Friday, July 31, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 14 অর্থ উপার্জন

বিলে ভরা জলাদেশ ওড়াকান্দী আদি।

নিকটে নাহিক কোন স্রোতস্বতী নদী।।

শহর বন্দর দূরে যেতে কষ্ট-সাধ্য।

পদ ব্রজে যাতায়াত বড়ই অসাধ্য।।

বর্ষমধ্যে বেশী ভাগ বিলে খালে জল।

নৌকা যোগে যাতায়াত করেন সকল।।

নিত্য প্রয়োজন দ্রব্য মেলা বড় ভার।

নৌকা যোগে আনে তাই দ্রব্যের সম্ভার।।

দেশ জাত ধান্য পাট সরিষা কলাই।

নৌকায় চালানি হত করিয়া বোঝাই।।

এই ভাবে বহুজনে ধনাঢ্য হইল।

ইহা দেখি গুরুচাঁদ অন্তরে ভাবিল।।

“বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ” এই সত্য বাণী।

আপন জীবনে আমি পালিব এখনি।।

আর এক কথা মোর মনেতে আসিল।

মল্লকান্দী বাসী সবে যে কার্য করিল।।

দুর্ভিক্ষেতে অন্নাভাব সেই দেশে হয়।

অনাহারে কতজন প্রাণে মারা যায়।।

অসহ্য ক্ষুধার জ্বালা সহিতে না পারি।

দলে দলে দেশান্তরী হ’ল নরনারী।।

যারা কেহ নিরুপায় রহিলেন পিছে।

কোনক্রমে ভিক্ষা অন্নে রহিলেন বেঁচে।।

জল গণ্ড জমা জমি ধান্য নাহি হয়।

পর গৃহে কার্য করি প্রাণে বেঁচে রয়।।

অসহ্য দুঃখের জ্বালা সহা বড় ভার।

মনে চিন্তা করে সবে কিসে প্রতিকার।।

ওড়াকান্দী অবতীর্ণ দয়াল ঠাকুর।

তার কাছে গেলে দুঃখ হতে পারে দূর।।

এত মনে করি তারা এল ওড়াকান্দী।

পিতার চরণে পড়ি বলে কান্দি কান্দি।।

“পীড়িতের ঘরে তুমি আনন্দ সদন।

এজাতি হয়েছে ধন্য পেয়ে শ্রী চরণ।।

জানি মোরা দয়া গুণে মৃতে প্রাণ পায়।

জ্যান্তে মরা আছি মোরা করহে উপায়।।

জলগণ্ড দেশে বাস অফলা পতিত।

অনাহারে কাটে দিন নাহিক বিহিত।।

নিরাশায় আশা তুমি দীনের সহায়।

দয়া করি কর প্রভু মোদের উপায়।।

ভক্তজনে ভক্তিগুণে তব দয়া পায়।

ভক্তিহীন মোরা দীন অতি দুরাশয়।।

নিজগুণে দয়া তাই হবে গো করিতে।

তুমি ধরা নাহি দিলে কে পারে ধরিতে।।

কি জানি কি পুণ্য ফলে তোমা হেন নিধি।

দীন নমঃশূদ্র কুলে মিলিয়াছে বিধি।।

চরণ ভরসা করি আসিয়াছি মোরা।

চরণ পরশে কাট’ দুঃখের পসরা।।

সবে মিলি কান্দি কান্দি এই কথা কয়।

কান্না দেখি দয়া হল হরির হৃদয়।।

সকলে ডাকিয়া হরি কহিল বচন।

“আমি যাহা বলি তোরা সবে তাহা শোন।।

আজন্ম পতিত তোরা মূর্খ অতিশয়।

মানব জীবন তত্ত্ব চিনিলিনা হায়।।

বড়ই অদ্ভুদ শুনি বন্ধা নাকি মাটি।

মাটি মা যে দুগ্ধ দেয় চাষী হলে খাঁটি।।

অফলা নহেক মাটি তোরা যে অকর্মা।

মাটি মা যে বসুমতী দানে পুণ্য ধর্মা।।

মন দিয়ে কৃষি কর পূজ মাটি মায়।

মনে রেখ বেঁচে আছ মাটির কৃপায়।।

আর শুন বলি কথা লক্ষ্মী লভিবারে।

“বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী” মানিও অন্তরে।।

বসুমতি দিবে খাদ্য কথা মিথ্যা নয়।

বাণিজ্য আসনে লক্ষ্মী সদা বসি রয়।।

না হলে লক্ষ্মীর কৃপা কোন গতি নাই।

লক্ষ্মীর সহিতে রহে গোলক গোঁসাই।।

লক্ষ্মীর কৃপাতে বাড়ে ধন ধান্য শ্রী।

ইহ জনমতে বল আর কাম্য কি।।

আর বলি শুন সবে বাণিজ্যের কথা।

মূলধন নাহি ভেবে পেয়ে না’ক ব্যাথা।।

নিজের মধ্যেতে দেখ আছে মূলধন।

পরম সম্পদ তারে কহে পিতৃধন।।

পিতৃধন ভাঙ্গা যেন কভু নাহি পড়ে।

আপনি আসিবে লক্ষ্মী তোমাদের ঘরে।।

এই মূলধন রাখ যতন করিয়া।

এবে আমি যাহা বলি শুন মন দিয়া।।

শুন্য হস্তে যাবে সবে বন্দরের পরে।

আমি যাহা বলি কর সরল অন্তরে।।

বিবিধ সামগ্রী কত আনিবে বন্দরে।

কাঁচামাল বলি যাহা কহে পরস্পরে।।

সেই দ্রব্য যেই আনে তাহা হতে লয়ে।

পাইকারী মতে লহ দরটি কাটিয়ে।।

সেই দ্রব্য নিজ হাতে খুচরা বেচিয়ে।

লভ্যাংশ আপনি লহ নিশ্চিত হইয়ে।।

এই ভাবে দেখ হবে সংসার সচল।

অতঃপর নৌকা যোগে আন সব মাল।।

এভাবে বাণিজ্য কর তোমরা সবাই।

শ্রীলক্ষ্মী আসিবে ঘরে ইথে ভুল নাই।।

সত্য কথা কবে সদা এক দরে কিনে।

এক দরে বেচ তাহা সঠিক ওজনে।।

দুষ্ট বুদ্ধি করি ঠিক ওজন না দিলে।

বাণিজ্য হইবে ধ্বংস যাবে রসাতলে।।

দরাদরি জুয়াচুরি ছাড়িবে বিশেষ।

এক দর এক কথা নাহি কোন ক্লেশ।।

আর কথা শুন সবে যাহা আমি বলি।

সংসারকে ধর্ম ক্ষেত্র জানিবে সকলি।।

ধর্মের বাজার হেথা ধর্ম দণ্ড ধারী।

ধর্ম পথে কর কর্ম ধর্ম আস্থা করি।।

এত যদি মম পিতা তাহা দিগে বলে।

পিতাকে প্রণমি সবে ঘরে গেল চলে।।

মম পিতৃ বাক্য তারা পালিছে জীবনে।

মল্লকান্দী উঠিতেছে উন্নতি সোপানে।।

আমার পিতার বাক্য আমি মান্য করি।

বাণিজ্যে আনিব ঘরে মাতা ধনেশ্বরী।।

এত মনে ভাবি প্রভু করে আয়োজন।

নৌকাদি সংগ্রহ করে বাণিজ্য কারণ।।

মল্লকান্দী বাসী সাধু গিরি কির্ত্তনীয়া।

মনোভাব বলে তারে নিরালে বসিয়া।।

চৌধুরী শ্রী নীলকান্ত ওড়াকান্দী বাসী।

তাঁর সাথে গুরুচাঁদে আসে মিশামিশি।।

উভয়ের সঙ্গে প্রভু পরামর্শ করি।

বাণিজ্য করিতে প্রভু গড়াইল তরী।।

দাড়ী মাঝি মাল্লাগণে সংগ্রহ করিল।

শ্রী গুরুচাঁদের তরী চালানেতে গেল।।

লভ্যাংশ ভাগে ভাগী জুটিল সকল।

তিন চারি জনে মিশি করে একদল।।

নৌকার চালান যবে বিদেশেতে যাবে।

পিতা আগে গুরুচাঁদ দাঁড়াইল তবে।।

মাল্লা মাঝি সবে আসি নিকটে দাঁড়ায়।

বিনয় বচনে তবে গুরুচাঁদ কয়।।

“আপনি কহিলা তাত বাণিজ্যেতে লক্ষ্মী।

বাণিজ্য করিব আমি তুমি রহ সাক্ষী।।

তোমার চরণে জন্ম গঙ্গা ভাগীরথী।

গঙ্গা বক্ষে যাবে তরী এ মোর ভারতী।।

তব পদ বাঞ্ছা করে লক্ষ্মী ধনেশ্বরী।

মোর তরী পরে চলো নিজে কৃপা করি।।

শ্রীপদ পরশ যদি লাগে মোর নায়।

নিশ্চয় উঠিবে লক্ষ্মী আমার নৌকায়।।

আমি কি বাণিজ্য করি সকলি তোমার।

তোমার তরণী প্রভু মোরাও তোমার।।

তোমার তরণী তুমি দেহ যাত্রা করি।

শ্রীহরির তরী যাবে বলিয়া শ্রীহরি।।

ছল ছল আঁখি জল জুড়ি দুই পাণি।

শ্রীগুরু কহিছে কথা শুনে সর্ব প্রাণী।।

শ্রীহরি শুনিয়া তবে মধুময় কথা।

আনন্দ অন্তরে চলে তরী বান্ধা যেথা।।

আপনি উঠিলা হরি তরণী উপরে।

প্রেমানন্দে সবে মিলি হরিধ্বনি করে।।

“শ্রীহরিচাঁদের জয়” গাহে এই বোল।

শঙ্খ শিঙ্গা-ডঙ্কা বাজে আর বাজে খোল।।

এক তরী ছাড়ি প্রভু অন্য নায় যায়।

আনন্দে ভক্তে সবে কহে জয়-জয়।।

গলবস্ত্র গুরুচাঁদ তরী ধরে চলে।

বক্ষ তাঁর ভেসে যায় নয়নের জলে।।

মহেশ বিশ্বাস নাম তালতলা গ্রাম।

প্রধাণ বেপারী সেই এবে কহিলাম।।

নিজাম কান্দীর পরে আদি বাস ছিল।

শ্রী হরির পদ পেয়ে নামে মত্ত হল।।

মহেশ নাচিয়া চলে সকলের আগে।

প্রভু গুরুচাঁদ চলে তাঁর পুরোভাগে।।

নর্ত্তন কীর্ত্তন কত ভক্তগণে করে।

তরী হইতে হরিচাঁদ নামিলেন তীরে।।

মাল্লা মাঝি ছিল যত ভূমে লুটি পরে।

প্রণাম করিয়া উঠি রহে করোজোড়ে।।

মহেশে ডাকিয়া তবে হরিচাঁদ কয়।

“শুনহে মহেশ মোর বেপারী মশায়।।

