Thursday, September 10, 2020

তিনি হিন্দুদের আপনার জন? কবে থেকে?

২০০১ র বাংলাদেশে হিন্দু গণহত্যার সময় ছিলেন নিশ্চুপ। ২০০২ র গুজরাট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু গোধরা সম্পর্কে রইলেন নীরব।

ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে ধারণা উচ্চ নয় বলে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সাথে 'শ্যামাপ্রসাদ শতবার্ষিকী' মঞ্চে রইলেন না।

১০/০২/২০০১ - রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ৪ জন স্বয়ংসেবক নৃশংসভাবে খুন হলেন সিপিআইএম সমর্থিত ইসলামি মৌলবাদীদের দ্বারা - স্থান: সোনাখালী, থানা - বাসন্তী, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সিপিআইএম-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন ন্যুনতম সাহায্যও করেনি দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দুদের আঞ্চলিক অভ্যুত্থানের দ্বারা - যা কালক্রমে চিহ্নিত হয় 'সোনাখালী লাইন" রূপে।

২০০৭ র কলকাতা থেকে তসলিমা নাসরিন বিতাড়ন অধ্যায়ে ইসলামী মৌলবাদীদের সামনে আপন মেরুদন্ড বন্ধক দিলেন, আত্মসমর্পণ করলেন।

২০১০ র দেগঙ্গা অধ্যায়ে বামফ্রন্টের প্রশাসন অকথ্য হিন্দু নির্যাতনে রইল আগাগোড়া নীরব। গণধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে হিন্দু নারীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন সামনের পুকুরগুলিতে। দিনের পর দিন, সারা রাত তাঁরা থাকতেন ওই অবস্থায় নিজেদের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য। হিন্দুরা পাল্টা প্রতিরোধের পথে যেতেই প্রশাসন সক্রিয় হয়ে ওঠে। সিআরপিএফ নিযুক্ত করা হয়।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন প্রশাসনিক প্রধানের/মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রুক্ষেপের মধ্যেও এইসব হৃদয়-বিদারক ঘটনা আসেনি।

আর আজ এহেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে!! তিনি হিন্দুদের আপনার জন? কবে থেকে?

✍️  অনিমিত্র চক্রবর্ত্তী

Wednesday, September 9, 2020

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 76 দেবী সরস্বতী কর্তৃক গ্রন্থদান ও শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত রচনা

মৃত্যুঞ্জয় দশরথ এই দুইজনে।


লীলামৃত গ্রন্থ লেখা ইচ্ছা করে মনে।।


কিছু অংশ লিখি দোঁহে গেল ওড়াকান্দী।


বসিলেন দুই সাধু প্রভু পদ বন্দি।।


মহাপ্রভু হরিচাঁদে বিনয়েতে কয়।


হৃদয়ের আশা কহি ওগো দয়াময়।।


আপনার লীলা যাহা অপূর্ব্ব অনন্ত।


ধরা পরে প্রকাশিতে চাহি যে বৃত্তান্ত।।


প্রভু বলে এই কার্য্য কভু না করিবে।


সময় হইলে গ্রন্থ প্রকাশিত হবে।।


কিন্তু মনে নাহি মানে-সহে না বিলম্ব।


পুনরায় লিপিকার্য্য করিল আরম্ভ।।


ইচ্ছাময় যাহা ইচ্ছা নাহি করে নিজে।


সে-কার্য্য কেমনে হবে তাঁর বিশ্ব মাঝে?


লেখা-গ্রন্থ আকস্মাৎ হল অন্তর্দ্ধান।


খোঁজাখুঁজি করে কত মেলে না সন্ধান।।


অতএব গ্রন্থ লেখা নাহি হল আর।


লীলাসাঙ্গ হরিচাঁদ করে অপঃপর।।


ইচ্ছাময় ইচ্ছা করে সময় হইল।


দশরথ, মৃত্যুঞ্জয় তারকে কহিল।।


“প্রভুর লীলার কথা করহে রচনা।


রচনা করহে তুমি তারক রসনা।।”


মনে ভয় সে তারক স্বীকার না করে।


এবে শুন কি ঘটনা হ’ল অতঃপরে।।


একদা আপন গৃহে তারক গোঁসাই।


নিদ্রাকালে “হরি” বলে, চাড়িলেন হাই।।


পরাণ-পুতুল হরি স্মরণে আসিল।


স্মরণে শয়নে বসি তারক কান্দিল।।


কিছু পরে নিদ্রামগ্ন সে তারক হয়।


দেবী বীণাপাণি আসি তথায় উদয়।।


বরাভয়হস্ত রাখে তারকের শিরে।


অসীম স্নেহেতে মাতা কহিলা তাঁহারে।।


“পুত্র শ্রেষ্ঠ তুমি মোর কবি অগ্রগণ্য।


তোমার গৌরবে মোর বক্ষা সদা পূর্ণ।।


প্রাণপতি প্রেম-গীতি তব কন্ঠে থাকি।


সতত জীবেরে কহি উচ্চ রবে ডাকি।।


এ-বারে আসিলা প্রতি নমঃশূদ্র ঘরে।


তোমাকে আনিনু আমি তাই জয়পুরে।।


লীলা-গীতি চিরকাল তোমারি রচনা।


প্রভু তাই দশরেথে করেছিল মানা।।


প্রেম-নিষ্ঠা দশরথ কথা নাহি শোনে।


তাই লীলা-গীতি এনে রাখি নিজ স্থানে।।


লীলা সাঙ্গ হ’ল এবে লীলা-গীতি কও।


এনেছি প্রথম লেখা করে তুলে লও।।”


এত বলি দয়ামীয় তারকের হাতে।


রাখিলা পূর্ব্বে গ্রন্থ বহু স্নেহমতে।।


অর্দ্ধ-নিদ্রা জাগরণে তারক দেখিল।


গ্রন্থ দিয়া বীণাপাণি অন্তর্দ্ধান হ’ল।।


ব্রহ্ম মুহুর্ত্তের কালে গোস্বামী জাগিল।


দেখিলা হস্তের পরে গ্রন্থ কে রাখিল।।


অকস্মাৎ স্বপ্ন-কথঅ মনে পড়ে যায়।


গ্রন্থ বুকে চেপে ধরে কহে হায়! হায়।।

মায়ের করুণা-ধারা এইভাবে পায়।


প্রত্যক্ষে বাগেদেদী যাঁরে গ্রন্থ দিয়ে যায়।।


এত কৃপা পেল তবু সাহস না পায়।


চুপ থাকে লীলাগ্রন্থ লেখা নাহি হয়।।


এক নিশি শেষভাগে গোস্বামী গোলক।


সপ্নে সে তাহাকে বলে “শোনরে তারক।।


লীলামৃত নাহি দিলে রক্ষা তোর নাই।


রক্ত কিংবা লীলামৃত একখানা চাই।।”


