Monday, April 10, 2023

মুশকিল হয়েছিল, শ্মশানে তাঁর পাদুটো কিছুতেই পুড়ছিল না!

তিনি হলেন আটচল্লিশ ইঞ্চি ছাতিওয়ালা ফুটবলার গোষ্ঠ পাল।
খালি পায়ে ফুটবল খেলতেন।
অপর দিকে ইংরেজ খেলোয়াড়রা খেলত বুট পরে।
ইংরেজ খেলোয়াড়রা  গোষ্ঠ পালের দুর্ভেদ্য চীনের প্রাচীর,  কিছুতেই ভেদ করতে পারত না।
 লাথি মেরে বল উড়িয়ে দিত গোষ্ঠ পাল ইংরেজদের দিকে।
শোনা যায়,ছোটবেলায় স্বামী বিবেকানন্দের বাণী  পড়ে ফুটবল খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
স্বামীজি বলেছিলেন,
গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভাল।
তাই গোষ্ঠ পালের মনে হল বলে লাথি মেরে ইংরেজের পদাঘাতের জবাব  দিতে হবে।
এভাবেই গোষ্ঠ পালের ফুটবলে মিশে গিয়েছিল ফুটবল আর দেশপ্রেম।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক  নেতা অতুল্য ঘোষ একসময় বলেছিলেন যে, 
গোষ্ঠ পাল স্বাধীনতা সংগ্রাম না করেই  একজন  স্বাধীনতা সংগ্রামী। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম আলাপে  সস্নেহে বলেছিলেন, 
তুমিই তাহলে চীনের প্রাচীর গোষ্ঠ পাল! 
১৯৬২ সালে ভারতবর্ষে  তিনিই ফুটবলে  প্রথম পদ্মশ্রী সম্মান লাভ করেন।
তিনি ছিলেন একজন মনেপ্রাণে বাঙালি।
রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির আপ্তসহায়ক নির্দেশ পাঠালেন, গোষ্ঠ পাল যেন গলাবন্ধ কোট পরে আসেন।
গোষ্ঠ পাল জানিয়ে দিলেন তিনি কোট পরবেন না।  
ধুতি পাঞ্জাবী পরে পুরস্কার নেবেন।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে গোষ্ঠ পালের কথাই মেনে নেওয়া হল।
এই হলেন গোষ্ঠ পাল!
 গোষ্ঠ পাল মারা যাওয়ার পর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল।
আগুনে মৃতদেহের  সব পুড়ে গেল।
কিন্তু  আগুনে  গোষ্ঠ পালের পা দুটো কিছুতেই পুড়ছে না দেখে গোষ্ঠ পালের ছেলে শৌরীশ পাল নিমতলা শ্মশানে উপস্থিত  ফুটবলার শৈলেন মান্নাকে বললেন,  বাবার পা দুটো  পুড়ছে না কেন? 
 শৈলেন মান্না তখন বলে উঠলেন,  গোষ্ঠদার পা যে " সোনার পা।" 
অত সহজে কি পোড়ে?
গতকাল ছিল বিখ্যাত ফুটবলার গোষ্ঠ পালের প্রয়াণ দিবস ( ১৮৯৬ - ১৯৭৬)।  
আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রইল।

© পীযূষ দত্ত
তথ্যসূত্রঃ
গোষ্ঠ পালের জীবন নিয়ে নানা লেখা  ও পত্রিকার প্রতিবেদন।
এর ওপর ভিত্তি করে আমার এই লেখা।

Follow অহর্নিশ - Ahornish

No comments: