Wednesday, April 19, 2023

মহিলাদের চেয়ে পুরুষের লজ্জা বেশী!


একবার এক স্কুলে স্থানীয় মহিলারা একটি সাধারণ সভার আয়োজন করেছিলেন।
সেখানে কথা বলতে যেয়ে এক মহিলা বললেন যে, "মহিলাদের চেয়ে পুরুষের লজ্জা বেশী।"
কথাটা শেষ করতে না করতেই একজন ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়ালেন। প্রতিবাদের সুরে বললেন, 'দিদি, আপনার কথাটা মানতে পারলাম না। পুরুষ মানুষের আবার লজ্জা দেখলেন কোথায়?
ওরা তো বেশরম- বেলাজ।
প্রথম মহিলা দ্বিতীয় মহিলাকে থামিয়ে বললো, "দিদি, আপনি কি করেন?
তিনি বললেন, এই স্কুলে শিক্ষকতা করি।
প্রথম মহিলা বললেন, কয়জন পুরুষ আর কয়জন মহিলা শিক্ষক আছেন এই স্কুলে?
তিনি বলেন, আমরা সমান সমান- চার জন পুরুষ চার জন মহিলা। হাসি মুখে উত্তর দিলেন ভদ্রমহিলা।
প্রথম মহিলা বললেন, "দিদি আপনি কি কোন দিন আপনার পুরুষ সহকর্মীদের পেট-পিঠ দেখেছেন?"
ভদ্রমহিলা ভ্রু কুচকে তাকালেন।
বললেন তার মানে..?
প্রথম মহিলা বললেন, "দেহ প্রদর্শন করা নির্লজ্জতা। কিন্তু এই কাজটা সাধারণত পুরুষেরা করে না। আপনার যদি কখনো ইচ্ছে হয়, আপনার কোন পুরুষ সহকর্মীর পেট কিংবা পিঠ দেখবেন, তাহলে তাকে ডেকে বলতে হবে ভাই আপনার শার্ট কিংবা পাঞ্জাবীটা একটু উপরে তুলুন তো, আমি আপনার পেট কিংবা পিঠ তা একটু দেখব।
সেই ভাই তখন নির্ঘাত আপনাকে পাগল মনে করবে।
আর আপনার পেট-পিঠ কতভাবে কত এ্যাংগেলে কত শত পুরুষ- মহিলা দেখছে তার কি কোন হিসাব আছে?

পুরুষেরা পেট/পিঠ বের করা পোষাক পরে বাইরে কিংবা অফিস-আদালতে যাবে না, এটা তাদের স্বাভাবিক লজ্জা। যা থাকা উচিত ছিল মেয়েদের। অথচ মেয়েরা কিভাবে গলাটা আর একটু বড় করে কাঁধ এবং বুকের উপরি অংশ বের করা যাবে, কিভাবে জামার হাতার উপরি অংশ কেটে মাসেল দেখানো যাবে- সেই
চেষ্টা করে।

লজ্জাহীনতা মেয়েদের অস্থিমজ্জায় এমনভাবে ঢুকে গেছে যে, এ বিষয়টাকে তারা লজ্জার বিষয় বলে মনেই করে না!

অনুগল্প : লজ্জা

Monday, April 10, 2023

মুশকিল হয়েছিল, শ্মশানে তাঁর পাদুটো কিছুতেই পুড়ছিল না!

তিনি হলেন আটচল্লিশ ইঞ্চি ছাতিওয়ালা ফুটবলার গোষ্ঠ পাল।
খালি পায়ে ফুটবল খেলতেন।
অপর দিকে ইংরেজ খেলোয়াড়রা খেলত বুট পরে।
ইংরেজ খেলোয়াড়রা  গোষ্ঠ পালের দুর্ভেদ্য চীনের প্রাচীর,  কিছুতেই ভেদ করতে পারত না।
 লাথি মেরে বল উড়িয়ে দিত গোষ্ঠ পাল ইংরেজদের দিকে।
শোনা যায়,ছোটবেলায় স্বামী বিবেকানন্দের বাণী  পড়ে ফুটবল খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
স্বামীজি বলেছিলেন,
গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভাল।
তাই গোষ্ঠ পালের মনে হল বলে লাথি মেরে ইংরেজের পদাঘাতের জবাব  দিতে হবে।
এভাবেই গোষ্ঠ পালের ফুটবলে মিশে গিয়েছিল ফুটবল আর দেশপ্রেম।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক  নেতা অতুল্য ঘোষ একসময় বলেছিলেন যে, 
গোষ্ঠ পাল স্বাধীনতা সংগ্রাম না করেই  একজন  স্বাধীনতা সংগ্রামী। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম আলাপে  সস্নেহে বলেছিলেন, 
তুমিই তাহলে চীনের প্রাচীর গোষ্ঠ পাল! 
১৯৬২ সালে ভারতবর্ষে  তিনিই ফুটবলে  প্রথম পদ্মশ্রী সম্মান লাভ করেন।
তিনি ছিলেন একজন মনেপ্রাণে বাঙালি।
রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির আপ্তসহায়ক নির্দেশ পাঠালেন, গোষ্ঠ পাল যেন গলাবন্ধ কোট পরে আসেন।
গোষ্ঠ পাল জানিয়ে দিলেন তিনি কোট পরবেন না।  
ধুতি পাঞ্জাবী পরে পুরস্কার নেবেন।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে গোষ্ঠ পালের কথাই মেনে নেওয়া হল।
এই হলেন গোষ্ঠ পাল!
 গোষ্ঠ পাল মারা যাওয়ার পর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল।
আগুনে মৃতদেহের  সব পুড়ে গেল।
কিন্তু  আগুনে  গোষ্ঠ পালের পা দুটো কিছুতেই পুড়ছে না দেখে গোষ্ঠ পালের ছেলে শৌরীশ পাল নিমতলা শ্মশানে উপস্থিত  ফুটবলার শৈলেন মান্নাকে বললেন,  বাবার পা দুটো  পুড়ছে না কেন? 
 শৈলেন মান্না তখন বলে উঠলেন,  গোষ্ঠদার পা যে " সোনার পা।" 
অত সহজে কি পোড়ে?
গতকাল ছিল বিখ্যাত ফুটবলার গোষ্ঠ পালের প্রয়াণ দিবস ( ১৮৯৬ - ১৯৭৬)।  
আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রইল।