নৃ-সিংহমূরতিধারী অতি ভয়ঙ্কর।


তারকের গাত্র তাহে কাঁপে থর থর।।


ভীতমনে গোস্বামীজী স্বীকার করিল।


সেই হতে লীলামৃত রচিতে লাগিল।।


এসব বৃত্তান্ত আছে লীলামৃত মাঝে।


নিজ হস্তে লিখিলেন কবি রসরাজে।।


আর কীর্ত্তিকথা তাঁর আছে বহুতর।


সমস্ত প্রকাশে নাহি পায় অবসর।।


কণামাত্র বলি তাহা করিতেছি শেষ।


তারকের আগমনে ধন্য বঙ্গদেশ।।


বারশ’ চুয়ান্ন সালে আষাঢ় মাসেতে।


জন্ম নিল শ্রীতারক প্রভু আজ্ঞামতে।।


তেরশ’ একুশ সালে মার্গশীর্ঘ কালে।


শ্রীতারক ছাড়িলেন এই ধরাতলে।।


সৎকার জন্যে দেহ নেয় নদীকূলে।


উপস্থিত নরনারী হরি হরি বলে।।


চন্দনের বৃষ্টি হল চিতার উপরে।


আশ্চর্য্য মানিয়া সবে হরিধ্বনি করে।।


শুধুতাহা মাত্র নহে পুষ্প বরিষণ।


চিতা পরে হল তাহা দেখে সর্ব্বজন।।


মহাশক্তিধারী গেল ছাড়িয়া পৃথিবী।


আর না দেখিবে ধরা সে মোহন ছবি।।


এই ভাবে দেহত্যাগ করিল তারক।


পরবর্তী এককথা শুন সর্ব্বলোক।।

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 75 গো–মড়ক ব্যাধি দূর করণ

তারক গোস্বামী আসে নড়াইল হতে।


সঙ্গেতে যাদবচন্দ্র আসিলেন পথে।।


বেলা শেষে দুেইজনে চলিছে ত্বরিত।


প্রকান্ড মাঠের মধ্যে হল উপস্থিত।।


হেনকালে সুবৃহৎ কুক্কুর আকারে।


গো-মড়ক ব্যাধি এল মাঠের ভিতরে।।


লক লক করে জিহবা যেন রক্ত ঝরে।


আভাষে যাদব দেখে ক্ষণমাত্র তারে।।


উচ্চকন্ঠে গোস্বামীজী বলে “হরি বল”।।


সঙ্গে সঙ্গে আঁখি তার করে ছল ছল।।


যাদবেরে বলে ডাকি “শুন মহাশয়।


কোন কিছু অদ্য তুমি দেখেছ হেথায়?”


যাদব কহিছে দীরে “শোন দয়াময়।


আভাষে দেখেছি যাহা বলি তব পায়।।


দীর্ঘ দেহ এক জীব কুকুরের প্রায়।


দেখিলাম অকস্মাৎ পালাইয়া য়ায়।।”


গোস্বামী কহিল “ঠিক বলিয়াছ তুমি।


স্পষ্টতর দৃশ্য বটে দেখিয়াছি আমি।।


গো-মড়ক ব্যাধি এই শুন মোর কাছে।


পাশ্ববর্তী গ্রামে রোগ প্রবেশ করেছে।।


হইবে বিষম দশা আর রক্ষা নাই।।


বহু গরু মারা যাবে শুন মোর ঠাঁই।।”


এইভাবে দুইজনে আলাপন করে।


গ্রামবাসী একজনে এল তথাকারে।।


যাদব তাহারে খুলে বলিলেন সব।


সেজন শোনে না কাণে ইতই গৌরব।।


কিছু পরে অনিচ্ছায় করে পরিচয়।


শুনিলেন শ্রীতারক সরকার যায়।।


সেইদিন সন্ধ্যাকালে বড় ঝ হ’ল।


বড় বড় বৃক্ষ কত তাহাতে ভাঙ্গিল।।


অন্ধকারে যাদবের পথ চলা ভার।


গোস্বামীর কিন্তু কষ্ট নহে একবার।।


গাঢ় অন্ধকারে তাঁর দৃষ্টি নাহি বাধে।


সারা পথ আসিলেন যথা নিরাপদে।।


পরদিন সেই গ্রামে গো-মড়ক হল।


সপ্তাহ মধ্যেতে প্রায় সব পশু মল।


গ্রামবাসী সবে বলে উপায় কি এখন?


চোখে দেখা নাহি যায় পশুর মরণ।।


যেই ব্যক্তি গোস্বামীরে উপেক্ষা করিল।


সব কথা এবে তার স্মরণ হইল।।


আদ্যোপান্ত সে বৃত্তান্ত কহিল সকলে।


সবে বলে হায় হায় কি কার্য্য করিলে।।


মহাসাধু সে তারক দৈব শক্তিধারী।


অন্যায় হয়েছে তারে অবহেলা করি।।


সবে মিলে চল যাই গোস্বামীর ঠাঁই।


এ বিপদে তাঁরে ধরে কুল যদি পাই।।


দৈবের ঘটনে দেখ প্রভু সেই দিন।


নড়াইল যেতে ছিল বিশেষ কারণে।।

 

গ্রামবাসী সবে করে চরণ বন্দনা।


বলে প্রভু দয়া বিনে পরান বাচে না।।


বিনয়ে গোস্বামী তবে কহিল বচন।


যাহা বলি সবে তাহা কর আয়োজন।।


মিষ্ট বিনা দুধ চাল একত্রে বাঁধিবে।


গোহালে রাখিয়া তাহা বালকে খাওয়াবে।।


সেই মত কাজ যবে গ্রামবাসী করে।


পরদিন গো-মড়ক গেল দুরে সরে।

 



গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :- 74 দয়ার সাগর তারকচন্দ্র

আদর্শ মতুয়া বটে শ্রীতারক চন্দ্র।


মনে প্রাণে মানিলেন মতুয়ার ধর্ম্ম।।


মতুয়ার ধর্ম্ম যাহা স্বহস্তে লিখিলা।


আপন জীবনে তাহা পালন করিলা।।


জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা।


….শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত

জীব প্রতি দয়া তাঁর অসীম অনন্ত।


শুন বলি সে সম্বন্ধে একটি বৃত্তান্ত।।


গৃহের পালিত পশু ছিল যত গুলি।


সকলে তারকে চিনে শোনে তার বুলি।।


গরু গুলি তাঁরে দেখে বড় সুখ পায়।


আনন্দে নয়ন মুদে হস্ত দিলে গায়।।


তারকের স্পর্শ পেতে সকলের আশা।


তারকের কাছে তারা চায় ভালবাসা।।


পশু পাখী নর নারী গৃহে যত জন।


তারকের স্পর্শ পেতে লোভী সর্ব্বক্ষণ।।


গান করিবারে যবে বিদেশেতে যায়।


হম্বা রব করে গাভী চারিদিকে চায়।।


ঘাস জল খায় বটে তাতে মন নাই।


বিড়াল কুকুর কান্দে সর্ব্বদা সবাই।।


গান গাহি যেই কালে ফিরে আসে ঘরে।


আনন্দের মাত্রা যেন কোথঅ নাহি ধরে।।


দড়ি ছিড়ি গরুগুলি আসিবারে চায়।


মুখের ‘গেরাস’ ফেলে বিড়াল দৌড়ায়।।


পোষাপাখি পাখসাট মারিছে খাচায়।


সবে চায় তার গায় আগে হাত দেয়।।


দয়ার সাগরে সবে ডুব দিতে চায়।


‘জীবে দয়া’ এই তার সত্য পরিচয়।।


কি কারণে একদিনে সেই মহাশয়।


একটি “পালের” গরু করিল বিক্রয়।।


‘পাল’ ছেড়ে গরু কিন্তু যেতে নাহি চায়।


বহু কষ্টে নিল গরু ক্রেতা মহাশয়।।


ভাব দেখে তারকের কান্দিল পরাণ।


ভাবে-বলে ‘কাজ নাই গরু ফিরে আন।।


কিন্তু কথা দিয়া তাহা কেমনে লঙ্ঘিব।


দুঃখ পাব বলে কি না কাজে ছোট হবে?


কিছুদিন পরে সেই প্রভু মহাজন।


যাত্রা কৈল ওড়াকান্দী স্থির করি মন।।


ওড়াকান্দী সন্নিকটে মাঠের ভিতর।


ঘটিল অপূর্ব্ব কান্ড শুন অতঃপর।।


সেই গরু সেই ক্রেতা জুড়িয়াছে হালে।


দারুণ গ্রীষ্মের তারে জল নাহি বিলে।।


পিপাসায় শুষ্ক কন্ঠ চক্ষে বহে জল।


ধীরে ধীরে কোনরূপে টানিতেছে হাল।।


কৃষক তাহাতে সুখী নাহি হয় মনে।


করিছে প্রহার তারে বিশেষ তাড়নে।।

যেইখানে হাল চাষে তার কাছে পথ।


দিবারাত্রি লোকজন করে যাতায়াত।।


যেই কালে শ্রীতারক সেখানে আসিল।


হাল স্কন্ধে সেই গরু তাঁহারে দেখিল।।


দরদী বান্ধবে দেখি মন নাহি মানে।


হাল ভেঙ্গ চলে ছুটে প্রভুর সদনে।।


হাম্বা হাম্বা রব করে চক্ষে বহে জল।


ভাব দেখে তারকের দেহে নাহি বল।।


তারকের গাত্র গুরু চাটিতে লাগিল।


তাই দেখি গোস্বামীর হৃদয় ফাটিল।।


মনে ভাবে হায়! হায়! আমি কি নিষ্ঠুর।


ইচ্ছা করে ‘অ-বলারে’ করিয়াছি দূর।।


অনুতাপে গোস্বামীর হৃদি ফাটি যায়।


ঝর ঝর অশ্রু তাঁর পড়িল ধরায়।।


ক্রেতারে ডাকিয়া বলে “শুন মহাশয়।


দয়া করে এই গরু ফিরে দিতে হয়।।


হাল-কার্য্যে এই গরু বহু কষ্ট পায়।


তাই দেখে মোর কাছে নালিশ জানায়।।


যে-টাকা দিয়াছ তুমি লহ তাহা ফিরে।


দয়া করে ছেড়ে দাও গরুটী আমারে।।


তোমার মঙ্গল হবে জানিও নিশ্চয়।


এই টুকু কর দয়া ক্রেতা মহাশয়।।


দেখিয়া গরুর কান্ড ক্রেতা’ত অবাক।


চুপ করে দেখে শুধু নাহি সারে বাক।।


পরে যবে শ্রীতারক এই কথা কয়।


নিরাপত্তে গরু ছাড়ে ক্রেতা মহাশয়।।


গরুরে উদ্ধার করি তারক চলিল।


সে-গরু তারকের সঙ্গে সঙ্গে গেল।।


এই ভাবে জীবে দয়া সীমা দিতে নাই।


দয়ার সাগর ছিল তারক গোঁসাই।।


অতঃপর শুন সবে আরেক ঘটনা।


দেশে দেশে সেই কির্ত্তি রয়েছে রটনা।।


একদিন পথে চলে গোস্বামী রতন।


চলেছে পদুমা গ্রামে মল্লিক-ভবন।।


সঙ্গেতে যাদব চন্দ্র ঢালী মহাশয়।


পরম ধার্ম্মিক যিনি অতি সদাশয়।।


তারকের পদাশ্রিত নিষ্ঠা সেই পদে।


পূর্ণ-ব্রাহ্ম-জগন্নাথ জানে গুরুচাঁদে।।


তাঁর যত কীর্ত্তি কথা বলিব পশ্চাতে।


এবে শুন কি ঘটনা ঘটে সেই পথে।।


দরিদ্র কুটীর এক পথপার্শ্বে রয়।


তারক যাদব দোঁহে সেই পথে যায়।।


কুটীরের পার্শ্বে যবে উপনীত হল।


সুন্দর বালক এক বাহিরে আসিল।।


পথ বাহুড়িয়া সেই বালক দাঁড়ায়।


গোস্বামীর পানে চাহি মৃদুস্বরে কয়।।


“তোমার যে যেতে হবে আমাদের বাড়ী।


না গেলে আজিকে তোমা নাহি দিব ছাড়ি।।


মাতা বলিয়াছে তোমা লইতে ডাকিয়া।


তোমাকে দেখেছি মোরা ঘরেতে থাকিয়া।।”


গোস্বামী ডাকিয়া বলে ‘চলুন যাদব।


বলুন কেমন প্রাণে উপেক্ষি” এ-সব?”


যাদব বালকে বলে “শোন রে গোপাল।


কত জন্ম তপস্যাতে পেলিএ কপাল।।


চলেছে “দয়ার গাজী” আর ভয় নাই।


চল চল তাড়াতাড়ি তোর বাড়ী যাই।।”


যাদবের ভাব দেখি বড়ই মধুর।


বুকে থাকে এক ভাব মুখে অন্য সুর।।


মৌখিক রহস্য করে গোস্বামীর সনে।


“পরম দেবতা” বলি মানে মনে প্রাণে।।


অল্পক্ষণে উপস্থিত বালকের বাড়ী।


বসিবারে এনে দিল দুইখানা পীড়ি।।


গৃহ মধ্যে কথা কয় বালকের মাতা।


বাহিরে গোস্বামী বসি শোনে সেই কথা।।

 

গোস্বামী ডাকিয়া বলে সেই রমণীরে।


“মাগো! কথা বল না’ক আসিয়া বাহিরে।।


আমিত তোমার পুত্র তুমিও জননী।


কাছে এসে কথা বল প্রাণ ভরে শুনি।।


গোস্বামীর কথা শুনি নারী কেন্দে কয়।


বাহিরে আসিতে বাবা নাহিক উপায়।।


জীর্ণ দীন বস্ত্র-হীন আমি অভাগিনী।


মোর দিন কাটে বাবা পরে এক কাণি।।


শত ছিন্ন বস্ত্রে করি লজ্জা নিবারণ।


কেমনে বাহিরে আসি বল বাপধন।।


তোমার গুণের কথা সর্ব্ব দেশে কয়।


দীনজনে ধনী হয় তোমার কৃপায়।।


নাড়ী-ছোঁড়া-ধন মোর এক মাত্র ছেলে।


স্বর্গে চলে গেছে স্বামী বালকেরে ফেলে।।


দয়া করে আশীর্ব্বাদ কর তুমি তারে।


আর কষ্ট তার যেন না হয় সংসারে।।


এই লাগি কষ্ট দিতে এনেছি ডাকিয়া।


কাঙ্গালের আশীর্ব্বাদ কর মন দিয়া।।


এই কথা বলে নারী ফুকারিয়া কান্দে।


বড়ই বাজিল ব্যথা সে তারকচান্দে।।


আপনার উত্তরীয় করি পরিধান।


নিজবস্ত্র রমনীরে করিলেন দান।।


যত অর্থ ছিল সাথে সব তারে দিল।


প্রাণ ভরে সে-বালকে আশীষ করিল।।


গোস্বামীর আশীর্ব্বাদে সে দীন বালক।


ধন পেয়ে ভবিষ্যতে হয় ধনী লোক।।


দীন বন্ধু সে তারক দীনের সহায়।


কত জনে করে দয়অ তুলনা কোথায়?


আর এক কথা শুন অপার মহিমা।


নিঃস্বার্থ তারকচন্দ্র শুনে নাহি সীমা।।


মাধব নামেতে তাঁর ছিল প্রতিবেশী।


গোস্বামীর কাছে টাকা কর্জ্জ লয় আসি।।


খত লিখি দিল আনি রেজেষ্ট্রেীর করিয়া।


টাকা পেয়ে গোস্বামীকে দিল সে ধরিয়া।।


দিনে দিনে দিন যায় তামাদি উদয়।


মাধবের ডাক দিয়া গোস্বামীজী কয়।।


কি মাধব টাকাগুলি শোধ দিবে কিনা?


শোধ করে দেও টাকা কেন থাক দেনা।।


খতের তামাদি এল কিবা করি বল।


আসল না পার কিছু সুদ দিয়ে ফেল।।


মাধব জানিত সাধু পরম দয়াল।


ধীরে ধীরে টাকা নেবে বসে কতকাল।।


যেমন দয়াল তাতে কোন চিন্তা নাই।


নালিশে আদায় টাকা করে না গোঁসাই।।


তাই ভেবে বাহ্য রাগে শক্ত কথা কয়।


বলে যাহা পার তুমি কর গে মশায়।।


ভারী কটা টাকা তাতে এতই তাগাদা।


এতই উত্যক্ত কর আমি নাকি গাধা?


টাকা নিছি খত দিছি আর কিবা চাও?


এভাবে আমারে আর কেন বা জ্বালাও?


মাধবের ভাগ্যদোষে হিতে বিপরীত।


দুই জন ভক্ত সেথা ছিল উপস্থিত।।


ক্রোধে পরিপূর্ণ হল তাহাদের মন।


গোস্বামীকে সঙ্গে করি করিল গমন।।


গৃহে গিয়া ক্রোধে বলে শুন দয়াময়।


মাধবের এই দম্ভ দেখা নাহি যায়।।


এতই মাধব দাস হল অহঙ্কারী।


ওরে সাজা দিব নিয়ে রাজার কাছারী।।


আপনার কোন কথা শুনিব না আজ।


এতই যোগ্যতা তার করে হেন কাজ?


কাল্য গিয়ে নড়াইল করিব নালিশ।


রাজার কাছারী হতে উচিত শালিশ।।


এত বলি জোর করি দিুই মহাশয়।


করিল খতের আর্জ্জি বিচার আলয়।।

বিবাদীর পরে যবে আসিল নোটিশ।


মাধব বুঝিল তবে কাজের হদিশ।।


আর্জ্জি দেখে মাধবের মন ভেঙ্গে গেল।


নালিশের কোন রূপ জবাব নাহি দিল।।


এক তর্ফা ডিক্রী হল দাবী সমুদয়।


তথপি মাধব তাতে কথা নাহি কয়।।


বিধির নির্ব্বন্ধ বল কে খন্ডাতে পারে?