মহেশ বেপারী নাম হল সেই হতে।

শ্রীহরির মাঝি বলি ধন্য এ জগতে।।

এই মহেশের কীর্তি শুনিতে অপূর্ব।

হরিলীলামৃতে আছে মহেশের পর্ব।।

‘বেপারী জীবনে কীর্তি যাহা শুনিয়াছি।

ভক্ত পদে প্রণমিয়া তাই বলিতেছি।।

একত্রে শতেক নৌকা বেপারেতে যায়।

সর্বাপেক্ষা বেশী লাভ মহেশের নায়।।

লোকসান দূরের কথা লাভ কিছু কম।

কভু হয় নাই তার নায় একদম।।

এ হেন দেখিয়া তারে হরিচাঁদ কয়।

মহেশের নায় যেন লক্ষ্মীবসে রয়।।

এ হেন বেপারী ছিল বিশ্বাস মহেশ।

তাঁর গুণে বাধ্য রহে হরি হৃষিকেশ।।

পরম নৈষ্ঠিক ছিল মহেশ বিশ্বাস।

নিষ্ঠা গুণে কাটে তার কর্ম বন্ধ ফাঁস।।

এবে শুন বলি এক মধুর ঘটনা।

জলন্ত বিশ্বাসে তার না মিলে তুলনা।।

সেই মহেশেরে ডাকি বলে হরি দয়াময়।

“শুনহে মহেশ মোর মনে যাহা লয়।।

“বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ” বাক্য সত্য বটে।

কেমন বাণিজ্যে এই বাক্য সত্য ঘটে।।

নারায়ণ রহে সদা লক্ষ্মীদেবী সাথ।

লক্ষ্মীনারায়ণ রহে জুড়ি দুই হাত।।

ধর্মের আসনে বসে প্রভু নারায়ণ।

ধর্মের বাণিজ্য হলে লক্ষ্মী দেয় ধন।।

এক দরে বেচাকেনা নাহি জুয়াচুরি।

সাধু বলে এক কথা জানেনা চাতুরী।।

নিজ দ্রব্য মিথ্যা বলি না বলিও ভাল।

যে দ্রব্যে যে গুণাগুণ বলিবে সকল।।

ওজনে মাপিবে ঠিক কম নাহি দিবে।

এভাবে বাণিজ্য হলে ধন তাতে পাবে”।।

প্রভুর মুখেতে শুনি এই কৃপা বাণী।

প্রেমানন্দে সে মহেশ লোটায় ধরণী।।

কাঁদিয়া বলেছে “নাথ এই ভিক্ষা চাই।

পারি যেন তব বাক্য পালিতে সদাই।।

তোমার তরণী প্রভু তোমার চালান।

তোমার ঘরণী লক্ষ্মী দিবে সব ধন।।

যাহা কর তুমি মোরা উপলক্ষ্য।

তোমার আজ্ঞাতে চলে দেব যক্ষ রক্ষ।।

সকলি করত তুমি হরি গুণধাম।

তুমি কর সব কাজ মোরা পাই নাম।।

এমন দয়াল হায় আর কোথা নাই।

কিছু নাহি করি মোরা তবু সব পাই।।

এমনি নৈষ্ঠিক ছিল সেই মহা সাধু।

অবিরত মত্ত পানে হরি নাম মধু।।

এবে শুন বলি তার মধুর চরিত্র।

শ্রবণে কলুষ নাশ জীবন পবিত্র।।

নৌকার চালান হল ওড়াকান্দী বাড়ী।

হরির তরণী সব চলে সারি সারি।।

দূরদেশে সবে যায় বাণিজ্য কারণে।

মাঝে মাঝে ঘাটে আসে হিসাবাদি দানে।।

প্রতিবারে দেখা যায় মহেশের নায়।

সর্বাপেক্ষা বেশি লাভ হয়েছে সদায়।।

একবার আগে ভাগে সব নৌকা এল।

দৈবক্রমে মহেশের কিছু দেরী হল।।

সকল বেপারী আসে প্রভুর নিকটে।

আপন হিসাব দেয় সবে নিষ্কপটে।।

অর্থপানে হরিচাঁদ ফিরিয়া না চায়।

মহাপ্রভু গুরুচাঁদ সব বুঝি লয়।।

সহসা জিজ্ঞাসে হরি গুরুচাঁদ ঠাঁই।

কে কত পেয়েছ টাকা বল দেখি তাই।।

আজ্ঞা মাত্র গুরুচাঁদ হিসাব কহিল।

হিসাব শুনিয়া হরি হাসিয়া উঠিল।।

পরে বলে “তোরা সবে কি কাজ করিস্।

মহেশের সঙ্গে তোরা সকলে ঠকিস্।।

কি যে বেটা করে সেটা বোঝা বড় দায়।

যতেক রাজ্যের টাকা (যেন) বাঁধে তার গায়”।।

এই মাত্র কথা যবে বলিল শ্রী হরি।

উপনীত শ্রীমহেশ বলে হরি হরি।।

মহেশ আসিয়া বন্দে শ্রীহরির চরণ।

মহেশে দেখিয়া হরি বড় খুশি মন।।

ছলা করি বলে হরি মহেশের ঠাঁই।

“বলহে আমারে তুমি মহেশ গোঁসাই।।

কি যে কর কোথা থাক বোঝা বড় দায়।

রাজ্য ভরা টাকা যেন চিনিছে তোমায়।।

এক সাথে সবে জুটি বেপারেতে যাও।

সব হতে বেশী টাকা তুমি কিসে পাও।।

প্রভুর বচন শুনি মহেশ হাসিল।

অন্তরে রাখিল ভক্তি রহস্যে কহিল।।

“শুন হরি লাজে মরি তোমার বচন।

মহেশ বেপারী নাকি হয়েছে এমন।।

বড়ই যোগ্যতা রাখে মহেশ বেপারী।

দিবারাত্রি বলে সবে শুনে লাজে মরি।।

আমার মনের কথা বুঝিলনা কেহ।

কিছুতে গেলনা তাই মনের সন্দেহ।।

মহেশের গায়ে বেঁধে টাকা যদি আসে।

কেবা টাকা দেয় কেহ জানে কি এ দেশে।।

মহেশ এনেছে টাকা সবে ইহা কয়।

যেই বেটা টাকা দেয় চিনে না তাঁহায়।।

মূল ছেড়ে ডাল নিয়ে করে ঝাঁকা ঝাকি।

আসল ফেলিয়া সবে তুলে নেয় মেকি।।

টাকাত লক্ষ্মীর বাসা লক্ষ্মী যার দাসী।

সেই বেটা ওড়াকান্দী আছে চুপে বসি।।

টাকা’ত সামান্য ধন সেই বেটা দিলে।

লক্ষ্মীর বাঞ্ছিত ধন অনায়াসে মিলে।।

সে বেটার কথা কোন বেটা নাহি বলে।

এই দুঃখে মহেশের বুক যায় জ্বলে।।

ওগো হরি শ্রীমুরারি এই ভিক্ষা চাই।

সে বেটার কথা যেন ভুলে নাহি যাই।।

এত বলি শ্রীমহেশ ভূমেতে লোটায়।

নয়নের জলে তার ধরা ভিজে যায়।।

শ্রীনাথ হরিচাঁদ বড় প্রীত মনে।

সবারে ডাকিয়া বলে মধুর বচনে।।

“দেখ সবে কোন ভাবে বহু লভ্য হয়।

মহেশের মত হলে লাভ করা যায়।।

এই ভাবে গুরুচাঁদ বাণিজ্য করিল।

বাণিজ্যের ফলে বহু ধন ঘরে এল।।

বয়স বিংশতি কালে বাণিজ্যে নামিল।

দশ বর্ষকাল মধ্যে বহু লভ্য হল।।

বিভিন্ন বন্দরে করে তরণী চালান।

যেথা যায় সেথা হয় বহু লাভবান।।

শ্রীগুরুচাঁদের নায় যেবা ভাগী হ’ল।

দারিদ্র ঘুচিল তাঁর ধন রত্ন পেল।।

বিদেশে নৌকার মাল চালানাদি করে।

বড়ই ঝঞ্ঝাট তা’তে বুঝিলা অন্তরে।।

মনে ভাবে স্থায়ী ভাবে কোন বন্দরেতে।

নির্মাণ করিয়া গৃহ রহিবে তাহাতে।।

ইতি মধ্যে জন্মিয়াছে সুধন্য কুমার।

বয়স তখন তার পঞ্চম বছর।।

বাণিজ্যে আনিয়া অর্থ প্রভু ভাবে মনে।

গৃহাদি উন্নতি করি বিশেষ যতনে।।

আসাম হইতে আনে কাষ্ঠ মূল্যবান।

টিনের ছাউনি গৃহ করিল নির্মাণ।।

ক্রমেই উন্নতি দেখি গুরুচাঁদ প্রতি।

মহাপ্রভু হরিচাঁদ মনে হর্ষ অতি।।

গৃহে ধর্মে সুনিপুণ সংযত চরিত্র।

বেশ ভূষা আচরণে সকলি পবিত্র।।

গম্ভীর বচন কহে চপলতা শূন্য।

বাল, বৃদ্ধ, যুবা সবে তাঁরে করে মান্য।।

গুরুচাঁদ দরশনে ভকতে আনন্দ।

তাহা দেখি হরিচাঁদে হয় প্রেমানন্দ।।

ধর্ম নীতি শাস্ত্রে গুরুচাঁদ দক্ষ।

পিতৃ ধর্ম রক্ষিবারে একমাত্র লক্ষ্য।।

এই ভাবে গুরুচাঁদে দেখিয়া নয়নে।

হরিচাঁদ যেতে চায় নিজ নিকেতনে।।

আপনার কর্ম ভার গুরুচাঁদে দিয়া।

হরিচাঁদ যেতে চায় পৃথিবী ছাড়িয়া।।

উপযুক্ত সর্বোত্তম গুরুচাঁদ বটে।

শক্তি তাই দিতে চায় শ্রীগুরু নিকটে।।

বাসাঘর করিবারে গুরুচাঁদ ভাবে।

হরিচাঁদ ইচ্ছা করে তার আগে যাবে।।

বার’শ চুরাশি সাল ফাল্গুন আসিল।

উত্তর আয়নে হরি স্বদেহ ত্যাজিল।।

আপন শক্তি নাথ গুরুচাঁদে রাখে।

সে শক্তি শ্রীগুরুচাঁদ ঐশ্বর্যেতে ঢাকে।।

হরি লীলামৃত গ্রন্থে তিরোভাব খণ্ডে।

কবি রসরাজ লিখে মধুর প্রবন্ধে।।

কোন ভাবে হরিচাঁদ দেহ তেয়াগিল।

কোন ভাবে তার শক্তি গুরুচাঁদে গেল।।

পূর্বাপর রাখিয়াছ গ্রন্থের সম্বন্ধ।

সংক্ষেপে বর্ণিব কিছু সেই যে প্রবন্ধ।।

মতুয়া ভক্তের পদে কোটি দণ্ডবৎ।

যাহাদের কৃপাগুণে পাপী হয় সৎ।।

গুরু গোপালের দয়া শিরোপরে ধরি।

তরিতে সংসার-সিন্ধু বল হরি হরি।।

Wednesday, July 29, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 13 ভবিষ্যৎ দর্শন