© পীযূষ দত্ত
তথ্যসূত্রঃ
গোষ্ঠ পালের জীবন নিয়ে নানা লেখা  ও পত্রিকার প্রতিবেদন।
এর ওপর ভিত্তি করে আমার এই লেখা।

Follow অহর্নিশ - Ahornish

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের বাণী


১. নির্বোধ সরল জাতি মূল নাহি বোঝে।
যে যাহা বলিয়া যায় তাই শুনে মজে।
কি বলিব দুঃখের কথা বুক ফেটে যায়, 
শত্রু কি বান্ধব এরা চেনে নাকো হয়।।

২.বোকা যদি নমঃশূদ্র নীতি নাহি জানে 
শ্রাদ্ধ বিবাহে ব্যয় করে অকারণে।।

৩. ব্রাহ্মণের দুর্নীতি শুরু হলো জানা 
ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতি জেগে ওঠে- ঘৃণা। 
ব্রাহ্মণ রচিত সব অভিনব গ্রন্থ 
ব্রাহ্মণ প্রধান মার্কা বিজ্ঞাপন যন্ত্র।।
ব্রাহ্মণের স্বার্থে তারে শাস্ত্র লেখে তারা।
শাস্ত্রের বিধান মানে অব্রাহ্মণ যারা।।
ব্রাহ্মণ কি অধিকারী দীক্ষাগুরু যারা।
ফাঁকি দিয়ে প্রণামী টাকা নেয় তারা।।
ব্রাহ্মণ প্রধান মার্কা যত শাস্ত্র গ্রন্থ 
সবাই জানিবে শুধু শোষণের যন্ত্র।। 

৪. ভেগধারী বৈষ্ণবের ভিক্ষা নাহি দিবে।
ভিক্ষা দিলে ব্যাভিচার বাড়িয়া  চলিবে।।

৫. স্বর্গের চাবি রাখে ব্রাহ্মণ সুজন ,
পদধুলি দানে করে পাপের মোক্ষন।
জন্ম মৃত্যু বিবাহ আদি কিছু ফাঁক নাই, 
পদে পদে বিপ্র পদে কিছু দেয়া চাই।।

৬.দেবতা মন্দির সবে গড় ঘরে ঘরে।
নিত্যপূজা কর সেথা সরল অন্তরে।।
এইখানে বলি আমি এক সমাচার।
দেবতা মন্দিরে পূজা করিবে কাহার।।
বিশ্বভরে এই নীতি দেখি পরস্পর।
যে যারে উদ্ধার করে সেই তার ঈশ্বর।।
ক্ষত্রগনে রামচন্দ্র রক্ষা করেছিল।
রামকে ঈশ্বর বলি ক্ষত্রিয় মানিল।।
খৃষ্ট আসি জন্মিল খৃষ্টানের ঘরে।
যতেক খৃষ্টান তারা তাঁর পূজা করে।।
এইরূপে খৃষ্ট, কৃষ্ণ কিংবা মহম্মদ।
বিভিন্ন জাতির তারা পরম সম্পদ।।
তোমাদের এইকুলে হরি অবতার।
দয়াকরে নমঃশুদ্রে করিল উদ্ধার।।
তাঁর পূজা কর সবে তাঁর ভক্ত হও।।
নিজ ঘরে ভগবান ফেলে কোথা যাও।।

৭. নরাকারে ভূমন্ডলে যত জাতি আছে ,
এক জাতি বলে মান্য পাবে মোর কাছে।।
       শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ চরিত।

নিচের ছবিটি খুবই দুর্লভ একটি ছবি।



ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃতদেহ। শশ্মানে নিয়ে যাওয়ার পর বিদ্যাসাগরের মৃতদেহের যে দুটি ছবি তোলা হয়েছিল এ ছবিটি তাদের মধ্যে একটি।মৃতদেহকে বসিয়ে রাখাতে ছবিটি অস্বাভাবিক এবং দৃষ্টিকটু হয়েছে, বসে আছেন বাঁদিক থেকে ঈশান চন্দ্র, শম্ভু চন্দ্র, সূর্য কুমার অধিকারী ও পঞ্চম ব্যক্তি নারায়ন, চতুর্থ জনের পরিচয় জানা যায়নি।

১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই বাংলা তথা ভারতবর্ষের নারী জাগরণের অগ্রদুত মারা যান।আজ আমাদের ছেলে মেয়েদের শোবার ঘরে শাহরুখ-সালমানের ছবি পাওয়া যায়।অথচ প্রতিটি ভারতবর্ষের তরুনদের বিশেষ করে মেয়েদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এই অসামান্য মেধাবী,দানবীর মহৎপ্রান মানুষটির প্রতি।

