উলঙ্গ, উন্মুক্ত ইতিহাসের পাতায় যারা চিরকালীন বঞ্চিত ছিল।

আটশো বছর মরু দস্যুদের বর্বরতার পাশাপাশি জাত পাতের দলাদলি। কখনও মন্দির ভাঙে তো কখনও জোর করে ধর্মান্তরকরণ।

তারপরে লাল ইংরেজদের অকথ্য শোষণ ও অত্যাচার। সেখানেও একই কায়দায় দলে দলে ভ্যাটিকান প্রশিক্ষিত বিভিন্ন এজেন্টের আনাগোনা।
দেশটার গরীব ও সহজ সরল মনের আদিবাসী মানুষ গুলোকে ধর্মের ভয়, অর্থের লোভ দেখিয়ে খ্রিস্টান বানানো হলো।

এক দিনের গল্প নয় পুরো হাজার বছরের ইতিহাস।
এর পরেই খাতায় কলমে দেশ স্বাধীনের স্বীকৃতি।দেশটাকে স্বাধীন হতেও হল  শর্ত রেখে, তিন টুকরো করে। একটুকরো ভারত অপরটা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান।

এরই মাঝে দেশে জঘন্য রাজনীতি। দেশের জন্য গৃহস্থ ত্যাগ করে সন্ন্যাসের পথে নিজেকে নিয়ে যেতে হয়েছিল নেতাজিকে। তাকে চক্রান্তের শিকার হতে হলো।

একদল বলেছিল পাকিস্তানকে নিজের অধিকার না দিয়ে ভারত কখনই স্বাধীন হতে পারে না।
আগে পাকিস্তান দাও তারপর ভারত স্বাধীন হবে।আজ্ঞে, জ্যোতি ব্রিগেড বামপন্থী দলের কথা বলছি !!

এরপরে, মুসলিম লীগ তখন অবিভক্ত বাংলার মসনদে। তাই রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্যবহার করে তারা নোয়াখালী আর দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর মতো হিন্দু হত্যা যজ্ঞ চালিয়ে গেল। তারা বুঝিয়ে দিলো নতুন দেশ দাও নয় এদেশের হিন্দুদের মেরে এদেশটাকেই ইসলামীক পাকিস্তান রাষ্ট্র বানাবো।

তারপর দেশটা ভাগও হয়ে গেল। চাচা নেহেরুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ ছিল খুব তাই তিনি বেশি সময় ব্যয় না করে নিজেই ভারতরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মন্ত্রীর পদে বসলেন। 

বাম তথা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য পুরো বাংলাকেই পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তভুক্ত করতে চেয়েছিল। ভাগ্যক্রমে শ্যামাপ্রসাদের মতো নেতা বাংলার বুকে ছিল বলেই তার সাহায্যে বাঙালি হিন্দুর জন্য ভারতবর্ষের বুকে আলাদা হোম ল্যান্ড আজকের "পশ্চিমবঙ্গ" পেয়েছিল বাঙালি।

শ্যামাপ্রসাদ অবশ্য বুঝে গিয়েছিল 
সদলবলে পুরো বাঙালি জাতি পাকিস্তানের অধিবাসী হলে আরেকটা ক্যালকাটা কিলিং বা নোয়াখালীর পুনরাবৃত্তি হবে না,এমন ভাবাটা ভুল !!

তারপর তো যা হতে দেওয়া হলো, তাই হলো। ডঃ বিধানচন্দ্র রায় বাংলার প্রথম মূখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রে চাচা নেহেরু।

দেশ স্বাধীনের সাথে সাথে যেমন স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান তৈরীর দায়িত্ব টিম আম্বেদকরকে দেওয়া হলো। তেমনই দেশের নিজস্ব পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরির জন্য বিভিন্ন মহলকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হলো। এই সুযোগকে জ্যোতি ব্রিগেড খুব ভালো ভাবে কাজে লাগিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করে দিল।

