Saturday, June 27, 2020

আসুন গীতা পাঠ করি:- 12 দ্বাদশ অধ্যায়ঃ ভক্তিযোগ

দ্বাদশ অধ্যায়ঃ ভক্তিযোগ

 অর্জুন উবাচ

 এবম্‌ সতত যুক্তাঃ যে ভক্তাঃ ত্বাম্‌ পর্যুপাসতে ।

 যে চ অপি অক্ষরম্‌ অব্যক্তম্‌ তেষাম্‌ কে যোগ-বিত্তমাঃ ।।১

 অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হে ভগবান এই ভাবে নিরন-র ভক্তিযুক্ত হয়ে যারা সমাহিত চিত্তে তোমার আরাধনা করে এবং যারা ইন্দ্রিয়াতিত অব্যক্ত ব্রহ্মের উপাসনা কওে, তাদের মধ্যে কারা শ্রেষ্ঠযোগী।

 ভগবান উবাচ

 ময়ি আবেশ্য মনঃ যে মাম্‌ নিত্য যুক্তা উপাসতে ।

 শ্রদ্ধায়া পরয়া উপেতাঃ তে মে যুক্ততমাঃ মতাঃ ।।২

 অর্থ-ভগবান বললেন-যিনি আমার সবিশেষ রূপে তার মনকে নিবিষ্ট করেন, অপ্রাকৃত ভক্তি সহকারে নিরন-র উপাসনা করেন আমার মতে তারাই শ্রেষ্ঠ যোগী।

 যে তু অক্ষরম্‌ অনির্দেশ্যম্‌ অব্যক্তম্‌ পর্যুপাসতে ।

 সর্বত্রগম্‌ অচিন্তম্‌ চ কুটস্তম্‌ অচলম্‌ ধ্রূবম্‌ ।৩

 সংনিয়ম্য ইন্দ্রিয়-গ্রামম্‌ সর্বত্র সমবুদ্ধয়ঃ ।

 তে পাপ্নুবন্তি মাম্‌ এব সর্বভূতহিতে রতাঃ ।।৪

 অর্থ-যারা সমস্ত ইন্দ্রিয় সংযত কওে, সকলের প্রতি সমভাবপন্না হয়ে সর্বভূতের কল্যাণে রত হয়ে আমার অক্ষর,অনির্দেশ্য,অব্যক্ত সর্বত্রগ,অচিন্ত্য,কুটস্থ, অচল,ধ্রুব ও নির্বিশেষ স্বরুপকে উপসনা করেন,তারা অবশেষে আমাকেই লাভ করে।

 ক্লেশ অধিকতরঃ তেষাম্‌ অব্যক্ত আসক্ত চেতসাম্‌ ।

 অব্যক্তা হি গতিঃ দুঃখম্‌ দেহবদ্ভীঃ অবাপ্যতে ।।৫

 অর্থ-যাদের ভগবানের অব্যক্ত নির্বেশেষ রুপের প্রতি আসক্ত তাদের পক্ষে পারমার্থিক লাভ করা অত্যন্ত কষ্টকর। কারন অবক্তের উপাসনার ফলে দুঃখই লাভ হয়।

 যে তু সর্বানি কর্মানি ময়ি সংন্যস্য মত্পরাঃ ।

 অনন্যেন এব যোগেন মাম্‌ ধায়ন্ত উপাসতে ।।৬

 তেষাম্‌ অহম্‌ সমুদ্ধর্তা মৃত্যু সংসার সাগরাত্ ।

 ভমামি ন চিরাত্ পার্থ ময়ি আবেশিত চেতসাম্‌ ।।৭

 অর্থ-হে পার্থ, যারা সমস্ত কর্ম আমাতে সমর্পন করে মত্পরায়ন হয়ে অনন্য ভক্তিযোগের দ্বারা আমার উপসনা ও ধ্যান করেন, সেই সমস্ত ভক্তদের আমি অচিরেই সংসার থেকে উদ্ধার করি।

 ময়ি এব মনঃ অধত্স্ব ময়ি বুদ্ধিম্‌ নিবেশয় ।

 নিবসিষসি ময়ি এব অতঃ উর্ধ্যম্‌ ন সংশয়ঃ ।।৮

 অর্থ-অতএব আমাতেই তুমি মন সমাহিত কর, আমাতেই বুদ্ধি নিবিষ্ট কর। তার কারন তুমি নিশ্চই আমাকে প্রাপ্ত হবে। সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই।

 অথ চিন্তম্‌ সমাধাতুম্‌ ন শক্লোসি ময়ি স্থিরম্‌ ।

 অভ্যাস যোগেন ততঃ মাম্‌ ইচ্ছা আপ্তুম্‌ ধনঞ্জয় ।।৯

 অর্থ-হে ধনঞ্জয়, যদি তুমি আমাতে চিত্ত সমাহিত করতে না পার, তাহলে অভ্যাস যোগ দ্বারা আমাকে লাভ করতে চেষ্টাকর।

 অভ্যাসে অপি অসমর্থঃ অসি মত্ কর্ম পরমভব ।

 মদর্থম অপি কর্মানি কুর্বান সিদ্ধিম্‌ অবাস্পসি ।।১০

 অর্থ-যদি তুমি এই ভাবে অভ্যাস করতে অসমর্থ হও, তাহা হলে আমার জন্য কর্ম করতে চেষ্টা কর কারন আমার জন্য কর্ম করতে করতেই তুমি ক্রমে সিদ্ধিলাভ করবে।

 অথ এতত্ অপি অশক্তঃ অসি কর্তুম্‌ যোগম্‌ আশ্রিতঃ ।

 সর্ব কর্ম ফল ত্যাগম্‌ ততঃ কুরু যতাত্মবান ।।১১

 অর্থ-আর যদি তাও করতে অক্ষ্যম হও, তবে আমাতে সমস্ত কর্ম অর্পন করে কর্মের ফল ত্যাগ কর।

 শ্রেয় হি জ্ঞানম্‌ অভ্যাস্যাত্ জ্ঞানাত্ ধ্যানম্‌ বিশিষ্যতে ।

 ধ্যানাত্ কর্মফল ত্যাগঃ ত্যাগাত্ শান্তি অন্তরম্‌ ।।১২

 অর্থ-তুমি যদি সেই প্রকার অভ্যাসে সক্ষম না হও,তা হলে জ্ঞানের দ্বারা অনুশিলন কর। জ্ঞান থেকে ধ্যান শ্রেষ্ঠ, এবং ধ্যান থেকে কর্ম ফল ত্যাগ শ্রেষ্ঠ, কারন এই প্রকার কর্মফল ত্যাগে পরম শান্তি লাভ হয়।

 অদ্ধেষ্টা সর্বভূতানাম্‌ মৈত্র করণঃ এব চ ।

 নির্মম্‌ নিরহঙ্কারঃ সম্‌ দুঃখ সুখ ক্ষমী ।।১৩

 সন্তুষ্টঃ সততম্‌ যোগী যতাত্মা দৃঢ়নিশ্চয় ।

 ময়ি অর্পিত মনঃ বুদ্ধিঃ যঃ মত্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ ।।১৪

 অর্থ-যিনি সমস্ত জীবের প্রতি দ্বেষ শুন্য, বন্ধুভাবাপন্য, দয়ালু, মমতাবুদ্ধিশুন্য, নিরহঙ্কার, সুখ দঃুখ্য সমভাবাপন্য সর্বদা সন্তুষ্ট সবসময় ভক্তিযোগে যুক্ত, সংযত স্বভাব, তত্তবিষয় দৃঢ় নিশ্চয় এবং যার মন ও বুদ্ধি সর্বদা আমাতে অর্পিত তিনি আমার প্রিয় ভক্ত।

 যস্মাত্ ন উদ্বিজতে লোকঃ লোকাত্ ন উদ্বিজতে চ যঃ ।

 হর্ষ অমর্ষ ভয় উদ্বেগৈঃ মুক্তঃ যঃ সঃ চ মে প্রিয়ঃ ।।১৫

 অর্থ-যার থেকে কেউ উদ্বেগপ্রাপ্ত হন না এবং যিনি কারোর দ্বারা উদ্বেগ প্রাপ্ত হননা; যিনি হর্ষ, বিষাদ, ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত তিনি আমার প্রিয়।

 অনপেক্ষঃ শুচিদক্ষঃ উদাসীনঃ গতব্যথঃ ।

 সর্বারম্ভা পরিত্যাগী যঃ মদ্ভক্তঃ সঃ মে প্রিয় ।।১৬ অর্থ-যিনি নিস্পৃহ, শুচি, দক্ষ, পক্ষপাতশুন্য, ভয়হীন এবং স্বকাম কর্মের অনুষ্ঠান ত্যাগী, তিনি আমার প্রিয় ভক্ত।

 যঃ ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ।

 শুভ অশুভ পরিত্যাগী ভক্তিমান যঃ সঃ মে প্রিয় ।।১৭

 অর্থ-যিনি আকাঙ্ক্ষিত বস্তুর প্রাপ্তিতে হৃষ্ট হননা, এবং অনিষ্ট প্রাপ্তিতে দ্বেষ করেন না, প্রিয় বিয়োগে শোক করেন না, অপ্রাপ্ত ইষ্ট বস্তুর আকাঙ্ক্ষা করেন না এবং শুভাশুভ সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করেছেন তিনি আমার প্রিয়।

 সমঃ শত্রৌ চ মিত্রে চ তথা মান অপমানয়ঃ ।

 শীত উষ্ণ সুখ দুঃখেষু সমঃ সঙ্গবিবর্জিত ।।১৮

 তুল্য নিন্দা স্তুতিঃ মৌনী সন্তুষ্টঃ যেন কেন চিত্ ।

 অনিকেতঃ স্থির মতিঃ ভক্তিমান মে প্রিয় নরঃ ।।১৯

 অর্থ-যিনি শত্রু মিত্রের মধ্যে সমবুদ্ধি, যিনি সম্মান অপমানে অবিচালিত, যিনি শীতোষ্ণজনিত সুখে দুঃখে, নির্বিকার স্থির বুদ্ধি নিন্দা ও স্তুতিতে সমবুদ্ধি; সংযত বাক্‌, যত্কিঞ্চিত্ লাভে সন্তষ্ট, গৃহাসক্তিশুন্য এবং আমার প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত; সে ভক্ত আমার অত্যন্ত প্রিয়।

 যে তু ধর্ম অমৃতম্‌ ইদম্‌ যথা উত্তম্‌ পর্যুপাসতে ।

 শ্রদ্দাধ্যানাঃ মত্পরমাঃ ভক্তাঃ তে অতীব মে প্রিয়াঃ ।।২০

 অর্থ-আমার প্রতি শ্রদ্ধা সহকারে যারা আমার প্রদর্শিত ধর্মামৃতে উপসনা করেন, তারাই আমার ভক্ত, তাই তারা আমার অত্যন্ত প্রিয়।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 ভক্তিযোগো নাম দ্বাদশোঽধ্যাযঃ ॥১২॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 11 একাদশ অধ্যায়ঃ বিশ্বরূপ দর্শনযোগ

একাদশ অধ্যায়ঃ বিশ্বরূপ দর্শনযোগ

 অর্জুন উবাচ

 মদনুগ্রহায় পরমম্‌ গুহ্যম্‌ আধ্যাত্ম সংজ্ঞিতম্‌ ।

 যত্ তয়া উত্তম্‌ বচঃ তেন মোহঃ অয়ম্‌ বিগতঃ মম্‌ ।।১

 অর্থ-আমার প্রতি অনুগ্রহ করে তুমি যে আধ্যাত্ম তত্ত্ব সম্বন্ধিয় পরম গুহ্য উপদেশ আমাকে দিয়েছ, তার দ্বারা আমার মোহ দুর হয়েছে।

 ভব অপ্যয়ৌ হি ভূতানাম্‌ শ্রুতৌ বিস্তরশঃ ময়া ।

 ত্বত্তঃ কমলপত্রাক্ষ মাহাত্মম্‌ অপি চ অব্যয়ম্‌ ।।২

 অর্থ-হে পদ্মপলাশ লোচন সর্বভূতের উত্পত্তি ও প্রলয় তোমার থেকেই হয়, তোমার কাছ থেকেই আমি তোমার অব্যয় মাহাত্ম অবগত হলাম।

 এবম্‌ এতত্ যথাত্থ ত্বম্‌ আত্মানাম্‌ পরমেশ্বর ।

 দ্রষ্টুম্‌ ইচ্ছামি তে রুপম্‌ ঐশ্বরম্‌ পুরুষোত্তম্‌ ।।৩

 অর্থ-হে পুরুষত্তম তুমি যে আত্ত তত্ত্ব বলেছ তা যথার্থ। কিন্তু তা সত্তেও হে পরমেশ্বর তুমি যে ভাবে এই বিশ্বে প্রবেশ করেছ, আমি তেমার সেই ঐশ্বরীরুপ দেখতে ইচ্ছা করি।

 মন্যতে যদি তত্ শক্যম্‌ ময়া দ্রষ্টুম্‌ ইতি প্রভো ।

 যোগেশ্বরম্‌ ততঃ মে ত্বম্‌ দর্শয় আত্মানাম্‌ অব্যয় ।।৪

 অর্থ-হে প্রভু, তুমি যদি মনে কর যে আমি তোমার এই বিশ্বরুপ দর্শন করার যোগ্য, তা হলে হে যোগেশ্বর আমাকে তেমার সেই জগতাত্ম রুপ দেখাও।

 ভগবান উবাচ

 পশ্য মে পার্থ রুপাণী শতশঃ অথ সহস্রশঃ ।

 নানাবিধানি দিব্যানি নানা বর্ন আকৃতীনি চ ।।৫

 অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ নানা বর্ন ও নানা আকৃতি বিশিষ্ট শতশত এবং সহস্র সহস্র আমার বিভিন্ন দিব্য মূর্তি দর্শন কর।

 পশ্য আদিত্যান্‌ বসুন রদ্রান অশ্নিনৌ মরুতঃ তথা ।

 বহুনী অদৃষ্ট পুর্বানি পশ্য আশ্চর্যানি ভারত ।।৬

 অর্থ-হে ভারত, দ্বাদশ আদিত্য, অষ্ট বসু, একাদশ রুদ্র, অশ্বিনিকুমারদয়, উনপঞ্চাশ মরুত এবং অনেক অদৃষ্টপুর্ব আশ্চার্যরুপ দেখ।

 ইহ একস্থম্‌ জগত্ কৃত্স্নম্‌ পশ্য অদ্য স চর অচরম্‌ ।

 মম্‌ দেহে গুড়াকেশ যত্ চ অন্যত্ দ্রষ্টুম্‌ ইচ্ছসি ।।৭

 অর্থ-হে-অর্জুন, আমার এই বিরাট শরিরে অবয়ব রুপে একত্রে অবস্থিত সমগ্র স্থাবর জঙ্গমাত্ম বিশ্ব এবং অন্য যা কিছু দেখতে ইচ্ছা কর আজ দর্শন কর।

 ন তু মাম্‌ শক্যসে দ্রষ্টুম অনেন এব স্বচক্ষুষা ।

 দিব্যম্‌ দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম ।।৮

 অর্থ-তুমি তোমার চক্ষুদ্বারা আমার বিশ্বরুপ দর্শন করতে পারবে না। তাই আমি তোমাকে দিব্য চক্ষুদান করছি যার দ্বারা তুমি তোমার অচিন্ত যোগৈশ্বর্য্য দর্শন করতে পারবে।

 সঞ্জয় উবাচ

 এবম উক্তা ততঃ রাজন মহাযোগেশ্বরঃ হরিঃ ।

 দর্শয়মাস পার্থায় পরমম্‌ রুপম ঐশ্বরম্‌ ।।৯

 অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে রাজন এই ভাবে বলে, মহান যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তার অলৌকিক বিশ্বরুপ দেখালেন।

 অনেক বক্ত্র নয়নম্‌ অনেক অদ্ভুত দর্শনম্‌ ।

 অনেক দিব্য আভরনম্‌ দিব্য অনেক উদ্যত আয়ুধম্‌ ।।১০

 দিব্য মাল্য অম্বরধরম্‌ দিব্য গন্ধ অনুলেপনম্‌ ।

 সর্ব আশ্চর্য্যময়ম্‌ দেবম্‌ অনন্তম্‌ বিশ্বতোমুখম্‌ ।।১১

 অর্থ-অর্জুন দেখলেন সেই বিশ্বরুপ অনেক মুখ অনেক নেত্রযুক্ত, অনেক অদ্ভুত আকৃতি ও অসংখ্য দিব্য অলংঙ্কার বিশিষ্ট এবং অনেক উদ্যত দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত। সেই বিশ্বরুপ দিব্য মালা ও দিব্য বস্ত্রে ভূষিত, দিব্য গন্ধদ্বারা অনুলিপ্ত, অত্যন্ত আশ্চর্য্যজনক জোর্তিময় অনন্ত ও সর্বতোমুখ বিশিষ্ট।

 দিবি সুর্য্য সহস্রস্য ভবেত্ যুগপত্ উত্থিতা ।

 যদি ভাঃ সদৃশী সা সাত্ ভাসঃ তস্য মহাত্মনঃ ।।১২

 অর্থ-যদি আকাশে সহস্র সুর্য্যেও প্রভা উদিত হয় তা হলে সেই দীপ্তি বিশ্বরুপের প্রভাব কিঞ্চিত্ তুল্য হতে পারে।

