে ছিল, যখন জীবনে প্রথমবার বাংলাদেশে  নিজের মানুষদের খুজে বের করবো এবং  মতুয়া তীর্থ রাজ ওড়াকান্দি দর্শন করবো সেই উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম।
ইং:২০১৮, এপ্রিল মাসের ৩০ তারিক দার্জিলিঙ এবং সিকিম পরিবার সহ ঘুরে এসে , কোলকাতায় বসে হঠাৎ সিদ্ধান্ত করলাম পরিবার কে কলকাতা রেখে আমরা ছেলেরা বাংলাদেশ যাবো। কারন প্রথমবার যাবো তাই পরিবার সঙ্গে নিয়ে কোথায় উঠবো, কারন 48 বৎসর পর জীবনে প্রথমবার বাংলাদেশে যাচ্ছি, আত্মীয় স্বজন কেউ কে চিনি না, বাবা মায়ের মুখে যে টুকু শুনেছে সেই জ্ঞান নিয়ে সাহস করে আমরা চারজন  আমি,  দুজন শিক্ষক  তারা হলেন শ্রী কৃষ্ণ প্রসাদ বিশ্বাস, শ্রী বিনয় কৃষ্ণ সরকার, মৃণাল চন্দ্র হালদার (ভাগ্নে) উক্ত তরিকে বোনগা পেট্রাপোল বোর্ডার দিয়ে যাত্রা করলাম।
মাজে একটু বলে যাই, আন্দামান দ্বীপ থেকে যাত্রা করার ৬ মাস আগে দুজন মুসলমান ভদ্রলোক আন্দামান সফরে এসেছিলেন এবং তারা আন্দামানের রাজধানি পোর্ট ব্লেয়ার স্থিত রিপিল রিসর্ট নামে এক হোটেলে  দুদিনের জন্য ছিলেন। সেই দু ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার এবং ভাগ্নে মৃণালের সঙ্গে ঘন্টাখানীক আলাপ হয়ে ছিল, তখন তিনি কথা প্রসঙ্গে আমন্ত্রণ করলেন যে বাংলাদেশ আসলে ঢাকা স্থিত তার বাস ভবনে একবার যাওয়ার জন্য এবং একটা ভিসিটিং কার্ড ও আমাকে দিয়েছিল। কিন্তু সে সময় স্বপনেও ভাবি নাই যে বাংলাদেশ যাবো।
মজার ব্যপার হল যখন ভিসা করবো, ঐ ভিসা তে যার বাড়িতে যাবো সেই লোকের নাম এবং ঠিকানা সহ মোবাইল নম্বর দিতে হয়। কিন্তু আমাদের কাছে কেউর  সঠিক ঠিকানা জানা ছিল না, তখন আমি সেই ব্যক্তির দেওয়া ভিসিটিং কার্ড টা দিয়ে তার নাম দিয়ে ভিসা বের করি, তখন ঐ ভদ্র লোকের নাম টা পড়লাম,তার নাম হল ফির্দোজ আলি খান  ঠিকানা বিশ্ব কুড়ির রোড, ঢাকা।
মনের ভিতর একটা আসঙ্ক্ষ হচ্ছিল, যে নূতন আজানা যায়গা, তবু ও মন কে সংযত করে  বাবা মা ও শ্রী হরি গুরু চাঁদের নাম স্বরণ করে বাকি তিন জন কে নিয়ে পাড়ি দিলাম বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে । সর্বদা মনের ভিতরে দুটি গানের লাইন অন্তরে অন্তরে গেয়ে চলেছিল সে হল " শ্রী হরি চাঁদের রূপে নয়ন দিয়ে আজ ঘরের বাহির হয়েছি"  আর " শ্রীধাম ওড়াকন্ধি চল যাই,এমন দিন আর হবে না ভাই "। 