শ্যামাপ্রসাদ হলো সাম্প্রদায়িক নেতা, বাংলার মন্বন্তরে তার অবদান নেই। রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া কবি, এমনকি জন-গণ-মন নাকি ইংরেজ প্রভূর উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। পাঠ্যপুস্তকে মোঘল পাঠানেরা ঠাই পেল। বঞ্চিত থেকে গেলে মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস। অহম-কোচ রাজ্যের ইতিহাস, রাজা প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস। আনন্দমঠ ঠাই পেল পেছন সারিতে। সামনের সারিতে এলো একই বৃন্তের দুটি কুসুম।

তারপরে বাংলার ক্ষমতায় বামেদের দাপাদাপি।
বাম ক্যাডারদের বাংলায় অনেক অবদান।সাঁইবাড়িতে ছেলের রক্ত মাখানো ভাত মাকে খাওয়ানো থেকে নিয়ে বিজনসেতুতে আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের জ্যান্ত পুড়িয়ে, কুপিড়ে মারা। শিক্ষা ব্যবস্থাকে নির্দিষ্ট কিছু লোকের কাছেই সীমিত রাখা। মরিচঝাঁপি দ্বীপে উদ্বাস্তু নমঃশূদ্র জাতিকে একঘরে করে দিয়ে না খেয়ে ক্ষুধায় ছটফট করে মরতে দেওয়া। একে একে সব কলকারখানার গেটে তারা ঝোলা। নক্সাল আন্দোলনকে (নক্সাল আতঙ্কবাদ) নিজেরা প্রশ্রয় দিয়ে কংগ্রেসকে দোষারোপ করে ক্ষমতায় আসা। বামেদের ইতিহাস লিখতে গেলে উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে।

যাই হোক। তারপর এলো বামেদের প্রো ভার্সান তৃনমূল !! তৃনমূল এসেই অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লিগের রূপ ধারণ করে নিলো।‌ যেই তৃনমূল বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী (সিপিয়েমের এককালীন ভোট ব্যাঙ্ক) নিয়ে চিন্তিত ছিল, সেই তৃনমূল বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ধর্মভাই বানিয়ে নিলো। বাংলা দেখলো অতীতের পুনরাবৃত্তি। দেগঙ্গা, কালিয়াচক, ধুলাগড়, মালদা, মুর্শিদাবাদ, ক্যানিং, রানিগঞ্জ, আসানসোল, বসিরহাট। মেটিয়াবুরুজ আর খিদিরপুর নামক বাংলার বুকে মিনি পাকিস্তানগুলো আরোও ফুলে ফেঁপে উঠলো।

তারপরের ইতিহাসটুকু আর লিখলাম না। বর্তমান প্রজন্মের সকলেই অবগত !! আর কি এসবেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। এত শতাব্দী বঞ্চিত থেকে, কোনোরকম শব্দ করেনি তারা। চুপচাপ সব দেখেছে। বোনের ধর্ষন, পিতৃ পুরুষের ভিটে মাটি ত্যাগ, আরাধ্যের অপমান। রাজনৈতিক ফায়দায় ব্যবহার। ওরা বাকরুদ্ধ ছিল।

এখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে।একটা জাতির চির নিদ্রা ভঙ্গ হচ্ছে। এখন ওরা কথা ফিরে পেয়েছে। যার ফল স্বরূপ ওদের মনোবল বেড়েছে ও ওরা অপরকে জাগাচ্ছে। এখন ওরা ধেয়ে আসছে সকল হিসেব চাইবে বলে। ওরা খুটিয়ে দেখবে হাজার বছরের ইতিহাসের ভুল। ওরা জানবে, সাঁইবাড়ির রক্ত মাখা ভাতের দাম। ওরা বলবে, মরিচঝাঁপি কোন দ্বীপের নাম। ওরা বলবে তুষ্টি করনের রাজনীতির জমানা শেষ। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালি নিজের অধিকার ও সন্মানের সাথে বাঁচতে চায়।

Comments

Popular posts from this blog

কাঁদে নিদারাবাদ

🕉ঈশ্বর ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না!!🕉

বর্ন প্রথা