 তত্র একস্থম্‌ জগত্ কৃত্স্নম্‌ প্রবিভক্তম্‌ অনেকধা ।

 অপশ্যত্ দেবদেবস্য শরীরে পান্ডব তদা ।।১৩

 অর্থ-তখন অর্জুন পরমেশ্বর ভগবানের বিশ্বরুপে নানাভাবে বিভক্ত সমগ্র জগত্ একত্রে অবস্থিত দেখলেন।

 ততঃ সঃ বিস্ময়াবিষ্টাঃ হৃষ্টরোমা ধনঞ্জয় ।

 প্রণম্য শিরসা দেবম্‌ কৃতাঞ্জলিঃ অভাষত ।।১৪

 অর্থ-অর্জুন সেই বিশ্বরুপ দর্শন করে আশ্চর্যান্বিত ও রোমাঞ্চিত হলেন এবং অবনত মস-কে ভগবানকে প্রনাম করে কর জোরে বললেন।

 অর্জুন উবাচ

 পশ্যামিদেবান তব দেহে

 সর্বান তথা ভূত বিশেষ-সঙ্ঘান ।

 ব্রহ্মানম্‌ ঈশম কমলাসনস্থম

 ঋষীন চ সর্বান উরগান ন চ দিব্যম্‌ ।।১৫

 অর্থ-অর্জুন বললেন হে দেব, তোমার এই বিশ্বরুপে সমস্ত দেবতা, চরাচর জগত্ ঋষীদের, সর্পসমুহ এবং সৃষ্টিকর্তা কমলাসনা ব্রহ্মকে দেখছি।

 অনেক বাহু উদর বক্ত্র নেত্রম্‌

 পশ্যামি ত্বাম সর্বতঃ অনন্তরূপম্‌ ।

 ন অন্তম্‌ ন মধ্যম্‌ ন পুনঃ তব আদিম্‌

 পশ্যামি বিশ্বেশর বিশ্বরূপ ।।১৬

 অর্থ-হে জগত্ ঈশ্বও, সর্বত্র বহু বাহু, বহু উদও, বহু মুখ ও বহু নেত্রবিশিষ্ট তোমার বিশ্বরুপ আমি দেখছি। হে ভগবান তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত দেখছি না।

 কিরীটিনম্‌ গদিনম্‌ চক্রিনম্‌ চ

 তেজোরাশিম্‌ সর্বতঃ দীপ্তিমন্তম্‌ ।

 পশ্যামি ত্বাম্‌ দুর্নিরীক্ষ্যম্‌ সমন্তাত্

 দীপ্ত-অনল অর্ক দ্যুতিম্‌ অপ্রমেয় ।।১৭

 অর্থ-কিরীট গদা ও চক্রধারী, সর্বত্র দিপ্তীমান, তেজঃপুঞ্জ স্বরুপ দুনিরীক্ষ্য প্রদীপ্ত অগ্নি ও সুর্য্যের মত প্রভাবিশিষ্ট এবং অপ্রমেয় স্বরুপ তোমাকে আমি সর্বত্র দেখছি।

 ত্বম্‌ অক্ষরম্‌ পরমম্‌ বেদিত্যবম্‌

 ত্বম অস্য বিশ্বস্য পরম্‌ নিধানম ।

 ত্বম্‌ অব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্ত

 সনাতনঃ ত্বম পুরুষঃ মতঃ মে ।।১৮

 অর্থ-তুমি পরম ব্রহ্ম এবং এক মাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয় ও সনাতন ধর্মের রক্ষক, তুমিই সনাতন এই আমার অভিমত।

 অনাদি মধ্যান্তম্‌ অনন্ত বীর্যম

 অনন্ত বাহু শশিসুর্য নেত্রম্‌ ।

 পশ্ব্যামি ত্বাম্‌ দীপ্ত হুতাশবক্ত্রম্‌

 স্বতেজসা বিশ্ব্যম্‌ ইদম্‌ তপন্তম্‌ ।।১৯

 দ্যৌ আপৃথিব্যোঃ ইদম্‌ অন-রম্‌ হি

 ব্যাপ্তম্‌ ত্বয়া একেন দিশঃ চ সর্বাঃ ।

 দৃষ্টা অদ্ভুতম্‌ রূপম্‌ উগ্রম্‌ তব ইদম্‌

 লোকত্রয়ম্‌ প্রব্যথিতম্‌ মহাত্মন্‌ ।।২০

 অর্থ-আমি দেখছি তোমার আদি নেই, তুমি অনন্ত শক্তিশালী ও অসংখ্য বাহু বিশিষ্ট চন্দ্র-সুর্য্য তোমার চক্ষুদ্বয়; তোমার মুখ মন্ডল প্রদীপ্ত অগ্নির জ্যোতি এবং তুমি স্বীয়তেজে সমস্ত জগত্ সন্তপ্ত করছ। হে ভগবান স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তি অন্তরীক্ষ্য এবং দশদিক পরিব্যাপ্ত করে আছ। তোমার এই অদ্ভুত ভয়ঙ্কর বিশ্বরুপ দর্শন করে ত্রিলোক অত্যন্ত ভীত হচ্ছে।

 অমী হি ত্বাম্‌ সুরসংঙ্ঘাঃ বিশন্তি

 কোচিত্ ভীতাঃ প্রাঞ্জলয়ঃ গৃনন্তি ।

 স্বস্তি ইতি উক্তা মহর্ষি সিদ্ধসঙ্ঘাঃ

 স্তুবন্তি ত্বাম্‌ স্তুতিভিঃ পুস্কলাভিঃ।২১

 অর্থ-সমস্ত দেবতারা তোমাতেই প্রবেশ করছেন। কেউ কেউ ভীত হয়ে করজোরে তোমার গুনগান করছেন এবং মহর্ষী ও সিদ্ধি পুরুষগন জগতের কল্যান হউক বলে প্রচুর স্তুতি বাক্যের দ্বারা তোমার স্তব করছে।

 রুদ্র আদিত্যাঃ বসবঃ যে চ সাধ্যাঃ

 বিশ্বে অশ্বিনৌ মরুতঃ চ উষ্মপাঃ চ ।

 গন্ধর্ব যক্ষ অসুরসিদ্ধসংঙ্ঘাঃ

 বিক্ষন্তে ত্বাম বিস্মিতাঃ চ এব সর্বে ।।২২

 অর্থ-রুদ্রগন, আদিত্যগন, সাধ্য নামক দেবতারা,বসুগন,বিশ্বদেবতাগন, অশ্বিনিকুমারদ্বয়, মরুতগন, পিত্রীগন, যক্ষ্যগন, অসুরগন এবং সিদ্ধগন সকলেই বিস্মৃত হয়ে তোমাকে দর্শন করছে ।

 রূপম্‌ মহত্ তে বহু বক্ত্র নেত্রম্‌

 মহাবাহো বহু বাহু উরু পাদম্‌ ।

 বহুদরম্‌ বহুদংষ্ট্রা করালম্‌

 দৃষ্ট্রা লোকাঃ প্রব্যথিতাঃ তথা অহম্‌ ।।২৩

 অর্থ-মহাবাহো, বহু মুখ, বহু চক্ষু, বহুবাহু , বহু উরু, বহু চরন এবং বহু উদর বিশিষ্ট এবং অসংখ্য দন্তের দ্বারা ভীষন তোমার বিগ্রহ দর্শন করে সমস্ত প্রাণী অত্যন্ত ভীত হচ্ছে এবং আমি ও অত্যন্ত ভীত হচ্ছি।

 নভঃস্পৃশম্‌ দীপ্তম্‌ অনেক বর্নম্‌

 ব্যাত্ত আননম দীপ্ত বিশাল নেত্রম্‌ ।

 দৃষ্টা হি ত্বাম্‌ প্রব্যথিত অন্তরাত্মা

 ধৃতিম্‌ ন বিন্দামি শমম্‌ চ বিষ্ণো ।।২৪

 অর্থ-বিষ্ণো তোমার আকাশ স্পর্শি তেজময় নানা বর্নযুক্ত বিস্ময় হেতু মুখ মন্ডল এবং উজ্জল বিশাল চক্ষু দেখে আমার হৃদয় ব্যাথিত হচ্ছে এবং আমি ধ্যৈর্য্য ও শম অবলম্বন করতে পারছি না।

 দংষ্ট্রা করালানি চ তে মুখানি

 দৃষ্টা এব কালানল সন্নিভানি ।

 দিশঃ ন জানে ন লভে চ শর্ম

 প্রসীদ দেবেশ জগনিবাস ।।২৫

 অর্থ-হে দেবেশ, ভয়ঙ্কর ও দীর্ঘ দন্তযুক্ত ও প্রলয়াগ্নি তুল্য তোমার মুখ সকল দেখে আমার দিকভ্রম হচ্ছে এবং আমি শান্তি পাচ্ছি না হে জগন্নিবাস, তুমি আমার প্রতি প্রসন্ন হও।

 অমী ত্বাম ধৃতরাষ্ট্রস্য পুত্রাঃ

 সর্বে সহৈব অবনিপাল সঙ্ঘৈঃ ।

 ভীষ্মঃ দ্রোনঃ সুত পুত্রঃ তথা অসৌ

 সহ অস্মদীয়ৈঃ অপি যোধমুখ্যৈঃ ।।২৬

 বক্ত্রানি তে ত্বরমাণাঃ বিশনন্তি

 দংষ্ট্রা করালানি ভয়াকানি ।

 কোচিত্ বিলগ্নাঃ দশনান্তরেষু

 সংদৃশন্তে চুর্নিতে উত্তমাঙ্গৈঃ ।।২৭

 যথা নদীনাম্‌ বহবঃ অম্বুবেগাঃ

 সমুদ্রম্‌ এব অভিমুখা দ্রবন্তি ।

 তথা তব অমী নরলোকবীরা

 বিশন্তি বক্ত্রনি অভিবিজ্বলন্তি ।।২৮

 যথা প্রদীপ্তম্‌ জ্বলনম্‌ পতঙ্গাঃ

 বিশন্তি নাশায় সমৃদ্ধবেগাঃ ।

 তথৈব নাশায় বিশন্তি লোকাঃ

 তব অপি বক্ত্রানি সমৃদ্ধবেগাঃ ।।২৯

 লেলিহ্যসে গ্রসমানঃ সমন্তাত্

 লোকান সমগ্রান বদনৈঃ জ্বলদ্ভিঃ ।

 তেজোভিঃ আপুর্য জগত্ সমগ্রম্‌

 ভাসঃ তব উগ্রাঃ প্রতপন্তি বিষ্ণো ।।৩০

 অর্থ-ধৃতরাষ্টের পুত্রেরা ভীস্ম, দ্রন, কর্ন এবং সমস্ত রাজন্য বর্গসহ এবং আমাদের পক্ষ্যের সমস্ত সৈন্যেরা তোমার করাল দন্ত বিশষ্ট মুখের মধ্যে দ্রুতবেগে প্রবেশ করছে এবং সেই দন্ত মধ্যে বিলগ্ন হয়ে তাদের মস্তক চুর্নিত হচ্ছে। নদীসমুহ যেমন সমুদ্রাভিমুখে প্রবাহিত হয়ে দ্রুতবেগে সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায় তেমনই নরলোকের বীর গন তোমার জ্বলন্ত মুখ বিবরে প্রবেশ করছে। পতঙ্গ যেমন দ্রুত গতিতে ধাবিত হয়ে মরনের জন্য জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করে তেমনই এই সমস্ত মানুষেরাও মৃত্যু জন্য অতি বেগে তোমার মুখ বিবরে প্রবেশ করছে। হে বিষ্ণু তুমি তোমার জ্বলন্তমুখ সমুহের দ্বারা সকল লোককে গ্রাস করছ এবং সমগ্র জগতকে তেজোরাশির দ্বারা আবৃত করে সন্তপ্ত করছ।

 আখ্যাহি মে কঃ ভবান উগ্ররূপ

 নমহস্তু তে দেববর প্রসীদ ।

 বিজ্ঞাতুম্‌ ইচ্ছামি ভবন্তম্‌ আদ্যম্‌

 ন হি প্রজানামি তব প্রবৃত্তিম্‌ ।।৩১

 অর্থ-উগ্রমুর্তি তুমি কে? আমাকে বল। হে দেবশ্রেষ্ঠ, তোমাকে নমস্কার করি, তুমি প্রসন্ন হও। আমি তোমার প্রবৃত্তি অবগত নই, আমি তেমাকে বিশেষ ভাবে জানতে ইচ্ছা করি।

 ভগবান উবাচ

 কালঃ অস্মি লোক ক্ষয়কৃত্ প্রবৃদ্ধঃ

 লোকান্‌ সমাহর্তুম ইহ প্রবৃত্তঃ ।

 ঋতেহপি ত্বাম্‌ ন ভবিশন্তি সর্বে

 যে অবস্থিতাঃ প্রত্যনীকেষু যোধাঃ ।।৩২

 অর্থ-ভগবান বললেন- আমি লোকক্ষয়কারী কাল। এখন লোক সংহার করতে প্রবৃত্ত হয়েছি তোমারা (পান্ডবেরা) ছাড়া সমস্ত যোধ্যারা ধংস হবে।

 তস্মাত্ ত্বম্‌ উত্তিষ্ট যশঃ লভস্ব

 জিত্বা শত্রুন ভূঙক্ষু রাজ্যম্‌ সমৃদ্ধম্‌ ।

 ময়া এব এতে নিহতাঃ পুর্বমেব

 নিমিত্তমাত্রম্‌ ভব সাব্যসাচিব ।।৩৩

 অর্থ-অতএব তুমি যুদ্ধকরার জন্য উত্থিত হও ও যশ লাভকর শত্রুদের পরাজিত করে সমৃদ্ধশালী রাজ্য ভোগ কর। আমার দ্বারা এরা পুর্বে নিহত হয়েছে। হে সব্যসাচিব তুমি নিমিত্ত মাত্র হও।

 দ্রোনম্‌ চ ভীস্মম্‌ চ জয়দ্রথম্‌ চ

 কর্নম্‌ তথা অন্যান্‌ অপি যোধবিরান্‌ ।

 যথা হতান্‌ ত্বম্‌ জহি মা ব্যাথিষ্ঠাঃ

 যুধ্যস্ব জেতাসি রনে সপত্না্‌ ।।৩৪

 অর্থ-ভগবান বললেন – দ্রোন ভীস্ম কর্ন জয়দ্রথ এবং অন্যান্য বীর যোদ্ধাদের আমি নিহত করেছি। তুমি মৃতদেরই বধ কর। তুমি যুদ্ধ কর শত্রুদের নিশ্চয়ই জয় করবে, অতএব যুদ্ধ কর।

 সঞ্জয় উবাচ

 এতত্ শ্রূত্বা বচনম্‌ কেশবস্য

 কৃতাঞ্জলীঃ বেপমানঃ কিরীটী ।

 নমস্কৃত্বা ভুয়ঃ এব আহ কৃষ্ণম্‌

 সগদগদম্‌ ভীতভীতঃ প্রনম্য ।।৩৫

 অর্থ- সঞ্জয় ধৃতরাষ্টকে বললেন -হে রাজন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই বাণী শ্রবন করে অত্যন্ত ভীত হয়ে কম্পিত কলেবরে কৃতাঞ্জলী পুটে প্রনাম করে গদগদভাবে অর্জুন বললেন-

 অর্জুন উবাচ

 স্থানে হৃষীকেশ তব প্রকীর্ত্যা

 জগত্ প্রহৃষ্যতি অনুরজ্যতে চ ।

 রক্ষাংসি ভীতানি দিশঃ দ্রবন্তি

 সর্বে নমস্যন্তি চ সিদ্ধসঙ্ঘাঃ ।।৩৬

 অর্থ-অর্জুন বললেন – হে হৃষীকেশ, তোমার মহিমা কির্তনে জগত্ প্রহৃষ্ট ও তোমার প্রতি অনুরক্ত হচ্ছে। রাক্ষসেরা ভীত হয়ে নানান দিকে পলায়ন করছে এবং সিদ্ধেরা তোমাকে নমস্কার করছে।এই সমস্তই যুক্তিযুক্ত।

 কস্মাত্ চ তে ন নমেরন মহাত্মন

 গরিয়সে ব্রহ্মণঃ অপি আদিকর্ত্রে

 অনন্ত দেবেশ জগন্নিবাস

 ত্বম অক্ষরম্‌ সদসত্ তত্ পরম্‌ যত্ ।।৩৭

 অর্থ-হে মহাত্মন, তুমি ব্রহ্মার গুরু ও আদি কারণ। হে অনন্ত সকলে কেন তোমাকে নমস্কার কওেবেন না ? হে জসন্নিবাস, তুমি সত্ ও অসত্ উভয়ের অতীত তত্ত্ব,এবং সর্ব কারণের পরম কারণ।

 ত্বম আদিদেবঃ পুরুষ পুরান্‌

 তম্‌ অস্য বিশ্বস্য পরম নিধানম্‌ ।

 বেত্তা অসি বেদ্যম চ পরম্‌ চ ধাম্‌

 ত্বয়া ততম্‌ বিশ্বম্‌ অনন্তরুপ ।।৩৮

 অর্থ-হে অনন্ত রুপ, তুমি আদিদেব ও অনাদি পুরুষ এবং বিশ্বের পরম আশ্রয়। তুমি সবকিছুর জ্ঞাতা, এবং তুমিই জ্ঞাতব্য। তুমিই গুণাতীত, এবং এই জগত্ তোমার দ্বারা পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে।