ভক্ত গৃহে হরিচাঁদ         সাঙ্গ করি প্রেমাহ্লাদ

সেই দিনে ওড়াকান্দী ধামে ফিরি এল।

নামেতে ভবানী বুড়ি      নড়াইল তার বাড়ী

প্রভু সঙ্গে শ্রীধামেতে উপনীত হ’ল।।

ভক্তি মতি অতিশয়       তাঁর গুণে বাধ্য রয়

হরিচাঁদ প্রভু মোর ক্ষীরোদ ঈশ্বর।

মনোগত বহুকথা          ভবানী বলিত তথা

ভক্তি গুণে প্রভু করে বাঞ্ছা পূর্ণ তাঁর।।

যেদিন আসিল ধামে      যামিনির শেষ যামে

প্রভু পদ কাছে বসি করে পদ সেবা।

কি জানি কি ভাবি মনে   চাহিয়া প্রভুর পানে

বলে “এক কথা মোর মনে ওঠে বাবা।।

তোমার সোনার ধাম      ধাম মধ্যে সর্বোত্তম

শিব লোক ব্রহ্ম লোক ধন্য সব হতে।

এমন পবিত্র ধামে         তোমার পবিত্র নামে

কবে বিশ্ববাসী আসি মাতিবে নামেতে।।

আমার যে ইচ্ছা হয়       শুন ওহে দয়াময়

এই ধামে হত যদি ধর্ম্ম মহামেলা।

দলে দলে সাধুগণ         করে যদি আগমন

নাম রসে মেতে সবে করে প্রেম খেলা।।

চারিদিকে শুনি কত       মেলা মিলে শত শত

ধর্ম মেলা তার মধ্যে মিলে নানা দেশে।

সবা হতে উচ্চভাব         তোমার মধুর ভাব

হেথা কেন মিলালেনা মেলা সবিশেষে”।।

ভবানির কথা শুনি         ভবেশের শিরোমণি

কৃপা করি কহিলেন বাক্য সুমধুর।

“শুন শুন মা ভবানী       তব ইচ্ছা আমি জানি

পূরা’ব তোমার ইচ্ছা চিন্তা কর দূর।।

চল বর্হিবাটী যাই          চেয় দেখ রাত্রি নাই

প্রভাতের পূর্বে তুমি দেখিবে স্বচক্ষে।

ভবিষ্যতে এই ধামে    যে মেলা মিলিবে ক্রমে

সেই দৃশ্য দেখ তুমি ভক্তগণ পক্ষে।।

ইহা কেহ দেখে নাই       কার কাছে কহি নাই

নিজ কন্যা বলি তোমা এ দৃশ্য দেখাই।

কোথা কিছু না বলিবে     সব গোপনে রাখিবে

আমি গেলে বল সবে বাধা কিছু নাই।।

এত বলি দ্রুত গতি       ক্ষীরোদ বাসিনী পতি

ভবানীকে সঙ্গে করি প্রাঙ্গণে আসিল।

পদ্ম হস্ত চক্ষে দিয়ে       ভবানিকে সম্বোধিয়ে

বলে ‘কন্যা চেয় দেখ কিবা দৃশ্য হল”।।

পদ্ম স্পর্শ পেয়ে চোখে    ভবানী চাহিয়া দেখে

ওড়াকান্দী যেন আর ওড়াকান্দী নাই।

উত্তাল তরঙ্গ প্রায়         চতুর্দিকে শব্দ হয়

অগণন নরগণ জুড়ি সর্ব ঠাঁই।।

উন্নত ইষ্ট কালয়        শ্রীধাম জুড়িয়া রয়

হ্রদের আকারে দেখে তড়াগ নিচয়।

শ্রী পুরীর পুরোভাগে       অমল ধবল রাগে

সুউচ্চ মন্দির শীর্ষ দাঁড়াইয়া রয়।।

লোহিত পতাকা উড়ে     মন্দিরের শীর্ষ চূড়ে

শঙ্খ শিঙ্গা ডঙ্কা কাংশ বাজে হুহুঙ্কারে।

অসংখ্য মতুয়া ভক্ত     নামে গানে প্রেমে মত্ত

বাহু তুলি নৃত্য করে মধুর ঝঙ্কারে।।

যত দূর দৃষ্টি যায়          লোকারণ্য ময় ময়

চলে ছুটে বালবৃদ্ধ যুবক যুবতী।

নরস্রোত অবিরাম         চলে ওড়াকান্দী ধাম

কন্ঠে কন্ঠে ওঠে ধ্বনি হরিনাম গীতি।।

শ্রীধামের পাদ মূলে       ক্রোশ জুড়ি সর্বস্থলে

অসংখ্য দোকানী বসে দোকান খুলিয়া।

যাহা চাই তাহা পাই   “নাই” কথা মোটে নাই

পৃথিবী এনেছে যেন উজার করিয়া।।

খাদ্য দ্রব্য বাদ্য দ্রব্য       বসন ভূষণ দ্রব্য

খেলা ধুলা দ্রব্য কত রাখে সাজাইয়া।

ব্রতচারী মঠাচারী          দলে দলে সারি সারি

গলি গলি ভিক্ষা করে খোল বাজাইয়া।।

মিলেছে মোহন মেলা    সিংহ ব্যাঘ্র জন্তু খেলা

দলে দলে তাবু ফেলি করে প্রদর্শন।

বাজীকর জুয়াচোর     লোভী, দ্বেষী আর চোর

মেলাতে নাহিক স্থান সব অদর্শন।।

নাহি কোন দরাদরি        এক বাক্য রাখে ধরি

“জয় হরিচাঁদ” ধ্বনি সাথে সাথে তার।

শ্রী হরির প্রেমের খেলা   আসে যত দেল খোলা

মন খাঁটি রেখে সবে করিছে বাজার।।

শাসন লাগেনা তথা       আপনি নোয়ায় মাথা

কে যেন আড়ালে থাকি সকলে চালায়।

অধিকার খর্ব করি          যম এসে বলে হরি

হরিভক্ত পদ ধুলি মাখে সর্ব গায়।।

শ্রীধাম প্রাঙ্গণ পরে        অবিরাম উচ্চৈঃস্বরে

হরি বলি ভক্ত দলে ধুলিতে গড়ায়।

ভুলি তৃষ্ণা ভুলি ক্ষুধা     নয়নের জলে কাঁদা

শ্রীধামের ধুলি তুলি ভক্তে মাখে গায়।।

ভাসিয়া নয়ন জলে        অগনিত বামাদলে

হুলুধ্বনি দেয় সবে রহিয়া রহিয়া।

সবার অলক্ষ্যে থাকি      করুণ কোমল আঁখি

ভক্তে দেখে শান্তি মাতা চাহিয়া চাহিয়া।।

শ্রী নাট মন্দির ঘরে        রত্ন সিংহাসন পরে

পবিত্র আসন এক করিছে বিস্তার।

মনে হয় কোন রাজা      শক্তিমন্ত মহাতেজা

তেঁহ আসি বসিবেন আসন উপর।।

সকলি আশ্চর্য গণি        জ্ঞান হারা সে ভবানী

দ্রুত পদে ছুটী চলে বাড়ীর ভিতরে।

পথে দেখে আগুয়ান       মহাপ্রভু গুরুচাঁন

আনন্দে মাতিয়া দেবী বলিল তাঁহারে।।

“ওরে দাদা এস ছুটে      অপূর্ব ঘটনা ঘটে

বাবার দয়াতে দেখ ওড়াকান্দী পুরে।

বড় দুঃখ মোর মনে       তত্ত্ব কেহ নাহি জানে

তুমি মাত্র যোগ্য দেখি জগতের পরে।।

দুর্ভাগা জগত বাসী        দেখিল না কেহ আসি

কোটি স্বর্গ আছে মিশি এই পুণ্য ধামে।

যক্ষ রক্ষ দেবগণ          আসিয়াছে অগণন

সকলে মেতেছে আজি “হরিচাঁদ” নামে।।

চল চল শীঘ্র করি কি     খেলা খেলিছে হরি

দেখিবারে চাও যদি বিলম্ব না কর।

মিলেছে প্রেমের মেলা    মর্তে দেখ স্বর্গ খোলা

বাবার চরণ ছুঁলে দেখিবারে পার”।।

ভবানীর কথা শুনি         গুরুচাঁদ গুণমনি

ত্বরিতে চলিল যথা হরিচাঁদ বসে।

শ্রীপদে প্রণত হয়ে         পদধূলি শিরে নিয়ে

কর জোড়ে দাঁড়াইল পিতৃপার্শ্বে এসে।।

নয়ন না পালটিতে        দেখে প্রভু চারিভিতে

অভূত অপূর্ব যত মহা দৃশ্যাবলী।

অজানা অচেনা যেন       মনে হয় অনুমান

মর্ত্তে ছাড়ি স্বর্গ হ’তে আর উর্দ্ধলোকে।

মিলিছে বিপুল মেলা      কি যেন অনন্ত খেলা

জয় জয় ধ্বনি শুধু শুধু চারিদিকে।।

অপলক দৃষ্টি মেলি        গুরুচাঁদ মহাবলী

অভূত অপূর্ব্ব লীলা দেখে দাঁড়াইয়া।

মুখচন্দে কথা নাই         নয়নে পলক নাই

দেখিছে পিতার লীলা নয়ন ভরিয়া।।

দেশ কাল পাত্র মাত্র       মনে কিছু নাহি মাত্র

একাকী চলিছে যেন অকূল সাগরে।

জ্যোতিষ্মান সূর্য প্রায়      হরিচাঁদ শোভা পায়

তাঁহে লক্ষ্য করি সবে ভাসে প্রেম নীরে।।

দেখিলা চৌদিক হ’তে    সবে পুষ্পাঞ্জলি হাতে

নরাকারে জ্যোতির্ম্ময় পুরুষ রমণী।

গললগ্নী কৃতবাসে      আসিয়া শ্রী হরির পাশে

পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে পদে লোটায় ধরণী।।

করজোরে করে স্তব      দেব দেবী সেই সব

হরিচাঁদ প্রতি চাহে সজল নয়নে।

পরে গুরুচাঁদ প্রতি         করিয়া ভূমিতে নতি

মন্দ গতি চলে সবে গগনের পানে।।

দীর্ঘ শ্মশ্রু দীর্ঘ কেশ       পুণ্য ময় শুদ্ধ বেশ

মুনি ঋষি এল সবে পতাকা বহিয়া।

সবে করে হরিধ্বনি       কাঁপে যেন ধরারাণী

মতুয়ার বেশে সবে আইল ধাইয়া।।

বজ্র কণ্ঠে করে নাম       সর্ব দেহে ঝড়ে ঘাম

লক্ষ্য মাত্র প্রাণারাম হরি গুণমণি।

রামাগণ বামা কণ্ঠে        হুলু দেয় দণ্ডে দণ্ডে

কিবা শুনি মধুমাখা প্রেমময় ধ্বনি।।

অশ্ব, গজ, শত শত       সংখ্যা তার বলি কত

রাজ তুল্য কত নর এসেছে মেলাতে।

অসংখ্য হেরি জনতা      নাহি মুখে বাহ্য কথা

সবে ব্যাকুলিত যেন শ্রী হরি দেখিতে।।

শ্রী নাট মন্দির ঘরে        রহিয়াছে থরে থরে

অসংখ্য সারিতে কত বিবিধ আসন।

সজ্জন পণ্ডিত যত         যার যার মনঃপুত

স্থানে বসি করিয়াছে আসন গ্রহণ।।

মধ্য সিংহাসন খানি      শুন্য কেন নাহি জানি

রাজর্ষি বুঝিবা কেহ বসিবে আপনি।

এই কথা মনে হয়         গুরুচাঁদ ডাকি কয়

“এই মর্ম কথা পিতা বল মোরে শুনি।।

শুন্য কেন সিংহাসন      বসিবেন কোন জন

সেই জন এবে কোথা জানিবারে চাই।

কেবা সেই ভাগ্যবান      জানিতে ব্যাকুল প্রাণ

তাঁরে দেখে মনো সুখে নয়ন জুড়াই।।

অনন্ত অসীম লীলা        তোমার প্রেমের খেলা

তব দয়া গুণে আজি দেখিলাম চোখে।

এ দৃশ্য কেন দেখা’লে মোরে কিবা শিক্ষা দিলে

দয়া করি বল পিতঃ আপনার মুখে।।

এ মেলা মিলিবে কোথা মিলিছে কি মিলিবে তা

সেই তত্ত্ব আমি কিছু নাহি পাই দিশা।

কে মিলাবে এই মেলা   কোথা হবে এই খেলা

এ মেলা দেখিতে মোর মনে বড় আশা।।

বুঝিলাম অনুমানে   বসিবে যে সিংহাসনে

সে জন মিলাবে এই ধর্ম মহামেলা।

এ দৃশ্য যদি দেখালে    সে জন কোথা রাখিলে

তাঁরে নাহি দেখি শুধু দেখি তাঁর খেলা।।

পুনঃ ভাবি নিজ মনে      অই দিব্য সিংহাসনে

তোমাক বসালে সাজে অতি মনোহর।

যথা যোগ্য কার্য হয়       মনোব্যাথা দূরে যায়

রাজ রাজেশ্বর তুমি চারু কলেবর।।

নিবেদন শুনি কানে       চাহিয়া পুত্রের পানে

মৃদু হাসে রসময় রস সিন্ধু রাজ।

ললিত ঝঙ্কার তুলি       ভেদ করি মর্মস্থলী

কহে কথা যেন গান গাহে পিক রাজ।।

“শুন হে গুরু চরণ         প্রাণ তুল্য প্রাণধন

তোমাতে বড়ই প্রীত আছি চিরকাল।

দেখিলে যে ধর্ম মেলা   হেথা হবে সেই মেলা

সিংহাসনে রবে তুমি দেব মহাকাল।।

“আত্মা বৈ জায়তে পুত্র” এই জান তার সুত্র

তব মাঝে মোর লীলা হবে পরিপূর্ণ।

ভবানীর ভক্তিগুণে         ভবিষ্যতে টেনে এনে

কাল ব্যাবধান আজি করিয়াছি চুর্ণ।।

এই ওড়াকান্দী ধামে      মম নামে তব নামে

ধর্ম মহামেলা হবে অভূত অপূর্ব।

ধর্ম সিংহাসনে বসি        তুমি হবে পূর্ণ শশী

ক্ষুদ্র ধর্ম তারাবৎ সবে হবে খর্ব।।

শুনেছ জননী ঠাঁই         তাহা বুঝি মনে নাই

যাহ হবে ভবিষ্যতে তা আজি দেখিলে।

সংযত নয়ন মনে       যা’ দেখিলে এই খানে

সকলি ফলিবে তবে এভাব রাখিলে।।

এই কথা যবে কয়         সে দৃশ্য লুকায়ে যায়

মহাভাবে গুরুচাঁদ চরণে পড়িল।

বলে “অনাদির আদি      এ দৃশ্য দেখালে যদি

মনোভ্রান্তি আজি হ’তে আমারে ছাড়িল।।

আমি ত নিমিত্ত মাত্র      তব হাতে রহে সূত্র

তাহে বান্ধা স্বর্গ মত্ত্য যতেক মণ্ডল।

যাহারে যে কথা কও    যে ভাবে যারে নাচাও

সবে নাচে তব হাতে তোমারি সকল।।

কে বুঝে তোমার তত্ত্ব     তুমি যে পরম তত্ত্ব

তব প্রেমে হ’য়ে মত্ত ছুটেছে জগত।

করণ-কারণ তুমি          স্থাবর জঙ্গম ভূমি

যাহা কিছু দেখি আমি তোমার সৃজিত।।

অসীম অধর তুমি          তুমি প্রভু তুমি স্বামী

যাহা কিছু পাই আমি সকলি অপূর্ণ।

কে পারে জানিতে তোমা  কেবা পায় তব সীমা

তোমারে বর্ণিতে পারে নাহি হেন বর্ণ।।

শুনিয়াছি কুরুক্ষেত্রে       চাহিয়া করুণ নেত্রে

তোমার কৃপার পাত্র পাণ্ডব অর্জ্জুনে।

দেখাইলে বিশ্ব রূপ        বিশ্ব জোড়া অপরূপ

দেখিয়া অপূর্ব্ব রূপ পড়িল চরণে।।

ভবিষ্যৎ দেখা ছলে        সেই রূপ দেখাইলে

কত দয়া প্রকাশিলে ও হে বিশ্বনাথ।

কি আর বলিব তাতঃ     পদে কোটি দণ্ডবৎ

আমি তব পদানত কর আত্মসাৎ।।

যে দয়া দেখালে মোরে   এহেন রূপ সাগরে

সেই দয়া দয়া করে রাখ মোর শিরে।

তব দয়া আছে মোরে    কায় মনো বাক্য ঘিরে

এ চিন্তা অন্তরে যেন রহে সদাকারে।।

আমি কিছু নাহি চাই      যাহা ইচ্ছা কর সাঞী

তোমা ছাড়া কিছু নাই বুঝিনু অন্তরে।

যাহা কর ইচ্ছাময়         সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়

লোকে করে লোকে কয় মোহের আন্ধারে।।

অতুল অনন্ত স্বামী       পিতা তুমি মাতা তুমি

কিবা নাহি নহ তুমি তুমি ত সকল।

মাটির মায়াতে পড়ি       তোমাতে সম্বন্ধ গড়ি

আসল সম্বন্ধ ছাড়ি করি কোলাহল।।

এ মায়া প্রপঞ্চ পরে       রয়েছি মায়াতে ঘিরে

তোমাকে না দেখি প্রভু দৃষ্টি নাহি চোখে।

দয়া সু দর্শন দিয়ে        মায়া ধাঁধা ঘুচাইয়ে

নয়নে আলোক দিয়ে তরাও আমাকে।।

পুত্র মুখে স্তব শুনি         ক্ষীরোদের পূর্ণ মনি

বলে “শোনরে ভবানী! বলি তোর ঠাঁই।

নিজ চোখে যা দেখিলি   নিজ কানে যা শুনিলি

আজ্ঞা বিনা প্রকাশিলে তোর রক্ষা নাই।।

শুনিয়া প্রভুর বাণী         কহে বাণী সে ভবাণী

“শোন বাবা, হাবা মেয়ে আমি মোটে নই।

মরনের কিবা ভয়         পিতা যার মৃত্যুঞ্জয়

মরণে করিনা ভয় যদি কন্যা হই।।

তা’তে কিবা শঙ্কা করি   তুমিত মারিবে হরি

সেই মরা বাঞ্ছা করি সেই মরা চাই।

এত দয়া মোর পরে       হ’ল বল কি প্রকারে

এত দয়া পেতে মোর কোন সাধ্য নাই।।

এই কথা ঘরে ঘরে        নিশ্চয় বলিব জোরে

হাটে, ঘাটে, মাঠে পথে সবারে বলিব।

বলা যবে শেষ হয়         হে আমার দয়াময়

তোমার চরণে আসি আপনি মরিব।।

ওরে বাবা শোন কথা      মরা অতি তুচ্ছ কথা

মরণের ভয় আমি মোটে পাই নাই।

দিবা রাত্রি ভয় মনে       যদি কোন মন্দ ক্ষণে

জীবনে বাঁচিয়া থেকে তোমা ভুলে যাই।।

সেই ভাবে এ জীবনে      বাঁচিয়া যেন মরিনে

এছাড়া চাহিনে কিছু তোমার চরণে।

রাখ মার যাহা কর        আমি কি বলিব তার

তুমি প্রভু প্রাণেশ্বর হৃদয় আসনে”।।

ভবানীর বাণী শুনি         ভবানীর শিরোমনি

বহু প্রীতি মনে বলে উভয়ে ডাকিয়া।

“মহাজন রীতি এই       এ সব বলিতে নেই

আমি বলিয়াছি তাই রাখিতে ঢাকিয়া।।

যখনে সময় হবে     তখনে জানিবে সবে

এ সময় এই সব বলে কার্য নাই।

নিশি দেখ হল ভোর   দিকে দিকে ওঠে সোর

দোঁহে হেথা হতে যাও জাগিছে সবাই।।

হরি আজ্ঞা অনুসারে       দোঁহে গেল স্থানান্তরে

প্রভু হরিচাঁদ তবে উঠিয়া দাঁড়ায়।