মাধব পড়িল মারা কিছু দিন পরে।।


নানা দেশে নানা কাজে গোস্বামী নিযুক্ত।


অল্পই জানিলা তেঁহ এই সব তত্ত্ব।।


এ দিকেতে ভক্ত দলে জোগাড় করিয়া।


মাধবের বাড়ী এল মাল ক্রোক নিয়া।।


দৈবক্রমে গোস্বামীজী গৃহে উপস্থিত।


ভক্তগণে এল বাড়ী প্যাদার সহিত।।


মাধবের নারী জানি সব সমাচার।


গোস্বামীর পদে পড়ি করে হাহাকার।।


গোস্বামীর শান্তায়ে তারে শুনিলেন কথা।


হেঁট করি রহিলেন আপনার মাথা।।


বিষম বেদনা-রেখা ফুটিল বদনে।


বহু তিরস্কার করে নিজ শিষ্য গণে।।


দেনা-দায়ে মুক্ত হল মাধবের নারী।


গোস্বামী নিলেন নাক এক কাণা কড়ি।।


পেয়াদা বিদায় করে নিজ দিয়ে টাকা।


এমন দয়াল ভবে নাহি যায় দেখা।।


পর-দুঃখে দুঃখী সদা মতুয়া সুজন।


শ্রীতারক তারমধ্যে শ্রেষ্ঠ একজন।।


নিঃস্বার্থ দয়ার দানে কাঙ্গালে বাঁচায়।


দ্বিতীয় চরিত্র-চিত্র এই পরিচয়।।


নামে রুচি মতুয়ায় নীতি অন্যতম।


এ-নীতি পালনে তেঁহ ছিল সর্ব্বোতম।।


বারুণীতে যায় ভক্ত কন্ঠে করে নাম।


বীরের স্বভাবে চলে সবে গুণ ধাম।।


অবশ্য নামেতে নিষ্ঠা রাখে দূঢ়তর।


তার মধ্যেভাব আছে ভাবে ভাবান্তর।।


শ্রীতারক যাত্রা করে ধাম ওড়াকান্দী।


গৃহ হতে হরি বলে সাধু ওঠে কান্দি।।


সারা পথে হরিনামে নাহিক বিশ্রাম।


নয়নের জলে বক্ষ ভাবে অবিরাম।।


স্বেদ কম্প পুলকাশ্রু সাত্ত্বিক বিকার।


ক্ষণে ক্ষণে পথিমধ্যে হইত তাঁহার।।


ধামে আসি পরমর্ষি পড়ে ধরাতলে।


মৃত্তিকা কর্দ্দম হয় তাঁর অশ্রুজলে।।


দরশন পরশন যেবা তাঁরে করে।


মহাপ্রেম-সিন্ধু মাঝে ডুব দিয়া মরে।।


মতুয়া চরিত্রে যাহা দ্বিতীয় লক্ষণ।


শ্রীতারক পূণ তাহা ছিল সর্ব্বক্ষণ।


মতুয়া-চরিত্রে যাহা পরম লক্ষণ।।


মানুষেতে নিষ্ঠা যাহা জানে সর্ব্বজন।।


এই গুণে তারকের তুল্য দিতে নাই।


প্রমাণ তাহার জানে সর্ব্বত্র সবাই।।


নিজ-কৃত গানে তেঁহ করিল রচনা।


কাজ কি আমার মন্ত্র বীজে।


হরিচাঁদ ছবি রবির কিরণ


উথলিল মধু হৃদ-সরোজে।।


………তারকচন্দ্র

তন্ত্র মন্ত্র দীক্ষা শিক্ষা করিলেন ত্যাগ।


শুধু হরিচাঁদে রাখে দৃঢ় অনুরাগ।।


এই নিষ্ঠা নিল তাঁরে প্রেমময় লোকে।


সেই সূত্রে পিতা-পুত্রে অভিন্নতা দেখে।।


কায়া ছাড়ি হরিচাঁদ গুরুচাঁদে কয়।


শ্রীতারক পেল তার আদি পরিচয়।।


নিষ্ঠাগুণে তারকের নাহি হল ভুল।


তাই দেখে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদে স্থুল।।

শক্তি সত্য কায়া মিথ্যা নিষ্ঠাবান জানে।


তাই তাঁর মন চলে শক্তির সন্ধানে।।


যে শক্তি করেছে তাঁর পরাণ হরণ।


ঘরে ঘরে ঘুরে তাঁরে করে অন্বেষণ।।


যেইখানে মেলে দেখা আর কথা নাই।


সেই পদে মন প্রাণ বিক্রীত সবাই।।


তাই দেখি নিষ্ঠা-গুণে তারক প্রধান।


মন-মানুষের নিল করিয়া সন্ধান।।


মতুয়ার তিন গুণে পূর্ণতারকেতে।


সেই শিক্ষা পেল ক্রমে সবে তাঁহা হতে।।


তাঁহার জীবন কথা অসীম অনন্ত।


কণামাত্র বলি পরে করিব সে ক্ষান্ত।।

 

গুরুচাঁদ চরিত পর্ব :-73 ভক্ত কৃপাগুণে ভেকরূপী কামাচারী গুরু–উদ্ধার

এ-ভবে কর্ম্মফল এড়ান কারো নাই।


কর্ম্মফল-কথা কিছু শুন সবে ভাই।।


কৃ-ধাতু-ত্রি-গুণ জান সত্তঃ রজঃ তমঃ।


ণক প্রত্যয় মনোময় আগমন নিগম।।


সৃষ্টি হল কর্ম্ম-জীব ইহা বলে রাখি।


ফলরূপে ভোগ যাহা তাহা শুধু বাকি।।


সাকারে কর্ম্মের খেলা নিরাকারে নাই।


কর্ম্মফলে বাধা তাতে সৃষ্টিতে সবাই।।


কর্ম্মগুণে ফল ভোগ কিবা লাভ হয়।


সুকর্ম্ম কুকর্ম্ম সব ফলে পরিচয়।।


এই কর্ম্মফল কেহ এড়াইতে নারে।


কর্ম্মফল শ্রেষ্ঠ তাই এ-ভব সংসারে।।


কর্তা ভিন্ন কর্ম্ম কেহ শাসিতে না পারে।


সর্ব্ব-কর্ম্ম-সাধ্য মাত্র প্রভুর চক্রধরে।।


তাঁর ভক্ত যেই জন তাঁরে দেছে প্রাণ।


তাঁর কৃপাগুণে বটে সেই বলবান।।


কর্ম্ম-চক্র-ভেদ বটে তাঁর পক্ষে সাধ্য।


কর্ম্মফল তাঁর আজ্ঞঅ মতে রয় বাধ্য।।


“কৃপা” গুণ যারে বলি কোন গুণ সেই?