Monday, April 3, 2023

প্ল্যাটফর্মে বসেই পড়াশোনা করেন প্রায় ১২০০ পড়ুয়া

গয়া-মুগলসরাই জংশনের ব্যস্ততম সাসারাম রেল স্টেশন। এই স্টেশনের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের অনেকটা অংশ জুড়ে সকাল-সন্ধ্যা পড়াশোনা করেন বহু পড়ুয়া।সকালের দু’ঘণ্টা এবং সন্ধ্যায় দু’ঘণ্টা প্ল্যাটফর্মে বসেই পড়াশোনা করেন প্রায় ১২০০ পড়ুয়া।২০০২-২০০৩ সালের দিকে প্রথমে কয়েকজন ছাত্র স্টেশনে এসে পড়াশোনা শুরু করে। এরা মূলত প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা। যেখানে বিদ্যুত্ পৌঁছয়নি এবং মোটা টাকা দিয়ে কোচিং সেন্টারে পড়ার ক্ষমতাও যাদের নেই তারাই স্কুল-কলেজের পড়া সেরে চাকরির জন্য এখানে এসে নিজেদের তৈরি করেন। সিনিয়ররা এখানে জুনিয়রদের সাহায্য করেন কোন পদ্ধতিতে এগিয়ে গেলে সুবিধা হবে বলে দেন। তাই এই সংখ্যাটা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। অনেকে তো এই স্টেশনের আলোয় সারারাত পড়বে বলে স্টেশনেই থেকে যান। এই সমস্ত পড়ুয়াদের সাহায্যে এগিয়ে এসে পটনা রেল পুলিশের সুপারিন্টেডেন্ট জিতেন্দ্র মিশ্র বেশ অভিনব একটা ব্যবস্থা করে দেন। পড়ুয়াদের জন্য তিনি নির্দিষ্ট পরিচয়পত্রেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই পরিচয়পত্র নিয়ে বিনা বাধায় ওই পড়ুয়ায়া প্ল্যাটফর্মে পড়াশোনা করতে পারেন। মোটকথা যেটা বলতে চেয়েছিলাম শিক্ষা ক্ষেত্রে যেখানে প্রতিদিন প্রতিপদে আমাদের বাংলা পিছিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাংলা থেকে দুই দশক আগেও ঢের পিছিয়ে থাকা বিহার আজ গোটা ভারতবর্ষকে শিক্ষা ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে। বিহারী খান স্যারের অনলাইন কোচিং এর ফলোয়ার আজ প্রায় 2 কোটির বেশি ভারতীয়। ভারত বছরে ১০০ জন আইপিএস, আইএস পেলে তার সবথেকে বেশি অংশটাই বিহারের।  এক আজব জাদুককাঠিতে বিহারের শিক্ষা ক্ষেত্রে নকশা বদলে গিয়েছে। কারণ সেখানকার শিক্ষা মন্ত্রী চুরি করে না। মুখ্যমন্ত্রী চোরদের নিরাপত্তা দেয় না। 
সাংবাদিক মলয় দাসের একটা লেখা পড়ছিলাম, দুর্দান্ত লিখেছেন ভদ্রলোক। বাঙালির উৎসব প্রীতি এবং ভিক্ষার দানে মেতে থাকার আনন্দ বাঙালিকে আজ মাটিতে আছড়ে ফেলছে। বেশিদিন নেই যেদিন বাঙালি তার মেধা সম্পূর্ন ত্যাগ করে বিহার কর্ণাটকের ঘরে ঘরে শ্রম ফেরি করতে বেরোবে। শিক্ষা সমাজের মেরুদন্ড তৈরি করে। সেই মেরুদন্ড যখন ভেঙে দেওয়া হয়, পাড়ার গুন্ডা মস্তাদের পুনর্বাসনের নামে যখন শিক্ষক বানানো হয়। তখন সেই সমাজ নিম্নগামী, রুচিহীন, ভঙ্গুর সমাজে পরিণত হবে এটাই অতি সাধারণ বিষয়। 
Malay Das এর লেখাটা সঙ্গে  দিলাম পড়ে দেখতে পারেন। 
বিহার একসময় তাচ্ছিল্যের পাত্র ছিল। তাচ্ছিল্যের কারণও ছিল। লালুজীর মেয়ে ডাক্তারি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে দিল্লিতে পড়তে গেল, এবং ফেল করলো। সেটা বুঝিয়ে দিল শিক্ষাব্যবস্থার কি হাল। শিক্ষাহীন বিহারে ছিল জাতপাতের রাজনীতি, মাফিয়া রাজ। তাদেরকে শিক্ষা না দিয়ে লড়াই লাগিয়ে দেওয়া হত অন্যদের সাথে। বাইরের কেউ বিহারে চাকরির পরীক্ষা দিতে যেতে পারতো না। স্টেশনের বাইরে বেরোতে দেওয়া হতো না। সারা দেশ হাসতো বিহারকে নিয়ে, লোক হাসা-হাসি করতো লালুজীকে নিয়ে।
বিহারের নতুন জাগরণ হলো নীতিশ কুমারের হাত ধরে। পরীক্ষায় টোকাটুকি বন্ধ করলেন। পাশের হার অনেক কমে গেল। তিনি অটল রইলেন। কোয়ান্টিটি নয় জোর দিলেন কোয়ালিটির ওপর। যে মদ থেকে প্রচুর রাজস্ব আসতো, সেই মদ বন্ধ করলেন রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য। কড়া হাতে দমন করলেন জাতপাতের রাজনীতি। দলিত আর রণবীর সেনার লড়াই, রক্তপাত বন্ধ হল। নতুন বিহারের অঙ্কুরোদগম হল। মানসিকতা পরিবর্তন হল বিহারের। হাত পাতা বা‌ গা-জোয়ারি করে নয়, নিজের যোগ্যতায় অর্জন করতে শিখল সর্বভারতীয় চাকরি।
দু'টি ঘটনা আমার নিজের দেখা। প্রথমটি কনকনে এক শীতের ভোরে গয়া বাসস্ট্যান্ড; চায়ের দোকান। বৃদ্ধ চা ওয়ালার কষ্ট শুনে স্থানীয় একজন পরামর্শ দিলেন, ছেলেকে তো দোকানে বসাতে পারো। ফুঁসে উঠলো দোকানদার। আপনাদের ছেলে গভমেন্ট নকরি করবে, আমার ছেলে চা বেচবে? আমি ছেলেকে আইপিএসের কোচিংএ ভর্তি করিয়েছি। ও অফিসার বনবে বাবু। 
অবাক হয়েছিলাম। এক চা'ওয়ালাও এইভাবে ভাবতে পারে!! আর একবার আমাদের স্কুলে একটা গ্রুপ'ডি পরীক্ষার সিট পড়েছিল। বিহার ইউপি থেকে দলে দলে ছেলে এসেছিল পরীক্ষা দিতে। জেনারেল কম্পার্টমেন্টে গাদাগাদি করে এসে, প্ল্যাটফর্মে শুয়ে পরীক্ষা দিয়ে গেছিল।বলেছিল যেখানে যে চাকরির বিজ্ঞাপন বেরোয়, ওরা ফর্ম ফিল আপ করে। চাকরির জন্য সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি তারা।....
এরপর দেখেছিলাম একটা খবর। বিহারের সাসারাম প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন বিকেলে জড়ো হয় কয়েকশো ছেলে। গ্রামে তাদের পাওয়ার থাকে না। প্ল্যাটফর্মে ইন্টারনেটের সুবিধা আর কারেন্ট দুই'ই পাওয়া যায়। সেই সুযোগ নিয়ে তারা স্টাডি করে জিআই, জিকে, কারেন্ট টপিক, অংক, ইংরাজি। লক্ষ্য একটাই সরকারি চাকরি পেতে হবে। সারা ভারত অবাক হয়ে দেখেছিল সেই ছবি। চাকরি পাবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক যুব সমাজ।
আবার গতকাল ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি। পাটনার গঙ্গার তীরে সপ্তাহের শেষে জমায়েত হয়েছে বহু যুবক। রেলের চাকরির ফ্রি কোচিং আর টিপস দেওয়া হচ্ছে সেখানে। সেই কোচিং নিতে গঙ্গার তীর ভরে গেছে।
এবার আমাদের দিকে যদি তাকাই। গর্বিত বাঙালি জাতি। আমরাও ভিড় করি, তবে মেলায়, পুজোয়, মিছিলে, উৎসবে। চাকরির প্রতি আমাদের আগ্রহ কম। আমরা ক্লাব, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। ফ্রি নেট পেলে পাবজি খেলি, রিল বানাই, ফেসবুক করি, সিনেমা দেখি। দিনের শেষে বলি ওরা মাউরা, গুঠখা, খোট্টারা আমাদের সব দখল করে নিল। তারপর ভিড় করি বেকার'ভাতার লাইনে। ফলে যা হবার তাই হয়, আমরা মাটি কুপিয়ে ১০০ দিনের কাজে সেরা হই, আর ওরা আইএএস, আইপিএস হয়।
একটা পিছিয়ে পড়া রাজ্য নিজের চেষ্টায় উঠে দাঁড়াচ্ছে, প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে যাচ্ছে, আমরা কি শিখছি কিছু ? নাকি ইতিহাস আর আত্মগরিমায় আজও তৃপ্তির চোঁয়া ঢেঁকুর তুলেই যাচ্ছি? মানসিকতায় পরিবর্তন দরকার। তাহলেই ভিক্ষা দিয়ে, প্রাদেশিকতার জিগির তুলে, জাতপাত দিয়ে মাতিয়ে রাখা যাবে না আর। এই ছবি, এই ঘটনাগুলো কি একটুও ভাবায় না! বাঙালির এই জড়ত্ব কি ঘুচবে না! জানি না এ কোন অন্ধকার সময়!