কি জানি কি মনে ভাবি পূর্ণতার পূর্ণ ছবি

মৃদু মৃদু হাসি প্রভু গৃহ মধ্যে যায়।।

ভবিষ্য আলেখ্য আঁকি     হরিচাঁদ কমলাখি

মহাপ্রভু গুরুচাঁদে আপনি দেখায়।

সেই ছবি নিজ বুকে       গুরুচাঁদ রাখে ঢেকে

সময় বুঝিয়া প্রভু যে ছবি মেলা’য়।।

গুরুচাঁদ ইহ পরে           হরি আজ্ঞা অনুসারে

সংসারে প্রবেশ করে সাজিতে গৃহস্থ।

ইহ পরে বিভা হয়         ব্রহ্মচর্য পালি রয়

পরে বংশ রক্ষা করে সংযমে প্রশস্ত।।

জ্যেষ্ঠ পুত্র জন্ম লয়       গুরুচাঁদ দয়াময়

কর্ম্ম ক্ষেত্রে অর্থ লাগি বানিজ্য করিল।

গোপালের পদ স্মরি       সে কথা বর্ণনা করি

সাধু জনে সবে মিলি হরি হরি বল।।

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 12 Shri Guruchand in the case of family সংসার ক্ষেত্রে শ্রী গুরুচাঁদ

Shri Guruchand in the case of family

Harichand Bivu is in charge of Guruchand.

Never looked after the world.

The boy grows up in his youth.

Guruchand entered the home ashram.

Purna Lakshmi gives advice to Shanti Mata.

The Lord is happy to run the family.

How many items do the devotees give to Harichand?

Harichand did not look back at him.

However, the pair brought all the products to the fans.

Rakhi gives such as Roy Jagat Janani ..

I see the infinite glory of Sri Guru Chand.

There is no limit to the desired imaginary Lord.

Bhakta Datta never looked at the product.

"Kay kleshe ani artha" is always like that.

One day due to the Goddess of Peace test.

Laughing and asking at Guruchand's place.

“Pranadhik Guruchand, listen to me.

Why do you try so hard to get money in vain.

Look at the quality of your father, my son.

The lack is gone, the darkness is gone.

The day goes by happily with whatever comes.

Why do you suffer so much?

Understanding the mother's mind, Lord, smile.

"Listen well mother then sentence sentence ..

I see Jananigo barely any quality.

Brings so many items to your building.

Go mother holding so many fruits in any tree.

The fruit of the green-kalpa-tree results in you.

My father Harichand is the root of the kalpa tree.

He who planted in the barren land.

The fruit comes from his virtue, the fruit he wants.

He comes by himself and gets the fruit later.

The fruit is your place in the trivial matter.

Whose worship is not equal to Brahma Vishnu.

His wife is my mother.

I need to be tested.

The world has come to life in the twilight.

You didn't know the creature forgot Maya Mohe ..

Your game will be over.

In the empty room, tell me who will bring the fruit.

I want to try to build a family.

I have to work and eat, ma'am. "

If you say so, Lord Mother smiles.

"Then my doubts vanished in the sentence.

That feeling should be in your mind.

Lack will never touch you ..

And bless you listen Bachadhan.

Then people will give innumerable goods at home.

You have a great love for you.

I am also absolutely satisfied with this life.

If you want to know the future.

You will see it with your own eyes tomorrow morning ”.

So much so that Shanti Mata went to work at home.

"What will I see tomorrow?" The Lord began to think.
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

সংসার ক্ষেত্রে শ্রী গুরুচাঁদ

গুরুচাঁদে দিয়া ভার হরিচাঁদ বিভু।

সংসারের পর দৃষ্টি না করিত কভু।।

বয়সে বালক মাত্র যৌবনে উন্মেষ।

গুরুচাঁদ গৃহাশ্রমে করিল প্রবেশ।।

পূর্ণ লক্ষ্মী শান্তি মাতা দেয় পরামর্শ।

সংসার চালায় প্রভু মনে হয়ে হর্ষ।।

ভক্তগণ কত দ্রব্য হরিচাঁদে দেয়।

তার প্রতি হরিচাঁদ দৃষ্টি না ফিরায়।।

তবে ভক্তগণে জুটি সব দ্রব্য আনি।

রাখি দেয় যথা রয় জগৎ জননী।।

শ্রী গুরুচাঁদের দেখি অপার মহিমা।

বাঞ্ছা কল্পতরু প্রভু গুণে নাহি সীমা।।

ভক্ত দত্ত দ্রব্য প্রতি কভু দৃষ্টি নাই।

“কায় ক্লেশে আনি অর্থ” সদা ভাবে তাই।।

একদিন শান্তি দেবী পরীক্ষা কারণে।

হাসিয়া জিজ্ঞাসে কথা গুরুচাঁদ স্থানে।।

“প্রাণাধিক গুরুচাঁদ, শুন মম কথা।

অর্থ পেতে এত চেষ্টা কর কেন বৃথা।।

তোমার পিতার গুণে দেখ বাছা মোর।

অভাব গিয়াছে দূর কেটে গেছে ঘোর।।

যাহা আসে তা’তে সুখে দিন চলি যায়।

এত কষ্ট কর কেন কিবা এত দায়”।।

মাতার মনন বুঝি প্রভু কন হাসি।

“ভালই শুনিনু মাতা তব বাক্য রাশি।।

বল দেখি জননীগো সবে কোন গুণে।

এনে দেয় এত দ্রব্য তোমার ভবনে।।

কোন বৃক্ষে এত ফল ধরে গো জননী।

হরি-কল্প-বৃক্ষে ফল ফলে যে আপনি।।

কল্প বৃক্ষ মূলে মোর পিতা হরিচাঁদ।

অফলা জমিতে যিনি করিল আবাদ।।

তার গুণে আসে ফল, ফল তাঁরে চায়।

নিজে নিজে এসে ফল পরে তাঁর পায়।।

ফল মূল তুচ্ছ কথা তোমাদের ঠাঁই।

যাঁরে পূজে ব্রহ্মা বিষ্ণু তাঁর তুল্য নাই।।

তাঁহার ঘরণী তুমি জননী আমার।

আমাকে পরীক্ষা করা কিবা দরকার।।

তারিতে জগৎ জীবে আসিয়াছ দোঁহে।

তোমা না চিনিল জীব ভুলে মায়া মোহে।।

তোমাদের খেলা যবে শেষ হয়ে যাবে।

শূন্য ঘরে বলো মাগো ফল কে আনিবে।।

আমি চাই চেষ্টা করি সংসার গ’ড়াতে।

আমার যে হবে মাগো কাজ করে খেতে”।।

এত যদি বলে প্রভু মাতা হাসি কয়।

“তব বাক্যে বাছা মোর ঘুচিল সংশয়।।

যে ভাব তোমার মনে তাই যেন থাকে।

অভাব কখনো বাছা ছোবেনা তোমাকে।।

আর আশির্বাদ করি শুন বাছাধন।

তব ঘরে দিবে লোকে দ্রব্য অগণন।।

তোমাতে বড়ই প্রীত জনক তোমার।

আমিও পরম তুষ্ট এই জান সার।।

ভবিষ্যৎ জানিবারে বাঞ্ছা যদি মনে।

কল্য প্রাতে দেখিবে তা নিজের নয়নে”।।

এত বলি শান্তি মাতা গৃহ কার্যে গেল।

“কল্য কি দেখিব” প্রভু ভাবিতে লাগিল।।

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 11 পুত্র কন্যাদির জন্মগ্রহণ ও তাঁহাদিগের চরিত্র মাহাত্ম্য বর্ণন। The birth of sons and daughters and the greatness of their character.