সে-গুণের কাছে কিন্তু কর্ম্মফল নেই।।


“কৃপা-সিন্ধু” “কৃপা-ধন্য” হয়েছে যে জন।


কর্ম্মফল-বন্ধু-মুক্ত সদা তাঁর মন।।


প্রকৃতির দান যাহা বাহিরেতে রয়।


তা্ই নিয়ে কর্ম্মফল ধার শোধ লয়।।


“কৃপা-সিদ্ধ” কৃপা-রসে ডুব দিয়ে রয়।


প্রকৃতির পরিশোধ টের নাহি পায়।।


কর্ম্মএল এড়াবার কারো সাধ্য নাই।


ভাগবত পুরাণেতে সে-প্রমাণ পাই।।


সহস্র ধেনুর মধ্যে বৎস চেনে মাতা।


কর্তার পশ্চাতে কর্ম্ম ফিরে যথা তথা।।


“যথা ধেনু সহস্রেষু বৎসো বিন্দতি মাতরম।


তথা শুভাশুভৎ কর্ম্ম কর্ত্তারমনুগচ্ছতি।।”


—-ভূমিখন্ডম।


কিন্তু ফলভোগ হয় বিভিন্ন প্রকারে।


কারে ফল স্পর্শে কারে স্পর্শ নাহি করে।।


তাহার প্রমাণ দেখি দস্যু রত্নাকরে।


পাপে মুক্তি পেল সেই নারদের বরে।।


কর্ম্মফলে দেহ তার হ’ল বটে লয়।


রাম নাম মগ্ন থেকে টের নাহি পায়।।


প্রকৃতির দান যাহা রয়েছে বাহিরে।


তাই নিয়ে কর্ম্মফল ঋণ শোধ করে।।


তাহাতে বলেছি আমি “কৃপা-সিদ্ধ’ জন।


সেই পারে কর্ম্মফল করিতে খন্ডন।।


মহতের কৃপাগুণে কর্ম্মফল নাশে।


শুনহে ঘটনা যাহা বলি অবশেষে।।


ব্যানার্জি প্যারীচরণ নামে মহাশয়।


লহ্মীপাশা গ্রামে ঘর যশোর জেলায়।।


বৃহৎ দীর্ঘিকা এক খনন কারণ।


নিয়াগ করিলে তেঁহ বহু লোকজন।।


চারিহস্তি পরিমিত গভীর হইলে।


প্রকান্ড দুর্দ্দুর এক দেখিল সকলে।।


এত বড় ভেক কেহ কভু দেখে নাই।


সর্ব্বাঙ্গে “চেটুয়া-ঢাকা” সবে দেখে তাই।।


মাটী দূর হল ভেক আলোক দেখিল।


ক্রোধ ভরে ফোঁস ফোঁস করিতে লাগিল।।


পিয়ারী বাকুবে তবে ডাকিল সকলে।


কথা শুনি প্যারীবাবু এল সেই স্থলে।।

 

 

দুই হাত দীর্ঘে হবে প্রস্থে এক হাত।


ভেক দেখি প্যারী বলে “এ কোন ডাকাত।।


এই জীব ভেক নাহি হবে কদাচন।


কি জান কি কর্ম্মফলে হয়েছে এমন।।”


কথা শুনি কোদালীরা বলে তার ঠাঁই।


“ইহার কারণ মোরা শুনিবার চাই।।


তিনি কন, “এই সাধ্য না হবে আমার।


মহাজ্ঞানী হরি ভক্ত সেই মহাশয়।।


তোমরা তাহারে ডেকে আন গো হেথায়।


কথা মত কোদালীরা তারকে ডাকিল।


সব শুনি সেই সাথে তারক আসিল।।


প্যারীবাবু বলিলেন তারকের ঠাঁই।


“তোমাকে ডেকেছি আমি তারক গোঁসাই।।


তত্ত্বজ্ঞঅনী সাধু তুমি আমি জানি ভাল।


প্রকান্ড ভেকের তত্ত্ব মোর কাছে বল।।


মোর মনে বলে এই ভেক কভু নয়।


কোন দিন এত বড় ভেক নাহি হয়?


আশ্চর্য্য ঘটনা তাতে চোখে যায় দেখা।


সর্ব্বাঙ্গ রয়েছে তবে “চাটুয়াতে” ঢাকা।।


ইহার মীমাংসা করি বুঝাও সকলে।


মনের সন্দেহ সব যাক দূরে চলে।।


ব্যানার্জির কথা শুনি তারক কহিল।


“আমি কিবা জানি বাবু সেই কথা বল।।


জানাজানি যাহা মোর সব ওড়াকান্দী।


এ সব তত্ত্বের আমি কিবা জানি সন্ধি।।


শ্রীহরির-পদ চিন্তা মনে করি সার।


অবশ্য করিব চেষ্টা ইহা মীমাংসার।।


এতবলি চক্ষু মুদি তারক বসিল।


ভেকের অতীত কথা সকলি জানিল।।


ক্ষণপরে চক্ষু মেলি সেই মহাশয়।


উপস্থি লোক জনে ডেকে ডেকে কয়।।


“অদ্ভুত ঘটনা সবে শুন দিয়া মন।


পূর্ব্ব জন্মে ছিল ভেক গুরু একজন।।


ভেকধারী বৈরাগী পালিল আচার।


বহু শিষ্য ক্রমে হইল তাহার।।


ঐশ্বর্য্য বাড়িয়া ধর্ম্মে দিল ছারখার।


শিষ্য নারী সঙ্গে সেই করে ব্যাভিচার।।


ভেকধারী হয়ে গুরু করে ব্যাভিচার।


এই জন্মে পেল তাই ভেকের আকার।।


গুরু যারা ব্যাভিচারি তার রক্ষা নাই।


গুরু-শিষ্য এক সঙ্গে সমান সবাই।।


ভবরূপ সাগরেতে শ্রীগুরু-তরণী।


বুকে করে শিষ্যে পার করে তাই জানি।।


তরী যদি ডুবে যায় আরোহী কি করে।


অকুল সাগর ডুবে জানে প্রাণে মরে।।


কর্ম্মফলে গুরু পেল ভেকের আকার।


“চেটা-রূপে” শিষ্য সর্ব্ব দেহ অলঙ্কার।।


গুরু-পদ নহে কভু সামান্য ব্যাপার।


গুরু যিনি গুরুতর দায়িত্ব তাহার।


শত শত গুরু মিলে সদ গুরু কই?


উপায় নাহিক কভু সদ গুরু বই।।


যা’ হোক তা’ হোক এই বলিলাম সার।


ব্যাভিচারী গুরু হয়ে এ-দশা ইহার।।


এতেক বলিয়া সাধু নীরব হইল।


পিয়ারী চরণ তবে ডাকিয়া কহিল।।


“সত্য যুক্তি বলি ইহা মোর মনে হয়।


দয়া করে অভাগার করহে উপায়।।।


অতীতের কথা যবে বলিয়াছি তুমি।


ভবিষ্যৎ আছে জানা মনে করি আমি।।


দয়া করে অভাগারে করহে উদ্ধার।


তোমার দর্শণে পাপ দুর হোক তার।।


তারক বলেন বাবু শাস্ত্রের প্রমাণ।


কর্ম্মফল ক্ষয়ে হয় দেহ অবসান।।

 

পুরাণে প্রমাণ তার শুন বলি তাই।


পদ্মপুরাণের মধ্যে সে প্রমাণ পাই।।


“তৈল ক্ষয়াদযথা দীপো নির্ব্বাণমধিগচ্ছতি।


কর্ম্মক্ষয়া ত্তথা জন্তু শরীরান্নাশ মৃচ্ছতি।।”


—–পদ্মপুরানম


মৃত্তি-তেল বহুদুঃখে ভোগ শেষ হল।


এবে দেহ নাশ হবে হরি হরি বল।।


সবে মিলে করতালে বলে হরি হরি।


লম্ফ দিয়ে ভেক তবে পড়িল আছাড়ি।।


পড়ামাত্র প্রাণ বায়ূ বাহির হইল।


ভোগ শেষে কামাচারী উদ্ধার পাইল।।


সাধু দরশনে কাটে কর্ম্মদোষ-ফল।


পাপ-ক্ষয়ে আত্মা তার হইল নির্ম্মল।।


তারকচাঁদের গুণে বলিহারি যাই।


তারকের প্রীতে হরি হরি বল ভাই।।

 

Thursday, September 3, 2020

এক লোকের চারজন স্ত্রী’ ছিল। একদিন লোকটা অ’সুস্থ হয়ে পড়লো এবং জানতে পারলো যে সে আর বেশী দিন বাঁচবেনা। লোকটা ইচ্ছা করলো যে…


এক লোকের চারজন স্ত্রী’ ছিল। লোকটা তার ৪র্থ স্ত্রী’কেই বেশী ভালোবাসতো এবং যত্ন করতো। সে তার ৩য় স্ত্রী’কেও অনেক ভালোবাসতো এবং বন্ধু বান্ধবদের সামনে স্ত্রী’র প্রশংসা করতো। তার ভ’য় ছিলো যে এই স্ত্রী’ হয়তো কোনদিন অন্য কারো সাথে পালিয়ে যেতে পারে.
সে তার ২য় স্ত্রী’কেও ভালোবাসতো। লোকটা যখনি কোন বিপদে পড়তো, তখনি সে তার এই স্ত্রী’র কাছে সমাধান চাইতো এবং তার স্ত্রী’ তাকে সমাধান দিয়ে সাহায্য করতো। কিন্তু, লোকটা তার ১ম স্ত্রী’কে একদম ভালোবাসতো না এবং যত্নও করতোনা।

এই স্ত্রী’ লোকটাকে অ’ত্যন্ত ভালোবাসতো, তার অনুগত থাকতো এবং তার যত্ন নিতে চাইতো। লোকটা তা পছন্দ করতোনা। একদিন লোকটা অ’সুস্থ হয়ে পড়লো এবং জানতে পারলো যে সে আর বেশী দিন বাঁচবেনা।

লোকটা ইচ্ছা করলো যে সে যখন মা’রা যাবে, তার কোন একটা স্ত্রী’কেও নিয়ে যাবে তার সাথে করে, যাতে করে সে পেতে পারে এই ভেবে যে মৃ’ত্যুর পর সে একা নয়, তার একজন সঙ্গীও সাথে আছে। লোকটা তিনজন স্ত্রী’কে ডেকে এনে তার সাথে মৃ’ত্যুবরণ করার ইচ্ছাটা বললো এবং কে যেতে চায় তা জিজ্ঞেস করলো।

“এটা হতেই পারেনা”, বলেই তার ৪র্থ স্ত্রী’ সাথে সাথে ঐ জায়গা থেকে চলে গেলো লোকটার ইচ্ছাকে প্রত্যাখ্যান করে। ৩য় স্ত্রী’ বললো, “জীবন এখানে খুবই সুন্দর। তোমা’র মৃ’ত্যুর পর আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবো.!” বলে সেও চলে গেল। ২য় স্ত্রী’ বললো, “তুমি আমা’র কাছে সমাধান চাইতে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমা’র কোন সমাধান নেই।

দুঃখিত তোমাকে সাহায্য করতে না পেরে। তবে তোমা’র মৃ’ত্যুর আগে পর্যন্ত আমি তোমা’র পাশে সর্বদা আছি.! স্ত্রী’দের কথা শুনে লোকটা অ’ত্যন্ত ক’ষ্ট পেলো এবং বিম’র্ষ হয়ে পড়লো……: “আমি তোমা’র সাথে যাব, তুমি যেখানেই যাওনা কেন, আমি তোমাকে অনুসরণ করবো.!” হঠাৎ একটা কন্ঠ বলে উঠলো.! লোকটা তাকিয়ে দেখলো যে কন্ঠটা তার ১ম স্ত্রী’র।
ভালোবাসা এবং যত্নের অভাবে তার এই স্ত্রী’র চেহারা মলিন, দেহ কঙ্কালসার, অ’পুষ্টির চিহ্ন সারা শরীরে। লোকটা অশ্রুসিক্ত নয়নে বললো, “হায় কি আফসোস.! তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি, যত্ন করিনি। আজ তুমি আমা’র সাথে যেতে চাইছে। এতদিন কি ভুলটাই না করেছি তোমা’র কথা না ভেবে.! আজ শেষ সময়ে ভুলটা বুঝতে পারলাম.!”