#telentedmusicians #happyhour #Facebookchat #india #hahahaha

Friday, May 20, 2022

কাপড় খুলে শরীরে দুবাটি লঙ্কাবাঁটা ঢোকানো হয়েছিল, না না নেহেরু -গান্ধী মোটেই নয়, ওনারা তো ব্রিটিশ পরিবারের অনুগত।ইনি ননীবালা দেবী।।

একজন ননীবালা দেবী ছিলেন আমাদের বাংলায়। পুরোটা পড়বেন। এই ইতিহাস আমাদের প্রজন্মের জানা উচিত। 

কাপড় খুলে শরীরে দুবাটি লঙ্কাবাঁটা ঢোকানো হয়েছিল, না না নেহেরু -গান্ধী মোটেই নয়, ওনারা তো ব্রিটিশ পরিবারের অনুগত।ইনি ননীবালা দেবী।।        

                                                           বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮৮ সালে হাওড়া জেলার বালিতে। বাবা সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মা গিরিবালা দেবী। সেই সময়ের সামাজিক রীতি মেনে ১৮৯৯ সালে মাত্র এগার বছর বয়সে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। তাঁর বয়স তখন মাত্র ষোল। এরপর তিনি তাঁর বাবার কাছেই ফিরে আসেন।

১৯১৪ সালে বেধেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেই সময় ভারতে যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা জার্মানির কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতব্যাপী একটা বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে, স্বাধীনতা আনবার রাস্তা পরিষ্কার করতে চেষ্টা করেছিলেন। বাঘা যতীন ও রাসবিহারী বসুর মিলিত চেষ্টায় দ্বিতীয় সিপাহি বিদ্রোহের (২১ফেব্রুয়ারি, ১৯১৫) পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, রাসবিহারী বসু ভারত ত্যাগ করেন। ইংরেজ সরকার ভারত-জার্মান যোগাযোগের খবর জেনে যায়। বাঘা যতীন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বালেশ্বরের যুদ্ধে শহীদ হন (১০ই সেপ্টেম্বর ১৯১৫)। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার বিপ্লবী কাজে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তবুও ইংরেজের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে পূর্ব-ভারতের পথ ধরে চীন ও আসামের মধ্য দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র আনিয়ে ভারতে বিদ্রোহ ঘটাবার জন্য বিপ্লবীরা আবার চেষ্টা করেছিলেন যাদুগোপাল মুখার্জীর নেতৃত্বে।

চারদিকে চলছে তখন আহত ব্রিটিশ-সিংহের প্রচণ্ড আক্রমণ ও নির্মম অত্যাচার। সেই অত্যাচারের ধরন ছিল- ফাঁসি, দ্বীপান্তর, পুলিসের নির্যাতনে পাগল হয়ে যাওয়া এবং চার্লস টেগার্টের তদারকে নিত্য নতুন বীভৎস অত্যাচার। মলদ্বারে রুল ঢোকানো, কমোড থেকে মলমূত্র এনে মাথায় ঢেলে দেওয়া, চোখের মণিতে সুঁচ ফোটানো, গরম লোহা হাতের তালু বা পায়ে চেপে ধরা, কয়েকদিন উপোস করিয়ে পিছনে হাতকড়া অবস্থায় ঠা ঠা রোদে বন্দীকে দাঁড় করিয়ে রেখে লাথি ও রুলের মার - এই ছিল টেগার্টের অত্যাচারের রীতি। এইরকম অসহায় বিপদভরা দিনে, সম্পর্কে ভাইয়ের ছেলে বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জীর কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেলেন বাল্যবিধবা ননীবালা দেবী।

দেশকে ভালোবেসে বিপ্লবীদের হয়ে তিনি নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিতেন ও নিপুণ দক্ষতায় সে কাজ সম্পন্ন করতেন। অনেক কাছের মানুষও টের পেত না যে তিনি বিপ্লবী দলের সক্রিয় সদস্য। তিনি বিপ্লবীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, এক জায়গার নেতাদের নির্দেশ ও নানা দরকারি খবর অন্য জায়গার বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। অস্ত্রশস্ত্র নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতেন আবার গোপনে বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছেও দিতেন।

১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে
ভারত-জার্মান যোগাযোগ এবং তার পরের পর বিভিন্ন ঘটনার খবর পেয়ে, সেই সম্পর্কে পুলিস কলকাতার ‘শ্রমজীবী সমবায়’ নামে এক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশী করতে যায়। তল্লাশীর সময় অমর চ্যাটার্জী পলাতক হন এবং এক সঙ্গী রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেপ্তার হন।

পলাতক অমর চ্যাটার্জী এবং তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে প্রায় দুই মাস আশ্রয় দিয়ে রাখলেন ননীবালা দেবী রিষড়াতে। এদিকে গ্রেপ্তারের সময় রামচন্দ্র মজুমদার একটা ‘মাউজার’ (Mauser) পিস্তল কোথায় রেখে গেছেন সে-কথা দল কে জানিয়ে যেতে পারেননি। বিপ্লবীদের  দরকার ছিল সেটির, কিন্তু কীভাবে সন্ধান জানা যাবে?
অতএব জেলে ঢুকে রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করে পিস্তলের খোঁজ আনতে চললেন  দুঃসাহসী ননীবালা দেবী।
সেদিনের সমাজে যা কেউ কল্পনা করতেও পারত না তাই করলেন তিনি। বিধবা ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে, তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেলে দেখা করতে এলেন। ১৯১৫-১৬ সালে যে যুগ ছিল তখন বাঙালী বিধবাদের পক্ষে সিঁদুর মাথায় এরকম পরের স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে পুলিসের কড়া দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে কাজ হাসিল করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। পুলিস তো নয়ই, কোনো সাধারণ মেয়েও নয়। আজকের সমাজ ও সেদিনকার সমাজ - মধ্যে আছে বিরাট সাগরের ব্যবধান। বিধবা ননীবালা সধবার সাজে সিঁদুর পরে একগলা ঘোমটা দিয়ে রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন জেলে। পুলিশের চোখে  ধুলো দিয়ে পিস্তলের সন্ধান জেনে বেড়িয়ে এলেন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে।

পুলিস অনেক পরে জানাত পারল যে, ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী নন। কিন্তু এটা জানতে পারেননি যে, তিনিই রিষড়াতে ছিলেন আশ্রয়দাত্রী।

পুলিশ নজর এড়াতে ১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চন্দননগরে আবার বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তবে রিষড়ার মতো এখানেও মেয়েরা না থাকলে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যেত না। তখন আবার এলেন ননীবালা দেবী, গৃহকর্ত্রীর বেশে। এখানে এইসময়ে আশ্রয়দানের উদ্দেশ্যে তাঁর বড়পিসিকেও এনেছিলেন বিপ্লবী ভোলানাথ চ্যাটার্জী। এই বড়পিসি ও ননীবালা দেবী দুটো আলাদা বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন পলাতক বিপ্লবীদের। পলাতক হয়ে আছেন সেখানে বিপ্লবী নেতা যাদুগোপাল মুখার্জী, অমর চ্যাটার্জী, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চ্যাটার্জী, নলিনীকান্ত কর, বিনয়ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তী। এঁদের সকলেরই মাথায় অনেক হাজার টাকার হুলিয়া ছিল।
এই নিশাচরেরা সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে কাটিয়ে দিতেন। শুধু রাতে সুবিধা মতো বেড়িয়ে পড়তেন। পুলিস এসে পড়লেই এই পলাতক বিপ্লবীরা নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যেতেন।

এইভাবে চন্দননগরের বিভিন্ন জায়গায়ে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশী ও বিপ্লবীদের নিমেষে পলাবার পর ননীবালা দেবীকে আর চন্দননগরে রাখা নিরাপদ হলো না। কারণ পুলিস তৎপর হয়ে উঠেছিল ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে। তাঁর বাবা সূর্যকান্ত ব্যানার্জীকে পুলিস বালি থানাতে নিয়ে গিয়ে দশটা থেকে পাঁচটা অবধি বসিয়ে রেখে জেরা করত - ননীবালা দেবীর কোথায় আছেন জানতে।

ননীবালা দেবী পলাতক হলেন। তাঁর এক বাল্যবন্ধুর দাদা প্রবোধ মিত্র কাজের জন্য যাচ্ছিলেন পেশোয়ার। বাল্যবন্ধু তার দাদাকে অনেক অনুনয় করে রাজী করালেন ননীবালাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। ননীবালা দেবী পলাতক অবস্থায় তাঁর সঙ্গে পেশোয়ার গেলেন। এও এক অনন্য কাজ, এক বাঙালী বিধবা অচেনা এক পুরুষের সাথে কয়েক হাজার কিমি দূরে সম্পূর্ণ অন্য এক জায়গায়ে চলে গেলেন লুকিয়ে থাকতে! প্রায় ষোলো-সতের দিন পরে পুলিস সন্ধান পেয়ে যখন ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে পেশোয়ার গেছে, তখন ননীবালা দেবীর কলেরা চলছে তিনদিন ধরে। প্রথমদিন বাড়ি ঘিরে রেখে তার পরদিনই নিয়ে গেল তাঁকে পুলিস-হাজতে স্ট্রেচারে করে। কয়েকদিন পেশোয়ার হাজতে রাখার পর একটু সুস্থ অবস্থায় তাঁকে নিয়ে আসা হয় কাশীর জেলে, তখন তিনি প্রায় সেরে উঠেছেন।