 বায়ুঃ যমঃ অগ্নিঃ বরুনঃ শশাঙ্কঃ

 প্রজাপতিঃ ত্বম্‌ প্রপিতামহঃ চ ।

 নমঃ নমস্তে অস্তু সহস্র কৃতঃ

 পুনঃ চ ভূয় অপি নমঃ নমস্তে ।।৩৯

 অর্থ-তুমি বায়ু, যম, অগি, চন্দ্র,্ন প্রজাপতি ব্রহ্মা, অতএব তোমাকে আমি

 সহস্রবার প্রনাম করি এবং পুনরায় নমস্কার করি।

 নমঃ পুরস্তাত্ অত পৃষ্ঠতঃ তে

 নমঃ অস্তু তে সর্বতঃ এব সর্ব ।

 অনন্ত বীর্য অমিত বিক্রমঃ তমঃ

 সর্বম্‌ সমাপ্নোষি ততঃ অসি সর্বঃ ।।৪০

 অর্থ-হে সর্বাত্মা,তোমাকে সম্মুখে নমস্কার করছি, তোমাকে পশ্চাতে নমস্কার করছি

 তোমাকে সবদিক থেকে নমস্কার করছি।হে অনন্ত বীর্য তুমি অসিম বিক্রমশালী। তুমি সমগ্র জগতে ব্যাপ্ত অতএব তুমিই সর্ব স্বরুপ।

 সখা ইতি মত্বা প্রসভম্‌ যত্ উত্তম্‌

 হে কৃষ্ণ হে যাদব হে সখেতি ।

 অজানতা মহিমানম্‌ তব ইদম্‌

 এয়া প্রমাদাত্ প্রনয়েন বা অপি ।।৪১

 যত্ চ অবহাসার্থম্‌ অসত্কৃতঃ অসি

 বিহার শয্যা আসন ভোজনেষু ।

 একঃ অথবা অপি অচ্যুত তত্সমক্ষম্‌

 তত্ ক্ষাময়ে ত্বাম অহম্‌ অপ্রমেয়ম ।।৪২

 অর্থ-পুবে আমি তোমার মহিমা না জেনে তোমাকে “হে কৃষ্ণ”, “হে যাদব” “হে সখা” বলে সম্বধন করেছি। প্রমাদবসত এবং প্রনয়বসত যা কিছু করেছি তা তুমি দয়া করে ক্ষমা কর। বিহার, শয়ন ভোজনের সময়, কখনো একাকি কখনো অন্যদের সমক্ষে, আমি যে অসম্নান করেছি, সে সমস্ত অপরাধ দয়াকরে ক্ষমা কর।

 পিতা অসি লোকস্য চরাচরস্য

 ত্বম্‌ অস্য পূজ্যঃ চ গুরুঃ গরীয়ান ।

 ন তত্সমঃ অস্তি অব্যধিকঃ কুতঃ অন্যঃ

 লোকত্রয়ে অপি অপ্রতিম্‌ প্রভাব ।।৪৩

 অর্থ-হে অমিতপ্রভাব, তুমি এই চরাচর জগতের পিতা, পুজ্যগুরু এবং গুরুর গুরু। অতএব, ত্রিভূবনে তোমার মত আর কেউ নাই। তোমার থেকে শ্রেষ্ঠ অন্য কে হতে পারে?

 তস্মাত্ প্রণম্য প্রণিধায় কায়ম্‌

 প্রসাদয়ে ত্বাম অহম্‌ ঈশম্‌ ঈড্যম্‌ ।

 পিতা-ইব পুত্রস্য সখাঃ ইব সখ্যুঃ

 প্রিয় প্রিয়ায়াঃ অহর্সি দেব সোঢম ।।৪৪

 অদৃষ্টপুর্বম্‌ হৃষিতঃ অস্মি দৃষ্টা

 ভয়েন চ প্রব্যথিতম্‌ মনঃ মে ।

 তত্ এব মে দর্শয় দেব রূপম

 প্রসীদ দেবেশ জগন্নিবাস ।।৪৫।

 অর্থ-হে পরম পূজ্য ভগবান, তাই আমি তোমাকে তন্ডবত্ প্রনাম করে তোমার কৃপা ভিক্ষা করছি। পিতা যেমন পুত্রের, সখা যেমন সখায়, প্রিয় যেমন প্রিয়ার অপরাধক্ষমা করেন, তুমিও সেই ভাবে আমার অপরাধ ক্ষমা কর। তোমার এই বিশ্বরুপ যা পুর্বে আর ককনো দেখিনি তা দর্শন করে আমার কৌতুহল চরিতার্থ হয়েছে। তা সত্তেও আমার মন ভয়ে ব্যথিত হয়েছে। তাই হে দেবেশ, হে জসন্নিবাস, আমার প্রতি প্রসন্ন হও এবং পুনরায় তোমার সেই পুর্ব রুপই দেখাও।

 কিরিটিনম্‌ গদিনম্‌ চক্রহন্তুম্‌

 ইচ্ছামি ত্বাম দ্রষ্টুম্‌ অহম্‌ তথা এব ।

 তেন এব রূপেন চতুর্ভুজেন

 সহস্রবাহো ভব বিশ্বমুর্তে ।।৪৬

 অর্থ-হে সহস্রবাহো, আমি তোমাকে সেই কিরিটি, গদা ও চক্রধারি রুপে দেখতে ইচ্ছা করি। হে বিশ্বমুর্তি এখন তুমি তোমার সেই চতুর্ভূজ মুর্তি ধারন কর।

 ভগবান উবাচ

 ময়া প্রসয়েন তব অর্জুন ইদম্‌

 রুপম্‌ পরম্‌ দর্শিতম্‌ আত্মযোগাত্ ।

 তেজময়ম্‌ বিশ্বম্‌ অনন্তম্‌ আদ্যম্‌

 যত্ মে ত্বত্ অন্যেন ন দৃষ্ট পুর্বম্‌ ।।৪৭

 অর্থ-ভগবান বললেন-তোমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমি তোমাকে জড় জগতের অন্তর্গত আত্মযোগ স্বরুপ শ্রেষ্ঠরুপ দেখালাম। তুমিছাড়া পুর্বে আর কেউই সেই অননত আদি তেজময় রুপ দেখেনি।

 ন বেদ যজ্ঞ অধ্যয়নৈঃ ন দানৈঃ

 ন চ ক্রিয়াভিঃ ন তপোভিঃ উগ্রৈঃ ।

 এবম্‌ রূপঃ শক্যঃ অহম্‌ নৃলোকে

 দ্রষ্টুম্‌ ত্বত্ অন্যেন কুরুপ্রবীর ।।৪৮

 অর্থ-হে কুরুশ্রেষ্ঠ, বেদ অধ্যায়ন, যজ্ঞ, দান, পুন্যকর্ম ও কঠোর তপস্যার দ্বারা আমার এই রুপ দর্শন করতে পারে না। একমাত্র তুমিই তাই দর্শন করলে।

 মা তে ব্যথা মা চ বিমূঢ়ভাব

 দৃষ্টা রূপম্‌ ঘোরম্‌ ঈদৃক মম্‌ ইদম্‌ ।

 ব্যপেতভীঃ প্রীতমনাঃ পুনঃ ত্বম্‌

 তত্ এব মে রূপম্‌ ইদম্‌ প্রপশ্য ।।৪৯

 অর্থ-আমার ভয়ঙ্কর বিশ্বরুপ দেখে তুমি ব্যাথিত হইও না। ভয় ত্যাগকরে প্রসন্ন চিত্তে আমার চতুর্ভূজ রুপ দর্শন কর।

 সঞ্জয় উবাচ

 ইতি অর্জুনম্‌ বাসুদেবঃ তথা উক্তা

 স্বকম্‌ রুপম্‌ দর্শয়ামাস ভূয় ।

 আশ্বাসয়ামাস চ ভীতম্‌ এনম্‌

 ভূত্বা পুনঃ সৌম্য বপু মহাত্মা ।।৫০

 অর্থ-সঞ্জয় ধৃতরাষ্টকে বললেন-মহাত্মা বাসুদেব অর্জুনকে এই ভাবে বলে তার চতুর্ভুজ রুপ দেখালেন এবং পুনরায় সৌম্য মুর্তি ধারন করে ভীত অর্জুনকে আশ্বস্ত করলেন।

 দৃষ্টা ইদম্‌ মানুষম্‌ রূপম্‌ তব সৌম্যম্‌ জনার্দন ।

 ইদানীম্‌ অস্মি সংবৃত্তঃ সচেতাঃ প্রকৃতিম্‌ গতাঃ ।।৫১

 অর্থ-শ্রীকৃষ্ণের পরম মাধুর্যময় দ্বিভূজ মুর্তি দর্শন করে অর্জুন বললেন হে জনার্দন তোমার এই সৌম্য মানুষ মুর্তি দর্শন করে আমার চিত্ত স্থির হল এবং আমি প্রকৃতিস্ত হলাম।

 ভগবান উবাচ

 সুদুর্দশম্‌ ইদম্‌ রূপম্‌ দৃষ্টবানসী যত্ মম্‌ ।

 দেবাঃ অপি অস্য রূপস্য নিত্যম্‌ দর্শনকাঙ্ক্ষিন ।।৫২

 অর্থ-ভগবান বললেন-আমার যে রুপ দেখেছ তা অত্যন্ত দুর্লভ দর্শন। দেবতারাও এই নিত্য রুপের দর্শনাকাঙ্ক্ষি।

 ন অহম্‌ বেদৈঃ ন তপসা ন দানেন ন চ ইজ্যয়া ।

 শক্যঃ এবম্‌-বিধঃ দ্রষ্টুম দৃষ্টবান অসি মাম্‌ যথা ।।৫৩

 অর্থ-তুমি তেমার দিব্য চক্ষু দ্বারা আমার যে রুপ দর্শন করেছ তা বেদ পাঠ,তপস্যা

 দান, পুজা প্রভৃতি উপায় দ্বারা কেউই দর্শন করতে সমর্থ হয় না।

 ভক্তা তু অনন্যয়া শক্যঃ অহম্‌ এবম-বিধঃ অর্জুন ।

 জ্ঞাতুম্‌ দ্রষ্টুম্‌ চ তত্ত্বেন প্রবেষ্টুম্‌ চ পরন্তপ ।।৫৪

 অর্থ-হে অর্জুন- অনন্যা ভক্তিদ্বারাই কেবল আমাকে জানতে ও স্বরুপত প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।

 মত্কর্মকৃত্ মত্পরম্‌ মদ্ভক্তঃ সঙ্গবর্জিতঃ ।

 নির্বৈরঃ সর্ব ভূতেষু যঃ সঃ মাম্‌ এতি পান্ডবা ।।৫৫

 অর্থ-হে অর্জুন- যিনি আমার অকৈতব সেবা করেন, আমার প্রতি নিষ্ঠাপরায়ন, আমার ভক্ত,জড় বিষয়ে সম্পুর্ণ আসক্তি রহিত এবং সম প্রাণীর প্রতি শত্রুভাব রহিত তিনি অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 বিশ্বরূপদর্শনযোগো নামৈকাদশোঽধ্যাযঃ ॥১১॥

Friday, June 26, 2020

আসুন গীতা পাঠ করি:- 10 দশম অধ্যায়ঃ বিভূতিযোগ

দশম অধ্যায়ঃ বিভূতিযোগ

 ভগবান উবাচ

 ভূয় এব মহাবাহো শৃনু মে পরমম্‌ বচঃ ।

 যত্ তে অহম্‌ প্রীয়মানয় বক্ষামি হিতকাময়া ।।১

 অর্থ-ভগবান বললেন হে মহাবাহো তুমি আমার প্রিয় পাত্র তাই তেমার হিতকামনায় আমি যা পুর্বে বলেছি তার থেকেও উত্কৃষ্ট তত্ত্ব বলছি তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবন কর।

 ন মে বিদুঃ সুরগণাঃ প্রভবম্‌ ন মহার্ষয় ।

 অহম্‌ আদিঃ হি দেবানাম্‌ মহষীনাম্‌ চ সর্বশঃ ।।২

 অর্থ-মহর্ষিরা বা দেবতারাও আমার উত্পত্তি অবগত হতে পারে না কারন আমি দেবতা ও মহর্ষিদের আদি কারন।

 যঃ মাম্‌ অজম্‌ অনাদিম্‌ চ বেত্তি লোক মহেশ্বরম্‌ ।

 অসংমূঢ় সঃ মর্ত্তেষু সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে ।।৩

 অর্থ-যিনি আমাকে আদিহীন জন্মরহিত ও সর্বলোকের মহেশ্বর বলে জানেন, মানুষের মধ্যে তিনিই মোহশুন্য হয় এবং সমস্ত পাপথেকে মুক্ত হন।

 বুদ্ধিঃ জ্ঞানম্‌ অসংমোহ ক্ষমা সত্যম্‌ দমঃ শমঃ ।

 সুখম্‌ দুঃখম্‌ ভবঃ অভাবঃ ভয়ম্‌ চ অভয়ম্‌ এব চ ।।৪

 অহিংসা সমতা তুষ্টিঃ তপঃ দানম্‌ যশঃ অযশঃ ।

 ভবন্তি ভাবাঃ ভূতানাম্‌ মত্তঃ এব পৃথগবিধাঃ ।।৫

 অর্থ-বুদ্ধি, জ্ঞান, মোহমুক্তি, ক্ষমা, সত্য, বাহ্যেইন্দ্রিয় ও অন্তরিন্দ্রিয়ের সংযম, সুখ,দুঃখ, জন্ম,মৃত্যু, ভয়, অভয়, অহিংসা, সমচিত্ততা, সন্তোষ, তপস্যা, দান, ধর্ম নিমিত্ত কীর্ত্তি ও অধর্ম নিমিত্ত অকির্ত্তি এই সবই আমার থেকে উত্পন্ন হয়।

 মহর্ষয়ঃ সপ্ত পুর্বে চত্বার মনবঃ তথা ।

 মদভাবাঃ মানসঃ জাত্‌ঃ যেসাম্‌ লোক ইমাঃ প্রজাঃ ।।৬

 অর্থ-সপ্ত মহর্ষি তাদের পুর্বজাত সনকাদি চার কুমার এবং চতুর্দশ মনু, সকলেই আমার মন থেকে উত্পন্ন হয়েছে, এবং এই জগতের স্থাবর জঙ্গম আদি সমস্ত প্রজা তারাই সৃষ্টি করেছেন।

 এতাম্‌ বিভূতিম্‌ যোগম্‌ চ মম্‌ যঃ বেত্তি তত্ত্বতঃ ।

 সঃ অবিকল্পেন যোগেন যুজ্যতে ন অত্র সংসয় ।।৭

 অর্থ-যিনি আমার এই বিভূতি এবং যোগ যথার্থরুপে জানেন তিনি অবিচলিত ভাবে আমার সেবায় যুক্ত হন, সে বিষয় কোন সন্দেহ নাই।

 অহম্‌ সর্বস্য প্রভবঃ মত্তঃ সর্বম্‌ প্রবর্ততে ।

 ইতি মত্বা ভজন্তে মাম্‌ বুধাঃ ভাবসমন্বিতা ।।৮

 অর্থ-আমি জড় এবং চেতন জগতের সবকিছুর উত্স। সবকিছু আমার থেকে প্রবর্তিত হয়। সেই তত্ত্ব অবগত হয়ে যারা শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন তারাই যথার্থ তত্ত জ্ঞানী।

 মত্-চিত্তাঃ মত্-গতপ্রানাঃ বোধয়ন্ত পরস্পরম্‌ ।

 কথয়ন্ত চ মাম্‌ নিত্যম্‌ তুষ্যন্তি চ রমন্তি চ ।।৯

 অর্থ-যারা আমাকে চিত্ত ও প্রান সম্পুর্নরুপে সমর্পন করেছেন,তারা পরস্পরের মধ্যে আমার কথা আলাচনা করে এবংআমার সম্বন্ধে পরস্পকে বুঝিয়ে পরম সন্তোষ ও অপ্রাকৃত আনন্দ লাভ করেন।

 তেষাম সততযুক্তানাম্‌ ভজতাম্‌ প্রীতিপুর্বকম্‌ ।

 দদামি বুদ্ধিযোগম্‌ তম্‌ যেন মাম্‌ উপযান্তি তে ।।১০

 অর্থ-যারা নিত্ত ভক্তি যোগ দ্বারা প্রীতিপুর্বক আমার ভজনা করেন, আমি তাদের শুদ্ধ জ্ঞান জনিত বুদ্ধি দান করি, যার দ্বারা তারা আমার কাছে ফিরে আসতে পারে।

 তেষাম্‌ এব অনুকম্পার্থম্‌ অহম্‌ অজ্ঞানজম্‌ তমঃ ।

 নাশয়ামি আত্ম ভাবস্ত জ্ঞান দীপেন ভাস্ববা ।।১১

 অর্থ-তাদের প্রতি অনুগ্রহ করে আমি তাদের হৃদয়ে অবস্থি হয়ে উজ্জল জ্ঞান প্রদীপ দ্বারা অজ্ঞান জনিত মোহান্ধকার নাশ করি।

 অর্জন উবাচ

 পরম্‌ ব্রহ্ম পরম্‌ ধাম্‌ পবিত্রম্‌ পরমম্‌ ভবান ।

 পুরুষম্‌ শাশ্বতম্‌ দিব্যম্‌ আদি দেবম্‌ অজম বিভূম ।।১২

 আহু ত্বাম্‌ ঋষয় সর্বে দেবর্ষিঃ নারদ তথা ।

 আসিতঃ দেবলঃ ব্যাসঃ স্বয়ম্‌ চ এব ব্রবীষি মে ।।১৩

 অর্থ-অর্জুন বললেন তুমি পরম ব্রহ্ম পরমধাম পরম পবিত্র পরম পুরুষ নিত্য আদি দেব,অজ ও বিভূ। দেবর্ষি নারদ,অসিত,দেবল, ব্যাস প্রভৃতি ঋষিরা তোমাকে সেই