আসলে, আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এই চারজন স্ত্রী’র মত ব্যাপারটি আছে।

> জীবনের বেশীর ভাগ সময় এবং অর্থ আম’রা এটির পিছনে ব্যয় করি। কিন্তু মৃ’ত্যু এলেই এটি আমাদেরকে ফেলে চলে যায়।

২) *৩য় স্ত্রী’ হচ্ছে আমাদের ধন সম্পত্তি।* > টাকা পয়সা, সুনাম এবং মালিকানা, যা আম’রা অন্যদের দেখিয়ে বেড়াই। মৃ’ত্যুর পর এগুলো অন্যদের কাছে চলে যায়।

৩) *২য় স্ত্রী’ হচ্ছে আমাদের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব।*
> এরা আমাদেরকে নানা বিপদে আপদে সাহায্য করে এবং মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের পাশে থাকে।

৪) *আর ১ম স্ত্রী’ হচ্ছে আমাদের আত্না।* > পার্থিব সুখ শান্তি আনন্দ এবং সম্পদের পিছে ছুটতে ছুটতে আম’রা আত্নার কথা ভুলে যাই। আত্নার খোরাক মেটাতে পারিনা। যত্ন নিতে পারিনা, ভালোবাসিনা।

কিন্তু এটিই একমাত্র জিনিস যা আমাদের প্রত্যেকটা কাজে আমাদের অনুসরণ করে। যেখানেই যাই আমাদের পাশে থাকে এবং মৃ’ত্যুর পরেও পারলৌকিক জীবনে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে…!!!






Wednesday, September 2, 2020

বোতলের তলায় ত্রিকোণ চিহ্নটা কখনও খেয়াল করেছেন, জানেন কি এর অর্থ?

ঘরে বাইরে এখন প্লাস্টিকের পেট বোতলের ছড়াছড়ি। খাবার রাখা থেকে পানি রাখা- সবেতেই এই প্লাস্টিক বোতল । কিন্তু, কখনও আমর'া কেউ খেয়াল করি না প্লাস্টিকের বোতলের গায়ে থাকা চিহ্নগু'লিকে।
পড়ে গেলে চট করে ফেটে যায় না। বোতল পরিষ্কার করাও সোজা। ব্যবহারের এমন সোজা-সা'পটা সুবিধায় প্লাস্টিকের বোতলের চল বাড়তে বাড়তে এখন জীবনের অ'ঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু, আমা'রা না বুঝেই দিনের পর দিন এই সব প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে থাকি। অনেকে তো বাচ্চার দুধ ভর্তি প্লাস্টিকের ফিডিং বোতলটাই গরম করে বসেন। প্লাস্টিক বোতলের এমন যথেচ্ছ ব্যবহার আদপেও কি স্বাস্থ্যকর? এ বি'ষয়ে বাছ-বিচার আমর'া করি না। তাই প্লাস্টিক বোতলের তলায় থাকা ত্রিকোণ চিহ্নের মানেটা বুঝে নিলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে নিমেষে।
প্লাস্টিকের বোতলের নিচের চিহ্ন

১. ত্রিকোণ চিহ্ন- এটা আসলে প্লাস্টিক বোতলের চারিত্রিক ইনডেক্স। এই চিহ্নটা থাকলে বোঝা যায় বোতলটি বিধিসম্মতভাবে তৈরি। কিন্তু, বোতলটা ব্যবহারের কতটা নির্ভরযোগ্য বা কী ধরনের জিনিস তাতে রাখা যাব'ে, তা ত্রিকোণ চিহ্নের মধ্যে থাকা সংখ্যা দ্বারা বোঝা যায়।

২. ত্রিকোণের মাঝে ১ সংখ্যা থাকলে- এর মানে বোতলটি একবারই মাত্র ব্যবহার করা যাব'ে এবং বোতলটিতে পলিথিলিন টেরেপথ্যালেট প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের বোতল বহুব্যবহারে স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক।


৩. ত্রিকোণের মধ্যে ২ সংখ্যা থাকলে- এই ধরনের প্লাস্টিক বোতলে ঘন পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত শ্যাম্পু বা ডিটারজেন্ট রাখার ক্ষেত্রে এই ধরনের বোতল ব্যবহার হয়।

৪. ত্রিকোণের মধ্যে ৩ সংখ্যা থাকলে- এই ধরনের বোতল বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এই বোতল তৈরি হয় ‘পোলিভিনিল ক্লোরাইড’ বা ‘পিভিসি’ থেকে। এতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘পিনাট বাটার’ রাখতে এই বোতল ব্যবহার করা হয়।

৫. ত্রিকোণের মধ্যে ৪ সংখ্যা থাকলে- এই ধরনের প্লাস্টিক বহু ব্যবহারের উপযোগী। বিশেষ করে, প্লাস্টিকের প্যাকে'টে এই চিহ্ন প্রচুর দেখা যায়। খুব দামি বোতলে এই চিহ্ন থাকে।

৬. ত্রিকোণের মধ্যে ৫ সংখ্যা থাকলে- এই ধরনের প্লাস্টিক একদম নিরাপ'দ এবং ব্যবহারের যোগ্য। আইক্রিম কাপ বা সিরাপের বোতল অথবা খাবারের কন্টেনারে এই ধরনের চিহ্ন দেখা যায়।

৭. ত্রিকোণের মধ্যে ৬ অথবা ৭ সংখ্যা থাকলে- প্লাস্টিকের রে'ড কার্ড বলা হয় একে। এই ধরনের প্লাস্টিক মা'রাত্মক রকমের ক্ষ'তিকারক। কারণ এই ধরনের প্লাস্টিক তৈরি হয় পলিস্টিরিন এবং পলিকার্বনেট বিসপেনল-এ। এটা মানুষের মধ্যে হরমোন সমস্যা তৈরি করে। ক্রমাগত এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ায়।