কাশীতে আসার কয়েকদিন পরে, প্রতিদিন তাঁকে জেলগেটের অফিসে এনে কাশীর ডেপুটি পুলিস-সুপারিনটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জী জেরা করত। ননীবালা দেবী সবই অস্বীকার করতেন -  বলতেন কাউকেই চেনেন না, কিছুই জানেন না। তারপর জিতেন ব্যানাজীর তুই-তুকারির অসভ্য ভাষা। ননীবালা দেবী তখনও চুপচাপ থাকতেন।
একদিন দুইজন জমাদারনী (Wardress) ননীবালা দেবীকে একটা আলাদা সেলে (cell) নিয়ে গেল। দুজনে মিলে তাকে জোর করে ধরে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর সমস্ত কাপড় খুলে নিয়ে দু-বাটি লঙ্কাবাটা ওঁর শরীরের ভেতরে দিয়ে দিতে লাগল। ননীবালা দেবী চীৎকার করে লাথি মারতে লাগলেন সমস্ত শক্তি দিয়ে। অসহ্য অসম্ভব অসহনীয় এক বীভৎস জ্বালা, যার বর্ণনা করার ভাষা নেই। এভাবেই অত্যাচার চলত, তার পর আবার তাঁকে নিয়ে আসা হত সেই জেল-গেটের অফিসে জিতেন ব্যানার্জীর কাছে। আবার জেরা। এত অত্যাচার, শরীরের ভেতরে লঙ্কার জ্বালা, তবু তাঁকে ভাঙা সম্ভব হ'ল না।
কাশীর জেলে - সেখানে মাটির নীচে একটা খুবই ছোট ‘পানিশমেন্ট সেল’ অর্থাৎ শাস্তি কুঠুরী ছিল। তাতে দরজা ছিল একটাই, কিন্তু আলো বাতাস প্রবেশ করবার জন্য কোনো জানালা বা সমান্য ঘুলঘুলিও ছিল না। জিতেন ব্যানার্জী তিন দিন প্রায় আধঘণ্টা সময় ধরে ননীবালা দেবীকে ঐ আলো-বাতাসহীন অন্ধকার সেলে তালাবন্ধ করে আটকে রাখত। কবরের মতো সেলে আধঘণ্টা পরে দেখা যেতো ননীবালা দেবীর অর্ধমৃত অবস্থা, তবু মুখ দিয়ে স্বীকারোক্তি বের করতে পারল না। তৃতীয় দিনে বন্ধ রাখল আধঘণ্টারও বেশি, প্রায় ৪৫ মিনিট। স্নায়ুর শক্তিকে চূর্ণ করে দেবার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। সেদিন তালা খুলে দেখা গেল ননীবালা দেবী পড়ে আছেন মাটিতে, জ্ঞানশূন্য।

হাল ছেড়ে দিয়ে পুলিস ননীবালা দেবীকে কাশী থেকে নিয়ে এল কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে। ১৮১৮ সালের তিন নম্বর রেগুলেশনের ধারা প্রয়োগ হল তাঁর বিরুদ্ধে, প্রথম মহিলা রাজবন্দি হিসাবে প্রেসিডেন্সি জেলে এলেন তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। জেল-কর্তৃপক্ষ, এমনকি জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটও তাঁকে অনুরোধ করে খাওয়াতে পারলেন না। ননীবালা দেবী বললেন, বাইরে গেলে খাবেন। প্রতিদিন সকাল ৯টায় নিয়ে যেত তাঁকে গোয়েন্দা-আফিসে, সেখানে আই.বি. পুলিসের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি (Goldie) তাঁকে জেরা করত।

-আপনাকে এখানেই থাকতে হবে, তাই বলুন কী করলে খাবেন?
-যা চাইব তাই করবেন?
-করব।
-আমাকে বাগবাজারে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী সারদা মা'য়ের কাছে রেখে দিন, তাহলে খাব।
গোল্ডি শয়তানি হাসি লুকিয়ে বলে-আপনি দরখাস্ত লিখে দিন।

ননীবালা দেবী তখুনি দরখাস্ত লিখে দিলেন।

গোল্ডি সেটা নিয়ে ছিড়ে দলা পাকিয়ে ছেড়া কাগজের টুকরিতে ফেলে দিল। এবারে সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ আহত বাঘের মতো লাফিয়ে উঠে ননীবালা দেবী এক চড় বসিয়ে দিলেন গোল্ডির মুখে। 
-ছিড়ে ফেলবে তো, আমায় দরখাস্ত লিখতে বলেছিলে কেন? আমাদের দেশের মানুষের কোনো মান সম্মান থাকতে নেই? দ্বিতীয় চড় মারবার আগেই অন্য সি.আই.ডি'রা তাঁকে ধরে ফেলে। - একশো বছরেরও আগে এক বাল্য বিধবা মেয়ের কি আশ্চর্য সাহস !