 ভাবে বর্ননা করেছেন এবং তুমি নিজেও তা এখন আমাকে বলছ।

 সর্বম্‌ এতত্ ঋতম্‌ মন্যে যত্ মাম্‌ বদসী কেশব ।

 ন হি তে ভগবন ব্যক্তিম্‌ বিদুঃ দেবাঃ ন দানবাঃ ।।১৪

 অর্থ-হে কেশব,তুমি আমাকে যা বলছ তা আমি সত্য বলে মনে করি? হেভগবান দেবতা এবং দানবেরা কেউই তোমার তত্ত ভাল ভাবে জানে না।

 সয়ম্‌ এব আত্মনা আত্মনম্‌ বেত্থ ত্বম্‌ পুরুষত্তম্‌ ।

 ভূতভাবন্‌ ভূতেশ দেবদেব জগত্পতে ।।১৫

 অর্থ-হে ভূতভাবন হে ভূতেশ হে দেব হে জগত্পতে হে পুরুষোত্তম তুমি নিজেই তোমার চিত্শক্তির দ্বারা তোমার ব্যক্তিত্ত অবগত আছ।

 বক্তুম অর্হসি অশেষেন দিব্যাঃ হি আত্মা বিভূতয়া ।

 যাভিঃ বিভূতিভিঃ লোকান ইমান ত্বম্‌ ব্যাপ্য তিষ্ঠসি ।।১৬

 অর্থ-তুমি যে বিভূতির দ্বারা এই লোক সমুহ পরিব্যাপ্ত হয়ে আছ, সেই সমস্ত দিব্য

 আত্ম বিভূতি সম্যক রুপে বর্ননা করতে কেবল তুমিই সমর্থ।

 কথম্‌ বিদ্যামহম্‌ যোগিন ত্বাম্‌ সদা পরিচিন-য়ন ।

 কেষু কেষূ চ ভাবেষু চিন্ত্যোহসি ভগবন ময়া ।।১৭

 অর্থ-হে যোগেশ্বর কিভাবে সর্বদা তোমার চিনা করলে আমি তোমাকে জানতে পারব? হে ভগবান, কোন কোন বিবিধ আকৃতির মাধ্যমে আমি তোমাকে ধ্যান করব।

 বিস্তারেন আত্মনঃ যোগম্‌ বিভূতি চ জনার্দন ।

 ভূয় কথয় তৃপ্তিঃ হি শৃন্নতঃ নাস্তি মে অমৃতম্‌ ।।১৮

 অর্থ-হে জনার্দন তোমার যোগ তোমার বিভূতি বিস্তৃত ভাবে আমাকে আবার বল কারন তেমার উপদেশামৃত পান করেও আমার পরিতৃপ্তি হচ্ছে না; আমি আর শুনতে ইচছা করি।

 ভগবান উবাচ

 হন্ত তে কথয়িষ্যামি দিব্যাঃ হি আত্মবিভূতয়া ।

 প্রধান্যতঃ কুরুশ্রেষ্ঠ নাস্তি অন্ত বিস্তরস্য মে ।।১৯

 অর্থ-ভগবান বললেন-হে অর্জুন আমার দিব্য বিভূতির অন্ত নেই,কয়েকটি প্রধান প্রধান বিভূতির কথাবলি তুমি শ্রবন কর।

 অহম্‌ আত্মা গুড়াকেশ সর্বভূত আশয়স্থিতঃ ।

 অহম আদি চ মধ্যম্‌ চ ভূতানাম্‌ অন্তঃ এব চ ।।২০

 অর্থ-হে-গুড়াকেশ আমিই সমস্ত জীবের হৃদয় অবস্থিত পরমাত্মা, আমি সর্ব ভূতের আদি মধ্য ও অনত।

 আদিত্যানাম অহম্‌ বিষ্ণুঃ জ্যোতিষাম্‌ রবি অংশুমান ।

 মরিচিঃ মরুতাম্‌ অস্মি নক্ষত্রনাম্‌ অহম্‌ শশী ।।২১

 অর্থ-আমি আদিত্যদের মধ্যে বিষ্ণু, জ্যোতিস্কদের মধ্যে কিরনশালী সুর্য, মরুতদেও মধ্যে মরীচি এবং নক্ষত্রদের মধ্যে চন্দ্র।

 বেদানাম্‌ সামবেদঃ অস্মি দেবানাম অস্মি বাসবঃ ।

 ইন্দ্রিনাম্‌ মন চ অস্মি ভূতানাম অস্মি চেতনা ।২২

 অর্থ-সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ, সমস্ত দেবতাদের মধ্যে আমি ইন্দ্র, সমস্ত ইন্দ্রিয়ের মধো আমি মন,সমস্ত জীব সত্তার মধ্যে আমি চেতনা।

 রুদ্রানাম শঙ্কর চ অস্মি বিত্তেশঃ যক্ষরক্ষসাম্‌ ।

 বসুনাম পাবকঃ চ অস্মি মেরু শিখরিনাম অহম্‌ ।।২৩

 অর্থ-রুদ্রের মধ্যে আমি শিব, যক্ষ এবং রাক্ষসদের মধ্যে আমি কুবের,বসুদের মধ্যে আমি অগ্নি এবং সমস্ত পর্বতের মধ্যে আমি সুমের।

 পুরোধসাম্‌ চ মুখ্যম্‌ মাম্‌ বিদ্ধি পার্থ বৃহস্পতিম্‌ ।

 সেনানীনাম্‌ অহম্‌ স্কন্দঃ সরসাম অস্মি সাগরঃ ।।২৪

 অর্থ-হে অর্জুন পুরহিতদের মধ্যে মহাভক্ত বৃহস্পতি সেনাদের মধ্যে আমি কার্তিক জলাশয়ের মধ্যে আমি সাগর।

 মহর্ষীনাম্‌ ভৃগুঃ অহম্‌ গিরাম্‌ অস্মি একম্‌ অক্ষরম ।

 যজ্ঞানাম্‌ জপযজ্ঞঃ অস্মি স্থাবরানাম হিমালয়ঃ ।।২৫

 অর্থ-সমস্ত মহর্ষদের মধ্যে আমি ভৃগু সমস্ত বাক্যের মধ্যে আমি প্রণব সমসত যজ্ঞের মধ্যে আমি জপযজ্ঞ এবং সমস্ত স্থাবর বস্তুর মধ্যে আমি হিমালয়।

 অশ্বথঃ সর্ববৃক্ষানাম দেবর্ষীনাম্‌ চ নারদ ।

 গন্ধানাম্‌ চিত্ররথঃ সিদ্ধানাম্‌ কপিল মুনি ।।২৬

 অর্থ-সমস্ত বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বথ, দেবর্ষীদের মধ্যে আমি নারদ, গন্ধর্বদের মধ্যে আমি চিত্ররথ সিদ্ধদের মধ্যে আমি কপিল মুনি।

 উচ্চৈঃশ্রবসম অশ্বানাম বিদ্ধি মাম্‌ অমৃতোদ্ভবম্‌ ।

 ঐরাবতম্‌ গজেন্দ্রানাম নরানাম চ নরাধিপম্‌ ।।২৭

 অর্থ-অশ্বদের মধ্যে আমি উচ্চৈশ্রবারুপে সমুদ্র মন্থনের সময় উদ্ভুদ হই, হস্তীদের মধ্যে আমি ঐরাবত এবং মনুষ্যদের মধ্যে সম্রাট।

 আয়ুধা নাম অহম্‌ বজ্রম্‌ ধেনুনাম্‌ অস্মি কামাধুক ।

 প্রজনঃ অস্মি কন্দর্পঃ সর্পানাম্‌ অস্মি বাসুকী ।।২৮

 অনন্ত চ অস্মি নাগানাম বরুণঃ যাদসাম্‌ অহম্‌ ।

 পিত্রিনাম্‌ অর্যমা চ অস্মি যমঃ সংযমতাম্‌ অহম্‌ ।।২৯

 অর্থ-সমস্ত অস্ত্রের মধ্যে আমি বজ্র সমস্ত গাভীদের মধ্যে আমি কামধেনু আমি প্রাণীদের প্রজনন শক্তি কাম্‌ এবং সর্পদের মধ্যে বাসকী। সমস্ত নাগদের মধ্যে আমি অনন্ত। জলচরদের মধ্যে আমি বরুন পিতৃদের মধ্যে পিতৃলোকের অধিরুপে অর্য্যমা এবং দন্ডদাতাদের মধ্যে আমি যম্‌।

 প্রহ্লাদ চ অস্মি দৈত্যানাম্‌ কালঃ কলয়তাম্‌ অহম্‌ ।

 মৃগানাম্‌ চ মৃগেন্দ্রঃ অহম্‌ বৈনতেয়ঃ চ পক্ষিনাম্‌ ।৩০

 অর্থ-দৈত্যদের মধ্যে আমি পহ্লাদ বশীকারিদের মধ্যে আমি কাল পশুদের মধ্যে আমি সিংহ এবং পাখিদের মধ্যে আমি বিনতা তনয় গরুড়।

 পবনঃ পবতাম্‌ অস্মি রাম শস্ত্রভূতাম্‌ অহম্‌ ।

 ঋষানাম্‌ মকরঃ চ অস্মি স্রোতসাম্‌ অস্মি জাহ্নবী ।।৩১

 অর্থ-পবিত্রকারি বস্তুর মধ্যে আমি বায়ু, অস্ত্রধারিদের মধ্যে আমি পরশুরাম, মত্স্যদের মধ্যে মকর, এবং নদীদের মধ্যে আমি গঙ্গাঁ।

 সর্গানাম আদিঃ অনন্ত চ মধ্যম্‌ চ এব অহম্‌ অর্জুন ।

 আধ্যাত্মবিদ্যা বিদ্যানাম্‌ বাদঃ প্রবদতাম্‌ অহম্‌ ।।৩২

 অর্থ-হে অর্জুন সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে আমি আদি,অনত এবং মধ্য; সমস্ত বিদ্যার মধ্যে আমি আধ্যাত্মবিদ্যা এবং তার্কিকদের বাদ, জল্প ও বিতন্ডার মধ্যে আমি সিন্ধান্তসসবাদ।

 অক্ষরানাম্‌ অকারঃ অস্মি দন্ধঃ সামসিকস্য চ।

 অহম্‌ এব অক্ষয় কালঃ ধাতা অহম্‌ বিশ্বতোমূখ ।।৩২

 অর্থ-সমস্ত অক্ষরদের মধ্যে আমি অকার, সমাস সমুহের মধ্যে দন্দ্ব, সংহার কারিদের মধ্যে মহাকাল রুদ্র এবং স্রষ্টার মধ্যে আমি ব্রহ্মা।

 মৃত্যু সর্বহরঃ চ অহম্‌ উদ্ভবঃ চ ভবিষ্যতাম্‌ ।

 কীর্তি শ্রীঃ বাক্‌ চ নারীনাম্‌ স্মৃতিঃ মেধা ধৃতিঃ ক্ষমা ।।৩৪

 অর্থ-সমস্ত হরন কারিদের মধ্যে আমি সর্বগ্রাসি মৃত্যু,ভাবিকালের বস্তুদের মধ্যে আমি উদ্ভাবনী নীতি,নারীদের মধ্যে কীর্তি, শ্রী,বানী, স্মৃতি,মেধা,ধৃতি এবং ক্ষমা । বৃহত্ সাম তথা সম্মাম গায়ত্রী ছন্দসাম্‌ অহম্‌ ।

 মাসানাম্‌ মার্গশীর্ষঃ অহম্‌ ঋতুনাম কুসুমকার ।।৩৫

 অর্থ-আমি সাম বেদের মধ্যে বৃহত্ সাম, সমস্ত ছন্দের মধ্যে গায়ত্রী, মাস সমুহের মধ্যে অগ্রহায়ন এবং ঋতুদের মধ্যে পুস্প সমরোহময় বসন্ত।

 দ্যুতম্‌ ছলয়তাম অস্মি তেজঃ তেজস্বিনা অহম্‌ ।

 জয়ঃ অস্মি ব্যবসায়ঃ অস্মি সত্ত্বম্‌ সত্ত্ববতাম্‌ অহম্‌ ।।৩৬

 অর্থ-সমস্ত বঞ্চনা কারিদের মধ্যে দ্যুতক্রীড়া, তেজস্বীদের মধ্যে তেজ। অমি বিজয়, আমি উদ্যম এবং আমি বলবানদের মধ্যে বল।

 বৃঞ্চিনাম্‌ বাসুদেব অস্মি পান্ডবানাম্‌ ধনঞ্জয় ।

 মুনীনাম অপি অহম্‌ ব্যাসঃ কবিনাম উশনাঃ কবিঃ ।।৩৭

 অর্থ-বৃঞ্চিদের মধ্যে অমি বাসুদেব পান্ডবদের মধ্যে ধনঞ্জয়,আমি মুনিদের মধ্যে ব্যাস এবং কবিদের মধ্যে শুক্রাচার্য্য।

 দন্ডঃ দময়তাম্‌ অস্মি নীতিঃ অস্মি জিগীষতাম ।

 মৌনম্‌ চ এব অস্মি গুহ্যানাম্‌ জ্ঞানম্‌ জ্ঞানবতাম্‌ অহম্‌ ।।৩৮

 অর্থ-আমি দমন করিদের মধ্যে দন্ড জয়াভিলাষীদের মধ্যে নীতি গুহ্যধর্মের মধ্যে মৌন এবং জ্ঞানবানদের মধ্যে জ্ঞান।

 যত্ চ অপি সর্বভূতানাম্‌ বীজম্‌ তত্ অহম্‌ অর্জুন ।

 ন তত্ অস্তি বিনা যত্ স্যাত্ ময়া ভূতম্‌ চরাচরম্‌ ।।৩৯

 অর্থ-হে অর্জুন যা সবর্ ভূতের্‌ বীজ স্বরুপ তাও আমি, যেহেতু আমাকে ছাড়া স্থাবর জঙ্গম্‌ কোন বস্তুরই অস্তিত্ত্ব থাকতে পারেনা।

 ন অন্তঃ অস্তি মম্‌ দিব্যানাম্‌ ,বিভূতি নাম্‌ পরন্তপ ।

 এষঃ তু উদ্দেশতঃ প্রোক্তঃ বিভূতেঃ বিস্তর ময়া ।।৪০

 অর্থ-হে পরন্তপ আমার দিব্য বিভুতির অন্ত নেই আমি কেবল সংক্ষেপে এই সমস্ত বিভূতির কথা বর্ননা করলাম।

 যত্ যত্ বিভূতীম্‌ সত্তম্‌ শ্রীমত্ উর্জিতম্‌ এব বা ।

 তত্ তত্ এব অবগচ্ছ ত্বম মম তেজ অংশ সম্ভবম্‌ ।।৪১

 অর্থ-ঐষর্য্য যুক্ত শ্রী-সম্পন্ন বল প্রভাবাদির আধিক্যযুক্ত যত বস্তু আছে সবই আমার শক্তির অংশ সম্ভুত বলে জানবে।

 অথবা বহুনা এতেন কিম্‌ জ্ঞাতেন তব অর্জুন ।

 বিষ্টভ্য অহম্‌ ইদম্‌ কৃত্স্নম্‌ এক অংশেন স্থিতম্‌ জগত্ ।।৪২

 অর্থ-হে অর্জুন অধিক কি আর বলব এইটুকু মাত্র জেনে রাখ আমি আমার এক অংশের দ্বারা সমস্ত জগত্ ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছি।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 বিভূতিযোগো নাম দশমোঽধ্যাযঃ ॥১০॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 9 নবম অধ্যায়ঃ রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ

নবম অধ্যায়ঃ রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ

 ভগবান উবাচ

 ইদম্‌ তু ত্বম্‌ গুহ্যতমম্‌ প্রবক্ষামি অনসুয়বে ।

 জ্ঞানম বিজ্ঞান সহিতম্‌ যত্ জ্ঞাত্বা মোক্ষস্যে অশুভাত ।।১

 অর্থ-ভগবান বললেন হে অর্জুন নিমত্সর বলে তোমাকে আমি পরম বিজ্ঞান সমন্বিত সব চেয়ে গোপনীয় জ্ঞান উপদেশ করছি সেই জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে তুমি দুঃখ্যময় সংসার থেকে মুক্ত হও।

 রাজবিদ্যা রাজগুহ্যম পবিত্রম্‌ ইদম্‌ উত্তমম্‌ ।

 প্রত্যক্ষ অবগমম্‌ ধর্মম্‌ সুসুখম্‌ কর্তুম্‌ অব্যয়ম্‌ ।।২

 অর্থ-এই জ্ঞান সমস্ত বিদ্যার রাজা সমস্ত গুজ্যতত্ত্ব থেকেও গুহ্যতর অতি গুহ্যতর অতি পবিত্র এবং প্রতক্ষ্যরুপে আত্ত্ব উপলব্ধি প্রদান করে বলে প্রকৃত ধর্ম। এই জ্ঞান অব্যয় এবং সুখসাধ্য।

 অশ্রদ্দধ্যানঃ পুরুষাঃ ধর্মস্য অস্য পরন্তপ ।

 অপ্রাপ্য মাম্‌ নিবর্তন্তে মৃত্যু সংসার বর্ত্মনি ।।৩

 অর্থ-হে পরন্তপ যে সমস্ত জীবের শ্রদ্ধা উদিত হয়নি, তারা এই পরম ধর্মরুপ ভগবত্ভক্তি লাভ করতে অসমর্থ হয়ে এই জড় জগতে জন্ম মৃত্যুর আবর্তে পতিত হয়।

 ময়া ততম্‌ সর্বম্‌ জগত্ অব্যক্ত মুর্ত্তিন ।

 মত্স্থানি সর্বভূতানি ন চ অহম্‌ তেষু অবস্থিত ।।৪

 অর্থ-অব্যক্ত রুপে আমি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত আছি। সমস্ত জীব আমাতেই অবস্থিত কিন্তু আমি তাতে অবস্থিত নই।

 ন চ মত্স্থানি ভূতানি পশ্য মে যোগমৈশ্বরম ।

 ভূতভৃত্ ন চ ভূতস্থঃ মম আত্মা ভূতভাবনঃ ।।৫

 অর্থ-যদিও সব কিছুই আমারই সৃষ্ট তবুও তারা আমাতে অবস্থিত নয়। আমার যোগৈশ্বর্য্য দর্শন কর। যদিও আমি সমস্ত জীবের ধারক এবং যদিও আমি সর্বব্যাপ্ত তবুও অমি সমস্ত সৃষ্টির উত্স।

 যথা আকাশস্থিতঃ নিত্যম্‌ বায়ু সর্বত্রগঃ মহান ।

 তথা সর্বানি ভূতানি মত্স্থানি ইতি উপধারয় ।।৬

 অর্থ-মহান বায়ু যেমন সর্বত্র বিচর শীল হওয়া সত্তেও সর্বদা আকাশে অবস্থান করে তেমনই জগত্ আমাতে অবস্থান করে।

 সর্বভূতানি কৌন্তয় প্রকৃতিম্‌ যান্তি মামিকাম্‌ ।

 কল্পক্ষয়ে পুনঃ তানি কল্পদৌ বিসৃজামি অহম্‌ ।।৭

 অর্থ-হে-কৌন্তেয় কল্পান্ত সমস্ত জড় বস্তু আমারই প্রকৃতে প্রবেশ করে,এবং পুনরায় কল্পারম্ভে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।

 প্রকৃতিম্‌ স্বাম্‌ অবষ্টভ্য বিসৃজইম পুনঃ পুনঃ ।

 ভূতগ্রামম্‌ ইমম্‌ কৃত্স্নম্‌ অবশম্‌ প্রকৃতেঃ বশাত্ ।৮।

 অর্থ-হে-কৌন্তেয় কল্পান্ত সমস্ত জড় বস্তু আমারই প্রকৃতে প্রবেশ করে,এবং পুনরায় কল্পারম্ভে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।

 ন চ মাম্‌ তানি কর্মানি নিবধ্‌নন্তি ধনঞ্জয় ।

 উদাসীনবত্ আসিনম্‌ অসক্তম্‌ তেষু কর্মষু ।।৯

 অর্থ-হে ধনঞ্জয় সেই সমস্ত কর্ম আমাকে আবদ্ধ করতে পারে না। আমি সেই সমস্ত কর্মে অনাসক্ত ও উদাসিনের ন্যায় অবস্থিত থাকি।

 ময়া অধ্যক্ষেন প্রকৃতিঃ সুয়তে সঃ চরাচরম্‌ ।

 হেতুনা অনেন কৌন্তেয় জগত্ বিপরিবর্ততে ।।১০

 অর্থ-হে কেন্তেয় আমার অধ্যক্ষতার দ্বারা ত্রিগুনাত্তিকা মায়া এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি কও। প্রকৃতির নিয়মে এই জগত্ পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হয় এবং ধংস হয়।

 অবজানন্তি মাম্‌ মূঢ়া মানুষীম্‌ তনুম্‌ আশ্রিতম্‌ ।

 পরম ভাবম্‌ অজানন্তঃ মম্‌ ভূত মহেশ্বরম্‌ ।।১১

 অর্থ-আমি যখন মানুষ রুপে অবতীর্ন হই,মুর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত হন না, এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।

 মোঘশাঃ মোঘকর্মানঃ মোঘজ্ঞানা বিচেতসঃ ।

 রাক্ষসীম্‌ আসুরীম্‌ চ এব প্রকৃতিম্‌ মোহিনীম্‌ শ্রিতাঃ ।।১২

 অর্থ-এই ভাবে যারা মোহচ্ছন্ন হয়েছে তারা রাক্ষসী বা আসুরী ভাবের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেই মোহছন্ন অবস’ায় তাদেরও মুক্তি লাভের আশা, তাদের স্বকাম কর্ম এবং জ্ঞানের প্রয়াস সমস্তই ব্যর্থ হয়।

 মহাত্মনঃ তু মাম্‌ পার্থ দৈবীম্‌ প্রকৃতিম্‌ আশ্রিতাঃ ।

 ভজন্তি অনন্যমনসঃ জ্ঞাত্বা ভূত আদিম্‌ অব্যয়ম্‌ ।১৩

 অর্থ-হে পার্থ মোহযুক্ত মহাত্মাগন আমার দৈবী প্রকৃতি আশ্রয় করেন। তারা আমাকে সর্বভূতের কারন ও অবিনাশী জেনে অনন্য চিত্তে ভজনা করেন।

 সততম্‌ কীর্তয়ন্ত মাম্‌ যতন্তঃ চ দৃঢ়ব্রতাঃ ।

 নমস্যন্তঃ চ মাম্‌ ভক্তা নিত্যযুক্ত উপাসতে ।।১৪

 অর্থ-ব্রহ্মচর্য্যাদি ব্রতে দৃঢ়নিষ্ট ও যত্নশীল হয়ে সেই ভক্তরা সর্বদা আমার মহিমা কির্তন করে এবং সর্বদা ভক্তি পুর্বক আমার উপসনা করেন।

 জ্ঞানযজ্ঞেন চ অপি অন্যে যজন্তঃ মাম্‌ উপাসতে ।

 একত্যেন পৃথক্তেন বহুধা বিশ্বতমুখম্‌ ।।১৫

 অর্থ-অন্য কেউ কেউ জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা, অভেদ চিন্তাপুর্বক, কেউ কেউ বহুরুপে প্রকাশিত ভেদ চিন্তাপুর্বক, এবং অন্য কেউ আমার বিশ্বরুপের, উপসনা করে।

 অহম্‌ ক্রতুঃ অহম্‌ যজ্ঞঃ স্বধা অহম্‌ অহম্‌ ঔষধম্‌ ।

 মন্ত্র অহম্‌ অহম্‌ এব আজ্যম্‌ অহম্‌ অগ্নিঃ অহম্‌ হুতম্‌ ।।১৬

 অর্থ-আমি অগ্নিষ্টোম আদি শ্রৌত যজ্ঞ আমি বৈশ্যদেব আদি স্মার্ত যজ্ঞ,আমি পিত্রিপুরুষদের উদ্বেশ্যে কর্ম,আমি রোগ নিবারক ভেষজ, আমি মন্ত্র, আমি হোমের ঘৃত,আমি হোমাগ্নি এবং আমিই হোমক্রিয়া।

 পিতা অহম্‌ অস্য জগতঃ মাতা ধাতা পিতামহঃ ।

 বেদ্যম্‌ পবিত্রম্‌ ওঙ্কার ঋক সাম্‌ যজুঃ এব চ ।।১৭

 অর্থ-আমিই জগতের পিতামাতা সর্ব প্রাণীর কর্মফল প্রানদাতা এবং পিতামহ ঋক সাম এবং যজুঃ (বেদসমুহ)।

 গতিঃভর্তা প্রভূ সাক্ষী নিবাসঃ শরনম্‌‌ সুহৃত্ ।

 প্রভবঃ প্রলয়ঃ স্থানম্‌ নিধানম্‌ বীজম্‌ অব্যয়ম্‌ ।।১৮

 অর্থ-আমি সকলের গতীভর্তা প্রভু সাক্ষীনিবাস শরণ,সুহৃদ, উত্পত্তি, নাশ,স্থিতি, হেতু এবং অব্যয় বীজ।

 তপামি অহম্‌ অহম্‌ বর্ষম্‌ নিগৃহ্নামি উত্সৃজামি চ । অমৃতম্‌ চ এব মৃত্যুঃ চ সত্ অসত্ চ অহম অর্জুন ।।১৯ অর্থ-হে অর্জুন আমি তাপএবং আমি বিষ্টি, আমি জল বর্ষনকারী ও জল আকর্ষন করি; আমি অমৃত এবং আমি মৃত্যু; আমি সত্ত্বা এবং সত্ত্বাহীন।

 ত্রৈবিদ্যা মাম্‌ সোমপাঃ পুত পাপাঃ

 যজ্ঞৈঃ ইষ্টা সর্গতিম্‌ প্রার্থয়ন্তে ।

 তে পুন্যম্‌ আসাদ্য সুরেন্দ্র লোকম

 অশ্নন্তি দিব্যান দিবি দেবভোগান ।।২০

 তে তম ভূক্তা সর্গ লোকম্‌ বিশালম্‌

 ক্ষীনে পুন্যে মর্ত্যলোকম্‌ বিশন্তি ।

 এবম্‌ ত্রয়ী ধর্মম্‌ অনুপ্রপন্না

 গতাগতম্‌ কাম কামাঃ লভন্তে ।।২১

 অর্থ-ত্রিবেদ যজ্ঞগন যজ্ঞ অনুষ্ঠান দ্বারা আমাকে আরাধনা করে যজ্ঞাবশিষ্ঠ সোমরস পান করে পাপ মুক্ত হন এবংস্বর্গ কামনা করেন। তারা পুন্য কর্মের ফল স্বরুপ ইন্দ্র লোকলাভ কওে দিব্য স্বর্গসুখ উপভোগ করেন। তারা সেই বিপুলস্বর্গলোক উপভোগ করে পুন্য ক্ষয় হলে আবার মর্তলোকে ফিরে আসেন। এই ভাবে ত্রিবেদক্ত ধর্মের অনুষ্ঠান করে ইন্দ্রিয় ভোগ আকাঙ্খি মানুষেরা সংসারে জন্ম মৃর্ত্যর আবর্তে আবর্তিত হয়।

 অনন্যাঃ চিন্তয়ন্তঃ মাম্‌ যে জনাঃ পর্যুপাসতে।

 তেষাম্‌ নিত্য অভিযুক্তানাম্‌ যোগক্ষেমম্‌ বহামি অহম্‌ ।।২২

 অর্থ-অনন্য চিত্তে আমার চিন্তায় মগ্নহয়ে যারা আমার উপসনা করে আমি তাদের সমস্ত অভাব পুরন করি এবং তাদের প্রাপ্ত বস্তু সংরক্ষণ করি।

 যে অপি অন্য দেবতা ভক্তাঃ যজন্তে শ্রদ্ধায়ান্বিতাঃ ।

 তে অপি মাম্‌ এব কৌন্তেয় যজন্তি অবিধিপুর্বকম্‌ ।।২৩

 অর্থ- হে কৌন্তেয় যারা ভক্তি পুর্বক অন্য দেবতাদের পূজা করেন তারাও অবিধি পুর্বক আমারই পূজা করেন।

 অহম্‌ হি সর্ব যজ্ঞানাম্‌ ভোক্তা চ প্রভূঃ এব চ ।

 ন তু মাম্‌ অভিজানন্তি তত্ত্বেন অতঃ চ্যবন্তি তে ।।২৪

 অর্থ-আমিই যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভূ। যারা আমার চিন্ময় স্বরুপ জানেনা তারা আবার সংসার সমুদ্রে অধোপাতিত হয়।

 যান্তি দেবব্রতা দেবান পিতৃন যান্তি পিতৃব্রতা ।

 ভূতানি যান্তি ভূতেজাঃ যান্তি মত্ যাজিনঃ অপি মাম্‌ ।।২৫

 অর্থ-দেবতাদের উপাসকেরা দেবলোক প্রাপ্ত হবেন; যারা ভূত প্রেতাদির উপাসক তারা ভূত লোকই লাভ করে; যারা পিত্রী পুরুষদের উপাসক, তারাঅনিত্য পিত্রি লোক লাভ কওে;এবং যারা আমার উপাসনা কওে, তারা আমাকেই লাভ করে।

 পত্রম্‌ পুস্পম্‌ ফলম্‌ তোয়ম্‌ যঃ মে ভক্তাঃ প্রযচ্ছতি ।

 তত্ অহম্‌ ভক্ত্যুপহৃতম্‌ অশ্নামি প্রযতাত্মনঃ ।।২৬

 অর্থ-যে বিশুদ্ধ চিত্ত নিস্কাম ভক্ত আমাকে ভক্তি পুর্বক পত্র, পুস্প, ফল ও জল অর্পন করেন,আমি তার সেই ভক্তি প্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহন করি।

 যত্ করোষি যত্ অশ্নাসি যত্ জুহোসি দদাসি যত্ ।

 যত্ তপস্যসি কৌন্তেয় তত্ কুরুম্ব মত্ অর্পনম্‌ ।।২৭

 অর্খ-হে কৌন্তেয় তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকেই অর্পন কর।

 শুভ অশুভ ফলৈঃ এবম্‌ মোক্ষ কর্ম বন্ধনৈঃ ।

 সন্ন্যাস যোগ যুক্তাত্মা বিমুক্ত মাম্‌ উপৈষসি ।।২৮

 অর্থ – এই ভাবে আমাকে সমস’ কর্ম অর্পন দ্বারা শুভ এবং অশুভ ফল বিশিষ্ট কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হবো। এই ভাবে সন্নাস যোগে যুক্ত হয়ে তুমি মুক্ত হবে এবং আমাকেই প্রাপ্ত হবে।

 সমঃ অহম্‌ সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্য অস্তি ন প্রিয়ঃ ।

 যে ভজন্তি তু মাম্‌ ভক্তা ময়ি তে তেষু চ অপি অহম্‌ ।।২৯

 অর্থ-আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন। কেউ আমার প্রিয় নয় ও অপ্রিয়ও নয়। কিন্তু যারা ভক্তি পুর্বক আমাকে ভজনা করেন তারা সভাবতই আমাতে অবস্থান করেন, অমিও তাদের হৃদয় বাস করি।

 অপি চেত্ সুদুরাচারঃ ভজতে মাম্‌ অনন্যভাক্‌ ।

 সাধু এব সঃ মন্তব্যঃ সম্যক ব্যবসিতঃ হি সঃ ।।৩০

 অর্থ-অতি দুরাচারি ব্যাক্তিও যদি অনন্য ভক্তি সহকারে আমাকে ভজনা করেন, তাকে সাধুবলে মনে করবে, কারন তিনি যথার্থ মার্গে অবস্থিত।

 ক্ষিপ্রম্‌ ভবতি ধর্মাত্মা শশ্বত্ শান্তিম্‌ নিগচ্ছতি ।

 কৌন্তেয় প্রতিজানিহী ন মে ভক্তঃ পনশ্যতি ।।৩১

 অর্থ-তিনি শিগ্রই ধর্ম আত্মায় পরিনত হয় এবং শান্তি লাভ করেন। হে কৌন্তেয় আমার ভক্ত কখনও বিনষ্ট হয় না, সে কথা দৃঢ় কন্ঠে ঘোষনা করে দাও।

 মাম্‌ হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যে অপি স্যু পাপযোনয় ।

 স্ত্রিয়ঃ বৈশ্যাঃ তথা শুদ্রাঃ তে অপি যানি- পরাম্‌ গতিম্‌ ।।৩২

 অর্থ-হে পার্থ অন-জ ম্লেচ্ছগনও বেশ্যাদি পতিতা স্ত্রীলোকেরা তথা বৈশ্যা শুদ্র প্রভৃতি নিচবর্নস- মানুষেরা আমার অনন্যা ভক্তিকে বিষেশ ভাবে আশ্রয় করলে অবিলম্বে পরাগতী লাভ করে।

 কিম পুনঃ ব্রাহ্মণাঃ পুন্যাঃ ভক্তাঃ রজর্ষয় তথা । অনিত্যম্‌ অসুখম্‌ লোকম্‌ ইমম্‌ ভজস্ব মাম্‌ ।৩৩।

 অর্থ-পুন্যজন্ম ব্রহ্মভক্ত এবংক্ষত্রিয়দের আর কি কথ? তারা আমাকে আশ্রয় করলে নিশ্চয় পরা গতী লাভ করবেন। অতএব যখন এই অনিত্য দুঃখময় মর্ত্তলোকে মনুষ্য দেহ ধারন করেছে, তখন অন্যান্য সমস্ত কর্তব্য ত্যাগ করে আমাকেই ভজনা করে।

 মন্মনাঃ ভব মত্ ভক্ত যাজী মাম্‌ নমস্কুরু ।

 মাম্‌ এব এষ্যসি যুক্তৈবম্‌ আত্মনম্‌ মত্পরায়ণঃ ।৩৪।

 অর্থ-তোমার মনকে আমার ভাবনায় নিযুক্ত করে আমাকে প্রনাম কর এবং আমার পূজাকর। সম্পুর্নরুপে আমাকে আশ্রয করে তুমি অবশ্যই আমাকে লভ করবে।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগো নাম নবমোঽধ্যাযঃ ॥৯॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 8 অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রহ্মযোগ

অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রহ্মযোগ

 অর্জুন ঊবাচ

 কিম্ তত্ ব্রহ্ম কি আধ্যাতম্ কি কর্ম পুরুষোত্তম্ ।

 অধিভূতম্ চ কিম্ প্রোক্তম্ অধিদৈবম্ কিম্ উচ্যতে ।।১

 অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হেপুরুত্তম ব্রহ্ম কি কর্ম কি অধিভূত অধিদৈবই

 বা কাকেবলে? তা আমাকে পষ্টকরে বল।

 অধিযজ্ঞঃ কথম্ কঃ অত্র দেহে অস্মি মধুসুদন ।

 প্রয়ান কালে চ কথম্ জ্ঞেয়ঃ অসি নিয়তাত্মভিঃ ।।২

 অর্থ-হে মধুসুদন এই দেহে অধিযজ্ঞ কে,এবং কিরুপে তিনি অবস্থিত? মৃত্যুকালে জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিরা কিভাবে আপনাকে জানতে পারেন।

 ভগবান ঊবাচ

 অক্ষরম্ পরমম্ ব্রহ্ম সভাবঃ অধ্যাত্মম্ উচ্যতে ।

 ভূতভাবোদ্ভবকর বিসর্গ্রঃ কর্ম সংজ্ঞিতঃ ।।৩

 অর্থ-ভগবান বললেন নিত্য বিনাশ রহিত জীবকে বলা হয় ব্রহ্ম এবং তার স্বভাবকে অর্থাত্ প্রতি দেহে সেই আত্মার অবস্থিতিকে অধ্যাত্ম বলে। ভূত বস্তুর উত্পত্তিকর দেবতাদের উদ্দেশ্যে দ্রব্যাদি ত্যাগরুপ যজ্ঞকে কর্ম বলে।

 অধিভূতম্ ক্ষরঃ ভাবঃ পুরুষঃ চ অধিদৈবতম্ ।

 অধিযজ্ঞ অহম্ এব অত্র দেহে দেহভূতাম্ বর ।।৪

 অর্থ-হে অর্জুন নশ্বর জড়া প্রকৃতি অধিভূত। অধিদৈব শব্দে সমস্ত দেবতাদের সমষ্টি রুপ বিরাট পুরুষকে জানবে;এবং দেহীদের দেহান্তরগত অন্তর্যামী পুরুষরুপে আমিই অধিযজ্ঞ।

 অন্ত কালে চ মাম্ এব স্মরন মুক্তা কলেবরম্ ।

 যঃ প্রয়াতি সঃ মদ্ভাবম্ যাতি নাস্তি অত্র সংশয় ।।৫

 অর্থ-মৃত্যুর সময় যিনি আমার স্মরন করে দেহত্যাগ করেন, তিনি তত্ক্ষণাত্ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।

 যম যম অপি স্মরন ভাবম্ ত্যাজতি অন্তে কলেবরম্ ।

 তম্ তম্ এব এতি কৌন্তেয় সদা তত্ভাব ভাবিতঃ ।।৬

 অর্থ-মৃত্যুর সময় যিনি যে ভাবে স্মরন করে দেহ ত্যাগ করেন, তিনি সেইভাব ভাবিত তত্ত্বকেই লাভ করেন।

 তস্মাত্ সর্বেষু কালেষু মাম্ অনুস্মর যুধ্য চ ।

 ময়ি অর্পিত মনঃ বুদ্ধিঃ মাম্ এব এষ্যসি অসংশয়ঃ ।।৭

 অর্থ-অতএব হে অর্জুন-সর্বদা আমাকে স্মরন করে তোমার স্বভাব বিহিত যুদ্ধ কর, তা হলে আমাতে তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পিত হবে এবং নিঃসন্দেহে তুমি আমাকে লাভ করবে।

 অভ্যাস যোগযুক্তেন চেতসা ন অন্যগামিনা ।

 পরমম্ পুরুষম্ দিব্যম্ যাতি পার্থ অনুচিন্তয়ন ।।৮

 অর্থ-হে পার্থ অভ্যাস যোগে যুক্ত হয়ে অনন্যগামী চিত্তে যিনি আমার ধ্যান করেন, তিনি অবশ্যই আমাকে প্রাপ্ত হয়।

 কবিম্ পুরানাম্ অনুশাসিতারম

 অণোঃ অনিয়াংসম অনুস্মরেদ যঃ ।

 সর্বস্য ধাতারম্ অচিন্ত রুপম্

 আদিত্যবর্নম তমসঃ পরস্তাত্ ।।৯

 অর্থ-সর্বজ্ঞ সনাতন নিয়ন্তা সুক্ষ্য থেকে সুক্ষ্যতর,সকলের বিধাতা,জড় বুদ্ধির অতীত,অচিন্ত পুরুষরুপে পরমেশ্বর ভগবানের ধ্যান করা উচিত্। তিনি সুর্যের মত জোর্তিময় এবং সেই জড়া প্রকৃতির অতীত।

 প্রায়ানকালে মনসা অচলেন

 ভক্তা যুক্তঃ যোগবলেন চ এব ।

 ভ্রুবোঃ মধ্যে প্রানম্ আবেশ্য সম্যক

 সঃ তম্ পরম্ পুরুষম্ উপৈতি দিব্যম্ ।।১০

 অর্থ-যিনি মৃত্যুর সময় অচঞ্চল চিত্তে ভক্তি সহকারে পুর্নযোগ অভ্যাস বশত ভ্রুযুগলের মধ্যে প্রানকে স্থীর করে পরমেশ্বর ভগবাকে স্বরন করেন, তিনি অবশ্যই সেই দিব্য পরম পুরুষকে প্রাপ্ত হয়।

 যত্অক্ষরম্ বেদবিদঃ বদন্তি

 বিশন্তি যত্ যতয়ঃ বীতরাগঃ ।

 যত্ ইচ্ছন্তঃ ব্রহ্মচর্য্যম চরন্তি

 তত্ তে পদম্ সংগ্রহেন প্রবক্ষ্যে ।।১১

 অর্থ-বেদবিদ পন্ডিতেরা যাকে অক্ষর বলে অভিহিত করেন,বিষয় আশক্তি শুন্য সন্নাসীরা যারে লাভ করার ইচ্ছায় ব্রহ্মচর্য্য পালন করেন তাদের কথা আমি তোমাকে বলব।

 সর্বদ্বারানি সংযম্য মনঃ হৃদি নিরুধ্য চ ।

 মুর্ধি আধায় আত্মনঃ প্রানাম আস্থিতঃ যোগধারনম্ ।।১২

 অর্থ-ইন্দ্রিয়ের সবকটি দ্বার সংযত করে মনকে হৃদয়ের নিরুধ্য করে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে প্রান স্থাপন করে যোগে স্থীত হতে হয়।

 ওঁ ইতি একাক্ষরম ব্রহ্ম ব্যাহারন মাম্ অনুস্মরন ।

 যঃ প্রযাতি ত্যজন দেহম্ সংযাতি পরামাম্ গতিম্ ।।১৩

 অর্থ-যোগ অভ্যাসে প্রবৃত্ত হয়ে পবিত্র ওঙ্কার উচ্চারন করতে করতে কেউ যদি পরমেশ্বর ভগবাকে স্মরন করে দেহ ত্যাগ করেন,তিনি অবশ্যই পরমগতি লাভ করে।

 অনন্য চেতাঃ সততম্ যঃ মাম্ স্মরতি নিত্যশঃ ।

 তস্য অহম্ সুলভঃ পার্থ নিত্যযুক্তস্য যোগিনঃ ।।১৪

 অর্থ-যিনি একগ্র চিত্তে কেবল আমাকেই নিরন্তর স্মরন করেন, আমি সেই নিত্তযুক্ত ভক্ত যোগিদের কাছে সুলভ হই।

 মাম্ উপেত্য পুনঃ জন্ম দুঃখালয়ম্ অশাশ্বতম্ ।

 ন অপ্নুবন্তি মহাত্মনঃ সংসিদ্ধিম্ পরমাম্ গতাঃ ।।১৫

 অর্থ-মহাত্মগন ভক্তিপরায়ন যোগীগন, আমাকে লাভ করে আর এই দুঃখ্যপুর্ন নশ্বর সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহন করেন না, তারা সর্বোচ্চ সিদ্ধি লাভ করেছেন।

 আব্রহ্ম ভূবনাত্ লোকাঃ পুনঃ আবর্তিনঃ অর্জুন ।

 মাম উপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম বিদ্যতে ।।১৬

 অর্থ-হে অর্জুন ভূবন থেকে ব্রহ্মলোক পর্য্যন্ত সমস্ত লোকই পুনরাবর্তনশীল কিন্তু হে কৌন্তেয়, আমাকে লাভ করলে তার আর জন্ম হয় না।

 সহস্রযুগ পর্যন্তম্ অহঃ যত্ ব্রহ্মনঃ বিদুঃ ।

 রাত্রিম যুগ সহস্রান্তাম তে অহোরাত্র বিদঃ জনাঃ ।।১৭

 অর্থ-মনুষ্য মানের সহস্র চতুর্যুগে ব্রহ্মার একদিন এবং সহস্র চতুর্যুগে তার একরাত্র।

 অব্যক্তাত্ ব্যক্তয়ঃ সর্বাঃ প্রভবন্তি অহরাগমে ।

 রাত্রি আগমে প্রলীয়ন্তে তত্র এব অব্যক্ত সংজ্ঞকে ।।১৮

 অর্থ-ব্রহ্মার দিনের সমাগমে সমস্ত আকৃতি বিশিষ্ঠ বস্তু অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয়, এবং ব্রহ্মার রাত্রীর আগমনে তা পুনরায় লয় প্রপ্ত হয়।

 ভূত গ্রামঃ সঃ এব অয়ম্ ভূত্বা প্রলিয়তে ।

 রাত্রি আগমে অবশঃ পার্থ প্রভবতি অহঃ আগমে ।।১৯

 অর্থ-হেপার্থ সেইভূত সমুহ পুনপুন উত্পন্ন হয় ব্রহ্মার রাত্রি সমাগমে লয়প্রাপ্ত হয়,

 পরঃ তস্মাত্ তু ভাবঃ অন্য অব্যক্তঃ অব্যক্তাত্ সনাতন ।

 যঃ সঃ সর্বেষূ ভূতেষু নশ্যত্সু ন বিনশ্যতি ।।২০

 অর্থ-আর একটি প্রকৃতি রয়েছে, যা নিত্য এবং ব্যক্ত ও অব্যক্ত বস্তুর অতীত।

 ব্রহ্মা থেকে স্থাবর জঙ্গম আদি সমস্ত ভূত বিনষ্ট হলেও তা বিনষ্ট হয় না।

 অব্যক্ত অক্ষরঃ ইতি উক্তঃ তম আহুঃ পরমাম্ গতিম্ ।

 যম্ প্রাপ্য ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম্ পরমম্ মম্ ।।২১

 অর্থ-সেই অব্যক্তকে অক্ষর বলে; তাই সমস্ত জীবের পরমা গতি। কেউ যখন সেখানে যায় তখন আর তাকে এই জগতে ফিরে আসতে হয় না। সেইটিই হচ্ছে আমার পরম ধাম।

 পুরুষঃ সঃ পরঃ পার্থ ভক্ত্যা লভ্যঃ তু অনন্যয়া ।

 যস্য অন্তঃস্থানি ভূতানি যেন সর্বম্ ইদম্ ততম্ ।।২২

 অর্থ-হেপার্থ সমস্ত জীব জগত্ ভগবানের মধ্যেই অবস্থিত। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অনন্য ভক্তির মধ্যেই কেবল তাকে লাভ করা যায়। তিনি যদিও তার ধামে নিত্য বিরাজ মান তবুও সর্বব্যপ্ত এবং সব কিছু তারই মধ্যে অবস্থিত।

 যত্র কালে তু অনাবৃত্তিম্ আবৃত্তিম চ এব যোগিনঃ ।

 প্রয়াতাঃ যান্তি তম্ কালম্ বক্ষ্যামি ভরতর্ষভ ।।২৩

 অর্থ-হে ভরতশ্রেষ্ঠ যে কালে মৃত্যু হলে উপাসকেরা যথাক্রমে মোক্ষ ও পুনর্জন্ম লাভ করেন,সেই কালের কথা আমি তোমাকে বলব।

 অগ্নিঃ জ্যোতিঃ অহঃ শুক্ল ষ্ন্মাসাঃ উত্তরায়ণম্ ।

 তত্র প্রয়াতাঃ গচ্ছন্তি ব্রহ্ম ব্রহ্মবিদঃ জনাঃ ।।২৪

 অর্থ-ব্রহ্মবিদ পুরুষগন অগ্নি, জ্যোতি, শুভদিন ও উত্তরায়ন কালে দেহ ত্যাগ করলে ব্রহ্ম লাভ হয়।

 ধুমঃ রাত্রিঃ তথা কৃষ্ণঃ ষন্মাসাঃ দক্ষিণায়নম্ ।

 তত্র চান্দ্রমসম্ জ্যোতিঃ যোগী প্রাপ্য নিবর্ততে ।।২৫

 অর্থ-ধুমরাত্রি কৃষ্ণপক্ষ অথবা দক্ষিনায়নের ছয়মাস কালে দেহত্যাগ করলে চন্দ্রলোকে গমন করে তাদের কর্মফল স্বরুপ সুখভোগ করার পর মর্তলোকে প্রত্যাবর্তন করেন।

 শুক্ল কৃষ্ণে গতী হি এতে জগতঃ শাশ্বতে মতে ।

 একয়া যাতি অনাবৃত্তিম্ অন্যয়া আবর্ততে পুনঃ ।।২৬

 অর্থ-বৈদিক মতে দুইটি মার্গ রয়েছে। একটি শুক্লএবং অপরটি কৃষ্ণ। শুক্ল মার্গে দেহ ত্যাগ করলে তাকে আর এই জগতে ফিরে আসতে হয় না,কিন্তু কৃষ্ণমার্গে দেহ ত্যাগ করলে,এই জড় জগতে আবার ফিরে আসতে হয়।

 ন এতে সৃতী পার্থ জানন যোগী মুহ্যতী কশ্চন ।

 তস্মাত্ সর্বেষু কালেষু যোগযুক্তঃ ভব অর্জুন ।।২৭

 অর্থ-হে অর্জুন ভক্তরা এই দুইটি মার্গ সম্বন্ধে অবগত হয়ে কখনো মোহগ্রস্ত হয় না অর্থাত্ উভয় মার্গকেই ক্লেশকর জেনে অনন্য ভক্তিযোগ অবলম্বন করেন।

 বেদেষু যজ্ঞেষু তপষু চ এব

 দানেষু যত্ পুন্য ফলম্ প্রদিষ্টম্ ।

 অত্যেতি তত্ সর্বমিদম্ বিদিত্বা

 যোগী পরম্ স্থানম্ উপৈতি চ আদ্যম্ ।।২৮

 অর্থ-ভক্তিযোগ অবলম্বন করলে তুমি কোন কালেই বঞ্চিত হবে না। বেদপাঠ, যজ্ঞ, অনুষ্ঠান, তপস্যা,দান ইত্যাদি যত প্রকার জ্ঞান কর্ম আছে সে সমুদয়ের যে ফল তুমি তা ভক্তিযোগ দ্বারা লাভ করে আদি ও পরম ধাম প্রাপ্ত হও।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 অক্ষরব্রহ্মযোগো নামাষ্টমোঽধ্যাযঃ ॥৮॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 7 সপ্তম অধ্যায়ঃ জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ

সপ্তম অধ্যায়ঃ জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ

 ভগবান উবাচ

 ময়ি আসক্তমনাঃ পার্থ যোগম্ যুঞ্জন মদাশ্রয় ।

 অসংশয়ম্ সমগ্রম্ মাম্ যথা জ্ঞাস্যসি তত্ শৃনু ।।১

 অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ আমাতে আসক্ত চিত্ত হয়ে আমাতে মন নিবেশ করে যোগ অভ্যাস করলে,কিভাবে সমস্ত সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে আমাকে জানতে পারবে তা শ্রবন কর।

 জ্ঞানম্ তে অহম্ স বিজ্ঞানম্ ইদম্ বক্ষামি অশেষতঃ ।

 যত্ জ্ঞাত্বা ন ইহ ভূয় অন্যত্ জ্ঞাতব্যম্ অবশিষ্যতে ।।২

 অর্থ-আমি এখন তোমাকে পুর্নরুপে ঐশর্য্যময় এবং মাধুর্য্যময় জ্ঞানের কথা বলব যা জানা হলে আর কিছুই জানার থাকে না।

 মনুষ্যানাম্ সহস্রেষু কশ্চিত্ যততি সিদ্ধয়ে ।

 যততাম অপি সিদ্ধিনাম্ কশ্চিত্ মাম্ বেত্তি তত্ত্বতঃ ।।৩

 অর্থ-হজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিত্ কোন একজন সিদ্ধি লাভের জন্য যত্ন করেন আর হাজার হাজার সিদ্ধদের মধ্যে কদাচিত্ একজন আমাকে অর্থাত্ আমার ভগবত্ স্বরুপকে তত্ত্বত অবগত হন।

 ভূমিঃ আপঃ অনলঃ বায়ু খমঃ মনঃ বুদ্ধিঃ এব চ ।

 অহংঙ্কার ইতি ইয়ম্ মে ভিন্না প্রকৃতি অষ্টধা ৪।।

 অর্থ-ভূমি জল বায়ু অগ্নি আকাশ মন বুদ্ধি এবং অহংঙ্কার এই অষ্টপ্রকরে আমার ভিন্নাজড়া প্রকৃতি বিভক্ত।