বন্দনা

 

জগৎ তারণ প্রভু শ্রী হরি ঠাকুর।

ওড়াকান্দী করে লীলা মধুর মধুর।।

যে আতুর দুঃখী জনে ইতিপূর্বে কেহ।

কোন দিনে কোন ভাবে করে নাই স্নেহ।।

সেই ব্যথিতের দুঃখে বড় দুঃখী হৈয়া।

হরিচাঁদ অবর্তীর্ণ সাঙ্গ পাঙ্গ লৈয়া।।

তেঁহ কার্যে তেঁহ পুত্র প্রভু গুরুচাঁদ।

পূর্ণ করি দীনজনে দিলা প্রেমাহ্লাদ।।

পবিত্র গৃহীর ধর্ম আপন জীবনে।

আপনি পালিলা প্রভু জীবের কল্যাণে।।

তেঁহ কার্য সহযোগে দেবকুল যত।

তেঁহ বংশে জন্ম নিল সাজি সুতাসুত।।

ধন্য শ্রী শশী ভূষণ বংশ শ্রেষ্ঠ যেই।

তস্য গুণে মুগ্ধ সদা আঁছিল সবাই।।

পিতৃ কার্যে তেঁহ চেষ্টা সবার অধিক।

উদার চরিত্র বান সত্যেতে নির্ভীক।।

জয় সুধন্য কুমার দ্বিতীয় নন্দন।

“বিনয়ের অবতার” মধুর বচন।।

তেঁহ হরি পদে সদা নয়ন রাখিলা।

হরিচাঁদ লীলাগীতি কতই লিখিলা।।

কন্দর্প মোহন কান্তি শ্রী উপেন্দ্র নাথ।

তেঁহ নিত্য রহে সদা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সাথ।।

বহু গুণী সুরেন্দ্রনাথের জয় জয়।

সমাজ উন্নতি লাগি চিন্তা সদা রয়।।

করুণা রূপিণী দেবী শ্রী করুণা ময়ী।

প্রভু কন্যা সতী ধন্যা পদে নত হই।।

গুরু গোপালের পদ মনে করি সার।

এদের পবিত্র লীলা করিব প্রচার।।

প্রস্তাবনা

ষষ্ঠ বর্ষ পালে প্রভু কঠোর সংযম।

বিংশতি বরষ হ’ল এবে বয়ঃক্রম।।

পিতৃ আজ্ঞা অনুক্রমে এ সময় হতে।

কিছুকাল বাস করে পত্নির সহিতে।।

পতি সতী উভয়ের দৃঢ় ব্রহ্মচর্য।

উভয়ের তেজস্বী যথা মধ্যাহ্নের সূর্য।।

আদর্শ দম্পতি দেখি যত নারী নরে।

দণ্ড বৎ করে পদে অবনত শীরে।।

সবে বলে “কিমাশ্চর্য সাধনা গভীর।

দুরন্ত যৌবন কালে দোঁহে ধীর স্থির।।

নিশ্চয় মনুষ্য নহে এ দেব দম্পতি।

জীব তরাইতে হ’ল ধরাপরে স্থিতি।।

কেহ বলে এই বাক্য কিসের সন্দেহ।

দেব বিনা এই ঘরে আসে নাকি কেহ।।

পূর্ণ ব্রহ্ম হরিচাঁদ এল যেই ঘরে।

সেই ঘরে দেব বিনা কে আসিতে পারে।।

“এ সব হরির খেলা” কেহ বলে কান্দি।

তাঁর কৃপা গুণে হল তীর্থ ওড়াকান্দী।।

যাহার যে ভাব মনে সেই ভাবে কয়।

এ সব আলাপে প্রভু কান নাহি দেয়।।

পিতৃ আজ্ঞা অনুসারে বংশ রক্ষা করে।

ক্রমে চারি পুত্র এক কন্যা জন্ম ধরে।।

জগৎ তারিতে এল হরি-গুরুচাঁদ।

পেয়ে চাঁদ শ্রী গোপাল পাইল আহ্লাদ।।

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆


Worship


jagat Taran Prabhu Sri Hari Thakur.


Orakandi leela madhur madhur ..


Someone who is already miserable.


I have never done affection in any way.


I am very saddened by the pain of that pain.


Harichand avartirna sang pang laiya ..


His son Prabhu Guruchand in his work.


I fulfill the love given to the poor.


The religion of the holy house is in your life.


You are for the welfare of the living beings.


As much as Devkul with his work.


Saji Sutasut was born in Teh dynasty.


Blessed is Shri Shashi Bhushan who is the best of the dynasty.


Everyone was always fascinated by the quality of Tasya.


He tried his best in his father's work.


Liberal character is truly fearless.


Joy Sudhanya Kumar is the second paradise.


"Avatar of humility" is a sweet word.


He always kept an eye on Hari's position.


How much did Harichand write Lila Giti?


Kandarpa Mohan Kanti Shri Upendra Nath.


He always stays with his elder brother.


Surendranath's many victories.


I always think of improving the society.


Karuna Rupini Devi Shri Karuna Mayi.


Lord's daughter Sati bowed down in a blessed position.


I think Guru Gopal's position is fertilizer.


I will promote their holy pastime.


Suggestions


In the sixth year, the Lord exercised strict restraint.


Twenty years is now adolescence.


The father commands to be at this time in sequence.


He lived with his wife for some time.


Strong celibacy of both husband and wife.


Both are energetic, such as the midday sun.


I see the ideal couple as many women as men.


He bowed his head in the position of punishment.


Barely says, “The pursuit of miracles is deep.


Slowly and steadily in the twinkling of an eye at a young age.


Surely this couple is not human.


The status quo is in the wild.


No one doubts what this sentence says.


Does anyone come to this house without Dev?


Purna Brahma Harichand came to that house.


Who can come to that house without Dev.


"It's all Hari's game," someone cried.


Tirtha Orakandi is due to his grace.


Whoever thinks that way.


The Lord does not listen to all these conversations.


The father protects the family according to the command.


Gradually four sons and one daughter were born.


Hari-Guruchand came to Jagat Tari.


Happy to get the moon Sri Gopal Pail ..