আর বেশী হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছিল যে আজ থেকে 48 বৎসর পূর্বে ছোট্ট একটা শিশু রাতের আধারে মা বাবা তাঁকে বুকে আক্রে ধরে ভারতে চলে এসেছিলেন । ধীরে ধীরে তাদের আচলে বড় হলাম, আজ ফেলে আসা সেই সোনার দেশে যাচ্ছি কিন্তু আজ তারা সঙ্গে নেই, তারা আমাদের রেখে সেই আজানার দেশে চলে গেছে, সেই শিশু আমি অধম, আজ আমি বাবা হয়েছি এবং আপন জনদের খুজে পাওয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করলাম বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ।

লিখতে গেলে বড় হয়ে যায় কেউ পড়তে চায় না, তাই সংক্ষেপে বলছি।।আত্মীয় স্বজনদের খুব কষ্ট করে খুজে বের করলাম। যেখানে আমার জন্ম হয়েছিল সেই পিতৃ ভিটা জিকে বাড়ির (গোপাল গঞ্জ) মাটিতে স্নেহের দায়ে বহু সম্মানে বারেক ঠেকান মাথা,অস্রুসিক্ত নয়নে জন্ম ভিটার একটু মাটি সঙ্গগ্রহ করলাম , এবং মায়ের মুখে শুনেছিলাম যে ঘরের কোনায় একটা গাব গাছ ছিল , সত্যি দেখলাম সেই গাব গাছটি আজ দাড়িয়ে রয়েছে, চোখে জল আর রুক্ষতে পারলাম না, মা বলে তাঁকে একটা প্রণাম করলাম এবং তাঁকে স্বাক্ষী রেখে এলাম যে আমি এসেছিলাম সেই দুঃখীনি মায়ের বাড়িতে , যেখানে এই অধোম জন্ম গ্রহণ করে ছিল। ঘাটে মাঠে বাটে কয়েকদিন কাটিয়ে যাত্রা করলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে সেই শ্রী ফির্দোস আলি খান দাদার বাড়িতে, শুনেছি মা বাবার মুখে স্বপনের ঢাকা শহরের কথা, তাই মন টা বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল ঢাকা যাবো। ভিসিটিং কার্ডের ঠিকানা অনুসারে মোবাইল ফোন যোগে শ্রী ফির্দোস আলি দাদার সঙ্গে যোগযোগ করে  বললাম আমরা ঢাকা আসছি, শুরুতে উনি অবাক হলেন পরে খুব বিনয়ী ও উত্সাহের সঙ্গে আমাদের আমন্ত্রণ এবং অধির আগ্রহে প্রতীক্ষা করছিলেন। এবং তিনি  , কিভাবে কোথায় ঢাকা পৌছাতে হবে সমস্থ বিবারণ বলে দিলেন। তখন পবিত্র রাম যান মাস চলছিল। মনের ভিতর ভয় হচ্ছিল, কিন্তু কেউ কে প্রকাশ করিনি কারন বাকি তিন জন আমার উপর ভরসা করে আমার সাথে এসেছে। মুক্সুদ্পুর থেকে বাসে করে , উনি যে ভাবে বলেছেন, ঠিক  সেই ভাবে একটা স্টেশনে নামলাম, তখন বাজে বিকেল 4 টা , দেখি দুজন যুবক ছেলে একটা গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে আছে, নামতেই ওরা জিগস্সা করল, আপনি কি সুধীর বিশ্বাস ?।