 অপরা ইয়ম্ ইতঃ তু অন্যম্ প্রকৃতিম্ বিদ্ধি মে পরাম্ । জীবভূতাম্ মহাবাহো যয়া ইদম্ ধার্য্যতে জগত্ ।।৫

 অর্থ-হে মহাবাহো এই নিকৃষ্টা প্রকৃতি ব্যতিত আমার আর একটি উত্কৃষ্ট প্রকৃতি রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য স্বরূপা ও জীবভূতা, সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জড় জগতকে ধারন করে আছে।

 এতত্ যেনীনি ভূতানী সর্বানি ইতি উপধারয় ।

 অহম্ কৃত্স্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয় তথা ।।৬

 অর্থ-আমার উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উত্পন্ন হয়েছে।অতএব আমিই জগতের উত্পত্তি ও প্রলয়ের মুল কারন।

 মত্তঃ পরতরম্ ন অন্যত্ কিঞ্চিত্ অস্তি ধনঞ্জয় ।

 ময়ি সর্বম্ ইদম্ প্রোতম্ সুত্রে মনিগণা ইব ।।৭

 অর্থ-হে অর্জুন আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নাই। সুত্রে যেমন মনি সমুহ গাথা থাকে তেমনিই সমস্ত বিশ্ব আমাতে ওতপ্রোত ভাবে অবস্থান করে।

 রসঃ অহম্ অপ্সু কৌন্তেয় প্রভা অস্মি শশিসুর্য্যয় ।

 প্রণবঃ সর্ব বেদেষু শব্দঃ খে খে পৌরুষম্ নৃষু ।।৮

 অর্থ-হে কৌন্তেয় আমি জলের রস চন্দ্রসুর্য্রের প্রভা সর্ব বেদের প্রণব আকাশের শব্দ এবং মানুষের পৌরুষ।

 পূন্য গন্ধঃ পৃথিব্যাম্ চ তেজ চ অস্মি বিভাবসৌ ।

 জীবনম্ সর্বভূতেষূ তপঃ চ অস্মি তপস্বিষু ।।৯

 অর্থ-আমি পৃথিবীর পবিত্র গন্ধ অগ্নির তেজ সর্বভূতের জীবন এবং তপস্বিদের তপ।

 বীজম্ মাম্ সর্বভূতানাম্ বিদ্ধ পার্থ সনাতনম।

 বুদ্ধি বুদ্ধিমতাম্ অস্ম তেজঃ তেস্মি নাম অহম্ ।।১০

 অর্থ-হে পার্থ আমাকে স্থাবর জঙ্গম সর্বভূতের কারণ বলে জানবে। আমি বুদ্ধিমানের বুদ্ধি এবংতেজস্বির তেজ।

 বলম্ বলবতাম্ চ অহম্ কাম রাগ বিবর্জিতম্ ।

 ধর্মা বিরুদ্ধঃ ভূতেষু কামঃ অস্মি ভরতর্ষভ ।১১

 অর্থ-হে ভরতর্ষভ আমি বলবানের বিবর্জিত বল। এবং ধর্মের অবিরোধি কামরুপে অমি প্রাণীগনের মধ্যে বিরাজমান।

 যে চ এব সাত্তিকা ভাবাঃ রাজসাঃ তমসাঃ চ যে ।

 মত্তঃ এব ইতি তান বিদ্ধি ন তু অহম্ তেষু তে ময়ি ।।১২

 অর্থ-প্রাণীগনের যে সমস্থ সাত্তিক তামসিক ও রাজসিক ভাব উত্পন্ন হয় তা আমার থেকে উত্পন্ন হয় বলে জনবে। যদিও তারা আমার থেকে উত্পন্ন তথাপি আমি সে সমস্ত ভাবের অধিন নই। কিন্তু সে সমস্ত ভাব আমার অধিন।

 ত্রিভিঃ গুনময়ৈঃ ভাবৈঃ এভিঃ সর্বম্ ইদম্ জগত্ ।

 মোহিতম্ ন অভিজানাতি মাম্ এভ্যঃ পরম্ অব্যয়ম্ ।।১৩

 অর্থ-তিনটি গুনের দ্বারা (সত্ত্ব রজ এবং তম) মোহিত হওয়ার ফলে সমগ্র জগত্ এই সমস্ত ভাবের অতিত এবং অব্যয় আমাকে জানতে পারে না।

 দৈবী হি এষা গুনময়ি মাম্ মায়া দুরত্যয়া ।

 মাম্ এব প্রপদ্যন্তে মায়াম্ এতাম্ তরন্তি তে ।।১৪

 অর্থ-আমার দৈবী মায়া ত্রিগুনাত্ত্বিকা এবং তা দুরতিক্রমনীয়া। কিন্তু যারা আমাতে প্রপত্তি করেন,তারাই এই মায়া উত্তীর্ন হতে পারেন।

 ন মাম্ দুস্কৃতি নঃ মুঢ়া প্রপদন্তে নরাধমাঃ ।

 মায়য়া অপহৃত জ্ঞানাঃ আসুরম্ ভাবম্ আশ্রিতাঃ ।।১৫

 অর্থ-নরাধম মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাব সম্পন্ন সেই সমস্ত দুস্কৃত কারিরা কখন আমার শ্বরনাগত হয় না।

 চতুবিধাঃ ভজন্তে মাম্ জনাঃ সুকৃতি নঃ অর্জুন ।

 আর্তঃ জিজ্ঞাসুঃ অর্থাথী জ্ঞানি চ ভরতর্ষভ ।।১৬

 অর্থ-হে ভরত শ্রেষ্ঠ অর্জুন আর্ত অর্থাথী জিজ্ঞাসু এবং জ্ঞানী এই চার প্রকার পুন্য কর্মা ব্যক্তিগন আমার ভজনা করেন।

 তেষাম্ জ্ঞানী নিত্যযুক্ত এক ভক্তিঃ বিশিষ্যতে ।

 প্রিয় হি জ্ঞানিনঃ অত্যর্থম্ অহম্ সঃ চ মম প্রিয় ।।১৭

 অর্থ-এই চার প্রকার ভক্তের মধ্যে নিত্যযুক্ত আমাতে একনিষ্ঠ তত্ত্বজ্ঞানিই শ্রেষ্ঠ। কেননা আমি তার অত্যন্ত প্রিয়, এবং তিনিও আমার অত্যন্ত প্রিয়।

 উদারাঃ সর্ব এব এতে জ্ঞানী তু আত্মৈব মে মতম ।

 আস্থিতঃ সঃ হি যুক্তাত্মা মাম্ এব অনুত্তমাম্ গতিম্ ।।১৮

 অর্থ-এই সকল ভক্তেরা সকলেই মহাত্মা কিন্তু যে জ্ঞানী আমাকে তত্ত্বগতভাবে জানেন তিনি আমাকেই আশ্রয় করেই অবস্থান করেন। আমার অপ্রাকৃত সেবায় যুক্ত হয়ে তিনি আমাকে লাভ করে।

 বহুনাম্ জন্মনাম্ অন্তে জ্ঞানবান মাম্ এব অনুত্তমাম গতিম্ ।

 বাসুদেবঃ সর্বম্ ইতি সঃ মহাত্মা সুদুর্লভ ।।১৯

 অর্থ-বহু জন্মের পর তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে সর্ব কারনের পরম কারনরুপে জেনে আমার শরনাগত হন সেইরুপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ।

 কামৈঃ তৈঃ তৈঃ হৃত জ্ঞানাঃ প্রপদন্তে অন্য দেবতাঃ ।

 তম তম নিয়মম আস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া ।।২০

 অর্থ-যাদের মন জড় কামনা বাসনা দ্বারা বিকৃত তারা অন্য দেব দেবীর শরনাগত হয়ে এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপসনা করে।

 যঃ যঃ যাম্ যা্ তনুম্ ভক্তাঃ শ্রদ্ধয়া অর্চিতুম্ ইচ্ছতি ।

 তস্য অচলম্ শ্রদ্ধাম্ তাম্ এব বিদধামি অহম্ ।।২১

 অর্থ-পরমাত্মারুপে আমি সকলের হৃদয় বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে আমি তাদের শ্রদ্ধানুসারে সেই সেই দেবতাদের প্রতি ভক্তি বিধান করি ।

 সঃ তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্ত তস্য আরাধনম্ ঈহতে ।

 লভতে চ ততঃ কামান ময়া এব বিহিতান হিতান ।।২২

 অর্থ-সেই ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তুলাভ করে।

 অন্তবত্ তু ফলম্ তেষাম্ তত্ ভবতী অল্পমেধষাম ।

 দেবান দেবযজঃ যান্তি মত্ ভক্তাঃ যান্তি মাম্ অপি ।।২৩

 অর্থ-অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিদের আরাধনার ফল লব্ধ অস্থাই। দেবতাদের উপসকেরা তাদের আরাধ্য দেবতাদের লোক প্রাপ্ত হন, কিন্তু আমার ভক্তরা আমার পরম ধাম প্রাপ্ত হন।

 অব্যক্তম্ ব্যক্তিম্ আপন্নম্ মন্যন্তে মাম্ অবুদ্ধয়ঃ ।

 ঈরম্ ভাবম্ অজানন্তঃ মম অব্যয়ম্ অনুত্তমম্ ।।২৪

 অর্থ-বুদ্ধিহীন মানুষেরা যারা আমাকে জানেনা, মনেকরে যে আমি এই রুপ এবং ব্যক্তিত্ব পরিগ্রহ করেছি। তাদের অজ্ঞতার ফলে তারা আমার নিত্য,অব্যয়,পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয়।

 ন অহম্ প্রকাশঃ সর্বস্য যোগময়া সমাবৃতঃ ।

 মূঢ় অয়ম্ ন অভিজানাতি লোকঃ মাম অজম অব্যয়ম ।।২৫

 অর্থ-আমি বুদ্ধিহীন ব্যক্তিদের কাছে কখনো প্রকাশিত হইনা।তাদের কাছে আমি আমার অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়া দ্বারা অবৃত্ত থাকি তাই এই মেহাচ্ছন্ন জগত্ জন্ম মৃত্যু রহিত আমার অব্যয় স্বরূপ জানতে পারে না।

 বেদ অহম্ সম্ অতীতানি বর্তমানানি চ অর্জুন ।

 ভবিষ্যানি চ ভূতানি মাম্ তু বেদ ন কর্শ্চন ।।২৬

 অর্থ-হে অর্জুন ভগবানরুপে আমি অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত্ সম্বন্ধে সম্পুর্ন

 রুপে অবগত। আমি সকলকেই জানি কিন্তু আমাকে কেহই জানে না।

 ইচ্ছা দ্বেষ সমুত্থেন দ্বন্ধ মেহেন ভারত ।

 সর্ব ভূতানি সন্মেহম্ সর্গে যান্তি পরন্তপ ।।২৭

 অর্থ-হে পরন্তপ অনকুল বিষয় ইচ্ছা এবং প্রতিকুল বিষয় দ্বেষ থেকে দন্ধ ভাবের উদয় হয়,তারই প্রভাবে মোহাচ্ছন্ন হয়ে জীব জড় জগতে জন্ম গ্রহন করে।

 যেষাম তু অন্তগতম্ পাপম্ জনানাম পুন্য কর্মণাম ।

 তে দন্ধ মোহ নির্মুক্তাঃ ভজন্তে মাম্ দৃঢ়ব্রতাঃ ।।২৮

 অর্থ-যে সমস্ত পুন্যবান ব্যক্তির পাপ সম্পুর্নরুপে দুরিভুত হয়েছে এবং যারা দ্বন্ধ এবং মোহ থেকে মুক্ত হয়েছেন, তারা দৃঢ় নিষ্ঠার সংঙ্গে আমার ভজনা করেন।

 জরা মরন মোক্ষায় মাম আশ্রিত্য যতন্তি যে ।

 তে ব্রহ্ম তত্ বিদুঃ কৃত্স্নম্ অধ্যাত্মম্ কর্ম চ অখিলম্ ।।২৯

 অর্থ-যে সমস্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা জড়া ও মৃত্যু থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমাকে আশ্রয় করে সাধন করেন,তারা প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মভূত,কেননা অধ্যাত্মতত্ত্ব এবং কর্মতত্ত্ব সম্পুর্ণরূপে অবগত।

 সাধিভূত অধিদৈবম্ মাম্ সাধিযজ্ঞম চ যে বিদুঃ ।

 প্রায়ান কালে অপি চ মাম্ তে বিদুঃ যুক্ত চেতসঃ ।৩০।

 অর্থ-যারা অধিভূত তত্ত্ব অধিদৈব তত্ত্ব এবং অধিযজ্ঞ তত্ত্ব সহ আমাকে পরমেশ্বর ভগবান বলে অবগত হন, তারা সমাহিত চিত্তে মরনকালে আমাকে জানতে পারেন।

 ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 জ্ঞানবিজ্ঞানযোগো নাম সপ্তমোঽধ্যাযঃ ॥৭॥

আসুন গীতা পাঠ করি:- 6 ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ ধ্যানযোগ বা অভ্যাসযোগ

ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ ধ্যানযোগ বা অভ্যাসযোগ

 ভগবান উবাচ-

 অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্যং করোতি যঃ ।

 স সন্ন্যাসী চ যোগী চ নিরগ্নির্নচাক্রিয়ঃ ॥ ১

 অর্থ-ভগবান বললেন-যিনি অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ত্যাগ করেছেন তিনি সন্নাসী বা যোগীনন, যিনি কোন রকম ফলের আশা না করে তার কর্তব্য কর্ম করেন তিনিই যথার্থ সন্নাসী বা যোগী।

 যং সন্ন্যাসমিতি প্রাহুর্যোগং তং বিদ্ধি পান্ডব ।

 ন হ্যসংন্যস্তসঙ্কল্পো যোগী ভবতি কশ্চন ॥ ২

 অর্থ-হে পান্ডব যাকে সন্নাস বলা যায় তাকেই যোগ বলা যায় কারন ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে কখনো যোগী হওয়া যায় না।

 আরুরুক্ষোর্মুনের্যোগং কর্ম কারনমুচ্যতে ।

 যোগারুঢ়স্য তস্যৈব শমঃ কারণমুচ্যতে ॥ ৩

 অর্থ-অষ্টাংঙ্গ যোগ অনুষ্ঠানে যারা নবীন তাদের পক্ষে নিস্কাম কর্ম অনুষ্ঠান করাই উত্কৃষ্ট সাধন, আর যারা ইতিমধ্যে যোগরুঢ় হয়েছেন তাদেও পক্ষে সমস্ত কর্ম থেকে নিবৃত্তিই উত্কৃষ্ট সাধন।

 যদা হি নেন্দ্রিয়ার্থেষু ন কর্মস্বনুষজ্যতে ।

 সর্বসঙ্কল্প সন্নাসী যোগারুঢ়স্তদোচ্যতে ॥ ৪

 অর্থ-যখন যোগীর জড়সুখ ভোগের সমস্ত সংকল্প ত্যাগ করে ইন্দ্রিয় ভোগ্য বিষয়ের প্রতি আসক্ত রহিত হন তখন তারে যোগরুর বলা হয়।

 উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মনমবসাদয়েৎ ।

 আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ ॥ ৫

 অর্থ-মানুষের কর্তব্য তার মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেকে উদ্ধার করা, মনের দ্বারা আত্মাকে অধোপাতিত করা কখনো উচিৎ নয়। মন জীবের অবস্থা ভেদে বন্ধু ও শত্রু হয়।

 বন্ধুরাত্মাত্মনস্তস্য যেনাত্মাবাত্মনা জিতঃ ।

 অনাত্মনস্তুু শত্রুত্বে বর্ত্তেতাত্মৈব শত্রুবৎ ॥ ৬

 অর্থ-যিনি তার মনকে জয় করেছে তার মন তার পরম বন্ধু কিন্তু যিনি তা করতে অক্ষম তার মন তার পরম শত্রু।

 জিতাত্মনঃ প্রশান্তস্য পরমাত্মা সমাহিতঃ ।

 শীতোষ্ণসুখদুঃখেষু তথা মানাপমানয়ো ॥ ৭

 অর্থ- জিতেন্দ্রিয় ও প্রশান্ত যোগরুঢ় ব্যক্তি পরমার্থকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি শীত ও উষ্ণ সুখ দুঃখ্যে এবং সন্মান অপমানে অবিচালিত থাকেন।

 জ্ঞানবিজ্ঞানতৃপ্তাত্মা কূটস্থো বিজিতেন্দ্রিয়ঃ ।

 যুক্ত ইত্যচ্যতে যোগী সমলোষ্ট্রাশ্মকাঞ্চনঃ ॥ ৮

 অর্থ-যে যোগী শাস্ত্রজ্ঞান ও তত্ত্ব অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত, যিনি শীত উষ্ণ আদি দন্ধে নির্বিকার ও জিতেদ্রিয় এবং যিনি মৃতখন্ড প্রস্তর ও সুবর্ণে সর্বদর্শি তিনি যোগরুঢ় বলে কথিত হন।

 সুহৃন্মিত্রায়্যুদাসীনমধ্যস্থদ্বেষ্যবন্ধুষু ।

 সাধুষ্বপি চ পাপেষু সমবুদ্ধির্বিশিষ্যতে ॥ ৯

 অর্থ-যিনি সহৃৎ মিত্র শত্রু উদাসিন মধ্যস্ত মৎসর বন্ধু ধার্মিক ও পাপাচারি এবং সকলের প্রতি সমবুদ্ধি তিনিই শ্রেষ্ঠতা লাভ করেন।