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 10 ভূমি খণ্ড

সেই ভাবে গুরুচাঁদ মিশে সবা সঙ্গে।

আপনাতে রহে ডুবি আপন তরঙ্গে।।

শ্রী গোলক হীরামন, সাধু মৃত্যুঞ্জয়।

গুরুচাঁদে মান্য তারা করে অতিশয়।।

ইহ সঙ্গে গুরুচাঁদ করয়ে সম্প্রতি।

ভাবালাপ করে সদা এদের সংহতি।।

যবে গৃহে রহে থাকে একক হইয়া।

বাহির বাটিতে রাত্রি বিনিদ্র কাটিয়া।।

গভীর নিশীতে করে একা পরিক্রম।

কভু বৃক্ষ তলে বসি দৃষ্টি করে ব্যোম।।

নির্ভয় উদার চিত্তে গাঢ় নিশাকালে।

আপনার ভাবে ডুবি মাঠ মধ্যে চলে।।

পিতা যবে গৃহে আসে ভকত সংহতি।

আহারাদি সুব্যাবস্থা করে শীঘ্র গতি।।

পিতার অগ্রেতে প্রায় কভু নাহি যায়।

দূরে রহি প্রীতি কার্য সকল করয়।।

ইচ্ছামত পিতা যদি কভু ডাকি লয়।

পিতার প্রীতার্থে সব মনন কহয়।।

দিনভরি করে প্রভু গৃহস্থালী কর্ম।

ঠিক যেন ব্রতচারী পালে ব্রতধর্ম।।

আলস্য নাহিক কভু কোন কার্য লাগি।

রাত্রে অল্প নিদ্রা যায় বেশি রহে জাগি।।

হাসি গল্প রসালাপ কিছু মাত্র নাই।

দূরে দূরে পাপি সব রহিত সবাই।।

এইভাবে গুরুচাঁদ পিতৃ বাক্য রাখে।

শুন দেবী সত্যভামা কি ভাবেতে থাকে।।

শান্তি দেবী জননী সদা সেবা করে।

গৃহস্থালী কর্ম করে আনন্দ অন্তরে।।

কোন কর্ম করিবারে শান্তি দেবী ধায়।

হাত হতে সত্যভামা তাহা কাড়ি লয়।।

হাসিয়া বধূকে মাতা কত করে রোষ।

“এইটুকু কাজ করা কিসে মোর দোষ।।

একেত বালিকা তুমি তাহে আদরিণী।

সব কাজ একা তুমি পার না জননী।।

কৃত্রিম রোষের ছলে মাতা এই বলে।

সত্যভামা দেবী তাহে বলে কতূহলে।।

“তোমার চরণে দাসী আমি যবে আছি।

সকল কাজের ভার আপনি নিয়েছি।।

আমি তব কন্যা দেবী বলিনু নিশ্চিত।

তব সেবা করে মনে হই বড় প্রীত।।

কর্মেতে আনন্দ মোর জান ঠাকুরাণী।

আমাকে বঞ্চিত করে হয়ো না পাষাণী।।

তোমার প্রীতিতে মোর জনম সফল।

তব আশির্বাদ হয় মোর মহাবল”।।

পিত্রালয়ে যেতে তাঁর নাহি লয় মন।

বর্ণে বর্ণে হরি-বাক্য করিছে পালন।।

যখন গৃহেতে ফিরে প্রভু হরিশ্চন্দ্র।

যতনে পূজেন দেবী চরণার বিন্দ।।

তাহে তুষ্ট হরিচাঁদ বলিত হাসিয়া।

“ঘরে ছিলে পাষাণী মা কেমন করিয়া।।

এবে পুত্র মুখ দেখি কতই উতলা।

মোরে ছেড়ে দিয়ে ঘরে কেমনে রহিলা।।

শ্রী হরির মুখে শুনি মধুময় বাণী।

প্রভুকে বলিত কথা করি জোড় পাণি।।

“পাষাণের মেয়ে আমি স্বভাবে পাষাণী।

তোমা হেন গুণনিধি তাই নাহি চিনি।।

তোমাকে চিনিতে তাতঃ পারিতাম যদি।

তোমাকে পাহারা দিতাম বসে নিরবধি।।

মোর পক্ষে তুমি বটে রয়েছ অচেনা।

তোমাকে চিনেছে যত ভকত ললনা।।

তারা সবে মন তব করিয়াছে চুরি।

পাষাণী মা ফেলে তাই রহ তেঁহ বাড়ি।।

কথা শুনি হরিমণি আনন্দ পাইল।

শিরে হাত রাখি তাঁর আশীষ করিল।।

বলে “মাগো তুমি মোরে হারায়েছ আজ।

কিছু দিন সেবা লব থাকি গৃহ মাঝ।।

অন্নপূর্ণা তুমি মাগো আছ এই ঘরে।

নিত্য সুখে অন্ন বাটি দিবে তুমি মোরে”।।

এই ভবে মহাদেবী পালে নিজ ধর্ম।

নাহি জানে হাসি, কলা, চটুলার কর্ম।।

স্বামীর মঙ্গল চিন্তা ক’রে দিবা রাতি।

হরিপদে বর মাগে করিয়া প্রণতি।।

স্বামী হতে দূরে বটে রাখে নিজ দেহ।

মনে প্রাণে স্বামী পদে সীমাহীন স্নেহ।।

বয়সে বালিকা বটে কর্মেতে গৃহিণী।

ধীর পদে যাতায়াত মধুর ভাষিণী।।

গুরুচাঁদ সত্যভামা শঙ্কর শঙ্করী।

রূপে গুণে সর্বাতীত নর দেহ ধারী।।

তাঁদের গুণের কথা অসীম অনন্ত।

কেবা কি বলিতে পারে যার নাই অন্ত।।

পথভ্রষ্ট নর কুলে দেখাইতে পথ।

পাপীরে দণ্ডিতে আর রাখিবারে সৎ।।

আপন জীবনে পালি যাহা শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

নর রূপে নর মাঝে করে সেই কর্ম।।

মনে প্রাণে যেই মানে প্রভুর আদর্শ।

দেবতা বাঞ্ছিত শান্তি পেয়ে মহাহর্ষ।।

আদি জন্ম পরে বিদ্যা বালক বয়সে।

বিদ্যা শেষে ব্রহ্মচর্য পালিল বিশেষে।।

আদর্শ গার্হস্থ্য নীতি পরে করে সার।

বংশ রক্ষা ধনার্জন পবিত্র আচার।।

সুশিক্ষা আত্মজগণে সমাজ সংস্কার।

মূঢ় অন্ধ নরগণে করিলা উদ্ধার।।

রাজ শক্তি সহযোগে জাতির কল্যাণ।

জ্ঞান দানে গড়ি তোলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।।

রাজ কার্যে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা বাড়িল।

হীন মান হীন আখ্যা দূর করি দিল।।

অর্থনীতি শাস্ত্রনীতি শিল্প ব্যবসায়।

রাজনীতি ধর্মনীতি সকলি শিখায়।।

দূর্নীতি দূরত্ব যত সমাজেতে ছিল।

বজ্রদণ্ড দানে সব দূর করি দিল।।

এমত প্রকারে গড়ি সমাজ জীবন।

পিতৃ ধর্ম ঘরে ঘরে করে বিতরণ।।

বিনিদ্র রজনী কাটে ধর্ম আলাপনে।

দয়া দণ্ডে শুদ্ধ করে যত ভক্ত গণে।।

ভক্ত মন উল্লাসিতে ভক্ত গৃহে যায়।

যথা যায় তথাকারে সর্ব্বনীতি কয়।।

ধর্ম কর্ম শুদ্ধাচার পবিত্র চরিত্র।

“ধীর হও সাধু হও” বলে যত্র তত্র।।

পৃথিবী ভরিয়া দিতে নিজ জাতি নাম।

অবিরাম আন্দোলন নাহিক বিশ্রাম।।

নিজ পৌত্র গণে তবে লণ্ডনে পাঠা’ল।

কিছুই অসাধ্য নহে এই শিক্ষা দিল।।

প্রথমে বিলাতে দিয়া নিজ পৌত্রগণে।

অসীম সাহস দিল জাতির পরাণে।।

এ জাতির নাম গেল পৃথিবী ভরিয়া।

প্রমথ রঞ্জন এল ব্যারিষ্টার হৈয়া।।

উত্তর সাধক ধন্য প্রমথ রঞ্জন।

দেশ বাসী জনে গণে করেছে রঞ্জন।।

তেঁহ আগমন দেখি আনন্দ লভিল।

কর্ম কাণ্ড ছাড়ি প্রভু আত্ম কাণ্ডে গেল।।

অহর্নিশি অবিরাম কহে হরি কথা।

বিনা মূল্যে দেয় ফল মোক্ষ ফল দাতা।।

উত্তর আয়ণে প্রভু গেল নিজ লোকে।

প্রমথ রঞ্জন মাঝে শক্তি গেল রেখে।।

গোপাল চাঁদের পদ মনে করি সার।

ক্রমে ক্রমে এই সব করিব বিস্তার।।

হাতে কাজ মুখে নাম মতুয়ার রীতি।

হরি-গুরুচাঁদ বিনে ভবে নাই গতি।।

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 9 গার্হস্থ্য সন্ন্যাসী


 

‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়’-

রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর

 

পিতৃ আজ্ঞা গুরুচাঁদ শিরোধার্য করি।

সংসারের ভার নেয় নিজ স্কন্ধোপরি।।

ক্ষণে ক্ষণে ভক্ত গৃহে যায় পিতৃসাথে।

ভক্তের চরিত্র দেখে প্রেমানন্দ চিতে।।

গম্ভীর প্রকৃতি প্রভু নাহি চপলতা।

চলে যেন সিংহ শিশু দৃঢ় একাগ্রতা।।

ঘন কৃষ্ণ কেশ দাম লম্বিত মস্তকে।

ধূর্জ্জটীর জটাসম দোলে থাকে থাকে।।

গৌরাঙ্গ বরণ কান্তি সূর্য সম প্রভা।

কুসুম কোরক জিনি বয়ানের আভা।।

মহা তেজোময় হেরি নয়নের জ্যোতিঃ।

দৃষ্টি মাত্র পাপী প্রাণে জাগে মহাভীতি।।

ভাবময় ভক্ত যত প্রেমানন্দ ভরে।

গুরুচাঁদে হেরি তেঁহ আঁখি বারি ঝরে।।

সবাসঙ্গে মিশে প্রভু নাহি কোন ভেদ।

তবু আচরণে দেখি অনেক প্রভেদ।।

হংস যথা বারি মধ্যে পুলকে ভ্রময়।

বারি মধ্যে ডুবে ভাসে আনন্দে খেলায়।।

বারি হ’তে কূলে যবে সেই হংস ধায়।

এক বিন্দু বারি দেহে নাহি দেখা যায়।।

বারিকে আধার করি করে জলক্রীড়া।

বারিতে সম্বন্ধ নাহি, সত্ত্বা বারি ছাড়া।।

দেহ মধ্যে আত্মা যথা জীব কালে রয়।

আত্মা খেলে তাই দেহ চলিয়া বেড়ায়।।

জীর্ণ বস্ত্র সম দেহ ফেলি আত্মা যায়।

নিশ্চল পতিত দেহ মাটিতে লুটায়।।

দেহেতে সম্বন্ধ আত্মা কিছু নাহি রাখে।

“বিশ্রামের ঘর” ভাবে কিছুকাল থাকে।

“বিহায় কায়ং নির্লক্ষ্যং পতিতং নৈব পশ্যতি”

তথাঃ–

“সহবর্দ্ধি তয়োর্নাস্তি সম্বন্ধঃ প্রাণ দেহয়োঃ”।।

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 8 আর্য সাধনায় জীবন তত্ত্ব

 

“নাহন্যোঃবিদ্যতে পন্থায়নায়”-উপনিষদ

 