জেলের মধ্যে একদিন সিউড়ির দুকড়িবালা দেবীর (১৮৮৭-১৯৭০) সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সকলের কাছে তিনি 'মাসিমা' নামে পরিচিতি ছিলেন। দুকড়িবালা দেবী ছিলেন ভারতে 'অস্ত্র আইনে সাজা প্রাপ্ত প্রথম মহিলা বন্দি'। জানতে পারলেন, সিউড়িতে দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে সাতটা ‘মাউসার’  (Mauser) পিস্তল পাবার অপরাধে দুকড়িবালা দেবীর হয়েছে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড। রাখা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদী করে (মানে চোর-ডাকাত'দের সাথে একই সেলে। রাজবন্দী হলে আলাদা সেলে আলাদা ভাবে রাখা হয়)। অসম্ভব খাটাচ্ছে, ডাল ভাঙতে দিচ্ছে প্রতিদিন আধমণ। 

মতলব স্থির করে ফেললেন ননীবালা দেবী। উপবাসের ১৯ থেকে ২০ দিন চলছে তখন। আবার এলেন ম্যাজিস্ট্রেট অনুরোধ করতে।

-আপনাকে তো এখানেই থাকতে হবে। কী করলে খাবেন বলুন?
-আমার ইচ্ছামতো হবে?
-হ্যাঁ, হবে।
-তাহলে আমার রান্না করবার জন্য একজন ব্রাহ্মণ-কন্যা চাই, দুজন ঝি চাই।
-ব্রাহ্মণ-কন্যা কেউ আছেন এখানে?
-আছেন, দুকড়িবালা দেবী।
-আচ্ছা, তাই হবে।

এরপরে এলো সমস্ত নতুন বাসন-কোসন, হাঁড়িকুড়ি। ২১ দিনের পরে ভাত খেলেন সেই অসামান্য দৃঢ়চেতা বন্দিনী। সেইসাথে দুকড়িবালা দেবী'কেও বাঁচালেন পরিশ্রম থেকে।

দুই বছর এইভাবে বন্দীজীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। ১৯১৯ সালের এক দিন ননীবালা দেবীর মুক্তির আদেশ এলো।

জেল থেকে ফিরে এসে বালিতে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে তিনি ঠাই পেলেন না। প্রথমত সকলেই পুলিসকে ভয় পায়। এছাড়া বিধবা হয়েও পরস্ত্রী সাজা, পরপুরুষের সাথে একঘরে থাকা বা পেশোয়ার যাওয়া - এইসব কারনে সেই সময়ের অদ্ভুত সমাজের এক পক্ষ তাঁকে মেনে নেয়নি, মেনে নেয়নি তাঁর নিজের বাড়ীর লোকেরা। অন্যদিকে তাঁর নিজস্ব বিপ্লবী সংগঠন বা চেনাজানা সবটাই ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে শেষ হয়ে গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এই অবস্থায় তখন উত্তর কলকাতার এক বস্তিতে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়। (অন্য মতে, কোনও পূর্বপরিচিতের অনুগ্রহে একটি কুঁড়ে ভাড়া করেছিলেন হুগলিতে)। সুতো কেটে, রান্নার কাজ করে কোনমতে আধপেটা খেয়ে তাঁর দিন কাটতে থাকে। সমাজ এবং নিজের আত্মীয়-স্বজনদের ওপর রাগে, দু:খে, অপমানে তিনি সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন .. নিজেকে একপ্রকার লুকিয়ে রাখলেন .. এমনকি পরবর্তীকালের কোনও দেশনেতাদের কাছেও গেলেন না। যিনি সমাজকে উপেক্ষা করে দেশের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিলেন, তিনি কোথায় গেলেন সে ব্যাপারে কেউ জানতেও পারল না, খোঁজও করলো না।

দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় কুড়ি বছর পরে ১৯৬৭ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। না, ইতিহাস তাঁর জন্মদিন বা মৃত্যুদিনের তারিখ মনে রাখার প্রয়োজনবোধ করেনি। একটা সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, পুরনো কোনও বিপ্লবী সাথীর চেষ্টায় অথবা পরাধীন জেলের খাতায় নাম থাকায়, বেঁচে থাকা অবস্থায় পঞ্চাশের দশকে ৫০ টাকা পেনশন পেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে - যদিও তার কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কেউ মনে রাখেনি যাঁদের আত্মত্যাগের কথা তাঁদের দলেই ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী। তবে স্বদেশীদের নিয়ে তৈরি একটি বাংলা সিনেমায় (সিনেমার নাম 'বিয়াল্লিশ') তাঁকে নিয়ে কিছু দৃশ্য ছিল, এইটুকুই। শুধু দেশের জন্য বিধবা হয়েও সধবা সেজেছিলেন, খুবই ছোট কুঠুরী ‘পানিশমেন্ট সেলে’ শ্বাস নিতে না পেরে কতবার অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন। সামান্য একটা গোটা কাঁচালঙ্কা শুধু খেতে বললেই আমরা ভয় পাবো। এইরকম দু-বাটি লঙ্কাবাটা তাঁর শরীরের গোপন জায়গায়ে ভেতরে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কি অপরিশীম যন্ত্রণা তিনি সহ্য করেছিলেন - আমরা সুস্থ অবস্থায় কেউই তা অনুভব করতে পরবো না। উনিশ শতকের গোড়ার বিধবা মহিলা হওয়া সত্বেও নিজ চেষ্টায় তিনি সামান্য লেখাপড়া শিখেছিলেন। নিজে সুতো কেটে পৈতে তৈরি করে তা বিক্রি করে নিজের খরচ চালাতেন। তবু সেই সময়ের বাংলার কোথাও তিনি সম্মানের সাথে থাকার জায়গা পেলেন না। স্বাধীন ভারতেই তাঁকে অনাহারে কাটাতে হোলো। একবুক অভিমান নিয়ে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন - যা তাঁর মৃত্যুর পরেও শেষ হয়নি।
তাঁর কিছু মহিলা সহযোদ্ধাদের টুকরো টুকরো নানা লেখা থেকে যেটুকু জানা গেছে তাঁর বিষয়ে সেটুকু পুঁজি করেই তাঁকে এই শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন।

সংগৃহিত।
#ধর্মীয়ইতিহাস

Tuesday, May 10, 2022

॥ শ্রাদ্ধবাড়ির খাওয়া দাওয়া ।।

যিনি  মারা  গেলেন  তিনি  যা যা ভালোবাসতেন সে সমস্ত  ষোড়শোপচারে রান্না  হয় । সকলেই  কব্জি ডুবিয়ে  খান । "দাদা  আর দুটো ইলিশ পাতুরি  দিন  তো  ! অপূর্ব  হয়েছে । বহু দিন  পর এমন রান্না  খেলাম  অথবা  আহা ,সন্দেশটা অসাধারণ  !! কোন  দোকানের  ?  দাদা  fish fry  টা repeat করতে  বলুন না " ইত্যাদি  ইত্যাদি ।   আমার  তো মনে  হয়  বৃদ্ধ কেউ  হলেও  তাঁর  সন্তান  ,স্বামী  তাঁদের  কি আনন্দ  করার  মতো  মানসিকতা  থাকে ? অনেক দিন  অসুস্থ  থাকলে  অথবা  এমন কোনও  অসুখ হলে  যেটি মানুষটিকে  মৃত্যুর  দিকেই  টেনে  নিয়ে  যাবে  , আমাদের মনে  হয়  এভাবে  বাঁচার চেয়ে  মৃত্যু  শ্রেয় । মুখে  বললে ও প্রিয়জনের  বিয়োগ  ব্যথা  একটুও  কি বাজেনা সদ্য সদ্য  ?  সময়  সব কিছু  ভোলায় ঠিক  । ঐ তেরো  চোদ্দ  দিনের  মাথায়  সেটা কি নিঃশ্বেস  হয়ে যায়  ?  প্রশ্নগুলো  মাথায়  ঘোরে ।

মহাভারতে, অনুশাসন পর্বে লেখা আছে, মৃত্যুভোজ কর্মচঞ্চলতা কমিয়ে প্রৌঢ়ত্ব প্রদান করে।

যে পরিবার মৃত্যু নামক বিপদের সম্মুখীন, সেই প্রবল বিপত্তির সময় সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ান, টাকা পয়সা থেকে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাদের সবরকম সাহায্য করুন কিন্তু এগারো কি তেরো দিনে শ্রাদ্ধবাড়ির খাবার পরিত্যাগ করুন। বহিষ্কার করুন এই কুরীতির।

মহাভারতের যুদ্ধ আসন্ন। শ্রীকৃষ্ণ দুর্যোধনের প্রাসাদে গিয়ে যুদ্ধ না করার অনুরোধ করেন ও সন্ধি প্রস্তাব রাখেন,  কিন্তু দুর্যোধন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। শ্রীকৃষ্ণ মনে কষ্ট পান এবং তিনি সেখান থেকে ফেরত যাবার জন্যে উদ্যত হন। সেই সময় দুর্যোধন ওনাকে খাবার খেয়ে যেতে অনুগ্রহ করে। তাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেন,

"সম্প্রীতি ভোজ্যানি আপদা ভোজ্যানি বা পুনৈঃ", অর্থাৎ,

"যে খাওয়াচ্ছে আর যে খাচ্ছে, দুজনেরই যদি মন প্রসন্ন হয়, তাহলেই খাবার খাওয়া উচিত।

কিন্তু যিনি খাওয়াচ্ছেন আর যিনি খাচ্ছেন, তাদের মনে যদি ব্যথা বেদনা থাকে, সেই পরিস্থিতিতে কক্ষনো ভোজন গ্রহণ করা উচিত নয়।"

হিন্দু ধর্মে ১৬ টি সংস্কার তৈরি করা হয়েছে। প্রথম সংস্কার গর্ভধারণ এবং ষষ্টদশ অন্ত্যেষ্টি। সপ্তদশ সংস্কার তৈরি করাই হয় নি, তাহলে শ্রাদ্ধের সংস্কার এল কোথা থেকে.??

কোন ধর্মগ্রন্থে শ্রাদ্ধের বিধান নেই বলেই জানি। কিন্তু আমাদের সমাজে ঈশ্বরই একমাত্র ভরসা।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, পন্ডিত শ্রীরাম শর্মা, স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদি মহান পুরুষেরা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জবরদস্ত বিরোধিতা করেছেন আজীবন।

যে খাবার মানুষ কান্নাভেজা মনে তৈরি করায়, যে খাবার অশ্রুজলে সিক্ত সেই খাবার নিকৃষ্ট খাবারের পর্যায় পড়ে।

শ্রাদ্ধ ভোজনের এই কুসংস্কার কে সম্পূর্ণ ভাবে বহিষ্কার করা উচিত আর এক সঠিক পথপ্রদর্শকের ভুমিকায় সমাজের সামনে এগিয়ে আসা উচিত।

জন্তু জানোয়ার থেকেও আমরা শিক্ষালাভ করতে পারি, যারা স্বজন মারা যেতে সেদিন খাবার না খেয়ে শোক ব্যক্ত করে।

চুরাশী লক্ষ যোনিতে মানব যোনি শ্রেষ্ঠ কিন্তু আমরাই এক যুবকের মৃত্যুর তেরো দিন পূর্ণ হবার পরে পাত সাজিয়ে লুচি ছোলার ডাল আর রকমারি খাদ্য আত্মীয় বন্ধুদের খাওয়াতে তৎপর হয়ে উঠি আর শোক ব্যক্ত করার ভান করি মাত্র। এর চেয়ে বড় নিন্দনীয় কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।

যদি আপনি এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন তাহলে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কারুর মৃত্যুর পরে তার শ্রাদ্ধ বাড়িতে ভোজন গ্রহণ করবেন না আর শ্রাদ্ধর এই প্রথাকে রোখবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

আমাদের প্রয়াসেই এই কুপ্রথা ধীরে ধীরে কিন্তু একদিন নিশ্চয় সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত হতে পারে।

শ্রাদ্ধবাড়ি মানব সমাজের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এক অভিশাপ..!!

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

বিঃ দ্রঃ - কারুর মনে আঘাত দেবার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি প্রথমেই তার সম্মুখ ক্ষমাপ্রার্থী