 যোগী যুঞ্জীত সততমাত্মানং রহসি স্থিতঃ ।

 একাকী যতচিত্তাত্মা নিরাশীরপরিগ্রাহঃ ॥ ১০

 অর্থ-যোগরুঢ় ব্যক্তি সর্বদা একান্তে অবস্থিত হয়ে মনকে সমাধিযুক্ত করবেন। অসৎ পরিগ্রহ বর্জন করবেন এবং ফলাকাঙ্খা শূন্য হবেন।

 শুচৌ দেশে প্রতিষ্ঠাপ্য স্থিরমাসনমাত্মনঃ ।

 নাত্যচ্ছ্রিতং নাতিনীচং চৈলাজিনকুশোত্তরম্ ॥ ১১

 তত্রৈকাগ্রং মনঃ কৃত্বা যতচিত্তেন্দ্রিয়ক্রিয়ঃ ।

 উপবিশ্যাসনে যুঞ্জ্যাদ্ যোগমাত্মবিশুদ্ধয়ে ॥ ১২

 অর্থ-যোগ আসনের নিয়ম এই যে কুশাষনের উপর মৃগচর্মের আসন তার উপরে বস্ত্রাশন রেখে অত্যন্ত উচু বা অত্যন্ত নিচু না করে সেই আসন বিশুদ্ধ ভূমিতে স্থাপন করে তাতে আসিন হবেন। সেখানে উপবিষ্ট হয়ে চিত্ত ইন্দ্রিয় ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে চিত্ত শুদ্ধির জন্য মনকে একাগ্র করে যোগ অভ্যাষ করবেন।

 সমং কায়শিরোগ্রীবং ধারয়ন্নচলং স্থিরঃ

 সংপ্রেক্ষ্য নাসিকাগ্রং স্বং দিশশ্চানবলোকয়ন ॥ ১৩

 প্রশান্তাত্মা বিগতভীর্ব্রহ্মচারিব্রতে স্থিতঃ ।

 মনঃ সংযম্য মচ্চিত্তোযুক্ত আসীত মৎপরঃ ॥ ১৪

 অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।

 যুঞ্জন্নেবং সদাত্নানং যোগী নিয়তমানসঃ ।

 শান্তিং নির্ব্বাণপরমাং মত্সংস্থামাধিগচ্ছতি ।। ১৫

 অর্থ-এইভাবে যোগ সাধন করিয়া যিনি চিত্ত জয় করেন, তিনি আমার মধ্যেই নির্বাণ ও শান্তি লাভ করেন।

 নাত্যশ্নতস্তুু যোগোহস্তি ন চৈকান্তমনশ্নতঃ ।

 ন চাতিস্বপ্নশীলস্য জাগ্রতো নৈব চার্জ্জুন ।। ১৬

 অর্থ-অতি আহার, অনাহার, অতিনিদ্রা বা অতি জাগরণ কোনটিতেই যোগ সাদন হয় না।

 যুক্তাহারবিহারস্য যুক্তচেষ্টস্য কর্মষু ।

 যুক্তস্বপ্নাববোধস্য যোগো ভবতি দুঃখহা ॥ ১৭

 অর্থ-যিনি পরিমিত আহার বিহার করেন পরিমিত প্রয়াস করেন যার নিদ্রা জাগরন নিয়মিত তিনিই যোগ অভ্যাসের দ্বারা সমস্ত জড় জাগতিক দুঃখের নিবৃত্তি সাধন করতে পারেন।

 যদা বিনিয়তং চিত্তমাত্মন্যেবাবতিষ্ঠতে ।

 নিস্পৃহঃ সর্বকামেভ্যো যুক্ত ইত্যুচ্যতে তদা ॥ ১৮

 অর্থ-যোগী যখন অনুশীলনের দ্বারা চিত্তবৃত্তির নিরোধ করেন এবং সমস্ত জড় কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মাতে অবস্থান করে তখন তিনি যোগযুক্ত হয়েছে বলা হয়।

 যথা দীপো নিবাতস্থো নেঙ্গতে সেপমা স্মৃতা ।

 যোগিনো যতচিত্তস্য যুঞ্জতা যোগমাত্মনঃ ॥ ১৯

 অর্থ-বায়ু শুন্য স্থানে দীপ শিখা যেমন কম্পিত হয় না চিত্ত-বৃত্তির নিরোধ অভ্যাসকারি যোগীর চিত্তও তেমনই ভাবে অবিচলিত থাকে।

 যত্রোপরমতে চিত্তং নিরুদ্ধং যোগসেবয়া ।

 যত্রো চৈবাত্মনাত্মানং পশ্যন্নাত্মনি তুষ্যতি ॥ ২০

 অর্থ- যোগযুক্ত ব্যক্তি চিত্তরোধ করিয়া এবং শান্ত মনে আত্মদর্শন করিয়া আনন্দ লাভ করেন।

 সুখমাত্যন্তিকং যত্তদবুদ্ধিগ্রাহ্যমতীন্দ্রিয়ম্ ।

 বেত্তি যত্র ন চৈবায়ং স্থিতশ্চলতি তত্ত্বতঃ ॥ ২১

 অর্থ-আত্ম দর্শন হইলে যোগীর মনস্থির হয় এবং সেই অপূর্ব অবস্থায় বাক্যাতীত ও অতীন্দ্রিয় সুখ লাভ হইয়া থাকে।

 যং লব্ধা চাপরং লাভং মন্যতে নাধিকং ততঃ ।

 যস্মিন্ স্থিতো ন দুঃখেন গুরুণাপি বিচাল্যতে ॥ ২২

 অর্থ- এই সুখ লাভ করিলে অন্য সকল সুখই তুচ্ছ বোধ হয় তখন অতিশয় দুঃখেও মন বিচলিত হয় না।

 তং বিদ্যাদ্ দুঃখসংযোগবিয়োগং যোগসংজ্ঞিতম্ ।

 স নিশ্চয়েন যোক্তব্যো যোগোনির্ব্বিন্নচেতসা ॥ ২৩

 অর্থ-হে অর্জুন, যেই যোগে সুখ-দুঃখের লেশ মাত্র নাই, তুমি সেই যোগ অভ্যাস করিবে।

 সংকল্পপ্রভবান্ কামাংত্যক্ত্বা সর্বানশেষতঃ ।

 মনসৈবেন্দ্রিয়গ্রামং বিনিয়ম্য সমন্ততঃ ॥ ২৪

 অর্থ-অবিচালিত অধ্যবসায় এবং বিশ্বাষ সহকারে এই যোগ অনুশিলন করা উচিৎ সংকল্প জাত সমস্ত কামনা সম্পুর্ন রুপে ত্যাগ করে মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সর্বদিক থেকে নিবৃত্ত করা কর্তব্য।

 শনৈঃ শনৈরুপরমেদ্ বুদ্ধ্যা ধৃতিগৃহীতয়া ।

 আত্মসংস্থং মনঃ কৃত্বা ন কিঞ্চিদপি চিন্তয়েৎ ॥ ২৫

 অর্থ-ধৈর্যযুক্ত বুদ্ধি দ্বারা মনকে ধীরে ধীরে নিবৃত্ত করে এবং কিছু চিন্তা না করে সমাধিস্থ হতে হয়।

 যতো যতো নিশ্চরতি মণশ্চঞ্চলমস্থিরম্ ।

 ততস্ততো নিয়ম্যৈতদাত্মন্যেব বশং নয়েৎ ॥ ২৬

 অর্থ-যোগী তার চঞ্চল ও অস্থির মন যে বিষয় ধাবিত হয় সেই সেই বিষয়ে থেকে নিবৃত্ত করে আত্মাতে স্থির করবেন।

 প্রশান্তমনসং হ্যেনং যোগিনং সুখমুত্তমম্ ।

 উপৈতি শান্তরজসং ব্রহ্মভূতমকল্মসম্ ॥ ২৭

 অর্থ-ব্রহ্মভূত অবস্থায় প্রশান্ত চিত্ত, রজ বৃত্তি রহিত এবং নিস্পাপ হয়ে যার মন আমাতে নিবিষ্ট হয়েছে তিনিই পরম সুখ প্রাপ্ত হয়।

 যুঞ্জন্নেবং সদাত্মানং যোগী বিগতকল্মষঃ ।

 সুখেন ব্রহ্মসংস্পর্শমত্যন্তং সুখমশ্নুতে ॥ ২৮

 অর্থ-এইভাবে আত্মসংযমী যোগী জড় জগতে সমস্থ কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্ম সংস্পর্শরুপ পরম সুখ আস্বাদন করেন।

 সর্বভূতস্থমাত্মানং সর্বভুতানি চাত্মনি ।

 ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥ ২৯

 অর্থ-প্রকৃত যোগী সর্বভূতে আমাকে দর্শন করে এবং আমাতে সব কিছু দর্শন করেন। যোগযুক্ত আত্মা সর্বত্রই আমাকেই দর্শন করেন।

 যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি ।

 তস্যহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি ॥ ৩০

 অর্থ-যিনি সর্বত্র আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতেই সমস্ত কিছু বস্তু দর্শন করেন আমি কখনো তার দৃষ্টির অগোচর হই না এবং তিনিও আমার দৃষ্টির অগোচর হন না।

 সর্বভূতস্থিতং যো মাং ভজত্যেকত্বমাস্থিতঃ ।

 সর্বথা বর্ত্তমানোপি স যোগী ময়ি বর্ততে ॥ ৩১

 অর্থ-যে যোগী সর্বভূতে সংস্থাপিত পরমত্মারুপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন তিনি সর্ব অবস্থাতেই আমাতেই অবস্থান করেন।

 আত্মৌপম্যেন সর্বত্র সমং পশ্যতি যোহর্জুন ।

 সুখং বা যদি বা দুঃখমং স যোগী পরমো মতঃ ॥ ৩২

 অর্থ-হে অর্জুন যিনি সমস্থ জীবের সুখ ও দুঃখকে নিজের সুখ-দুঃখ বলে মনে করেন আমার মতে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী।

 অর্জুন উবাচ-

 যোহয়ং যোগস্তয়া প্রোক্তঃ সাম্যেন মধুসুদন ।

 এতস্যাহং ন পশ্যামি চঞ্চলত্বাৎ স্থিতিং স্থিরাম্ ॥ ৩৩

 অর্থ-অর্জুন বললেন- হে মধুসুদন তুমি যে যোগ উপদেশ করলে, আমার মনের চঞ্চল স্বভাব বসত আমি তা সত্ত্বেও নিশ্চল স্থিতি দেখতে পাচ্ছি না।

 চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্ ।

 তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুস্করম্ ॥ ৩৪

 অর্থ-হে কৃষ্ণ মন অত্যন্ত চঞ্চল প্রবল এবং শরির ও ইন্দ্রিয়াদি বিক্ষেপ উৎপাদক তাকে বিষয় বাসনা থেকে নিবৃত্ত করা অত্যন্ত কঠিন তাই এই মনকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভুত করার থেকেও কঠিন বলে আমি মনে করি।

 ভগবান উবাচ-

 অসংশয়ং মহাবাহো মনঃ দুর্নিগ্রহং চলম্ ।

 অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে ॥ ৩৫

 অর্থ-ভগবান বললেন- হে মহাবাহো মন যে দুর্বার ও চঞ্চল ততে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু হে কৌন্তেয় ক্রমশ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভুত করা যায়।

 অসংযতাত্মনা যোগো দুষ্প্রাপ ইতি মে মতিঃ ।

 বশ্যাত্মনা তু যততা শক্যোহবাপ্তুমুপায়তঃ ॥ ৩৬

 অর্থ-অসংযত ব্যাক্তির পক্ষে আত্মোউপলব্ধি দুসপ্রাপ্যঃ কিন্তু যার মন সংযত এবং যিনি যথার্থ উপায় অবলম্বন করে মনকে বশ করতে চেষ্টা করেন তিনি অবশ্যই সিদ্ধি লাভ করে।

 অর্জন ঊবাচ-

 অযতিঃ শ্রদ্ধয়োপেতো যোগাচ্চলিতমনসঃ ।

 অপ্রাপ্য যোগসংসিদ্ধিং কাং গতিং কৃষ্ণ গচ্ছতি ॥ ৩৭

 অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কৃষ্ণ শ্রদ্ধাবান সম্যক যত্নহীন যোগচ্যুত যোগী যোগে সিদ্ধি লাভ না করলে কোন মার্গে গমন করেন।

 কচ্চিন্নোভয়বিভ্রষ্টশ্ছিন্নাভ্রমব নশ্যতি ।

 অপ্রতিষ্ঠো মহাবাহো বিমূঢ়োব্রাহ্মণঃ পথি ॥ ৩৮

 অর্থ-হে মহাবাহো কৃষ্ণ ব্রহ্ম লাভের পথ থেকে বিমূঢ় হয়ে অপ্রতিষ্ঠ হয়ে পড়ে যে ব্যক্তি, সে কি ছিন্ন মেঘের মত একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

 এতন্মে সংশয়ং কৃষ্ণ ছেত্তুমর্হস্যশেষতঃ ।

 ত্বদন্যঃ সংসয়স্যাস্য ছেত্তা ন হ্যুপপদ্যতে ॥ ৩৯

 অর্থ-হে কৃষ্ণ তুমিই কেবল আমার এই সংসয় দুর করতে সমর্থ। কারন তুমি ছারা আর কেউ এই সংসয় দুর করতে পারবে না।

 ভগবান উবাচ-

 পার্থ নৈবেহ নামুত্র বিনাশস্তস্য বিদ্যতে ।

 ন হি কল্যাণকৃৎ কশ্চিতদ্ দুর্গতিং তাত গচ্ছতি ॥ ৪০

 অর্থ-ভগবান বললেন- হে পার্থ শূভানুষ্ঠানকারি পরমার্থ বিদের ইহলোক এবং পরলোকে কোন দুর্গতি হয় না, হে বৎস্য তার কারন কল্যান কারির কখনো অধঃগতী হয় না।

 প্রাপ্য পুন্যকৃতাং লোকানুষিত্বা শাশ্বতীঃ সমাঃ ।

 শুচিনাং শ্রীমতাং গেহে যোগভ্রষ্টোহভিজায়তে ॥ ৪১

 অর্থ-যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুন্যবানদের প্রাপ্য সর্গাদি লোক সকলে বহুকাল বাস করে সদাচারি গৃহে অথবা ধনীলোকদের গৃহে জন্ম গ্রহন করেন।

 অথবা যোগিনামেব কুলে ভবতি ধীমতাম্ ।

 এতদ্ধি দুর্লভতরং লোকে জন্ম যদীদৃশম্ ॥ ৪২

 অর্থ-অথবা যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান যোগীগনের বংশে জন্মগ্রহন করেন। এই প্রকার জন্ম এই জগতে অবশ্য অত্যন্তই দুর্লভ।

 অত্র তং বুদ্ধিসংযোগং লভতে পৌর্বদেহিকম্ ।

 যততে চ ততো ভূয় সংসিদ্ধৌ কুরুনন্দন ॥ ৪৩

 অর্থ-হে কুরুনন্দন সেই প্রকার জন্মগ্রহন করার ফলে তিনি পুনরায় তার পুর্বজন্মকৃত পারমার্থিক চেতনায় বুদ্ধি সংযোগ লাভকরে সিদ্ধি লাভের জন্য পুনরায় যত্নবান হন।

 পুর্বাভ্যাসেন তেনৈব হ্রিয়তে হ্যবশোপি সঃ ।

 জিজ্ঞাসুরপি যোগস্য শব্দব্রহ্মাতিবর্ততে ॥ ৪৪

 অর্থ-তিনি পুর্ব জন্মের অভ্যাস বশে যেন অবশ হয়েও যোগ সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই প্রকার যোগশাস্ত্র জিজ্ঞাসু পুরুষ যোগ অনুশিলন করার সময়ই বেদোক্ত সকাম কর্ম মার্গকে অতিক্রম করেন, অর্থাৎ সকাম কর্ম মার্গে যে ফল নিদৃষ্ট আছে, তার থেকে উৎকৃষ্ট লাভ করেন।

 প্রযত্নাদ্ যতমানস্তুু যোগী সংশুদ্ধকিল্বিষঃ ।

 অনেকজন্মসংসিদ্ধস্ততো যাতি পরাং গতিম্ ॥ ৪৫

 অর্থ-যোগী ইহ জন্মে পুর্বজন্মকৃত যত্ন অপেক্ষা অধিকতর যত্নকরে পাপ মুক্তহয়, পুর্ব জন্মের সাধন সঞ্চিত সংস্কার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করে পরম গতী লাভ করেন।

 তপস্বিভ্যোধিকো যোগীজ্ঞানিভ্যোপি মতোহধিকঃ ।

 কর্মিভ্যশ্চাধিকো যোগী তস্মাদ্ যোগী ভবার্জুন ॥ ৪৬

 অর্থ-যোগী তপস্বীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং সকাম কর্মিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ অতএব হে অর্জুন সর্ব অবস্থাতেই তুমি যোগী হও।

 যোগিনামপি সর্বেষাং মদ্গতেনান্তরাত্মনা ।

 শ্রদ্ধাবান্ ভজতে যো মাং স মে যুক্ততমো মতঃ ॥ ৪৭

 অর্থ-যিনি শ্রদ্ধা সহকারে মদ্গত চিত্তে আমার ভজনা করেন, তিনিই সব চেয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে আমার সঙ্গেযুক্ত এবং তিনিই সমস্ত যোগীদের খেকে শ্রেষ্ঠ।

 ওঁ তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে

 আত্মসংযমযোগো নাম ষষ্ঠোঽধ্যাযঃ