আর্য জাতি মহাভাগ       চারিভাগে করে ভাগ

মানব জীবনে।

আদি ব্রহ্মচর্য তার         গৃহধর্ম অতঃপর

পালিবে যতনে।।

তৃতীয়ত বানপ্রস্থ         ভিক্ষু হবে শেষপ্রস্থ

জীব শেষ যামে।

এমন মহান নীতি         জীবের কল্যাণ গতি

নাহি ধরাধামে।।

“কালস্য-কুটিলাঃ গতি” ক্রমে আর্য ছন্নমতি

জীবন সংগ্রামে।

গুণ কর্ম বিভাগেতে        ভিন্ন হল নানা পথে

জাতি বর্ণ নামে।।

মূল নীতি হল ভুল         অকুলে হারায়ে কুল

আর্য জাতি ম’ল।

কর্মজাতি মুছে দিয়ে    জন্ম জাতি মেনে নিয়ে

হিন্দু সৃষ্টি হল।।

তাই আর্য রক্ষিবারে       বারে বারে অবতারে

নামিল ঈশ্বর।

যুগ অনুযায়ী ধর্ম       সবারে শিখা’ল মর্ম

ভারত উপর।।

তবু তাহে নাহি হয়        অবতার চলি যায়

আপনার লোকে।

কাল গতি চক্রতলে        আর্য মরে পলে পলে

জ্বরা ব্যাধি শোকে।।

এমন কেনবা হল      কোন খানে ভুল র’ল

সেই তত্ত্ব কথা।

বলি তাহা মনোখেদে     শ্রী গুরু গোপাল পদে

নোয়াইয়া মাথা।।

কাল কুহকিনী চলে        অবাধ গতির ছলে

অনন্তের পথে।

নিত্য নূতনত্ব দিয়ে        জীব মন ভুলাইয়ে

চলে অব্যাহতে।।

রানত কাঁদি যায়         কেহ ফিরে নাহি চায়

নূতন আনন্দে।

আহা কর বড় ভুল         কেহ নাহি বুঝে স্থুল

নূতনের ছন্দে।।

আজিকের নূতন যাহা     কাল পুরাতন তাহা

ইহা মিথ্যা নয়।

আজিকার যে নতুন       কালি সাজে পুরাতন

কাল গর্ভে ধায়।।

আদি অন্ত একাকার        বালবৃদ্ধ যে প্রকার

একত্ব স্বভাবে।

লোক মুখে শুনি তাই      বুড়া গুড়া ভেদ নাই

কাজে কিংবা ভাবে।।

যেই পুরাতন ফেলি        আর্য চলে পথ ভুলি

সেই সে প্রাচীনে।

মিশাবে জীবনে যবে      পুনঃ হিন্দু আর্য হবে

আপন জীবনে।।

কূট তর্কবাদী যারা         নিশ্চয় বলিবে তারা

দিয়ে করতালি।

পুরাকালে কিবা ছিল    সকলি তো জানি ভাল

শুন তবে বলি।

কর্মশক্তি ছিল কম        তাই নাকে পূরে দম

তপস্যা করিত।

আকাশ কুসুম যাহা        যত্ন করে পেতে তাহা

হাত বাড়াইত।।

অনন্ত অসীম যিনি         রূপ নাকি ধরে’ তিনি

দিত দরশন।

মস্তিষ্ক উত্তপ্ত হয়ে     ভোজ ভেল্কি দেখা পেয়ে

কহিত বচন।।

গণ্ডি বদ্ধ হয়ে র’ত        কূপ মণ্ডুকের মত

দেশ ভাবে বিশ্ব।

বিজ্ঞানের আলোচনা      কেহ কিছু জানিত না

এমনি রহস্য।।

দাস্য ভাব ছিল ভারী      ব্রাহ্মণের পদতরী

করিত সম্বল।

অন্ধ যুগ পুরাকাল          বর্ত্তমান শ্রেষ্ঠ কাল

প্রধান সকল।।

নর আজ সুখী কত        সুখে কাল হয় গত

জীবনে মরণে।

নাহি কোন অত্যাচার      মান্যামান্য পরস্পর

আছে সর্ব্বখানে।।

বিজ্ঞানের কি উন্নতি       জলে স্থলে সদা গতি

করিছে মানব।

সবে মিলি গড়ে নীতি     বল দর্পী হতে ভীতি

গেছে চলে সব।।

আপামর সর্বজনে          শিক্ষা পায় সর্বস্থানে

নাহি বাধাবিঘ্ন।

সাম্যনীতি ঘরে ঘরে       পালিতেছে নারী নরে

জীবন যাত্রা স্নিগ্ধ।।

আদি, ব্যাধি, জ্বরা তৃষ্ণা সবে আজি ভগ্ন আশা

বিজ্ঞানের গুণে।

উদার ধর্মের নীতি         পালিছে সবারে নিতি

সম দরশনে।।

শুনিতে মধুর বটে         তর্কবাদী যাহা রটে

সদা বাহ্য দৃশ্যে।

বিচার করিলে মূলে        ধরা যায় সব ভূলে

জানিবে অবশ্যে।।

অধুনা কালের গতি        যতকিছু রতিনীতি

কিবা পরিনাম।

ইন্দ্রিয় পোষণ লাগি       নর আছে সদা জাগি

তাই মোক্ষধাম।।

ঘুরিয়া সুখের পাছে      সুখ মোহে পরে আছে

নর নারী যত।

সকলের অত্যাচার         কোথায় অভাব তার

কোথা সাম্য মত।।

অসংযত ইন্দ্রিয়াদি        আনিয়াছে মহাব্যাধি

ভোগ তৃষ্ণা পথে।

ভোগে আনে মহাভোগ    দারুণ বিষয় রোগ

ঘিরিছে জগতে।।

যাহা আছে তাহা ছাই     আর সুখ ভোগ চাই

নরনারী কহে।

বল দর্পী পদ তলে        কত জন ভূমণ্ডলে

দুঃখ জ্বালা সহে।।

বিজ্ঞানের যে উন্নতি      কিবা করিছে সম্প্রতি

মারনাস্ত্র গড়ে।

অস্ত্রে যেই বলবান         হয়ে যেন হতজ্ঞান

পররাজ্যে পড়ে।।

অসুর স্বভাবে তাই      দিকে দিকে দেখি তাই

শুধু অত্যাচার।

রাজ্যে রাজ্যে রাজে রাজে শুধু হিংসা ধ্বনি বাজে

ভীষণ আকার।।

ধর্মনীতি সুসরল           কোথায় দেখেছে বল

বর্তমান কালে।

ধর্মান্ধ পশু যে কত        ধর্মপীঠ করে হত

অতি কতুহলে।।

শিক্ষা নাকি সর্বঠাঁই       কিবা শিক্ষা পায় ছাই

জীবন গঠনে।

ভোগবাহী শিক্ষা দিয়ে    সুখ শান্তি দূর করে

ডাকে যে মরণে।।

জুয়াচুরি ধাপ্পাবাজী       ঘরে ঘরে দেখি আজি

পেতেছে সন্মান।

ধর্মকথা তুচ্ছ অতি        ধর্ম দুর্বলের নীতি

করে উচ্চারণ।।

নিত্য নব সুখ পায়        প্রাণ কিন্তু না জুড়ায়

আছে শূন্য হয়ে।

ত্যাগে যে মহান শান্তি    নরে কহে তাহে ভ্রান্তি

সুখেরে চাহিয়ে।।

ভোগের বিজ্ঞান নিয়ে     শান্তি গেছে দূর হয়ে

অন্তরে কাঙ্গাল।

বাহ্য দৃশ্যে বড় ভাল      অন্তরে নিবিড় কাল

মাকালের ফল।।

তাই বলি শুন ভাই        এ পথে যে শান্তি নাই

জীবের জীবনে।

জীবের শান্তির লাগি      আর্য হল সর্বত্যাগী

শুদ্ধ তপোবনে।।

সাধনে চিনিয়া আত্মা      বিশ্বে দিল মহাবার্তা

ধর্ম জাগরণে।

ধর্মকে করিয়া ভিত্তি      তাহে গড়ে সর্বনীতি

জীবের জীবনে।।

আর্য ঋষি সাধনাতে       আদি যুগে এ ভারতে

কহিল বারতা।

গৃহী কি সন্ন্যাসী হও      পাবে সব যাহা চাও

দূরে যাবে ব্যথা।।

সেই মূল তত্ত্ব হ’তে       প্রচারিল এ জগতে

বর্ণাশ্রম ধর্ম।

তাহা হতে উচ্চতর        কেহ বলে নাহি আর

জীবনের মর্ম।।

বলিয়াছি ইতিপূর্বে        যত অবতার সর্বে

কি কাজ করিল।

কালচক্রে ব্যাভিচারী      এ জগতে নরনারী

সবারে কহিল।।

“যুগ ধর্ম মতে সবে       রহ পবিত্র স্বভাবে

ভ্রান্ত পথ ছাড়ি।

নূতনের সহকারে         প্রতিবার অবতারে

গেল ধর্ম গড়ি”।।

নূতন চালিয়ে যায়        যুগ ধর্ম লোপ হয়

অসত্যের চাপে।

মূল ছাড়ি ধরি ডাল       চলিয়াছে এতকাল

পরধর্ম ছাপে।।

তাই হরিচাঁদ বলে         জগতের জীবকুলে

গম্ভীর নিনাদে।

শুন শুন জীব কুল         এতদিন করি ভুল

পরেছে বিপদে।।

পড়ি কাল চক্রতলে       মূল তত্ত্ব গেছ ভুলে

মানবের ধর্ম।

যদ্যপি উদ্ধার চাও        আর্য নীতি মানি লও

কর আর্য কর্ম।।

মানবব জীবন পথে       আর্য ঋষি ধর্ম হতে

নাহি কিছু শ্রেষ্ঠ।

মানব জীবনটাকে       বাটি চারিটি স্তবকে

অতীব উৎকৃষ্ট।।

সংযম সাধনা করি       হয়ে মহা শক্তি ধারী

গড়িবে সংসার।

সুকর্মে সংসার ধর্ম        পালিতে কর্তব্য কর্ম

বিধানে তাহার।।

যবে কর্ম শেষ হয়         সাধনেতে মন ধায়

উদ্ধার কারণে।

পূর্ণ সাধনেতে তবে        মনে পূর্ণ শান্তি পাবে

শ্রী হরি সাধনে।।

এ আদর্শ কোথা পাই      হরিচাঁদে দেখে তাই

বসি রাত্রি দিনে।

দেখে গুরুচাঁদ ভিন্ন         ইহা সাধ্য নহে অন্য

দিতে জীবগনে।।

গুরুচাঁদে বলে তাই        “মূল নীতি মানা চাই

তোমার জীবনে।

তোমাকে আদর্শ করি     জগতের নরনারী

পড়িবে চরণে।।

আগে কর বিদ্যাভাস      রিপুদলে কর নাশ

পরেতে গৃহস্থ।

বিষয় বাসনা ছাড়ি        বল সবে হরি হরি

শেষে বানপ্রস্থ।।

এই নীতি পালে যেই      শান্তি ধামে রহে সেই

পরম আহ্লাদে।

চলিতে জীবন পথে       দুঃখ নাই কোন মতে

শান্তি পদে পদে।।

আপন জীবনে তাই       এই ধর্ম রাখা চাই

বিশেষ যতনে।

তোমারে দেখিয়ে সবে    এই ধর্ম শিক্ষা পা’বে

আপন জীবনে।।

পিতৃ মুখে শুনি তত্ত্ব       মানব জীবনামৃত

মঙ্গল মধুর।।

গুরুচাঁদ প্রাণপণে           সেই শুদ্ধ তত্ত্ব মানে

ভোগ করি দূর।।

সেই কথা ক্রমে ক্রমে     প্রকাশিব গুরুনামে

পরম পবিত্র।

মতুয়া ভক্তের দয়া        গোপালের পদছায়া

বাঞ্ছা এই মাত্র।।