হ্যা বলতেই আমাদের বেদীং সব গড়িতে তুলে সকলে এক সঙ্গে ঐ গাড়িতে গেলাম। গাড়ী টা খুব আধুনিক এবং খুব সুন্দর, পরে শুনলাম বহুদামী গাড়ী (70 লখ্য টাকার গাড়ী) । ধীরে ধীরে বিশ্ব কুড়ির রোডের পাশে গাড়ি দাড়  করানোর সাথে সাথে আর চার জন লোক এসে আমাদের লিপ্টে করে একটা দশ মঞ্জিলা বিল্ডিং নিয়ে গেলেন, খুব ভয় হচ্ছিল , একে তো অচেনা ব্যক্তি, দেখি লীপটের সামনে আলি দাদা  দাড়িয়ে আমাদের কে স্বজত্নে ভিতরে নিয়ে গেলেন, তখন সন্ধ্যা 6 টা। বাকি দুজন খুব ভয়ে ভয়ে কথা বলছে , আমি ওদের সান্তণা দিয়ে বললাম ভয় নেই বাবা গুরু চাঁদ রয়েছেন । সঙ্গে সঙ্গে ফির্দোস দাদা, বয়স 55 yrs হবে, বললেন এসো আমরা একসঙ্গে ইফতার করবো। বিভিন্ন ধরনের ফল বড় বড় থালায় সাজিয়ে আমাদের দিলেন এবং নিজে ও খেলেন। তিনি রোজা রাখেন নি ,কারন ওনার সুগারের রোগ আছে বলল। সেখান থেকে পাশেই একটা তিন তারা হোটেল কাম রেস্টুরেন্ট এ আমাদের দুটি রূম দিলেন।।এবং রাত্রের খাবার আমরা ঐ হোটেলে করলাম। এক এক রাত একট একটা রুমের ভাড়া 10 হাজার  টাকা করে।  আমরা একটু চিন্তিত হলাম,কিন্তু আমি বললাম কোনো চিন্তা করো না,যা হবে দেখা যাবে, মন টা শক্ত করে আনন্দ করো। এই ভাবে অতি যন্ত ও ভক্তির সহিত তিন দিন সম্পূর্ণ ঢাকা শহর আমাদের দাদার নিজের দামিয় গাড়ী দিয়ে ঘুরালেন, যেমন ঢাকেশ্বরী মায়ের মন্দির, শহিদ বেদি, বঙ্গ বন্ধুকে যে ঘরে হত্যা করেছিল, এবং আর দার্শনিক পর্যটক স্থল, বড় বড় মল ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন কেবল মাত্র পদ্ম সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল সেই সব বিশিষ্ট স্থানে আমাদের ঘুড়ালেণ।

আসার একদিন আগে শ্রী ফির্দোস আলি খান  দাদার সম্পর্কে জানলাম যে, উনি বাংলাদেশের কয়েক জন ধনি ব্যক্তির মধ্যে একজন, উনি হিন্দু মুসলিম সমস্থ মানুষের জন্য একজন উপকারী বন্ধু, উনি 12 জন গরিব হিন্দু ছেলেদের বিদেশে ডাক্তারি (MBBS)পড়ার জন্য নিজে তাদের ব্যঙ্কে সিকিউরিটির টাকা জমা  দিয়েছেন। বাংলাদেশে ফির্দোস দাদার " Standard ব্যাঙ্ক"  নামে  170 টি শাখা চলছে। মুসলিম ভাইদের জন্য ৮ কোটি টাকা দিয়ে একটা সুন্দর  মর্জিদ বানিয়ে দিয়েছেন। 20 টা দেশের মন্ত্রী ভিভাগদের কোট সেলাই করার টেন্ডার পেয়েছেন। তার ঢাকা শহরে দশ তলার বহু বিল্ডিং রয়েছে, সেখানে ফিল্ম আর্টিস্ট, ক্রিকেট খেলোয়ারা ভাড়া থাকেন।
এত বড় ধনি ব্যক্তি কিন্তু তার সাজ পোশাক কথা বার্তা অতি সাধারন মানুষের মত। কোন গরিমা নেই, অনেক মুসলমান ভাইয়েরা আমাকে জিগস্সা করেছিলেন যে  , উনি আপনাদের কি হন ?  আমি বললাম আমার দাদা, কিন্তু তারা বলে আপনি ত হিন্দু ?
সত্যি উনি একজন সাধু ব্যক্তি, যানি না আমার মধ্যে উনি কি খুজে পেয়েছেন,  হয়ত এটা ও শ্রী গুরু চাঁদের ইচ্ছা।
একদিন রাত্রে  আমি শ্রী ফির্দোস  আলী দাদা কে ধীরে ধীরে  আমাদের মতুয়া দর্শন সম্মন্ধে বললাম  । শ্রী তিন কড়ি মিয়াঁর কথা, শ্রী সি.এস.মিড সাহেবের কথা অতি ভক্তির সঙ্গে বললাম। উনি খুব মন যোগ দিয়ে শুনলেন। অবশেসে আমি ওনাকে বললাম " দাদা আপনি আমার বাবা হরি চাঁদের লীলা ভূমি ,শ্রী ওড়াকান্দি ধামে এসে এমন কিছু একটা সুন্দর কাজ করে দেবেন যা চিরদিন আমরা তিন কড়ি মিয়াঁর মত আপনাকে মনে করবো।"  শ্রী ফির্দোস আলী  দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পরে বললেন, "ভাই সুধীর তুমি যখন বলছ  তুমি আবার যখন বাংলাদেশ আসবে আমি অবশ্য তোমার সাথে শ্রীধাম ওড়াকান্দি যাবো "।  আমি শুনে খুব ভাবুক হলাম এবং দু নয়নে জল ছল ছল করছিল।
আমরা ঢাকায় যাওয়ার একদিন আগে  শ্রী ওড়াকান্দি ধামে গিয়েছিলাম।  তাই বড় আশা করে আছি, এবার বাংলাদেশ গেলে শ্রী ফির্দোস আলি দাদা কে নিয়ে শ্রীধাম ওড়াকন্ধি যাব।
তিনদিন ঢাকা শহরে ছিলাম, আশার আগের দিন রাত্রে ফির্দোস দাদা এবং তার পরিবার সকলে এসে আমাদের চার জন কে নূতন বস্ত্র দিলেন। এবং অস্রুসিক্ত নয়নে একে অপরে আলিঙ্গন করলাম।  পরদিন সকালে আমরা হোটেলের থাকা ও খাবারের পয়সা/ বিল দিতে গেলাম, হোটেল মালিক বললেন আপনাদের বিল স্বং ফির্দোস দাদা দিয়ে গেছেন, আমি বললাম সেটা কেন হবে, কিন্তু ফির্দোস দাদা কোন কথা শুনলেন না,  তিনি তিনদিনে 50 হাজার টাকা বিল হয়েছিল সেটা নিজে আমাদের অজান্তে দিয়ে দিয়েছিলেন। এবং যশোরে আসার জন্য চার টি অতি আধুনিক বাসের টিকিট আমার হাতে খুজে দিয়ে নিজের সেই গাড়িতে  করে, আমাদের বাসে উঠিয়ে দিলেন। আসার সময় উনি কেদে দিলেন এবং সেই সঙ্গে আমি ও খুব ভাবুক হয়ে গিয়েছিলাম।
বাসে আসার সময় মনটা উদাস হয়ে বার বার প্রশ্ন জাগছিল , এটা কি হল, কেন হল, কে করাল, বাবা হরি চাঁদ সে নিজে তার ভক্তদের এই ভাবে সম্মান দিল, বাসে বসে একা একা খুব কান্না করলাম এবং সেই সাথে  বার বার মায়ের কথা মনে পড়ছিল আর নয়নে অশ্রু জল ঝড়ে ঝড়ে পড়ছিল।
এই হল আমার জীবনে একটা বড় পাওয়া। আর সেই দিনের অপেখা করছি , কবে শ্রী ফির্দোস দাদা কে নিয়ে শ্রীধাম ওড়াকান্দি  যাবো।  কিছু ছবি নিম্নে দিলাম।

একটু ধর্জ্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

জয় শ্রী হরি।

সুধীর, আন্দামাণ দ্বীপ
23/4/2022