Wednesday, April 15, 2020

সিঁদুর কি? কেন বিবাহিত নারীগণ সিঁদুর পরেন?


সিঁন্দুর হল একটি কমলা-লালাবর্ণের মিশ্র পদার্থ যা বিবাহিত হিন্দু নারীরা তাদের সিঁথিতে পড়ে থাকে। একজন বিবাহিত হিন্দু নারীর দুই প্রতিক হল হাতের শাঁখা ও সিঁথির সিঁন্দুর, তাই একজন হিন্দু নারীর কাছে সিঁন্দুর গুরুত্ব অন্য জিনিসের তুলনাই অনেক বেশি।
বর্তমানে ব্যাবহৃত সিঁন্দুর মূলত ২ ধরণের হয়, একটি প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী সিঁন্দুর ও আরেকটি কৃত্রিম উপায়ে তৈরী সিঁন্দুর। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী সিঁন্দুর টি Bixa sp.
গাছের ফল কে গুঁড়ো করে তার সাথে কিছু উদ্ভিদজাত পদার্থ ও হলুদ, এল্যাম(Alum) লাইম(Calcium oxide) মিশিয়ে তৈরী করা হয়। কৃত্রিম উপায়ে তৈরী সিঁন্দুরে সিলিকন পাউডার ও বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থের সাথে সালফারের আকরিক Mercury Sulfide এর পরিশুদ্ধ পাউডার ও সীসাজাত যৌগ মিশিয়ে তৈরী করা হয়। পারদ খুব তীব্র বিষাক্ত পদার্থ হওয়ার জন্য বর্তমানে এর ব্যাবহার মাইক্রোগ্রাম পরিমানই নেওয়া হয়। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী সিঁন্দুরই এখন বহুল ব্যাবহৃত।
সিঁন্দুরের ঐতিহ্য
বিবাহিত হিন্দু নারীদের সিঁথিতে সিঁন্দুর পড়া আনুমানিক ৫,০০০ বছর প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। প্রাচীন রামায়ণে মাতা সীতা এবং মহাভারতে দ্রৌপদী সিঁথিতে সিঁন্দুর ব্যাবহারের স্পস্ট প্রমাণ আছে। রামায়ণে শ্রীরাম যখন মাতা সীতা কে বিবাহ করেন তখন তিনি মাতা সীতার সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করেছিলেন, একই প্রমাণ আছে হরিবংশ পুরাণে যখন শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীদেবী কে বিবাহ করেন তখন তিনিও রুক্মিনীদেবী সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করেছিলেন, এই পরম্পরাই এখনও অবদি হিন্দু বিবাহতে চলে আসছে। যেখানে স্বামী তার স্ত্রী কে সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করিয়ে স্ত্রী হিসাবে তাকে গ্রহণ করে। এছাড়া বেশকিছু ঐতিহাসিক এটা স্বিকার করে থাকেন প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতাতেও নারীরা সিঁন্দুর ব্যাবহার করতো।
সিঁন্দুরের গুরুত্বের সবচেয়ে ভালো ব্যাখা আছে “ললিতা সহস্রনামে”। এটা ব্রহ্মান্ডপুরাণের অংশ বিশেষ, দেবী ললিতা যিনি মা দূর্গা বা মা শক্তির অপর নাম তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে ললিতাদেবীর সিঁথির সিঁন্দুর কে শ্রীলক্ষীর প্রতিক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ্যাৎ একজন বিবাহিত নারীকে এই সিঁন্দুরই তাকে শ্রীলক্ষীর স্বরূপ হিসাবে সমাজের সামনে তুলে ধরে। হিন্দু সংস্কারে নারীকে লক্ষী হিসাবে গণ্য হয় এবং বিবাহিত নারী কে শ্রী+লক্ষী=শ্রীলক্ষী হিসাবে গণ্য করা হয় কারণ একজন বিবাহিত নারী সংসার 
হিন্দুধর্মে সিঁদুর বিবাহিতা নারীর প্রতীক। অবিবাহিত মেয়েরা সিঁথিতে সিঁদুর পরে না, কপালে সিঁদুরের মতো লাল টিপ পরে। বিধবাদের সিঁদুর ব্যবহার শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ। হিন্দুদের পূজানুষ্ঠানের সময়ও সিঁদুর ব্যবহৃত হয়।
সিঁদুরের ইতিহাস অতি প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু ধর্মমতে এটি স্বামীর দীর্ঘজীবন বয়ে আনে বলে বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করেন। এর রঙ লাল, কারণ এটি শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক।
বিবাহের সময়ে একজন নারীর প্রথম কপালে সিঁদুর দিয়ে চিহ্ন আঁকা হয়। বৈবাহিক আচার হিন্দু মতে বিবাহের সর্বশেষ শাস্ত্রীয় রীতি হল বর (স্বামী) কর্তৃক কন্যার (নববধু) কপালে সিঁদুর লেপন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় পুরো বৈবাহিক জীবনে সিঁদুর পরে থাকেন।
সিঁদুর খেলা : সিঁদুর খেলা পূজা সংশ্লিষ্ট একটি হিন্দু সংস্কার। পূজার প্রতিমাকে সিঁদুর দিয়ে বরণ করে নেয়ার পর এই খেলা শুরু হয়। ভুরিভোজনের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।
গণগোর ব্রত : এই ব্রতে সিঁদুর পরানোর চল আছে। হিন্দু পূরাণে আছে সাধারণ নারীদের ওপর “পার্বতী সিঁদুর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।” এরপর কুলীন স্ত্রীরা পূজার জন্য এলে পার্বতী নিজ অঙ্গলী ( আংগুল) চিরে রক্ত দিয়ে এদের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিলেন।

No comments: